#অনুভূতিরা_শীর্ষে 💗
#লেখনিতে_সুমাইয়া_ইসলাম_মিম
#পর্ব_১৭
.
–“আমি আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি!”
চোখ বুজে এক নিশ্বাসে বলে দিলাম। কোন আওয়াজ না পেয়ে একটু একটু করে চোখ খুলে দেখি সামনে কেউ নেই! মানে কি? এতো কষ্ট করে কাকে কনফেস করলাম? আশেপাশে তাকিয়েও খুঁজে পেলাম না সাদাদ কে! খুব বেশিই কষ্ট পেলাম। কেন? দুই মিনিট ধৈর্য্য ধরে কি আমার কথা শোনা যেত না? নাহ! তা যাবে কেন? এক তপ্ত শ্বাস ফেলে ওই স্থান ত্যাগ করলাম। সেই থেকেই চেয়েও মুখে হাসি আনতে পারছি না! যার জন্য যেই দেখছে সেই জিজ্ঞাসা করছে কি হয়েছে আমার! অন্যমনস্ক হয়ে বসে ছিলাম একটা চেয়ারে তখন আম্মু এসে বলল,
-সুবাহ? কি হয়েছে তোমার? এরকম মুখ ফুলিয়ে কেন রেখেছো?
আমি আম্মুকে পেয়ে কেমন যেন গলে গেলাম।
–আম্মু জানো! আসলে…….
আমাকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে আম্মু বলল,
-মানুষ কত কথা বলছে তোমাকে নিয়ে! শুনেছো? আমাদের সম্মান একেবারে শেষ করে দিবে দেখছি? এক বোনের সুনাম শুনছি তো অন্য বোনের বদনাম!
আমি অবাক হয়ে আম্মুর দিকে তাকিয়ে আছি! যেখানে নিজের আম্মু আমাকে কোন পাত্তা দেয় না, সেখানে অন্যের ছেলের পাত্তা তো আশাই করি না। ছলছল চোখ নিয়ে আম্মুর দিকে তাকিয়ে আছি। চোখের কোনে যে পানির কণার ভীর রয়েছে তারা যেকোন সময় নোটিফিকেশন না দিয়েই গড়িয়ে পড়বে বলে আশংকা করা যায় আর সাথে জন্মালো একরাশ অভিমান। তাই আম্মুকে তাড়াতাড়ি বললাম,
–চিন্তা করবেন না। আমি এখান থেকে চলে যাচ্ছি! যাতে কেউ আর কোন কথা আপনাকে বা আপনাদের না বলতে পারে! দুঃখিত আমার জন্য আপনার সম্মানে আঁচ আসলো!
বলে আর এক মুহূর্তও অপেক্ষা করি নি। দৌড়ে সেন্টার থেকে বাইরে বেরিয়ে এসেছি। নাহ! আর পারছি না কান্না আটকাতে! চোখের পানি গুলো আজ বড্ড অবাধ্য হয়ে আছে!
.
সুবাহ চলে যেতেই সুবাহর আম্মু ধপ করে চেয়ারে বসে পড়লো। সাদাদ আড়াল থেকে সামনে এসে সুবাহর আম্মুর কাঁধে হাত দিলো। সাদাদের উপস্থিতি টের পেয়ে সুবাহর আম্মু কেঁদে ফেললেন। সাদাদ হাটু গেড়ে তার সামনে বসে পড়লো। দুহাতে চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলল,
–এটা কিন্তু ঠিক না! এভাবে আমাকে অপরাধী বানাই দিবা?
সুবাহর আম্মু সাদাদের দিকে তাকিয়ে বলল,
-এই প্রথম আমি আমার মেয়েটার সাথে এত খারাপ আচরণ করেছি! খুব কষ্ট পেয়েছে আমার বাচ্চাটা!
সাদাদ মুচকি হেসে বলল,
–কান্না করো না প্লিজ! আমিও তো ওকে এভোয়েড করেছি! আজ যে আমি কত খুশি হয়েছি আমি বলে বোঝাতে পারবো না। ইচ্ছে হচ্ছিল জড়িয়ে ধ….
সুবাহর আম্মু তাকাতেই সাদাদ মেকি হাসি দিয়ে বলল,
–ওইভাবে তাকাও কেন হবু শাশুড়ি আম্মু! আমার বউই তো হবে!
সুবাহর আম্মু ফিক করে হেসে দিল। সাদাদের বাহুতে হালকা চাপড় মেরে বলল,
-পাজি ছেলে একটা!
সাদাদ একটা শ্বাস ফেলে বলল,
–তোমার মেয়েকে সব খুশি দেবো ইনশাল্লাহ। আজ যে কষ্ট সে পেয়েছে আর কখনো পাবে না। বরং অনেক বড় সারপ্রাইজ ওর জন্য অপেক্ষা করছে।
হঠাৎ সুবাহর আম্মু বলল,
-সাদাদ মেয়েটা তো একাই বেরিয়ে গেলো!
সাদাদ তার শাশুড়িকে আশ্বাস দিয়ে বলল,
–এগুলা এই হবু জামাতার উপর ছেড়ে দাও না শাশুড়ি আম্মু!
.
রুবায়েত সাদিয়ার পিছু গিয়ে দেখে আসিফ সাদিয়াকে একটা রুমের মধ্যে নিয়ে গেছে! যা দেখে তার চোখটা অটোমেটিক বড় হয়ে গেলো। রুবায়েত ভাবতেও পারে নি সাদিয়া এমন করতে পারে! এমন নয় যে সে সাদিয়ার বিষয়ে কিছু জানে না! যাকে ভালোবাসে তার সকল খোঁজখবর নেওয়া হয়ে গেছে রুবায়েত এর! এবং সে যখন আসিফকে সুবাহর সাথে দেখেছে তার পর থেকে সে বিষয়টা নিয়ে খুব ভেবেছে। এবার একটু সময়টাকে পিছিয়ে বলি আসল বিষয়টা!
.
সেদিন সুবাহর পিছনে শুধু সাদাদ নয় রুবায়েতও এসেছিল। সে এরকম দেখে আসিফকে মারতে চেয়েছিল! কিন্তু সাদাদ তার হাত ধরে আটকে দেয়! আর সাদিয়ার বিষয় বলে! সাদিয়ার বিয়ের কথা শুনে রুবায়েত কিছুক্ষন স্তব্ধ হয়ে ছিল, তখন সাদাদ নিজেও জানতো না রুবায়েত তার বোনকে পাগলের মতো ভালোবাসে। কিন্তু আসিফকে এইরকম দেখে সেও ধাক্কা খেয়েছিল আর তার সুবাহর সাথে সে এই ব্যবহার কিছুতেই মানতে পারছিল না তাই রাগে তার চোখ লাল হয়ে এসেছিল! নিজেকে খুব কষ্টে সামলেছিল। কিন্তু এর শাস্তি সে আসিফকে অবশ্যই দিবে। কিন্তু তার আগে সে আসিফের আসল রুপটা সাদিয়ার সামনে আনতে চায় যাতে সাদিয়া কোনভাবে সাদাদকে ভুল না বুঝে! আর সবক্ষেত্রে মাথা গরম করলে চলে না, একটু মাথা ঘামাতে হয়! কিন্তু সুবাহর মুখ থেকে রুবায়েত এর কথা শুনে এর জন্যই সাদাদ অবাক হয়েছিল সাথে অনেক খুশি! সুবাহকে সন্দেহ করার মতো নিচু মন মানসিকতা সাদাদের নেই। সেই থেকে রুবায়েতও চেয়েছিল সাদিয়ার থেকে দূরে থাকতে কিন্তু এই অবাধ্য মন তা মানতে একদমই নারাজ!
বর্তমানে রুবায়েত অগ্নিচোখে তাকিয়ে আছে সাদিয়া আর আসিফ এর দিকে! আর সাদিয়ার চোখ নিচের দিকে! কেন যেন সে রুবায়েত এর চোখের দিক্ব তাকাতে পারছে না। আর আসিফ একা একা রুবায়েতকে যা নয় তাই বলছে! সে তো আর জানে না রুবায়েত কে! তাহলে হয়তো এতগুলো কথা সে ভয়েও বলতো না। রুবায়েত আর সহ্য করতে পারলো না। ধুমাধুম মারতে লাগলো আসিফকে! রাগটা যেন ক্রমশ বাড়তেই লাগলো। বেশি রাগ লাগছে সাদিয়ার উপর! এক নজরে তার দিকে তাকিয়ে আছে! আজ যেভাবে আসিফ তার সাথে জোরজবরদস্তি করছিল যেকোন একটা অঘটন ঘটে যেত যদি না রুবায়েত আসতো!
রুবায়েত আসিফকে এমনভাবে মারছে যে মনে হয় না ছয় মাসে বিছানা ছেড়ে উঠতে পারবে! আরো আর্মিদের মার! সাদিয়া অবস্থা বেগতিক দেখে ছুটে এসে ছাড়াতে নেয় আর বলে,
-ছেড়ে দিন আসিফকে! মরে যাবে তো! প্লিজ ছেড়ে দিন!
সব ঠিক ছিল কিন্তু সাদিয়ার চোখে পানি দেখে রুবায়েত আরো ক্ষেপে গেলো। আসিফকে ছেড়ে সাদিয়ার গালে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিল। রুবায়েত রীতিমত রাগে কাঁপছে। চিৎকার করে বলল,
-ছিঃ! তুমি এতোটা চিপ মেয়ে ভাবতেই ঘেন্না লাগছে! ও তোমাকে ডাকলো আর তুমি নাচতে নাচতে চলে এলে!
সাদিয়া কান্নারত অবস্থায় কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বলল,
-ও আমার ফিয়োন্সে তাই মানা করতে পারি নি!
রুবায়েত গলার স্বর দ্বিগুণ বাড়িয়ে বলল,
-বাহ! কি সুন্দর কথা! তা দেখবেন আপনার ফিয়োন্সে কি করে বেড়ায়?
রুবায়েত কথা বলতে বলতেই ফোন থেকে কিছু ক্লিপস বের করলো। ক্রাইম এজেন্সি থেকে লোক ঠিক করে আসিফ এর সব বায়োডাটা বের করেছে সে এই ক্লিপস গুলোর মধ্যে দেখা যায় কোনটায় কালো টাকা লেনদেন, কোনটায় মেয়েদের সাথে ঘনিষ্ঠ অবস্থায়! সাদিয়া দুই কদম পিছিয়ে গেল ভিডিও দেখে! রুবায়েত সাদাদকে ফোন দিয়ে ডাকলো। সাদাদ এক প্রকার দৌড়ে সেখানে পৌছালো। একে একে সব খুলে বলল তাকে। সাদাদ কাউকে ফোন করে বলল আসিফকে নিয়ে যেতে। সাদাদের কথা মতো পাঁচ মিনিট পর দুইজন লোক এসে আসিফকে নিয়ে গেল, তারা খুব ভালো করেই জানে আসিফকে কোথায় নিয়ে যেতে হবে।
.
মুখ শক্ত করে বসে আছে রুবায়েত! তার ঠিক সামনে কান্নারত অবস্থায় আছে সাদিয়া! সে কিছুতেই বিয়ে করতে চাচ্ছে না। রুবায়েত এক ধমক তাকে দিয়েছে! ধমকের স্বরে কেঁপে উঠেছিল সে। সাদাদ তার বোনকে আলাদা নিয়ে গিয়ে বলেছিল,
–দি! আজ আমার জন্য হলেও এই বিয়েটা কর! তোর কাছে হাত জোর করছি! আমি রুবায়েত ভাইয়ের কাছে ঋনি! একটা সুযোগ আছে ঋনটা শোধ করার! দি প্লিজ!
অবশেষে সাদিয়াও তার ভাইয়ের কথামতো বিয়েতে রাজি হলো। রুবায়েত এর সঙ্গে আজই তার কাবিন হবে। অনুষ্ঠান পরে। সেই কান্নারত অবস্থাতেই রুবায়েত আর সাদিয়া বিয়েটা হয়ে যায়!
,
,
,
চলবে…………..❤️
(আশা করি আজকে একটু হলেও কনফিউশন ক্লিয়ার করতে পারলাম।)