অনুভুতিরা শীর্ষে পর্ব ১৮

#অনুভূতিরা_শীর্ষে 💗
#লেখনিতে_সুমাইয়া_ইসলাম_মিম
#পর্ব_১৮
.
বারবার আমার ফোনে কল এসেই যাচ্ছে কিন্তু আমি তো কষ্টে আর রাগে ফোনই তুলছি না। পঞ্চাশটার উপরে মিসড কল! আজ একটু বেশিই কষ্ট পেয়েছি। আম্মু আমাকে শাসন করে তার আমি যথেষ্ট সম্মানও করি!কেননা বড়রা আমাদের শাসন করবে এটা একদমই স্বাভাবিক! তাই বলে আজ একটু বেশিই হয়ে গেলো না? রুমের এক কোনায় গুটিশুটি দিয়ে বসে আছি। চোখ থেকে সমানে পানি ঝড়ে যাচ্ছে। আমি বসে বসে ফুঁপিয়েই যাচ্ছি এর মধ্যে দরজা ধাক্কানোর শব্দে জিজ্ঞাসা করলাম কে?
ওপাশ থেকে দারোয়ান কাকা বললেন, বাবা নাকি ফোন করেছিল! হঠাৎ করে সাদাদ অসুস্থ হয়ে পড়েছে আর অসুস্থতা খুব গুরুতর!
এখন কি আর আমার বসে থাকার মতো শক্ত মন আছে নাকি? ইচ্ছে করে উড়াল দিয়ে পৌছাতে পারলে বাঁচি!

.
সোজা চলে এলাম সাদাদ দের বাসায়। বাসায় ঢুকতেই ড্রয়িং রুমে সবাই জড়ো হয়ে আছে। আমাকে দেখে সকালের ওই আপুটা রাগে কেমন যেন করতে লাগলো, আমি সেসবে পাত্তা না দিয়ে উপরে চলে গেলাম। সাদাদের রুমে নক না করেই ঢুকে পড়লাম। দেখি সে বিছানায় শোয়া কিন্তু চোখ বন্ধ। সাদিয়া আপু পাশে বসে সেই থেকে কান্না করেই যাচ্ছে। তার থেকে একটু দূরে রুবায়েত ভাইয়া ফোনে কথা বলছে। আমি বিছানার কাছে এগিয়ে যেতেই সাদিয়া আপু আমাকে দেখে উঠে দাঁড়ালো। সাদিয়া আপুকে দেখে কেমন যেন খটকা লাগলো! আবার সাদাদের দিকে তাকিয়ে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল! আশপাশ খুঁজে কিছু পেলাম না। তাই উঠে টেরেসের দিকে যেতেই দেয়ালে ক্রিকেট ব্যাট ঠেকানো দেখতে পেলাম। এতেই আমার কাজ হয়ে যাবে। ক্রিকেট ব্যাটটা হাতে তুলে ঝড়ের বেগে বিছানার কাছে পৌছালাম। সাদিয়া আপু ভয় পেয়ে গেছে। ব্যাটটা সাদাদের দিকে তাক করে বললাম,

–এক্ষুনি যদি না উঠেন বিছানা ছেড়ে সত্যি বলছি এই ব্যাট দিয়ে এমন ছ্যাচা দিবো না….

সাদিয়া আপু আমাকে বললেন,

-কি করছো সুবাহ? ব্যাটটা নামাও! সাদের লেগে যাবে!

আমি এবার ব্যাটটা ঝাড়া মেরে ফেলে দিয়ে চিৎকার করে বললাম,

–তোমরা বাইরেরটাই বুঝবে! আমাকে তো মানুষ মনে হয় না! আমি তো বোকা! কি মনে হয় তোমাদের এই নাটক আমি বুঝতে পারবো না?

সাদাদের দিকে দেখিয়ে আবার বললাম,

–এই যে ইনি! শুধু শুধু নাটক করে শুয়ে আছে। ইনি অসুস্থ খবরটা পাওয়ার পর আমার কি হাল হয়েছিল তা কি তোমাদের বিন্দুমাত্র খবর আছে? সবাই তো ব্যস্ত নাটক করতে!

সাদিয়া আপু অবাক চোখে তাকালেন। আর রাগে আমার চোখ থেকে পানি ঝড়েই যাচ্ছে। কিছুতেই কন্ট্রোল করতে পারছি না। টেবিলের উপর থেকে ফ্লাওয়ার ভাস টা নিয়ে জোরে আছাড় মারলাম। এর মধ্যে ভাইয়াও এসে আমাকে থামানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু রাগ চরম পর্যায়ে চলে গেছে। ভাইয়ার দিকে রাগী গলায় বললাম,

–তুই সরবি? নাকি আমার সাথে সাথে তোর মাথাটাও ফাটাবো?

ভাইয়া ভীত চোখে আমার দিকে তাকালো। আমি ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ফ্লোরে কাঁচের উপর দিয়েই চলে গেলাম অন্য জিনিস ভাঙব বলে। পা দিয়ে রক্ত পড়ছে। এর মধ্যেই অনুভব করি আমাকে পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়েছে কেউ! তার দিকে তাকাতেই দেখি সাদাদ! তার চোখ অসম্ভব লাল। আমি দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,

–ছাড়ুন আমাকে!

উনি আমাকে ছাড়লো তো নাই বরং আরো শক্ত করে চেপে ধরলো। আমি হাত পা ছুটাছুটি করতেই এমন এক ধমক দিলো যে সেই থেকে কান্নাই করে যাচ্ছি। উনি আমাকে খাটে বসিয়ে দিয়ে যে উঠবেন তারও শক্তি পাচ্ছে না। কেমন যেন মাথা হাত দিয়ে চেপে ধরেছে। কোনমতে সাদিয়া আপু আর ভাইয়াকে বললেন,

–তোমরা একটু বাইরে যাও তো!

উনার এই কথা শুনে উনার প্রতি ভয়টা আবার সুন্দর করে প্রকাশ পাচ্ছে। আর আমার ভাইটাও কি! সুড়সুড় করে দুজনেই বেরিয়ে গেল আর যাওয়ার সময় এক মারাত্মক কাজ করলো। দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে গেল। আমি এখন ফুঁপাতে ফুঁপাতে উনার দিকে তাকালাম! এমা! উনি আমার দিকে ওই লাল লাল চোখে তাকিয়ে আছে। খুব শান্ত স্বরে বলল,

–কি সমস্যা? এরকম চেঁচামেচি আর ভাংচুর করছো কেন?

শক্ত হয়ে বসে আছি! কিছুতেই উনার সাথে কথা বলা যাবে না। উনি আবার আঙুল দিয়ে উনার কপালটা ঘষে নিলেন। আবার জিজ্ঞাসা করলেন,

–কথা বলবা না?

আমি এবারও চুপ! কিন্তু উনি এবার এক মারাত্মক কাজ করলেন। আমার ঠোঁটে এক নিশব্দ চুমু খেলেন! আমি তো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি! এবার জোরেই কান্না করে দিলাম। আমার কান্নার শব্দে দরজা খুলে কেউ আসার চেষ্টা করেছিল কিন্তু উনি হাত দিয়ে ইশারা দিতেই সব সুড়সুড় করে চলে গেল। উনি শান্ত চোখেই আমার দিকে তাকিয়ে আছে! এবার হালকা হেসে বলল,

–কথা না বললে কিন্তু পানিশমেন্ট চলতেই থাকবে। আর তার ট্রেইলার কিন্তু একটু আগে দিলাম।

এবার কি চুপ থাকতে পারি! পেটের যত জঞ্জাল আছে সব ছাড়ছি! মানে কথা! উনি উঠে গিয়ে ফার্স্টএইড বক্স এনে আমার পায়ে ড্রেসিং করতে লাগলো। আর আমার ননস্টপ বকবক চলতেই আছে।

–আপনারা খুব খারাপ! খুব মানে অনেক বেশি খুব! এভাবে নাটক কেন করলেন? জানেন আসার সময় একটা গাড়ি আমাকে ধাক্কা দিতে নিয়েছিল তাও কোনমতে নিজেকে সামলে নিয়েছি! কিন্তু এখন মনে হচ্ছে মরে গেলেই ভালো হতো! এই নাটক দেখার জন্য বেঁচে আছি কেন?

উনি আমার পায়ে খুব জোরেই অ্যান্টিসেপ্টিক মেশানো তুলোটা চেপে ধরলেন। কিন্তু আমার কোন রিয়েকশন দেখতে না পেয়ে উনু হতাশ। তারপর নিজ থেকে বললেন,

–আমার জন্য ছুটে এসেছো?

এবার মেজাজটা আরো বিগড়ে গেল! পুরা রামায়ণ কাহিনী শুনার পর বলে সীতা কার বাপ?
–তো কার জন্য ছুটে আসবো? হার্টলেস মানুষ!

উনি হালকা হাসলেন। তারপর বললেন,

–আমি সত্যিই একটু অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। আমার প্রেশার বেড়ে গিয়েছিল। তাই ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমাচ্ছিলাম, এরজন্য কিছুই টের পাই নি। যখন ফ্লাওয়ার ভাস টা ভাঙলে তখন ঘুম থেকে জাগ্রত হয়েছি! তাও মাথাটা ধপধপ করছিল!

এবার আমি অসহায় চোখে উনার দিকে তাকালাম।

–কিন্তু আমি তো মনে করেছি আপনারা নাটক করছেন। কেননা আপনি অসুস্থ হলে সবাই এমন নিশ্চিন্তে কেন বসেছিল? এখানে তো ডাক্তার থাকার কথা ছিল!

আমার কথা শুনে উনি হাসলেন। আমার দু গালে হাত রেখে বলল,

–এত্তো আদুরে কেন তুমি? আর এই যে ড্রেসিং করলাম, ব্যাথা করে নি?

আমি মাথা দু দিকে নাড়িয়ে বললাম,

–একদম না! আরে আপনার না প্রেশার বেশি! তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ুন বিছানায়! ঘুমান। আমি এগুলো পরিষ্কার করে দিয়ে চলে যাবো।

আমি বিছানা থেকে উঠতে নিতেই উনি আমার হাত টেনে ধরলেন। আমি তাকাতেই বলল,

–এখনো রাগ করে আছো তাই না? একটু সবুর করো, সারপ্রাইজ আছে!

আমি অবাক হয়ে বললাম,

–কি?

উনি অপ্রস্তুত ভাবে বললেন,

–কিছু না। তুমি কথাও যাবে না। এখন এইখানে বসে থাকো আমার কাছে।

কিছুক্ষন পর সাদিয়া আপু আর রুবায়েত ভাইয়া একসাথে রুমে এলেন। আমি বুঝতে পারছি না এরা একজন আর একজনের সাথে এমন চিপকে আছে কেন? আর আসার পর থেকে ওই আসিফ শয়তানটাকেও দেখতে পেলাম না। সাদাদ হুট করে আমার হাত ধরে বললেন,

–সুবাহ! আগামী শুক্রবার তোমার আমার আর দি রুবায়েত ভাইয়ের বিয়ে!

আমি তো অবাক! বিয়ে মানে? হুট করে বিয়ে? এটা কোন কথা?

–হঠাৎ বিয়ে মানে? এটা কোন কথা?

এর মধ্যে সাদিয়া আপু বলল,

-আরে আমার তো বিয়ে…..

হুট করে আপুর হাত চেপে ধরলো ভাইয়া! আর সাদাদ তুতলাতে তুতলাতে বলল,

–আরে দির তো বিয়েটা ভেঙে গেছে তাই রুবায়েত ভাই দি কে বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেছে।

আমার এদের প্রতি ভীষণ সন্দেহ হচ্ছে! আড়চোখে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,

–তো সাদিয়া আপু আর ভাইয়ার বিয়ে দিন এখানে আমাকে নিয়ে কেন টানাটানি?

সাদাদ অপ্রস্তুত হেসে বলল,

–নাহ! মানে কখন কি হয়ে যায়? যদি মরে টরে যাই? তাই আগেই ফরজ কাজ সারতে চাচ্ছি! এমনিতেই প্রেশার টেশার বেড়ে যায়!

কি হলো আমার আমি জানি না হুট করে চড় বসিয়ে দিলাম সাদাদের গালে। কেন? কিভাবে যে উনাকে চড় দিলাম আমি নিজেই জানি না। আশেপাশে তাকাতেই দেখি সাদিয়া আপুর মুখে হাত! ভাইয়া চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে। আর সাদাদ! অসভ্য লোক, গাল চুলকাচ্ছে! আমি তো অবাক! মানুষ থাপ্পড় খেয়ে রাগ করে নয়তো গালে হাত দিয়ে থাকে আর উনি গাল চুলকাচ্ছে!

–আপনি গাল চুলকাচ্ছেন কেন?

উনি অসহায় ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

–এইটুকু কথার জন্য কেউ চড় মারে? তাও এমনভাবে মারলা যে গালে কাতুকুতু লাগলো! তাই তো এভাবে চুলকাচ্ছি!
,
,
,
চলবে………………❤️

(রাতে আরেক পর্ব দিব।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here