অনুভুতিরা শীর্ষে পর্ব ১৯

#অনুভূতিরা_শীর্ষে 💗
#লেখনিতে_সুমাইয়া_ইসলাম_মিম
#পর্ব_১৯
.
না চাইতেও সাদাদের কথা শুনে হেসে দিলাম। আর সাদাদ মুগ্ধ হয়ে আমার হাসি দেখে যাচ্ছে। সাদাদকে বিশ্রাম নিতে বলে রুম থেকে বেরিয়ে এলাম। চেয়েছিলাম বাসায় চলে যাবো। কিন্তু সাদাদ মশাই যেতে দিবে না কাউকে! এখন পড়লাম মুশকিলে! এই লেহেঙ্গা পড়ে তো থাকতে পারবো না। তাই সাদিয়া আপু তার একটা শাড়ি আমাকে পড়িয়ে দিলো। শাড়ি নিয়ে হাঁটতে বেশ কষ্ট হচ্ছে আমার! আম্মু আমার সাথে কয়েকবার কথা বলতে চেয়েছে কিন্তু অভিমানের কারণে একবারও কাছে যাই নি। নয়তো এতোক্ষনে কতবার আম্মুর পেট জড়িয়ে পেটে মুখ গুঁজে থাকতাম।

.
রাত ১২ বেজে তিন মিনিট! রাতে ঘুমানোর আগে পানি খাওয়া আমার জন্য বাধ্যতামূলক। বাট ঘরে পানি না পেয়ে এগিয়ে গেলাম রান্নাঘরের দিকে। ড্রয়িংরুম ক্রস করতে যাবো এর মধ্যেই কারেন্ট চলে গেলো। এমনিতেই অন্ধকার তার উপর আবার কারেন্টও নাই। আস্তে আস্তে এগিয়ে যেতেই খেলাম এক ধাক্কা! সামনে যে কোন একজন মানুষ তা আমি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি! হঠাৎ করে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। এটা সাদাদ! আমি ডেম শিওর! শরীর পুরো কাঁপন দিচ্ছে। উনি ফিসফিস করে বললেন,

–হ্যাপি বার্থডে সাদাদের মিষ্টি সুবাহ! আমার সুবাহ!

উনি একটু থেমে বললেন,

–আই লাভ ইউ টু!

আমি অবাক হয়ে উনার অবয়বের দিকে তাকাতেই উনি আমাকে ছেড়ে দিলেন। সাথে সাথে লাইট জ্বলে উঠলো আর সবাই এক সাথে উইশ করলো। সবার দিকে তাকিয়ে দেখছি! কিন্তু কাঙ্খিত মানুষটিকে না পাওয়ায় এমনিতেই কান্না পাচ্ছে, অজান্তেই ঠোঁট উলটে এলো। তখনই হঠাৎ কেউ বলে উঠলো,

-হ্যাপি বার্থডে টু ইউ! হ্যাপি বার্থডে টু ইউ মাই পুচকু বাচ্চা! হ্যাপি বার্থডে টু ইউ!

আমি পিছন ফিরেই দৌড়ে গিয়ে আম্মুকে ঝাপটে ধরলাম। আম্মুও হেসে আমাকে সাদরে গ্রহন করলো। এটাই আমি! আর এটাই আমার মা। যতই বকুক যতই উল্টাপাল্টা বলুক! দিন শেষে সে আমার আমারই আম্মু! কখনো মায়ের মনে কষ্ট দেওয়া যাবে না। আমি কখনোই আম্মুর সাথে রাগ করে পাঁচ মিনিটও থাকতে পারি না। আর আম্মুকেও থাকতে দেই না। যত যাই হোক আমি আমার মায়ের কোলকেই খুঁজি!

সবাই মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিল আমাদের দিকে! সবার চোখে পানি! আমি হাঁটু ভেঙে আম্মুর পায়ের কাছে বসে পেট জড়িয়ে পেটে মুখ গুঁজে দিলাম। আম্মুর ঠোঁটে হাসি। আম্মুর হাতে পায়েস ছিল। সেও বসে পড়লো। আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে পায়েস খাইয়ে দিল। আমি নাক টেনে বললাম,

–আম্মু জানো আমার আজকে অনেক কষ্ট হইছে। তোমার সাথে কতক্ষন কথা বলি নাই! বুকটা আটকে আটকে আসছে! তুমি কেন ওইটা বললা?

আম্মু আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,

-আর কখনো বলবো না বেবি!

আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,

–আম্মু!

আম্মু সহ সবাই হেসে দিল! সাদাদকে দেখিয়ে আম্মুকে বললাম,

–আম্মু জানো এই যে ভাবওয়ালা! ইনাকে সকালে প্রপোজ করছি আর ইনি আমাকে এখন লাভ ইউ টু বলছে!

সাদাদ সম্পূর্ণ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে। এভাবে যে সবার সামনে কথাটা বলব হয়তো উনি কোন কালেই ভাবে নি। সবার দৃষ্টি আপাতত উনার দিকে। উনি আমার দিকে তাকাতেই দিলাম এক চোখ টিপ। এবার উনার মুখটা হা হয়ে গেলো। বেচারা এক সাথে এতো ডোজ নিতে পারছে না। আর আমিও ভাবছি না এর রিয়েকশন পরে আমার উপরেই পড়বে! উনি এক ভ্রু উঁচিয়ে বাঁকা হাসলেন! ব্যস! আমারও মনে পড়লো কি করছি আমি! শিট!

.
সবাই আমাকে উইশ করে গিফট দিলো। কিন্তু সাদাদ মশাই আমাকে কিছুই দিলো। না। আমি তেমন মাথা ঘামাই নি। সবাই অনেক্ষন মজা করলো। ড্রয়িং রুমে সবাই বসে ছিল কিন্তু খেয়াল করলাম আরফান ভাইয়া ঘুমে হেলে পড়ে যাচ্ছে, সে আপাতত আমার আপুর কাঁধে মাথা দিয়ে রেখেছে আর আপু বারবার কাঁধ দিয়ে ঠেলছে। সবারই অবস্থা খারাপ। আমি হালকা হেসে বললাম,

–আমি খুব খুশি সবাই আমার বার্থডে মনে রাখছো! এখন সবাই ঘুমাইতে যাও!

আরফান ভাই আমার কথা শুনে সবার আগে উঠে আপুকে টানতে লাগলো। দেখে হেসে দিলাম।

সবাই চলে গেল। সবার আগে গেল রুবায়েত ভাইয়া। আজ ভাইয়ার মনটা বেশ খারাপ ছিল কিন্তু কেন? ভাইয়া যেতেই দেখি সাদিয়া আপু অসহায় ভাবে তাকালো। তারপর নিজেও উঠে চলে গেল।

আমিও একটা শ্বাস ফেলে সব গিফট নিয়ে রুমে চলে এলাম। রুমে ঢুকে গিফট গুলো রেখে দরজা আটকে বারান্দার দরজা লাগানোর জন্য এগিয়ে এলাম। অনেক শীত পড়েছে বাইরে! বাবা! বারান্দায় হাত বাড়ালাম দরজা আনতে কিন্তু তার আগেই হাত টান পড়লো।
,
,
,
চলবে………….❤️

(ছোট হওয়ার জন্য দুঃখিত। নেক্সট পর্ব তাড়াতাড়িই দিবো।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here