অনুভুতিরা শীর্ষে পর্ব ২০

#অনুভূতিরা_শীর্ষে ️💗
#লেখনিতে_সুমাইয়া_ইসলাম_মিম
#পর্ব_২০
.
হঠাৎ হাতে টান পড়ায় বেশ ভয় পেয়ে গেছি। দেয়ালের সাথে আমার পিঠ ঠেকে গেছে। আমাকে ঘিরে ধরেছে সাদাদ। অন্ধকার হলেও তার শরীরের স্মেলটা স্পষ্ট তার উপস্থিতি প্রকাশ করছে। চোখ বন্ধ করে হালকা হাসলাম।

–এভাবে টেনে আনার মানে কি?

সাদাদ আমার চোখের উপর থেকে চুলের গুচ্ছ সরিয়ে কানে গুঁজে দিয়ে বলল,

–টেনে না আনলে তো এক্ষুনি বারান্দায় লক করে দিতে আমায়!

সকালের বিষয়টা মাথায় আসতেই হাত দিয়ে সাদাদকে সরিয়ে দিয়ে বললাম,

–সকালে আপনি আমার কথা সব শুনেছিলেন তাই না?

সাদাদ কিছু না বলে হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে হাসলো। উফ! এই লোকটা এমন কেন? হাসিটা এতো মারাত্মক! কি বলবো? হাসলেই মনে হয় সোজা হৃদয় ভেদ করে চলে যাচ্ছে! আমি চোখ বন্ধ করে একটা শ্বাস নিলাম। নাহ! পারছি না উনার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে! উনি আমার দিকে এক কদম এগিয়ে এলেন। উনার মুখটা আমার কানের কাছে নিয়ে এলেন, স্পর্শ ছাড়াই আমি টের পাচ্ছি! কেমন যেন শিহরণ দিচ্ছে। একে তো ঠান্ডায় আর এক উনি আমার এতো কাছে দাঁড়িয়ে থাকায়! উনার ফিসফিস করে বলা কথায় চোখ খুলে তাকালাম,

–হ্যাঁ! আমি আমার সুবাহর কথা না শুনে চলে যাবো? এটা কখনোই সম্ভব না। ভালোবাসি! ভালোবাসি প্রিয়তমা! খুব বেশিই ভালোবাসি। আর এইটা তোমার গিফট!

উনি কথাটা বলেই আমার বাম গালে একটা চুমু দিলেন। আমার মনে হলো বামগালটা তৎক্ষণাৎ গরম হয়ে উঠেছে। উনি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে হাসছেন। হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি আমার অনামিকা আঙুলে একটা রিং পড়িয়ে দিয়েছেন। বেশ কিছুক্ষন পর স্বাভাবিক হয়ে উনার দিকে তাকাতেই দেখি একই ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। উনি আমার হাত ধরে কার্পেটের উপর বসে গেলো। অনেকক্ষন আমাদের মধ্যে বেশ নিরবতা ছিল। নিরবতা ভেঙে আমিই বললাম,

–আপনি সকালে আমাকে কোন উত্তর না দিয়ে কেন চলে গেছিলেন? আমি খুব হিতাশ হয়েছিলাম। তারপর আম্মু আমাকে বলল….

সাদাদ আমাকে কিছু বলতে না দিয়ে নিজেই বলল,

–আমি জানি! ওখানে আমি ছিলাম। আমিই আন্টিকে বলেছি তোমার সাথে যেন একটু রুড বিহেভ করে। তখন আমি এমনি এমনি যাই নি। তোমার কথা সম্পূর্ণইই শুনেছিলামম এবং উত্তর দেওয়ার আগে দেখি কিছু মহিলা আন্টিকে যা নয় তাই বলছে। আর তাদের বিষয়টা ছিল আমাকে আর তোমাকে নিয়ে। আসলে…..হাহ! এর জন্যই আন্টি তোমার উপর একটু রেগে গিয়েছিল। আমি ওই মহিলাদের সামনেই তোমার আর আমার বিয়ের কথা বলি! আন্টি অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। সে মানতে নারাজ ছিল কিন্তু তোমার বাবা এসে তারপর আন্টিকে বুঝিয়েছিল। এর মধ্যে দি এর ঘটনা আর তোমার বার্থডে সারপ্রাইজ! সব মিলিয়ে আমার প্রেশার বেড়ে গিয়েছিল।

আমি অবাক হয়ে বললাম,

–সাদিয়া আপুকে আজ খুব বিষন্ন দেখিয়েছে। আপু ঠিক আছে তো? আর রুবায়েত ভাইয়াকেও এতো তাড়াতাড়ি কি করে মেনে নিল?

সাদাদ আমার ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বলল,

–হুশশ!

সাদাদ আমাকে চুপ করিয়ে দিয়ে বলল,

–চোখ বন্ধ করে আমার কাঁধে মাথা রাখো।

আমি ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই উনি উনার হাত দিয়ে আমার চোখের পাতা বুজিয়ে দিলেন। আলতো করে আমার মাথাটা নিয়ে উনার কাঁধে রাখলেন। আমিও চুপ হয়ে এই শীতের রাতের ঠান্ডা হাওয়া উপভোগ করছি।

কিছুক্ষণ পর উনি বললেন,

–সুবাহ! তোমাকে এখন যা বলবো তা সুন্দর করে আগে শুনবে। তারপর বলবে ঠিক আছে?

আমিও বাধ্য মেয়ের মতো সম্মতি দিলাম। উনি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সবটা বললেন। আমি অবাক হয়ে উনার দিকে তাকালাম। উনি আমার হাত ধরে বলল,

–রুবায়েত ভাইয়া দি এর উপর রেগে আছে আমি জানি! কিন্তু এটাও মানি তারা দুইজনে খুব তাড়াতাড়িই নিজেদের মধ্যে সবটা ঠিক করে নিবে।

আমি একটা শ্বাস ছেড়ে বললাম,

–আমিও তাই চাই!

.
সারারাত সাদিয়া বালিশে মুখ গুঁজে কেঁদেছে। তার একটাই অভিযোগ! কেন তার সাথে এমনটা হলো? কেন তাকে এভাবে ধোকা দেওয়া হলো! যদিও সাদিয়া আসিফের কাজে তার প্রতি অবহেলা প্রকাশ পেত কিন্তু সাদিয়া তো আসিফকে ভালোবাসতো আর সে তার ফিয়োন্সে ছিল বলেই সাদিয়া সবটা সহ্য করতো।

অন্যদিকে রুবায়েত সারাটারাত পায়চারি করেছে। সে সাদিয়াকে সহজসরল ভাবতো তাই বলে এতো? আজ সে একটু দেড়ি করে পৌছালে কি হতো? ভাবতেই তার শরীরের লোম দাঁড়িয়ে যায়। আজ যা ঘটেছে তার জন্য সাদিয়াকে পস্তাতে হবে! হ্যাঁ, সহজে ক্ষমা করতে পারবে না সে সাদিয়াকে!

.
সকাল সকাল সুবাহর পরিবার রওনা হলো তাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে। একে তো বাড়ির বড় মেয়ের ফিরনির অনুষ্ঠান আর অন্যদিকে বাড়ির দুই ছেলেমেয়েরই বিয়ে। তাই এখন থেকেই তোরজোড় শুরু হয়ে গেছে। এমনকি সদ্য বিবাহিতা রুবাইয়াও বসে নেই। বেচারা আরফান বউয়ের পিছে পিছে ঘুরছে কিন্তু সে তার বউয়েএ কাছে দুই পয়সারও পাত্তা পেলো না। রুবাইয়া তাকে এক ধমক দেওয়ায় এখন আপাতত সে কাজে মন দিয়েছে। হাতে গোনা দিন আছে। তাই শপিং এখন থেকেই ভাগে ভাগে করা শুরু হয়ে গেছে। সাদাদের সাথে আমার ভালোই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেছে

.
আজ এক গুরুত্বপূর্ণ কাজে ভার্সিটি যেতে হবে। কিন্তু ভার্সিটি যাবো এই কথাটা আমি সাদাদকে বলি নি। উনার সাথে ইচ্ছে করে ঝগড়া করে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছি। ধুর! সম্পর্কে ঝগড়া না থাকলে কি কোন টুইস্ট পাওয়া যায় নাকি? তাই রাত থেকে আমার ফোন অফ! আর সকাল আটটা বাজতেই বেরিয়ে পড়লাম। আজও রিকশা করে ভার্সিটি গেলাম।

ভার্সিটি যেতে না যেতেই আমায় ঝাপটে ধরলো রাত্রি।

-কি রে বিয়ের কনে! তুমি তো পুরো ভার্সিটির ক্রাশের সাথে নিজের বিয়ে টা পাকা করে ফেললা!

আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম,

–কেন রে? তোর তো এমনিতেও চান্স ছিল না! বিভোর ভাইয়ার সাথে নিজেও তো বিয়ে ঠিক করে আমায় বলেছি! হুহ!

আমি আর রাত্রি অনেকক্ষণ কথা বললাম। কথায় কথায় বললাম,

–উনার সাথে কাল থেকে কথা বলি নি। ইচ্ছে করে ঝগড়া করেছি।

রাত্রি বলল,

-সাদাদ ভাইয়া তো তাহলে তোর উপরে খুব রেগে আছে!

আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললাম,

–হুহ! আমি তোর সাদাদ ভাইয়াকে ভয় পাই নাকি?

পিছন থেকে সেই চিরচেনা কন্ঠ,

–তাই নাকি সুবাহ?
,
,
,
চলবে……………..❤️

(বাসায় মেহমান ছিল তাই টাইপ করতে দেড়ি হয়ে গেছে!)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here