#অনুভূতিরা_শীর্ষে 💗
#লেখনিতে_সুমাইয়া_ইসলাম_মিম
#পর্ব_৪
.
ভি-৯ রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। ভিতরে যেতে খুবই ভয় লাগছে। রাত্রিটাকেও এখন ধরে পিটাতে ইচ্ছা করছে। কিভাবে আমাকে একা এখানে ফেলে চলে গেলো। অসভ্য মহিলা! কি যে করি! ভিতরে যেতেও মন চাচ্ছে না আর না গিয়েও উপায় নেই। সাদাদ ভাইয়ের কথা অমান্য করলে না জানি আর কতকিছু সহ্য করতে হয়! আমার এখন এতো কান্না পাচ্ছে ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। মাথায় আজগুবি সব চিন্তা আসছে। আচ্ছা উনি কিসের জন্য আমাকে ডেকেছে? উল্টাপাল্টা কিছু করবে না তো! আল্লাহ রক্ষা করো আমাকে। আল্লাহর নাম নিয়ে দরজাটা একটু ফাঁকা করলাম, দেখি সাদাদ ভাই কোমরে হাত দিয়ে উল্টো দিকে ফিরে আছে। আর বারবার আশপাশ করছে। নিজে নিজে কি যেন বিড়বিড় করছে। আমি একটা ঢোক গিললাম। একবার মনে হচ্ছে ছুটে এখান থেকে পালিয়ে যাই! কিন্তু ইনি যে আবার কেন ডাকছে তাও জানতে আগ্রহ জন্মাচ্ছে। যখন আকাশপাতাল ভাবছিলাম তখন দেখি ভিতর থেকে সাদাদ ভাইয়ের ডাক!
–বাইরে কি করছো? ভিতরে আসো।
ওনার হঠাৎ বলা কথায় হকচকিয়ে পড়ে যেতে নিলে দরজা ধরে কোনমতে নিজেকে সামলে নিলাম। সাদাদ ভাইয়ের চোখের দিকে তাকাতে পারছিলাম না। কেমন করে যেন আমার দিকে তাকিয়ে আছে। সাদাদ ভাই আবার বললেন,
–বসো চেয়ারটাতে!
আমি আমতাআমতা করে বললাম,
–না আমি ঠিক আছি এখানেই!
সাদাদ ভাই এক ভ্রু উঁচু করে তাকাতেই ধপ করে বসে পড়লাম চেয়ারটাতে। সাদাদ ভাই আমার ঠিক অপজিটের চেয়ারটাতে বসলো। আমি শুধু তাকিয়ে দেখছিলাম। সাদাদ ভাই হালকা হেসে বলল,
–এতো যন্ত্রণা দিচ্ছো কেন আমায়?
আমার মনে হলো সিরিয়ালের মতো কয়েকটা ঠাস ঠাস করে মাথায় বাজ পড়লো। আমি? ওনাকে? তাও যন্ত্রণা দেই? হাউ?
অবাক চোখে ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
–আমি আপনাকে যন্ত্রণা দেই? কি বলছেন এইসব? আপনার সাথে কথাই তো বলি না।
সাদাদ ভাই এবার একটু ধমকের সুরে বলল,
–সেটাই তো আমাকে যন্ত্রণা দেয়। কেন? কেন? আমাকে এভোয়েড করছো? কেন? আমাকে দেখলেই পালাও? আমি তোমাকে চাই! তোমার অবহেলা আমাকে এতো যন্ত্রণা দেয় যে তা কিভাবে তোমাকে বুঝাবো? প্লিজ আমাকে এভোয়েড করা বন্ধ কর। আমি তোমাকে সময় দিবো, যতটা তুমি চাও! প্লিজ আমাকে বোঝার চেষ্টা করো।
সাদাদ ভাইয়ের কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে আছি৷ কি বলবো নিজেই বুঝতে পারছি না। হঠাৎ যেন তার প্রতি ভয়টা আর কাজ করছে না। অথচ এখন আমার তাকে ভয় পাওয়া উচিত! সাদাদ ভাইয়ের টলমলে চোখ দেখে আমার মুখে আর কোন কথাই আসছে না। হঠাৎ নিজেকে শক্ত করে সাদাদ ভাই হুট করে চলে গেলেন রুম থেকে! আর আমি ভাবতে বসলাম। এখন আমার কি করা উচিত? উনি কি আমাকে বোঝালো না থ্রেট দিলো? তাইই বুঝলাম না। কিন্তু এটা বুঝেছি উনি হয়তো আমার ইগনোরেন্স পছন্দ করছে না। কিন্তু তাতে আমার কি? আমি তো ওনাকে ভয় পাই। কিন্তু তখন ওইসময় ওনাকে আমার একদমই ভয় লাগে নি। বরং ওনার প্রতি কেমন একটা দুঃখ দুঃখ ফিলিংস আসছিলো। কি করি?
রুম থেকে বেরিয়ে করিডোর দিয়ে হাঁটছি আর একা একা ভাবছি এর মধ্যেই রাত্রি ঝড়ের বেগে আমার কাছে এসে এটা সেটা জিজ্ঞাসা করেই যাচ্ছে,
-কি রে কেন ডেকেছিল সাদাদ ভাই? কি বলল? আরে বল!
আর আমি ভাবছি কি বলবো রাত্রিকে? আমি নিজেই কনফিউজড যে আসলে আমার সাথে হয়েছেটা কি? কিন্তু একটা বিষয় আমার ভালো লেগেছে যে সাদাদ ভাই আমার সাথে কোন প্রকার অসভ্যতামি করে নি। এমনকি আমার হাত পর্যন্ত স্পর্শ করে নি। এদিকে রাত্রির প্রশ্নের গতি বেরেই যাচ্ছে। অসহায় হয়ে একটা বড় শ্বাস ছাড়লাম।
.
অনেকক্ষন ধরে বসুন্ধরা সিটি কমপ্লেক্স এর সামনে দাঁড়িয়ে আছে সাদিয়া। সে এসেছে তার ফিওন্সের সাথে মিট করতে। বলেছে মলের সামনে দাঁড়াতে আর সাদিয়াও লক্ষ্মী মেয়ের মতো এখানে এসে দাঁড়িয়ে আছে। এতো রোদের মাঝেও সে রাস্তার পাশে দাঁড়ানো। একবারও ভিতরেও যায় নি। আর যাত্রীছাউনিতে গিয়েও দাঁড়ায় নি। প্রায় ৪৫ মিনিট পর সাদিয়ার ফোনে ফোন আসে। স্ক্রিনে ভেসে উঠেছে আসিফ নামটা। নামটা দেখা মাত্রই সাদিয়ার ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে। কল রিসিভ করে কানে নিতেই সাদিয়ার মুখটা গম্ভীর হয়ে গেলো। কেন না ওইপাশ থেকে আসিফ তাকে জানালো,
-সরি সাদিয়া! আসলে মিটিং এ ফেসে গেছি তাই আজ হয়তো মিট করা হবে না। কিন্তু অবশ্যই আমরা মিট করবো কিন্তু অন্য সময়ে। ঠিক আছে বেবি? প্লিজ মন খারাপ করো না।
সাদিয়া নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
-না না ঠিক আছে। খুব বেশি ব্যস্ত তাইনা?
ওপাশ থেকে আসিফ বলল,
-হ্যাঁ। জানোই তো এখন একটা ক্রাইসিস এর মধ্যে আছি। টাকার খুব দরকার তাই আসলে…….
সাদিয়া উৎসুক হয়ে বলল,
-কত টাকা দরকার তোমার আমি কি তোমাকে হেল্প করতে পারি?
ওপাশ থেকে আসিফ বলল,
-এতো বেশি না ২৫ লাখ! কিন্তু তুমি চিন্তা করো না সব এরেঞ্জ হয়ে যাবে যতই হোক আমি তো আর হবু শ্বশুরবাড়ি থেকে টাকা নিতে পারবো না।
সাদিয়া আসিফকে চুপ করিয়ে বলল,
-কেন পারবে না? আমার টাকা কি তোমার টাকা নয়? আমি এক্ষুনি আমার ব্যাংক থেকে তোমার ব্যাংকে ২৫ লাখ টাকা ট্রান্সফার করে দিচ্ছি। তুমি আর টেনশন করো না।
আসিফের গলায় খুশি খুশি ভাব। তবুও সাদিয়াকে বলল,
-এটার কি দরকার ছিল সাদিয়া? আমি মেনেজ করে নিতাম। হয়তো লন নিতে হতো তাতে কি?
সাদিয়া আবার শাসনের সুরে বলল,
-কেন? লন নিতে হবে কেন? আমার টাকা মানেই তোমার টাকা তাই এখন চুপ করে নিজের কাজ করো!
ফোনটা কেটেই সাদিয়া কান্নায় ভেঙে পড়লো। সে খুব আশা নিয়ে নিজেকে সাজিয়ে এসেছিল আসিফের সাথে দেখা করবে বলে। কিন্তু হয়তো তার ভাগ্যে নেই!
হঠাৎ একটা লোক সাদিয়ার দিকে একটা পানির বোতল এগিয়ে দিয়ে বলল,
-এই যে মিস! আপনার কান্নার জন্য তো সব মেকআপ উঠে গেলো? এবার কি হবে? তাড়াতাড়ি পানিটা খেয়ে চোখটা মুছে নিন! নয়তো বাচ্চারা ভূত ভাবতে পারে! এমনকি আপনিও আয়না দেখে ভয় পেতে পারেন, কেননা আপনি নিজেও তো একটা বাচ্চা!
সাদিয়া এবার চটে গেলো। লোকটা কি তার বয়স জানে যে এভাবে তাকে বাচ্চা বলছে? ঠিক সময় সে বিয়ে করলে এখন তার বাচ্চারা স্কুলে যেত! হুহ!
-আপনি কি আমার বয়স জানেন? হুট করে বাচ্চা বলে দিলেন?
লোকটা বাঁকা হেসে বলল,
-রাস্তায় এমন ফ্যাঁচফ্যাঁচ করে তো বাচ্চারাই কাঁদে! তাই নয় কি?
সাদিয়ার এবার হুশ এলো। আসলেই তো সে তো ভুলেই গেছিলো সে রাস্তায় আছে। তাড়াতাড়ি চোখটা মুছে নিল সে।
,
,
,
চলবে………….❤️
(অনুভূতিরা শীর্ষে, এটা একটা উপন্যাস। এখানের প্রতিটা চরিত্রের আলাদা কাহিনী থাকবে। কোন চরিত্রই এখানে অবান্তর নয়। তাই আশা করবো ধৈর্য্য ধরে উপন্যাসটা পড়বেন। আজকাল অনেক ছেলেমেয়েরাই সাদিয়ার মতো ভালোবাসার নাটকের শিকার হচ্ছে। এই প্রেক্ষিতে সাদিয়ার চরিত্রটি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করবো।)