অনু্ভুতিরা শীর্ষে পর্ব ৫

#অনুভূতিরা_শীর্ষে 💗
#লেখনিতে_সুমাইয়া_ইসলাম_মিম
#পর্ব_৫
.
আস্তে আস্তে রুবাপুর বিদায় হওয়ার দিন ঘনিয়ে আসছে৷ পরিবারে বড় মেয়ের বিয়ে তাই সবকিছুই জাঁকজমকপূর্ণ হতে হবে। কোনখানেই রাখছে না কোন ত্রুটি। আমার দুলাভাই একজন বিজনেসম্যান। হাহ! বিজনেসম্যান আমার একদম পছন্দ না। তারা পরিবারকে কখনো সময় দিতে পারে না। সবসময় কাজ দেখায়। কিন্তু আপু তো আরফান ভাইয়া বলতে পাগল। আপু আর ভাইয়ার দুই বছরের রিলেশনশীপ। একে অপরকে খুব ভালোবাসে। আর ভাইয়া আপুকে যথেষ্ট সময় দেয়। কিন্তু আরফান ভাইয়ার অতিরিক্ত পজিসিভনেস আপুর বিরক্তির কারন। হাহা! বরং আমি বলবো আমার বোনটা একটা নিরামিষ, সারাক্ষণ বইয়ে ঢুবে থাকে। হুহ!

কাল রাতে রাত্রির সাথে প্যাঁচাল পাড়তে পাড়তে কখন ঘুমিয়েছি খেয়াল নেই। ফোনের শব্দে ঘুম থেকে জাগ্রত হলাম৷ হাতরে ফোনটাও খুঁজে পাচ্ছি না। অবশেষে পেটের নিচে ফোনটা পেয়ে রিসিভ করে কানে নিলাম। ঘুম ঘুম কন্ঠে বললাম,
–আসসালামুয়ালাইকুম! কে?
ওপাশ থেকে হাসির শব্দ শোনা গেলো। তারপর হাসি থামিয়ে বলল,
-আমার ঘুমকুমারী ছোট বউয়ের এখনো ঘুম ভাঙে নি?
আমি মুখ থেকে বিরক্ত হওয়ার শব্দ বের করে বললাম,
–ওই দোকানদার নিজের বউরে ফোন না দিয়া আমার লগে কি? আমার সাধের ঘুম!
আরফান ভাইয়া হো হো করে হেসে দিলো। তারপর বলল,
-আচ্ছা আমি দোকানদার কিভাবে হলাম?
আমি এবার বিছানায় আসন করে বসে বললাম,
–আপনার কাজ কি? বিজনেস মানে ব্যবসা! সহজ ভাষায় বেচা কেনা! আর যারা বিক্রেতা তাদের সহজ ভাষায় বলে দোকানদার! বুঝলেন আমার সৎ জামাই!
আরফান ভাইয়া আবার হেসে বলল,
-আমার লজিকুইনের লজিকে জোর আছে! হাহা!
আমি হালকা হেসে বললাম,
–কি আমার আমার লাগাইছেন? আমার জামাই শুনলে আপনারে ঠেংগাইবো!
আরফান ভাইয়া বিড়বিড় করে বলল,
-অলরেডি একবার ঠেংগানি খাওয়া হয়ে গেছে।
যদিও ক্লিয়ার ভাবে বুঝি নি কি বলল তাই আবার জিজ্ঞাসা করলাম,
–কি বললেন বুঝিনি! আবার বলুন!
আরফান ভাইয়া কোনমতে বলল,
-আরে কিছু না। তা বলো কেমন আছো?
–ভয়ংকর আছি!
আরফান ভাইয়া আমার উত্তরে অবাক হয়ে বলল,
-ভয়ংকর মানে?
আমি মুচকি হেসে বললাম,
–ওমা! ভয়ংকর মানে বুঝেন না? আপনাকে যে কে ডিগ্রি দিলো!
আরফান ভাইয়া এবার সিরিয়াস হয়ে বলল,
-সুবাহ?
আমি হালকা হাসার চেষ্টা করে বললাম,
–সরি! আরে ভয়ংকর মানে খুব ভালো। আপনার শ্বশুরবাড়ির কেউ আমাকে পাত্তাই দেয় না। আপনার বউ আমার মুখে খাবার তুলে দেয়। পায়ের উপর পা তুলে খাচ্ছি তাই বলেছি ভয়ংকর ভালো আছি।
কথাটা শেষ হওয়ার সাথে সাথে দুজনেই হেসে দিলাম। বেশ কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রাখলাম। আজ শুক্রবার বিধায় কেউ ঘুমের ডিস্টার্ব করে নি। ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করে নিলাম। আজ আমি আর রুবাপু যাবো শপিং করতে। বাকি সবার শপিং হলেও আমারটা আমিই করবো৷ কেননা আমার জন্য যেই লেহেঙ্গা এনেছে তা আমার বিন্দুমাত্র পছন্দ হয় নি। তাই আজ আবার লেহেঙ্গা সহ হলুদ, বউভাত, ঘরোয়া রীতির জন্য শাড়ি কিনবো।

.
আপু আমাকে বসুন্ধরা যাওয়ার জন্য জোর করছিল এক ধমকে চুপ করিয়ে দিয়েছি। ওখান থেকে যে দামে আমি একটা ড্রেস নিবো তার থেকে বাইরে থেকে তিনটা কেনা যাবে। জামা পড়ে তো আমি মানুষকে বলে বেড়াবো না যে আমি বসুন্ধরা থেকে নিয়েছি! আমার কাছে জামাটাই মুখ্য কোথা থেকে নিয়েছি সেটা নয়! অনেক ঘুরে আমি ইস্টার্ন প্লাজা থেকে দুইটা লেহেঙ্গা নিয়েছি আর কিছু জুয়েলারি। শাড়িও নিয়েছি। যমুনা ফিউচার থেকে বাকি শপিং শেষ করলাম। বাসায় ফিরার সময় রাস্তায় এতো জ্যাম ছিল। গাড়িতে বসেই কাটিয়েছি প্রায় ঘন্টা দুই। আরফান ভাইয়াও এসেছিল কিন্তু তাহার জরুরি কনফারেন্স থাকায় ছুটলো। আরফান ভাইয়া যাওয়ার আগে আমার হাতে একটা বক্স ধরিয়ে দিয়েছে। সেটা খুলার জন্য আমার অনেক বেশি এক্সাইটমেন্ট কাজ করছে। চেয়েছিলাম গাড়িতেই খুলতে কিন্তু আপু জোর করে হাত থেকে নিয়ে পিছনের সিটে রেখে দিল। তারপর ধীরে সুস্থে আপু ড্রাইভ করা শুরু করলো।

বাসায় এসে এক দৌড়ে বক্সটা নিয়ে রুমে চলে গেলাম। তাড়াতাড়ি র‍্যাপিং পেপার ছিড়ে একটা মিডিয়াম সাইজের বক্স আবিষ্কার করলাম। বক্সটা খুলতেই আমি হা! একটা কিউট শিনচ্যান এর সফট টয়! এটা তো ভালোই দুর্লভ! আমি কত্ত খুঁজেছি কিন্তু পাই নি। তারপর হাতে পেলাম একটা রঙিন কাগজে মোড়া প্যাকেট। প্যাকেটটা খুলতেই নজরে এলো সুন্দর একটা লেহেঙ্গা। আমি অবাক এতো সুন্দর! কালো পাথরে কাজ করা! আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে দোপাট্টা। লেহেঙ্গাটা হালকা কাজের কিন্তু বেশ গরজেয়াস। তারপর হাতে এলো পাঁচটা বক্সে বিভিন্ন রকমের চকলেট। ইয়াম! পরক্ষনে সবার প্রথমে মাথায় এলো আরফান ভাইয়া আমার জন্য যদি লেহেঙ্গা কিনেই থাকে তাহলে আমাকে আগে বলল না কেন? আমি লেহেঙ্গা কেনার সময়ও মানা করে নি। তাহলে কি ভাইয়া দেয় নি? কে দিল? তাড়াতাড়ি ফোন লাগালাম আরফান ভাইয়াকে।
-আরে ঘুমকুমারী! এতো তাড়াতাড়ি আমাকে মনে পরলো? মাত্র বের হলাম কনফারেন্স থেকে! বলো।
আমি সরাসরি বললাম,
–ভাইয়া আমাকে কি গিফট করেছো তুমি?
আরফান ভাইয়া থতমত খেয়ে বলল,
-কেন পছন্দ হয় নি?
আমি আবার বললাম,
–অনেক পছন্দ হয়েছে। এবার বলো কি গিফট করেছো আমাকে?
আরফান ভাইয়া কথায় ইতস্তত করছে। তারপর সিরিয়াস হয়ে বলল,
-সুবাহ? তুমি কি আমাকে জেরা করছো?
আমি হাফ ছেড়ে বললাম,
–জেরা তো আমি আমার বাপকেও করি! তা এটা বলো তুমি যখন আমার জন্য লেহেঙ্গা কিনেছোই তাহকে আমাকে লেহেঙ্গা কিনার সময় মানা করলে না কেন? এখন আমি তিনটা লেহেঙ্গা কিভাবে পড়বো?
আরফান ভাইয়া একটু হাফ ছেড়ে বলল,
-সমস্যা কি তিন দিনে তিনটা পড়বে। আচ্ছা আমার এখন একটা মিটিং আছে আমি তোমার সাথে পরে কথা বলি ঠিক আছে সুবাহ?
আমি কিছু বলার আগেই ভাইয়া ফোন কেটে দিল।
আর আমি মনের সুখে চকলেট খাচ্ছি আর শপিং গুলো দেখছি।।

.
মাত্র গোসল করে বেরিয়েছে সাদাদ। হঠাৎ তারউপর আক্রমণ হলো। সাদাদকে বিছানায় ফেলে তার উপর উঠে ক্ষিপ্ত গলায় বলল,
-শালা! তোকে কে বলছে আমার শালিকাকে লেহেঙ্গা গিফট করতে? আজকে যেই প্যাঁচে পড়ছিলাম! আল্লাহ বাঁচাইছে। হারামি!
সাদাদ আরফানের কথা শুনে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। তারপর বলল,
–দূর হো শালা! কি ভার! সর। আমার বউকে আমি দিবো না তো তুই দিবি?
আরফান সাদাদের উপর থেকে সরে বিছানায় বসে বলল,
-সে যা খুশি দে কিন্তু আমাকে একটু বলবি তো! আমাকে যেভাবে চেপে ধরছিলো! আল্লাহ! একটুর জন্য ধরা খাই নাই। বলে আমাকে কি গিফট করছো বলোতো!
সাদাদ শব্দ করে হেসে দিলো। বাম হাতে ঝাকড়া চুলে হাত বুলিয়ে বলে উঠলো,
–এটাই আমার সুবাহ!
,
,
,
চলবে…………..❤️

(কালকে দুইটা পর্ব দিতে পারি ইনশাআল্লাহ, সুস্থ থাকলে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here