#অনুভূতির_অন্তরালে❤️🔥
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ০৩
চোখের অশ্রু গড়িয়ে গড়িয়ে বইয়ের উপর পড়ছে। খানিকটা ভিজে গেল বইয়ের পাতা। তবুও থামলো না আমার কান্না। শব্দহীন চাপা রাখা সেই কান্না। মাঝে মাঝে ফুঁপিয়ে উঠছে শরীরটা। নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করছি, কিন্তু বরাবরই ব্যর্থ সেই কান্না। একহাতে ফোনটা কর্নপথের কাছে ধরে রাখা, অন্যহাতে বইয়ের লাইন টানছি। কিছুক্ষণ পর ওপাশ থেকে শোনা গেল ভাইয়ার কন্ঠস্বর..
— “আরে পাগলী কাঁদছিস কেন? খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসবো। তুই যদি এমন করিস তাহলে কিন্তু আর ফিরবো না।”
শব্দহীন কান্নার শব্দ এবার যেন শব্দময় হয়ে উঠলো। ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদতে কাঁদতে বললাম..
— “আসতে হবে না তোকে! সারাজীবন ওখানে থাক তুই। আমিও যেথায় ইচ্ছে চলে যাবো।”
ভাইয়ার সাথে করা বলার মাঝ পথে কারো চরণ ধ্বনি কানে এলো আমার। মাথা তুলে দরজার দিকে অবলোকন করতেই অরিশ ভাইয়াকে দেখতে পেলাম। সে সরু চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এগিয়ে এসে খপ করে ফোনটা নিয়ে লাইন কেটে দিল। আচম্বিতে এমন হওয়াতে মাথার উপর দিয়ে গেল সবকিছু। মুখ ভাড় করে আঙুল তুলে বললাম..
— “ফোন নিয়েছেন কেন আমার? আমার ফোন দিন?”
— “কেন? এতোক্ষণ আমার নামে কেঁদে কেটে সমুদ্র বানিয়ে বিচার দিয়ে বুঝি হয়নি। আরো বিচার দিতে হবে? এতো পানি কোথায় পাস, একটু বলবি? আচ্ছা তোর চোখজোড়া কি প্রশান্ত মহাসাগরে পাইপের সাথে জোড়া দেওয়া।
মাঝে মাঝে মনে হয়, তোর চোখের পানিগুলো একত্রিত করলে তাকেও হার মানাবে।”
ভেংচি কেটে নাক ফুলিয়ে অন্যদিকে ফিরে রইলাম আমি। এই লোকটার সাথে কথা বলবো না জীবনেও। কিন্তু আমার সেই কথা রইলো না বেশিক্ষণ। আমার খুব কাছে বসে পড়লেন তিনি। ফোনটা বইয়ের উপরে রেখে হাতজোড়া আমার কাঁধে রাখলেন। এতেও প্রতিক্রয়া দেখালাম না আমি। বিনিময়ে একগাল চেপে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিলেন আমায়। সামনে গড়িয়ে পড়া ছোট ছোট চুলগুলো হাত দিয়ে পেছনে ঠেলে দিলেন তিনি। স্বযত্নে চোখ দুটো মুছিয়ে দিলেন। আদুরে গলায় বললেন..
— “কি হয়েছে পিচ্চি? তারুণ্যের কথা মনে পড়ছে?”
ঠোঁট উল্টে সায় দিলাম আমি! হ্যাঁ ভাইয়ার কথা প্রচুর মনে পড়ছে। পেছন থেকে বালিশ এনে কোলের উপর রাখলো সে। আমার মাথাটা সেখানে রাখলেন। গালে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল..
— “আমি তারুণ্যের মতো হাত বুলিয়ে দিচ্ছি, ঘুমিয়ে পড় পিচ্চি!”
নয়ন যুগল গ্ৰথণ করে মাথা হেলিয়ে দিলাম তার কোলে। তিথি স্বযত্নে গালে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। এটাই আমার বৈশিষ্ট্য। কেউ গালে হাত বুলিয়ে দিলে অতি শ্রীঘ্রই ঘুমিয়ে পড়ি।
কেটে গেল বেশ কিছুক্ষণ। মুখ খুললো অরিশ ভাইয়া। বলল..– “আজকে ভার্সিটিতে যাস নি কেন?”
বিপরীতে দৃঢ়ভাবে মাথা গুঁজে দিলাম তার পেটে। একহাতে জড়িয়ে ধরে বলল..
— “শরীরটা ভালো লাগছিল না.। তাই যাই নি?”
— “শরীর না মন!”
তার একরোখা প্রশ্নে কোনো জবাব দিলাম না আমি। সত্যিই আমার মন ভালো ছিল না। তাই যাইনি। ভাইয়ার হাতটা মাথার গহিনে নিয়ে বলল..
— “কালকে আমার ক্লাস আছে। মিস্ যাতে না-হয়।”
বিনিময়ে এবারও প্রতিউত্তর দিলাম না আমি। বেশ কিছুক্ষণ কেটে গেল নিরবতায়। গুটিয়ে রাখা আমার হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিলো সে। স্বযত্নে কিছু একটা করলো হাতের আঙুলে। মুখের উষ্ণ গরম ফুঁ দিলো। অতঃপর গভীর ভাবে অধর ছুয়ে দিল হাতের উল্টো পিঠে। চোখের সামনে হাত এনে বলল..
— “দেখ তো কেমন লাগছে?”
বেষ্টিত লোচন যুগল মেলে তাকালাম আমি। নখের উপর ব্রাউন্ড কালার্স নেলপলিশ দেখে কদাচিৎ হাসি ফুটে উঠল ঠোঁটের কোণে। নিমেষেই মন ভালো হয়ে গেল আমার। তট জলদি উঠে বসলাম আমি। মন দিয়ে নখগুলো দেখতে লাগলাম। পরক্ষণেই অন্যহাত এগিয়ে দিলাম তার দিকে। দাঁত কেলিয়ে বললাম..
— “এই হাতেও দিয়ে দে..। মানে দিয়ে দাও”
সাথে সাথে চোখ গরম করে তাকাতেই বচন পাল্টে গেল আমার। বাকি নখে নেইলপলিশ দিতে লাগলো সে। হাতে দেওয়া শেষ হতেই পা এগিয়ে দিলাম। এবার ভ্রু কুঁচকালো সে। সূচালো কন্ঠে বলল..
— “এখন তোর পায়েও আমি হাত দিবো।”
নিজের গালে চড় মারতে ইচ্ছে করলো এবার। আমার চেয়ে কতোবড়, তার দিকে কি-না আমি পা এগিয়ে দিয়েছি। ভাবা যায়। খুশিতে মানুষ আত্মহারা হয়, আর আমি বুদ্ধিহারা হলাম। ততক্ষণাৎ পা সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতেই খপ করে ধরে ফেলল ভাইয়া। নিজের কোলে নিয়ে নখে নেইলপলিশ লাগিয়ে দিলেন। পা সরিয়ে অন্যপায়ে নিয়ে সেটাতেও লাগিয়ে দিলেন। অবশেষে হাতে অবস্থান করা নেলপলিশের কৌটা আমার হাতে দিয়ে দিলেন। সামনের চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে বললেন..
— “গুড নাইট পিচ্চি!”
হুট করে কি হলো আমার জানা নেই। এক লাফ দিয়ে ভাইয়ার কোলে উঠে দুহাতে জড়িয়ে নিলাম তাকে। আমার এমন ব্যবহারে তিনি অবাক হলেন কি-না জানা নেই। পরপর দুইবার গালে অধরের স্পর্শ দিয়ে বলল..
— “গুড নাইট এন্ড থ্যাংক ইউ!”
— “তুই খুশি তো?”
— “খুব খুব খুবইইইইই।”
______________
আজ খুব সকালে ঘুম ভঙ্গ হলো আমার। রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর ফলে এমন হয়েছে। ফ্রেশ হয়ে নিচে নামলাম। আজকে অরিশ ভাইয়ার ক্লাস আছে। কালকে বারবার বলেছে, আজকে যাতে তার ক্লাস মিস্ নাহয়। কিন্তু নিচে কারো উপস্থিতি অনুভব করতে পারলাম না। মামনির কি তাহলে এখন ঘুম ভাঙ্গে নি। কিন্তু সে তো বেলা বেশি করে উঠে না। তাই চুপচাপ মামুনির রুমের দিকে পা বাড়ালাম। কিন্তু সেই অবধি পৌঁছাতে সক্ষম হলাম না। তার আগেই ডাক পড়লো অরিশ ভাইয়ার দিদার। পিছিয়ে নেমে এলাম। তিনি মুখে পান চিবুতে চিবুতে সোফায় বসে আছেন। ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে পানের রস পড়ছে। তিনি তা টিস্যু পেপার দিয়ে পরিস্কার করে নিচ্ছেন। শুধুমাত্র তারজন্য প্রতি মাসে অধিক টিস্যুর প্রয়োজন পড়ে। দিনের ৩২ খানা পান না খেলে তার চলে না। এটা নাকি তার অভ্যাস। এদিকে দাঁত গুলো টকটকে লাল। দেখতে বিচ্ছিরি লাগছে। দিদার এমন দাঁত দেখলে বরাবরই আমার ইচ্ছে করে, ওয়াশরুমে ব্যবহৃত ব্রাশ দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করিয়ে দিতে। আচ্ছা সেই ব্রাশ দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করলে ঝকঝকে হবে তো। না-কি অন্য ব্যবস্থা করতে হবে। ভেংচি কাটলাম আমি। এদিকে টিস্যু দিয়ে মুখ পরিষ্কার রাখে। কিন্তু দাঁতের যত্নের বেলায় নাম নেই। যত্তসব। হাই তুলে বললাম..
— “ডাক দিলে কেন?”
— “আজকে ভোরের দিকে তোর মামনি আর মামা গ্ৰামের বাড়িতে গেছে। দুদিন পরে ফিরে আসবে। এই দুদিন তুই রান্না করবি! বুঝতে পেরেছিস। এবার যা সকালে নাস্তা বানিয়ে ফেল। ওরা খেয়ে ভার্সিটিতে যাবে তো..
ভ্রু কুঁচকে গেল আমার! তুলনামূলক কিছুটা উপরে অবস্থান করলো। শেষে কিনা আমি রান্না করবো। তা খাওয়ার উপযুক্ত থাকবে তো না-কি শুধু বাস্কেট ভরবে। অনেকবার মামুনির কাছে রান্না শিখতে চেয়েছিলাম কিন্তু শিখতে দেয়নি। মাথা নিচু করে বললাম..
— “দিদা আমি তো কখনো রান্না করিনি! কিভাবে রান্না করব..
আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই তিনি মুখ খুললেন..
— “পারো না তাতে কি হয়েছে। এখন পারবে..! সারাদিন মহারানীর মতো খেলে চলবে না। একটু কাজও করতে হবে। কি জানো বলে ঐটাকে (কিছুক্ষণ ভেবে) ইউটিউব। এটা দেখে রান্না করবে। আর এটায় কোনটা কতটুকু পরিমাণ ব্যবহার করতে হবে। লেখা আছে.
মনটা নিমিষেই খারাপ হয়ে গেল। হাত বাড়িয়ে তার এগিয়ে দেওয়া লিস্ট-টা নিয়ে কিচেনে ছুটলাম।
অরিশ ভাইয়ার জন্য কফি, বাকিদের জন্য লেবু চা। সাথে ডিম সিদ্ধ। পরোটা, সবজি ভাজি করলাম। আমি একটাই যে করেছি তা নয়। আমার পাশে বসে ফ্লীমি স্টাইলে ডায়লক দিয়ে গেছে দিদা। সবজি কাটতে গিয়ে হাতের করতলের কিছুটা অংশ কেটে গেছে। রক্ত বেরিয়েছে স্বল্প পরিমাণে। মাথা নত করে সহ্য করে নিয়েছি, সেই যন্ত্রনাটা। হালকা টু শব্দটি করলে হয়তো আবার আমার পরিবারকে টেনে নিয়ে আসবে সে। সেটা হতে দিলাম না। মানুষের শারীরিক আঘাতের চেয়ে মানসিক আঘাত-টা বেশি তীব্র হয়।
ঘরে এসে আরেক দফা ফ্রেশ হয়ে নিলাম। এতোক্ষণ কিচেনে থাকার কারণে হাঁপিয়ে উঠেছি আমি। এর চেয়ে ভালো উপায় জানা ছিল না আমার। ফ্রেশ হয়ে কাঁটা হাতে মলম লাগিয়ে নিলাম। শরীরটা প্রচুর দূর্বল লাগছে। কিন্তু পাত্তা দিলাম না। ছুটলাম ভার্সিটির উদ্দেশ্যে।
#অনুভূতির_অন্তরালে❤️🔥
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব:: ০৪
একের পর এক বেতের আঘাতে জর্জরিত হয়ে সলি হাতের তালু। রীতিমত রক্ত গড়িয়ে পড়ছে কাঁটা জায়গা থেকে। সেই যন্ত্রনা সহ্য করার মতো ক্ষমতা আমার নেই। ক্রমাগত হাত জোড়া অবশ হয়ে আসছে। হাতের ফাঁক দিয়ে রক্তের ধারা গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে নিচে। অশ্রুধারা গড়িয়ে পড়ছে বন্ধ নয়ন যুগল থেকে। কিন্তু তাতে সামনে থাকা মানুষটির কোনো ভাবাবেগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। সে নিজের মতো মেরেই চলেছে। একসময় মনে হলো, আঘাত করা থেমে গেছে। কিন্তু যন্ত্রনা রয়ে গেছে। তদানীং কিছুর আওয়াজ কানে এলো। পিট পিট চোখ খুলে তাকালাম আমি। আমার থেকে কিছুটা দূরে বেতের ভাঙ্গা অংশ পড়ে আছে আর ভাইয়া অন্যদিকে ফিরে ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে। হয়তো নিজের ভেতরকার রাগ কমানোর চেষ্টা করছেন। আমাকে এতো আঘাত দেওয়া মানুষটি আর কেউ নয়, অরিশ ভাইয়া ছিলেন। শব্দ করে বেরিয়ে গেলেন তিনি। আমি মাথা নিচু করে সেখানে দাঁড়িয়ে আছি। একহাত দিয়ে আরেকটা হাত স্পর্শ করার চেষ্টা করছি। কিন্তু স্পর্শ করার আগেই জ্বলে উঠল।
পায়ের শব্দে ফিরে তাকালাম আমি। অরিশ ভাইয়া আবার এসেছে। এবার কি করবে তা জানা নেই আমার। এগিয়ে এলেন আমার কাছে। রক্তচক্ষু করে তাকালেন আমার দিকে। ভয়ে অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো আমার। তাকে কখনো এতো রাগতে দেখি নি। দাঁতে দাঁত চেপে বলল..
— “যখন পড়া শিখে আসতে পারো না তখন ভার্সিটিতে আসো কেন? বাড়িতে বসে থাকবে। ফার দ্যাট, আমার ক্লাসে পড়া না শিখলে, আসবে না। তার শাস্তি আরো ভয়ানক হবে। আউট..
শেষের কথাটা উচ্চারণ করলেন সর্বশক্তি দিয়ে। ভয়ে ভয়ে ঢোক গিললাম আমি। ঠোঁট যুগল নাড়িয়ে কাঁপা কাঁপা স্বরে বললাম..
— “আ-আমি আ-আসলে..
— “জাস্ট শাট আপ এন্ড আউট মাই ক্লাস। মাঠের মাঝখানে একপা তুলে দাঁড়িয়ে থাকবে। নাউ আউট..
ক্লাসে অবস্থিত সকলে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আজ পর্যন্ত কাউকে এতোটা হাইপার হতে দেখে নি তারা। দেখবেই বা কি করে, অনার্স তৃতীয় বর্ষের একজন তরুনীকে পড়া না শেখার কারণে এভাবে মারতে পারে। ধারণা ছিল না। কাঁধে ব্যাগ নিয়ে নত মাথা বেরিয়ে গেলাম বাইরে।
জুনিয়র, সিনিয়র সবাই তাকিয়ে আছে আমার দিকে। কেউ কেউ বিদ্রুপ করছে। সবটা মুখ বুঝে সহ্য করতে হচ্ছে আমাকে। প্রতিক্রয়া করার উপায় নেই। মাথা ভন ভন করে ঘুরছে। প্রচন্ড রোদে ঘেমে একাকার হয়ে গেছি। শরীরটা প্রচন্ড জ্বলছে। বুঝতে পারলাম, এলার্জি শুরু হতে চলেছে। সামান্য গরমে থাকলেই এলার্জি জনিত সমস্যা দেখা যায়। দৃষ্টি গেল আমার থেকে কিছুটা দূরে। ঘন্টা পরার কারণে অরিশ ভাইয়া বেরিয়ে গেছে ক্লাসরুম থেকে। তবে তার ফেসটা স্পষ্ট নয় আমার কাছে। ঝাঁপসা লাগছে অনেকটা। শুধু তার পড়নের জামা দিয়ে চিনতে পারছি। কয়েকবার চোখ পরিষ্কার করে তাকালাম কোনো লাভ হলো না।
তৎক্ষণাৎ এগিয়ে এলো আমার বন্ধুমহল। আমার কাছে এসে পানির বোতল এগিয়ে দিল। বোতলটা নেওয়া মতো শক্তিটুকু অবকাশ নেই। আমাকে এমন অবস্থায় দেখে আরশি বলল..
— “ঋনী, পানিটা খেয়ে ছায়ায় চল।”
বিনিময়ে টেনে টেনে বললাম..– “আরু, আমাকে একটু ধরবি। আমি আর শরীরের ভার বইতে পারছি না।”
তট জলদি আমাকে ধরলো সে। শরীরটা ধীরে ধীরে নেতিয়ে গেল। ভারটুকু ছেড়ে দিলাম তার উপরে। আরশি আমার এমন অবস্থা দেখে গালে হাত রাখল আমার। মৃদু মৃদু চপল দিয়ে বলল..
— ঋনী। কি হয়েছে তোর। এমন করছিস কেন?”
— “আমার পুরো শরীর জ্বলছে। সহ্য করতে পারছি না।”
দ্বি মুহূর্ত অতিবাহিত হওয়ার আগে আমার হাত পায়ের দিকে তাকালো আরশি। খানিকটা চমকে উঠতে দেখা গেল। শক্তহীন নিস্তেজ হাতটা আমার স্বল্প উপরে উঠিয়ে বলল..
— “ঋনি, তোর শরীর লাল হয়ে ফুলে ফুলে গেছে কেন? এলার্জি উঠেছে নাকি!”
কোনো প্রকার সায় দিলাম না আমি। পরক্ষণেই প্রশ্ন ছুঁড়ল আবার..– “তোর গালে হাতে রক্ত কেন?”
সেই উত্তর দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হলো না। নেতিয়ে পড়লাম আরশির বাহুডোরে। তবে জ্ঞান শক্তি পুরো হারালো না।
_______________________
সূর্য পশ্চিম দিকে হেলে পড়েছে অনেকটা। বিকেলের হালকা রৌদ্র মাখা হাওয়া প্রবেশ করছে রুমের ভেতরে। হালকা হালকা দুলছে ঘরের পর্দাগুলো। বাইরে থেকে চেঁচামেচির আওয়াজ ভেসে আসছে। সেই চেঁচামেচির আওয়াজে ঘুম ভাঙল আমার। ঘুম ভাঙতেই নিজেকে নিজের রুমে আবিষ্কার করলাম। মাথার উপরে সিলিং ফ্যান চলছে। শরীরটা ভাড় হয়ে আছে। ধীরে ধীরে উঠে বসার চেষ্টা করলাম। বাড়িতে ফেরার পর ডাক্তার এসেছিলো। আমার বাম বাহুতে ইনজেকশন দিয়েছে। হাতটা ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে। সাথে সাথে হাতটা চলে গেল বাহুতে। তারপরে সম্পূর্ণ হুশ উবে গেছিলো। ধীরে ধীরে নেমে পড়লাম নিচে। জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলাম।
আধ ঘন্টা পর বেরিয়ে এলাম ওয়াশরুম থেকে। মাথার টাওয়াল খুলে মেলে দিলাম বেলকেনিতে। বেলকেনিটা পশ্চিম দিকে হওয়াতে বিকেলের পশ্চিমা রবি দেখা যায়। সেখানে গিয়ে দাঁড়ালাম কিছুক্ষণ। তদানীং পেছনে থেকে জড়িয়ে ধরায় ভরকে গেলাম আমি। পেছনে আরশি দাঁড়িয়ে আছে। সামনে দিকে তাকিয়ে বললাম..
— “আরু ছাড়, কি করছিস?”
ছাড়ল আরশি তবে দাঁড়াতে দিলো না। টেনে রুমের ভেতরে নিয়ে গেল। বসিয়ে দিল বেডের উপরে। স্যুপের বাটিটা হাতে তুলে নিল। এক চামচ নিয়ে মুখে ঢুকিয়ে দিল আমার। বিপরীতে হাঁ করে রইলাম কিছুক্ষণ। গলার দিকে স্যুপ নামতেই সরু চোখে তাকিয়ে বললাম..
— “আরু, এসব নিয়ে যা-তো এখান থেকে। আমি খাবো না।”
বলেই মুখ ফুলিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে রইল। গাল চেপে মুখটা আরশির দিকে এনে আরো এক চামচ গলিয়ে দিল ভেতরে। বলল..
— “সন্ধ্যা হতে চললো। সারাদিন কিছু খাসনি। এখন না খেলে অসুস্থ হয়ে পড়বি। এখন আমার কথা শুনছিস না তারুণ্য ভাইয়া এলে ঠিক শুনবি।”
আমার চোখ চড়কগাছ। স্যুপগুলো গলা থেকে নিচে নামতে ব্যর্থ হলো। ফেলে দিলাম মেঝেতে। কৌতূহলী কন্ঠে বললাম..– “তুই ভাইয়াকে ফোন করেছিলি?”
— “হ্যাঁ করেছি। কিন্তু ভাইয়া রিসিভ করেনি। হয়তো ব্যস্ত ছিলো। চিন্তা করিস না, কলব্যাক করলেই সবটা বলে দিবো।”
ব্যান্ডেজ করা হাত বাড়িয়ে স্যুপের বাটিটা টেবিলের উপর রেখে দিলাম। সিরিয়াস ভঙ্গিতে বললাম..
— “তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে? ভাইয়া জানলে এখান থেকে আমাকে নিয়ে চলে যাবে। মামনি কতোটা কষ্ট পাবে, ভাবতে পারছিস। তাছাড়া তুই ..
ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ গভীর ভাবে ভাবল আরশি। বিঘ্ন সৃষ্টি হলো ফোন আসাতে। বেডের উপর আমার ফোনটা বেজে চলেছে। হাত বাড়িয়ে তুলে নিলাম। ভাইয়া ফোন করছে। রিসিভ করতে ভয় করছে। ছোটবেলায় থেকেই আমার কন্ঠস্বর শুনে বলে দিতে পারে আমার মনের অবস্থা। রিসিভ করে ফোনটা এগিয়ে দিলাম আরশির দিকে। সে রিসিভ করে কানের কাছে নিল। ওপাশ থেকে ভেসে এলো ক্লান্তময় কন্ঠস্বর..
— “হ্যালো, বনু। কেমন আছিস!”
নত সুরে উত্তর দিলো আরশি.. — “আমি আরশি বলছি!”
— “ও তুই! তোকে বেশ কয়েকবার ফোন করেছিলাম। কিন্তু রিসিভ করিস নি। শরীরটা ভালো ছিলো না। তাই একটু ঘুমিয়ে ছিলাম। উঠে দেখি তুই ফোন করেছিস।”
— “কি হয়েছে তোমার?” (আকুতি ভরা কন্ঠস্বর)
— “তেমন কিছু না। ইদানিং ঘুম কম হওয়ায় কারণে মাথা ধরে থাকে।”
নিরবতায় কেটে গেল বেশ কিছুক্ষণ। দুজন দুজনার নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পারছে। দুজনের নিরবতা কাটিয়ে মুখ খুললো আরশি..
— “তোমাকে সবাই খুব মিস্ করছে, কবে আসবে?”
— “খুব শীঘ্রই! তোর কিছু লাগবে?”
বিরবির করে উচ্চারণ করলো,, “তোমাকে”। সেই শব্দ ফোনের ওপাশের মানুষটির কাছে পৌঁছালো কি-না জানা নেই। কিন্তু তেমন কিছু লক্ষ্য করা গেল না। বেশ কিছুক্ষণ পর ফোন রেখে দিলো আরশি। আমি শান্তমনে স্যুপ খাচ্ছি। এতোক্ষণে অর্ধবাটি ফাঁকা করে ফেলেছি। ফোনটা বেডের উপর রাখতে দেখে বললাম..
— “কালকে আমার সাথে পীরের কাছে একবার যাস তো? এই অরিশকে এমন তাবিজ করব, যে সারাদিন তরী তরী করবে। তার সাথে হিন্দী ফ্লীমের সিন ঢালব। কিন্তু ভাইয়ার সাথে একটাও কথা বললো না। উম্।”
আরশি একটু ঝুঁকে গেল আমার দিকে। ফিসফিসিয়ে বলল.. — “এইসবে কাজ হবে তো ঋনী। তাহলে আমিও একটা তারুণ্যের জন্য নিয়ে আসব। দেখতে চাই, ঐ সালায় কতোদিন আমাকে রিজেক্ট করে!”
— “ঐটা তোর সালা নয়, জামাই হবে। ভাইকে ভাইয়া থেকে সাইয়া করতে চাস, সালা না। তাই কথা বার্তা সাবধানে বলিস্..
আরশি ঠোঁট উল্টে বলল.. — “সলি”
(