অনুভূতি,পর্ব-৪+৫

অনুভূতি
৪র্থ পর্ব
মিশু মনি
.
৭.
একটা মেয়ে খুব কাছ থেকে তাকিয়ে আছে মেঘালয়ের দিকে। মেয়েটির মুখটি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছেনা। মেঘালয় কে বারবার হাতছানি দিয়ে ডাকছে সে। ডাকতে ডাকতে সে সমুদ্রের তীরে গিয়ে দাঁড়ালো। আবারো উত্তাল ঢেউ এসে ওকে ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়ার উপক্রম।
লাফিয়ে উঠে বিছানার উপর বসে পড়লো মেঘালয়। গত রাতেও এরকম একটা স্বপ্ন ও দেখেছে। মেয়েটির মুখটা স্বপ্নে স্পষ্ট হয়ে ধরা দেয়না। কিন্তু এটুকু অনুভূত হয় যে, মেয়েটি অনেক করুণ ও মায়াভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কিন্তু এর অর্থ কি? ওর অবচেতন মন কি কাউকে নিয়ে এভাবে ভাবছে? যে খুব ভয়াবহ বিপদের দিকে যাচ্ছে আর হাত বাড়িয়ে ডাকছে মেঘালয় কে?
একমনে বসে বসে চিন্তা করতে লাগলো ও। কিছুই ভেবে পাচ্ছে না। যত বান্ধবী আছে, সবাই তো বেশ ভালো আছে। দিব্যি এনজয় করে সবসময়। এরকম মায়াবী দুঃখিনী কেউ তো বন্ধুত্বের তালিকায় নেই। একবার ভাবলো, ধুর, সব স্বপ্নের মানে হয় নাকি? স্বপ্ন তো স্বপ্নই। কিন্তু অবচেতন মন যা ভাবে, সেটাই স্বপ্নে এসে ধরা দেয় এই যুক্তিটা তো ফেলে দেয়া যায় না। অনেক্ষণ ঝিম মেরে বসে রইলো মেঘালয়। আর ঘুম আসছে না। এমনি তে অনেক কল্পনাপ্রবণ আর প্রখর অনুভূতি সম্পন্ন মানুষ মেঘালয়। আর স্বপ্নে কাউকে দেখলে জেগে ওঠার পর তাকে খুব আপন মনে হয়। বারবার তার কথা মনে পড়ে। কিন্তু তার মুখটা তো স্পষ্ট নয়।
মেঘালয় উঠে গিয়ে চোখে মুখে পানি দিয়ে এসে গিটার হাতে নিয়ে বেলকুনিতে এসে বসলো। তারপর টুংটাং করে সুর তোলার চেষ্টা করলো।
একটু পর গেয়ে উঠলো,
“তুমি আর তো কারো নও, শুধু আমার…
যত দূরে সরে যাও রবে আমার…
স্তব্ধ সময় টাকে ধরে রেখে, স্মৃতির পাতায় শুধু তুমি আমার…
কেন আজ এত একা আমি? আলো হয়ে দূরে তুমি….
আলো আলো আমি কখনো খুঁজে পাবো না…
চাঁদের আলো তুমি কখনো……”
এ পর্যন্ত গেয়ে হঠাৎ থমকে গেলো মেঘালয়। বেলকুনি থেকে দেখতে পেলো রাস্তা দিয়ে একটা মেয়ে ছুটে যাচ্ছে। মেয়েটি দেখতে একদম মিশুর মত। মিশু ই মনে হলো। হ্যালুসিনেশন নয়তো? কিন্তু গিটারের শব্দ যদি সত্যি হয়, তাহলে এটা হ্যালুসিনেশন নয়। খুবই দ্রুত হাঁটছে মেয়েটা। মিশু হোক আর যে ই হোক,নিশ্চয় ই কোনো বিপদে পড়েছে। ফাঁকা রাস্তা দিয়ে দৌড়াচ্ছে এভাবে। একবার দেখা উচিৎ বিষয়টা।
গিটার রেখে এক ছুটে বেড়িয়ে আসলো মেঘালয়। লিফটে উঠেও মনে হচ্ছে লিফট একদম ধীরে চলছে। তিনতলা থেকে নামতেও যেন অনন্তকাল চলে যাচ্ছে!
নিচে নেমে ছুটে রাস্তায় এসে দেখলো মেয়েটিকে আর দেখা যাচ্ছেনা। মনটাই খারাপ হয়ে গেলো মেঘালয়ের। এটা হ্যালুসিনেশন নয়,নিজের চোখে দেখেছে ও। মেয়েটি কোনদিকে ঢুকে গেলো কে জানে। ফিরে এসে বাইকটা নিয়ে স্টার্ট দিলো ও। কিছুদূর এগিয়ে এসেই মেয়েটিকে দেখা গেলো। অনেক দ্রুত ছুটে এসেছে মেয়েটা, প্রায় মেইনরোডের কাছে চলে এসেছে। মেঘালয় গিয়ে ওর সামনে বাইক দাড় করালো।
মুখের দিকে তাকাতেই চমকে উঠলো একদম। এটা তো সত্যিই মিশু! খুবই চিন্তিত দেখাচ্ছে মিশুকে। ঘেমে একাকার হয়ে গেছে। ও অবাক হয়ে বলল, এত রাতে তুমি এভাবে কোথায় যাচ্ছো?
মিশু হন্তদন্ত হয়ে বলল, “আমার ছোট বোনটা আলসারের পেশেন্ট। হঠাৎ ও খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ফার্মেসী তে যাচ্ছি।”
– “এভাবে একা বের হয়েছো ভয় করেনা? নিজেই সুস্থ শরীরে বাসায় নাও ফিরতে পারো। বোনের সুস্থতা পরে।”
– “কেন? রাস্তার অমানুষ নামক পুরুষ রা আমাকে ছিড়ে ছিড়ে খাবে?”
প্রশ্নটা মিশুর মুখ থেকে শুনে ধাক্কা লাগলো বুকে। কঠিন একটা সত্য মেয়েটি অনায়াসে বলে ফেলেছে।
মেঘালয় বলল, “সেটাও আমাদের দেশে সম্ভব।”
মিশু বললো, “আমার বাসায় কেউ নেই আর। এই শহরে আমার এমন আপনজন ও কেউ নেই যে এখন ওষুধ এনে দিবে। তাই আমাকে ই যেতে হবে। ছোট বোনটা বুক চেপে ধরে কাঁতরাচ্ছে, সহ্য করতে পারছিলাম না। যার কেউ নেই, তার আল্লাহ আছে।”
মেঘালয় বাইক স্টার্ট দিয়ে বলল, “বাইকে ওঠো।”
একবার বলামাত্র ই মিশু বাইকে গিয়ে উঠলো। এখন এতকিছু ভাবার সময় নেই। তাছাড়া এই দুদিনে মেঘালয় কে যতটা চিনেছে ও, এরকম মানুষ থাকলে কিছুটা ভরসা করা যেতেই পারে। মেঘালয় জোরে বাইক ছেড়ে দিয়ে বলল, “ওষুধ খেলেই কি সুস্থ হবে? নাকি হসপিটালে নিতে হবে?”
– “ওষুধ খেলেই অনেক টা সুস্থ হয়ে ওঠে। আসলে অনেক দিন ধরে সুস্থই ছিলো। মাঝেমাঝে হঠাৎ ব্যথা ওঠে ওর। প্রচুর ভাজাপোড়া খায় আর পানি কম খায় তো।”
– “এটা ঠিক রাখার দায়িত্ব কিন্তু তোমার ই।”
– “হুম,কিন্তু আমিতো বাসায় থাকিনা সারাদিন। মেয়েটা কথা না শুনলে কি করবো বলুন?”
মেঘালয় খুব দ্রুত বাইক নিয়ে ফার্মেসির সামনে এসে দাঁড়ালো। মিশু দোকানে গিয়ে ওষুধ নিয়ে আবার কি যেন ভেবে অর্ধেক ওষুধ ফেরত দিলো। দূর থেকে দেখলো মেঘালয়। তারপর বাইক রেখে দোকানের সামনে এসে মিশুকে জিজ্ঞেস করলো, “কি সমস্যা?”
মিশু আমতা আমতা করে বলল, “না মানে অল্প করে নিচ্ছি। পরে আবার নিয়ে যাবো।”
– “আবার কোনো এক রাতে এভাবে ছুটতে ছুটতে আসবে? তোমরা পারোও বটে।”
মিশু মেঘালয়ের চোখে চোখ রেখে বেশ রাগী গলায় বলল, “এভাবে বিদ্রুপ করছেন কেন? আমার কাছে টাকা নেই আর।”
মেঘালয় লজ্জা পেয়ে গেলো। আসলেই এভাবে বিদ্রুপের সুরে বলাটা উচিৎ হয়নি। সমস্যাটা বোঝা উচিৎ ছিলো। মেঘালয় দোকানদার কে বলল, “ভাইয়া, বিকাশে পে করে দিই?”
দোকানদার বললেন, “জি ভাইয়া দিন।”
– “বিকাশ নাম্বার টা দিন।”
দোকানদার নাম্বার বলতে গেলে মেঘালয় পকেটে হাত দিতে গিয়ে দেখলো প্যান্টে তো পকেট ই নেই। আসলে ও তো রাতে মোবাইল, ওয়ালেট, টাকা পয়সা সব বের করে রেখে একটা কোয়ার্টার প্যান্ট আর টি শার্ট পড়ে ঘুমিয়েছিলো। এখন কি হবে?
মিশু অবাক হয়ে চেয়ে আছে মেঘালয়ের দিকে। নিরুপায় হয়ে গেলে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত মানুষের চেহারা যেমন হয়,মেঘালয়কে ঠিক তেমনি দেখাচ্ছে এখন। মিশুর মায়া লাগছে মেঘালয়ের জন্য। মনেহচ্ছে মেঘালয়ের বোনের জন্য ওষুধ নিতে এসেছে, আর মিশু ওর সাথে বেড়াতে এসেছে। মিশু চুপচাপ চেয়ে আছে ওর দিকে।
মেঘালয় দোকানদারের ফোনটা নিয়ে ওর আব্বুকে কল দিয়ে বলল,”আব্বু এক্ষুনি এই নাম্বারে ২ হাজার টাকা সেন্ড করো তো।”
ওপাশে কি বলল বোঝা গেলো না। মেঘালয় হাসতে হাসতে বলল, “সরি রোমান্টিক সিনে ডিস্টার্ব করার জন্য।”
মিশু বেশ লজ্জা পেয়ে গেলো একইসাথে দারুণ অবাক ও হলো। ফোন দিয়ে আব্বু বলে ডাকলো অথচ এটা কি বললো ও! আব্বুকে কি এভাবে বলা যায়? লজ্জা লাগেনা? ছি ছি… ছেলেটা ভারী দুষ্টু তো!
মেঘালয় ফোনটা দোকানদার কে দিয়ে মিশুর দিকে তাকিয়ে বলল,”কি দেখো?”
মিশু বলল,”এত টাকা দিতে বললেন কেন?”
– “বেশী করে ওষুধ নিয়ে যাও।”
মিশু হা করে চেয়ে রইলো অনেক্ষণ। মেঘালয় মানুষ নাকি দেবদূত! এমন মানুষ ও আছে এখনো দুনিয়ায়! আসলে পর্বতারোহী রা বুঝি সত্যিই খুব ভালো হয়!
দোকানদার জানালেন টাকা এসে গেছে। মিশু ওষুধ নিলো অনেকগুলো। মায়ের প্রেশারের ওষুধ ও নিলো। মেঘালয় ততক্ষণে গিয়ে বাইক স্টার্ট দিয়েছে। মিশু গিয়ে বাইকের পিছনে উঠে পড়লো।
মেঘালয় মনে মনে ভাবলো, “জীবনে প্রথমবার কোনো মেয়ে আমার বাইকের পিছনে উঠেছে। রোদেলাকেও কখনো কলেজে রেখে আসিনি। মিশু নামের মেয়েটাই উদ্বোধন করে দিলো!”
মিশু জিজ্ঞেস করলো, “আচ্ছা পর্বতারোহী রা এত ভালো হয় কেন?”
– “কে বলেছে?”
– “আমার মনেহয়।”
– “কতজন পর্বতারোহী কে দেখেছো?”
মিশু একটু থেমে বলল, “দুবার এভারেস্ট বিজয়ী এম এ মুহিত কে আমি বেশ ভালো করেই চিনি। ওনার সাথে অনেকবার কথা হয়েছে আমার। আমার লাইফে এত ভালো মানুষ আমি কখনো দেখিনি।”
মেঘালয় অবাক হয়ে বলল,”সিরিয়াসলি! মুহিত ভাইয়ের সাথে কথা বলেছো তুমি! সত্যিই ওনার সাথে কারো তুলনা চলেনা। কত ভালো একজন মানুষ। আর আমাদের দেশটাকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে অনেক অবদান রাখছেন। প্রতিদিন অসংখ্য ছেলেমেয়ে অনুপ্রাণিত হয় ওনার কথায়।”
– “সেজন্যই বললাম। পর্বতারোহীরা এত অনুপ্রেরণার উৎস হয় কি করে?”
মেঘালয় একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,”আসলে পর্বতারোহণ মানে কিন্তু মৃত্যুকে স্বেচ্ছায় বরণ করে নেয়া। প্রতি পদে পদে মৃত্যু হাতছানি দিয়ে ডাকে। মূলত মৃত্যুকে অত কাছে থেকে দেখেন বলেই ওনারা অনুপ্রেরণা দিতে সবচেয়ে বেশী দক্ষ। এভারেস্ট এর যত উপরে উঠবা, দেখবা শুধু লাশ আর লাশ। এসব দেখে কেমন লাগে ভাবতে পারো? যেখানে নিজের মৃত্যুও যেকোনো মুহুর্তে হতে পারে।”
মিশু ভয়ে শিহরিত হয়ে বললো, “এত রিস্ক নিয়ে আপনি কেন যান?”
মেঘালয় হেসে বলল,”আমিতো মাত্র কয়েকবার গিয়েছি শুধুমাত্র বেইসক্যাম্পের জন্য। প্রথমবার অভিযানে গিয়ে একটা মোটামুটি উচ্চতম পর্বত জয় করে ফেললাম আর রাতারাতি বিখ্যাত ও হয়ে গেলাম। কিন্তু শুধুমাত্র কৌতুহল বশত আর ভালোলাগার টানেই আমি আরোহণ করেছি। বিখ্যাত হওয়ার জন্য নয়।”
মিশু হেসে বললো, “সেটা আমি জানি। তবে অত রিস্ক নিয়ে যাওয়ার কি দরকার?”
– “সেজন্যই আম্মু আর যেতে দেয়না। আমিতো চেয়েছিলাম একবার এভারেস্ট অভিযানে যাবো। কিন্তু আম্মু রাজি নয়। আমার বড় ভাইয়ের নাম ছিলো হিমালয়। সে পাহাড় থেকে খাদে পড়ে মারা গেছে।”
মিশু আঁৎকে উঠলো, “সেকি! আপনার ভাই এভাবে… তবুও আপনি অভিযানে যান?”
মেঘালয় বেশ সহজ গলাতেই বলল, “আমার আব্বুর নাম আকাশ। উনি আকাশের মতই বিশাল স্বপ্ন দেখেন। ছোটবেলা থেকেই আব্বু পাহাড়ে বেড়ে উঠেছে। তাই পাহাড় প্রীতি অনেক ওনার। ছেলেদের নামও রেখেছেন পাহাড় পর্বতের নামে। আব্বু চেয়েছিলেন তার ছেলেও তার মত ট্রেকার হবে। পাহাড়ের চূড়ায় উঠলে নিজেকে অনেক সমৃদ্ধ মনেহয়। সেই সুখটুকু উনি আমাদের দিতে চেয়েছিলেন। বড় ভাইয়ার নাম রেখেছিলেন হিমালয় আর আমার নাম মেঘালয়। কিন্তু বিদেশে একবার পাহাড়ে বেড়াতে গিয়ে হিমালয় ওপারে চলে গেছে। আমি তখন খুবই ছোট। গভীর খাদে পড়ে গেছে ভাইয়া, ওর লাশটাও আমরা উদ্ধার করতে পারিনি।”
মিশুর কান্না পেয়ে যাচ্ছে মেঘালয়ের কথা শুনে। ও অজান্তেই মেঘালয়ের কোমরে হাত রেখে শক্ত করে ধরলো পেছন থেকে। কি ভয়ংকর কথা! এতবড় দূর্ঘটনার পরও মেঘালয় পাহাড়ে যায়,পর্বতারোহণে যায়!
মেঘালয় বললো, “আব্বু আমাকে বলেছিল, হিমালয়ে সবচেয়ে উচ্চতম ১৪ টি পর্বত আছে, এর যেকোনো একটি যদি জয় করতে পারিস তাহলে আমার কষ্টটা কমবে। আব্বুর কথা রাখার জন্যই আমি আরোহণে গিয়েছিলাম। আমার এখন পর্বত ছাড়া ভালো লাগেনা কিন্তু আম্মু যেতে দেয় না। একটা মাত্র আদরের ছেলেকে হারাতে চায়না আর।”
মিশু আরো শক্ত করে ধরে মেঘালয়ের পিঠে মাথা রেখে বললো, “আপনার আম্মুই ঠিক বলেছেন। আর যাওয়ার দরকার নেই। আপনার আব্বুর ইচ্ছে তো পূর্ণ হয়েছে।”
মিশুর কথাটা ভালো মত শুনতে পেলো না মেঘালয়। ওর সেদিকে মনোযোগ নেই। মিশু এভাবে জাপটে ধরে পিঠে মাথা রেখেছে, তাতে কেমন যেন অন্যরকম অনুভূত হচ্ছে! বেশ ভালো লাগছে আর মনেহচ্ছে এভাবেই থাক। এরকম অনুভূতি প্রথমবার হচ্ছে ওর।
নিজের বাসার সামনে এসে মেঘালয় বলল, “আমার বাড়ি এটাই। এখানেই দেখতে পেয়েছি তোমাকে। তা এখন কোনদিকে যাবো ম্যাম? ”
মিশুর এতক্ষণে হুশ হলো। সাথে বেশ লজ্জা লাগলো। ওরকম ভয়ংকর মৃত্যুর কথাগুলো শুনতে শুনতে কেমন যেন কষ্ট হচ্ছিলো মিশুর। আবেগে কখন এভাবে ওকে ধরে ফেলেছে বুঝতেই পারেনি। সোজা হয়ে বসতে বসতে বলল, “আমি একাই যেতে পারবো। আপনি বাসায় যান।”
মেঘালয় বলল, “বাসায় রেখে আসি। পর্বতের চেয়েও বেশী রিস্ক শহরের অলিগলিতে বুঝলে? পর্বতকে ভালোবাসলে সহজে মৃত্যু আসেনা, দূর্ঘটনা ছাড়া। কিন্তু তুমি যতই দেশপ্রেমী হও, দেশের কিছু নরপশু তোমার উপর পশুত্ব ফলাবেই।”
মিশু আর কিছু বললো না। এটা বেশ ভালোই জানে ও। প্রতি পদে পদে এরকম পরিস্থিতির শিকার হতে হয়। চুপচাপ রাস্তা দেখিয়ে দিলো।
মেঘালয়ের খুব ইচ্ছে করছিলো মিশু যদি আরেকবার পিঠের উপর মাথাটা রাখতো। কিন্তু সেটা ঠিক না। তাই ইচ্ছেটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিলো। মিশুর কথামত এগোতে লাগলো বাইক নিয়ে। কিছুদূর আসার পর হঠাৎ রাস্তায় পূর্ব ও সায়ানের সাথে দেখা। ওরা মেঘালয়কে দেখে থামতে বললো। মেঘালয় থামার পর সায়ান বলল, “পিছনে ভাবি নাকি রে?”
মিশু লজ্জা পেয়ে সরে বসলো একটু। কিন্তু পূর্ব ভ্রু কুঁচকে তাকালো। রাতেই তো মেয়েটাকে সুপার শপ থেকে রিক্সায় তুলে দিয়েছিলো ওরা। সে এখন মেঘালয়ের বাইকে কি করছে! আজব ব্যাপার! কোনো রহস্য আছে মনেহচ্ছে।
মেঘালয় জিজ্ঞেস করলো “এতরাতে তোরা কোথা থেকে আসলি?”
পূর্ব বলল, “বিড়ি খাইতে গেছিলাম।”
– “বিড়ি নাকি গঞ্জিকা হুম?”
– “আমি গঞ্জিকা টানিনা সেটা ভালো করেই জানিস।”
– “ওকে, কাল কথা হবে। এই মেয়েটার খুব বিপদ। আগে ওকে রেখে আসি।”
পূর্ব ও সায়ান অবাক চোখে তাকালো। মেঘালয় আবারো বাইক স্টার্ট দিলো। মিশু জিজ্ঞেস করলো, “আচ্ছা গঞ্জিকা কি জিনিস?”
মেঘালয় হেসে বললো, “গাঁজা। খাবা নাকি?”
-“ছি, মরলেও না।”
মেঘালয় শব্দ করে হাসলো। মিশুর দেখানো পথ অনুযায়ী পৌছে গেলো এসে। মেঘালয়ের বাসা থেকে বাইকে পাঁচ ছয় মিনিটের পথ। মেঘালয় বাসার সামনে মিশুকে নামিয়ে দিয়ে বললো, “বোনের দিকে খেয়াল রাখবেন।”
– “আচ্ছা। আপনাকে…”
মিশুকে থামিয়ে দিয়ে মেঘালয় বলল, “বাংলা সিনেমার ডায়ালগ ঝাড়বা না তো। বাসায় গিয়ে বোনকে ওষুধ খাওয়াও।”
মিশু একবার মেঘালয়ের চোখে চোখ রেখে ভিতরের দিকে পা বাড়ালো। মাথার ওড়না টা ঠিক করতে করতে ভিতরে ঢুকে গেলো। একতলা বাড়িটার দিকে একবার তাকিয়ে মেঘালয় বাইক স্টার্ট দিলো।
চলবে..

অনুভূতি
পর্ব ৫
মিশু মনি
.
৮.
সকালবেলা ঘুম ভেঙে গেলো মেঘালয়ের। ঘুম থেকে উঠে বিছানার উপর বসলো। মনে পড়ে গেলো স্বপ্নের কথা। আজ রাতেও একটা স্বপ্ন দেখেছে ও। আগের দুদিনের মতই তবে আজকে একটু ভিন্নতা ছিলো। আজ দেখলো, মেয়েটি খুব কাঁদছে, তার চোখের জলে সমুদ্র হয়ে যাচ্ছে। জল দিয়েই সমুদ্র! এত কাঁদছিল কেন মেয়েটা! বারবার কাঁদছে আর মেঘালয়ের দিকে তাকাচ্ছে। যেন খুব করে চাইছে মেঘালয় ওর চোখ মুছে দিক। তারপর আবার উঠে সমুদ্রের তীর ধরে হাঁটা শুরু করেছে। একই স্বপ্ন পরপর তিনদিন দেখার মানেটা বুঝতে পারছে না ও।
মেঘালয় গালে হাত দিয়ে চিন্তা করতে লাগলো। যখন কিছুই ভেবে পাচ্ছিলো না, তখন উঠে দাঁড়ালো। বাইরে যাওয়া যাক। তাড়াতাড়ি হাত মুখ ধুয়ে পোশাক বদলে বাইরে বেড়িয়ে পড়লো।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো সকাল সারে দশটা। এখন ওর কোনো কাজ নেই। কি করা যায় তাহলে? কোথাও যেতেও ইচ্ছে করছে না। মনটা কেমন যেন হয়ে আছে। খুব বিক্ষিপ্ত লাগছে। হঠাৎ মনে পড়লো একবার সুপার শপে যাওয়া যায়। মিশুর বোনের শরীর কেমন হলো সেটাও জেনে নেয়া দরকার আর কিছু কেনাকাটা ও সেরে ফেলতে হবে। শপে ঢুকতেই মিশুর সাথে চোখাচোখি হয়ে গেলো। মিশু খুব মায়াবী গড়নের একটা হাসি দিলো।
মেঘালয় এগিয়ে গিয়ে বলল, “ছোটবোনের শরীর কেমন এখন?”
– “ওষুধ খেয়েই অনেক টা সুস্থ হয়ে গেছে। এখন বেশ ভালো আছে। আপনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো আমি।”
মেঘালয় মাথা ঝাঁকিয়ে বললো, “বেশ। এখন কিছু কেনাকাটা করা দরকার। পিংক ল্যাকমি লিপস্টিক আর লাল ম্যাট লিপস্টিক দিন তো।”
মিশু ওর কথামত লিপস্টিক নিয়ে এসে রাখলো। মেঘালয় প্যানকেক ও দিতে বললো একটা।আর কোনো কিছুর নাম ওর মনে নেই। তাই রোদেলার নাম্বারে ফোন দিয়ে শুনে নিলো সানস্ক্রিন কোন ব্রান্ডের নিতে হবে? জিনিস গুলো প্যাকেটে নিয়ে বিল মিটিয়ে বাইরে চলে এলো মেঘালয়। আজ দশ মিনিটেই কেনাকাটা হয়ে গেলো! কিন্তু মিশুর সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে খুব যে ইচ্ছে হয়। ওর সাথে কথা বলতেও মন টানে। কিন্তু এভাবে তো আর কারণ ছাড়া কথাও বলা যায়না।
মেঘালয় আরেকবার ভিতরে ঢুকে মিশুকে গিয়ে বলল, “আপনার ছুটি কি বার থাকে?”
– “আমাদের কোনো ছুটি নেই। মাসে চারদিন ছুটি নিতে পারি কিন্তু আমি নেইনা।”
মেঘালয়ের মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো। মাত্র সাত হাজার টাকার জন্য ১২ ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকে মেয়েটা। তাও আবার সাপ্তাহিক কোনো ছুটিও নেই! সূর্যের আলো দেখার সুযোগ টাও বোধহয় পায়না সে। ওর জন্য একটা কাজের ব্যবস্থা করতেই হবে।
বাইরে এসে কয়েকজন কে কল দিয়ে খোজ খবর নিলো কোথাও সেরকম সুযোগ আছে কিনা। কিন্তু কেউই সেরকম বলতে পারলো না। ভার্সিটিতে না গিয়ে সোজা ওর বাবার অফিসে চলে আসলো মেঘালয়। ওর মুখ থেকে মিশুর অবস্থার কথা শুনে বাবা কি বলবেন বুঝতে পারলেন না। এখন কোনো লোক অফিসে নিয়োগ দেয়া হচ্ছেনা, তাছাড়া গ্রাজুয়েট ছাড়া কাউকে নেয়ার সুযোগ ও নেই। মিশু তো সবেমাত্র উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করলো, ওকে কি চাকরী দেবেন উনি! কিন্তু মেঘালয়ের অনুরোধ রাখলে ছেলেটা অনেক খুশি হবে। অনেক ভেবেচিন্তে বাবা বললেন, “আমার একজন অফিসের কাজে সহযোগিতা করার জন্য কাউকে দরকার। এসিস্ট্যান্ট এর চাকরী দিলে পারবে সে?”
– “পারবে আব্বু। শুধু কাজের চাপ একটু কম দিও। আর বাচ্চামেয়ে তো, একটু মানিয়ে নিও তুমি।”
বাবা হেসে বললেন, “আচ্ছা সে দেখা যাবে। বেতন কিন্তু বারো হাজার দিবো।”
– “ওর জন্য এটাই অনেক আব্বু। মাত্র সাত হাজার টাকায় ১২ ঘন্টা ডিউটি করে ও।”
– “আচ্ছা, এখানে ১০ টা থেকে বিকাল ৫ টা অব্দি থাকলেই হবে।”
মেঘালয় খুশিতে ওর আব্বুকে জড়িয়ে ধরলো। সবসময় আব্বু ওর ইচ্ছে গুলো পূরণ করে দেন। এখন মিশুকে এই খুশির কথাটা জানাতে হবে।
মেঘালয় শপিং ব্যাগটা আব্বুর কাছে দিয়ে আবারো সুপার শপে চলে গেলো। কিন্তু গিয়ে দেখল মিশু নেই। ঘন্টা খানেক আগেই তো এখানে ছিলো মেয়েটা! বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর ও মিশুকে পাওয়া গেলো না। মন খারাপ করে বেড়িয়ে এলো ও। মিশুর বোন বোধহয় অসুস্থ হয়ে পড়েছে তাই মিশু বাসায় চলে গেছে হয়ত। দোকানে কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করলে কি যে ভাবে! কিছু জিজ্ঞেস করাও যায়না।
কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করার পর ওর ইচ্ছে করলো একবার মিশুর বাসায় চলে যেতে। এই ভালো খবর টা ওকে জানাতেই হবে তো। আর সে চাইলে কালই জয়েন করতে পারে এটাও ওকে বলা দরকার। কিন্তু মেয়েটা বাসায় গেছে কিনা সেটাও তো জানেনা মেঘালয়। আজ কোথাও যাওয়ার ইচ্ছে নেই। কিছুই ভালো লাগছে না।।এর কারণটাও ধরা যাচ্ছেনা। বোধহয় সেই স্বপ্নটা!
পায়ে হেঁটে অনেকদূর আসার পর মেঘালয় দেখতে পেলো রাস্তার পাশে মিশু দাঁড়িয়ে রাস্তার দিকে চেয়ে আছে। খুবই মলিন মুখ আর বিষন্ন দেখাচ্ছে। যেন কোনো কঠিন অসুখ বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে ও। মেঘালয়ের ডাক শুনে চকিতে ফিরে তাকালো মিশু।
মেঘালয় বলল, “এখানে কেন তুমি? ডিউটি ছেড়ে এখানে কি করছো? আমি গিয়ে তোমাকে পেলাম না।”
– “শরীর টা ভালো লাগছিলো না। তাই ছুটি নিলাম আজ। এর আগে কখনো ছুটি নেইনি। আপনার কথা শোনার পর নিতে ইচ্ছে করলো।”
– “কোথায় যাবে এখন?”
– “জানিনা, আমার খুব ঘুরতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু কোথায় যাবো একা একা,আর হাতও খালি একদম। তাই রোদে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রাস্তার সৌন্দর্য উপভোগ করছি।”
– “আর আমি ছটফট করছি।”
– “কেন?”
– “তোমাকে দোকানে গিয়ে খুঁজলাম। একটা ভালো খবর দেয়ার আছে।”
– “বলুন।”
মেঘালয় বলল, “ভালো খবর এভাবে দেয়া যাবে না। এক জায়গায় যেতে হবে।”
মিশু অবাক হয়ে বলল, “ভালো খবর দিতে চাইলে এক জায়গায় গিয়ে দিতে হবে?”
– “হ্যা, ভালো খবর ভালো জায়গায় দিতে হয়।”
মিশু একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, “চলুন তাহলে।”
মেঘালয় ওকে নিয়ে লোকাল বাসে উঠে পড়লো। বাসায় গাড়ি থাকা সত্ত্বেও গাড়ি নিয়ে বের হয়না ও। সাধারণ মানুষ দের মত চলাফেরা করতেই ভালো লাগে। বাসে উঠতেই কিছুক্ষণ পর দুইটা সিট ফাঁকা হয়ে গেলো। জানালার পাশের সিটে বসলো মিশু। মেঘালয় ওর পাশেই বসলো। মিশু উৎসুক চোখে বাইরে তাকাচ্ছে আর অবাক হচ্ছে কিছু না কিছু দেখে। ওর মনটা ভালো হয়ে গেছে। ইস! হাসলে কত সুন্দর দেখায় মেয়েটাকে! ও বোধহয় জার্নি খুব ভালোবাসে। ইচ্ছে করছে ওকে নিয়ে দূরে কোথাও বেড়াতে যেতে। মেয়েটা যাই দেখবে শুধু অবাক হবে, ভালো লাগবে খুব।
চিন্তাটা মাথায় আসতেই মাথা চুলকে ভাবতে লাগলো মেঘালয়। বেশ কয়েকদিন ধরেই বন্ধুরা বলছিল কোথাও ট্যুরে যাওয়ার কথা। দশ বারো জন বন্ধু বান্ধবী গেলে মিশুকে বললে সেও যেতে পারে। ট্রাভেলিং করতে কে না ভালোবাসে?
মেঘালয় বলল, “আচ্ছা মিশু তুমি ট্রাভেলিং ভালোবাসো?”
– “হ্যা খুব ভালোবাসি। কেন?”
– “আমরা দশ জন বন্ধু বান্ধবী মিলে ট্যুরে যাচ্ছি।তুমি কি যাবা আমাদের সাথে? গেলে তোমার মনটা ভালো হয়ে যাবে।”
মিশু বেশ উৎফুল্ল হয়ে বলল, “হ্যা আমি যাবো। অবশ্যই যাবো। কবে যাবেন?”
ওর খুশি দেখে মন ভরে গেলো মেঘালয়ের। হেসে বলল, “খুব শীঘ্রই যাচ্ছি। প্রিপারেশন নাও।”
এবার মিশুর মুখে মেঘ নেমে এলো। মুখটা কালো করে বলল, “না থাক যাবো না।”
– “কেন?”
– “আমার টাকা নেই এখন হাতে।”
– “আমার কাছে ধার নিও,এসে ফেরত দিয়ে দিও।”
মিশু মুখ কাচুমাচু করে বলল, “এমনি তেই আপনি দুই হাজার টাকা পাবেন আমার কাছ থেকে।”
– “ধুর বাদ দাও তো। তুমি যাচ্ছো। আমি আমার বন্ধুদের কনফার্ম করে দিচ্ছি।”
মিশুর মনটা আনন্দে ভরে গেলো। কিন্তু চাকরী তে তো তিনদিন ছুটি নিতে হবে তাহলে। ছুটি নিলে মাস শেষে বোনাস টা আর পাওয়া যাবেনা। সেটাও চিন্তা হচ্ছে,ঘুরতে যেতেও ইচ্ছে করছে। কি করা যায় ভাবতে লাগলো ও। হঠাৎ ও খেয়াল করলো, মেঘালয় যে সিটে বসেছে তার সামনের সিটের পিছনে হাত রেখেছে। হাত ঘেমে গেছে বেশ। কিন্তু হাতে এত সুন্দর ঘনঘন লোম! ঘর্মাক্ত হাতটাকেই মনেহচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য!
মেঘালয়ের হাতের দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলো কিছুক্ষণ। তারপর মিশুর চোখ চলে গেলো মেঘালয়ের কপালে। কপাল টাও ঘেমে গেছে। কপালের দিকের চুলগুলো দেখেও কেমন যেন ফিল কাজ করছে ভেতরে। মনেহচ্ছে মেঘালয়ের সমস্ত শরীরেই এমন সৌন্দর্য! এমন বাহ্যিক জিনিস গুলো দেখেও এত ভালো লাগছে কেন বুঝতে পারছে না মিশু।
মেঘালয় মিশুকে বাস থেকে নামতে বললে নেমে পড়লো ও। তারপর দেখল পিছনে স্টার কাবাব রেস্টুরেন্ট! এই রেস্টুরেন্টটা নাকি মোহম্মদপুরের সবচেয়ে বিখ্যাত গুলোর একটি। এখানে কেন নিয়ে এলো মেঘালয়!
মিশু মেঘালয়কে অনুসরণ করে ভিতরে গিয়ে বসলো। মেঘালয় ওর বন্ধুদের সাথে ফোনে কথা বলে এসে খাবার অর্ডার করলো। মিশু চুপচাপ বসে এদিক সেদিক তাকাচ্ছে।
মেঘালয় এসে বসতে বসতে বলল, “আমরা আগামী পরশু যাচ্ছি। দুদিনের ট্যুর।”
মিশু অবাক হয়ে বলল, “পরশু! একটা প্রস্তুতির ব্যাপার আছে না?”
– “দেরি করা যাবেনা। এসেই তোমাকে আবার চাকরী তে জয়েন করতে হবে।”
– “মানে!”
মেঘালয় খুব সুন্দর ভাবে মিশুকে বুঝিয়ে বলল চাকরীর ব্যাপার টা। সব শুনে মিশুর চোখে পানি এসে গেছে। অচেনা একটা মানুষ ওকে নিয়ে এত কিছু ভেবেছে! কত উপকার করলো মানুষ টা, আবার ট্যুরেও নিয়ে যেতে চাইছে। দেবদূত হয়ে এসেছেন উনি!
মিশুর মুগ্ধ চাহনি খুব ভালো লাগলো মেঘালয়ের। মেয়েটা খুশি হলেও সুন্দর লাগে, মুগ্ধ হলে আরো বেশি সুন্দর লাগে! এখন থেকে বেশী বেশী সারপ্রাইজ দিয়ে ওকে মুগ্ধ করে দিতে হবে! তাহলে অন্তত এই সুন্দর চাহনি টা উপভোগ করা যাবে।
খাবার চলে এলো কিন্তু মিশু কিছুই খেতে পারলো না। ওর সবকিছু স্বপ্নের মত লাগছে! কাল থেকে আর মার্কে টে ডিউটি তে যেতে হবেনা। বিকেলে একটা সিভি নিয়ে মেঘালয়ের বাবার অফিসে গিয়ে ওনার সাথে দেখা করতে হবে। ট্যুর থেকে ঘুরে এসে তারপর চাকরী তে জয়েন!
মিশুর গাল বেয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। অন্য কোনো লোক হলে মিশুর এত ভালো লাগত না। ট্যুরে যেতে বললেও সে যেতো না। কিন্তু মেঘালয়ের মানবতা, বিবেকবোধ, সম্মানবোধ সবকিছু এত বেশী সুন্দর যে, ওকে সন্দেহ করলে অন্যায় হয়ে যাবে। ছেলেটা দেবতাসুলভ একদম!
মিশু কাঁদছে আর মেঘালয় মুখ টিপে হাসছে। এই মুগ্ধ কান্নাটাও অসম্ভব সুন্দর লাগছে ওর। এত সুন্দর করে কেউ কাঁদতে পারে! জানা ছিলোনা মেঘালয়ের। আজ মিশুর নতুন নতুন রূপ ধরা দিচ্ছে ওর কাছে।
চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here