#অনুভূতির_জোয়ার
#পর্ব_০৫(শেষ)
Wohad Mahmud
হালিমা বাসায় বসে ব্যাগের মধ্যে হাত দিয়ে দেখে রসায়ন বই ব্যাগের মধ্যে আছে। আর মনে মনে বলে হায়রে মাহমুদা তুই যদি এই চুরি বুদ্ধিটা পড়াশোনার কাজে ব্যবহার করতিস তাহলে আমার জায়গায় তুই থাকতিস।
রাতে সবাই একসাথে খাওয়া দাওয়া করছে। মাহমুদ বলে সবার জন্য একটা ভালো সংবাদ আছে। বিশেষ করে মাহমুদার জন্য।
মাহমুদা বলে, আমার জন্য কী সুসংবাদ আছে ভাইয়া?
কালকে ছেলে পক্ষ তোকে দেখতে আসবে। ছেলে পক্ষ অনেক ভালো। বিয়ে হয়ে গেলে সুখে থাকবি তুই।
মাহমুদা বলে কিন্তু ভাইয়া আমি তো বিয়ে করব না এখন। আমার ইচ্ছা পড়াশোনা করা।
মাহমুদ বলে সমস্যা নেই বিয়ের পরে পড়াশোনা করবি হালিমার মতো করে।
হালিমা তখন মুচকি হেসে বলে হ্যাঁ এই শর্ত মেনে বিয়ে করে ফেলো মাহমুদা, কিন্তু মুখের কথায় না লিখিত নিয়ে নিবে বলা তো যায় না পরে ঝামেলা করতে পারে। আজকাল মানুষের মুখের কথায় একদম দাম নেই।
হালিমার শ্বাশুড়ি ট্যারা চোখে তাকিয়ে আছে হালিমার দিকে। আর এটাই স্বাভাবিক কারণ, হালিমা তার শ্বাশুড়ির উদ্যেশ্য করে কথাগুলো বলেছে।
মাহমুদের কথা অনুযায়ী আজ ছেলেপক্ষ দেখতে এসেছে মাহমুদাকে। মাহমুদাকে দেখতে আসবে বলে আজ টিউশনিতে যায়নি। সবকিছু রান্না শেষে হালিমা টিউশনিতে চলে গিয়েছে।
টিউশনি থেকে ফিরে এসে হালিমা দেখে সবাই বসে আছে। ব্যাগ ঘাড়ে করে বাসায় প্রবেশ করায় ছেলেপক্ষের একজন বলে, এটা কী বাড়ির ছোট মেয়ে?
হালিমার শ্বাশুড়ি বলে না এটা বাড়ির মেয়ে না। এটা বাড়ির বউ।
তারপর বলল, বাহ “মাশ আল্লাহ” আজকাল এমন মেয়ে কোথায় পাওয়া যায়। সংসার ঠেকিয়ে পর্দা করে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে।
ইন শাহ আল্লাহ মাহমুদা যদি বিয়ের পরে এভাবে পড়াশোনা করতে চায় তাহলে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। আর যদি পড়াশোনা করতে না চায় তাহলে কোনো সমস্যা নেই। এটার পছন্দ অপছন্দ সম্পূর্ণ মাহমুদার উপরে।
তারপর হালিমা সালাম দিয়ে রুমে চলে যায়।
কিছুক্ষণ পরে ছেলেপক্ষ চলে যায়। যাওয়ার সময় বলে যায় পাকা কথা আজ সন্ধ্যায় ফোন করে জানিয়ে দিবে।
ছেলেপক্ষ চলে গেলে হালিমা মাহমুদার কাছে গিয়ে বলে, তুমি কি এই বিয়েতে রাজি?
মাহমুদা বলে, হ্যাঁ আমি রাজি আছি ভাবি। দেখা যাক সন্ধ্যায় কী বলে।
সন্ধ্যায় ছেলেপক্ষ ফোন দিয়ে বলে আমরা এই বিয়েতে রাজি আছি। বিয়ে এক মাসের মধ্যে হয়ে যাবে।
কিন্তু মাহমুদা বলে, এইচএসসি পরীক্ষা শেষ করে তারপর বিয়ে করব আমি। যদি এই শর্তে রাজি থাকে তাহলে আমিও রাজি আছি।
প্রথম প্রথম রাজি না থাকলেও পরে মাহমুদা ওই ছেলের সাথে কথা বলে রাজি করিয়ে নেই।
হালিমা মাহমুদাকে বলে, ইন শাহ আল্লাহ তোমার জামাই অনেক ভালো হবে। এখনি তোমার কথা শুনছে বিয়ের পরেও শুনবে। তবে শুনেছি তোমার একটা ননদ আছে, চিন্তা করার দরকার নেই। তুমি মানুষের সাথে যেমন ব্যবহার করবে ঠিক তেমন প্রতিদান পাবে।
এরপর থেকে মাহমুদা আর কখনও হালিমার সাথে খারাপ ব্যবহার বা কোনো ষড়যন্ত্র করেনি। বিয়ের কথা শুনে অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে।
কিন্তু হালিমার শ্বাশুড়ি পরিবর্তন হয়নি। আগের মতোই আছে। আগের মতোই খোঁচা মেরে কথা বলে। হালিমার পড়াশোনা একদম সহ্য করতে পারে না।
হালিমার আর মাহমুদার এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে আজ। আর এক সপ্তাহ পরে মাহমুদার বিয়ে হবে। অল্প সময়ের মধ্যে অনেক কিছু আয়োজন করতে হবে।
আস্তে আস্তে অনেক আত্মীয় স্বজন আসছে মাহমুদার বাড়িতে।
বিয়ের দুইদিন আগে হালিমার মা,বাবা,ভাই আর বোন আসছে। একজন তো সবার সামনে বলেই দিলেন শ্বশুর বাড়িতে এসে আবার কে পড়াশোনা করে। শ্বশুর বাড়িতে ঘর সংসার সামলাবে। এতো যদি পড়াশোনা করার ইচ্ছা হয় তাহলে শ্বশুর বাড়িতে এসে কেন? বাপের বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করতে হবে। না কি বাপের টাকা খরচের ভয়ে শ্বশুর বাড়ি এসে স্বামীর টাকা দিয়ে পড়ার ধান্দা।
এই কথাটা অন্য সময় বললে হালিমা তেমন কিছু মনে করতো না। কিন্তু বাবা, মা ভাই, বোনের সামনে এই কথাগুলো কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। হালিমা অবাক হচ্ছে মুখের উপরে এভাবে একটা মানুষ কীভাবে বলতে পারে?
হালিমার বাবা মায়ের চোখের কোনে যেন, পানি জমে আছে। মনে হচ্ছে এখানে না আসলেই ভালো হতো।
পাশেই ছিল হালিমার শ্বাশুড়ি। হালিমার শ্বাশুড়ি তখন মুচকি হেসে বলল, আমার ঘরে হালিমার মতো একটা মেয়ে আছে। আমি দু’জনকে মেয়ে চোখে দেখি। আমার মেয়ে হালিমা পড়াশোনা করবে কী না করবে এটা আমি দেখব। আর শুনলাম না-কি আপনার মেয়ে দুই এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েও পাশ করতে পারেনি সে জন্য বিয়ে করে ফেলেছে। যাদের মেধা আছে তাদের সুযোগ দেওয়া উচিত।
হালিমার শ্বাশুড়ির এমন পরিবর্তন দেখে অবাক হয়ে যায় হালিমা। কাল পর্যন্ত যে, হালিমার পড়াশোনা নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি করছিল কিন্তু আজ সে হালিমার পক্ষ নিয়ে কথা বলছে।
হালিমার শ্বাশুড়ি বলল, চলো মা আমাকে রান্না ঘরে একটু সাহায্য করবে। হালিমা হাসিমুখে শ্বাশুড়ির সাথে চলে যায়।
বিয়ের দিন হালিমার বোনকে দেখে একজনের পছন্দ হয়। সেটা মাহমুদের বন্ধু। বিয়ের পরের দিন হালিমার বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেয় সরাসরি।
পাশেই হালিমা ছিল, হালিমা বলল, আমার বোনের একটা ছোটো বাচ্চা আছে। আর আপুর ডিভোর্স হয়ে গেছে। আপু অনেক সুন্দরী অনেকেই বিয়ের প্রস্তাব দেয় কিন্তু যখন জানতে পারে ডিভোর্সি মেয়ে আর একটা ছোট বাচ্চাও আছে তখন সবাই মানা করে দেয়।
তবুও হালিমার বোনকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যায় ছেলেটা। কিছুদিন পরে বিয়েটা হয়ে যায়। সেদিন আবার ছিল হালিমার আর মাহমুদার রেজাল্ট এর দিন। দুজন জিপিএ ফাইভ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়।#
দেখতে দেখতে এক বছর কেটে যায়। হালিমা এখন প্রেগন্যান্ট। হালিমার দুই মাস পর মাহমুদা প্রেগন্যান্ট হয়।
দুজনের সুন্দর ফুটফুটে বাচ্চা হয়। হালিমার ছেলে হয় আর মাহমুদার মেয়ে হয়। কিন্তু এর মাঝে সিদ্ধান্ত নেয় ঘরের মধ্যে থাকতে আর বাইরে সম্পর্ক স্থাপন করবে না। হালিমার ছেলের সাথে মাহমুদার মেয়ের বিয়ে দিবে বড় হলে। এই সিদ্ধান্ত নেই।
দেখতে দেখতে চোখের পলকে অনেকটা বছর কেটে যায়। হালিমা আর মাহমুদা দুজন চাকরি করে। কিন্তু নিজেদের চাকরির টাকা নিজেদের জন্য কখনও খরচ করে না। দুজনের একটা সংঘটন আছে। সংঘটনের নাম “অনাহার থেকে আহার”
এভাবেই তাদের জীবন সুন্দর ভাবে কেটে যাচ্ছে।
বি.দ্র: ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।