অনুভূতিহীণ পর্ব -০১+২

~ কলেজ থেকে বাসায় ফিরে দেখলাম বাসা ভর্তি মেহমান। মামা মামি সাথে কয়েক জন ছেলে বসে আছে৷ ঘরে যেতেই দেখলাম আপুরাও এসেছে। কিছুই মাথায় ঢুকছে না আমার। ব্যাগ রেখে আপুকে জিজ্ঞেস করলাম, ছেলেগুলো কারা?
আপুর কথা শুনে যেন আমি আকাশ থেকে পরলাম।
– ওই যে লম্বা ছেলেটাকে দেখছিস, মাথা নিচু করে বসে আছে। ওটা হলো মামার ছেলে মানে রিদ ভাই। আর বাকি যে দুই জনকে দেখছিস ওরা হলো তার বন্ধু। মামা মামি সহ এরা সবাই এসেছে তোকে বৌ করে নিয়ে যেতে।
আমি আপুর দিকে গরম চোখে তাকালাম।
– মজা করিস না আপু। আমি সিরিয়াসলি প্রশ্ন করেছি তোকে।
আপু একটু ভ্রু-কুচকে আমার দিকে তাকালো,
– আমি তোর সাথে কোন দুঃখে মজা করতে যাবো? আজ সন্ধায় বিয়ে। বাবার কিছু বন্ধু-বান্ধব আসবে আর হয়তো ফুফুরা আসবে। ঘরেয়া ভাবেই বিয়ে হবে।
আমি রাগে পানির গ্লাসটা আছার মারতেই তা টুরো টুকরো হয়ে গেলো। রাগে আপুকে বলে উঠলাম,
– করবো না আমি এই বিয়ে, আমাকে পেয়েছে কি সবাই? যে যা ইচ্ছা তাই ডিসিশন নিবে? আমি তো ভালো করে চিনিও না তাকে। শুধু জানতাম আমার একটা মামাতো ভাই আছে।

হুট করে দরজার সামনে বাবার গলার আওয়াজ ভেষে আসলো।
– হয়েছে কি এখানে? এতো চেচামেচি কিসের?
বাবার উপস্থিতিতে ভয়ে চুপসে গেলাম আমি। চুপচাপ দাড়িয়ে আছি কিছু বলার সাহস পাচ্ছি না। এর মাঝেই আপু বিষয় টা সামলে নিলো,
– না বাবা কিছু হয়নি, হাত থেকে পানির গ্লাস টা পরে গেলো।
বাবা কিছু না বলে চুপচাপ চলে গেলো। আমি আপুর দিকে তাকিয়ে কাঁদু স্বরে বললাম,
– আমি এই বিয়ে করবো না আপু।

বিয়ের জন্য প্রস্তুতি চলছে। সন্ধার পর বিয়ে। রাত টা এখানে থেকে পর দিন সকালে বৌ নিয়ে রওনা দিবে সবাই।

আজ কলেজ থেকে যখন আসছিলাম তখন অনেক প্লেন তৈরি করে ফেলেছিলাম। গ্রীষ্মের বন্ধ দিলো ১৫ দিন। কত প্লেন ছিলো এই ১৫ দিন ঘুরবো ফিরবো আনন্দ উল্লাস করে বেড়াবো। আর বাসায় ঢুকেই এমন হাই বোল্ডেজের শর্ট টা খেলাম।
নিরুপায় হয়ে মায়ের কাছে গেলাম। কিন্তু কেউ আমাকে বিশেষ গুরুত্ব দিলো না। শুধু মামি একবার দুই হাতে ধরে কপালে চুমু দিয়ে বললো,
– আমার লক্ষি বৌ মা।
আমি আবারও নিরুপায় হলাম। কেউ আমায় এতোটা গুরুত্ব দিচ্ছে না। একটুও মনে হচ্ছেনা আমার জন্য এতো আয়োজন।
আসার সময় খাম্বা মহাশয় থুক্কু রিদ ভাইয়ার দিকে আড় চোখে কিছুক্ষন তাকালাম। এটাই তাহলে আমার মামাতো ভাই?

মা একটা লেহেঙ্গা নিয়ে আমার সামনে এসে দাড়ালো। আমি এখনো বসে আছি মুখ গোমড়া করে। মা আমাকে ওয়াশ রুমে নিয়ে গেলো। এর পর আপুকে বললো, গরম পানি নিয়ে আসতে।
এমনিতেও গরম কাল তার উপর আবার গরম পানি। ব্যাপার টা একটু অসহ্যকর মনে হলো আমার কাছে। তবুও কিছু বললাম না। কেমন যেনো একটা ঘোরের মধ্য দিয়ে সময়টা কাটছে আমার। নাকি এটা স্বপ্ন, একটু পর হুট করে ঘুম ভেঙে যাবে। এটাও বুঝতে পারছি না। আজ মনে হচ্ছে আমিই এক মাত্র প্রানি, যে কি না কলেজ থেকে আসার পরই বিয়ের পিড়িতে বসতে হবে।

মা আমাকে গোসল করিয়ে দিচ্ছে খুব যত্ন করে। এর আগে শেষ কবে এমন ভাবে গোসল করালো ঠিক মনে নেই তার। হয়তো ছোট কালে। আমি মাকে ধরে ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিলাম।
– আমি এই বিয়ে করবো না মা। তুমি আব্বুকে বোঝাও। আমি ভালো করে চিনিও না তাকে। কখনো কথাও হয়নি আমাদের। আর হুট করেই বিয়ে?
– তাতে কি হয়েছে? বিয়ের আগে কি আমি তোর বাবাকে চিনতাম? বিয়ের পরই তো একে অপরকে ভালো করে চিনলাম আমরা।
– তবুও মা, সে কেমন ভালো না খারাপ, রাগি না শান্ত এটাও তো জানিনা আমি। অনন্তত আমায় একটু সময় দিতে তোমরা।
– ওসব নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না, রিদ খুব ভালো ছেলে। যথেষ্ট ঠান্ডা মাথার ছেলে। ঠিক তুই যেমন টা চাস ঠিক তেমন। তা না হলে কি আমরা তোকে না বলে এতো কিছু করতাম? আর পড়ালেখা শেষ করে দেশে ফিরেছে, এখন ভালো ডাক্তারও। তোকে ভালোই রাখবে সে।
– চোখের দেখায় মানুষ চেনা যায় না মা।

মা আর কিছু বললো না। আমাকে লেহেঙ্গা পড়িয়ে আয়নার সামনে বসালো। সবাই আমাকে সাজাতে ব্যাস্ত। আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না একটুপর আমার বিয়ে।

আমি আরশি। আর যার সাথে আজ আমার বিয়ে হচ্ছে সে হলো রিদ ভাইয়া। আমার মামাতো ভাই। সেই ছোট বেলায় দেখেছিলাম তাকে। এর পর আর আমাদের বাড়িতে আসেনি। আমি কয়েক বার মামার বাড়িতে গেলেও তাকে দেখতে পাইনি। পড়াশুনা নিয়ে বাইরে ছিলো সে। এতো বছর পর সামনা-সামনি দেখার সুজুগ হলো, তাও আবার নিজের বর বেশে।

আজ রিদের ফ্রেন্ড গুলোর মতে এক আকাশ সমান দুঃখ। রিদের পিঠে থাপ্পর দিয়ে বললো,
– সালা কোন জায়গায় বিয়ে করতে এলি? একটা শালি নেই তোর? আমাদের কি একটা হক নেই?

খুব সাদামাটা ভাবে বিয়েটা সম্পন্ন হলো আমাদের। এর পর আসলো ঘুমানো নিয়ে দ্বন্ধ। কেউ বলছে নতুন বিয়ে করা দম্পত্বি বাড়ি ফেরার পরই ওই বাড়িতেই তাদের প্রথম রাত সম্পন্ন হোক। আবার মা বললো, তার ছোট মেয়ে আর কোনো মেয়ে নেই। বড় মেয়েটারও বিয়ে গেয়ে গেছে। তাই সে চায় আমরা প্রথম রাত টা এই বাড়ি থেকেই শুরু করি।
অবশেষে এই বাড়িতেই আমার রুমটা হালকা ফুল দিয়ে সাজিয়ে দুজনকে থাকার ব্যাবস্থা করে দিলো। আজ আমার বাসর রাত, ভাবতেই হাসি কাঁন্না সব একসাথে আসতে গিয়েও তালগোল পাকিয়ে ফেলছে। আমার মতে এটা একটু বেশি বেশি হয়ে গেছে। একে তো হুট করেই বিয়ে দিয়ে দিলো আবার এখন নাকি বাসর ঘরও সাজালো। কেন, একটু সময় নিলে পারতো না তারা?

আমার মনে একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। আর তা হলো, রিদ ভাই কেমন? রাগি নাকি শান্ত? বিষয় টা আগে দেখতে হবে। আমাকে কোনো ভাবেই দুর্বল হওয়া যাবে না। ভাবের উপর থাকতে হবে তার সামনে।

কিছুক্ষন পর রিদের বন্ধুরা তাকে রুমে ঢুকিয়ে দিয়ে বাইরে দিয়ে বন্ধ করে চলে গেলো। মানুষ টা রুমে প্রবেশ করতেই আমার সব সাহস মুহুর্তেই হাওয়া হয়ে গেলো। তবুও বুক ফুলিয়ে একটা নিশ্বাস নিয়ে সাহস সঞ্চয় করলাম। আমার বাবার বাড়ি এটা, আমি কেন ভয় পাচ্ছি, আজব,,,,
এরপর সে কাছে আসতেই পট পট করে বলতে লাগলাম,
– দেখুন আপনি আমার সামনে আসবেন না। আমি এসবের জন্য মোটেও প্রস্তুত নই। ফ্যামিলি হুট করেই জোড় করে আমাকে বিয়েটা দিয়েছে। আপনাকে আমি ভালো করে জানিও না। দেখুন প্রেম ভালোবাসা এসব তৈরি হতে সময় লাগে। আর ভালোবাসা ছারা এসব করা সম্ভব না। আমাকে সময় দিতে হবে আপনার। যতদিন লাগে।
কথা গুলো এক নিশ্বাসে বলে তার দিকে তাকালাম, তার রি-একশান দেখার জন্য। কিন্তু সে কিছু বললো না। চুপচাপ আমার পাশে এসে আমার দিকে ঝুকে গেলো। আমি কাঁপা গলায় বললাম,
– এই আপনাকে কি বলেছি শুনতে পান নি? বিয়ে হয়ে গেছে বলে কি যা ইচ্ছে তাই করবেন?
এখনো সে কিছু বললো না। হাত টেনে একটা বালিশ নিয়ে নিলো।

নিচে থাকার জন্য ব্যবস্থা করতে করতে বললো,
– আমার এইসবে কোনো ইন্টারেস্ট নাই। আর যার তার সাথে শুয়ে পড়ার তো কোনো প্রশ্নই আসে না। আর নিজেকে এতোটাও মহান ভাববে না। তুমি তোমার মতো থাকবে। কখনো যদি আমার মন জয় করতে তুমি সক্ষম হও, তাহলে আমার কাছে আশার চেষ্টা করবে। তার আগে না।

তার কথায় আমি যেন তাজ্জব বনে গেলাম। বলে কি এই ছেলে? আমি আরশি তার কাছে যাওয়ার জন্য তার মন জয় করতে হবে? এতোই ঠ্যাকা পরছে আমার? আমার পেছনে এখনো কতো ছেলে লাইন দিয়ে আছে। আর এই ব্যাটা আমাকে কোনো পাত্তাই দিলো না? আজব,,,,,
#অনুভূতিহীন (পর্ব ২)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

আমি ভ্রু-কুচকে রিদ ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে রইলাম। লোকটাকে সুবিধার মনে হচ্ছে না আমার। বাবা মা এই কোন মানুষের পাল্লায় পরলো কে জানে?
আমি ভেবেছিলাম বাসর ঘরে কথা গুলো বলার পর মানুষটার দুইটা প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
১- তোমাকে বিয়ে করেছি কি আলাদা থাকার জন্য? এখন তুমি আমার বিয়ে করা বৌ, সো তোমাকে ছুলে আমার একটুও পাপ হবে না।
এই টাইপের কিছু,,,

২- আচ্ছা সমস্যা নেই আগে তুমি আমায় চিনো জানো। তারপর না হয় আমার কাছে এসো। তুমি যতো সময় নিবে নাও আমার প্রব্লেম নেই। আমি কখনো তোমার কিছুর জন্য জোড় করবো না।
এই টাইপের কিছু,,,,

কিন্তু আমার ভাবনাকে জলে ফেলে লোকটা কোনো পাত্তাই দিলো না আমাকে। অপমানিত বোধ করলাম আমি।
আর লোকটা নিচে বিছানা করে শুয়ে পরে কি সুন্দর ঘুমাচ্ছে। আমিও আর এটা নিয়ে ভাবলাম না। কাপর চেন্জ করে নিলাম। অনেক রাত হয়েছে এবার ঘুমাতে হবে।

সকালে ঘুম ভাঙতেই দেখি সে এখনো ঘুমাচ্ছে। সারা রাত এদিক ওদিক ছটপট করলো, ইদুরের মতো। হয়তো নিচে ঘুমানোর অভ্যেস নেই তার।
এক মুহুর্তের জন্য হলেও আমার একটু মায়া হয়েছিলো মানুষটার জন্য। যাই হোক স্বামি তো। তবুও আমি মানবতা দেখালাম না। আমাকে পাত্তা না দেওয়ার উসুল নেবো আমি। জ্বালানো তো সবে মাত্র শুরু।

সকালে তারাতারি উঠে গেলো রিদ ভাই। চোখ গুলো লাল হয়ে আছে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে রাতে ঘুম হয়নি তার। তবুও আমি কাটা গায়ে নুনের ছিটকা হিসেবে তাকে বললাম,
– রাতে ঘুমাতে পারেন নি তাই না? আমাকে বলতেন, যে আপনি নিচে ঘুমাতে পারেন না। তাহলে প্রয়োজনে আমিই নিচে ঘুমাতাম।
রিদ ভাইয়া এক দৃষ্টিতে কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে রইলো। বুঝাই যাচ্ছে আমার কথায় খুব বিরক্ত বোধ করলো সে। এর পর নিরবতা ভেঙে বললো,
– জুতা মেরে গরু দান করতে ভালোই পারো দেখছি।

এর পর লোকটা আর কিছু না বলে ওয়াশরুমে চলে গেলো। লোকটা আসলেই সুবিধার নয়, যতোটা সহজ সরল ভেবেছিলাম, তার চেয়ে দিগুন ঘাড়ত্যাড়া সে। ভালোই হয়েছে। নিরামিশ হলে জ্বালিয়ে মজা পেতাম না।

একটু পর মা আসলো রুমে। দরজায় নক করতেই দরজা খুলে দিলাম আমি। মা রুমে এসেই আগে আমার উনি মানে রিদ ভাইকে খুজছে। দেখে মনে হচ্ছে এখন আমি না উনিই তার আপন। আমি মায়ের দিকে চেয়ে বললাম,
– উনি ওয়াশ রুমে গেছে ফ্রেশ হতে।
মা আমার হাত ধরে নিয়ে খাটের উপর বসালো। এর পর বললো,
– রিদের সাথে কথা হয়েছে তোর?
আমি কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলাম। এর পর বললাম,
– হুম হয়েছে, তবে মানুষটা এতো সুবিধার না। কেমন গম্ভির প্রকৃতির। ভাব বেশি মনে হয়।
– ডাক্তার’রা এমনই হয়। আস্তে আস্তে সব বুঝে যাবি। এখন সে বের হলে ওকে নিয়ে নাস্তা করতে আয়।
,
,
দুপুরে খাওয়া শেষে আমাকে নিয়ে রওনা দিলো আমার শশুর বাড়ির উদ্দেশ্যে। দুইটা গাড়ি, প্রথমটাতে মামা মামি আর ড্রাইভার। আর দ্বিতীয় গাড়িতে আমি সে আর তার দুই বন্ধু। ভাইয়ার দুই বন্ধু সামনে বসলো। একজন গাড়ি চালাচ্ছে আরেকজন পাশে। আর আমি আর সে বসলাম পেছনের সিটে।
বাবা মা আমার সাথে যাচ্ছে না। তারা কলেজ খোলার আগের দিন গিয়ে আমায় নিয়ে আসবে। এখন এই কয়েকদিনের জন্য পাঠাচ্ছে যাতে শশুর বাড়িটা একটু ভালো করে দেখে বুঝে বাড়ির সাথে পরিচিত হয়ে আসতে পারি। এর পর আমার এক্সাম শেষে তখন অনুষ্ঠান করে তুলে নিয়ে আসবে।
গ্রীষ্মের সময় কাটাতে শশুর বাড়িতে পাঠাচ্ছে আমাকে। অদ্ভুত না বিষয় টা?

আজ আমার খুব খারাপ লাগছে। বিষয়টা এমনও না যে একেবারে শশুর বাড়ি চলে যাচ্ছি। বরং, ১০-১২ দিন পর আবার কুমিল্লায় ব্যাক করবো বাবা মায়ের কাছে। এর পর এক্সাম পর্যন্ত যত মাস সময় লাগে তা বাবা মায়ের সাথেই থাকবো। তবুও কেন যেন মনে হচ্ছে আমি আমার বাবা মাকে ছেরে অনেক দুরে সরে যাচ্ছি। বাবা মায়ের সাথে আমার অনেক দুরুত্ব বেড়ে যাচ্ছে। এই তো আর কয়েকটা মাস, বাবা মায়ের থেকে সত্যিই অনেক দুরে হারিয়ে যাবো। আমার বিয়ে হয়ে গেছে এটা ভাবতেই বুকটা কেমন যেন করছে। আসিফের কথা মনে পরতেই অদ্ভুত ভয় কাজ করছে মনে। আমাদের এলাকার চেয়ারম্যান এর ছেলে। তাদের একটা গ্যাং আছে। খুব খারাপ তারা। আমাকে কলেজে যাওয়ার পথে প্রায়ই ডিস্টার্ব করতো সে। এটাও বলেছিলো, তাকে ছারা আর কাউকে বিয়ে করলে, আমাকে আর আমার স্বামী দুজনকেই মেরে ফেলবে। তাই হয়তো বাবা হুট-হাট এভাবে বিয়েটা দিয়ে দিলো। এখন আমার স্বামীর বাড়ি তো অনেক দুর ঢাকা। কিন্তু বাবা মায়ের জন্য খুব চিন্তা হচ্ছে আমার। আমার বাবা মায়ের কিছু হলে আমি বাচতে পারবো না।

এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো তা বুঝতেই পারিনি।
– এই রাফি কয়েকটা টিসু পেপার দে তো, নাহলে এক্ষুনি তোদের ভাবি গাড়িটাকে অথৈ জলে ভাসিয়ে দেবে।
রিদ ভাই কথাটা বলতেই তার দুই বন্ধু হাসা শুরু করলো। আমি বুঝতে পারছি না সে কি টিসু চাইলো, নাকি আমায় ইন-ডিরেক্টলি অপমান করলো।
সে এক হাতে ফোন টিপছে অন্য হাতে আমার দিকে টিসু পেপার এগিয়ে দিলো। আমি টিসু নিয়ে অশ্রু মুছে নিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলাম। প্রায় সন্ধা ঘনিয়ে এসেছে। আর আমরাও চলে এসেছি প্রায়।

কুমিল্লা থেকে ঢাকা আসতে আসতে সন্ধা পার হয়ে গেলো। বাড়ির গেটের সামনে এসে গাড়ি থামলো। দেখি বাড়িটা কৃত্রিম আলোয় জ্বলছে। দারোয়ান গেট খুলে দিলে গাড়ি একটা একটা করে বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেলো।
গাড়ি পার্কিং করে দেখি বাড়ির সদর দরজার সামনে কতগুলো মেয়ে ফুল হাতে দাড়িয়ে।
মামি আমাকে ধরে ভেতরে নিয়ে যাওয়ার সময় মেয়ে গুলো ফুল ছিটাতে থাকলো।
,
,
ফ্রেশ হয়ে প্রতিবেশিদের সাথে পরিচিত হলে সবাই একে একে চলে গেলো। আমি চুপচাপ বসে আছি ড্রয়িং রুমে। অনেক আগে এসেছিলাম এই বাড়িতে ঠিক ভাবে মনেও নেই। আর আগের থেকে এখন বাড়ির চেহারাও বদলে গেছে।
রিদ ভাই নাকি হসপিটালে চলে গেছে জরুরি কল পেয়ে। কতো ব্যস্ততা তার, নতুন বৌ কে সঙ্গ দেওয়ার সময় পাচ্ছে না সে। একেবারে অনুভূতিহীন একটা মানুষ।
আমি কিচেনে মামির কাছে গেলাম। দেখি শিলা(কাজের মেয়েটা) রাতের জন্য রান্না করছে। আর মামি চা বানাচ্ছে।
আমি মামিকে বললাম,
– আমি একটু বাড়িটা ঘুরে দেখবো মামি।
মামি শিলাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
– আরশিকে বাড়িটা ঘুরিয়ে দেখা তো। আমি এদিক টা দেখছি।
মামির কথা শেষ হতেই আমি বললাম,
– না না তোমাকে কষ্ট করতে হবেনা মামি। ও বরং রান্না করছে করুক। আমি পারবো সমস্যা নেই।
মামির সন্মতি পেয়ে আমি বাড়িটা ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম। এখন রাতের বেলায় ছাদের উপরে যাওয়া ঠিক হবে না বলে, ছাদ টা দিনের বেলায় দেখবো ভাবছি।

সারা বাড়ি ঘুরে ঘুরে দেখলাম। এর পর একটা রুমে ঢুকে আমি অবাক হলাম। শুধু অবাক না খুব বেশিই অবাক হলাম। রুমটার দেয়ালে অনেক গুলো ছবি ঝুলানো। যেগুলো অন্য কারো নয়, আমারই ছবি।
আমি অবাক হয়ে দেওয়াল থেকে একটা ছবি নামিয়ে হাতে নিয়ে দেখতে লাগলাম। তখনি পেছন থেকে একটা পুরুষ কন্ঠ ভেষে এলো কানে,
– এই মেয়ে, আমার রুমে কি করছো? আমার অনুমতি ছারা কেউ আমার রুমে ঢুকা নিষেধ।
আমি পেছন ফিরে রিদ ভাইয়াকে দেখে হুট করে বলে দিলাম,
– আমারও অনুমতি নিয়ে ঢুকতে হবে এখানে?
হুট করে এমন কথা কেন বললাম, তা আমি নিজেও বুঝতে পারছি না। আমি কি অধিকার খাটিয়ে কথা বললাম?

আমার হাতে ছবিটা দেখে রিদ ভাইয়া এগিয়ে এসে ছবিটা নিয়ে নিলো। তার পর আমার দিকে চেয়ে বললো,
– এগুলো আজকে বিকেলেই লাগানো হয়েছে। আর এটা মায়ের কথা মতোই লাগিয়েছে। এতো অবাক হওয়ার কিছু নেই। আর আমার রুমের সব কিছুই আমার ব্যাক্তিগত। আর আমার ব্যাক্তিগত জিনিসে কারো হাত লাগাটা আমার পছন্দ না।
বলেই তিনি ছবিটার উপরে হাত বুলিয়ে প্রথমে যেখানে ছিলো ওখানে লাগিয়ে দিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম তার দিকে।
তবে সে একটা কথা মিথ্যা বলেছে তা আমার কাছে পরিস্কার। আর তা হলো ছবি গুলো আজকে লাগানো হয়নি। কারণ আমি যখন ছবিটার উপরে হাত বুলিয়েছিলাম থখন ছবিটাতে বালির উপস্থিতি টের পেয়েছিলাম। যদিও খালি চোখে তা দেখা যাচ্ছিলো না তবুও বুঝলাম ছবিটায় কিছু বালির উপস্থিতি ছিলো। আর যা আজকের দিনেই এই রুমে আসা অসম্ভব। তার মানে ছবি গুলো অনেক আগে থেকেই এই রুমে সেট করা।
কেন জানি আমার মুখ দিয়ে একটা হাসি ফুটে উঠলো। লোকটা কি আসলেই অনুভুতিহীন, নাকি এগুলো মাত্রই অভিনয়?

To be continue……

~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here