অনুভূতিহীণ পর্ব -০৩+৪

#অনুভূতিহীন (পর্ব ৩)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

রিদ ভাইয়ার চলে যাওয়ার দিকে কিছুক্ষন চেয়ে রইলাম আমি। মানুষটা বড়ই অদ্ভুত প্রকৃতির। এর পর সারা রুম হেটে ছবি গুলো দেখছিলাম। কতো সুন্দর করেই ফ্রেম করে সাজানো। বিয়ের আগে তো আমাদের দেখাই হয়নি। এতো ছবি কোথায় থেকে সংগ্রহ করেছে সে?
এর পর বেলকনিতে গেলাম। দেখি একপাশে একটা গোলাপ গাছ। কয়েকটা ফুল ফুটে আছে, বাকি গুলো এখনো কলি।
আমি হাত বাড়িয়ে ছেতে যাবো তখনই মনে হলো, রিদ ভাই তো বলে গেছে তার ব্যক্তিগত জিনিসে হাত না লাগাতে। এসব ভাবতেই বাড়িয়ে নেওয়া হাতটা আবার গুটিয়ে নিলাম।

ফোনের শব্দ কানে আসতেই হাতে থাকা ফোনটার দিকে তাকিয়ে দেখি আন-নোন নাম্বার থেকে কল।
আপু কয়দিন আগে নতুন সিম কিনেছিলো। হয়তো আপুই ফোন দিলো। আমি ফোন রিসিভ করে কানে তুলতেই, ওপাশ থেকে ছেলের কন্ঠ ভেষে আসে।
– এই খা** মা** তোর সাহস কি করে হলো অন্য কাউকে বিয়ে করার? কি বলেছিলাম তোকে আমি? তোকে আর তোর জামাই দুজনকেই মে*রে দিবো আমি। তোর বিয়ের স্বাধ আমি মিটাবো খা**।

আমি ফোনটা কানের কাছ থেকে দুড়ে সরিয়ে নিলাম। কি বিশ্রি ভাষা তার। শুনতেই গা রি রি করে উঠে।
এর পর কানের কাছে নিতেই, লোকটা আরো কিছু বলতে শুরু করলো,
– এতোদিন আমার ভালো রুপ দেখেছিস। এবার দেখবি আমার আসল রুপ টা। কলেজ খুললে আবার ফিরবি না, বাড়িতে? ফিরবি তো। ক্লাস করতেও তো যাবি। তখন রাস্তা থেকে তু*লে নিয়ে যাবো তোকে। তখন দেখবো তোর কোন বাপ এসে তোকে বাচায়। খা**

ঘৃনায় ফোনটা কেটে দিলাম আমি। খুব কাঁন্না পাচ্ছে আমার। আমার সাথেই কেন এমন হয়? ওই লোকটা কেন এভাবে আমার পিছনে পড়েছে? বাড়িতে থাকতেও ঠিক ভাবে কলেজে যেতে পারতাম না ওই লোকটার ভয়ে। আর এখন বিয়ে করে এখানে এসেও তার শান্তি নেই।
বাবা সব সময় বলতো, আমাকে অনেক পড়াবে। আমি যতদুর চাই, ততদুর আমার হাত ধরে এক সাথে নিয়ে যাবে। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করবে আমাকে। আমাকে নিয়ে নাকি তার অনেক স্বপ্ন। আমরা দুই বোন ছিলাম বাবার চোখের মনি। আমাদের কোনো ভাই নেই দেখে বাবার সব স্বপ্ন আমাদের ঘিরে। আপু পড়ালেখায় তেমন একটা ভালো ছিলো না। তাই ইন্টার পাশ করে আর পড়েনি। এর পর আপুকে বিয়ে দিয়ে দেয়। কিন্তু পড়ালেখায় বরাবরই সিরিয়াস ছিলাম। তাই বাবা সব সময় বলতো, আমাকে দিয়েই তার সব স্বপ্ন পুরণ করবে।
কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস। কলেজে উঠতেই আমার উপর চোখ পড়ে চেয়ারম্যান এর ছেলে আসিফ এর। এর পর নানা ভাবে উত্তক্ত শুরু করে আমাকে। কোনো মতো ফাষ্ট ইয়ার শেষ করে সেকেন্ড ইয়ারের কয়েক টা মাস পার করলো। এর পর সমস্যা টা আরো বেড়ে যায়, আমায় প্রপোজ করার পর থেকে। যখন আমি তাকে রিজেক্ট করে দিয়েছিলাম। কারণ তাকে খুব ভয় লাগতো আমার। আর তারা খুব নষ্ট বললেও ভুল হবে না। বাবার পাওয়ার খাটিয়ে বেচে যায় সবসময়।
এর পর কলেজে যাওয়া খুব কষ্টকর হয়ে দাড়ায় আমার জন্য। রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে রে*প করার হুমকিও দিয়েছিলো ওই ছেলেটা। বাবা বাধ্য হয়ে চেয়ারম্যান এর কাছে নালিশ করে। কিন্তু চেয়ারম্যান লোক দেখাতে ছেলেকে দুইটা থাপ্পর মারতো। এর পর আবার সেই আগের মতোই ডিস্টার্ব করতো। আর গত কাল কলেজ থেকে ফিরেই শুনলাম আমার বিয়ে। তাও রিদ ভাইয়ের সাথে। হয়তো বাবা আমাকে নিয়ে ভয়ে ছিলো, তাই হুটহাট এমন সিদ্ধান্ত নিলো আমাকে না জানিয়েই। এখন ভয় হচ্ছে প্রচুর। বাড়িতে গেলে কি করবে সে? আমি কি এক্সাম টা দিতে পারবো না ঠিক ভাবে?

এর মাঝেই মামি এসে কাধে হাত রাখতেই আমার সারা শরির কেঁপে উঠলো। তখনও আমার শরির একটু একটু কাপছে।
মামি আমার দিকে ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে বললো,
– কিরে আরশি, মা আমার। কাঁপছিস কেন? আর তোকে এমন অসাভাবিক দেখাচ্ছে কেন? কিছু হয়েছে, ভয় পেয়েছিস?
আমি নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে মাথা ঝাকিয়ে না সুচক জবাব দিলাম। মামি আমার দিয়ে চেয়ে আবার বলল,
– কি হয়েছে আমায় বল, রিদ কিছু বলেছে? কিছু বললে বল, এক্ষুনি ওর হিরো গিরি বের করবো।
আমি কথা ঘুরাতে বললাম,
– না মামি ও কিছু বলেনি। এমনি বাবা মায়ের কথা মনে পরছিলো।
আমার কথায় মামি একটু হাসলো। তার পর আমার গালে হাত রেখে বললো,
– তো এখন থেকে কি আমরা তোর বাবা-মা না? কয়দিন পর তো বাবা-মায়ের কাছে চলেই যাবি।
আমি একটু হেসে মামিকে জড়িয়ে ধরলাম। এর পর তার সাথে খাওয়ার জন্য চলে গেলাম।

খাওয়া শেষে রুমে এসে বসে রইলাম। মাথায় নানান চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। বিষয় টা কি রিদ ভাইয়ার সাথে শেয়ার করবো? নাকি এখন এসব বলা ঠিক হবে না। এমনিতেও সে আমার সাথে প্রয়োজন ছারা তেমন একটা কথা বলে না। এখন এসব বললে হয়তো আমাকেই খারাপ ভাবতে পারে। না বলাই ঠিক হবে।

কিছুক্ষন পর রুমে আসলো রিদ ভাই। ট্রাউজার ও পাতলা টি-শার্ট পরা। তাকে দেখে আমার এক ডোস ক্রাশ খেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু খাবোনা। আমি এখন ওই মুডে নেই। চুপচাপ বসে আছি তার দিকে তাকাচ্ছি পর্যন্ত না। আমাকেও যে প্রচুর ভাবের উপর থাকতে হবে।
তবুও কপাল কুচকে তার দিকে চেয়ে বললাম,
– আজকে কি একসাথে ঘুমাবেন?
রিদের সোজা উত্তর,
– এতো শখ নেই আমার।
– তাহলে আজকেও নিচে ঘুমাবেন?
– জ্বি না, আমার রুমে অনেক বড় সোফা আছে। আর আমি অন্যদের মতো নিজের বাপের বাড়ির পাওয়ার খাটিয়ে জামাইকে বা বৌকে ফ্লোড়ে ফেলে রাখবো না।

ওনার কথায় রাগ হলো আমার। অন্যকেউ বলতে আমাকেই বুঝালো সে। আমি জানতাম নির্ঘাত এই বেটা আমায় ওই বিষয় টা নিয়ে খোচা দিবে। কেন যে নতুন জামাইকে বাসর রাতে ফ্লোরে ঘুমাতে বললাম? তাও আবার নিজের বাপের বাড়িতে। মনে মনে নিজের উপর খুব রাগ হলো আমার।

রিদ ভাইরের রুমে টেবিলের ছোট বক্স গুলোতে অনেক গুলো বই তাক করে রাখা আছে। এক পাশে ডাক্তারি বই, আর অন্যপাশে কিছু উপন্যসের বই। অথচ আসার পর থেকে এগুলোর দিকে চোখই পড়লোনা আমার। রিদ ভাইয়া ওখান থেকে একটা উপন্যাসের বই নিয়ে বেলকনিতে চলে গেল। আমি হা করে তাকিয়ে রইলাম তার দিকে। বাব্বাহ, এই অনুভূতিহীন মানুষটা আবার উপন্যাসও পড়ে?
আমি ছোট থেকেই খুব গল্প প্রেমি। রাত জেগে ফেসবুকে গল্প পড়তাম আগে।
আর উপন্যাস প্রেমিরা এমন অনেক বই একসাথে দেখলে খুশিতে পাগল হওয়াটাই স্বাভাবিক। এটা তাদের মনের খোরাক।
ইচ্ছে করছে বইগুলো দেখতে। কিন্তু সে তো বললো, তার জিনিসে কেউ হাত দিতে পারে না।তার অনুমতি নিয়েই পড়তে হবে। আর এখন মন মেজাজও ভালো নেই। প্রচুর চিন্তা ঘুর পাক খাচ্ছে মাথায়। আপাতত নিজেকে একটু বিশ্রামে নিতে হবে।

চুপচাপ বিছানায় শুয়ে আছি আমি মথায় খুব চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। দুপুরের আগেও বাবা মায়ের সাথে ছিলাম। আর এখন তাদের জন্যও প্রচুর চিন্তা হচ্ছে।
ওই বাজে লোকটা বাবার কোনো ক্ষতি করবে না তো?
খুব চিন্তা হচ্ছে আমার তাদের জন্য। আবার মনে হচ্ছে লোকটা যদি ঢাকায় চলে আসে? যদি রিদ ভাইয়ের কোনো ক্ষতি করে? না, এসব কি ভাবছি আমি। চিন্তা যেন আমার পিছুই ছারছে না।

বেলকনিতে উকি দিয়ে তার দিকে তাকালাম। খুব মনোযোগ দিয়ে উপন্যাস পড়ছে সে। চিন্তা গুলো এক পাশে রেখে চোখ বুজে রইলাম। এই বুঝি ঘুম এসে সব চিন্তা দুর করে দিবে। কিন্তু ঘুমও আসছে না আজ।
কিছুক্ষন পর বারান্দা থেকে রুমে আসে রিদ ভাই। আমি ঘুমানোর ভান করে চোখ বুজে আছি। তিনি বইটা জায়গায় রেখে আমার পাশে এসে বসলেন। খুব মায়াময়ি দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষন। হটাৎ ওনার এমন আচরণ মাথায় ঢুকছে না আমার। তিনি আমার গালে হাত রাখতে গিয়েও আবার হাতটা সরিয়ে নিলো। হয়তো আমি জেগে যাবো এটা ভেবে।
তার এমন মায়াময়ি দৃষ্টি যেন আমার ভেতরে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। কেমন যেন অস্থির অস্থির লাগছে আমার। কেন লাগছে তা জানিনা৷ সবে আঠারো তে পা দিলাম। এই বয়সটায় অনুভুতি গুলো খুবই ভয়ঙ্কর।

তিনি আর কিছুক্ষন এভাবে তাকিয়ে থেকে একটু ঝুকে আমার কপালে আলতো করে চুমু একে দিয়েই উঠে গেলেন। তাকে দেখে মনে হচ্ছে চুমু দিয়ে বড্ড অপরাধ করে ফেলেছে সে।
সে চলে যাওয়ার পর চোখ খুলে তাকালাম আমি। ঠোঁটে অজান্তেই একটা হাসি ফুটে উঠলো। মনে হচ্ছে সব চিন্তা দুরে ফেলে আমার মন পাখিরা ডানা ঝাপটাতে শুরু করলো। এ কেমন অনুভূতি জন্ম হচ্ছে আমার মাঝে?
#অনুভূতিহীন (পর্ব ৪)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

সকালে উঠে দেখি রিদ ভাই সোফায় বসে লেপটপে কি যেন করছে। আমার চোখে এখনো ঘুমের রেশ কাটেনি। তাই দেরি না করে ওয়াশ রুমে গেলাম ফ্রেশ হতে।
একটু আগে মামি ডেকে গেছে নাস্তা করার জন্য। আমি ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে দেখলাম উনি এখনো বসে আছে ওইভাবে।
আমি ওর সামনে দাড়িয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,
– নাস্তা করবেন না?
কিন্তু আমার কথা যেন সে কানের এই পাশ দিয়ে নিয়ে ওই পাশ দিয়ে বের করে দিলো। আমার রাগ হলো প্রচুর। অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো লাগে না আমার। আমি রাগে ওর থেকে লেপটপ টা নিয়ে নিলাম এক টানে।
– এই যে খাম্বা মহাশয়, আমার কথা কি আপনার কানে যায় না? এতো ভাব দেখান কেন আমার সাথে? একটু আগে মামি ডাকলো শুনতে পান নি।
সে আমার দিকে চেয়ে বললো,
– তুমি যাও আমি আসছি। লেপটপ টা দাও এখন।
– দেব একটা শর্তে।
সে আমার দিকে ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে বললো,
– কি শর্ত?
– আমার গালে একটা ছোট্ট আপ্পা দিতে হবে?
সে আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
– তোমার কি মনে হয় এতো সহজেই,,,
এর মাঝে আমি তাকে থামিয়ে দিয়ে বললাম,
– এতো কিছু মনে হওয়ার প্রয়োজন নেই, আমার সাথে ভাব দেখানোর অপরাধে এটা আপনার শাস্তি।
– এতো ঠেকা পরেনি আমার।
বলেই উনি উঠে নিচে চলে গেলো। আমি তার দিকে তাকিয়ে রইলাম। ঘুমের মাঝে লুকিয়ে চুমু খেতে দোষ নেই। আর সরাসরি দিতেই তার দোষ?

শিলা টেবিলে নাস্তা সাজিয়ে দিচ্ছে। আমরা সবাই একসাথে বসলাম নাস্তা করতে। মামা চলে যাবে তার অফিসে আর কিছুক্ষন পর রিদ ভাই চলে যাবে হসপিটালে। এর পর বাসায় আমি আর মামি। শিলাও থাকবে।

তখন সকাল ৮ টা। রুমে এসে দেখি রিদ ভাই চুপচাপ বসে আছে। তার সাথে কথা বলায় বাহনা খুজতে লাগলাম। কিন্তু খুজে পাচ্ছি না।
হুট করেই সে আমায় বললো,
– এক কাপ চা এনে দাও তো আরশি।
আমি একটু ভ্রু কুচকে তাকালাম তার দিকে।
– একটু আগে না চা খেলেন?
– এখন আবার খাবো প্রব্লেম কি? কোথাও কি লেখা আছে, দুই বার চা খাওয়া অপরাধ?
– আচ্ছা আনছি।
বলেই রুম থেকে বের হওয়ার জন্য হাটা ধরলাম। ওনি এতো লেপটপ নিয়ে কি করছে তা নিয়ে রিতিমত চিন্তা হচ্ছে আমার। কোনো মেয়ের সাথে কথা বলছে না তো আবার? দরজায় আসতেই উকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করলাম। কিন্তু ও আমার দিকে রাগি লুক নিয়ে তাকাতেই আমি চলে গেলাম।

আমি দুই কাপ চা বানালাম। দুইজন মিলে একসাথে খাবো আর আড্ডা দিবো। কিন্তু আমার ভাবনাকে জলে ফেলে তিনি বললো,
– চায়ে চিনি বেশি হয়েছে। আর বেশি চিনি খেলে ডায়বেটিস হয়। যাও এটা চেন্জ করে নিয়ে আসো।
একটু রাগ হলো আমার। তাও জোর পূর্বক একটা হাসি দিয়ে চলে গেলাম আবার। এবার একেবারে ওনার মতো পার্ফেক্ট করে বানিয়ে নিলাম।
ওর কাছে এসে চা এগিয়ে দিয়ে বললাম,
এবার একধম ঠিকঠাক আছে।
এবার উনি আমার দিকে চেয়ে দাত কেলিয়ে বললো,
– একটু আগেই তো চা খেলাম, এখন ইচ্ছে করছে না। এক কাপ কফি এনে দিবে?
এবার রাগে নিজের চুল নিজে ছিড়তে ইচ্ছে করছে আমার। কেন যে কথা বলায় বাহানা খুজতে ওর সামনে ঘুর ঘুর করতে গেলাম।
নিজেকে নিজে হাজার বার গালি দিতে দিতে আবার কিচেনের দিকে গেলাম। এক কাপ কফি বানিয়ে তার কাছে এসে এবার তাকে কিছু বলার সুজুগ না দিয়ে আমি বলে দিলাম,
– এবার এটা না খেলে একধম মাথার উপর ঢেলে দিবো।
ভেবেছিলাম আমার কথায় ভয় পেয়ে এবার কাপ হাতে তুলে নিবে। কিন্তু তিনি তা না করে লেপটপ রেখে উঠে দাড়িয়ে বললো,
– আমি তো অলরেডি তোমার টা খেয়ে নিয়েছি।

এবার রাগে আমি তাকে বললাম,
– আপনি কি সত্যিই কফি খাবেন নাকি আমার সাথে মজা নিচ্ছেন? আপনাকে এখন আমি,,,
ওনি আমার দিকে ফিরে বললো,
– কি, আমাকে কি?
আমি একটু ঘাবড়ে গেলেও সাহস নিয়ে তাকে বললাম,
– মাথায় তুলে আছাড় দিতে ইচ্ছে করছে।
তিনি আর কিছু বললো না, আমার দিকে হালকা এগিয়ে আসতেই আমি দুই পা পিছিয়ে যাই। পেছনে একটা কাবার্ড রাখা। ওটার সাথে পিঠ ঠেকে গেলো আমার। তিনি আমার দুই পাশে দুই হাত রাখতেই চোক বন্ধ করে নিলাম আমি। কি করতে চাইছে সে? আর এখন আমার কি প্রতিক্রিয়া করা উচিৎ তাও ভেবে পাচ্ছি না। মাথা শুন্য হয়ে চুপচাপ দাড়িয়ে রিলাম পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টায়।
আমায় একটু তার দিকে সরিয়ে পেছনের কাবার্ড থেকে একটা টাওয়া নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেল। বুকে হাত দিয়ে একটা বড় শ্বাস নিলাম আমি। আরেকটু হলেই দম টা বেড়িয়ে আসতো। লোকটা আসলেই সুবিধার না। ভেবেছিলাম এই বাড়িতে যেই কয়দিন আছি, তাকে জ্বালিয়ে মারবো। আর হলো কি? সে নিজেই আমাকে গড়াগড়ি খাওয়াচ্ছে।

মামা অনেক আগেই চলে গেছে। রিদ ভাইয়া ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে রেডি হচ্ছিলো। দরজার পাশ থেকে আমি তার দিকে চেয়ে আছি অপলক দৃষ্টিতে। মানুষ টাকে এতো কিছুক্ষয় ভয় লাগে, আবার কিছুক্ষন বিরক্ত লাগে, আবার কিছুক্ষন মনে হয় জ্বালিয়ে মারি, আবার এখন ভালো লাগছে। যাই হোক স্বামীর দিকেই তো তাকিয়ে আছি দোষ কোথায়। আমি এখন বিবাহিত এটা ভাবতেই মাঝে মাঝে আমার নিজেরই বিশ্বাস হতে চায় না। তবে অনুভুতি গুলো পরিবর্তন হতে শুরু করেছে।

সে চলে যাওয়ার সময় মামি ডেকে বললো,
– বিকেলে সময় নিয়ে তারাতারি আসবি। আরশিকে নিয়ে শপিং এ যেতে হবে। এখন থেকে ওর সব দায়িত্ব তো তোরই। আর এই কয়েকদিন ওর পড়ার জন্যও তো জামা লাগবে।
– আচ্ছা মা আমি আসি।
বলেই বেড়িয়ে গেল রিদ ভাই। আমার মনে হলো সে বিরক্ত বোধ করেছে। যাই হোক ওসব না ভেবে মামিকে বললাম,
– আচ্ছা মামি, সে বিয়ে করেছে, আর দুই দিন সময় বের করতে পারেনি?
আমার কথায় মামি কোনো উত্তর দিলো না। শুধু মুখ টিপে হেসে চলে গেলো ভেতরে।
আমি হা হয়ে তাকিয়ে রইলাম, হাসির মতো কি বললাম আমি? আমি তো শুধু জানতে চেয়েছি, আজব।
,
,
সন্ধায় বাড়ি ফিরলো রিদ। গাড়ির শব্দ শুনতেই আমি বেলকনিতে গিয়ে দাড়ালাম। দেখি সে গাড়ি রেখে ভেতরে আসলো।
রুমে এসে সোফায় বসে আমায় উদ্দেশ্য করে বললো,
– এক গ্লাস ঠান্ডা পানি দিবে আরশি?
– সকালের মতো করবেন না তো আবার?
– মানুষ কি সব সময় ফানি মুডে থাকে?
– বাহ্ আপনি ফানি মুডেও থাকতে পারেন? জানতাম না তো। সব সময় তো গম্ভির হয়ে থাকেন।
রিদ ভাইয়া আমার দিকে ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে বললো,
– আমায় ভয় পাও না?
আমি একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললাম,
– আরশি কাউকে ভয় পায় না।
– সাহসি মেয়ে?
– বলতে পারেন।
– আচ্ছা দেখা যাবে।

সন্ধার পর আমরা বের হলাম। আজ নিজের স্বামীর সাথে শপিং করতে যাচ্ছি ভাবতেই কেমন অদ্ভুত অনুভুতি হচ্ছে।
তিনি গাড়ি নিতে গেলেই আমি বললাম,
– গাড়ি কেন?
– তাহলে কি আমার কাধে করে যাবে?
– নিতে পারবেন? আচ্ছা থাক লাগবে না, রিক্সায় যাব চলুন। রাতের আকাশের নিচে রিক্সায় করে চড়ায় অনুভুতিই অন্যরকম। চড়েছেন কখনো?
– হুম অনেক, তবে আমার কাছে তেমন একটা গভির অনুভুতি কাজ করেনি।
আমি বিড়বিড় করে বললাম,
– অনুভূতিহীন মানুষের আবার গভির অনুভূতি, হুহ্।
ওনি ভ্রু-কুচকে আমার দিকে চেয়ে বললো,
– কিছু বললে?
আমি একটু হেসে বললাম,
– না কিছু বলিনি, কখনো গভির অনুভূতি পান নি তাই তো? আজ পাবেন চলুন।
ওনি আর কথা বাড়ালেন না, চুপচাপ আমাকে নিয়ে হাটা শুরু করলো।
সে একটা রিক্সা ডেকে উঠে বসলো। আমিও পাশে উঠে বসলাম। রিক্সার সিট এতোটা বড় না। তবুও আমাদের মাঝখানে দুরুত্ব রয়েছে অনেক। তাকে দেখে মনে হচ্ছে যেন, আমার সাথে তার শরির লাগলে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে তার। মানুষটার দিকে যতবারই তাকাই ততোবারই অবাক হই। হুট করে খুব কাছে চলে আসে আবার কিছু সময় তার হাব ভাব দেখলে মনে হয় জীবনে মেয়ে মানুষ চোখেও দেখেনি। নিজেকে যতটা সাধু প্রমান করতে চায়, ততোটাও সাধু নয়। তা এই দুই দিনে ভালোই বুঝতে পেরেছি আমি।
ব্যাটা বৌ নিয়ে রিক্সায় উটেছিস, এতো ঢং করার কি আছে?
আমি তার দিকে চেয়ে বললাম,
– আগে কখনো মেয়ে নিয়ে রিক্সায় উঠেন নি?
তার সোজা উত্তর।
– আসতাগফিরুল্লাহ্ তওবা তওবা,আমাকে তোমার ওই টাইপের ছেলে মনে হয়? পড়াশুনা করেই কুল পেতাম না এসব আলগা পিরিত করার সময় কই?

খোলা আকাশের নিচে চাঁদের কিরণ ছড়িয়ে পরেছে চার দিকে। এর মাঝে নির্জন রাস্তায় রিক্সায় করে একটা ক্যাপল যাচ্ছে। অনুভুতিটাই অন্য রকম। আমাকে কেন যানি ইচ্ছে করছে মাঝখানের দুরুত্বটা দুর করে হাত এক হাত জরিয়ে কাধে মাথা রাখতে। আচ্ছা, রাখলে কি খুব বেশি অপরাধ হয়ে যাবে? সে কি রেগে যাবে, নাকি লজ্জা পাবে? আচ্ছা ছেলেদের লজ্জা পাওয়া মুখ দেখতে কেমন হয়?
জড়তা কাটিয়ে একটু তার দিকে ঘেষে বসার চেষ্টা করলাম। কিন্তু সে আরেকটু দুরে সরে গেল। একটু বিরক্ত লাগলো আমার। রাগও হলো প্রচুর। এবার ইচ্ছে করেই ওর গায়ের সাথে গা লাগিয়ে বসলাম। হুট করে অদ্ভুত এক ভালো লাগা কাজ করছে আমার। ভালো লাগায় আসলে সময় লাগে না। একটা মুহুর্তই যথেষ্ট। এটা আগে বিশ্বাস হতো না আমার। ভাবতাম হুটহাট একজনকে কিভাবে ভালো লাগবে? এটাও কি সম্ভব?
কিন্তু তাকে দেখে তা বিশ্বাস করতে বাধ্য হলাম। তাকে বলতে ইচ্ছে হচ্ছিলো,
– আপনাকে আমার ভালো লাগে।
হটাৎ ভাবনার ঘোর কাটতেই দেখি সে পাশে নেই। রাস্তায় পড়ে আছে পা ধরে। আমার গা ঘেষে বসা থেকে সরতে গিয়েই টুপ করে নিচে পরে গেলো সে। হাসি পাচ্ছে খুব আমার। অদ্ভুত এই মুহুর্তটা ভিডিও করে রেখে দিতে ইচ্ছে করছে। ভবিষ্যতে কাজে দেবে।
আমার খুব হাসি পাচ্ছে আজ। কারণ রিদ ভাইয়ের মুখটা একেবারে দেখার মতো হয়েছিলো লজ্জায়।

To be continue……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here