এসব কি হচ্ছে রোহান, উরনা ছাড়ো। ভালোবাসো ভালোকথা তবে এসব কি ধরনের অস্বভ্যতা। বন্ধুত্বের দাবিতে এতোদিন কিছু বলিনি তবে দিনদিন সীমা ছাড়িয়ে গেছো, দাও আমার ফাইলগুলো।
আলাইনা ফাইলগুলো নিয়ে দ্রুতবেগে হেঁটে নিজের রুমে চলে গেলো। মূলত রোহানদেরর বাসায় থাকছে আর একমাত্র বন্ধুর ভাই বলে আজ চাইলেও কিছু বলতে পারছেনা।
______________________________
আলাইনা তারাতাড়ি চল, অফিসের তোর আজ প্রথমদিন যদি লেইট হয় বস অফিসে তোকে ডুকতে দিবেনা। আর আমাদের যা বস।
কথাগুলো আলাইনাকে বলতে বলতে রাহি চুল বাধছে।
বেশ কিছুখন পর আলাইনা রুম থেকে বের হতেই রাহি অবাক দৃষ্টিতে আলাইনার দিকে তাকিয়ে বলে- আচ্ছা দোস্ত একটা মেয়ে হয়ে তোর উপর ক্রাস খেলে কি পাপ হবে?
আলাইনা একটু রাগী ভাব নিয়ে রাহিকে বলে- তোর ক্রাস ব্রাশ খেতে চাইলে পরে খাস, এখনতো চল এতোখন তো বললি অফিসে দেরী হচ্ছে তাহলে এখন কী হা করে দাড়িয়ে থাকবি? বাই দ্যা ওয়ে আমি জানি আমি সুন্দরী নজর দিতে হবে না
[“আলাইনা আহমেদ” ছোট থেকে ফুপির কাছে বড় হইছে। আলাইনার বাবা আজমিন খাঁন কোনো এক অজানা কারনে ছোট থেকে একমাএ বোনকে নিয়ে শহরে থাকতো। বোনকে বিয়ে দিয়েও নিজের থেকে আলাদা করে নাই একসাথেই থাকতো দুটি পরিবার। সুখের কোনো শেষ ছিলো না। যখন আলাইনা পরিবারের আসে তখন থেকে সুখ যেনো উপচে পরছে।
প্রতিবছরের মতো এবারও আজমিন আহম্মেদ মৃত মা বাবার নামে মানুষদের দান করতে নিজের স্থী আর বোনের জামাইকে নিয়ে গ্রামে গিয়েছিলেন।
তখন এক এক্সিডেন্টে আলাইনার মা-বাবা আর ফুপা মারা যায়। সেই থেকেই ফুপির কাছে আছে আলাইনা,ফুপিও আর বিয়ে করেনি।
ফুপি এখন গ্রামে থাকে আর আলাইনা পড়াশুনার জন্য আজমিন খাঁন শহরে থাকছে।]
________________________________________
অফিসে বসে পেপার পড়ছিলো আরিয়ান চৌধুরী আয়াত। পাশে দাড়িয়ে তার পি.এ কাবির চাচা কিছু বলতে চেয়েও বলছেনা। হয়তো পেপার পড়ার মাঝে ডাকলে স্যার বিরক্ত হয়ে অফিস থেকে বের করে দিবেন এই ভয়ে কিছু বলছেনা।
এদিকে অফিসে এসে আলাইনাকে যে পি.এ ওয়েটিং রুমে বসিয়ে রেখেছে প্রায় দেড় ঘন্টা হতে চলল।
রাহি এই অফিসে অনেক আগে থেকেই কাজ করে সেই সুবাদেই আলাইনার এখানে আসা।
আরো বেশ কিছুখন বসে থেকে কিছু স্টাফ দের জিঙ্গেস করে বসের রুমের দিকে পা বাড়ায় আলাইনা। রুমের ঠিক সামনে গিয়ে দরজায় হাত দিয়ে নক দেয়।
ভিতরে বসে আয়াত এক রকমেই পেপার পড়ছে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে তার পেপার পড়া ছাড়া আর কোনো কাজ নেই। এদিকে ভয়ে পি.এ রুহ কেপে ওঠে না জানি কোন হতভাগা দরজায় টোকা দিচ্ছে। আচ্ছা সে কি ভুলে গেছে এই অফিসের নিয়ম।
এইতো কিছুদিন আগে অফিসে এক নতুন ছেলে জয়েন করছিলো। স্যার কিছু ফাইল দেখছিলো তখন নাস্তা দেওয়ার সময় কাপ প্রিজে টুং টাং শব্দ হওয়ায় রেগে গিয়ে পুরো নাস্তা ছেলেটির গায়ে ছুড়ে মারে। ছেলেটির মাথায় কাপ লাগায় মাথা ফেটে রক্ত বের হয়। পরে নিজেই ছেলেটিকে হসপিটালে ভর্তি করে বাসায় টাকার চেক দিয়ে আসে।
মূলত স্যার যখন যে সময়ে যেটা চাইবে তখন সেটা ছাড়া অন্য সময়ে নিলে স্যারের রাগের কারন
অথচ এই আয়াতই এক সময় কতো নরম মনের ছিলো। ভার্সিটিতে থাকতে কেউ গায়ে হাত দিলে তাকে বুঝিয়ে শুনিতে ভালো পথে আনত। কতো গরীব লোকের রাস্তার লোকের সেবার করত। আর সেই আয়াত আজ কতো কঠিন মনের কে বলবে এই আয়াতই ছিলো সেই আয়াত।
অফিসে যদি আয়াতের কথার উপর কথা বলে সেই হলো পি.এ কাবির চাচা। পি.এ অফিসের অনেক পুরানো এই চাচা যাকে আয়াত বাবার মতো সম্মান,স্নেহ করে। চাচার কথা আয়াত মানলেও যখন রেগে যায় তখন সামলানো মুসকিল হয়।
এদিকে বেশ কিছুখন পরও ভিতর থেকে কোনো শব্দ না পেয়ে আলাইনা দরজা ঠেলে ভিতরে ডুকে। কিন্তু তাতে কোনো পরিবর্তন হলো না আয়াতের।
বন্যার আগে যেমন সব নিরবতা থাকে তেমনই আবাস পাচ্ছে আয়াতে পাশে দাড়িয়ে থাকা কাবির চাচা
নিরবতাকে দূরে ঠেলে চেহারের উপর বসতে বসতে আলাইনা শান্ত স্বরে বলে- মিস্টার আয়াত সাহেব আপনার কাছে সময়ের মূল্য বলতে কি বুঝায়। সকাল ৮ টায় অফিসে নতুন স্টাফকে ওয়েটিং রুমে বসিয়ে রেখে ১২ টা পযর্ন্ত একনাগালে বসে থাকা? আমি কাজ করে টাকা নিবো বসে থেকে মাইনে চাই না।
আয়াত এতোখন নিচের দিকে তাকিয়ে থাকলেও এবার কড়া মেজাজে উপরের দিকে তাকাতেই পুরো দুনিয়া ধমকে যায়। আচ্ছা এটাই কি আলাইনা তার আলাইনা? কিন্তু সে এখানে কি করে। যাকে গত তিন বছর ভুলার জন্য এতো কষ্ট পাচ্ছে কিন্তু সে আজ তার সামনে কি করে?
তার তো এখন ভালোবাসার মানুষের সাথে সুখে থাকার কথা তবে আজ চাকরির জন্য তার অফিসে কেনো?
আচ্ছা আলাইনা কি তাকে চিনতে পাচ্ছে, না তা কিভাবে পারবে মাএ দুইদিন দেখে কেউ তিনবছর কি করে মনে রাখে?আয়াত আলাইনার দিকে
কিছুখন তাকিয়ে থেকে তার পি.এ এর দিকে তাকিয়ে বেশ জোরে চিৎকার করে বলতে থাকে- আচ্ছা সে এখানে এই অফিসে কেনো? কে আসতে বলেছে তাকে? নতুন স্টাফ আমি চাইনা।
মিস আলাইনা আপনি এখন যেতে পারেন।
কাবির চাচা কিছু বলার আগেই পাশ থেকে আলাইনা কড়া জবাবে উওর দেয়- আমি আপনার অফিসে নিজে আসেনি আমাকে নিয়ে এসেছে আপনার বাবা মানে বড় স্যার আমাকে নিয়োগ দিয়েছে। পুরো চার বছরের কন্টাক্ট এ। আপনি চাইলে কন্টাক্ট পেপার দেখতে পারেন যাতে লেখা আছে যতখন না আমি চাইবো ততখন কেউ বের করতে পারবে না।
আর হ্যাঁ আমরা স্টাফরা ভিখারী না যে যখন ইচ্ছা বের করে দিবেন, আমরা কাজ করছি বলেই আপনার অফিস চলে।
আলাইনার কথা শুনে কিছুখন চুপ থেকে কিছু একটা ভেবে আয়াত মুচকি হেসে বলে- লাইক সিরিয়াসলি মিস আলাইনা তুমি, মানে আপনি কাজ করতেও পারেন, যে নিজ হাতে খেতে জানতো না সে আসছে কাজ করতে? তা আমার তো এখন কোনো স্টাফ এর প্রয়োজন নেই আপনি কি কাজ করবেন?
আলাইনা কাজ নেই শুনে এবার বেশ কান্না পেলো, হয়তো এবারও আর কাজটা পাবেনা নয়তোবা অন্য কোনোকিছু একটা ভেবে কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলল- প্লিজ স্যার না করবেন না, কাজ টা আমার খুব প্রয়োজন। আমার দুই দুইটা ছেলেমেয়ে, চার চারটা নাতি সব না খেয়ে মারা যাবে প্লিজ স্যার দয়া করে একটা কাজ খুজে দিন। [কিভাবে আয়াত চৌধুরীকে কন্টোল করা যায় তা আলাইনা খাঁন ভালো করেই জানে]
আলাইনার কথা শুনে আয়াতের বেশ হাসি পেলেও অবাক হয়ে তাকিয়ে মনে মনে ভাবে- কি বলে এই মেয়ে, এখনো সেই আগের মতো বাচ্চামো স্বভাব রয়েছে।
আয়াত বাকা হেসে কাবির চাচার দিকে তাকিয়ে বলে- আংকেল আপনি তো বেশ কিছুদিন যাবত ছুটি চাচ্ছিলেন ছোট মেয়েকে বিয়ে দিবেন বলে। আজ থেকে আপনার ছুটি যখন প্রয়োজন হবে আমি ডেকে নিবো আর হ্যাঁ চিন্তা করবেন না প্রতি মাসের মাইনের টাকা আপনার একাউন্টে জমা হবে।
মিস আলাইনা আপনি কি পারবেন আমার পি.এ কাজ?
আলাইনা যেনো এমন সুযোগের অপেক্ষায় ছিলো,-হ্যাঁ স্যার কেনো পারবো না অবশ্যই পারবো।
কবীর চাচা এবার বেশ টেনশনে পড়ে গেলেন। যদি সে এখান থেকে যান তাহলে কাবিরকে কে কী করে মানাবেন? আর এই মেয়ে বা আর কতটুকু সামলিয়ে রাখবে। না জানি এরপর কি হয়।
কাবির চাচা ভয়ে আর কোনো প্রশ্ন করতে পারলেন না চলে গেলেন।
______________________________
আলাইনা তার কেবিনে বসে ভাবছে- জীবনের সব প্রতিশোধ একে একে ফিরিয়ে দিবো মিষ্টার আরিয়ান চৌধুরী আয়াত। সব হারিয়েছি আপনার জন্য। যে মেয়ে হাতে তুলে ভাত তুলে খেতো না সেই মেয়ে আপনার জন্য যুদ্ধ করছে। বৃদ্ধ ফুপি আপনার জন্য চোখের জল ফেলছে এর ভোগ আপনাকে ভুগতেই হবে।
#অনুরাগে_অনুভাবে_শুধু_তুই
#পর্ব-০১
#লেখনী- Suraiya Islam SanJi