অন্তরালে ভালবাসা পর্ব ২+৩

#অন্তরালে_ভালবাসা

#প্রজ্ঞা_জামান_দৃঢ়তা

আরিশার ঘুম ভাঙে সকাল ৮টায়।ঘুম থেকে উঠে দেখে অহিন ঘুমিয়ে আছে সোফায়। না চাইতে ও অহিনের মায়াভরা মুখটায় চোখ যায় আরিশার।অহিনকে খুব ভালবাসে আরিশা সেটা অবশ্যই একজন বন্ধু হিসেবে। কত সুন্দর স্মৃতি আছে তাদের তিন বন্ধুর জীবনে। স্মৃতি হ্যাঁ স্মৃতিই তো কাল আজকের কাছে অতীত। আর অতীত মানেই স্মৃতি। যা চাইলেও ধরা যায় না।ছোঁয়া যায় না।কেনো এমন হলো কেন সুন্দর তিনটি সম্পর্কে এভাবে ফাটল ধরলো?
রাফিন থাকলে সব কিছুই ঠিক থাকতো। রাফিন কোথায়?
কেনো কাল আসলো না?সব জানতে হবে আমায়!

আরিশা নিজের ফোন খুজতে থাকে।আসার সময় ফোনটা তো নিয়ে এসেছে মনে হয়।তাহলে ফোনটা কোথায়?
এমন সময় কারো ডাকে পেছনে ফিরে তাকায় আরিশা।
“আরু কি খুজছিস?
আমার ফোন অহিন।আমার ফোনটা দেখেছিস?

না দেখিনি।আজকে তোর জন্য নতুন একটি ফোন নিয়ে আসবো।

আমার তোর ফোনের কোন দরকার নেই তুই আগে বল আমার ফোন কই?

জানিনা আরু।

তুই জানিস।না জানলে বলতেছিস কেন আমার জন্য ফোন আনবি আবার!তুই নিশ্চয়ই আমার ফোন ফেলে দিয়েছিস যাতে আমি রাফিনের সাথে দেখা করতে না পারি।

আরু এসব কি বলছিস আমি কেনো তোর ফোন ফেলে দেবো!তুই এতো বছরে এই চিনলি আমাকে?

কি আর চিনতে পেরেছি বল!আমার এক বন্ধু আমাকে ঠকিয়ে চলে গেছে।আর এক বন্ধু ঠকিয়ে বিয়ে করেছে।আমি তো তোদের সবার কাছে পুতুল মাত্র!

অহিন একটু এগিয়ে যাবে আরিশার দিকে এমন সময় ব্যাথা কুকড়ে উঠে। আহ!বলে চোখ মুখ খিচে ব্যাথা সহ্য করার চেষ্টা করে।
আরিশা এগিয়ে এসে ধরে অহিনকে।বলে,কি হয়েছে অহিন তোর পা কিভাবে কাটলো?
চারপাশে তাকিয়ে দেখে আরিশা পুরো ঘরে রক্তের দাগ পড়ে আছে।অহিনের পা অনেক খানি কেটে গেছে।হয়তো কালকের ফটো ফ্রেমের কাচ পায়ে ঢুকে গেছে।

আরিশা অহিনকে ধরে সোফায় বসায়।কিরে গাধা এতোটা কিভাবে কাটলি?তোর জীবনে ও আক্কেল জ্ঞান হবে না।
কতটা রক্তক্ষরণ হয়েছে তুই বললি ও না।

অহিন মায়া মায়া চোখে আরিশার দিকে তাকিয়ে বলে,সব রক্তক্ষরণ কি তুই বুঝিস আরু?যে এটা বুঝবি!

আরিশা খুব বিরক্তি ভঙিতে পা পরিস্কার করতে করতে বলে, তোর এতো হেয়ালী আমি কখনও বুঝিনি। আজও বুঝলাম না।
অহিন একইভাবে তাকিয়ে বলে,হুম তাইতো তুই বুঝলে তো হয়েই যেতো।
আরিশা অহিনের পায়ে ব্যান্ডেজ করে দেয়।ক্ষত খুব বেশী না।তারপর ও কম ও বলা যায় না!

দরজায় কড়া নাড়ে কেউ।অহিন উঠতে গেলে আরিশা চোখ রাঙিয়ে ডানে বামে মাথা নাড়ায়।
অহিন সোফায় বসে যায়।
আরিশা মাথায় ঘোমটা টেনে দরজা খুলতে যায়।
অহিন অস্ফুটে বলে,একদম ভাগিনী!সবসময় চোখ রাঙানো! বলেই সুন্দর করে হাসে অহিন।অহিনের হাসিটা একদম অন্য রকম। যা দেখলেই মনের ছন্দ খেলে যায়।হৃদয়ে প্রশান্তি আনে!সে হাসে আর হাসে তার চোখ!

ভেরি গুড মর্নিং ভাবী সাহেবা!
গুড মর্নিং রাত্রি।ভাবী না হয় বুঝলাম কিন্তু সাহেবা কেনো যুক্ত হলো?

সেটা পরে একদিন বলবো। বলেই ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে হাসে রাত্রি।
রাত্রি হচ্ছে অহিনের বোন।অহিনেরা দুই ভাইবোন অহিন বড় আর রাত্রি ছোট। দুই ভাই বোনে অনেক ভাব।
পুর্নাঙ্গ ভাই বোনের সম্পর্ক যাকে বলে ঠিক সেরকম।

কিরে ভাইয়া বাসর রাত কেমন কাটালি?
অহিন বলে,তুই কি জানিস না বাসর রাত সম্পর্কিত কোন কথা বড় ভাইকে জিজ্ঞেস করা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ!

রাত্রি উত্তরে বলে,কত ধারা এই আইন করা হয়েছে। আর এই আইন কোন সংসদে পাশ হয়েছে সব তথ্য আগে জানাবি তারপর তোর জ্ঞান ঢালবি।

অহিন বলে,ভাষার কি অবস্থা ঢালবি টালবি বলে এক শেষ।
হইছে ভাগ এখান থেকে।
যাচ্ছি যাচ্ছি তবে ভাবীকে নিয়ে যেতে হবে।আম্মুর হুকুম।
তোর ভাবী আমাকে নিয়ে যাবে।তুই যা।
তোকে কেনো নিয়ে যাবে?শুনেছি বউকে বর নিয়ে যায় এখন দেখছি বরকে বউ নিয়ে যাবে।

রাত্রি চুপ কর।আমার পা কেটে গেছে তাই আমি একা যেতে পারবো না।
রাত্রি বলে কিরে ভাইয়া তোরা কি রাতে মারামারি করেছিস নাকি যে পা কেটে ফেললি?
অহিন জোরে বলে তুই যাবি এখান থেকে।নাকি মার খাবি?

রাত্রি চলে যায় দৌড়ে আর জোরে বলতে বলতে যায়।তাড়াতাড়ি এসো আম্মু অপেক্ষা করছে।
আরিশা এতোক্ষন ভাই বোনের দুষ্টুমি দেখছিলো।একটু সময়ের জন্য তার মন ভালো হয়ে গেলো।

আরিশা সুটকেস থেকে শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।
পেছন থেকে অহিন বলে গোসল করে নিবি।
আরিশা না শোনার ভান করে ভেতরে চলে যায়।

আরিশা যাওয়ার পর অহিন কাউকে কল দেয়।
ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে কেউ বলে,বস কোন ক্লু পাচ্ছিনা।তবে দেখলাম আপনার বাড়ির সামনে পুলিশ এসেছে।কেন সেটা জানিনা।

অহিন দেখছি বলে ফোন রেখে দেয়।

এমন সময় আরিশা বের হয়ে আসে।শাড়ি পাল্টেছে শুধু গোসল করেনি এটা স্পষ্ট।
অহিন বলে গোসল করিসনি কেন?
আরিশা বলে এই শীতের মধ্যে সকাল সকাল গোসল করতে যাবো কোন দুঃখে?

কোন দুঃখে না।আমি বলেছি তাই করবি।বাইরে সবাই এসে তোর চুল দেখবে।দুষ্টুমি করে তখন চুল ভেজা না দেখলে অন্য কিছু ভাববে।

কেনোরে তুই কে যে তোর কথা আমায় মানতে হবে।কে কি ভাবলো তাতে আমার কি যায় আসে।

আমি তোর স্বামী। তাই আমার কথা শুনবি তুই।

এএএ আসছে আমার স্বামী তোর আর আমার মাঝে গোসল করার মত কিছুই হয়নি যে গোসল করতে হবে।

অহিন এবার শয়তানি মার্কা হাসি দিয়ে বলে,বাই দ্যা ওয়ে! তুই কি ইনডিরেক্টলি বলতে চাইছিস যে আমাদের মাঝে এরকম কিছু হওয়া দরকার? আর তাহলে তুই গোসল করবি?মানে তুই কি তোর ডিমান্ড প্রকাশ করছিস?

আরিশা চিৎকার করে বলে ছিঃ তুই আসলেই একটা কুত্তা!আমি গোসল করবো না।তুই কি করবি করে নেয়।অসভ্য একটা।
অহিন আস্তে আস্তে আরিশার দিকে এগিয়ে যায়।আরিশা পেছাতে থাকে পেছাতে পেছাতে আরিশা ওয়াশরুমে ঢুকে। অহিনও খোড়া পা নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে। আরিশার দেয়ালের সাথে লেপ্টে যায়।অহিন আরিশার সামনে দাড়িয়ে দেয়ালে দুহাত রেখে আরিশার খু কাছে চলে যায়।
দুজন দুজনের নিঃশ্বাসের শব্দ শুনছে।
অহিন আরিশার মুখের কাছে নিজের মুখ এগুতে থাকে।আরিশা চোখ বন্ধ করে ফেলে।অহিন এক হাত দিয়ে পেছন থেকে আরিশাকে একটু আলগা করে দেয়াল থেকে। আরিশার বুকের ধুকপুকানি শব্দ বেড়ে গেছে।
চোখ মুখ খিচে অসম্ভব রকম কিছু ঘটবে বলে চোখ ঠোঁট খিচে রাখে।

অহিন আরিশার পেছনে থাকা ঝরনার কল ছেড়ে দিয়ে বের হয়ে আসে।

আরিশা ধীরে ধীরে ভয়ে ভয়ে চোখ খুলে দেখে অহিন নেই তার সামনে।
দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে।আরিশা তাকিয়ে দেখে অহিনের মুখে এখনও সেই হাসি।অহিন বলে কিরে তুই কি ভাবছিস তোর মত পেত্নীকে আমি ঠোঁটের ইশারায় বোঝায় চুমু খাবো!
এতোটা স্বপ্ন দেখিসনা প্লিজ।যা পেত্নি ভিজে গেছিস এবার গোসল করে নেয়।

অহিন হাসতে হাসতে চলে আসে।আর আরিশা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দাড়িয়ে আছে ভেতরে। মাথায় ঘাট্টা মেরে বলে সাবধান আরু এই ছেলে আসতো একটা বদ।এর থেকে সাবধান!

কিছুক্ষন পর দুজন রেডি হয়ে নিচে নামে।
অহিনের মা সাজেদা বেগম আরিশাকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খায়।সবাই খেতে বসে এমন সময় পুলিশ আসে বাড়িতে।
সবাই অবাক হয়ে একে অপরের দিকে তাকায়।
কিন্তু অহিনকে স্থির দেখায়।

পুলিশ এসে বলে মিঃ অহিন আমরা হাইওয়ের পাশে একটা লাশ পেয়েছি।আপনি যে মিসিং ডায়েরি করেছেন।কিছুটা সেরকম মনে হচ্ছে।তবে আমরা সিউর না।আপনাকে লাশ শনাক্ত করার জন্য আমাদের সাথে আসতে হবে।

অহিন মুহুর্তে বসে যায় চেয়ারে।রাত্রি তার দিকে পানি এগিয়ে দেয়।তার প্রান প্রিয় বন্ধু এই পৃথিবীতে নেই এটা সে কিছুতেই মানবে না।
অন্যদিকে আরিশা এই কথা শুনে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যেতে নিলে।অহিন ধরে ফেলে।
পুলিশদের অপেক্ষা করতে বলে।নিজে আরিশাকে কোলে করে উপরে নিয়ে যায়।তার পায়ে প্রেশার পড়ায় রক্তে বেসে যাচ্ছে সমস্ত সিড়ি কিন্তু অহিনের চোখে মুখে ব্যাথার কোন চাপ নেই।এতোটা ধৈর্য আর শক্তির অধিকারী সে।

আরিশাকে শুইয়ে দিয়ে। মা বোনকে দেখতে বলে।বেড়িয়ে যায় পুলিশের সাথে।সাজেদা বেগম বলেন তোর পায়ের রক্তক্ষরন হচ্ছে বাবা বন্ধ করে যা।
অহিন বলে না মা।ঝরতে দাও। আমার হৃদয়ের ররক্তক্ষরণ কেউ দেখছে না মা।তার তুলনায় এটা কিছুই নয়।
#অন্তরালে_ভালবাসা


#প্রজ্ঞা_জামান_দৃঢ়তা_হঠাৎ_বৃষ্টি
আরিশার বাবা মা তাকে দেখতে এসেছে।আরিশার জ্ঞান ফিরেছে কয়েকবার কিন্তু জ্ঞান ফেরার সাথে সাথে কান্না করতে করতে আবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে।আরিশার বাবা আশরাফ আহম্মেদ মেয়ের পাশে বসে মাথায় হাত বুলাচ্ছেন।আর মা রাহেনা বেগম কাঁদছেন।মেয়ের এমন অবস্থা দেখলে কোন বাবা মা ই ঠিক থাকতে পারেনা।তারা ও পারছেন না।

অহিন বসে আছে পুলিশ স্টেশনে,তার বন্ধু সিহাব একজন পুলিশ। তারা স্কুল জীবনে একসাথে পড়াশোনা করেছে।

অহিন লাশ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।আমি তোর জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। এখন চল যাওয়া যাক।

হুম চল হতাশ কন্ঠে বলে অহিন।

অহিন সামনে এগুতে লাগলে,সিহাব ডাকে অহিন একটু দাড়া?

অহিন পেছন ফিরে জিজ্ঞাসা চোখে।সিহাব একটা ঘড়ি আর একটা ওয়ালেট এগিয়ে দেয় অহিনের দিকে।অহিন কাঁপা কাঁপা হাতে সেই ঘড়ি আর ওয়ালেট হাতে নেয়।
ঘড়িটির দিকে একবার তাকিয়ে আবার নিজের হাতের দিকে তাকায়,এই সেই ঘড়ি যেটা দুই বন্ধু একসাথে দুটো নিয়েছিলো।

মনে পড়ে যায় সেদিনের কথা যেদিন তারা ঘড়ি কিনে ছিলো। অহিন রাফিন আর আরিশা একসাথে ভার্সিটি থেকে ক্লাস শেষ করে অহিন তাদের নিয়ে যায় ঘড়ি কিনবে বলে।অহিন রাফিনকে বলে তুই ঘড়ি পছন্দ করে দিবে আজ তোর পছন্দে কিনবো।রাফিন একটা ঘড়ি পছন্দ করে সেটাই কিনে অহিন তবে একটি নয় দুটি।
রাফিনের জন্য একটি আর একটি অহিন তার নিজের জন্য কিনে।রাফিন নিতে চায়নি কিন্তু যখন দেখলো অহিন ও ঘড়িটি নিচ্ছে না তখন রাফিন বাধ্য হয়ে নেয় ঘড়িটি।
সেদিন একটি কথা বলেছিলো রাফিন, অহিন তুই এমন কেন?যা নিবি তুই তাই কেনো আমাকে নিতে হবে?
অহিন প্রতিউত্তরে বলেছিলো ভালবাসি দোস্ত। যা আমার তাই তোর।

তাদের কথায় পোড়ন কাটে আরিশা বলে এই যে আবরার শাহরিয়ার অহিন, রাফিনের গার্লফ্রেন্ড শুধু একপিস আছে। আবার বলিস না।রাফিনের গার্লফ্রেন্ড মানে তোর গার্লফ্রেন্ড।

অহিন আর রাফিন আরিশার কথা শুনে হেসে দেয়।অহিন সেই ভুবন ভোলানো হাসি দিয়ে বলে,রাফিনের গার্লফ্রেন্ড আমার গার্লফ্রেন্ড না হতেই পারে কিন্তু শুধু ফ্রেন্ড তো হতেই পারে নাকি?
রাফিন বলেছিলো অবশ্যই আগে আরিশা আমাদের দুজনের বন্ধু তারপর আমার প্রেমিকা।

সেদিনের কথা ভাবতে ভাবতেই চোখের কোন বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে অহিনের।সাথে সাথে বসে যায় ফ্লোরে সিহাব এসে ধরে অহিনকে।সিহাবের বাহুতে ভর দিয়ে অহিন বাচ্চাদের মত কান্না করে।অহিনের কান্না দেখে সিহাব কান্না ধরে রাখতে পারলো না।

কিছু সময় পর হাসপাতালে পৌঁছায় অহিন, সিহাব।

অহিন বলে আমি যেতে পারবো না সিহাব মর্গে।তুই যা আমি এটা বিশ্বাস করি না আমার প্রানপ্রিয় বন্ধু নেই।আমার মন বলছে কোথাও না কোথাও রিফান আছে।
সিহাব বলে,দেখ অহিন জন্ম মৃত্যু বিয়ে সব আল্লাহর হাতে।এসব আলামত দেখে আমি ৫০ভাগ সিউর এটা রাফিনের লাশ।আর ৫০ভাগ ভেতরে হয়ে দেখতে পাবো।
আমি বা তুই বললেই সত্যি মিথ্যে আর মিথ্যে সত্যি হয়ে যাবে না।সত্যিটা আমাদের মানতেই হবে।তুই যদি এভাবে ভেঙে পড়িস তাহলে রাফিনের বাবা মা আর ছোট বোনকে কে দেখবে?
রাফিন যদি সত্যি চলে যায় তোকে অনেক দ্বায়িত্ব নিতে হবে।তাছাড়া আরিশাকে ও তোকেই সামলাতে হবে।

সিহাব আর অহিন ভেতরে যায় কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হলো লাশটা রাফিনের না অন্যকারো তা বুঝা যাচ্ছে না।এক্সিডেন্ট হওয়ায় সময় তার মুখ থেতলে গেছে।শরীরের সাথে পা নেই সেটা আলাদা করে রাখা আছে পাশে একটা ট্রে তে। হাতের কয়েকটি আঙুল নেই।পুরো শরীর ছিলে গেছে।একবার তাকিয়ে অহিন চোখ ফিরিয়ে নেয়।

আবার কান্নায় ভেঙে পড়ে।এটা রাফিন হতে পারেনা সিহাব। আমার বন্ধুর মৃত্যু এতোটা কঠোরভাবে হতে পারে না।
সিহাব বলে তবে এই লাশের ডি এন এ টেস্ট করে জানতে পারবো এটা কার লাশ।

অহিন বলে তার জন্য তো দুদিন লেগে যাবে।আমি এই দুইদিন কিভাবে কাটাবো?অপেক্ষা নিয়ে বেঁচে থাকা যে কি কষ্টের তা আমার চেয়ে ভালো কেউ জানে না।
সিহাব বলে তোকে ধৈর্য রাখতে হবে।এই দুইদিন অপেক্ষা করা ছাড়া আমাদের কাছে কোন উপায় নেই।

অহিন বলে যত টাকা লাগে ডাক্তারদের আমি দেবো। তুই কথা বল ডাক্তারদের সাথে। সিহাব বলে তুই বাড়ি যা এবার আরিশার কি অবস্থা গিয়ে দেখ।আমি এদিক সামলে নিচ্ছি।

অহিন বাসায় আসে। আরিশাকে ডাক্তার এসে ঘুমের ওষুধ দিয়ে গেছে।আরিশা ঘুমাচ্ছে। সবাই একের পর এক অহিনকে প্রশ্ন করে যাচ্ছে কিন্তু অহিন সবাইকে বলেছে দুইদিনের মধ্যে সব জানা যাবে।এর আগে কেউ যাতে তাজে প্রশ্ন না করে।

আরিশার মাকে অহিনের মা সাজেদা বেগম তার ঘরে নিয়ে যায়।আরিশার বাবাকে বলে ভাইজান আপনি আমার সাথে আসেন।আপনাদের থাকার ঘর দেখিয়ে দিচ্ছি।।আরিশার বাবা আশরাফ আহম্মেদ বলেন আমি আসছি আপনি যান।আমি একটু অহিন বাবার সাথে কথা বলতে চাই।

সবাই চলে গেলে,আশরাফ আহম্মেদ অহিনের হাত ধরে বলেন, বাবা অহিন আমার জন্য তোমাকে এতো কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে। সেদিন আমি যদি তোমাকে বাধ্য না করতাম এভাবে,,,,,,এতোটুকু বলার পর আর কিছু বলার সুযোগ দিলো না অহিন আশরাফ আহম্মেদকে।
অহিন বলে,আপনি চিন্তা করবেন না।আমার বিশ্বাস রাফিনের কিছু হয়নি।আর আরুকে আমি সামলে নিবো।আপনি গিয়ে রেস্ট নেন। আমি একটু একা থাকতে চাই।

আশরাফ আহম্মেদ আর কিছু বললেন না।চলে গেলেন।

অহিন আশরাফ আহম্মেদ কে বুঝিয়ে তো দিলো কিন্তু নিজের মন থেকে আশংকা যাচ্ছে না।যতক্ষণ পর্যন্ত সব কিছু ক্লিয়ার হচ্ছে ততক্ষণ শান্তি পাবে না অহিন।

অহিনঘুমন্ত আরিশার মাথার কাছে এসে বসে।আরিশাকে দেখতে কেমন বিক্ষিপ্ত লাগছে।এই একদিনে যেন আরিশার চেহেরায় বিষন্নতা নেমেছে।
অহিন আরিশার চুলে হাত বুলাতে থাকে বলে,আরু আমাকে ক্ষমা করে দিস তুই। তুই এতো কষ্ট পাচ্ছিস আর আমি তোর বন্ধু হয়ে কিছুই করতে পারছিনা।

ভালবাসা এমন কেনো রে আরু?এতো কষ্ট কেনো দেয় এই ভালবাসা?এই চার অক্ষরের শব্দের এতো ক্ষমতা কেনো বলতো!ভেতরটা জ্বলে পুড়ে খাক করে দেয়।ভালবাসা আসলে মানুষকে ক্ষনিকের জন্য সুখ দিলেও স্বস্তি দেয় না।
ভালবাসা শুধু কেড়ে নেয়।এই পৃথিবীতে প্রতিটা ভালবাসার সম্পর্কে কেউ একজন সুখি হলে অন্যজন কষ্ট পায়।
নয়তো দুজনই সুখি হলে তৃতীয় একজন থাকে যে অবশ্যই নরক যন্ত্রণা ভোগ করে।
তুই রাফিনকে ভালবেসে শেষ যাচ্ছিস আর রাফিন তোকে ভালবেসে কোথায় বসে কষ্ট পাচ্ছে কে জানে।আর তোদের দুজনের মাঝে বসে আমি সেই নরক যন্ত্রণা ভোগ করছি।
আরু আমি তোকে কি করে ভালো রাখবোরে?
কি করেই বা তোকে সুখি করবো। যেখানে আমি জানি আরু তুই শুধু একজনের সাথেই ভালো থাকতে পারিস আর সে হচ্ছে রাফিন।

আর যে করেই হোক আমি রাফিনকে ফিরিয়ে নিয়ে আসবোই।আমি তোদের সুখে দেখে যেতে চাই।তুই সুখি হবি।অবশ্যই সুখি হবি।
অহিনের চোখের পানি অঝোরে পড়ছে আর সেই পানি আরিশার চোখে মুখে পড়ছে সেদিকে অহিনের খেয়ালই নেই।
আরিশা চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে অহিন তার পাশে বসে কাঁদছে।
আরিশা উঠে বসে অহিনের দু কাঁধে হাত দিয়ে বলে অহিন এই অহিন তুই কাঁদছিস কেনো? কিরে কথা বল এই অহিন।অহিন চোখের পানি আড়াল করার ব্যার্থ চেষ্টা করে কিন্তু পারে না।আরিশা অহিনের মুখে হাত দিয়ে বলে, এই অহিন বল রাফিনের কোন খোঁজ পেয়েছিস?আমি জানি এটা রাফিনের লাশ হতেই পারে না।

অহিন বলে আমি জানিনারে আরু কিচ্ছু জানিনা। অহিন এবার কান্না ধরে রাখতে পারে না।অহিন কান্না করে।আরিশা অহিনের বুকে ঝাপিয়ে পড়ে কান্না করে।
অহিন প্লিজ রাফিন বেঁচে আছে এটা শুধু বল।আমি আর কিচ্ছু চাই না।অহিন আরিশাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। আরিশা অহিনের বুকের ভেতর ছোট্ট পোষা পাখির মত গুটিশুটি হয়ে কান্না করতে থাকে।

দুটি মানুষ কাঁদছে।বন্ধুত্বের জন্য ভালবাসার জন্য!
জীবনে ভালবাসার যেমন প্রয়োজন আছে বন্ধুত্বের ও প্রয়োজন আছে।ভালবাসা আর বন্ধুত্ব জীবনের এপিঠ ওপিঠ।
এই দুটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে চলে জগৎ সংসার! ভালবাসায় এতো কষ্ট কেনো! কেনো ভালবাসা কষ্ট ছাড়া পুর্নতা পায় না।প্রতিটি সফল ভালবাসার পেছনে লুকিয়ে থাকে অনেক ত্যাগ অনেক অপুর্নতা।
ভালবাসা পেতে গেলে অনেক কিছুই হারাতে হয়।জীবনের কঠিন মুহুর্তে ভালবাসা ঢাল হয়ে দাঁড়ায়।
সে রাতে অহিনের বুকে সেইভাবেই কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে যায় আরিশা।অহিনের কাটে নির্ঘুম রাত।দুদিন পর কি হবে সেই চিন্তায় কেটে যায় নির্ঘুম রজনী!

খুব ইচ্ছে করছিলো নিকোটিনের ধোঁয়ায় নিজের মনের কষ্টকে একটু হালকা করতে কিন্তু উঠেনি আরিশাকে ছেড়ে অহিন।অহিন উঠলেই আরিশা জেগে যাবে।কারণ আরিশা যে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে অহিনকে।
আর জেগে গেলেই কাঁদবে।প্রশ্ন করবে যে প্রশ্নের উত্তর অহিনের কাছে নেই।

আরিশাকে বুকে নিয়ে কেটে যায় নির্ঘুম রাত। আর মাথায় শুধু একটাই কথা ঘুরে দুদিন পর যেন ভালো কোন খবর আসে।আল্লাহ মহান!তিনি যেন সবকিছুই ভালো করেন।রাফিন যেন বেঁচে থাকে।
অন্তত আরিশার ভালবাসার জন্য। অন্তত অহিনের বন্ধুত্বের জন্য!

ভালবাসা বেঁচে থাকুক চিরকাল। জয় হোক বন্ধুত্বের!

ভালবেসে কেউ সুখি নয়।ওরা কারা যার ভালবেসে সুখি হয়!আমি জানি প্রেম অনলে পুড়ে যে শুধু হৃদয়!

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here