অন্তরালে ভালবাসা পর্ব ৩১+৩২+৩৩

#অন্তরালে_ভালবাসা
৩১
#প্রজ্ঞা_জামান_দৃঢ়তা

অহিন এবার তুই আমাদের বিষয়ে সবাইকে জানিয়ে দেয়। সিহাবকে কল দিয়ে বল, যাতে ডিভোর্সটা বাদ দিয়ে দেয়।অহিন আরিশাকে ছেড়ে দিয়ে বলে,না এটা সম্ভব নয় আরু।তুই এটা করতে পারিস না।রাফিনকে আমরা কষ্ট দিতে পারি না।রাফিন আমাদের এতো ভালো বন্ধু তাই তাকে আমরা ঠকাতে পারি না।রাফিন যদি জানে তুই আমাকে ভালবেসে ফেলেছিস কতটা কষ্ট পাবে ভেবে দেখেছিস।

ঠিক আছে অহিন।যদি এভাবে না বলতে পারিস।তবে তুই আমাকে তোর সন্তানের মা হওয়ার সুযোগ করে দেয়। যাতে আমি রাফিনকে বলতে পারি আমি তোর সন্তানের মা হবো।তাহলে নিশ্চয়ই রাফিন আমাকে বিয়ে করবে না।আমরা স্বামী স্ত্রী আমাদের মাঝে এমন কিছু হতেই পারে।এটা কোন পাপ না,এটা বরং পূর্নতা।আরিশা অহিনের কাছে গিয়ে পাগলের মত বকতে থাকে,অহিনের দু’হাত নিজের গালের সাথে জড়িয়ে বলে,আমাকে আদর কর অহিন।প্লিজ আমাকে এতো এতো আদর কর যে আমি যাতে এই যন্ত্রনা গুলো ভুলে যেতে পারি।আমি পারছি না অহিন।এই এই এই অহিন,,,আরিশা পাগলের মত করে কথা বলছে।মনে হচ্ছে এই মুহুর্তে সে নিজের মাঝে নেই।কেমন উন্মাদ দেখাচ্ছে আরিশাকে।এই অহিন তোর মনে আছে তুই আমাকে বলেছিলি,”আমার প্রেমিক হলে আমার পুরো শরীরের তুই এতো দাগ করে দিতি যে আমি গুনে শেষ করতে পারবো না।সেদিন আমি না বুঝলেও আজ আমি ঠিক বুঝতে পারছি অহিন,তোর কথার মানে কি ছিলো! আমি এখন চরমভাবে সে দাগ পেতে চাই।প্লিজ অহিন দিবি একটু ভালবাসা, প্লিজ আমি তোকে ছাড়তে পারবো না অহিন।প্লিজ আমাকে তোর সন্তানের মা করে দে।যাতে কেউ আমকে তোর থেকে আলাদা করতে না পারে।এই অহিন।

অহিন চোখ মুখ শক্ত করে দাড়িয়ে আছে,মনে হচ্ছে কেউ তার কলিজা কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলছে।এতো কষ্ট হচ্ছে যে পুরো পৃথিবীটাকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে।আরিশাকে গ্রহণ করতে ইচ্ছে করছে।আরিশার কান্না যে সহ্য করতে পারে না অহিন।কিন্তু এই মুহুর্তে এটা কোনভাবেই সম্ভাব না।অহিন আরিশার মুখ নিজের দুহাতে আজলা করে ধরে, আরিশার অশান্ত চোখে গভীর দৃষ্টি মেলে ধরে,মায়া মায়া গলায় বলে, ‘আমি ভালবাসি তোকে আরু,খুব খুব ভালবাসি”তুই এমন করলে আমার নিজের কতটা কষ্ট হয় তুই কি বুঝতে পারিস না?যে আমি প্রতিটিদিন প্রতি মুহুর্তে তোর ভালবাসা চেয়ে গেছি,মনের একোন সে কোনে একটাই ইচ্ছে ছিলো তুই আমাকে ভালবাসবি!সেই আমি যখন জানতে পারছি তুই আমাকে ভালবাসিস, আর তুই এভাবে এসে আমার কাছে ভালবাসা ভিক্ষা চাইছিস আরু?তোকে ফিরিয়ে দেয়া আমার জন্য কতটা যন্ত্রনার সেটা কি তুই বুঝেছিস আরু?অহিনের চোখের কোল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে আরিশার মুখে।
অহিন লম্বা দম নিয়ে আবার বলে,’আরু যে আমার প্রতিটি রক্তকণিকা প্রতি মুহুর্তে চেয়েছে তোর একটু স্পর্শ পেতে।একটু ভালবাসার পরশ পেতে,সে আমার সামনে যখন তুই আদর স্পর্শ এভাবে আকুলতার সাথে চাইছিস,আমার কেমন লাগছে বুঝতে পারছিস আরু? আমার বুকের ভেতর কি চলছে বুঝতে পারছিস আরু?

আমি কোন মহাপুরুষ নই আরু,রক্তে মাংসে গড়া মানুষ। আমিও তোকে পাগলের মত চাই আরু।তাই তুই এভাবে বললে আমি নিজেকে আটকে রাখতে পারবো না আরু।আমার ভেতরের চাপা আগুন তুই বের করে আনিস না।তাহলে কতগুলো জীবন শেষ হয়ে যাবে।মা, রাফিন সবাই কষ্ট পাবে,আমার মা হয়তো ভাববে এতোদিন ধরে দুধ কলা দিয়ে কাল সাপ পুষেছে,উনার খেয়ে পরে মানুষ হয়ে উনার সন্তানকে কষ্ট দিচ্ছে।আমি তেমন সন্তান হতে চাইনা রে আরু।যে সন্তানকে লালন পালন করার পর মা ভাববে, এরকম জানলে তোকে ভালবেসে আগলে রাখতাম না। রাস্তার সন্তান কখনও নিজের সন্তান হয় না।জানিস আরু আমি কোনদিন এটা চাই না। আমি হয়তো তোকে হারানোর কষ্ট সামলে নিতে পারবো।কিন্তু যখন আমার মা আমাকে বলবে,আমাকে লালন পালন করে তিনি ভুল করেছেন, সেটা আমি সইতে পারবো না আরু।আমি এতোদিন ভাঙিনি আরু, কিন্তু আমার মায়ের মুখ থেকে এমন কথা শুনলে আমি ঠিক ভেঙে যাবো আরু।আমার এতো সাহস নেই আরু।আমি মাকে খুব ভালবাসি তাই মায়ের কষ্ট আমি মেনে নিতে পারবো না।আমার মায়ের বাবুর কষ্ট হলে, মায়ের ও কষ্ট হবে।আমি চাইনা মায়ের বাবুর কষ্ট হোক(রাফিনের)।তাই তোর কাছে আমার ভালবাসার দাবি তুই প্লিজ রাফিনকে বিয়ে কর।মানুষ একটা সময় এসে সব ভুলে যায়।সময় তাকে সব ভুলিয়ে দেয়।আমি যদি তোর সামনে না থাকি তুইও আমাকে ভুলে যাবি।আস্তে আস্তে সব মেনে নিবি আরু।
তাই আমি ঠিক করেছি আমি দেশের বাইরে চলে যাবো।সব কিছু প্রসেসিং চলছে, হয়ে গেলেই চলে যাবো। আমি সামনে থাকলে তুই ভালো থাকতে পারবি না আরু,আমাকে ভুলতে হলে তোর সামনে থেকে আমাকে চলে যেতেই হবে।

—–সময়ের সাথে মানুষ ভুলে যায় না অহিন,শুধু মানিয়ে নেয়,আর সেই মানিয়ে নেয়া কে মানুষ ভুলে যাওয়ার নাম দেয়।অথচ সত্যি তো এটাই সময়ের সাথে কখনও কেউ কাউকে ভুলে না।মনের গভীরে গোপনে ঠিক ভালবাসাটাকে আগলে রাখে।নয়তো ভালবাসার মানুষ প্রাক্তন হওয়ার পর ও অনেক বছর পর দেখা হলে তাকে দেখে কেনো বুকের ভেতরটায় শ্বাস বেড়ে যায়, সে প্রথম দিনের মত বুকের ভেতরে পুরনো অনুভূতি ফিরে আসে।
এর মানে এটাই ভালবাসা কখনও সে ভুলে না।শুধু গোপন করে রাখে।”

ভালবাসা প্রাক্তন হয় না”।
“ভালবাসা সবসময়ই বর্তমান ”

তাই তুই সবসময়ই আমার কাছে বর্তমানই থাকবি।একটাই তো জীবন অহিন,এই জীবনটাই যদি মানিয়ে কাটাতে হয় তাহলে বাঁচার কি মানে অহিন?

—-আমাদের জীবনে বেশীর ভাগ মানুষ মানিয়ে জীবন কাটায় অহিন,কোন স্বামী স্ত্রীর সাথে মানিয়ে নেয়,আর স্ত্রী স্বামীর সাথে,দিন কেটে যায় কিন্তু দিনশেষে যখন পাওনার খাতায় হিসাব কষে তখন না পাওয়াটাই বেশী থাকে।ভাল না বেসেও অনেকে সংসার করে অহিন,দিনে তিন বেলা খাওয়া যেমন অভ্যাস হয়ে যায়,ঠিক তেমনি অন্য একজন মানুষের সাথে খাওয়া, ঘুমানো তার পরিবার সামলানো, বাচ্চা সামলানো এসব কিছুও অভ্যাস হয়ে যায়।দিনশেষে যখন নিজের সাথে বোঝাপোড়া করতে বসে তখন ভালবাসা নামক শব্দটা হয়তো খুব একটা পায় না।কিন্তু যন্ত্রনার রাত পার করে সকালে ঠিক আগের মত ব্যস্ত হয়ে যায় সবাইকে সামলাতে। আমিও কি এমন হবো অহিন।আমি তো মনে প্রানে স্বাধীন একটা মেয়ে আমি ভালবাসাহীন সংসার করতে পারবো না অহিন।প্লিজ তুই আমাকে এতো বড় শাস্তি দিস না।আমি সইতে পারবো না।

আরিশার চোখের কোন বেয়ে অঝোরে অশ্রু ঝরছে,কোন কথা তার মুখ দিয়ে আসছে না।
অহিনের চোখের পানি আরিশার চোখের পানিতে মিশে যাচ্ছে।

অহিন আরিশাকে আরও শক্ত করে ধরে বলা শুরু করে,আমি না থাকলে তুই ঠিক মানিয়ে নিতে পারবি আরু। আমি জানি তুই পারবি।তোর সেই শক্তি আছে।প্লিজ আমার জন্য এতোটুকু কর তুই আরু।অনুনয়ের সুরে বলে অহিন।
আরিশা অহিনের হাত থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়।বলে তুই বুঝবি না কিছু বাদ দে।
আমি তোদের কাউকে চাই না।কাউকে না। আমি তোকে তো ছাড়বো ই আর রাফিনকে ও। তোদের মহানুভবতায় আমি কেনো বলি হতে যাবো।চাই না আমার কাউকে, সবাই তোরা নিজের পরিবারের কথা ভাবিস আমি কি চাই তা ভাবিস না।

আরিশা ফ্লোরে বসে কাঁদছে,আমি কাউকে চাইনা,চাই না কাউকে বলে বলে চিৎকার করে কাঁদছে।অসহ্য লাগছে সবকিছু।কেনো সে অহিনকে ভালবাসতে গেলো। ভাল না বাসলে তো এমনটা হতো না।
অহিন পাশে দাড়িয়ে আছে কিছুই বলছে না।আরিশাকে কাঁদতে দিচ্ছে,কাঁদলে কষ্ট কিছুটা হলেও হালকা হবে।কাঁদতে না পারলে মনের ভেতর কষ্ট গুলো গুমোট হয়ে থাকে,কেমন যেনো খোচায়।
এই খোচানোটা স্বস্তি দেয় না,শান্তি দেয় না।

এভাবে অনেকটা সময় পার হয়ে যাবার পর অহিন আরিশাকে ধরে নিয়ে আসে রুমে।আরিশার মুখ ধুইয়ে দিয়ে বলে চল আমরা আজ বাইরে থেকে বেড়িয়ে আসি।যাবি তো আমার সাথে?

—না, যাবো না।তোর সাথে কোথাও যাবো না।
—ভেবে বলছিস তো?
—-হু’
—ঠিক আছে এমন সুযোগ কিন্তু আর পাবি না।রাফিন চলে আসলে আমি তোকে কোথাও নিয়ে যাবো না।

—আরিশা বসা থেকে হাটু গেড়ে অহিনের গলা জড়িয়ে ধরে।প্লিজ অহিন আমার সাথে এমনটা করিস না।আমি মরেই যাবো। আমাকে যে নেশা ধরেছে অহিন নামক নেশা!

—-অহিন আরিশার মাথায় হাত রেখে বলে,চল আরু বাইরে থেকে ঘুরে আসলে ভালো লাগবে।আরিশার কথা গুলো হজম করতে তার কাষ্ট হচ্ছে,বাসায় যতক্ষণ থাকবে আরিশা এমন পাগলামো করবে,তারচেয়ে বরং বাইরে থেকে ঘুরে আসলেই ভালো লাগবে।এসব কথা থেকেও বেঁচে যাবে।

-“পাশের বাসায় কেউ জোরে গান ছেড়েছে স্পষ্ট সে গান শোনা যাচ্ছে,,,

“যে দেশে চেনা জানা মানুষ কোনো নাই
ইচ্ছে করে তোরে নিয়ে যাই
যে দেশে শাসন বারণ সোনার খাঁচা নাই
ইচ্ছে করে তোরে নিয়ে যাই,”
পিয়া রে জিয়া রে কথা শুনে না
হিয়া টারে কি বলে বুঝাই।
যে দেশে নয়ন বলে স্বপ্ন দেখে যাই
ইচেছ করে তোরে নিয়ে যাই
হাই..ইচ্ছে করে তোরে নিয়ে যাই”

“মাটিতে পা রেখে আকাশে ডানা মেলে
চলি রে চল সে দেশে”
যেখানে কখনো পাবে না কেউ খুঁজে”
চল সে নিরুদ্দেশে,,,,

আরিশা অহিনের কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলে, আমায় নিয়ে যাবি সে দেশে অহিন।যেখানে কেউ আমাদের চিনতে পারবে না।কোন ভালো মন্দের বিচার কেউ করবে না।যেখানে থাকবো শুধু তুই আর আমি।

আরিশার গলায় কিছু একটা ছিলো যার কারণে আরিশার কথা গুলো অহিনের সমস্ত শিরায় উপ শিরায় ছন্দ তুলে,অহিন নিজেকে অনেক কষ্টে লম্বা শ্বাস নিয়ে সামলে নেয়,চুপিচুপি বলে,যদি এমন কোম দেশ থাকে নিয়ে যাবো তোকে,আমার স্বপ্নের দেশে যেখানে তুই আমার এমন কাছে থাকবি আর আমি তোর থেকে এমন দূরে থাকবো না।খুব খুব কাছে থাকবো।

—এখন কি দূরে আছিস?
–আছি, অনেক দূরে,,
–আরিশা এই কথার অর্থ বুঝলো ঠিকই কিন্তু কিছুই বললো না।

———————————————————————————-

দুজনে বেড়িয়েছে রাস্তায় হাটতে ফুচকা মামাকে দেখে আরিশা বলে ফুচকা খাবে,অহিন আরিশা দুজনে ফুচকা খাচ্ছে,অহিন না খেয়ে হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে,আরিশার খাওয়া দেখছে এভাবে, কারণ এই মুহুর্তে খাওয়ার চেয়ে এই দৃশ্যটা দেখা বেশী গুরুত্বপূর্ন। কি যে ভালো লাগছে কাউকে যখন ভালো লাগে তার সব ভালো লাগে,তাই হয়ত তার খাওয়ার সময়টাতে ও ভালো লাগছে অহিনের।
নিসন্দেহে এই দৃশ্যটা পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য!
অহিনের তাকানো দেখে ফুচকা মামা বলে,মামা খেয়ে নেন,বাসায় গিয়া দেখবেন বউরে, রাস্তার মানুষ যেভাবে তাকিয়ে আছে আপনার দিকে একটু পর এসে মষ্করা করবে বলেই ফুচকা মামা লাজুক হাসি হাসে।একজন বলেও যায়,আরে ভাই রাস্তায় যদি সব দেখা শেষ করে ফেলেন বাসায় গিয়ে কি দেখিবেন!
অহিন লজ্জা পেয়ে যায় মাথা চুলকানোর ভান করে,আরিশা মুচকি হেসে অহিনকে ইশারায় বলে হা করতে, অহিন বাধ্য ছাত্রের মত হা করে, আরিশা ফুচকা খাইয়ে দেয় অহিনকে।আরিশা মনে এক প্রশান্তি বিরাজ করে। এই কয়দিনে যে করেই হোক অহিনকে নিজের করেই ছাড়বে বলে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে নেয় আরিশা।
অহিনের কামড়ে কাঁচামরিচ পড়ে,অহিন ঝাল খেতে পারে না।মুহুর্তে তার কান গরম হয়ে যায়,ফর্সা গাল গোলাপী বর্ন ধারণ করে।আরিশা ফুচকা মামার কাছে মিষ্টি কিছু চায় কিন্তু শেষ হয়ে গেছে বলে জানায় ফুচকা মামা।

চারপাশে তাকায় আরিশা কি যেনো দেখে অহিনকে দাড়াতে বলে রাস্তা পার হয়ে একটা হাওয়াই মিঠাই নিয়ে আসে,একটু একটু করে অহিনের মুখে পুরে দেয়, অহিন তৃপ্তির সাথে খাচ্ছে, এতোটা যত্নে করে আরিশা খাইয়ে দিচ্ছে কেনো! এমন করলে আমি তোকে ছাড়বো কি করে রে আরু?

এরপর উত্তরার সাত নম্বর সেক্টরের পার্কে যায়,সেখানে তারা তিন বন্ধু প্রায় যেতো, উত্তরার যত পার্ক আছে এর মধ্যে এটাই তাদের প্রিয়।তার গিয়ে লেকের পাড়ে বসে,আরিশার ঝালমুড়ি প্রিয় তাই অহিন ঝালমুড়ি মামা কোনকিছু না জিজ্ঞেস করেই ঝালমুড়ি বানিয়ে দেয়,আরিশা বলে কেমন আছেন ঝালমুড়ি মামা?
—ভালা আছি,আপনারা কেমন আছেন?রাফিন মামা আহে নাই?

—না, ও দেশের বাইরে মামা,অহিন মিষ্টি হেসে উত্তর দেয়।

ওরা এখানে প্রায় আসে তাই ঝালমুড়ি মামা তাকে চিনে।

আরিশা আয়েশ করে ঝালমুড়ি খাচ্ছে,খেতে খেতেই বলে ওই যে পপকর্ন নিয়ে আয় আমার জন্য,আর আইসক্রিম ও নিয়ে আয়,কোনটা নিয়ে আসবি। অহিন উঠে বলে,আজকে তো তুই পুরো ঢাকা শহর খেয়ে ফেলবি দেখছি,সাথে আমার পকেট ও ফাঁকা করে দিবি।
আরিশা হাসে আলতো করে।

অহিন ফিরে আসে পপকর্ন আর আইসক্রিম নিয়ে,তবে আইসক্রিম নিয়ে আসে দুটো, আরিশা বলে দুটো কেনো বলছি না একটা আনতে।অহিন বলে স্বার্থপর তুই,আমি খাবো না।

আরিশা পাশে একটা টোকাই ছেলেকে ডাকে বলে,আইসক্রিম খাবে বাবু?
ছেলেটির মুখে প্রাপ্তির হাসি।আরিশা একটা আইসক্রিম ছেলেটাকে দিয়ে দেয়।অহিন তাকিয়ে হাসে শুধু কিছুই বলে না।

আরিশা আইসক্রিমটা খুলে অহিনের সামনে ধরে অহিন বলে আমি আরেকটা আনছি তুই খা এটা।আরিশা অন্য হাত দিয়ে অহিনকে বসিয়ে দিয়ে বলে এটাই দুজনে খাবো।অহিন আর কিছু বলে না।হেসে কামড় বসায় আইসক্রিমে।

অহিন যে জায়গায়টায় কামড় দিয়েছে আরিশা ঠিক সে জায়গায় কামড় বসায়,অহিন সেটা দেখে বুকের ভেতর কষ্ট অনুভব করে,কিন্তু মুখে সেই হাসি হাসে,ভুবন ভোলানো সেই হাসি!যে হাসিতে চোখ হাসে,যে হাসিতে ঠোঁট হাসে,পাগল করা সেই হাসি”স্নিগ্ধ সেই হাসি!”

কেউ এদের এখন দেখলে বুঝবেই না একটু আগে এরা কতটা কান্না করেছে,তাদের ভেতরটায় কতটা কষ্ট লুকিয়ে আছে। দেখে মনে হবে এরা সুখী মানুষ। অথচ প্রতিদিন সব মানুষ এমন কষ্ট বুকে নিয়ে সুখী সুখী মুখ করে ঘর থেকে বের হয়ে আসে।কেউ জানেনা তাদের ভেতরটা কতটা অগোছালো, কতটা শূন্য!
আসলেই এটাই বাস্তব জীবন। এখানে সবাই এমন নাটক করে চলে।এক একজন যেনো সেরা অভিনেতা, অভিনেত্রী! পার্থক্য এটাই তাদের অভিনয় কোন পর্দায় দেখানো হয় না।তাদের অভিনয় চলে জীবনের কঠিন বাস্তবতায়।কঠিন নির্মমতায়!
#অন্তরালে_ভালবাসা
৩২

#প্রজ্ঞা_জামান_দৃঢ়তা

অহিন আরিশাকে তার বাসায় দিয়ে নিজের বাসায় যেতে চাইলে আরিশার হঠাৎ বুকে ব্যাথা শুরু হয়, অহিন এসে আরিশাকে ধরে ভেতরে নিয়ে যায়।অহিন আরিশার জন্য পানি আনতে গেলে আরিশা উঠে দরজা লক করে চাবি নিজের কাছে লুকিয়ে রাখে,অহিন এসে দেখে আরিশা পায়ের উপর পা তুলে গুনগুন করে গান গাইছে,,,,
“চল চল মে তু বান্দেয়া ইস গালিও মে” যাহা কয়ি কিছিকি না জানে”

অহিন আরিশাকে দেখে অবাকের শেষ পর্যায় চলে যায়,এইতো বললো বুকে ব্যাথা করছে এখন গান গাইছে আজব!

অহিনের বুঝতে বাকি রইলো না এটা আরিশার অহিনকে আটকানোর ফন্দি ছিলো। অহিন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,এটা কেমন আচরণ আরু?চাবি দে আমি বাসায় যাবো।

—-না তুই যেতে পারবি না।কারণ আমি তোকে যেতে দিচ্ছি না।আর কয়েকটি দিন, এরপর কে কোথায় থাকে কে জানে অহিন।থাক না এই কয়েকটা দিন প্লিজ,আরিশা অনুনয়ের সুরে বলে অহিনকে।অহিন কিছুটা নরম হলেও আরিশার পাগলামী বাড়বে মনে করে চেষ্টা করে চাবি নিতে কিন্তু পারে না।হঠাৎ আরিশার মাথায় একটা বুদ্ধি আসে সে চাবির গোছা টা কোমরে গুজে ফেলে,আর অহিনের দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে দুষ্টুমির চলে বলে,নেয় চাবি,নিতে পারলে নিয়ে যাবি,দেখি তোর কত সাহস। অহিন ভ্রু কুচকে দাড়িয়ে দেখছে আরিশাকে মেয়েটা এতো পাগলামী কেনো করছে,এই কয়েকটা দিনের জন্য এসব করে কি লাভ।এর বিনিময়ে কষ্ট ছাড়া কিছুই মিলবে না।যে স্মৃতি যন্ত্রনা দেয় এমন স্মৃতি তৈরি হতে দিতে নেই, নাহলে এই স্মৃতিই একদিন রাতের ঘুম হারাম করে দিবে।
তাই অহিন ও চায় না এমন স্মৃতি তৈরি করতে।

অহিন দাঁতে দাঁত চেপে বলে,ঠিক আছে তুই আমার সাহস দেখতে চাস দাড়া দেখাচ্ছি সাহস। অহিন আরিশার পেছনে গিয়ে আরিশাকে জড়িয়ে ধরে, আরিশার শাড়ির ভেতরে হাত ঢুকিয়ে পেটের উপর,হঠাৎ আরিশা খুব ব্যাথা অনুভব করলো, কি হলো ব্যাথা করছে কেনো!পরে বুঝতে পারলো এই বিশ্বসেরা আন রোমান্টিক ছেলেটা তার সাথে রোমাঞ্চের পরিবর্তে খামচি দিয়েছে,উফ!কি ব্যাথা!
আরিশা পেট ডলতে থাকে বলে,উফ!তোর মত এতো আন রোমান্টিক ছেলে আমি আর দেখি নি। কোথায় আদর করবি তা না, খামচি দিয়েছিস,জ্বলতেছে খুব,তুই আস্তো একটা কুত্তা,আরিশা শাড়িটা পেট থেকে সরিয়ে দেখিছিলো কতটা লেগেছে,অহিনের না চাইতে ও সেদিকে নজর পড়ে ধবধবে সাদা পেটে গোলাপী রঙের দাগ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে,অহিনের খুব মায়া হলো,সে আসলে চায় নি এমন হোক,বা আরিশা ব্যাথা পাক,কিন্তু এটা না করলে আরিশার পাগলামী বেড়ে যেতো।

অহিন বলে,ড্রামা কুইন এবার বন্ধ কর তোর ড্রামা আমি আসি বলে দরজা খুলতে যায়,একে একে সব চাবি দিয়ে খোলার চেষ্টা করে কিন্তু খোলেনা।অন্যদিকে আরিশা বসে বসে হাসছে দৌঁড় অন্যদিকে,অহিন পিছু পিছু দৌঁড়াচ্ছে,অহিন ছুটে এসে আরিশাকে ধরে ফেলে কোমরে ধরে খাবার টেবিলের উপর বসিয়ে দেয়,তারপর আরিশার কোমরের অন্যপাশ থেকে আরেকটি চাবি বের করে আনে,ঠিক সেই মুহুর্তে আরিশাকে অহিন অবাক করে দিয়ে আরিশার ঠোঁটে এক গভীর চুমু খায়, কিছুটা সময় যাওয়ার পর আরিশা বুঝতে পারে এটা স্বপ্ন নয়, এটা সত্যি । আরিশার একটা ঘোর লেগে যায়,অহিনকে সে ছাড়তে চায় না।কিছুটা সময় পর অহিন আরিশাকে কোলে করে ঘরে নিয়ে যায়।আরিশার মনে লাড্ডু ফুটছে এবার তাহলে অহিন বাবুর মন ভোলাতে পেরেছে।আরিশাকে রুমে নিয়ে অহিন যা করলো তা আরিশার চিন্তার বাইরে,আরিশাকে শুইয়ে দিয়ে কাঁথা গায়ে জড়িয়ে দিয়ে নিজে বের হয়ে চলে আসে,আরিশা চোখ মেলে যখন দেখে অহিন নেই তখন খুজতে থাকে কিন্তু পায় না।এতে আরিশার রাগ কষ্ট দুটোই হয়।সব ভেঙে ফেলতে ইচ্ছে হচ্ছে, অহিন আরিশাকে বাইরে থেকে তালা দিয়ে চলে গেছে,আরিশা এবার রাগে, দুঃখে কান্না করে কিছুক্ষণ। কখন যে মেঝেতে ঘুমিয়ে পড়ে টেরই পায় না।

ঘুম থেকে উঠে দেখে আরিশা তার রুমে, অবাক হয় সে রুমে কি করে এলো?
এদিক সেদিক ঘুরতে লেগে বুঝতে পারে সে কারো বাহুডোরে বন্ধী।
চোখ মেলে দেখে স্নিগ্ধ একটা মুখ তার সামনে, ঘুমানোতে তার ঘন চোখের পল্লব গুলো যেনো আরও স্পষ্ট, গোলাপী ঠোঁট যেনো কোন গোলাপের পাঁপড়ি! আরিশা এই সুযোগে তার প্রতিশোধ নিবে বলে ভেবে নেয়,ঘুমের মাঝেই অহিনের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়,অহিন বেচেরা হঠাৎ এমন আক্রমণ বুঝতে না পেরে দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থা।
আগে ধুমধাম মাইর দিতো,আর এখন ধুমধাম দেয় আদর!মানে এটা কোন কথা হইলো আরু কি শুরু করলি?বাচ্চাদের মত!

আমি আমার জামাইরে আদর করছি তাতে কার কি?আমারে যে তুই ডপ দিচ্ছিস তাতে কি?

—-আমি কখন ডপ দিলাম,অবাক হবার ভঙ্গিতে বলে অহিন।ডপ দিয়েছিস আমাকে এভাবে রেখে চলে গেছিস যে।
আমি একটু বাইরে গিয়েছিলাম এখন তুই এমন করবি কে জানে?

সরে যা ফ্রেশ হয়ে নেই,না আমি আমার স্ত্রীর অধিকার চাই তার জন্য আন্দোলন করবো আমি?
হাসতে হাসতে বলে আরিশা,অহিন জানে আরিশা মজা করছে তাই তার কথার পাত্তা না দিয়ে চলে যায় ওয়াশরুমে।

অহিন মনে মনে ঠিক করে আরিশাকে কিছু কঠিন কথা শোনাতে হবে আজ।

অহিন গোসল খানা থেকে এসে নাস্তা করে আরিশাকে সামনে বসিয়ে তার হাত দুটো ধরে বলে,
আরু আমি তোর কাছে একটা জিনিস চাই দিবি তুই আমায়?
——না অহিন, আমি জানি তুও কি চাস।তাই আমি তোকে তা দিতে পারবো না অহিন।তুই আমাকে কোন পরিক্ষায় ফেলিস না অহিন, দোহাই তোর।আমি এতোদিনে নিজের মনের কথা বুঝতে পেরেছি,তাই তুই আমাকে দূরে ঠেলে দিছ না।আমি পারবোনা তা দিতে তোকে।আরিশা অনুনয়ের সাথে বলে।আমি তোকে ছাড়তে পারবো না অহিন।তুই এতো বড় পরিক্ষার মাঝে আমাকে ফেলিস না।আর তুই চাইলেও আমি তোকে ছাড়বো না।আমি পারবো না অহিন,পারবো না!আরিশার গলার স্বর ভেজা।চোখে পানি টলমল হয়ে আছে,ঝিলিক দিচ্ছে সে মুক্তার মত অশ্রুদানা গুলো!

—–তুই তো না চাইতেও এর মাঝে ঢুকে গেছিস আরু।তাই তুই না চাইলেও তোকেও এই কথাটা শুনতেই হবে রে আরু।আরু তোকে রাফিনকেই বিয়ে করতে হবে।আমি পারবো না আরু রাফিনকে কষ্ট দিতে।আর তুইও কখনও রাফিনকে এই কঠিন সত্যি গুলো জানতে দিবি না। তোকে আমি দ্বায়িত্ব দিলাম রাফিনকে ভালো রাখার। রাফিনের জীবনের এই সত্যিটা এতোদিন আমি লুকিয়ে রেখেছি।এবার এই দ্বায়িত্ব তোকে দিলাম আরু।তুই প্লিজ আমার কথা রাখ!আমার জীবনে আমি অনেক পেয়েছি আর কিছু চাই না আমি।তুই রাফিনকেই বিয়ে করবি।এটা আমার অনুরোধ।

আরিশা কি একটা ভেবে বলে ঠিক আছে তুই যা চাস তাই হবে,কিন্তু এর আগে তুই আমাকে কথা দিবি যে এই কয়েকটা দিন আমার সাথে তুই স্বামী স্ত্রীর মত নরমাল জীবন পার করবি।তাহলে আমিও তোর কথা শুনবো।
অহিন হতবিহ্বল হয়ে যায়,আরিশা কেনো বুঝতে পারছে না,এমন হলে তারা কেউই এই সম্পর্ক থেকে বের হতে পারবে না।পরে এর ফল ভয়ানক হবে।

অহিন অনেক চেষ্টা করেও আরিশাকে তার সিদ্ধান্ত থেকে টলাতে পারে না,তাই বাধ্য হয়ে আরিশার কথা মেনে নেয়।তবে তার একটা কথা তারা কখনও স্বামী স্ত্রী হয়ে এক হবে না।আর বাকি সব এক থাকবে।আরিশা মেনে নেয় অহিনের কথা কারণ সে নিশ্চিত অহিন আরিশাকে কাছে টানবেই,অহিনের আরিশার প্রতি ভালবাসা তাদের এক করতে বাধ্য করবে।বাধ্য করবে একটা জীবন অনায়াসে একসাথে কাটিয়ে দিতে।আরিশার নিজের প্রতি সে বিশ্বাস আছে।তাই অহিনের কথা সেও মেনে নেয়।শুরু হয় তাদের খুনসুঁটি ভরা ভালবাসা।এমন সময় ভাগ্য তাদের আরেকটু সহায় হয় রাফিন কল দিয়ে জানায় তার লাস্ট মিটিংয়ের সময় পেছানো হয়েছে তাই সে আসতেও সময় লাগবে। আরিশা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে আরেকটু বেশী সময় পাওয়া যাবে তাহলে।

শুরু হয়ে যায় আরিশার পাগলামি,কখনও অহিন টিভি দেখছে তো সে হুট করে এসে অহিনকে চুমু খেয়ে চলে যাচ্ছে,অহিন কোন কাজ করছে তো কানে কামড় বসিয়ে চোখ মেরে চলে যাচ্ছে,অহিন ফোনে কথা বলছে তো অন্য কানে ফু দিচ্ছে আর এক একবার অহিনকে কাঁপিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। অহিন খাবার মুখে তুলবে এমন সময় আরিশা হাতটা ধরে তার নিজের মুখে ফুরে নিচ্ছে।অহিনের অর্ধেক খাওয়া খাবার নিজের খাবারের সাথে পাল্টে নিচ্ছে।এভাবে খুব সুন্দর দিন কেটে যাচ্ছে তাদের।অহিন উপরে গম্ভীরতা দেখালেও ভেতরে ভেতরে আরিশার পাগলামিতে নিজেই পাগল হয়ে যাচ্ছিলো, দিন যেতেই আরিশা থেকে নিজেকে দূরে রাখা কঠিন হয়ে যাচ্ছিলো। এ এক অসম্ভব সুখের অসুখে ধরেছে অহিন আরিশাকে।অহিন আরিশা দুজনেই চায় এই অসুখ যাতে কখনও ভালো না হয়,এমন অসুখে ভুগতে চায় সারাটি জীবন! এভাবেই চায় দুজন দুজনকে।কিন্তু রাফিনের কথা মনে হতেই অহিনের চিন্তা পাল্টে যায়,তার অবস্থা এখন শাখের করাতে মত!যেদিকেই যাবে কাটা যাবে নিজেই!জীবন এমন কেনো! কেনো আমাদের এতো এতো কঠিন মুহুর্ত গুলোকে সামনে এনে দাড় করিয়ে দেয়!কেনো ভালবাসার নামে যন্ত্রনার মেশিনের সামনে দাড় করিয়ে দেয়!জীবনের আসল রহস্য হয়তো এখানেই!আপনাকে এক একবার এক এক রঙে আবিষ্কার করবে!ভাঙবে আবার গড়বে!

———————————————————————–

——বিকেলে বসে আছে বারান্দায় অহিন আরিশা চা এনে এগিয়ে দেয় অহিনের দিকে,,আরিশার মন খুব খারাপ। কেনো সেটা অহিন বুঝতে পারছে না।

—-আজ আকাশে মেঘ ধরেছে খুব তাই না আরু?হয়তো একটু পর বৃষ্টি হয়ে ঝরবে!

—আরিশা জানে এটা তাকেই উদ্দেশ্যে করে বলা।তাই সে চুপচাপ বসে আছে। তাছাড়া তার কোন কথা বলতেও ইচ্ছে করছে না।

—-কথা না বললে আমি কিন্তু চলে যাবো আরু।

—তুই কি তিন্নিকে বিয়ে করবি অহিন?কাঠ কাঠ গলায় বলে আরিশা।

—-“যে তোমারে চাহিয়াছে ভুলে একদিন “,” সে জানে তোমারে ভুলা কত যে কঠিন”
তাই সেটা কোনদিন সম্ভব নয়।আমি আর কাউকে আমার আরুর মত করে ভালবাসতে পারবো নারে।তাই কি করে অন্য কাউকে জীবনের সাথে জড়াবো।কারো জীবন নষ্ট করার অধিকার আমার নেই।ঠকানোর অধিকারও আমার নেই। তাই ঠিক করেছি আমি দেশের বাইরে চলে যাবো মাকে বলে রাজি করাবো।আর মায়ের যখন ইচ্ছে করবে এখানে এসে থাকবে তোদের কাছে।

—- আমার কেনো যেনো মনে হচ্ছে তুই তিন্নিকে বিয়ে করবি।আমি কিন্তু তোকে মেরে দিবো এমন করলে।তারপর নিজেকে শেষ করে দিবো।আমার ভয় হচ্ছে অহিন, খুব ভয়! তোকে হারানোর ভয়!বলেই আরিশার মনের গুমোট হয়ে থাকা মেঘ বৃষ্টি হয়ে নামে।অহিনের বুকের মাঝে পোষা বিড়ালের মত গুটিশুটি হয়ে আরিশা কাঁদছে।অহিনের বুক ভাসিয়ে দিচ্ছে! অহিনের কষ্ট হচ্ছে খুব।আরিশার পাগলামি হঠাৎ হঠাৎ চুমু খাওয়া, ধুমধাম জড়িয়ে ধরা এসব কিছু অহিনকে যেনো আরও বেশী দুর্বল করে দিয়েছে।চাইলেও আরিশার এসব পাগলামিকে এড়িয়ে যেতে পারছে না সে।সত্যিকারে কেউ কি তার আকাংখিত ভালবাসার নিমন্ত্রণ অগ্রাহ্য করতে পারে।সর্বদাই ভালবাসার মানুষের সঙ্গ কামনা করে।সবাই মানুষ কেউ সাধু সন্ন্যাসী নয়।তাই অহিন ও পারছে না আরিশার ভালবাসা এড়াতে।
“ভালবাসা উপেক্ষার বস্তু নয়”
ভালবাসা সাধনার বিষয়, তাই একে উপেক্ষা করবে কার সাধ্য”!
#অন্তরালে_ভালবাসা
৩৩
#প্রজ্ঞা_জামান_দৃঢ়তা

অহিন আরিশার দুষ্টু মিষ্টি পাগলামিতে পড়ে যাচ্ছে,আরিশার সারাদিনের পাগলামি যেনো অহিনের ভেতরটা নাড়িয়ে দেয়।সারাক্ষণ দ্বিধা -দ্বন্দে থাকে অহিন।নিজেকে সামলাতে খুব কষ্ট হয়ে যায় তার।জীবনের এই মুহুর্তে এসে মনে হচ্ছে কেনো সে স্বার্থপর হতে পারছেনা।কেনো সব মায়া আর দ্বায়িত্ব প্রতিদান ভুলে যেতে পারছে না।কেনো এতো কাছে পেয়েও ভালবাসাকে কাছে টানতে পারছে না।পরক্ষণেই আবার মনে হয়,এই যে একসাথে ঘুমাচ্ছে,আরিশা বিড়ালের মত গুটিশুটি হয়ে অহিনের বুকে ঘুমাচ্ছে,ধুমধাম চুমু খাচ্ছে,ধুমধাম জড়িয়ে ধরছে,এটাই বা কম কিসের।এই যে সারাক্ষণ পাশে আছে এটাই বা কম কিসের!জীবনের মানে তো শারীরিক সম্পর্ক না,জীবনের মানে বেঁচে থাকা মনের মাঝে।মনের সাথে মনের সম্পর্ক হলেই কেবল সে ভালবাসা অমর হয়ে থাকে।কিন্তু এটাও ঠিক শারীরিক সম্পর্ক ছাড়া একটা সম্পর্ক পূর্নতা পায় না।মানুষ চাইলে ও তা অস্বীকার করতে পারবে না।কিন্তু তাই বলে তা তো অনিবার্য নয়।আরিশার এই পাগলামি গুলো নিয়েও তো একটা জীবন পার করা যায়।এতো এতো সুন্দর স্মৃতি নিয়ে ছোট একটা জীবন অনায়াসে কাটিয়ে দেয়া যায়!কিছু ভালবাসা অন্তরালে থেকেই যায়।মানুষের জীবনের গল্প গুলো শেষ হয়ে গেলেও অন্তরালে ভালবাসা থেকে যায় আজীবন! মানুষের মৃত্যু হয়,কিন্তু অন্তরালে যে ভালবাসা লুকায়িত থাকে তা কখনও শেষ হয়ে যায় না।
এভাবেই চলে যায় সময় রাফিনের আসার সময় হয়ে আসে।
আরিশার করা আরেক পাগলামিতে অহিনের ধ্যান ভাঙে।ইচ্ছে করে এসে অহিনের দুগালে হাত দিয়ে আজলা করে ধরে ইচ্ছে মত নিজের মুখ ঘষে, একবার এ পাশে, আবার অন্য পাশে,অহিন এসব আচমকা আক্রমণ গুলো হজম করতে পারে না,কিছুটা সময় লাগে।ইচ্ছে মত মুখ ঘষা বন্ধ করে আরিশা বলে,এই তোর এমন খোঁচা খোঁচা দাড়ি আমার মুখে লাগছে খুব,মুখ জ্বলতেছে আমার। দূর এই দাড়ি গুলো কেনো হয় তোদের কে জানে!আরিশা খুব বিরক্তের সাথে বলছে অহিনকে,তার মুখ দেখে মনে হচ্ছে এর চেয়ে বিরক্তিকর কিছু বুঝি আর হয় না!একটু রান্নাঘরের দিকে যেতেই আবার ফিরে এসে কোমরে শাড়ির আঁচল গোজা,একহাত কোমরে অন্যহাত মুষ্টিবদ্ধ করে,তর্জনী আঙুল গালের একপাশে ঠোকাতে ঠোকাতে বলে,না থাক সমস্যা নেই চালিয়ে নিবো!

অহিন অবাক হয়ে ভ্রুকুটি করে বলে,কি চালিয়ে নিবি?

—-এই যে তোর দাড়ি চালিয়ে নিবো।আসলে হয়েছে কি দাড়ি গুলো তোর সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে।নয়তো তোকে মেয়ে মেয়ে লাগতো যা ফর্সা তুই!এগুলোর জন্যই তোরে আকর্ষণীয় লাগে, আর ছেলে ছেলে লাগে।হুট করে এসে হুট করে চলে গেছে।

—অহিন অবাকের শেষ পর্যায়ে চলে গেছে,কি অদ্ভুত এই মেয়ে বাতাসের মত আসে আবার চলেও যায়।অহিন একদম বোকাবনে গেছে দাড়ি না থাকলে তাকে মেয়ের মত লাগতো সিরিয়াসলি?
অহিন আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে দেখছে ভালো করে।সে জানে সুদর্শন কলেজে মেয়েরা তার জন্য পাগল।অথচ সে আটকে গেছে আরিশাতে।

অদ্ভুত সুন্দর কিছুদিন অহিন আরিশা একসাথে কাটায়,বৃষ্টি এলে আরিশা অহিনকে জোর করে ভিজতে নিয়ে যায়,আরিশা ভিজে সাথে অহিনও।দুজন দুজনকে দেখে অনেকক্ষণ ধরে। আরিশার আজকাল খুব ভয় হয়,অহিনকে হারানোর ভয়।তার মন কেনো যেনো খুব আতংকে থাকে সে বুঝে না।অহিন তার এতো কাছে তাও কেন এতো ভয় কে জানে!

বিকেলে দুজনে একসাথে বারান্দায় বসে দাবা খেলে,তারপর চা নাস্তা করে,সন্ধ্যার সুন্দর দৃশ্য দেখে,চাঁদনী রাতে আকাশের তারা গুনে দুজনে।কেউ বলে এক কোটি তারা কেউ বলে একশো কোটি!তারপর দুজনে লেগে যায়,চ্যালেঞ্জ করে গুনে দেখাতে আসলে কত তারা আকাশে,অথচ দুজনেই জানে আকাশের তারা কেউ খালি চোখে গুনে শেষ করতে পারবে না।তাও মজা করে দুজনে।
রাত হলে আরিশা তার জীবনে ভালবাসা না পাওয়ার যন্ত্রনাগুলোকে ভেবে অহিনের বুকে মুখ লুকিয়ে কাঁদে।কেনো সে প্রেম আবেগ আর ভালবাসার মাঝে তফাৎ বুঝতে পারলো না।তাহলে তো না রাফিন কষ্ট পেতো,না আরিশা নিজে, না অহিন।এই প্রেম আর ভালবাসার মাঝে তফাৎ বুঝে সব মানুষের উচিত একটা সম্পর্কে আগানো। নয়তো এর সাথে জড়িত সব মানুষ কষ্ট পাবে।একটাই তো জীবন, এই একজীবনে যদি চাওয়া মত ভালবাসার মানুষকে না পায় তাহলে কিসের বেঁচে থাকা।তাই সম্পর্ক বেচে নেয়ার ক্ষেত্রে সব দিক ভেবে নেয়া উচিত নয়তো সারাজীবন কাঁদতে হবে। আরিশা প্রায় রাতেই কাঁদে তখন অহিনের ভেতরটা চূর্ন বিচুর্ন হয়ে যায়।কিন্তু আফসোস করে জীবনের এই মুহুর্ত গুলো কেনো যে মিস করে যাচ্ছে।দুটো মানুষ একসাথে এক একটা যন্ত্রনার রাত পার করে।

———————————————————————————-

সেসময় একদিন আরিশাকে রিমি একটা বুদ্ধি দেয়,সে বুদ্ধি অনুযায়ী আরিশা কাজ করে,আসলে মানুষ ভালবাসলে হিতাহিত জ্ঞান ভুলে যায়,নিজের যন্ত্রনা থেকে বাঁচতে ভালবাসাকে সারাজীবনের জন্য পেতে সে এক এক সময় অদ্ভুত কাজ করে। সেদিন রাতে অহিনের আনা কোকে আরিশা ওয়াইন মিশিয়ে দেয়,এই আশায় যদি অচেতন হয়েও অহিন তার মানবিকতা কিছুটা সময়ের জন্য হলেও ভুলে।অহিনকে কোক ঢেলে দিতেই আরিশার হাত ধরে ফেলে অহিন, আরিশাকে কাছে টেনে নিয়ে পাশে বসিয়ে ,আরিশার হাত থেকে কোকের গ্লাস নিয়ে, আরিশাকে বলে তুই আরেকটা গ্লাস নিয়ে আয় আরু।আরিশা গ্লাস এনে দেখে অহিন কোক খেয়ে ফেলেছে।আর অহিনের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে ওয়াইনের কাজ শুরু হয়ে গেছে।সে রাতটা আরিশার জীবনের শ্রেষ্ঠ রাত হয়ে যায়। এমন একটা রাত যা তার জীবনের খাতায় সবসময় সুখের স্মৃতি হয়ে থাকবে।এমন একটা রাত যা এক পরিপূর্ণতায় ভরা সুখের নাম হয়ে থাকবে।আরিশার মনে হয় সে হয়তো ভুল পথ বেচে নিয়েছে তারপর ও সে ভাবে,”
ভালবাসা পাওয়ার জন্য অন্যয্য,অশোভন, অনুচিত বলে কিছু নেই!”ভালবাসায় সব জায়েজ, ভালবাসায় সবই উচিত”!
আরিশার কাছে স্বপ্নের মত একটা রাত পার হয়, বারবার মনে হয় এই রাতটা যেনো ভোর না হয়।অহিন যেনো হুসে না আসে।
আচ্ছা অহিন কি সকালে সব ভুলে যাবে,যেমন সিনেমার নায়করা ভুলে যায়?
নানা চিন্তা শেষ করে আরিশা রাত পার করে,অহিনের ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে ভবিষ্যৎ এর স্বপ্ন বুনতে শুরু করে।আরিশা জানে আজকের পর অহিন তাকে অস্বীকার কর‍তে পারবে না।

এই মুহুর্তে আরিশা নিজেকে সবচেয়ে বেশী সুখি নারী মনে করে,সকালে আরিশা গোসল সেরে এসে অহিনের ঘুমন্ত মুখে নিজের চুলের পানি ছিটিয়ে দেয়,অহিন তার সুন্দর চোখ দুটো মেলে দেখে, আরিশার মুখ কেমন একটা প্রাপ্তিতে ভরে আছে,আজ অন্যদিন থেকে আরিশাকে একটু আলাদা দেখাচ্ছে হয়তো সকাল সকাল গোসল করেছে বলে।আরিশা অহিনের কপালে ঠোঁট ছুইয়ে দিয়ে বলে চল আমি আজ তোর পছন্দের সব খাবার বানিয়েছি।উঠে পড়। আরিশার চোখে মুখে লজ্জা ভর করেছে কেনো যেনো অহিনের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারছে না।কিন্তু অহিনকে খুব স্বাভাবিক দেখালো। আরিশা ঠিক বুঝতে পারছে না অহিন কি সব ভুলে গেলো? নাকি আরিশার সাথে মজা করছে!আরিশার এবার খুব অস্বস্তি হয়।
অহিনের কি বলা উচিত না এখন আরিশাকে কিছু,এতো সুন্দর একটা রাত কাটানোর পর কেউ কিভাবে এতোটা চুপ থাকতে পারে।নাকি অহিনের মনেই নেই।এসব চিন্তায় আরিশার মন ভার হয়ে আসে।চুপচাপ খেয়ে আরিশা উঠে যায়।বাইরে ঘুরতে যাবে তারা তাই বের হয়।

অহিন বাইক নিয়ে আসে আরিশাকে নিয়ে বের হয় সে।অহিনের পেছনে বসে আছে আরিশা এলোমেলো চুল গুলো বাতাসে উড়ছে, শাড়ির আঁচল উড়ছে,আরিশা এক হাতে অহিনকে ধরে বসেছে অন্যহাতে বাইকের পেছনটা ধরে বসেছে।

সারাদিন ঘুরে বাসায় আসে তারা অহিন ফ্রেশ হয়ে এসে বসে খাটের উপর, আরিশা গোসল সেরে এসে কোমরে আঁচল গুজে চুলের পানি ঝাড়তে ছিলো এমন সময় অহিন আরিশার পেছনে এসে আঙুল দিয়ে আরিশার খোলা পেটে টোকা দেয়,আরিশা চমকে অহিনের দিকে তাকায়,অহিন হাসে মিষ্টি করে।আরিশাকে সারাদিনে রাতের বিষয়ে কিছুই বলেনি অহিন। আরিশা ঠিক করেছে অহিন যদি না বলে এই বিষয়ে আরিশা নিজ থেকে কিছুই বলবে না।

আরিশা কফি বানাতে চলে যায়।এসে দেখে অহিন নিকোটিনের ধোঁয়ায় ডুবে আছে।

অহিন আচমকা আরিশাকে জড়িয়ে ধরে অহিনের চোখ ভেজা কিন্তু আরিশাকে বুঝতে দেয় নি অহিন।কাল রাফিন আসবে তাই হয়ত অহিনের মন খুব খারাপ। রাফিন আসলেই আরিশাকে হারাতে হবে।সে জানে আরিশাকে আজকের রাতের পর আর পাবে না।খুব ভয় হচ্ছে অহিনের আরিশাকে হারানোর ভয়। আজ খুব কষ্ট হচ্ছে তার।আরিশা সব বুঝেছে কাঁদছে সে।রাফিন আসছে বিয়ের প্রস্তুতি চলছে, চলছে ডিভোর্সের প্রস্তুতি ও।অহিন আরিশাকে বুকে নিয়ে এক যন্ত্রনাময় রাত কাটায়।ভালবাসার মানুষকে হারানোর যন্ত্রনা। জীবনে ভালবাসার মানুষ যদি পাশে না থাকে তাহলে এই একটা জীবন কিভাবে কাটাবে।
হায়!ভালবাসা!

চলবে,,,,,
কিভাবে চাই?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here