অন্তর দহন পর্ব-২১+২২

#অন্তর_দহন
#লেখনিতে_আরুহি_অহি

পর্ব___২১

চন্দ্র রেস্টুরেন্টের থেকে বেরিয়ে আসার সময় ও চারিদিকে ঘুরে ঘুরে তাকালো।মনের খচখচানি কমছে না ওর। কিন্তু এবার গাড়িতে উঠার সময়েও আশেপাশে তাকিয়ে খুঁজতে লাগল চন্দ্র। এরপর মনের ভুল ভেবে গাড়িতে উঠে বসলো।গাড়ি চলছে আপন নিয়মে।সবাই মিলে দিপ্তকে নিয়ে মজা করতে করতে পৌঁছে গেছে কাঁচা রাস্তায়। সেখানে গিয়ে চন্দ্র জেদ ধরলো নেমে হেঁটে হেঁটে যাবে।বাধ্য হয়ে মিতু নিরা সিঁথি ও নামলো। চারপাশের চোখ জুড়িয়ে যাওয়া সৌন্দর্য দেখে চন্দ্র দুহাত মেলে বাতাসে দিকে মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো।মিতু তা দেখে বললো,

__আমি ভীষণ মিস্ করছি সিঁথি।

__কাকে আপু?জিজুকে?

__হ্যাঁ।

মিতু চন্দ্রকে ইশারা করে দেখিয়ে হেসে দিয়ে বললো,

__এমন একটা জায়গায় আমার বরটা থাকলে আমাকে পেছন থেকে রোমান্টিক মুডে জড়িয়ে ধরতো।তাইনা চন্দ্র।

চন্দ্র আনমনে স্পন্দনের কথা ভাবছিলো। ওদের কথা শুনে বুঝতে না পেরে শুধু মাথা নাড়িয়ে বললো,

__হ্যাঁ একদম তাই।

__তা আর কি কি করতি চন্দ্র?

__বরের সাথে মানুষ যেমন করে তেমনি করতাম।

এবার সবাই খিলখিল করে হাসতে লাগলো। চন্দ্রের হুঁশ ফিরতেই লজ্জায় চোখ মুখ ঢেকে নিলো। কাঁচা রাস্তা বেয়ে দৌড়ে যেতে গিয়ে পা হরকে পড়ে গেলো।সাথে সাথেই সবাই দৌড়ে এসে ওকে টেনে তুলে দাঁড় করিয়ে দিতে গিয়ে দেখে চন্দ্র দাঁড়াতে পারছেনা।চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।ব্যথায় কুকিয়ে উঠে কেঁদে ফেলেছে।সবাই মিলে অনেক কষ্টে ওকে ধরে ধরে বাড়িতে নিয়ে এলো।ওরা সবাই ছোট দাদা ভাইয়ের বাড়িতে উঠেছে।এনাদের ছেলে মেয়ে নেই। অনেক জায়গা জমি লোক দিয়ে দেখাশোনা করে।আর দাদা দাদি বয়স হয়েছে। তবুও অনেক কিছু করেছে ওদের যাওয়ার খবরে। চন্দ্রকে এমন খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটতে দেখেই দাদি ছুটে এলো।বললো,

__কি হয়েছে দিভাই?

__পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়েছি দাদি।

__ওকে দক্ষিনের রুমটাতে নিয়ে যাও। আমি মলম নিয়ে আসছি । একবার মালিশ করে দিলেই ভালো লাগবে।

চন্দ্র কপালে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। কষ্ট হচ্ছে খুব।স্পন্দনের জন্য মন খারাপ করছে।আর তার উপর স্পন্দনকে ফোনেও পায়নি।মিতুর ফোন থেকে ফোন করেছিলো। এদিকে বাইরে সবাই মজা করছে।আর ও পা মচকে বসে আছে বিছানায়।দাদি এসে মালিশ করে দেওয়ায় বেশ ভালো লাগছে এখন। তবুও মনটা অশান্ত হয়ে আছে। হঠাৎ করেই কারেন্ট চলে গেছে। সন্ধ্যা নেমেছে বেশ কিছু সময় হলো।তাই অন্ধকার হয়ে আছে ঘর। চন্দ্র তাও চোখ খুললো না।মনে হলো পায়ে কেউ হাত দিচ্ছে। চন্দ্র সেটা অনুভব করতেই তাকিয়ে দেখে স্পন্দন ফোনের ফ্লাশ জ্বেলে ওর পা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। চন্দ্র বললো,

__আপনি? আপনি সত্যিই এসেছেন স্পন্দন?

__না এসে আর থাকতে দিলে কোথায় চন্দ্র?

__আপনি তো বলেই দিয়েছেন আসবেন না।

__তুমি তো বলেই খালাস চন্দ্র।এই যে একটু সময়ের জন্য একা ছেড়ে দিয়েছি তোমায়।আর তুমি পা মচকে বসে আছো।একটু কি দেখে শুনে চলতে পারো না চন্দ্র?

__বকছেন কেনো স্পন্দন? আমি বুঝতে পারিনি এমন হবে।

__তোমাকে নিয়ে আর পারিনা চন্দ্র। তোমার ছেলে মানুষি কবে বন্ধ হবে বলো তো?

__হবে না কখনো।

__সেটা তো দেখতেই পাচ্ছি।শহর থেকে বেরিয়ে আসার পর থেকেই যেভাবে আমার জন্য মন খারাপ করে ছিলে আমি তো ভাবলাম কেঁদে ফেলবে বুঝি।

__আপনি কি করে জানলেন?

__চন্দ্র যেখানে নেই সেখানে যে স্পন্দন ও থাকতে পারে না চন্দ্র।তাইতো তোমাদের সাথে সাথেই আসছিলাম।আর মিতুকে ফোন দিয়ে তোমার কথা শুনছিলাম।

__তার মানে?তখন ঠিকই আমি আপনাকে দেখেছিলাম?

__হুম। এরপর একটু বেশি পেছনে থাকতে হয়েছে আমাকে। তুমি যেভাবে ঘুরে তাকাচ্ছিলে?

__আমার মন বলছিলো আপনি আসবেন।

__আর কিছু বলেনি তোমার মন?

চন্দ্র উত্তর দেওয়ার আগেই সবাই ঘরে এসে ঢুকে ভুত দেখার মত চমকে উঠলো। শুধু মিতু ছাড়া। একমাত্র ঐ জানতো স্পন্দন আসবে ওদের সাথে।

__ভাইয়া তুমি কখন এলে?

__এইতো মাত্র এলাম।

__এসেছো ভালো করেছো। বাইরে চলো।সবাই মিলে ট্রুথ এন্ড ডেয়ার খেলবো।

চন্দ্র অসহায় হয়ে বললো,

__আমাকে নিবে না তোমরা?

__ভাইয়া তোমার বউকে নিয়ে এসো।আমরা বাইরে আছি।

সবাই যেমন গতিতে এসেছিলো।তার দ্বিগুণ গতিতে ফিরে গেছে।জানে এরপর আর স্পন্দনের সামনে থাকাটা নিরাপদ নয়।স্পন্দন চন্দ্রের মুখের উপর ঝুঁকে এসে বললো,

__বাইরে যাবি চন্দ্র?

চন্দ্র মাথা উপর নিচ করে হ্যাঁ বোঝালো।স্পন্দন চন্দ্রকে কোলে তুলে হাঁটতে লাগলো।স্পন্দন চন্দ্রকে দেখছে মুগ্ধ চোখে। বাইরের চাঁদে আলোয় সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছে।

স্পন্দনকে দেখে রেহান বললো,

__একটা গান করো ভাইয়া প্লীজ। অনেক দিন তোমার কন্ঠ শুনতে ইচ্ছে করছে।

স্পন্দন চন্দ্রের দিকে তাকিয়ে খালি গলায় গাইতে শুরু করলো,

__অনেক দূরে ঐ যে আকাশ নীল হল
আর তোমার সাথে আমার আঁখির মিল হল
কৃষ্ণচূড়ার মতন এমন অনুরাগে লাল
আর খেয়াল খুশির মযুরপঙ্খী
উড়িয়ে দিয়ে পাল।
আজ এ গান আমার দোল-দোলানো
প্রজাপতির পাখা
রামধনুকের সাতটি রঙের স্বপ্নে যেন মাখা
আজ ফাগুনে ঐ আগুন ছড়ায়
পলাশেরই ভাল।
বেশ লাগে এই সীমার বাঁধন ছাড়িয়ে যেতে।
তাই দুজনে চাই যে শুধু হারিয়ে যেতে।
আজ আলাপনে মিষ্টি সুরের।
আলিম্পনা এঁকে ফু
রিয়ে যাবে প্রহরগুলো তোমায় আমায় দেখে
কুহুর গানে দুঁহুর প্রাণে
সুর যে খোঁজে তাল,,,,,,,,,,,,

গান থেমে গেছে কিন্তু দুজনের চোখে চোখ এখনো আটকে আছে।সবাই হাত তালি দিয়ে উঠতেই চন্দ্র তাড়াতাড়ি করে চোখ সরিয়ে নিলো।স্পন্দন ও উঠে চলে গেলো ওখান থেকে। এরপর অনেক সময় খেলা আর মজা করে রুমে এলো।স্পন্দন চন্দ্রকে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বললো,

__আমার আকাশের একটা চন্দ্র আর সেটা হলো তুমি।

চন্দ্র স্পন্দনের বুকে মাথা রেখে চুপ করে আছে।স্পন্দন আবার বললো,

__কি হলো চন্দ্র? এভাবে চুপচাপ করে আছো কেনো?

__আমাকে এতো ভালোবাসেন কেনো স্পন্দন?যদি আমি কোথাও হারিয়ে যাই?

__চুপ পাগলী। এভাবে বলতে নেই।স্পন্দন থাকতে চন্দ্র হারাবে না। কখনো না।

সকাল থেকেই চন্দ্র ছুটোছুটি শুরু করে দিয়েছে।স্পন্দন তাকে বলেও শান্ত রাখতে পারছেনা। পায়ে ব্যথা নেই বলেই বাড়ি মাথায় করে রেখেছে চন্দ্র। সকালে নাস্তা খাওয়ার পর হরহর করে দু’বার বমি করেছে চন্দ্র।স্পন্দন ডাক্তার এনে দেখিয়েছে।ডাক্তার দু’টো টেস্ট করতে দিয়েছে।আর আপতত সামান্য মেডিসিন দিয়ে গেছে।স্পন্দনের কড়া হুঁ’শিয়ারি তলব হয়েছে চন্দ্রের উপর। চন্দ্র ভয়ে শুয়ে আছে।বিকালে স্পন্দন এসে চন্দ্রকে বললো,

__আমরা সকালেই শহরে যাচ্ছি চন্দ্র।সব গোসগাস
করে নেও।

__আমি ঠিক আছি স্পন্দন?এতো কেনো ভাবছেন?ওরা সবাই,,,,

__ওরা থাকবে চন্দ্র। আমি আর তুমি ফিরছি।

__কিন্তু কেনো স্পন্দন?

__আমি বলেছি তাই।এই নিয়ে আর প্রশ্ন নয় কোনো।

থমথমে মুখে স্পন্দনের কথা শুনেই চন্দ্র বুঝতে পারলো কিছু একটা গুরুতরভাবে ঘটেছে।না হলে স্পন্দন এমন করতো না।তাই আর জিদ না করেই পরদিন সকালে শহরে ফিরে এলো।বড় আম্মু বললো,

__কি হয়েছে চন্দ্র?এতো তাড়াতাড়ি করে ফিরে এলি?সব ঠিক আছে তো?

__হ্যাঁ বড় আম্মু ঠিক আছে সব।

চন্দ্র ঘরে চলে যেতেই স্পন্দনের মা বললো,

__কি হয়েছে স্পন্দন?

স্পন্দন মাথা নিচু করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। এরপর বললো,

__চন্দ্রের শরীর ভালো না মা।ডাক্তার ওর টেস্ট করতে দিয়েছিলো।মফশ্বলের রিপোর্ট তাই আমার ভালো লাগে নি। আমি চেয়েছি এখানে এনে বড় ডাক্তার দেখিয়ে ভালো চিকিৎসা করাব।

__ভয়ের কিছু নেই তো স্পন্দন?

__না না মা।ভয়ের কিছু নেই। তুমি চিন্তা করো না।

স্পন্দন রুমে গিয়ে দেখে চন্দ্র এলোমেলো হয়ে শুয়ে আছে।চোখ দুটো ভীষণ ক্লান্ত। আগে কখনো এমন ক্লান্ত থাকতো না। কয়েক দিন ধরে এমন হয়েছে ওর।স্পন্দন কাছে গিয়ে বললো,

__বেশি খারাপ লাগছে চন্দ্র?

চন্দ্র হেসে বললো,

__না তো। ক্লান্ত লাগছে তাই শুয়ে আছি।

__তাহলে একটু শুয়ে থাকো।আমি একটা ডাক্তারের এপোয়েন্ট নিয়ে আসছি।

__স্পন্দন?

__কিছু বলবে চন্দ্র?

__আমার কাছে আসেন।

স্পন্দন কাছে আসতেই চন্দ্র শক্ত করে জড়িয়ে ধরল স্পন্দনকে।স্পন্দন মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,

__বেশি খারাপ লাগছে? কোথায় কষ্ট হচ্ছে?

__কোথাও হচ্ছে না। আপনি যান।

স্পন্দন চন্দ্রের কপালে চুমু খেয়ে বাইরে চলে গেছে।স্পন্দনের মাথা এলোমেলো হয়ে আছে। সবকিছু শূন্য লাগছে।এই চন্দ্র ছাড়া ওর জীবনের আর সবটুকু অন্ধকার আর বিষণ্ণতায় ভরা।স্পন্দনের বেঁচে থাকতে হলে চন্দ্রকে চাই।এসব ভাবতে ভাবতেই কখন রাস্তার মধ্যে এসে পড়েছে স্পন্দন তা খেয়াল ই করেনি। শুধু বিকট একটা শব্দ হলো আর স্পন্দন রাস্তায় চিটকে পড়ে গেছে।

#চলবে,,,,,,,

ভুল ত্রুটি মার্জনীয়।হ্যাপি রিডিং।#অন্তর_দহন
#লেখনিতে_আরুহি_অহি

পর্ব___২২

চন্দ্রের মনটা হঠাৎ করেই কেমন আনচান করছে।বড় আম্মুর কাছে গিয়ে বললো,

__তোমার ফোন থেকে স্পন্দনকে একটা ফোন দাও তো বড় আম্মু।

__এই নে ফোন। তুই দে।

চন্দ্র পরপর দুবার ফোন করলো । কিন্তু কেউ ধরলো না। তৃতীয় বারের মতো ফোন করতেই একজন অপরিচিত কন্ঠস্বর ভেসে এলো। চন্দ্র বললো,

__স্পন্দন?

__আমি স্পন্দন না।ফোনটা ওনার পকেটে ছিলো যার এক্সিডেন্ট হয়েছে কিছু সময় আগে।

চন্দ্র চেষ্টা করেও কিছু বলতে পারছেনা। অনেক কষ্ট হচ্ছে ওর।কোনো রকম ঢোক গিলে বললো,

__স্পন্দন কোথায়?

__হাসপাতালেই আছে। আপনাকে ঠিকানা দিয়ে দিচ্ছি। আপনি ওনার ফ্যামিলিকে একটু খবরটা দিয়ে দিবেন।

চন্দ্র ফোন রেখে হাঁটু গেড়ে বসে কেঁদে উঠলো।বড় আম্মু দৌড়ে এসে বললো,

__কি হয়েছে চন্দ্র?স্পন্দন কোথায়? কাঁদছিস কেনো? চন্দ্র?

__তোমার ছেলে হাসপাতালে বড় আম্মু। একজন বললো ও নাকি এক্সিডেন্ট করেছে।বড় আম্মু তোমার ছেলের কাছে নিয়ে চলো আমাকে এখনি। আমি ওকে দেখবো বড় আম্মু।

স্পন্দনের মা ও কাঁদছে। চন্দ্র পাগলের মতো কান্নাকাটি করছে।তাই উনি ওকে সামলাতে সামলাতেই বললো,

__নিয়ে যাবো চন্দ্র মা। আগে কোন হাসপাতালে আছে বল। আমি বললাম তো নিয়ে যাবো।

হাসপাতালের রিসেপশনে চন্দ্র আর স্পন্দনের খোঁজ করছে।তারা বললেন হ্যাঁ এসেছে একটা এক্সিডেন্ট এর রুগি। চতুর্থ তলায় ইমার্জেন্সি তে ভর্তি আছে।তার অবস্থা খুব ভালো নয়।শুনেই হাত পা ঠান্ডা হয়ে এলো দুজনের। তবুও ছুটতে ছুটতে চতুর্থ তলায় পৌঁছে দেখে অনেক গুলো অপরিচিত লোক এক জায়গায় বসে এক্সিডেন্ট নিয়ে কিছু আলোচনা করছে। চন্দ্র ছুটে গেলো তাদের দিকে।বললো,

__যে এক্সিডেন্ট করেছে সে কোথায়? আমি ফোন করেছিলাম।

একজন এগিয়ে এসে ফোনটা চন্দ্রকে দিয়ে বললো,

__আইসিউতে আছে ম্যাম। খুব বাজে ভাবে এক্সিডেন্ট করেছে। অনেক কষ্ট করে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় এখানে এনেছিলাম। অনেক ব্লাড বেরিয়ে গেছে।সেন্স ছিলো না।

চন্দ্র এবার ধপ করে বসে পড়লো।আর চিৎকার চেঁচামেচি করছেনা ও। কেমন যেনো পাথরের মতো বসে আছে।কারো দিকে তাকিয়ে দেখছে পর্যন্ত না।স্পন্দনের মা এগিয়ে গিয়ে একবার গ্লাস দিয়ে স্পন্দনকে দেখলো।কান্নায় বুকের ভেতর হু হু করে উঠলো। চন্দ্রের পাশে বসে চন্দ্রর হাতটা শক্ত করে ধরে বললো,

__তোর উপর অনেক দায়িত্ব চন্দ্র। আমার স্পন্দনকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে তোকে। আমি মা।আর মা হয়ে তোকে বলছি একটুও ভেঙে পড়বি না।তোর শুধু একটাই কথা মনে রাখতে হবে স্পন্দনের কিছু হবে না।ওকে যেভাবে হোক ভালো করে তুলতে হবে। আমাকে কথা দে চন্দ্র। আমার ছেলেটাকে তুই ভালো রাখবি। কথা দে চন্দ্র।

চন্দ্র ওর বড় আম্মুর অশ্রুশিক্ত চোখের দিকে তাকিয়ে দু’ফোঁটা চোখের জল ফেলে বললো,

__তোমাকে কথা দিলাম বড় আম্মু। আমি থাকতে স্পন্দনের কিছু হবে না। তোমাকে ছুঁয়ে কথা দিলাম বড় আম্মু।

বড় আম্মু চন্দ্রকে জড়িয়ে ধরলেন। বললেন,

__আমার দোয়া সব সময় তোর সাথে থাকবে চন্দ্র।

আজ দু’দিন হয়ে গেছে।স্পন্দনকে এখনো আইসিইউতে রাখা হয়েছে।আর বারো ঘন্টা টাইম দিয়েছে ডাক্তার।এর মধ্যে জ্ঞান না ফিরলে কোমায় চলে যেতে পারে স্পন্দন। চন্দ্রের কাছে এসে মিশাল বললো,

__ম্যাম?

__বলো মিশাল।

__স্যারের গাড়ির ইচ্ছে করে এক্সিডেন্ট করানো হয়েছে।

চন্দ্র বিস্মিত হয়ে বললো,

__খোঁজ নাও মিশাল কাজটা কে করেছে।

__জ্বী ম্যাম। আমি আমার লোকজন লাগিয়ে দিয়েছি। একবার যদি শুধু তার নাম জানতে পারি তবে আমি যে কি করবো তার সাথে তা ভাবতেও পারছিনা।

__খুব সাবধানে মিশাল।আর এখানে কড়া নিরাপত্তা রাখবে। তোমার স্যারকে বাঁচাতেই হবে কথাটা মাথায় রেখো।

__জ্বী ম্যাম। আপনি চিন্তা করবেন না আমি যথাসম্ভব চেষ্টা করছি।

__তুমি এখন এসো মিশাল।

মিশাল চলে যেতেই চন্দ্র মাথায় হাত দিয়ে ভাবতে থাকে,

__আমার জন্য। শুধুমাত্র আমার জন্যেই আজ এতো বড় বড় বিপদের সম্মুখীন হতে হচ্ছে স্পন্দনকে। আজকে যদি আমার অসুস্থতার খবরে ও বিচলিত হয়ে বাইরে না যেতো তাহলে এতো বড় বিপদ হতো না।

__চন্দ্র?

__হ্যাঁ বড় আম্মু বলো।

__দুই দিন ধরে এভাবে আছিস চন্দ্র।বাড়ির সবাই তো আছে। তুই বরং বাড়িতে গিয়ে একটু রেস্ট নে মা।

__আমার স্পন্দন আমার নাম ধরে ডাকবে বড় আম্মু।আর যদি তাই না ডাকে তাহলে আমার ভালোবাসা মিথ্যা হয়ে যাবে বড় আম্মু।

__স্পন্দনের কিছুই হবেনা মা। আমি বললাম তো।ভয় পাস না চন্দ্র।

__আমিও জানি স্পন্দনের কিছুই হবে না। তবুও ওকে আজ আমাকে ডাকতেই হবে বড় আম্মু। না হলে আমি কোথাও যাবো না এখান থেকে।

স্পন্দনের মা জানে একবার যখন চন্দ্র যাবেনা বলেছে তখন কেউই ওকে নিতে পারবে না। চন্দ্র এক দৃষ্টিতে আইসিইউ রুমের গ্লাস দিয়ে তাকিয়ে আছে স্পন্দনের দিকে। চন্দ্রের বাবা চন্দ্রের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,

__চিন্তা করিস না চন্দ্র।স্পন্দন ঠিক হয়ে যাবে।

__ঠিক বলেছো আব্বু। আমার স্পন্দনের কিছুই হবে না আব্বু। আমার স্পন্দন আমাকে রেখে কোথাও যেতে পারে না আব্বু।

__হ্যাঁ মা।তোকে ছেড়ে তো ছেলেটা থাকতেই পারে না।দেখিস না আমাদের বাড়িতে পর্যন্ত তোকে একা যেতে দেয়নি।

__আব্বু? আমার স্পন্দনকে কেউ মে’রে ফেলতে চেয়েছিল।

__কি বলছিস তুই চন্দ্র?

__হ্যাঁ আব্বু।এক্সিডেন্টটা ইচ্ছা কৃত ভাবেই করা হয়েছে। আমি যদি একবার জানতে পারি যে কেনো আর কি কারণে এমন কে করেছে।তবে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না আব্বু।

__চিন্তা করিস না মা।সব ঠিক হয়ে যাবে।

স্পন্দনের একটু একটু জ্ঞান ফিরতে শুরু করেছে।তা দেখে নার্স ছুটে ডাক্তারকে ডেকে আনলো।ডাক্তার চেকাপ করে বললেন,

__পেসেন্টের বাড়ির লোকজনকে খবর দেন সিস্টার।

নার্স বাইরে এসে খবর দিতেই চন্দ্র ভেতরে গেলো। চন্দ্রের সাথে ওর আব্বু ও এলো।ডাক্তার বললেন,

__আপনার পেসেন্ট চিকিৎসার রেসপন্স করছে। অবস্থা ডেভেলপড করছে।একটু পরেই তাকে বেডে শিফট করে দেওয়া হবে। ভাগ্য ভালো আপনাদের। এমন রুগি স্টে খুব কম করে।

চন্দ্র চোখের পানিটা মুছে নিয়ে বললো,

__আমি কি স্পন্দনকে একটু ছুঁয়ে দেখতে পারি?

__হ্যাঁ অবশ্যই পারেন।

__ধন্যবাদ ডাক্তার। আব্বু তুমি বাইরে গিয়ে সবাইকে বলো স্পন্দন ভালো আছে। কেউ যেনো টেনশন না করে।

__আচ্ছা চন্দ্র মা।

সবাই বাইরে যাওয়ার পর স্পন্দনের হাতটা ধরে বললো,

__কখন উঠবেন স্পন্দন?কখন আমাকে চন্দ্র বলে ডাকবেন?আমি যে তোমার অপেক্ষায় আছি আপনি বুঝেন না কেনো স্পন্দন?

__ম্যাম?উনাকে বেডে শিফট করবো। আপনি বাইরে আসুন।

নার্সের কথায় উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো চন্দ্র।বাইরে আসতেই বড় আম্মু এসে বললো,

__স্পন্দন ঠিক আছে তো চন্দ্র?

__জ্বী বড় আম্মু।স্পন্দন ঠিক আছে। তুমি চিন্তা করো না।

__স্পন্দনের অফিস থেকে কেউ একজন দেখা করতে এসেছে।

চন্দ্র কৌতুহল নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এসে দাঁড়িয়ে দেখে একটা অপরিচিত মেয়ে দাঁড়িয়ে। চন্দ্র চিনতে না পেরে বললো,

__জ্বী বলুন কি জন্য এসেছেন?

__স্যার কেমন আছেন ম্যাম?

__আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছেন। আপনি কে?

__আমাকে চিনতে পারবেন না ম্যাম। আপনি আপনার স্বামীকে খুব ভালো বাসেন?

__হুম ভালোবাসি তাকে। ভীষণ অল্প হলেও তাকেই আমি ভালোবাসি।

__আপনার স্বামী?

__সেও আমাকে ভীষণ ভালোবাসে।

__সত্যি তো?

__আপনি কে?আর আপনাকে আমি সত্যি মিথ্যে কইফিয়ত দিতে যাবো কেনো?

__সেও ঠিক বলেছেন।তবে আমি যতদূর জানি আপনার স্বামী আপনাকে ভালো বাসে না।

__মুখটা সামলে রাখুন মিস্। আপনি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমার স্বামী সম্পর্কে কথা বলছেন। ভবিষ্যতে এমন কিছু বললে আমি আপনাকে ছেড়ে কথা বলবো না।

__এতো ক্ষমতা?

__আমি মনে করি ভালোবাসার ক্ষমতা অনেক বেশি।যার কাছে আপনার মতো এমন কিছু লোকের ঠুনকো আঘাত কিছুই নয়।

__তবে দেখা হচ্ছে ম্যাম!

চন্দ্র এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে মেয়েটার দিকে। কেমন অদ্ভুত লাগছিল দেখতে মেয়েটাকে।

#চলবে,,,,,,

ভুল ত্রুটি মার্জনীয়।হ্যাপি রিডিং।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here