অন্তর দহন পর্ব-১৯+২০

#অন্তর_দহন
#লেখনিতে_আরুহি_অহি

পর্ব___১৯

__বড় ভাইয়া উত্তর দাও স্পন্দন যা বললো তার।

সৈয়দ মির্জা অসহায় ভাবে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখে মুখে স্পষ্ট ভয়ের ছাপ।কোনো রকম কথাই তার মুখ থেকে বের হচ্ছে না আজ।তা দেখে উনার আম্মা বললেন,

__এটা হাসপাতাল। এখানে এসব পারিবারিক সমস্যার কথা না বলাই ভালো।সবাই বাড়িতে চলো। ওখানে গিয়ে সব কথা হবে।

__আমি কোথাও যাবো না দাদিমা।তোমরা যাও। আমি চন্দ্রকে রেখে কোথাও যেতে পারবোনা।

__সারাদিন অনেক ধকল গেছে তোর স্পন্দন। এবার বাড়িতে গিয়ে একটু ফ্রেশ হয়ে কিছু খেয়ে নে। আমি আছি চন্দ্রর কাছে।

__আমি কোথাও যাবো না মা।তোমরা যাও। চন্দ্র ভয় পেয়ে আছে।ঘুম থেকে উঠেই আমাকে খুঁজে না পেলে উত্তেজিত হয়ে যাবে। আমি ঠিক আছি। তুমি বাড়িতে যাও মা।

সবাই চলে যেতেই স্পন্দন হাসপাতালের করিডরে গিয়ে বসলো।মাথার চুলে হাত দিয়ে চন্দ্রকে নিয়ে ভাবতে লাগলো।মিশাল এগিয়ে এলো স্পন্দনের কাছে।বললো,

__স্যার একবার থানায় গিয়ে দেখে আসছি আমি।আবরার চৌধুরীর নামে সব এভিডেন্স গুলো জমা ও তো করতে হবে।

__হুম।তবে ও যেনো ওর কৃতকর্মের উপযুক্ত শাস্তি পায় মিশাল।ওর জন্য হৃদি পৃথিবীতে নেই। আমি হৃদির মৃত্যুর দায়ভার নিয়ে আজ মাথার উপর অপরাধীর ট্যাগ ঝুলছে। সৈয়দ মির্জার এখনো তার অপরাধের শাস্তি দেওয়া বাকি।

__চিন্তা করবেন না স্যার। একবার যখন আবরার চৌধুরী ধরা পড়েছে তখন তার শাস্তি সে পাবেই।আর আপনার বাবা,,,,

__সৈয়দ মির্জার জন্য আমার জীবন আজ ছন্নছাড়া অগোছালো। আমি অপরাধী তার করা কুকর্মের জন্য।তাকেও শাস্তি পেতে হবে মিশাল।

__জ্বী স্যার সব হবে। আপনি এখন ম্যামের কাছে যান। আমি থানায় যাচ্ছি।

__হুম।

মিশাল চলে যেতেই স্পন্দন চন্দ্রের কেভিনে গিয়ে ওর পাশে বসলো। চন্দ্র আজকের ঘটনা গুলো ঠিক কিভাবে নেবে সেটাই ভাবছে।যদি চন্দ্র ওকে ভুল বুঝে?যদি আবরারের বলা কথাগুলো বিশ্বাস করে?যদি ওকে ছেড়ে চলে যেতে চায়?ভাবতে ভাবতেই স্পন্দনের বুকের ভেতরটা চাপা কষ্টে চিনচিনে ব্যথা হচ্ছে।

সৈয়দ মির্জার দিকে সবাই প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।ঘটনা জানার জন্য সবার আগ্রহের ও শেষ নেই। এরপর সৈয়দ মির্জার আম্মা বললেন,

__মির্জা বলো সবাইকে যা জানার জন্য সবাই অপেক্ষা করে আছে।

__আমি আর মাহতাব চৌধুরী ব্যবসায়ীক প্রতিদন্দী ছিলাম অনেক আগে থেকেই।তার ই মেয়ে ছিলো হৃদি। আমার লোকজন যখন আমাকে খবর দেয় স্পন্দন আর হৃদির সম্পর্ক নিয়ে তখন ওরা বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে দিয়েছে একে অপরকে। আমি এই নিয়ে স্পন্দনকে প্রশ্ন করলে ও সবটাই বলে আমাকে।আরো বলে সে হৃদিকে ভালোবাসে আর বিয়ে করতে চায়। আমার সাথে এই নিয়ে অনেক কথা কাটাকাটি হয় স্পন্দনের।
ওদিকে মাহতাব ও জেনে যায় এই সম্পর্কের ব্যাপারে।সে আমাকে ব্লাকমেইল করতে থাকে এই সম্পর্ক মেনে নিতে।আমি রাজি না হলে ওরা অন্য ভাবে চেষ্টা করে।স্পন্দনের সাথে দেখা করতে চায় হৃদি। কিন্তু মাহতাব ওকে বলে যদি ও স্পন্দনকে বলে আমাকে ওর ব্যবসার পথ থেকে সরিয়ে দিতে পারে তবেই স্পন্দনকে মেনে নেবে।হৃদি তাদের কথা বিশ্বাস করে স্পন্দনকে ফাঁদে ফেলতে হাত মেলায় বাবা ভাইয়ের সাথে। এরপর স্পন্দনকে বলে আমি তোমাকে বিয়ে করব যদি তোমার বাবা আমার বাবার দেওয়া সব শর্ত মেনে নেয়।স্পন্দন হৃদিকে ভালোবেসে অন্ধভাবে বিশ্বাস করে আমার হাতে পায়ে ধরে অনুরোধ করে। আমি রাজি হই না।এটা যখন স্পন্দন হৃদিকে বলে তখন হৃদি স্পন্দকে বলে তুমি যদি আমার জন্য এটুকু করতে না পারো তবে আমি ও বাবার পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করবো।
স্পন্দন পাগলের মতো হয়ে যায় এরপর।নেশা করতে থাকে। আমাকে সহ্য করতে পারে না।তখন মাহতাবের সাথে আমার ডিল করার জন্য দেখা করতে বলি। সেদিন উত্তেজিত হয়ে দু পক্ষের সংঘর্ষে মাহতাবের গায়ে গুলি লাগে।সেটা খুব অপ্রত্যাশিত ভাবে ঘটেছিলো। কিন্তু আবরার আমাকে অপরাধী মনে করে। আমার নামে কেইস ও দেয়। আমি এর থেকে বাঁচতে স্পন্দনকে গুটি হিসেবে ব্যবহার করি।স্পন্দনকে আশ্বাস দেই হৃদির সাথে বিয়ে দেওয়ার।ও আমার কথায় হৃদির সাথে দেখা করতে যায়। কিন্তু সেদিন হৃদি নিজের ভুল বুঝতে পেরে সুইসাইড করে।আর আবরার স্পন্দনের নামে শারীরিক নির্যাতনের পর হ’ত্যা মামলা দিয়ে দেয়। আমাকেও জেলে যেতে হবে এই ভয়ে আবরারের সাথে মিলে সেই দোষ ও স্পন্দনের উপরেই দিয়ে দেই।জেইল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর স্পন্দন তা জেনে যায়।আর তারপরের ঘটনা তো সবারই জানা।

__ছিঃ ভাইয়া ছিঃ। নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য ছেলের জীবন নিয়ে খেলতে তোমার বিবেকে বিন্দুমাত্র দ্বিধা হলো না। মানুষ সন্তানের জন্য কত কিছুই করে।আর তুমি? নিজের ছেলেকেই অপরাধী বানিয়ে দিলে।একটা চরিত্র হীন লম্পটের খেতাব নিয়ে ধুঁকে ধুঁকে বেঁচে থাকার জীবন দিয়ে দিলে?

__আমি তখন টাকা আর ক্ষমতার লোভে অন্ধ হয়েছিলাম।যখন ভুল বুঝতে পেরেছি তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে।স্পন্দনের মনে তখন আমার জন্য ঘৃণা ছাড়া কিছুই নেই।

__এতো কিছু করার পরেও তুমি বলছো তোমার জন্য ভালোবাসা রাখতে। কিভাবে? তুমি পারতে?

__আমাকে ক্ষমা করে দাও তোমরা সবাই। আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি।

__থানায় খবর দে আশরাফ। এবার আর লুকোচুরি না রেখে ওর উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হোক।

__আচ্ছা আম্মা।আমি ফোন করছি।

সবাই সত্যিটা শুনে বিশ্বাস ই করতে পারছেনা।সবাই এখনো ঘোরের মধ্যে আছে।স্পন্দনের জীবনে এতো কিছু হয়ে গেছে।অথচ ওরা জানেই না।দাদিমা বললেন,

__আমাকেও সবাই ক্ষমা করে দিও।সত্যিটা জেনেও চুপ করে থেকে ছেলেকে বাঁচাতে চেয়েছি।স্পন্দনের সঙ্গে জোর করে চন্দ্রের বিয়ে দিয়েছি।তবে ভালোর জন্যই দিয়েছি।কারণ আমি জানতাম যদি কেউ স্পন্দন দাদুভাইকে ভালো রাখতে পারে সেটা চন্দ্র। তোমাদের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি বলে মাপ করে দিও তোমরা।

স্পন্দন পরদিন চন্দ্রকে নিয়ে বাসায় ফিরে এলো। চন্দ্র মানসিক ভাবে ভীষণ আঘাত পেয়েছে।বাড়িতে আসতেই ওর মা স্পন্দনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো,

__আমাকে ক্ষমা করে দে বাবা।এতো কিছু ঘটে গেছে তোর জীবনে আর আমি মা হয়ে কিছুই করতে পারলাম না।

__তোমার কোনো দোষ নেই মা। তুমি কাঁদছো কেনো?যে অপরাধ করেছে তাকে তার পাপের শাস্তি পেতেই হবে মা।

__চন্দ্র মা তুই ঘরে চল।

__আমি থানা থেকে আসছি মা।

চন্দ্র ওর বড় আম্মুর কাছে সব‌ শুনে কেঁদে ফেললো।বললো,

__তোমার এই ছেলেকে অপরাধী ভেবে আমি কত কিছু বলেছি তোমাকে। আমাকে মাপ করে দাও বড় আম্মু।

__তুই তো কিছু ভুল বলিস নি মা। আমরাও তো জানতাম না স্পন্দন যে সত্যি সত্যি তার বাবা আর আবরার চৌধুরীর চক্রান্তের শিকার হয়ে জেল খেটেছে। তুই তারপরও আমার কথা রেখে ওর সাথে থেকে গেছিস।তার জন্যেই আজকে আমি আমার ছেলেকে ফিরে পেয়েছি। আমার সেই হাসি খুশি স্পন্দন।

__বড় আম্মু?

__বল চন্দ্র।

__বড় আব্বুকে মাপ করে দাও।

__আমি তাকে মাপ করার কেউ না চন্দ্র।সে অপরাধ করেছে স্পন্দনের সাথে।স্পন্দন চাইলেই তাকে মাপ করবে।নয়তো না।তবে যে আমার ছেলের জীবন নিয়ে খেলেছে তাকে আমি অন্তত কোনো দিন আগের চোখে দেখতে পারবোনা।

স্পন্দনের সামনে ওর বাবা লকাপে মাথা নিচু করে আছে।স্পন্দন বললো,

__এসব করে কি পেলেন সৈয়দ মির্জা?

__আমাকে ক্ষমা করে দিও স্পন্দন।

স্পন্দন হাসতে হাসতে বললো,

__আমার জীবন থেকে যে দুটি বছর হারিয়ে গেছে তা আপনি ফেরত দিতে পারবেন সৈয়দ মির্জা?

__আমি অনুতপ্ত স্পন্দন।

স্পন্দন আর কিছু না বলে বেরিয়ে এলো। সোজা গিয়ে দাদিমার সামনে চলে গেলো।দাদিমা মাথা নিচু করে আছে।স্পন্দন বললো,

__তুমি সব জানতে দাদিমা?

__তুমি যখন জেল থেকে বেরিয়ে নেশায় ডুবে থাকতে তখন একদিন মির্জা আমার কাছে এসে সব বললো। আমি চাইলেই সেদিন ওকে পুলিশের কাছে দিতে পারতাম। কিন্তু তোমার বাবা আমার বড় ছেলে।তার প্রতি আমার স্নেহ সেদিন আমাকে সব লুকিয়ে যেতে বাধ্য করেছিলো দাদুভাই। কিন্তু আমি চাইনি তোমার জীবন এমন অন্ধকার হয়ে থাকুক।তাই চন্দ্র দিভাই এর সাথে তোমার বিয়ে দেওয়ার কথা বলি তোমার বাবাকে।সে প্রথম মেনে নিতে না চাইলেও আমার কথায় বাধ্য হয়ে রাজি হয়ে যায়।

__আমার আর কারো প্রতি কোনো রকম রাগ অভিমান অভিযোগ নেই। তুমি তোমার ছেলেকে বলে দিও তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি।

__আমাকে ভুল বুঝো না দাদুভাই।

__তোমার জন্য আমি চন্দ্রকে পেয়েছি দাদিমা। চন্দ্র আমাকে যতটা ভালোবাসে এমন করে আর কেউ কখনো ভালোবাসতে পারবেনা।তাই এজন্য তোমার কাছে আমি কৃতজ্ঞ দাদিমা।

#চলবে,,,,,,

হ্যাপি রিডিং।#অন্তর_দহন
#লেখনিতে_আরুহি_অহি

পর্ব___২০

স্পন্দনের সামনে এসে সৈয়দ আশরাফ অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে।স্পন্দন হেসে বললো,

__ছোট আব্বু চন্দ্রকে এ বাড়িতে আমি নিজে নিয়ে আসবো। আপনি চিন্তা করবেন না।তবে আমি কিন্তু চন্দ্রকে শুধু বেড়াতে পাঠাবো। আজীবন থাকার জন্য নয়।

সৈয়দ আশরাফ কেঁদে ফেললেন।স্পন্দন এগিয়ে এসে বললো,

__কি হয়েছে ছোট আব্বু?

__আমাকে ক্ষমা করে দিও স্পন্দন। আমি জানতাম না আমার ভাই তোমার সাথে এতোকিছু করেছে।

__এভাবে বলতে নেই বড় আব্বু। আমি জানি তাতে ওনার কোনো দোষ নেই।হয়তো টাকা আর মান সম্মান ক্ষুন্ন হবে ভেবেই এসব করেছেন।

__কিন্তু তোমার উপর আমিও কম মানসিক চাপ দেইনি স্পন্দন। আমি বারবার তোমার দূর্বল জায়গায় আঘাত করেছি। চন্দ্রকে ফিরিয়ে আনতে চেয়েছি।

__আপনি আঘাত করেছেন আপনার জায়গা থেকে। আপনি চন্দ্রের বাবা।মেয়ের জন্য চিন্তা করাটাই স্বাভাবিক।

__আমার তোমার প্রতি বিশ্বাস রাখার দরকার ছিলো স্পন্দন।

__হবার তো অনেক কিছুই ছিলো ছোট আব্বু। আবার অনেক কিছুই হবার ছিলো না।তাই এসব নিয়ে আর কথা না বাড়ানোই ভালো।

__মনে কিছু রেখো না স্পন্দন।

__আমি কিছুই মনে রাখিনি ছোট আব্বু।

সৈয়দ আশরাফ জড়িয়ে ধরলেন স্পন্দনকে। বললেন,

__আমার চন্দ্র যেমন আমার মেয়ে। তেমন তুমি ও আমার ছেলে স্পন্দন।বাবা মা যেমন সন্তানকে ক্ষমা করে দেয়। তেমন সন্তানদের ও বাবা মায়ের করা ভুলকে ক্ষমা করে দিয়ে বুকে টেনে নিতে হয় স্পন্দন।

__জ্বী ছোট আব্বু। আপনার কথা আমি রাখবো।

স্পন্দন ও বাড়ি থেকে এসে থেকেই দেখছে চন্দ্র মুখ ফুলিয়ে বসে আছে। কথা বলতে গিয়ে ও কোনো লাভ হয়নি। চন্দ্র মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে।উপায় না দেখে স্পন্দন মায়ের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

__চন্দ্র এমন ক্ষেপে আছে কেনো মা?

__সবাই মিলে ছুটিতে গ্রামে যেতে চাইছে।

__তো?

__তাই তোর বউ মুখ ফুলিয়ে বসে আছে।

__কেনো?

__এই শরীর নিয়ে সে গ্রামে যেতে চায়।

__অসম্ভব মা। এখন ওর কোথাও যাওয়া চলবেনা। কয়েক দিন ধরে পড়াশোনা মাথায় উঠিয়ে বসে আছে চন্দ্র।

__আমাকে এসব না বলে নিজের বউকে গিয়ে বল। আমি না করেছি দেখে আমার সাথেও কথা বলছেনা।

__আচ্ছা দেখছি আমি কি করা যায়।

স্পন্দন রুমে এসে চন্দ্রের পাশে বসে বললো,

__কে খবরটা দিলো তোমাকে চন্দ্র?চুপ করে থাকবে না চন্দ্র। উত্তর দিতে বলেছি আমি।

__রোহান ভাইয়া বড় আম্মুর ফোনে ফোন দিয়েছিলো।বলেছে এবারের ছুটিটা সবাই মিলে গ্রামে গিয়ে থাকবে। পিকনিক করবে। মজা করবে সবাই মিলে ওখানে গিয়ে।

__তোমার যে শরীর খারাপ চন্দ্র। সেদিকে কি খেয়াল আছে তোমার?

চন্দ্র চুপ করে আছে দেখে স্পন্দন আবার বললো,

__ওদের সাথে যেতে ইচ্ছে করছে?

চন্দ্র উপর নিচে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললো।

__আচ্ছা তাহলে তুমি যাবে ওদের সাথে। কিন্তু আমি যাবো না। আমার অফিসের কাজে আমাকে ছুটোছুটি করতে হবে। তোমার জন্য তো কয়েক দিন ঠিকমতো কাজ করতেই পারিনি।

__আপনি না গেলে নাই। আমি যাবো।

__আমাকে ছেড়ে থাকতে পারবে?

__সে আর এমন কি বড় ব্যাপার?

__আচ্ছা বেশ যেও তবে।তা কবে যাবে সবাই?

__কাল সকালে।

__আচ্ছা আমি রেহানাকে বলে দিবো ফোন করে। কিন্তু তুমি ঠিক করে বলছো তো তুমি থাকতে পারবে?

__পারবো।

__কান্নাকাটি করবে না তো?বলবে না তো স্পন্দন তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে।এখন ই চলে আসো। তখন কিন্তু তুমি কেঁদে কেঁদে সাগর বানিয়ে ফেললেও আমি তোমার কাছে আসবো না।

__আচ্ছা বলবো না।

স্পন্দন উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো।এই পাগলীকে বুঝিয়ে লাভ নেই।এ যে ঘাড়ত্যাড়া তাতে যেতে চেয়েছে মানে যাবেই।স্পন্দনের বলা কোনো কথাই যে এখন ওর কানে ঢুকছে না তা খুব ভালো করেই বুঝতে পারলো স্পন্দন।

পরদিন সকাল বেলা,,,,,

সবাই হৈ হুল্লোড় করতে করতে গাড়িতে উঠলো। চন্দ্রের দিকে বারবার অসহায় হয়ে তাকাচ্ছে স্পন্দন। চন্দ্রকে একা যেতে দিতে মন কিছুতেই সায় দিচ্ছে না। কিন্তু কিছু করার নেই। চন্দ্রের জেদের কাছে হার মেনে স্পন্দনকে যেতে দিতে হলো চন্দ্রকে।স্পন্দনকে রেখে গাড়ি যত দূরে যাচ্ছে চন্দ্রের নিঃশ্বাস তত ভারী হয়ে আসছে।ওর কেবল মনে হচ্ছে স্পন্দন অনেক দূরে চলে গেছে। চাইলেও আর ছুঁতে পারবে না এখন।সবার সাথে থেকেও নিজেকে কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে চন্দ্রর।

__কি হয়েছে চন্দ্র?এমন ছটফট করছিস কেনো?

__কিছু হয়নি মিতু আপু। গাড়িতে এতো দূরে যাবো তাই একটু অস্বস্তি হচ্ছে।

__স্পন্দন ভাইয়ার জন্য মন কেমন করছে?

চন্দ্র মুখ লুকিয়ে নিলো মিতুর বুকে।তা দেখে মিতু বললো,

__পাগলী মেয়ে একটা।জানিস যখন ওকে ছেড়ে থাকতে পারবি না তখন আসলি কনো?

__তখন তো ভেবেছিলাম তোমরা সবাই আমাকে রেখে কতো মজা করবে। আমি সবকিছু মিস্ করবো।তাই মেনে নিতে পারছিলাম না।উনিও তো আমার কথা ভাবেন নি। আমাকে একা পাঠিয়ে দিয়েছে।

__বাব্বাহ চন্দ্র এতো অভিমান?আগে তো জানতাম না আমার চন্দ্র এতো অভিমান করতে পারে।

__খেপাবে না আপু। আমার মন কেমন করছে।

__এর মানে কি জানিস চন্দ্র?

__কি?

__এটাই হলো ভালোবাসা।এই যে তোর এখন মনে চাইছে স্পন্দন আমার সামনে থাকলে ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরতাম শক্ত করে।কি ঠিক না?

চন্দ্র লজ্জা পেয়ে মুখ নামিয়ে নিলো।বললো,

__জিজুর কাছে থেকে যে জবরদস্ত প্রেমের পিএইচডি করেছো এই কদিনে তা বেশ বুঝতে পারছি আপু।

মিতু চন্দ্রের কথায় কিছু না বলে বললো,

__রেহান? আমাদের আর পৌঁছাতে কত সময় লাগবে?

__আধ ঘন্টা পরে গ্রামের কাঁচা রাস্তায় ঢুকবো আপু।

__তাহলে একটা ভালো রেস্টুরেন্টে গাড়িটা একটু থামা। এভাবে বসে থাকতে থাকতে অস্বস্তি হচ্ছে সবার।

পাঁচ মিনিট পরে রেহান গাড়ি থামিয়ে সবাইকে চা নাস্তা করে নিতে বললো।সবাই হাত মুখ ধুয়ে টেবিলে চা নাস্তা খেতে আরম্ভ করলো। চন্দ্র হঠাৎ বাইরে তাকিয়ে দৃষ্টি থামিয়ে দিলো।সেদিকে দৃষ্টি অনুসরণ করে মিতু বললো,

__ওভাবে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে কি দেখছিস চন্দ্র?

__তোমরা একটু বসো। আমি এখনি আসছি।

মিতু পেছনে থেকে ডাকলেও চন্দ্র না থেমে ছুটে বাইরে বেরিয়ে এলো। এদিকে ওদিকে দৃষ্টি দিয়ে কিছু খুঁজতে লাগলো। এরপর কাঙ্ক্ষিত মানুষের দেখা না পেয়ে হতাশ হয়ে ভেতরে এসে বসতেই মিতু আবার বললো,

__তোর কি হয়েছে রে চন্দ্র? এমন অদ্ভুত বিহ্যাভ করছিস কেনো?মনে হচ্ছে তুই শুধু এখানেই আছিস আর মন পড়ে আছে অন্য কোথাও।

__তেমন কিছু নয় আপু।মনে হলো স্পন্দনকে দেখলাম রেস্টুরেন্টের বাইরে।তাই,,,,

__বুঝেছি।তোর মাথায় বসে স্পন্দন নেত্তো করছে।তাই এমন পাগলামী করছিস।

এই কথা শুনে সবাই হেসে উঠল একসাথে।দিপ্ত বললো,

__যেমন অন্তু ভাবী আমাদের রেহান ভাইয়ের মাথায় উঠে নেত্তো করে। ঠিক তেমনি আজকাল আমাদের
চন্দ্র আপুর মাথায়ও স্পন্দন ভাইয়া নেত্তো করছে।

__দিপ্ত ভালো হবেনা বলছি কিন্তু। ছোট মানুষ হয়ে বড়দের সামনে এসব বলিস লজ্জা করে না?

সিঁথি বললো,

__কে ছোট?দিপ্ত?তোমরা কোন জগতে আছো হে মানব মানবী গনস্?কি জানো ঐ দিপ্ত সম্পর্কে?

__দেখ সিঁথি ভালো হচ্ছে না কিন্তু বলে দিচ্ছি।

__কি করবি তুই আমার দিপ্ত?তোমরা জানো গত সপ্তাহে একটা লাভ লেটার পেয়েছি দিপ্তর। আমার বান্ধবী কে দিয়েছিল।

সবাই হা করে তাকিয়ে আছে সিঁথির দিকে।রেহান বললো,

__ভাই দিপ্ত আমি আজ পর্যন্ত অন্তুকে ভালোবাসি বলতেই পারিনি।আর তুই চিঠি পর্যন্ত পৌঁছে গেছিস?

__ও বানিয়ে বানিয়ে বলছে ভাইয়া। বিশ্বাস করো আমি এমন করিনি।

সিঁথি এবার নিজের ব্যাগ থেকে একটা খাম বের করে দিপ্তর দিকে তাকিয়ে পড়া শুরু করলো,

__ওগো আমার স্বপ্নচারিনী প্রিয়া,
তোমাকে কতো ভালোবাসি জানে আমার হিয়া
যদি তুমি থাকো রাজি এ জীবন রাখবো বাজী।
তুমি যদি আসো কাছে, আমি বলে দিবো ভালোবাসি
তোমার বিরহে অন্তর কাঁদে, কাঁদে আমার চোখ।
তুমি কবে বলবে আমায়,ভালোবাসি শুধু তোমায়

ইতি,
তোমার প্রেমের পাগল দিপ্ত সোনা

চিঠি পড়ার পর সিঁথি আবার সেটা ভাঁজ করে ব্যাগে ঢুকিয়ে সবার দিকে তাকিয়ে দেখে হা হয়ে আছে সকলের মুখ।আর দিপ্তর অবস্থা নাজেহাল।এতোক্ষণে সবাই আকাশ থেকে নেমে এসেছে।দিপ্তর দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভ্রু নাচাতেই দিপ্ত এক দৌড়ে রেস্টুরেন্টের থেকে বের হয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো। মনে মনে শ খানেক গা’লি দিতে লাগলো প্রিয়াকে।মনে মনে ভাবলো,

__এতো সুন্দর করে ছন্দ মিলিয়ে মিলিয়ে কত কষ্ট করে রাত জেগে জেগে একটা চিঠি দিয়েছে।আর ছেমরি সেটা আবার সিঁথি কেই দিয়ে দিলো। আমার মান সম্মান তো গেছে এবার।এরা যে বাহিনী। আমাকে তো ছাড়বেই না বরং উঠতে বসতে কথা শোনাবে। মজা করবে। আমার বেড়ানোর আনন্দটাই মাটি।

#চলবে,,,,,
ভুল ত্রুটি মার্জনীয়।হ্যাপি রিডিং।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here