#অন্ধপ্রেম
Writer : Shabnaj Hossain Moon
Part_41
শীতল অতলে তলিয়ে যাচ্ছে …
ঠিক সেই সময় কেউ ঝাপিয়ে পড়লো পানিতে…
(ছোটবেলায় আমিও দুইবার পানিতে ডুবে গিয়েছিলাম…পানিতে আমারও ভিষন ভয় )
শীতল কে পানি থেকে কোলে তোলে নিয়ে পারে এলো রাজ…
রাজ সবাইকে জোরে একটা ধমক দিলো…
ধমক খেয়ে সবাই চুপ হয়ে গেলো ভয়ে….
.
.
.
রাজ শীতল কে ক্লাবের একটা রুমে নিয়ে গেলো…
সেখানে নিজের কোর্ট আর শার্ট খোলে শীতলের গায়ে জরিয়ে দিলো …
শীতল বেশ পানি খেয়েছিলো ….
শীতলের চোখ দুটো লাল হয়ে গিয়েছে…
ভয়ে আতঙকে শীতল জ্ঞান হাড়িয়েছে…
রাজ শীতল কে কিছুক্ষন জরিয়ে ধরে থাকলো…
_শীতল চোখ খোলো প্লিজজ…তোমার কিছু হলে আমি বাচবোনা যে…
আজকে আমার কারণে তোমার এই অবস্থা…
আমি যদি তোমার সাথে জঘন্য কাজ গুলো না করতাম তাহলে আমাদের এভাবে আলাদা হতোনা …
আর ঐ সজল কুকুরের বাচ্চার সাহস হতোনা তোমাকে এখানে নিয়ে আসার…
এখানে তুমি অপমানিত হতে না এই ভাবে…
শীতলের এখনো জ্ঞান ফিরেনি…
.
.
.
রাজ শীতলের বুকে চাপ দিয়ে পেট থেকে পানি বের করার চেষ্টা করলো…
শীতলের পেটে চাপ দিয়ে পানি বের করতে সক্ষম হলো রাজ…
শীতল হালকা নড়ে উঠলো কেশে কেশে….
রাজ শীতলের মুখে মুখ লাগিয়ে কতক্ষন যাবৎ শ্বাস দেওয়ার চেষ্টা করলো….
রাজ শীতলের বুকে কান পেতে দেখলো শীতলের নিঃশ্বাস স্বাভাবিক না ….
রাজ ভয় পেয়ে যায় বেশ…
রাজ অনেক ক্ষন যাবৎ শীতল কে নিজের নিঃশ্বাসটুকু দিলো ….
শীতলের ঠোট গুলো পুরো লাল হয়ে গিয়েছে…
.
.
.
রাজের চোখে ভয়ে আর রাগে পানি চলে এসেছে….
হঠাৎ শীতলের চোখ নড়ে উঠলো….
রাজের যেনো প্রান ফিরে এলো…
রাজ শীতল কে উঠে বসতে সাহায্য করলো…
শীতলের বিন্দু মাত্র শক্তি নেই বসে থাকার সে রাজের বুকে লুটিয়ে পড়লো….
রাজ শীতল কে জরিয়ে ধরে বললো…
_ভয়ের কিছু নেই আমি তো আছি…..
এখন তুমি ডেন্জার মুক্ত…
শীতলের কথা বলার শক্তিটুকুও নেই…
রাজ শীতলকে কোলে তোলে সবার সামনে দিয়ে কারে বসালো…
ঠিক তখনি সজল রাজকে বাধা দিলো…
রাজের এবার প্রচন্ড রাগ উঠে গেলো….
সে সজলে কয়েকটা লাথি মারলো….
সজল ছিটকে গিয়ে দূরে পরে গেলো….
রাজ শীতল কে বসিয়ে ড্রাইভ করছে…
শীতল নিজের ছিটে বসে আছে বাট রাজকে জরিয়ে ধরে পুরো শরীরের ভর রাজের উপর দিয়ে রেখেছে ।
.
.
.
শীতল বেশ ক্লান্ত তাই সে ঘুমিয়ে পড়েছে….
রাজের চোখে এখনো পানি পড়ছে ….
আর চিক চিক করছে পানি গুলো চোখের….
ছেলেরা সাধারনত কাদেনা বাট কষ্টের সীমা অতিক্রম হলে তারা কাদে….
রাজের রক্ত যেনো টগ বগ করছে….
.
.
.
ক্লাবটা কে যেভাবে হোক বন্ধ করবে সে…
চাদের আলোতে শীতলের মুখটা বেশ মায়াবি হরিণির মতো লাগছে….
যেনো কোনো নিরীহ ছোট হরিণ শাবক রাজের বুকের মাঝে লুকিয়ে আছে…
রাজের ইচ্ছে করছে শীতল কে এভাবেই ধরে রাখতে বুকের মাঝে…
রাজ এক হাত দিয়ে ড্রাইভ করছে আরেক হাত দিয়ে শীতলের পিঠ আর মাথায় হাত বুলাচ্ছে….
প্রচন্ড শীতের মাঝে রাজের গায়ে কিছু নেই কারণ তার কোর্ট শার্ট সব শীতলের গায়ে জরানো…
রাজের কষ্ট হলেও তেমন কষ্ট লাগছেনা….
ভালোবাসার মানুষকে যদি সুখে রাখা যায় তাতে এরকম কোটো কোটো কষ্ট গুলোও পরম শান্তি বয়ে আনে….
এটাই প্রকৃত ভালোবাসা…
ভালোবাসা কখনো নিজের জন্য স্বার্থপর হয়না…
যেমনটা শীতল একসময় রাজের জন্য করেছিলো….
কোটো কোটো অপমানের পরেও শীতল নিঃস্বার্থ ভাবে রাজকে ভালোবেসে গিয়েছে…
তাকে ছেড়ে যায়নি….
তাহলে রাজ কেনো শীতলের মতো অপমান সহ্য করতে পারবেনা….
শীতলের তুলনায় রাজের অপমান কিছুইনা…
.
.
.
রাজ শীতল দের বাড়ির সামনে থামলো…
তারপর শীতলকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো…
শীতল কে কোলে তোলে রাজ সোজা কলিংবেল চাপলো…
ফুলি দরজা খোলে দিয়ে বড় বড় চোখ করে স্টেচু হয়ে দাড়িয়ে থাকলো..
ড্রয়িং রুমে রোদ আর তার বাবা মা বসা থেকে দাড়িয়ে পড়লো রাজের কোলে শীতল কে দেখে…
শীতল দুই হাত দিয়ে রাজের গলা ধরে জরিয়ে আছে রাজের বুকে…
.
.
.
রাজ সোজাসোজি উপড়ে চলে গেলো শীতলের রুমে…
রোদ রেগে রাজের পেছন পেছন যেতে লাগলো…
রাজ শীতল কে বেডে রেখে শীতলের কাপা কাপা ঠোটে হালকা ঠোট ছুয়ালো নিজের….
_আমার ভালোবাসা আমার কাছে খুব শিগ্রি নিয়ে আসবো ইনশা আল্লাহ…
রোদ যেই রুমে ঢুকবে অমনি রাজ রুমের ডোর লক করে দিলো…
সবাই রাজের কান্ড দেখে অবাক হলো আবার ভয়ও পেলো কারণ ভেতরে শুধু রাজ আর শীতল…
রাজ ডেস্ক থেকে শীতলের জন্য নাইট গ্রাউন বের করলো…
তারপর শীতল কে শোয়া অবস্থায় চেন্জ করিয়ে দিলো নিজের হাতে….
রাজ অনেক কষ্টে নিজেকে সামলিয়ে নিলো কারণ শীতল বার বার চেন্জের সময় রাজকে জরিয়ে ধরছিলো…
.
.
.
রাজ শীতলের কপালের চুল গুলো সরিয়ে নিয়ে চুমো দিয়ে শীতল কে ছেড়ে ডোর খুললো…
রোদ রেগে রাজের কলার ধরলো….
_তুই শীতল কে এভাবে আনলি কেনো ???
আর রুম লক করে করলি তুই ???
তোর এতো বড় সাহস আমার বোনের গায়ে হাত দিস…
তোকে তো আমি…
রাজকে আঘাত করতে যাবে ঠিক তখনি রাজ রোদের হাত ফেললো…
_তোর হাত আমি গুড়িয়ে ফেলতে পারি সেটা তুই ভালো করে জানিস…
ছোটবেলায় একবার তোর হাত ভেঙে ফেলেছিলো স্যার ভুল করে তখন আমি স্যারের হাত ভেঙে ফেলেছিলাম….
এই কথা টা মনে আছে তোর নিঃশ্চয়….আমার ওয়াইফের বড় ভাই তুই…
সম্পর্কে আমার বড় হস তুই তাই তোর অপমান সহ্য করি আর করবো…
আরেকটা কথা শোন…
বোনকে যার তার সাথে পাঠাবিনা….
বোনের দ্বায়িত্ব ঠিক ভাবে পালন করবি….
.
.
.
রাজ পেছন দিক দিয়ে শীতল কে দেখে রোদের হাত ছেড়ে দিয়ে বললো…
_ফুলি ওকে গরম সুপ খাওয়াবে ঘুম ভাঙলে…
ওর শরীর খুব দূর্বল…
ওর খেয়াল রেখো যেনো ঠান্ডা না লাগে…
ওর ঠান্ডা লাগলে তোমাকে এই শীতে ঠান্ডা পানিতে চুবাবো ….মাইন্ড ইট…
.
.
.
রাজ নিজের রুমে বসে আছে জানালার দিকে তাকিয়ে….
কারণ শীতলের বেডের জানালা রাজের রুমের জানালার কাছাকাছি…
শীতল কে দেখা যাচ্ছে খুব ভালো করেই…
রাজ কিছু খায়নি কারণ শীতলও কিছু খায়নি…
শীতলের জন্য রাজের টেনশন হচ্ছে…
শীতল খুব দূর্বল হয়ে পড়েছে…
যার কারণে সে ঘুম থেকে উঠছেনা…
শীতল সেই দুপুরে খেয়েছিলো আর এতো ধকলের পর এখনো শীতল কিছু খায়নি…
রাজের ইচ্ছে করছে শীতলের কাছে গিয়ে শীতল কে ঘুম থেকে তোলে কিছু গরম খাবার খাইয়ে দিতে…
কিন্তু তার উপাই নেই রাজের কাছে…
রাজ শীতলের কাছে গেলেই রোদ ঝামেলা করবে…
শীতল কিছু বলতেও পারবেনা আর সহ্য করতে পারবেও না…
শুধু মন খারাপ করে কাদবে…
এই শরীরে শীতলের পক্ষে এসব সহ্য করা কঠিন হবে…
রাজ শীতল কে নিজের জন্য আর কোনো কষ্ট দিতে চায়না…
.
.
.
.
শীতল ঘুম থেকেই বার বার নড়ে উঠছে…
আর গলায় হাত দিচ্ছে…..
রাজ বেশ বুঝতে পাচ্ছে শীতল তৃষনার্ত…
ফুলি টা বেডের পাশে ঘুমুচ্ছে…
রাজ ফুলিকে কয়েকবার ডাকলো ইশারাতে তবুও ফুলি টনক নড়লোনা…
.
.
.
রাজ হঠাৎ ফোন নিয়ে ফুলিকে কল করলো…
ফুলি ঘুম জরানো কন্ঠে বললো…
_দুঃখিত এই মূহুর্তে নেটওয়ার্ক আর ফোন অফ..
রাজ চিৎকার করে বললো…
_জাস্ট সেটআপ ইউ ব্লাডি ফুল গার্ল..
ফুলি ধরফর করে দাড়িয়ে বললো…
_সরি স্যার…
_ব্লাডি ফুল গার্ল শীতলের পানি পিপাসা পেয়েছে পানি খাওয়াও যাও আর গরম সুপটাও ঘুমের মধ্যে খাইয়ে দাও…
.
.
.
ফুলি শীতল কে পানি খাওয়ালো আর শীতলকে কিছু গরম স্যুপ খাওয়ালো…
রাজ আবার ফোন করে বললো…
শীতলের গায়ে মোটা কম্বল দাও আর নজর রাখবে যেনো কম্বল সরে না যায়…
আর ইউ ফুল গার্ল নিজের গায়েও কম্বল দিয়ে ভালো ভাবে ঘুমাবে…
বোঝা গিয়েছে কথা ???
ফুলি ভয়ে বললো…
_জি বোঝা গিয়েছে(অশুদ্ধ ভাষায় আমার এলার্জি আছে..তাই কাজের মেয়ের ভাষাও শুদ্ধ দিলাম )
.
.
.
শীতল ঘুমাচ্ছে আর রাজ জানালার সামনে দাড়িয়ে আছে…
চাদেরঁ আলোতে শীতলের ফেস চিক চিক করছে…
ইচ্ছে থাকলেও রাজ শীতলের কাছে যেতে পাচ্ছেনা…
রাজের চোখে ঘুম নেই…
সে সাররাত শীতল কে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখবে ঠি করেছে…
শীতল খুব দূর্বল তাই কখন কি হয় …এজন্যই রাজ শীতল কে গার্ড দেবে…
রাজ ভাবছে এখন একটা প্ল্যান করতে হবে যাতে শীতল কেনো এমন করছে আর কিসের জন্য বাধ্য হচ্ছে রাজের কাছ থেকে দূরে যেতে চাচ্ছে সেটা যেনো বের হয়ে আসে…
.
.
এভাবে শীতলের কষ্ট আর তার নিজের কষ্ট সহ্য করা যাচ্ছেনা…
রাজের খুব কষ্ট হয় শীতল কে ছাড়া বিছানায় ঘুমাতে…
স্লিপিং পিল খেয়ে ঘুমাতে হয় রাজকে….
এতে যদি ঘুম হয়ে কিছুটা ব্যাথা কমে রাজের….
রাজ এই এক বছর সব সময় শীতলের সাথে ঘুমিয়ে অভস্থ্য…যত যাই করুক রাজ শীতলের সাথে বাট রাজ শীতলের সাথেই ঘুমিয়েছে…..
.
.
.
ভোরের দিকে রাজের চোখ লেগে গিয়েছিলো…
চোখ খোলে রাজ শীতল কে দেখতে পেলোনা…
রাজ ভাবলো শীতল ঘুম থেকে ইঠে ফ্রেস হচ্ছে…
রাজও ফ্রেস হতে গেলো ওয়াস রুমে…
শাওয়ারে দাড়িয়ে রাজ শাওয়ার নিচ্ছে কোমরে তোয়ালে পেচিয়ে…
আর ভাবছে ব্যাটা শ্যালক রোদকে কিভাবে শিক্ষা দেওয়া যায়….
.
.
.
.
রাজ কিছুক্ষন পর মর্নিং ওয়ার্কে গেলো ভার্সিটি এলাকাতে….
(ভার্সিটি প্লেস ময়মনসিংহের সবচেয়ে মনোরম )
রাজ ব্ল্যাক ট্রাইজার ,ফুল হাতার ট্রি শার্ট আর ব্ল্যাক সুজ পড়েছে…
.
.
.
রাজ সেখানে একটা বেন্চে গিয়ে বসতেই শীতল কে দেখতে পেলো…
রাজ শীতলের কাছে যাওয়ার জন্য যেই পা বাড়াবে তখনই রাজ রোদ আর সজল কে দেখতে পেলো…
রাজের প্রচন্ড রাগ হলো…
শীতল কে কখনোই একা পাওয়া যায়না…
সজল আর রোদ পেছনে দাড়িয়ে কথা বলছে আর শীতল সামনে দাড়িয়ে গোলাপ বাগান টা কে দেখছে….
শীতল ও ব্ল্যাক লং স্কার্ট আর চাদর গায়ে এখানে হাটতে এসেছে…
.
.
.
রাজ একটা গাছের পড়ালে দাড়িয়ে শীতল কে লুকিয়ে দেখছে…
_কি দিন এসেছে আমার …
শ্যালকেত জন্য নিজের একমাত্র বউকে লুকিয়ে দেখতে হচ্ছে….
রাজকে হঠাৎ একটা মেয়ে বললো…
স্যার এই ফুল গুলো নিন না..
রাজ তাকিয়ে দেখলো ছোট গোলাপের মতো দেখতে একটা মেয়ে অনেক গুলো গোলাপ হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে….
.
.
.
.
শীতল কে হঠাৎ এই মেয়েটা বললো…
_ম্যাডাম এগুলো আপনার জন্য…
শীতল মেয়েটার দিকে তাকিয়ে ফুল গুলো নিলো…
শীতল পার্স থেকে টাকা বের করতেই মেয়েটা বললো…
_টাকা লাগবেনা…
এগুলো আপনার…
_এগুলো কে আমায় দিয়েছে বাবু বলতো ???
মেয়েটা হাত দিয়ে রাজকে দেখালো…
রাজ পকেটে হাত দিয়ে টেডি হাসি দিচ্ছে….
শীতল দেখলো সজল আর রোদ এই বিষয়টা খেয়াল করলো….
শীতল নিরুপাই হয়ে গোলাো গুলোর দিকে তাকিয়ে থাকলো…
রোদ এসেই গোলাপ গুলো নিচে ফেলে পা দিয়ে মাড়িয়ে ফেললো…
শীতলের চোখ থেকে টপ টপ পানি পড়ছে…
.
.
.
.
রোদের কান্ড দেখে রাজের ইচ্ছে করছে গোলাপ গুলির মতো রোদকেও পা দিয়ে পিষে ফেলতে …তাতে যদি ওর মনের জ্বালা মিটে…
শীতলের জন্য কিছু করতে পাচ্ছেনা রোদকে রাজ…
এটা ভেবে রাজের মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে…
রাজ পা দিয়ে বেন্চে একটা জোরে লাথি দিলো…
.
.
.
শীতল ফূল গুলোর এই অবস্থা দেখে মন খারাপ করে কাদতে কাদতে রাস্তার মাঝখান দিয়ে দৌড়াতে লাগলো…
রাজ দেখলো একটা মিনি বাস শীতলের দিকে এগিয়ে আসছে…
রাজের আত্মায় পানি চলে এসেছে….
রাজ শীতলের নাম ধরে চিৎকার করলো….
শীতল কিছুই শুনছেনা…
তার আশেপাশে কি হচ্ছে তার খেয়াল নেই….
.
.#অন্ধপ্রেম
Writer:Shabnaj Hossain Moon
Part_42
মিনিবাসটা শীতলের কাছে আসতেই রাজ শীতলকে রাস্তার মাঝখান থেকে রাস্তার একপাশে নিয়ে যায়…
শীতল রাজের চোখের দিকে অসহায়ের মতো তাকিয়ে জ্ঞান হাড়ায়…
রাজ শীতলকে নিজের কোলে তোলে নেয় ….
চোখ থেকে টপ টপ করে পানি পড়ছে রাজের…
রোদ হঠাৎ রাজকে বলে শীতলকে বেন্চে শুইয়ে দিতে…
.
.
.
রাজ বাধ্য হয়ে শীতলকে কোল থেকে নামিয়ে দেয়…
রোদ আর সজল শীতলের মাথায় হাত রেখে বার বার ডাকছে…
সজল যখন বার বার ডাকছিলো শীতলকে টাচ করে তখন রাজের খুব মন খারাপ হয় সেই সাথে রাগও হয়…
রাজ নিজের হাত মুঠি করে রাগ কন্ট্রোল করলো নিজের।
সবাই প্রায় শীতলকে দেখছে…
এক সময় শীতলকে দেখার জন্য রাজকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছে লোকজন…
সবাই শীতলের জ্ঞান ফিরানোর চেষ্টা করছে …
সবাই শীতলকে দেখছে বাট রাজ তাকে দেখতে পাচ্ছেনা…
রাজ একটা পানির বোতল এনে দূর থেকে রোদকে বললো শীতলের চোখে মুখে পানি দিতে তারপর ডক্টরের কাছে নিয়ে যেতে….
রোদ পানির বোতলটা নিয়ে দূরে ফেলে দিলো….
রাজ শুধু নিজের রাগ কন্ট্রোল করছে…
ইচ্ছে করছে রোদকে দু টুকরো বানাতে…
কিন্তু শীতলের জন্য করছেনা …
শীতলকে এলবার কষ্ট দিয়ে আজকে এই অবস্থায় রাজ…
এরপর নতুন কোনো ঝামেলা বাধালে শীতলকে চিরতরে হাড়াবে রাজ…
.
.
.
ডক্টর চেম্বারের বাহিরে বসে আছে সজল আর রোদ..
শীতলকে ভেতরে ডক্টর দেখছে….
শীতলের জ্ঞান এখনো ফিরেনি…
ডক্টর রাজকে বললো ….আপনার ওয়াইফের লো প্রেশার…তার উপর মানষিক চাপে আছেন…
এভাবে চললে তো উনি মিনিটে মিনিটে জ্ঞান হাড়াবেন…
পারিবারিক যা সমস্যা আছে তা মিটিয়ে নিন…
রাজ শীতলের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো…
_জি হ্যাঁ খুব তাড়াতাড়ি মিটিয়ে নেবো…
ডক্টর একটা ইনজেজশন পুশ করতে যাবে শীতলকর তখনি রাজ বললো…
_খুব সাবধান …ওর সুচে ভয় আছে….ওর যেনো কষ্ট না হয়..
(আপনারদের লেখিকারও ইনজেকশনে ভিষন ভয়…ধরে বেধেও কোনো ভাবেই ইনজেকশন দেওয়ানো যায়না আমাকে )
.
.
.
ডক্টর আর রাজ চলে এলো বাহিরে….
রাজের পড়নে এপ্রোন ছিল আর মুখে মাস্ক ছিলো তাই কেউ চিনতে পারেনি তাকে…
.
.
.
রাজ জানালার পাশে দাড়িয়ে আছে …
শীতলকে দেখছে…
শীতল স্লিপিং পিল খেয়ে ঘুমাচ্ছে…
রাজের এখন একটাই কাজ মূল সমস্যা বের করা…
কি হয়েছে শীতলের আর সে কেনো এমন করছে তা বের করতে হবে রাজের….
.
.
.
.
রাজের ময়মনসিংহে একটা বিজনেসের ব্রান্চ আছে…
রাজ অফিসে গেলো…
সেখানে গিয়েই পড়লো আরেক ঝামেলায়…
রাজের এক্সপোর্টের মধ্যে কি যেনো ঝামেলা হয়েছে…
পুরো 10 কোটি লস হয়েছে…
রাজ ক্ষতিয়ে দেখলো এগুলো শীতলের বাবার কান্ড…
রাজ বাকা হাসি দিলো…
_শশুর মশাই তো দেখছি ধনে মারতে চায় আমাকে…
শ্যালক মারছে প্রাণে…বউ মারছে মনে…
পুরো পরিবার আমাকে ধনে প্রানে মনে মারতে চায়….
বাহ বেশ ভালো…
এতো কিছু করছে আমার জন্য এরা….
আমার একটা ভুলের জন্য এতো বড় শাস্তি দিচ্ছে উপরওয়ালা….
.
.
.
ছোট থেকে আমি কোনো জিনিস সহজে পায়নি…আদায় করে নিতে হয়েছে আমাকে…
শীতলের বেলায় তা বাদ যাবে কেনো…
শীতলকেও সহজ ভাবে পাওয়া যাবেনা…..
.
.
.
রাজ চেয়ারে বসে টেবিলের উপর পা রেখে চোখ বন্ধ করে রিলেক্স করছে…
কিভাবে সে শশুর আর শ্যালক কে উচিৎ শিক্ষা দেওয়া যায়…
রাজ হঠাৎ ফোন বের করলো আর ফুলিকে কল দিলো…
ফুলি জানালো শীতল সবার সাথে বসে খাচ্ছে…
রাজ কিছুটা শান্তি পেলো…
ফোন রাখতেই ফোনের স্ক্রিনে শীতলের ছবিটা ভেসে উঠলো ….
হলুদ শাড়িতে কি সুন্দর খোলা চুলে মুক্তোর মতো ঝল ঝল করে হাসছে….
রাজ শীতলের ছবিটাতে চুমো দিয়ে নিজের বুকের মাঝে জরিয়ে ধরলো….
_আহহ কি শান্তি….
শীতলের নামেও তো শান্তি আছে…
.
.
.
দুই দিন হয়ে গেলো রাজ শীতলকে দেখতে পেলোনা…
শীতলকে দেখলে রাজের কষ্ট হবে এটা ভেবে শীতল রাজের সামনে আর আসেনা…
রুম থেকে বের হয়না …
জানালাও খোলেনা…
ফুলি হঠাৎ শীতলের কানে ফোন ধরলো…
শীতল যেই ফোন সরাতে চাইলো তখনি রাজের কনঠ ভেসে আসলো…
_প্লিজজজ বউ ফোন রেখোনা প্লিজজজজ…
আমার একটা কথা শোনো…
আমি কিছু খেতে পাচ্ছিনা…
তোমার হাতের রান্না করা খাবার তোমার হাতে খেতে মন চাচ্ছে আমার….
তুমি রান্না করে লুকিয়ে ছাদে নিয়ে এসো প্লিজজজজ…
আমার খুব ক্ষিধে লেগেছে…
শীতলের প্রান যেনো ধক করে উঠলো…
এখনো রাজ না খেয়ে আছে…
শীতলও কিছুই খেতে পারেনা …শুধু খাওয়ার ভান করে…লুকিয়ে খাবার ফেলে দেয়…
_দেখুন আমি পারবোনা…
আপনি হোটেল থেকে আনিয়ে খেয়ে নিন…
_এতো দিন তো রেস্ট্রোরেন্টের আনা খাবার খেয়েছি অল্প সল্প…
তুমি তো জানো আমি বাহিরের খাবার খেতে পারিনা….
আমার পেটে সমস্যা হয়…
আমার গ্যাস বেড়েছে শীতল…
প্লিজজজ কিছু করো…
আমি না খেয়ে মরে যাচ্ছি তো…
শীতল চুপচাপ চোখের পানি ফেলছে….
রাজ বললো…
_আমি ওয়েট করছি…ফুলি ম্যাডামের সাহায্যে তুমি রান্না করো…
তারপর নিয়ে এসো আমার কাছে…
দুজনে একসাথে খাবো…
তুমি যতক্ষন খাবার নিয়ে না আসবর ততক্ষন আমি এক ফোটা পানিও খাবোনা…
.
.
.
শীতল কিছু বলার আগেই রাজ ফোন কেটে দিলো…
শীতলের রাজের জন্য কষ্ট লাগলেও করার কিছু নেই …
সে কিভাবে রান্না করবে তাও আবার রাজের জন্য…
শীতল বিকালে বসে আছে না খেয়ে… বার বার লুকিয়ে রাজকে দেখার চেষ্টা করছে সে…
ফুলি কয়েকবার বলেছে রাজ ছাদে শুকনো মুখে দাড়িয়ে আছে…
শীতলের কিছু করার নেই…
শীতল লুকিয়ে জানালার পর্দা সরালো অমনি রাজকে দেখতে পেলো…
রাজ সবে শাওয়ার করে শুধু টাওয়াল পড়ে বের হয়ে এসেছে জানালার পাশে…
শীতলকে দেখেই রাজ টেডি হাসি দিয়ে একটা ফ্লায়িং চুমো দিলো…
শীতল লজ্জা পেয়ে ওখান থেকে সরে গেলো…
রাজ হালকা জোরে বললো…
_এক ঘন্টার মধ্যে খাবার না আসলে আমি সরাসরি শশুর বাড়ি চলে আসবো খেতে…
শীতলের চোখ গুলো বড় বড় হয়ে গেলো…
শীতল দৌরে গেলো কিচেনেএ..
দুটো রান্নার মহিলা রান্না করছিলো…
শীতল তাদের জোর করে রান্না ঘর থেকে বের করে দিলো…
শীতল নিজের হাতে রান্না করছে….
ফুলি মাঝে মাঝে সময় বাচানোর জন্য ওটা এটা এগিয়ে দিচ্ছে….
রোদ আর তার বাবা মা ভেবেছে শীতল স্বাভাবিক হচ্ছে তাই রান্না করছে…
তারা ভাবছে রাজকে হয়তো ভুলে যাচ্ছে শীতল….
.
.
.
কিচেন থেকে এলাচির গন্ধ পেলো রাজ…
শীতল কলিজা ভোনা করছে…
কাচা মরিচ দিয়েছে বেশ…রাজ ঝাল ঝাল কলিজা ভোনা খেতে পছন্দ করে…
সেই সাথে রাজের ফেবারিট ডালের ভরা বানালো শীতল….
তারপর পেয়াজ কেটে ভিনেগার দিয়ে পেয়াজের সালাদ বানালো শীতল…
রাজের এই খাবাে গুলো ফেবারিট…
শীতল তাড়াতাড়ি করে এই কয়েকটা পদ তৈরি করলো রাজের জন্য….
রান্নার সুভাসে সারা বাড়িতে মৌ মৌ করছে…
সন্ধ্যার পর শীতল লুকিয়ে ছাদে গেলো…
ফুলি সিরিতে বসে পাহারার কাজে আছে…
.
.
.
শীতল ছাদে যেতেই রাজ এগিয়ে এলো…
রাজ ছাদের পাশে একটা মোম জ্বালালো…
শীতল রাজের দিকে না তাকিয়ে খাবার সার্ভ করছে…
রাজ মুচকি মুচকি হাসছে…
রাজ খাবার দেখে খুশি হলো….
রাজের পিরাপিরিতে শীতল রাজকে খাইয়ে দিচ্ছে…
রাজ এমন ভাবে খাচ্ছে যেনো অনেক দিন যাবৎ না খেয়ে আছে সে…
রাজ চেটে পুটে শীতলের হাতও খেয়ে ফেলছে….
রাজ খাওয়ার সময় শীতলকেও নিজের হাতে খাইয়ে দিলো জোর করে…
শীতলও বেশ খেলো….
রাজ বললো…
_তুমি ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করবে…
তোমার চেহেরার কি হচ্ছে দেখেছো…
খবরদার আজকের পর থেকে খাবার ফেলবেনা লুকিয়ে….
তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবেনা…
শীতল রাজের দিকে জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকালো…
রাজ জানলো কিভাবে সে যে এই কান্ড করে…
.
.
.
রাজ দুটো আঙুল দিয়ে ইশারা দিয়ে বললো…
_Watching you Darling wife
আমার নজর তোমার উপর থাকে সব সময়….
(আপনাদের লেখিকাও শীতলের মতো লুকিয়ে খাবার ফেলে দেয়…বাবা মা ভাইদের হাতে খেতে খেতে ভালো লাগেনা…রাজের মতো কেউ তো নেই আমার মতো যে আমাকে জোর করে খাওয়াবে…না খেতে খেতে আজ আমি অসুস্থ)
.
.
.
খাওয়ার পর্ব শেষ হতেই শীতল চলে যেতে নিলে রাজ বললো…
_আরো কিছু খেতে মন চাচ্ছে ডার্লিং…
_সব খাবার তো খাইয়ে দিলাম …
আর কি বাকি আছে…
রাজ ঠোটে হাত দিয়ে বললো….
মিষ্টি খেতে ইচ্ছে করছে আমার….
_কখনোই না…চললাম আমি…
শীতল পা বাড়াতেই রাজ শীতলকে কোলে তোলে নিলো…
তারপর রাজ শীতলের গালে গাল ঘষলো….
শীতলের নিঁশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে…
রাজ শীতলের ঠোটের কাছে যেতেই ফুলি চলে এলো….
সে জানালো শীতলকে সবাই খুজছেঁ..
রাজ রেগে বললো…
_তুমি আর আসার সময় পেলেনা…
একটা ইমপোর্ট্যান্ট কাজ করছিলাম…..
শীতল কোল থেকে নেমে রাজকে বললো তাকে যেতে দিতে তা না হলে অনেক ঝামেলা হবে….
.
.
.
একদিন রাতে রাজ ড্রাইভ করছে…
হঠাৎ একটা মেয়ে এসে তার গাড়ির সামনে পড়লো….
মেয়েটা বললো তাকে আজকের রাতটুকু আশ্রয় দিতে কারণ কিছু ঘুন্ডা তার পেছনে পড়েছে…
রাজ প্রথমে না করলেও পরে রাজি হলো…
অসহায় একটা মেয়েকে একা ফেলে যাওয়ার কোনো মানে হয়না…
রাজ মেয়েটাকে নিয়ে বাসায় গেলো….
রাজ মেয়েটাকে একটা রুম দেখিয়ে দিলো…..
বাসাটা পুরো অন্ধকার ছিলো….
রাজ শার্টের হাতা ফোল্ড করে জানলার কাছে গেলো শীতলকে দেখতে বাট জানার পর্দা দেওয়া ছিলো…
এটা শীতলের কাজ…
রাজের ইচ্ছে করছে শীতলকে গিয়ে কতক্ষন কামড়াতে যাতে করে ওর শিক্ষা হয়…
.
.
.
রাজ লাইট অন করতেই মেয়েটাকে দেখতে পেলো…
মেয়েটা শীতলের একটা শাড়ি পড়ে আছে….
রাজের ভেজায় রাগ উঠলো…
সে পাশে থাকা পানি খেলো…
পানিটা খেতেই রাজের মাথা ঘুরছে…
সে সামনে শীতলকে দেখতে পেলো…
শীতল রাজকে ধাক্কা দিয়ে বেডে ফেলে দিলো…
তারপর রাজের শার্ট খুলে ফেললো….
রাজের জ্ঞান নেই….
.
.
.
সকালে রোদ শীতলকে একটা সার্প্রাইজ দেওয়ার জন্য শীতলের চোখ কাপড় দিয়ে বেধেঁ ফেললো…..
শীতল বললো…
_ভাইয়া কোথায় নিয়ে যাচ্ছো ???
প্লিজজজ বলো….??
_একটা জিনিস দেখাতে…
দেখলে তুই সত্যিটা বুঝতে পারবি….
শীতলকে রাজ একটা রুমে নিয়ে গেলো….
শীতলেত চোখের কাপড় খুলে দিয়ে রোদ বললো…
_এই হলো তোর উপহার…
ভাইয়ের তরফ থেকে একটা সত্যি উপহার…..
দেখে নে বোন ভালো করে….
শীতল বুকে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে…..
.
.
.
.
চলবে……..
.
.
চলবে……