#অন্যরকম তুই💘
#পর্বঃ১০
#লেখিকাঃDoraemon
আজ অহনা ভীষণ খুশি কারণ আজ থেকে অহনা কলেজে কোনোদিনও তার দানব স্যারের মুখ দেখবে না। তাই অহনা আজ অন্যান্য দিনের তুলনায় একটু বেশী হাসিখুশি। কলেজে গিয়ে সব ক্লাসই অহনা মনোযোগ দিয়ে করল। কিন্তুু আজ চতুর্থ ক্লাসে অনন্তের জায়গায় অন্য স্যারকে দেখে অহনা হঠাৎই চমকে উঠল। তারপর অহনার মনে পড়ল অহনা নিজে অনন্তকে কলেজ ছাড়া করেছে। অহনা মনে মনে বলল
–আজ থেকে আমাকে ক্লাসে কেউ আর অপমান করবে না। যে অপমান করত তাকে তো আমি বিদায় করে দিয়েছি৷ কিন্তুু তবুও কেন মনে হয় কি যেন নেই! কি নেই! সবাই তো আছে। তাহলে ক্লাসটা এত ফাঁকা ফাঁকা লাগছে কেন! ধ্যাত আমি এসব কি ভাবছি! পড়ায় মনোযোগী হই।
অহনা সব ক্লাস করার পর কলেজ থেকে যখন বের হবে তখন হঠাৎই অহনা অনন্তকে গেটের সামনে দেখে চমকে যায়। অনন্ত গেটের সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। বাইরে একটা বিশাল বড় প্রাইভেট কার দেখা যাচ্ছে যা অহনা এর আগে কখনো দেখে নি। অহনার আর বুঝতে বাকি রইল না যে এটা অনন্তের গাড়ি৷ আর অনেক মেয়েরা অনন্তের সাথে কথা বলতে চাইছে কিন্তুু অনন্ত কারও সাথেই কোনো কথা বলছে না। তাই মেয়েরা মন খারাপ করে চলে যাচ্ছে। অনন্তকে দেখে অহনার ভয়ে হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। কিন্তুু আজ অনন্তকে অন্যান্য দিনের তুলনায় দেখতে খুব সুন্দর লাগছে। অহনা অনন্তের দিকে একটু তাকিয়ে মুখ গুড়িয়ে অনন্তের সামনে দিয়ে চলে যেতে নিলে অনন্ত অহনার হাত পেছন থেকে শক্ত করে চেপে ধরে। অহনা ভয় পেয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখে অনন্ত তার হাতটা ধরে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অহনা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
— আ আ আমার হাত ধরেছেন কেন স্যার? আমার হা হাতটা ছেড়ে দিন৷
–ছাড়ার জন্য তো আমি তোর হাত ধরিনি অহনা! তুই বলিছিলি আমি চাকরিটা ছেড়ে দিলে তুই আমাকে ভালোবাসবি। আর এখন তুই আমায় দেখেও না দেখার ভান ধরে চলে যাচ্ছিস কেন? তুই না আমাকে ভালোবাসিস অহনা?
–ভালোবাসব বলেছিলাম কিন্তুু ভালোবাসি সেটা তো আমি আপনাকে বলি নি স্যার। আমি আমার মত পালটে ফেলেছি। আমি আপনাকে ভালোবাসব না৷ আর হ্যা আপনি আপনার চাকরি নিজের ইচ্ছায় ছেড়েছেন আমি কিন্তুু আপনাকে জোর করি নি৷
অহনার কথা শুনে অনন্ত একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল
–আমি জানতাম তুই এটাই বলবি। আমাকে তুই ভালোবাসিস না। কিন্তুু অহনা তুই যদি ভেবে থাকিস কলেজ থেকে আমাকে বিদায় করে দিলে তুই আমার থেকে মুক্তি পাবি তাহলে তুই বড্ড ভুল ভেবে ফেলেছিস।আমি চাইলেই কলেজে আবার ফিরে আসতে পারি কিন্তুু আমি সেটা করব না। তুই তোর ওয়াদা না রাখতে পারলেও আমি আমার ওয়াদা ঠিকই রাখব। আর আজ তুই ভালো করে শুনে রাখ, আমার শেষ নিস্বাস অবধি আমি তোকে ছাড়ব না। তুই আমার কাছ থেকে যতই পালাবার চেষ্টা কর না কেন, কোনো লাভ নেই। তোকে আমি খুব ভালোবেসে ফেলেছি অহনা।
তারপর অনন্ত অহনাকে একটান দিয়ে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে অনন্ত অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
— তাই আমি তোকে ভুলেও ছাড়ছি না। যতই তুই আকাশে উড়াউড়ি কর না কেন লাটাই তো আমার হাতেই। যখন একটান দিব তখন এভাবেই তুই আমার কাছে হুমড়ি খেয়ে পড়বি।
অনন্তের কথা শুনে অহনা ভীষণ রেগে যায়। অহনা অনন্তের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–আপনি কি বাংলা কথা বুঝেন না?! আমি যে আপনাকে ভালোবাসি না তা কি আপনার কানে যায় না? আপনাকে আমি কোনোদিনও ক্ষমা করব না। আপনার দেওয়া অপমানগুলো আমার সারাজীবন মনে থাকবে। আর হ্যা আমি তো সুন্দরী মেয়ে না আর আমি গরীব ঘরের অতি সাধারণ একটা মেয়ে। তাহলে আমাকে আপনি এত ভালোবাসেন তা আমি কি করে বিশ্বাস করব? আমাকেও এটা বিশ্বাস করতে হবে! আপনি সামান্য একটা চাকরি ছেড়েছেন যা শুধু আপনার কাছে শখের বস্তুু ছিল৷ আপনার কাছে তো টাকা পয়সার অভাব নেই৷ তাই আপনার এতে বিন্দু মাত্র ক্ষতি হবে না৷ আপনার মতো একজন বড়লোক সুদর্শন পুরুষ আমার থেকে হাজার গুণ বেশি সুন্দরী মেয়েকে নিজের জীবন সাথী হিসেবে পাবেন। তাই আমার পেছনে পড়ে না থেকে দয়া করে আমাকে মুক্তি দিন। আপনার টাইম পাস করার খেলনা আমি হতে চাই না।
এ কথাগুলো বলে অহনা চলে যেতে নিলে অনন্ত আবারও অহনার হাত ধরে টান দিয়ে অহনার কোমড় পেছিয়ে ধরে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে অনন্ত অহনাকে বলল
–ভালোবাসতে কোনো কারণ লাগে না। তোর কাছে তুই নিজেকে অসুন্দর ভাবতে পারিস কিন্তুু আমার কাছে তুই পৃথিবীর সেরা সুন্দরী। তুই নিজেকে গরীব বলে তুচ্ছ মনে করতে পারিস কিন্তুু আমার কাছে তুই আমার মনের রাণী যে কখনো গরীব হতে পারে না। যেদিন তোকে আমি কলেজে প্রথম দেখেছিলাম সেদিনই তোর প্রতি আমার অনুভূতি জন্মে কিন্তুু আমার অনুভূতিটা এতটাই ভয়ংকর হয়ে গিয়েছিল যে আমি তোকে নিজের অজান্তেই অনেক কস্ট দিয়ে ফেলেছিলাম। কিন্তুু তুই বিশ্বাস কর অহনা আমি আর কোনোদিনও তোকে কখনো কস্ট দিব না। আমাকে কি একটাবার সুযোগ দেওয়া যায় না?
কথাগুলো বলতে গিয়ে অনন্তের দুচোখ জলে ভিজে গেছে। তাই অহনা অনন্তের জন্য একটু খারাপ লাগলেও মুহুর্তেই অহনার আবার সেই খালি পায়ে কান ধরে ২০ বার কলেজ চক্কর দেওয়ার কথা মনে পড়ে যায় যা অনন্ত অহনাকে ভয়ানকভাবে দিয়েছিল৷ অহনার মনে পড়ে যায় স্টিলের স্কেল দিয়ে হাতে সেই ভয়ংকর আঘাতের কথা। অহনার মনে পড়ে যায় কান ধরে ক্লাসের বাইরে ৫০ বার ওঠবস করার কথা যা অনন্ত অহনাকে ভয়ানকভাবে শাস্তি দিয়েছিল এবং তা দেখে ক্লাসের সবাই হাসাহাসি করেছিল। এসব মনে পড়তেই অহনা অনন্তকে খুব জোরে ধাক্কা দিয়ে নিজের কাছ থেকে সড়িয়ে দেয়। যার ফলে অনন্ত কিছুটা হলেও পিছিয়ে যায়।
অহনা খুব রাগী গলায় কাঁদতে কাঁদতে অনন্তকে বলল
–এসব মিস্টি কথা অন্য কাউকে বলবেন কিন্তুু আমাকে না। আমি আপনার এসব মিস্টি কথায় কোনোদিনও ভুলব না। আমি আপনাকে কোনোদিনও ক্ষমা করব না৷ কোনোদিনও না।
এ কথাগুলো বলেই অহনা দৌড়ে সেখান থেকে চলে যায়। অহনার কথা শুনে অনন্তের চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়তে লাগল। অনন্ত মাটিতে বসে পড়ে নিঃশব্দে কাঁদতে লাগল। অনন্ত মনে মনে বলতে লাগল
–আমারই দোষ আমি আমার অহনাকে এত কস্ট দিয়েছি! অহনা কি করেই বা আমাকে ক্ষমা করবে। আমি যে আমার অহনার মনে খুব আঘাত দিয়ে ফেলেছি৷
অনন্ত আর অহনার কান্ড এতক্ষণ রাস্তার মানুষজন ও কলেজের শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীরা দেখছিলেন। কিন্তুু এতে কারোর কোনো হুঁশ ছিল না। অনন্তকে সবাই চেনে ও ভয় পায়। তাই এতক্ষণ অহনার হাত ধরা ও অহনার সাথে মিশে কথা বলাতে কেউ কিছু বলে নি। এদিকে অহনা রাস্তায় হাঁটছে আর চোখের জল ফেলছে। অহনা চোখের জল মুছছে আবার মুহূর্তেই চোখে জল চলে আসছে। অহনা মনে মনে বলতে লাগল
–উফ আমি এত কাঁদছি কেন! এত কিসের কস্ট আমার! আমি কার জন্যই বা কাঁদছি! আমি কাঁদব না৷ আমি কিছুতেই কাঁদব না৷ কিন্তুু বেহায়া মনটা কেন যে মানতে চাইছে না। কিছুতেই বুঝতে পারছি না। চোখের জলগুলোও আজ উড়ে এসে আমার চোখে ধরা দিচ্ছে।
।
।
।
#চলবে….