অন্যরকম তুই পর্ব ১১

#অন্যরকম তুই💘
#পর্বঃ১১
#লেখিকাঃDoraemon
অহনা বাসায় এসে দৌড়ে গিয়ে নিজের বেডরুমে গিয়ে ভিতর থেকে দরজা লাগিয়ে দেয়। অহনার কান্ড দেখে অহনার মা চমকে উঠলেও কিছু বলল না।কারণ অহনার মা জানে যখন অহনার মন খারাপ হয় তখনই অহনা এমন হুটহাট দরজা লাগিয়ে বসে থাকে। এতে নাকি অহনার মন ভালো হয়ে যায়। তাই অহনার মা আর কিছু বলল না। অহনা দরজাটা লাগিয়েই থপ করে মাটিতে বসে পড়ে এবং দরজার গায়ে হেলান দিয়ে হাটু গুটিশুটি করে নিঃশব্দে কান্না করতে থাকে। অহনা মনে মনে বলতে লাগল
–আমার হঠাৎ কি হলো! এত কান্না কেন আসছে আমার! বুকের ভিতর এত কস্টই বা কেন হচ্ছে! বুকের ভিতর এত ধুকপুকানিই বা কেন হচ্ছে! আমি মনে হয় এত ভাবতে ভাবতে পাগল হয়ে মরেই যাবো। আজকে অনন্ত স্যারকে দেখে আমার মনের ভিতর এতো উথাল-পাথাল কেন হচ্ছিল? কেন উনার চোখের জল দেখে আমার সহ্য হচ্ছিল না? কে হয় উনি আমার? কেউই তো হয় না। তাহলে উনাকে কস্ট দিতে গিয়ে কেন এখন আমি নিজে কস্ট পাচ্ছি?! শুনেছিলাম উনিও নাকি আমাকে কস্ট দিয়ে নিজেকে কস্ট দিতেন। এটা কি ধরনের অনুভূতি! অন্যকে কস্ট দিয়ে নিজে কস্ট পাওয়া! আমি তো এটাই জানি না আমার মন আসলে চায় টা কি! আমি ধীরে ধীরে এমন পাল্টে যাচ্ছি কেন! আমি তো আগে এমন ছিলাম না! তাহলে কেন অদ্ভুত অনুভুতি আমাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে! আমি এসব অনুভূতির থেকে মুক্তি পেতে চাই৷ এই অনুভূতিগুলো যে ভীষণ যন্ত্রণার।
অহনা এগুলো মনে মনে ভাবতেই চোখে অঝোর ধারায় জল গড়িয়ে পড়তে লাগল৷ আজ অহনাকে বড্ড অগোছালো লাগছে৷ খুব এলোমেলো লাগছে অহনাকে। এমন অদ্ভুত অনুভুতির শিকার হলে যে নিজের অজান্তেই মনটা এলোমেলো হয়ে যায়। অহনার মনটাও আজ সেরকম লাগছে।
ঐদিকে অনন্ত ফুল স্পিডে গাড়ি চালাচ্ছে আর একটার পর একটা সিগারেট ধরিয়ে অনবরত খাচ্ছে। অনন্ত কোনোদিনও সিগারেট খায় নি৷ কিন্তুু আজ সিগারেটের নেশাটাও অনন্তের মনে তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। সিগারেট খেলে নাকি কস্ট কমে যায় অনেকের ধারণা তাই অনন্ত আজ সিগারেটে আগুন ধরিয়ে সিগারেট খাচ্ছে। আর সাথে সাথেই অনন্তের বুকের ভিতরের আগুন আরো দ্বিগুণ জ্বলে উঠছে। নিজেকে নিজেই পুড়িয়ে অনন্ত এক অদ্ভুত আনন্দ পাচ্ছে। ভালোবাসার আগুনের থেকে সিগারেটের আগুন আজ অনন্তের কাছে তুচ্ছ মনে হচ্ছে। শরীরের জ্বালার থেকে আজ অনন্তের মনের জ্বালাটাই বেশী হচ্ছে। অনন্তের বুকের ভিতর আজ ভীষণ শূন্যতা অনুভব হচ্ছে। অহনার ভালোবাসা পাওয়ায় জন্য অনন্ত যত দিন যাচ্ছে ততই উতলা হয়ে পড়ছে৷ অনন্ত মনে মনে বলতে লাগল
–কতদিন তুই আমাকে এভাবে অবহেলা করবি অহনা! আমিও দেখব তুই কতদিন আমার থেকে দূরে পালিয়ে থাকিস। আমার মনে যে ভালোবাসার আগুন তুই ধরিয়েছিস সেটা কখনো নিভবে না। তুই পৃথিবীর সব সাগর ভর্তি পানি আমার মনে ঢেলে দিলেও আমার মনের ভিতর থেকে তোর প্রতি ভালোবাসার আগুন একটুও কমবে না। আজ সিগারেটের আগুনটাও আমার মনের ভালোবাসার আগুনটাকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে৷ অনন্ত কারও অবহেলা পছন্দ করে না। তোর অবহেলা তো নই। আমি যে তোর ভালোবাসা পাওয়ার জন্য পথ চেয়ে বসে আছি অহনা। কবে তুই আমাকে বুঝবি অহনা! কবে আমাকে তুই ক্ষমা করে দিবি!
দুপুর থেকে রাত ঘনিয়ে এলো। অহনা আগের মতো আর ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করে না। আগের থেকেও কেমন নিরব হয়ে গেছে৷ তাই অহনার মা তার মেয়ের জন্য বেশ চিন্তিত থাকেন। সকাল থেকে রাত ঘনিয়ে এলো। অহনা জানালার একপাশে দাড়িয়ে আকাশের চাঁদ তারার অপরূপ দৃশ্য দেখছে। অহনা নিজের অজান্তেই সারাদিন অনন্তের কথাই ভাবতে থাকে। অনন্তকে নিজের মন থেকে সরানোর হাজার চেস্টা করলেও অহনা কিছুতেই অনন্তকে মন থেকে সরাতে পারছে না। এমনকি পড়াশোনাতেও অহনার মন বসে না। অনন্তের কথা, অনন্তের অনুভূতি, অনন্তের স্পর্শ সবকিছুই অহনার কাছে বেশ রহস্যময় লাগে এবং সারাদিন অনন্তের কথা ভাবতে থাকে। তার সাথে অহনার মনে বয়ে যায় এক অনুভূতি যা অহনার মনকে সবসময় বিচলিত করে। নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে অহনার চোখে আবারও জল গড়িয়ে পড়ে। অহনা মনে মনে বলতে লাগল
–জীবনে এমন এক অনুভূতির সম্মুখীন হতে হলো যা আমাকে প্রতিনিয়ত উতলা করে তোলে। অনুভূতি জিনিসটা না বড্ড খারাপ। একবার মনে আসলে কিছুতেই যেতে চায় না। হাজার চেস্টা করলেও যেতে চায় না। কিন্তুু কিসের অনুভূতি এটা? সেটাই তো বুঝতে পারলাম না!
অনন্ত বাড়িতে ফিরে নিজের বেডরুমের বিছানার একপাশে হেলান দিয়ে বসে হাতে পেনসিল আর খাতা নিয়ে একটা ছবি মন দিয়ে আঁকতে থাকে যে ছবিটা দেখলেই অনন্তের মনে শান্তি চলে আসে৷ ছবিটা অনন্ত আঁকা শেষ করলে অনন্ত ছবিটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নিজের অজান্তেই হেসে ফেলল। অনন্ত নিজে নিজেই বলতে লাগল
–আমার মনের রাণীটাকে আমি নিজের হাতে আঁকলাম। কিন্তুু ছবিটাতে অহনাকে এত কিউট লাগছে না। আমার অহনার ছবি তো আমি আমার হৃদয়ের মাঝে এঁকে রেখেছি যে ছবিটাতে আমার বোকা কিউট অহনাকে খুব সুন্দর লাগে। কেন যে তুই আমার ভালোবাসাটা বুঝিস না অহনা!
অনন্ত নিজে নিজে হাসতে হাসতেই আবার নিজের অজান্তেই কপালে হাত দিয়ে নিঃশব্দে কাঁদতে লাগল।
অনন্ত মনে মনে বলতে লাগল
–ভালোবাসা না বড়ই অদ্ভুত অহনা। কখনো আমাদের হাসায় আবার কখনো আমাদের কাঁদায়। কিন্তুু এই হাসি আর কান্নার মধ্যেও এক অদ্ভুত অনুভূতি লুকিয়ে থাকে।



#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here