অন্যরকম প্রেমকাহিনী পর্ব -১২+১৩

#অন্যরকম_প্রেমকাহিনী
#পর্ব_১২
#অধির_রায়

কেটে গেল একটি মাস৷ সময় এবং স্রোত কারোর জন্য অপেক্ষা করে না৷ সাদাফ অনেক খুঁজাখুঁজির পর একটা বাসার সন্ধান পেল৷ বাহির থেকে দেখতে তেমন ভালো নয়৷ ভিতরে সবকিছু গুছানো৷ বাসাটা অনেকটা পুরানো৷ দানে কম মানে ভালো৷ সাদাফের একাউন্ট ঘাটাঘাটি করে চল্লিশ হাজারের মতো টাকা পাওয়া গেল৷ নিজের সাধ্যের মধ্যে একটা বিছানা কিনল৷ ঘর সাজানোর কিছু আসবাবপত্র। রান্নার সামগ্রী। বাংলাদেশের দ্রব্য মূল্যের বাজার দেখলে মাথা ঘুরতে থাকে৷ প্রতিটি সামগ্রীর দাম আকাশ ছোঁয়া৷ দৈনন্দিন ব্যবহারের কিছু জিনিস কিনতেই ত্রিশ হাজারের মতো চলে গেল৷

ছোঁয়ার বাবার সামনে মাথা নিচু করে বসে আছে সাদাফ৷ অন্য পাশে সাদফের কাকাই কথা বলছে৷ পরিবারের কর্তা বলতে এখন সাদাফের কাকাই সব৷ বিয়ের কথা ঠিকঠাক হয়ে গেল৷ আগামী রবিবার বিয়ের দিন ধার্য করা হলো৷ সাদাফের সাথে একান্ত কথা বলার জন্য ছোঁয়ার বাবা সাদাফকে ছাঁদে নিয়ে যান৷ ছোঁয়ার বাবার চায়ের কাপে চুমু দিয়ে আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ করলেন৷ ভারী গলায় বলল,

“সাদাফ জীবনে অনেক ঝড় আসবে৷ কখন অন্যায়ের কাছে মাথা নত করবে না৷ তোমার জব নেই৷ আশা করি খুব তাড়াতাড়ি ভালো জব খুঁজে নিবে৷ সংসারে অভাব আসবে৷ তখন চারদিক অন্ধকার নেমে আসবে৷ এক মুঠো খাবারের জন্য অন্যায়ের দিকে হাত বাড়াতে ইচ্ছা করবে৷ আমি চাইনা তুমি অন্যায় কাজ করে ছোঁয়ার মুখে খাবার তুলে দাও৷ দরকার পড়লে না খেয়ে থাকবে৷ দিনটাকে রোজা মনে গণ্য করবে৷ আর হ্যাঁ ভুলের নামাজ পড়া বন্ধ করবে না৷ আল্লাহ ছাড়া আমরা একা৷ আল্লাহ সাথে আছেই বলেই আমরা একা নয়৷”

সাদাফ যতই ছোঁয়ার বাবাকে দেখছে ততই উনার প্রতি সম্মান বেড়ে যাচ্ছে৷ বারং বার মনে পড়ছে বেকারের হাতে উনার মেয়েকে কেন তুলে দিচ্ছেন৷ মনের সংশয় দূর করার জন্য বলল,

“স্যার আমার কিছু জানার ছিল৷ আপনি প্রশ্নও ধরে নিতে পারেন৷ আপনার কাছে আমার আকুল আবেদন, আপনি বিষয়টা বুঝতে পারবেন৷”

ছোঁয়ার বাবা হাসিমুখে জবাব দিলেন,

“সাদাফ তোমার মনে যা আছে নির্ভয়ে বলতে পারো৷ আমি চাইনা তুমি কোন কিছু আমার কাছ থেকে লুকিয়ে যাও৷ কোন কিছু লুকিয়ে যাওয়া মানে হেরে যাওয়ার দলে নাম লেখানো৷ জীবনটা যুদ্ধ ক্ষেত্র৷ হারজিত থাকবেই৷ হারের দিকে মন না দিয়ে সামনের দিকে মন দিবে। হুম তোমার প্রশ্ন বলো?”

সাদাফ নিজের হবু শ্বশুরের মনোভাব দেখে খুবই প্রশংসনীয়। সাদাফ দ্বিধা দ্বন্দ্ব কাটিয়ে বলল,

“ছোঁয়া অনেক স্মাট, বুদ্ধিমতী মেয়ে৷ রুপ কোন অংশে কম নয়৷ আমার মতো বেকার ছেলের হাতে তুলে দিতে আপনার ঠায় দিল৷ ছোঁয়ার ভালোবাসার জন্য বাধ্য হয়ে এমন করেননি তো৷”

ছোঁয়ার বাবা চায়ের কাপ টি টেবিলে রাখল৷ সাদাফের কাঁধে হাত রেখে বলল,

“ঠিক বলছো ভালোবাসার জন্যই বাঁধ্য হয়ে আমি এই বিয়ে দিচ্ছি৷ কোন মা বাবাই চাইনা বেকার ছেলের হাতে তার মেয়েকে তুলে দিতে৷ সে দিক থেকে আমিও ভিন্ন কেউ নয়৷”

“ছোঁয়াকে বুঝিয়ে বললে ঠিক বুঝতে পারত৷ তাহলে কেন আপনারা ছোঁয়াকে বুঝিয়ে বললেন না৷ আমি তো বার বার ছোঁয়াকে ফিরিয়ে দিয়েছি৷”

“আমি ভেবে রেখেছিলাম ছোঁয়ার বিয়ে ছোঁয়ার খালাতো ভাইয়ের সাথে দিব৷ বিয়ের পর ছোঁয়া বিদেশে পাড়ি জমাবে৷ ছোঁয়ার সুখের অভাব থাকবে না৷ সুখ কি টাকাতেই বিদ্যমান৷ যদি টাকা দিয়েই সব হতো আমি তোমার কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যেতাম না৷”

“স্যার আপনার কথা ঠিকভাবে বুঝতে পারলাম না৷ একটু বুঝিয়ে বলবেন দয়া করে৷”

“আমি চাই আমার মেয়ে ভালো থাকুক৷ তোমার সাথে এক বেলা না খেয়েও ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে ভালো থাকবে৷ অন্য কারো সাথে ছোঁয়া ভালো থাকবে না৷ জোর করে তাকে বিয়ে দিলাম৷ বছর খানেক ছোঁয়া তোমার স্মৃতি নিয়েই থাকবে৷ তারপর ধীরে ধীরে তোমার ভালোবাসা ভুলে যাবে৷ ভুলে গেলেও গভীর ঘন রাতে তোমার কথায় মনে পড়বে৷ তোমার হাতে তুলে দেওয়ার অন্য একটা কারণ আছে৷”

সাদাফ বিষ্ময় চোখে তাকায় ছোঁয়ার বাবার দিকে৷ কাঁধে হাত রাখায় একটু অস্বস্থি ফীল করছে সাদাফ৷ আগেই বুঝতে পেরেছিল কোন কারণ ছাড়া এই লোক কাজ করেন না৷ চকিত কন্ঠে বলল,

“বিয়ের পিছনে অনেক কারণ আছে মানে?”

“ভালোবাসার জন্য তুমি সবকিছু করতে পারো৷ তুমি তোমার ভালোবাসা বাঁচানোর জন্য অনেক কিছু করেছো৷ আজ তোমার বিষয়ে সবকিছু জানি৷ আমার মেয়েকে তোমার মতো কেউ ভালোবাসতে পারবে না৷ আর তুমি ভালোবাসার জন্য একদিন সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে যাবে৷ আমি চাই তুমি শূন্য থেকে সবকিছু শুরু করো৷ এখন তোমার নতুন বাসায় গিয়ে মন দিয়ে কথাগুলো ভাবো৷”

“সাদাফের বাসায় আড্ডার মেলা বসেছে৷ বন্ধু মহল ছুটে এসেছে সাদাফের ফ্ল্যাডে৷ আরাফ গিটারে টুংটাং শব্দ তুলে যাচ্ছে৷ অর্পি দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল,

“আমার যদি বিয়ে হতো আমারও এই রকম একটা সংসার হতো৷ হতে হতে আমার বিয়ে হলো না৷”

আরাফ ভেংচি কেটে বলল,

“তোর মতো গা*ধীকে বিয়ে করবে কে? তুই যে বিয়ের স্বপ্ন দেখিস আগে বলিস নাই তো৷ আগে বললে আমাদের বাসার দারোয়ানের সাথে তোর বিয়ে দিতাম৷ ছেলেটা খুব হ্যান্ডাম৷ এক চোখ ত্যারা৷ তোকে ত্যারা চোখে দেখত৷ তোর জামাই হতো ত্যারা৷”

আরাফের কথায় সবাই হু হা করে হেঁসে উঠল৷ অর্পি মুখ গোমড়া করে বলল,

“কু*ত্তা তোর বউ দেখতে শাঁকচুন্নি হবে৷ তোর ঘাড়ে বসে তোর ঘাড় মটকাবে৷ আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করেন৷ আমিন আমিন৷”

আরাফ অর্পির মাথায় গা*ড্ডা মে’রে বলল,

“শকুনের দোয়া কোন কাজে আসবে না৷ তোর দোয়া বিফলে যাবে৷ আমার বউ হবে অপরুপা সুন্দরী।”

মেঘা মুখ ফুটিয়ে বলল,

“মানুষ কতো কথা বলে রে।তুই হাফিয়ে যাস না৷ তোর বস্তা প*চা গল্প কে শুনতে চাই? তোর কথা কেমন জানি তিত করলার মতো লাগে৷ জন্মের পর মধু খাসনি৷”

আরাফ দৃঢ ভাব নিয়ে বলল,

“আমার মা, বাবার কাছে মধু কেনার টাকা ছিল না৷ বিয়ের পর বউয়ের কাছ থেকে মধু খাব৷”

অর্পি বিরক্তি স্বরে বলল,

“ছি! ছি! তুই সত্যি একটা অ*স*ভ্য লোক। এসব বলতে তোর মুখে বা’জে না৷ তুই সব সময় লো ভাষা উইস করিস৷ নিজেকে একটু ভালো কর। রঙ্গনের কাছ থেকে কিছু শিখ৷”

রঙ্গন ব্রো নাচিয়ে বলল,

“তোদের বস্তা প*চা গল্পে আমাকে টানবি না৷ আমি তোদের গল্পে থাকতে চাইনা৷”

মেঘা রঙ্গনকে ধাক্কা দিয়ে বিছানা থেকে নামিয়ে দিল৷ কর্কশ গলায় বলল,

“তোকে আমাদের মাঝে থাকতে হবে না৷ তুই মাটিতে বসে থাক৷ তাহলে তোকে আমাদের মাঝে নিব না৷”

অর্পি গালে হাত দিয়ে অসহায় কন্ঠে বলল,

“আমার বরটা যদি সাদাফের মতো হতো৷ দেখ সাদাফ কতো সুন্দর করে রান্না করছে৷ ছোঁয়ার কপালটা খুব ভালো৷ সাদাফের মতো একটা জীবন সঙ্গী পাবে৷ যে ছোঁয়াকে নিজ হাতে রেঁধে খাওয়াবে৷ এমন একটা বর পেলে আমার জীবন ধন্য হয়ে যাবে।”

আরাফ আফসোস করে বলল,

“তোর মতো একটা বউ পেলে পি*টি*য়ে পি*টি*য়ে রান্না করাতাম৷ আহ্লাদ বের করে দিতাম।”

মেঘা হাত তুলে দুইজনকে থামিয়ে বলল,

“থাম থাম পাঠকদের বিয়ের দাওয়াত দিল না সাদাফ ছোঁয়া। সাদাফ ছোঁয়া দাওয়াত না দিলে পাঠকরা আমাদের তো উচিত তাদের দাওয়াত দেওয়ার৷”

সাদাফ রান্না ঘরে থেকে আসতে আসতে বলল,

“তোদের কে বলছে? তোদের মতো রা’ক্ষ’সে’র চেয়ে পাঠকরা অনেক ভালো৷ সকল পাঠকদের সাদাফ ছোঁয়ার বিয়ের দাওয়াত রইল৷ সময় মতো বিয়ের কার্ড পেয়ে যাবেন৷ বিয়েতে গিফট হিসেবে নিয়ে আসবেন দোয়া এবং ভালোবাসা৷ আপনাদের দোয়াই আমরা যেন সারাজীবন এক সাথে কাটিয়ে দিতে পারি৷”

চলবে……#অন্যরকম_প্রেমকাহিনী
#পর্ব_১৩
#অধির_রায়

দেখতে দেখতে বিয়ের দিন চলে অগ্রসর হতে থাকে৷ আজ সাদাফ ছোঁয়ার গায়ে হলুদ। বিয়ের সমস্ত কাজ ছোঁয়ার বাড়িতে হবে৷ বিয়ের এক সপ্তাহ পর সাদাফ ছোঁয়াকে যেখানে ইচ্ছা নিয়ে যেতে পারবে৷ ছোঁয়া মুখ গোমড়া করে বসে আছে৷ কিছুতেই গায়ে হলুদ মাখাতে দিচ্ছে৷ ছোঁয়ার এক জবাব সাদাফ এসে তার গায়ে আগে হলুদ লাগাবে৷ তারপর অন্য কিছু৷ এ নিয়ে বিয়ে বাড়িতে হরেক রকমের কানাকানি। ছোটখাটো ঝড় বয়ে গেল বিয়ে বাড়িতে৷ বাঙালি মানেই তিল থেকে তাল করবে৷ সাদাফ বাধ্য হয়ে ভীড় ঢেলে ছোঁয়ার গায়ে হলুদ লাগিয়ে দিল৷ পাশের বাসার এক কাকিমা ভেংচি কেটে হেন করার জন্য বলল,

“আজকাল ছেলেরা নিজেদের কি মনে করে? প্রেম ছাড়া বিয়ে হয়না৷ বিয়ে করার কোন দরকার ছিল৷ বিয়ের আগেই তো সব শেষ করে ফেলেছে৷”

কথাটা সাদাফের কানে পৌঁছাল৷ ইচ্ছা করছে মহিলাকে কষিয়ে কয়েক গাঁ বসিয়ে দিতে৷ মেঘা এসে সাদাফকে আটকায়৷ মেঘা সাদাফকে টেনে অন্য দিকে নিয়ে যায়৷ অর্পি মহিলার কথার জবাব দিল,

“আন্টি আপনার রুমটা কতো টাকায় ভাড়া দিছিলেন৷ সবাইকে বলেন আপনি প্রেম প্রেমিকার জন্য স্পেশাল রুম ভাড়া দেন৷ আমাকে একটা রুম ভাড়া দিয়েন বয়ফ্রেন্ডের সাথে এক রাত কাটাব৷”

আন্টি অর্পির কথায় রেগে যান৷ ক্ষোভ নিয়ে ভারী গলায় বলল,

“অ*স*ভ্য মেয়ে আমি রুম ভাড়া দিয়ে খাই৷ আমাকে দেখে তোর ওসব মহিলা মনে হয়৷”

অর্পি শয়তানি হাসি দিয়ে বলল,

“সাদাফ ছোঁয়াকে দেখে আপনার বা’জে ছেলে মেয়ে মনে হয়৷ আপনার স্বামীর মতো সবাই বাজে না৷ আপনার স্বামী এখনও যে মেয়েদের পিছনে ঘুরে বেড়ায় তার প্রমান আছে৷ ভালোই ভালোই এখান থেকে চলে যান৷ একটু বাড়াবাড়ি করলে ওই যে বড় পর্দায় আপনার আদরের স্বামীর কুকীর্তি দেখানো যাবে৷”

ভদ্র মহিলাটি অর্পির চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করতে করতে বিয়ে বাড়ি থেকে প্রস্থান করেন৷ মেতে উঠল হলুদের অনুষ্ঠান। অনেকে অনেক রকমের ডান্স করছে৷ ছোঁয়া কিছুই করতে পারছে না৷ আরাফ মেয়েদের সাথে তাল মিলিয়ে নেচে যাচ্ছে৷ তার বন্ধুর অভাব নেই৷ যেখানে যায় সেখানেই কাউকে না কাউকে পটিয়ে ফেলে৷ বন্ধ মহল আরাফের উপাধি দিয়েছে কন্যা রাশি৷

অর্পি সাদাফ আর ছোঁয়ার হাত ধরে নিয়ে আসে৷ রঙ্গনকে উদ্দেশ্য করে বলল,

“মামা গান বাজা৷ আমরা সবাই এক সাথে নাচবো৷ যাকে বলে খিচুড়ি নাচ৷ এখানে কেউ কোন লজ্জা পাবে না৷”

আরাফ অর্পির কথা বুঝার চেষ্টা করছে৷ কতো নাচের নাম শুনেছে খিচুড়ি নাচের নাম এই প্রথম শুনল। অধীর আগ্রহে গালে হাত দিয়ে বসে পড়ল খিচুড়ি নাচ দেখার জন্য। রঙ্গন গান প্লে করতেই অর্পি, মেঘা, ছোঁয়া উল্টাপাল্টা নাচা শুরু করল৷ আরাফের চোখ আকাশ প্রানে৷ উল্টাপাল্টা নাচকে খিচুড়ি নাচ দিয়েছে৷ রঙ্গন সাদাফকে নিয়ে আসে৷ সাদাফও গানের তালে নাচ শুরু করল৷ বন্ধু মহল শয়তানি করে ছোঁয়াকে ধাক্কা দিয়ে সাদাফের দিকে এগিয়ে দিচ্ছে৷ সাদাফকে ছোঁয়ার দিকে৷ ভালোই ভালোই কেটে গেল গায়ে হলুদের দিনটা৷ বিয়ে বাড়িতে লোকজন ভর্তি৷ বাড়ির ছাঁদে বসে গল্প দেওয়ার মতোও জায়গা নেই৷ বাধ্য হয়ে ছাঁদ থেকে সবাইকে টেনে টুনে নামিয়ে দেওয়া হলো৷ ছয় জোড়া বন্ধু জায়গা করে নিল। সাদাফের কাঁধে ছোঁয়া মাথা পেতে বসল৷

অর্পি চোখ বড় করে বলল,

“ছোঁয়া তুই কামড়া ভালা করলি না৷ তুই সবার আগে বিয়ে করে নিলি৷ আমরা এখনও সিঙ্গেল রয়ে গেলাম৷ আমাদের মনে আগুন লাগানোর জন্য তুই সাদাফের কাঁধে মাথা রাখলি কেন?”

আরাফ আফসোসের সাথে বলল,

“কি আর বলব? ভেবেছিলাম সাদাফের বউয়ের সাথে দু*ষ্টা*মী করব৷ কিন্তু সাদাফ বিয়ে করল কাকে? আমাদের ফ্রেন্ড ছোঁয়াকে৷ পৃথিবীতে কি আর মানুষ ছিল না৷”

মেঘা মুখ গোমড়া করে বলল,

“আমারও কতো স্বপ্ন ছিল দুলাভাইয়ের সাথে মা’রা’মা’রি করব৷ মরিচের গুঁড়ো করে শরবত খাওয়াব৷ এখন আমার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল৷ সাদাফের বাচ্চা আমার স্বপ্নকে গলা টিপে মেরে ফেলল৷ তোর জন্যই আমার স্বপ্ন পূরণ হলো না৷”

অর্পি আগ বাড়িয়ে বলল,

“আরে দোস্ত মন খারাপ করিস না৷ কালকের দিনের জন্য ভুলে যাব সাদাফ আমাদের বন্ধু৷ তাকে আমি করলার রস খাওয়াব৷ আমার সাথে একদিনও ভালো ভাবে কথা বলেনি৷”

ছোঁয়া মিহি কন্ঠে বলল,

“এমন ভুল কেউ করবি না৷ কোন কিছুই সাদাফকে খাওয়াতে পারবি না৷”

রঙ্গন মুচকি হেঁসে বলল,

“মায়া দেখে স্বর্গে যেতে ইচ্ছা করছে৷ তোদের পৃথিবীতে থাকতে ইচ্ছা করছে না৷ হে সৃষ্টি কর্তা আমাকে তুলে নাও৷ বিয়ে না হতেই সাদাফের প্রতি ভালোবাসা উপচে পড়ছে৷ কিছুদিন পর আমাদের ভুলে যাব৷”

আরাফ সিগারেট বের করে বলল,

“এসব ভাবনা পরে ভাবা যাবে৷ কাল তোরা দুইজন আমাদের বেইয়ান৷ তাদের জন্য আমরা আমাদের শখ জলে ভাসিয়ে দিতে পারব না৷ সাদাফকে ইচ্ছমতো করলার রস খাওয়াবি৷ সত্যিই তো৷ মুখ থেকে মিষ্টি কথা বের হয়নি তবুও প্রেম করে বিয়ে করছে৷ আমাদের দিকে মেয়েরা ফিরেও তাকায় না৷”

তাদের কথার মাঝে কোথা থেকে হাজির হলো নীতি৷ নীতি ছাঁদে এসেই চিৎকার করেই সাদাফকে ডাকতে থাকে৷ ছয় ছোড়া চোখ নীতির দিকে৷ নীতি দৌড়ে এসে সাদাফকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরল৷ কান্না করতে করতে বলল,

“পারব না তোমাকে ছাড়া থাকতে৷ আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। তুমি এই বিয়ে কিছুতেই করতে পারবে না৷”

নীতি এমন সময় কোথা থেকে আসল কে বুঝতে পারছে না? নীতি কিভাবে জানতে পারল কাল সাদাফের বিয়ে। সবাই আকাশ পাতাল ভেবে যাচ্ছে৷ ছোঁয়ার দূরে দাঁড়িয়ে চোখের জল ফেলে যাচ্ছে৷ সাদাফ নীতিকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিল৷ নীতির গালে ক’ষি’য়ে থা’প্প’ড় বসিয়ে দেয়৷ হুংকার দিয়ে বলল,

“আমাকে জড়িয়ে ধরার সাহস তোকে কে দিয়েছে? তোকে এই বাড়িতে ঢুকতে দিল কে? তুই এখানকার ঠিকানা কোথা থেকে পেলি৷”

সাদাফ সমস্ত রাগ নিয়ে নীতির গালে কষিয়ে থা’প্প’ড় বসায়৷ ফর্সা গাল নিমিষেই লাল রক্ত বর্ণের ন্যায় ধারণা করে৷ নীতি সাদাফের পা ধরে বলল,

“প্লিজ সাদাফ আমাকে ক্ষমা করে দাও৷ আমি কিছুতেই তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারব না৷”

সাদাফ রাগের মাথায় নীতিকে লা’থি দিয়ে সরিয়ে দেয়৷ চিৎকার করে বলল,

“তোর কাছে আমি এভাবে আকুতি মিনতি করেছি৷ তুই আমার ভালোবাসার দাম দেস নি৷ তুই সেদিন বলেছিলি আমার মতো বেকার ছেলেকে কেউ বিয়ে করবে না৷ আমি তোকে নিজের জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসতাম৷ নীতি বলতে সাদাফ পাগল ছিল৷ তুই সেদিন আমাকে গ্রামের লোকজনের হাতে তুলে দিয়েছি৷ করিম হাওলাদের হুকুমে আমার কতটা অত্যচার করেছিল মনে নেই৷ আমি তোর পায়ে ধরে আমার ভালোবাসার ভিক্ষা চাইছিলাম৷ তুই এখান থেকে চলে না গেলে তোকে আমি খু’ন করব৷”

ভেজা গলায় বলল,

“আমাকে যা শাস্তি দাও আমি মাথা পেতে নিব৷ আমি বাবার ভয়ে বিয়ে করতে রাজি হয়েছিলাম৷ আমি বিয়ে না করলে তোমাকে বাবা মেরে ফেলত৷ আমি তোমাকে চোখে চোখে রাখতাম৷ আজ যখন জানতে পারলাম তুমি বিয়ে করছো নিজেকে ঠিক আটকিয়ে রাখতে পারলাম না৷ আমি সবকিছু ছেড়ে তোমার কাছে ফিরে এসেছি৷”

সাদাফ আরাফের দিকে গরম চোখে তাকিয়ে বলল,

“আরাফ একে চলে যেতে বল। আমি নিজেকে অনেক কষ্টে স্বাভাবিক করেছি৷ নীতি আর এক মিনিট দেরি করলে আমি ছাঁদ থেকে ফেলে দিব৷”

অর্পি রাগী গলায় বলল,

“তোর সাহস খুব বেড়ে গেছে৷ তুই ছোঁয়া সাদাফের বিয়ে ভাঙতে আসছিস৷ আমি থাকতে তুই এদের আলাদা করতে পারবি না৷ ভালোবাসার মানুষ আলাদা হয়ে সে মানসিক ভাবে মরে যায়৷ তোর জন্য সাদাফ মারা গেছে৷ তুই যদি কিছু করতে চাস আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না৷”

মেঘাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

“মেঘা তুই আর আমি এর জন্য ঠিক আছি৷ হাতটা ধর টানতে টানতে রাস্তায় নিয়ে যাব৷”

মেঘাকে বলতে দেরি হয়েছে মেঘা নীতির হাত ধরতে দেরি হয়নি৷ মেঘা নীতির হাত ধরতেই নীতি মেঘাকে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়৷ আরাফ অর্পির মাথায় রক্ত উঠে যায়৷ আরাফ মা*র*তে গেলে রঙ্গন আটকায়৷ অর্পি ইচ্ছামতো থাপ্পড় দিতে থাকে৷ বিয়ে বাড়িতে উপস্থিত সবাই ছাঁদে চলে আসে৷ মেঘা, অর্পি নীতিকে টানতে টানতে নিচে নামায়৷ ছোঁয়ার বাবা পুলিশকে ফোন করে৷ অবশেষে নীতির জায়গা হয় জেলখানায়।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here