অপেক্ষারা পর্ব -০১

“এই যে শুনুন! আমাকে বিয়ে যে করলেন, এবার তো আপনাকে জেলে যেতে হবে?” – বাসর ঘরে ঢুকেই সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীর মুখে কথাটা শুনে হকচকিয়ে গেল সায়েম।

“জেলে যেতে হবে মানে?”

নাজ সহজ গলায় বলল, “মানে হলো আমার বয়স সতেরো বছর এগারো মাস। বাংলাদেশের দন্ডবিধি অনুযায়ী আঠারো বছরের আগে একটা মেয়েকে বিয়ে করা বা বিয়ে দেওয়া দুটোই শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সেই হিসাবে আপনি এবং আপনার মা, দুজনেই কাল সকালে জেলে যাচ্ছেন।”

সায়েম বিস্ময়ে খাবি খেয়ে বলল, “আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। তাছাড়া তুমি কে? আমার বিয়ে তো…”
“অন্য একটা মেয়ের সঙ্গে হবার কথা ছিল তাই তো?”
সায়েম হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়ল।

“আর বলবেন না! আমি তো এসেছিলাম আপনার বিয়েতে কাচ্চি খাওয়ার লোভে। শুনেছিলাম আপনার বিয়েতে না-কি হানিফ বাবুর্চি নিজের হাতে কাচ্চি রান্না করবে। প্রথম ব্যাচে খেতে বসবো, তখনই আপনার মা খপ করে আমাকে ধরে নিয়ে গেলেন। পরে শুনলাম, যে মেয়েটার সঙ্গে আপনার বিয়ে হবার কথা ছিল সে না-কি ভেগে গেছে।”

“ভেগে গেছে মানে?”

“ভেগে গেছে মানে পালিয়ে গেছে, তাও আবার বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে! এর পরের ঘটনা শুনুন। আপনার মা নাকের পানি চোখের পানি এক করে আমাকে বললেন, মা গো তুমিই এখন আমাদের একমাত্র ভরসা। আমাদের মান সম্মান সব তোমার হাতে। তুমি যদি এখন আমার ছেলেকে বিয়ে করতে রাজি না হও তাহলে আমি বিষ খাবো। কেমনটা লাগে বলুন তো! একে তো আমি মানুষের কান্না সহ্য করতে পারি না তার ওপরে আবার বিষ খাওয়ার থ্রেট! বাধ্য হয়ে রাজি হতেই হলো।”

সায়েমের চোখমুখ ইতোমধ্যেই অগ্নিবর্ণ ধারণ করছে। ঝড়ের গতিতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল সে। কনার বলেছিল মানুষটা না-কি প্রচন্ড রাগী। সেই রাগের বহিঃপ্রকাশের সাক্ষী যে এত তাড়াতাড়ি হবে, সেটা অবশ্য জানা ছিল না।

কনা হলো নাজের বান্ধবী। বান্ধবীর ভাইয়ের বিয়েতে এসেই পাকেচক্রে নিজেকে বসতে হলো বিয়ের পিঁড়িতে। নাজের বাবা চলে গেছেন মাস ছয়েক হলো, তাই একমাত্র মেয়ের একটা গতি হবার আশায় তার মাও এই আকস্মিক বিয়েতে খুব একটা আপত্তি করেননি।
বাইরে থেকে খুব চেঁচামেচির আওয়াজ আসছে। লোকটা বোধ হয় একটু বেশিই খেপে গেছে। আহারে! এখন তো নিজের থেকে বেশি ওই মানুষটার জন্যেই খারাপ লাগছে নাজের।আশায় আশায় বসে ছিল অসম্ভব সুন্দরী একটা মেয়ের সঙ্গে তার বিয়ে হচ্ছে। আর সেখানে বিয়ে কিনা হয়ে গেল নাজের মতো একটা বাচ্চা মেয়ের সঙ্গে! নাজ উঠে গিয়ে দরজায় কান রাখলো।

সায়েম হুংকার দিয়ে বলল, “এত বড়ো একটা ঘটনা ঘটে গেল, আর আমি কিছুই জানলাম না?”

সায়েমের মা হাসনা বেগম অসহায় গলায় বললেন, “তোকে আগেভাগে জানালে তুই রাগ করতি, তাই…”

“তোমার কি মনে হয় এখন আমি খুব খুশি হয়েছি। এই তোমাদের পছন্দ না? কত বড়ো বড়ো কথা শুনেছিলাম। মেয়ে না-কি হীরার টুকরা, লাখে একটা! হীরার টুকরা মেয়ে বিয়ের রাতে পালিয়ে যায় কী করে?”

“বাবা তুই একটু শান্ত হ!”

“শান্ত হতে পারছি না মা। আর এটা কী করলে তোমরা? বাচ্চা একটা মেয়ে বিয়ের গেস্ট হয়ে এসেছে, তাকেই ধরে বিয়ে দিয়ে দিলে?”

এবার সায়েমের বাবার গলায় স্বর শোনা গেল। তিনি শান্ত গলায় বললেন, “তো কী হয়েছে? আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যেই তো করেন।”

সায়েম ধমকের সুরে বলল, “বাবা তুমি চুপ করো তো। আমি মায়ের কাছ থেকে শুনতে চাই।”

নাজ দরজার কাছ থেকে সরে এলো। এত কষ্ট করে মানুষের ঝগড়া শোনার কোনো মানে হয় না। এই ঘরটার সঙ্গে একটা বারান্দা রয়েছে। বারান্দাটা তেমন বড়ো নয়, তবুও বহুকষ্টে দুটো বেতের সোফা ঢোকানো হয়েছে। নাজ গিয়ে একটা সোফায় বসে পড়লো।

রাত তেমন হয়নি। সবে দশটা বাজে। তবুও চারিদিকে শুনশান নীরবতা। অবশ্য ঢাকায় দশটা তেমন রাত না হলেও ময়মনসিংহে গভীর রাত। নাজের সারাটা জীবনই কেটেছে এই ময়মনসিংহে। ছোটবেলায় খেলতে গিয়ে উঠানে পা পিছলে পড়ে যাওয়া, প্রথবার স্কুলে যাওয়া, স্কুল থেকে বিদায় নেওয়া, বাবার চলে যাওয়া – কতশত স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই শহরটাতে। ভাগ্য এখন তাকে কোথায় নিয়ে যায় কে জানে? আচ্ছা, তাকে কি এখন সায়েম নামের ওই মানুষটার সঙ্গে ঢাকায় গিয়ে থাকতে হবে?

কনার মুখে শুনেছে সায়েম ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেই ঢাকায় চলে গেছে। সেখানেই তার উচ্চশিক্ষা, সেখানেই চাকরি। ময়মনসিংহে আসতে তার একেবারেই ভালো লাগে না। তাই তো কনার সঙ্গে দুই বছরের বন্ধুত্বে কখনো দেখা হয়নি তার ভাইয়ের সঙ্গে।

দরজার আওয়জা পেয়ে নড়েচড়ে বসলো নাজ। সায়েম বারান্দায় এসে নিঃশব্দে বসে পড়লো তার পাশের সোফাটায়।

সহজ গলায় বলল, “আই এম সরি।”

কী অদ্ভুত ব্যাপার! একটু আগেই মানুষটা কী ভয়ানক রেগে ছিল, অথচ এখন তার গলায় রাগের লেশমাত্র নেই।

নাজ অবাক গলায় বলল, “আপনি সরি বলছেন কেন?”

“তোমাকে এমন একটা পরিস্থিতে ফেলার জন্য। আমি বুঝতে পারছি আমার মায়ের জোরাজুরিতেই বিয়েটা করতে বাধ্য হয়েছ তুমি।”

নাজ চুপ করে রইলো।

“এবার তুমি যা বলবে তা-ই হবে।”

“আমি আবার কী বলবো।”

“না মানে, তুমি তো বিয়েটার জন্যে প্রস্তুত ছিলে না। তাই তুমি চাইলে দ্রুতই আমি ডিভোর্সের ব্যবস্থা করতে পারি।”

নাজ ভ্রু কুঁচকে বলল, “আপনার কী আমাকে দেখে গাধা মনে হয়?”

সায়েম অপ্রস্তুত গলায় বলল, “না, গাধা মনে হবে কেন?”

“একে তো পাকেচক্রে এই বিয়েটা করে ফেঁসে গেছি, তার ওপরে আপনি আবার ডিভোর্স দিয়ে আরেকদফা ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন?”

“মানে?”

“এখন যদি আপনার সঙ্গে আমার ডিভোর্স হয় তাহলে আমার মাথার ওপরে ডিভোর্সির ট্যাগ বসে যাবে না? পরবর্তীতে কেউ আমাকে বিয়ে করতে চাইবে? শেষমেশ আপনার আর আপনার মায়ের চক্রান্তে সিঙ্গেলই থেকেই মরতে হবে।”

সায়েম চুপ করে রইলো।

নাজ স্বাভাবিক গলায় বলল, “আপনি বোধহয় আমার নাম জানেন না। আমি নাজনীন। সবাই নাজ বলে ডাকে।”

“আমার নাম সায়েম।”

“আমি জানি।”

“কী করে?”

“ওমা! সবাইকে নিজের মতো ভাবেন না-কি? যার সঙ্গে বিয়ে হচ্ছে তার নামটা পর্যন্ত জানবো না? যাইহোক বাদ দিন! এখন আপনাকে একটা অনুরোধ করি? না বলতে পারবেন না কিন্তু!”

“কী অনুরোধ?”

“যে কাচ্চির লোভে আপনার বিয়েতে এসেছিলাম সেই কাচ্চিটাই আমার খাওয়া হয়নি। বিয়ের সাথে সাথেই আমাকে এ ঘরে এনে বসিয়ে রেখেছে। একটা মানুষ যে ক্ষুধার্ত সে দিকে কারোর খেয়াল নেই। আপনি এবার আমাকে আপনার বিয়ের… মানে আমার বিয়ের কাচ্চি খাওয়াবেন প্লিজ!”

সায়েম হতভম্ব দৃষ্টিতে কিছুক্ষন নাজের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, “বসো, আনছি।”

সায়েম মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই ফিরে এলো কাচ্চির প্লেট হাতে। নাজ বিছানায় বসে আয়েশ করে খাচ্ছে আর আড়চোখে পর্যবেক্ষণ করছে লোকটাকে। সায়েম বারান্দায় আবার আগের জায়গায় ফিরে গিয়ে পা দোলাচ্ছে। শুধু যে পা দোলাচ্ছে তা বললে ভুল হবে, আলোর গতিতে পা দোলাচ্ছে। আচ্ছা প্রতি সেকেন্ডে আলোর গতিবেগ যেন কত? নাজ আবার কমার্সের ছাত্রী, এসব গতিবেগ-টেগ মনে রাখা তার সাধ্য নয়। মানুষ যখন টেনশনে থাকে তখন না-কি এমন অনবরত পা দোলায়। এই মানুষটাও কী বিয়ের পুরো বিষয়টা নিয়ে টেনশনে পরে গেছেন? এর মধ্যে টেনশনে পড়ার কী হলো কে জানে? নাজের তো টেনশন হচ্ছে না! বরং মজা লাগছে।

খাওয়া শেষ নাজ উঠে গিয়ে হাত ধুয়ে এল। চুপচাপ বসে রইল বিছানার ওপরে। সায়েমের পা দোলানোর ভঙ্গির কোনো পরিবর্তন হলো না। আচ্ছা এই মানুষটার কী তাকে পছন্দ হয়নি? যদি নাও হয়ে থাকে তাতে অবাক হওয়ার মতো কিছু নেই। নাজের উচ্চতা সাধারণ বাঙালি মেয়েদের চাইতেও কম। গাত্রবর্ণও কিছুটা শ্যামলার দিকে।

অন্যদিকে সায়েমের গায়ের রং ধবধবে ফর্সা। মুখভর্তি খোঁচা খোঁচা দাড়ি। চুলগুলো কীভাবে যেন আঁচড়ে রাখে। দেখলেই ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছে হয়। এমন একটা মানুষের পাশে কি মানবে নাজকে?

এসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে পড়লো, নাজ নিজেও জানে না। যখন তার ঘুম ভাঙলো তখন চারিদিক রোদের উষ্ণতায় চকচক করছে। কয়টা বাজে কে জানে? এ ঘরে কোনো ঘড়ি দেখা যাচ্ছে না। ফোনটাও কাছে নেই, থাকলে চট করে সময়টা দেখে নেওয়া যেত। সায়েমকে আশেপাশে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। হয়তো আগে আগেই তার ঘুম ভেঙেছে বলে ঘরের বাইরের চলে গেছে।

হঠাৎই নাজের মনে পড়লো গত রাতে তার অবিরাম সিগারেট খাওয়ার দৃশ্য। মানুষটা সিগারেট খেতে খেতে বারান্দাতেই ঘুমিয়ে পড়েনি তো? ভয়ে ভয়ে বারান্দার দিকে তাকাতেই বুকটা ধক করে উঠলো নাজের। সোফার ওপরে পা দুটো ভাজ করে শান্তির ঘুম দিচ্ছে সায়েম। কী সাংঘাতিক মানুষ!

নাজ উঠে গিয়ে সায়েমের কানের কাছে তার হাতের চুড়িগুলো দিয়ে ঝনঝন শব্দ করতে লাগলো। তবুও মানুষটার মধ্যে কোনো হেরফের নেই। একই ভঙ্গিতে ঘুমিয়ে রয়েছে সায়েম।

নাজ এবার চুরিতে শব্দ করতে করতে উঁচু স্বরে বলল, “এই আপনি উঠুন তো! এখানে ঘুমিয়ে পড়েছেন কেন?”

সায়েম এবার নড়েচড়ে উঠলো। ঘুমজড়ানো চোখে একবার নাজের দিকে তাকিয়ে আবারও চোখদুটো বন্ধ করে ফেলল।

নাজ আবারও বলল, “আহা উঠুন না! আপনাকে এখানে ঘুমাতে দেখলে মানুষ কী বলবে? বলবে কেমন ফাজিল মেয়ে! প্রথম দিনেই স্বামীকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে।”

সায়েম উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বিরক্ত গলায় বলল, “মানুষ দেখবে কী করে? আমার ঘরের দরজায় কি লুকিং গ্লাস লাগানো আছে? ননসেন্স!”

নাজ উত্তর দিলো না। সকাল সকাল এই মানুষটার সঙ্গে তর্কে জড়ানোর কোনো অর্থ হয় না। সায়েম কিছুক্ষণের মধ্যেই হাতমুখ ধুয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। নতুন বউকে শাড়ি পরে সারা বাড়ি জুড়ে ঘুরে বেড়াতে হয়, এটা সকলেরই জানা। এই নিয়ম রক্ষা করার জন্যে গতকাল রাতেই নাজের শাশুড়ি মা বেশ কয়েকটা শাড়ি দিয়ে গেছেন তাকে।

কিন্তু সমস্যা একটাই। কী করে শাড়ি পড়তে হয় নাজ তাই জানে না, শাড়ি পরে ঘুরে বেড়ানো তো দূরের কথা। অসহায় ভঙ্গিতে ঘরের দরজা খুলে উঁকি দিতেই দেখতে পেল আশার আলো। সেই আসার আলোটা হলো কনা।
নাজ কনার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো, “ওই! শাড়ি পরিয়ে দিয়ে যা!”

কনা সঙ্গে সঙ্গে ছুটে এলো, উৎফুল্ল ভঙ্গিতে জড়িয়ে ধরলো নাজকে।

জড়িয়ে ধরেই বলল, “দোস্ত! আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না তুই আমার ভাবি হয়ে গেছিস।”

নাজ গম্ভীর গলায় বলল, “বিশ্বাস না হবার কী আছে? মানুষ বিন্দু থেকে সিন্ধু হয়ে যায়, কোটিপতি থেকে ফকির হয়ে যায়, আর আমি তো সামান্য ভাবি হয়েছি।”

“মাঝে মাঝে তুই কীসব যে বলিস, আমি কিছুই বুঝি না।”

“বুঝতে হবে না। শাড়িটা পরিয়ে দে।”

কনা শাড়ি পড়াতে পড়াতে আগ্রহী কণ্ঠে বলল, “এই নাজ! আমার ভাইয়াকে কেমন দেখলি?”

“কেমন আবার দেখবো? উনি যেমন তেমনই দেখেছি।”

“ভাইয়াকে এতটা হালকাভাবে নিচ্ছিস? তুই জানিস ভাইয়ার অফিসের প্রতিটা মেয়ে তার ওপরে ক্রাশ খেয়ে বসে আছে। প্রতিদিন কতশত মেয়ে যে ভাইয়াকে ফেসবুকে প্রপোজ করে তার কোনো হিসাব নেই।”

“তো সেই প্রপোজ করা একজনকে নিয়ে এলেই তো হতো! আমাকে হুট করে বিয়ে দেওয়ার কী প্রয়োজন ছিল?”

কনা অন্যরকম গলায় বলল, “নাজ? তুই এই বিয়েতে খুশি না?”

নাজ কাতর কন্ঠে বলল, “দোস্ত আমি জানি না। আমার ভেতরে যে কী অনুভূতি হচ্ছে আমি নিজেই বুঝতে পারছি না।”

“শোন তোকে আমি একটা বিষয়ে নিশ্চিত করতে পারি। ভাইয়ার সঙ্গে তুই কখনোই কষ্টে থাকবি না। ও একটু অন্যরকম হলেও, মানুষটা অনেক ভালো।”

“অন্যরকম মানে?”

কনা কিছু বলতে যাবে, তখনি নাস্তার জন্যে ডাক পড়লো হাসনা বেগমের।

গত রাতে বাড়িটা আত্মীয়-স্বজনে গিজগিজ করলেও এ মুহূর্তে বাড়ির সদস্যরা ছাড়া কেউ নেই। কী অদ্ভুত ব্যাপার! বিয়ে বাড়ি অথচ বিরক্তিকর আত্মীয়-স্বজনগুলো চারিদিকে কলকল করছে না? এ যেন অষ্টম আশ্চর্য।

নাস্তার টেবিলে নাজ সায়েমের পাশে বসলো না। একটা চেয়ার ফাঁকা রেখে বসলো। চারিদিকে কেমন থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। সকলের চোখেমুখে কেমন একটা অস্থিরতার ভাব ফুটে উঠেছে। সায়েমের মধ্যে অবশ্য কোনো অস্থিরতা নেই। তার মধ্যে যা আছে তা শুধুই গাম্ভীর্য। হয়তো তার এই গাম্ভীর্যের কারণেই সকলে অস্থির হয়ে আছে। এতক্ষণে একটা ব্যাপারে নাজ মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গেছে। এ বাড়ির মানুষগুলো সায়েমকে প্রচন্ড ভয় পায়।

নাস্তা শেষ করেই সায়েম গম্ভীর গলায় বলল, “মা আমি আজই ঢাকায় চলে যাচ্ছি। বারোটায় বাস আছে। এখনই বেরিয়ে যেতে হবে।”

হাসনা বেগম আঁতকে উঠে বললেন, “সে কী কথা! বিয়ে বাড়ি, বিকেলে রাজ্যের সব আত্মীয়-স্বজন বউ দেখতে আসবে আর তুই কিনা চলে যাবি?”

“আমার এসবের মধ্যে থাকতে ইচ্ছা করছে না। আমি এখনই চলে যাবো, তোমাদের জোরাজুরিতে কোনো কাজ হবে না।”

হাসনা বেগম অসহায় দৃষ্টিতে স্বামীর দিকে তাকিয়ে বললেন, “তুমি শুনলে? ছেলে বলে এখনই চলে যাবে! মানুষের কাছে আমি কী করে মুখ দেখাবো বলো তো?”

সায়েমের বাবা শওকত সাহেব জবাব না দিয়ে নিঃশব্দে চুমুক দিলেন চায়ের কাপে। একমাত্র ছেলের জেদ আর রাগের সঙ্গে সে খুব ভালো করেই পরিচিত। সে একবার যখন বলেছে আজ ঢাকায় ফিরে যাবে, তখন ফিরেই ছাড়বে। ধরে-বেঁধেও আটকে রাখা সম্ভব নয় তাকে।

স্বামীর কাছ থেকে উত্তর না পেয়ে হাসনা বেগম এবার নাজের উদ্দেশ্যে বললেন, “বৌমা! তুমি একটু সায়েমকে বোঝাও। ও চলে গেলে কেমন দেখায় বলো তো?”

নাজ পরোটা ছিঁড়তে ছিঁড়তে বলল, “আমি আবার কী বোঝাবো, আমি নিজেই তো তার দলে। আমার আবার ঢাকা শহর দেখার খুব শখ, বুঝলেন।”

নাজ এবার সায়েমের দিকে তাকিয়ে উৎফুল্ল কণ্ঠে বলল, “এই শুনুন! আপনি আমাকে রেখে ঢাকায় চলে যাবেন না কিন্তু।”

সকলের বিস্মিত দৃষ্টি এবার একসঙ্গে এসে পড়লো নাজের দিকে। মেয়েটার কাজকর্ম আর কথাবার্তা, কোনোটাই সুবিধার মনে হচ্ছে না!

(চলবে)

#অপেক্ষারা
১.
লেখা : অতন্দ্রিলা আইচ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here