অপেক্ষার প্রহর পর্ব শেষ

#অপেক্ষার_প্রহর
#writerঃআরিফা_ইসলাম
#পর্বঃ২১

#অন্তিম_পর্ব

“”সকালেই তো চলে যেতে হবে,শুধু শুধু মায়া বাড়িয়ে কি লাভ!আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন,আমি ইভাল লুমে ঘুমিয়ে পড়বো””

সুজন তুলির কথা শুনে তড়িঘড়ি করে বেড থেকে নেমে এসে পেছন থেকে খপ করে তুলির হাত ধরে রাগী লুক নিয়ে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”খুব বাড় বেড়েছে না তোর!এতোদিন আমার কাছ থেকে দূরে থেকে শান্তি হয়নি!আবার দূরে যেতে চাইছিস!এই রুম ছেড়ে যাবার কথা আরেক বার বলেছিস তো!তোর কানের নিচে দেবো একটা!””

তুলি সুজনের কথা শুনে মনে মনে অট্টহাসি দিয়ে কপাল কুঁচকে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”কেনো থাকবো এই লুমে!যাল কাছে থাকবো সে নিজেই তো আমাকে সহ্য কলতে পালছেনা,থাকবোনা আমি এই লুমে!””

কথাগুলো বলে হাত ছাড়ানোর জন্য ব্যাস্ত হয়ে পড়লো,,,সুজন অপলকভাবে তুলির মুখের পানে চেয়ে রইলো,,,তুলি সুজনের চাহনি দেখে কপাল কুঁচকে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”এভাবে চেয়ে কি দেখছেন!চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ুন,আল আমাকেও শান্তি মতো ঘুমোতে দেন,আমি আল কোনো আঘাতই সইতে পালবোনা,আমি কালই আপনাল কাছ থেকে অনেক দূলে চলে যাবো””

সুজন তুলির কথা শুনে রাগী লুক নিয়ে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”আমার কাছ থেকে দূরে যাবার খুব শখ না তোর!আমার থেকে দূরে যাবার ভূত যদি তোর মাথা থেকে আমি না নামিয়েছি!তো আমার নামও সুজন নয়””

কথাগুলো বলে তুলির ঠোঁট দুটো নিজের দখলে করে নিলো,,,ঠোঁট ছেড়ে ঘাড় গলায় এলোপাতাড়ি কিস করলো,,,তুলি নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে নিজ থেকে সুজনের ঠোঁট দুটো নিজের দখলে করে নিলো,,,অবস্থা বেগতিক দেখে সুজন জোর করে তুলির কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বেডে এসে চুপচাপ শুয়ে পড়লো,,,

তুলি সুজনের কান্ড দেখে রাগী লুক নিয়ে সুজনের দিকে চেয়ে রাগে ফুঁসতে লাগলো,,,সুজন তুলির চাহনি দেখে মনে মনে অট্টহাসি দিয়ে বললো,,,

“”আমি জানি তোতলা রানী!এখন তুমি নিজেই আমার কাছে আসবে,আর আমি সেই সুযোগ টাকেই কাজে লাগাবো””

কথাগুলো মনে মনে ভেবে মুচকি হেঁসে চোখ দুটো বন্ধ করে রইলো,,,তুলি বেডে এসে সুজনের বুকে মাথা রেখে গায়ে পা তুলে দিয়ে জড়িয়ে ধরে শুয়ে রইলো,,,তুলি সুজনের বুকে মাথা রাখলে সুজন দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে তুলির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”এই পাঁচটি বছর আমার বুকটা শূন্যতায় খাঁ খাঁ করতো,তোমাকে বুকে আগলে রাখার জন্য চাতক পাখির মতো পথ চেয়ে বসে থাকতো,আজ যেনো সেই #অপেক্ষার_প্রহর শেষ হলো আমার””

তুলি সুজনের বুকে আলতো কিস করে মুখটা গম্ভীর করে করুনস্বরে বললো,,,

“”ক্যাপ্টেন!আমায় দুটো ছোট্ট বেবি দাও না প্লিজ!অনেক দিন তো হলো আমাদেল বিয়েল,আমাল পড়াশোনাও তো শেষ,দাও না দুটো বেবি””

সুজন তুলির কথা শুনে চোখ দুটো গোল করে মুখ টিপে হেঁসে বললো,,,

“”একসাথে দুটো বেবি!তুলি!তোর মাথা ঠিক আছে!কি সব ভূলভাল বলছিস!তুই নিজেই তো বেবি,নিজেই নিজেকে সামলাতে পারিস না!তুই আবার বেবি সামলাবি কি করে!””

তুলি সুজনের কথা শুনে মুখটা উঁচু করে কপাল কুঁচকে সুজনের মুখের পানে চেয়ে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”আমি পালবো ক্যাপ্টেন,আমি নিজের যত্ন নিজেই নিতে পালি,এতো কথা না বাড়িয়ে যেটা বলছি সেটা শোনো,দাও না একটা বেবি”

সুজন মুচকি হেঁসে তুলির কপালে কপাল ঘেঁষে মৃদু স্বরে বললো,,,

“”হুম!আপাততো একটাই দিবো,যদি দেখি তোর পার্টিসিপ্যান্ট ভালো,তাহলে পরে আবার ভেবে দেখবো””

তুলি সুজনের কথা শুনে কপাল কুঁচকে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”ক্যাপ্টেন!আমি কিন্তু ভীষন লেগে গেছি তোমাল উপল””

সুজন তুলির কথা শুনে কপালে সুক্ষ ভাঁজ ফেলে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”এতো রাগ কেনো আমার উপর!আমি আবার কি করলাম!””

তুলি শোয়া থেকে বেডে বসে রাগী লুক নিয়ে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”তুমি এখনো আমাল সাথে তুই তুকালি কলে কথা বলো কেনো!””

সুজন তুলির কথা শুনে মৃদু হেঁসে শোয়া থেকে বেডে বসে দুকান ধরে করুন মুখ করে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”আমার ঘাট হয়েছে তোতলা রানী,এই দ্যাখো কান ধরছি,আর তুই তুকারি করবো না,এবারের মতো ক্ষমা করে দাও প্লিজ!””

সুজনের করুন মুখ করা দেখে তুলি খিলখিল করে হেঁসে দিলো,,,তুলির হাসি দেখে সুজন ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো,,,দীর্ঘ পাঁচ বছর পর তুলির হাসিতে রুমটা যেনো মৃদু আওয়াজে ঝংকার তুললো,,,সুজন স্মিত হেঁসে অপলকভাবে তুলির হাসিটা উপভোগ করলো,,,

সুজনকে অপলকভাবে চেয়ে থাকতে দেখে তুলি হাসি থামিয়ে সুজনের মুখের সামনে তুড়ি বাজালো,,,তুলির তুড়ির শব্দে সুজনের ঘোর কাটলো,,,তুলি স্মিত হেঁসে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”একটা কথা বলবো!””

সুজন কপাল কুঁচকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তুলির মুখের পানে চেয়ে রইলো,,,তুলি সুজনের মাথার চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”ক্যাপ্টেন!সত্যি কথা বলতে তোমাল মুখে তুই শব্দ শুনতেই আমাল খুব ভাললাগে,তাই চাল দেয়ালেল মধ্যে তুমি আমাল সাথে তুই কলেই কথা বলবা””

সুজন তুলির কথা শুনে মুচকি হেঁসে তুলিকে কাছে টেনে নিলো,,,এতো দিনের সমস্ত মান অভিমান শেষে সুজন তুলি ভালোবাসার নতুন আরেকটি অধ্যায় সূচনা করলো,,,আবার নতুন করে #অপেক্ষা_প্রহর গুনতে শুরু করলো,,,

❤️❤️❤️❤️❤️❤️

সকালে সূর্যের কিরণ চোখে পড়তেই সুজনের ঘুম ভেঙে গেলো,,,আড়মোড়া ভেঙে চোখ মেলে চেয়ে দেখলো তুলি ওর গায়ের উপর হাত পা ছড়িয়ে দিয়ে চুপটি করে ঘুমিয়ে আছে,,,সুজন অপলকভাবে চেয়ে রইলো তুলির ঘুমন্ত মুখের পানে,,,দীর্ঘ পাঁচটি বছর পর তুলির ঘুমন্ত মুখটা দেখতে পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো,,,

সুজনের অফিস ছুটি থাকায় ঘুম থেকে উঠার কোনো তাড়া নেই,,,কিছুক্ষণ তুলির মুখের পানে চেয়ে থেকে বুকটা হুহু করে উঠলো,,,পাঁচটি বছর চোখের আড়াল ছিলো ভাবতেই তুলিকে বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো,,,

তুলি সুজনের স্পর্শ বুঝতে পেরে চোখ পিটপিট করে ঘুম জড়ানো স্বরে বললো,,,

“”কি হয়েছে ক্যাপ্টেন!তোমাকে এমন অশান্ত দেখাচ্ছে কেনো!আমি আল কোথাও যাবোনা তোমায় ছেড়ে,পাক্কা প্রমিজ””

সুজন তুলির ঘুম জড়ানো স্বর শুনে মুচকি হেঁসে তুলির কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিলো,,,তুলি স্মিত হেঁসে খরগোশের মতো মাথা ঘষতে ঘষতে সুজনের বুকে জায়গা করে নিলো,,,

❤️❤️❤️❤️❤️❤️

পরিশিষ্টঃতুলি সুজন দুজনেই কর্ম জীবন নিয়ে ব্যাস্ত সময় পার করছে,,,কর্ম ব্যাস্ততার মধ্যে দিয়ে দুজনের দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসার খুনসুটিতে কেটে গেলো ছয়টি বছর,,,সুজন তুলির একটি ফুটফুটে মেয়ে হয়েছে,,,তিতির বাবার মতো রাগী স্বভাব পেয়েছে,,,কিন্তু মায়ের মতো তোতলা হয়েছে,,,

আজ তিতিরের পন্ঞ্চম জন্মদিন উপলক্ষে বাসায় ছোট করে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে,,,অনুষ্ঠানে সবাই উপস্থিত কিন্তু সুজন অনুপস্থিত দেখে তিতির ভীষণ রেগে গেছে,,,কেক না কেটে গাল ফুলিয়ে চুপটি করে রুমে বসে আছে,,,

সবাই তিতিরকে বুঝাচ্ছে কিন্তু তিতির কারো কথা শুনতেই রাজী না,,,তুলি তিতিরের অভিমান বুঝতে পেরে সুজনকে কল দিলে সুজন বারবার ফোন কেটে দিলো,,,তুলি বিরক্ত হয়ে ফোন রেখে তিতিরের পাশে বসে তিতিরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে আদুরে গলায় বললো,,,

“”তিতির সোনা!বাবাই তো একটু পরেই চলে আসবে,তুমি কেকটা কাটো সোনা,তোমার কত আংকেল আন্টি এসেছে দেখবে চলো!সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করছেতো!রাগ করে না সোনা মা আমার,প্লিজ কেকটা কেটে দাও””

তিতির মায়ের কথা শুনে ঠোঁট ফুলিয়ে কান্না করতে করতে বললো,,,

“”মাম্মাম!ক্যাপ্তেন খুব খালাপ,আমি আজকে কেক কাটবো,তবু্ও ক্যাপ্তেন বাসায় আসেনি,ক্যাপ্তেন না আসলে আমিও কেক কাটবোনা,তুমি আমায় একবালও কেক কাটাল কথা বলবেনা বলে দিলাম,আমি কিন্তু তোমাল উপলও লাগ কলবো””

তিতিরের যখন সুজনের উপর খুব অভিমান হয় তখন বাবাই না বলে ক্যাপ্তেন বলে ডাকে,,,তিতির কথাগুলো বলতে বলতে সুজন রুমে ঢুকলো,,,তিতির অশ্রু সিক্ত নয়নে রাগী লুক নিয়ে সুজনের দিকে একপলক চেয়ে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলো,,,তুলি সুজনকে দেখে তিতিরের পাশ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”সামলাও তোমার মেয়েকে,যেমন বাবা তার তেমনি মেয়ে,ওহ গড!রক্ষা করো আমায়,বাবা মেয়ের এতো রাগের মাঝে আমি নিজেই কবে ভস্ম হয়ে যাবো,উফ!সবাই কখন থেকে অপেক্ষা করছে!তাড়াতাড়ি নিয়ে এসো তিতিরকে””

কথাগুলো বলে তুলি গটগট করে হেঁটে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো,,,সুজন তুলির কথা শুনে মুচকি হেঁসে তিতিরের পাশে বসলো,,,তিতিরের মাথায় হাত বুলাতে গেলে তিতির বাবার উপর অভিমান করে পাশে সরে গেলো,,,সুজন তুলির অভিমান বুঝতে পেরে মুচকি হেঁসে তিতিরকে শুনিয়ে শুনিয়ে বললো,,,

“”তুলি!ডাইনিং এ দেখো অনেক গুলো লজেন্স এনে রেখেছি,তুমি ওগুলো সব ডাস্টবিনে ফেলে দিও,তিতির ওগুলো খাবেনা””

তিতির লজেন্সের কথা শুনে চোখ দুটো রসগোল্লার মতো করে কপাল কুঁচকে বললো,,,

“”বাবাই!তুমি খুব পঁচা,তুমি আজকেও কেনো দেলি কলে বাসায় আসলে!আমি তোমাল উপল ভীষণ লেগে আছি””

সুজন স্মিত হেঁসে তিতিরকে কোলে নিয়ে তিতিরের গালে চুমো দিয়ে করুন মুখ করে বললো,,,

“”স্যরি সোনা,আমার ভূল হয়ে গেছে,আর কখনো দেরি করে আসবোনা,প্রমিজ””

তিতির মুচকি হেঁসে বাবার গালে টুপ করে কিস করে দিলো,,,সুজন মেয়েকে কোলে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে মনে মনে বললো,,,

“”যেমন মা তার তেমন মেয়ে,পান থেকে চুন খসলেই এদের অভিমান শুরু হয়ে যায়,মা মেয়ের অভিমানের পাহাড় ভাঙতে ভাঙতে আমার সারা জীবন #অপেক্ষার_প্রহর গুনে যেতে হবে””

তুলির পাশে দাঁড়িয়ে মেয়ের হাসি মুখের দিকে একপলক চেয়ে তুলির হাসি মুখের দিক চেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে স্মিত হেঁসে মনে মনে বললো,,,

“”তোমাদের হাসি মুখটা দেখার জন্য আমি সারা জীবন #অপেক্ষার_প্রহর গুনতে রাজি,সবসময় এমনই ভাবে হাসি খুশি থেকো তোমরা,সারাদিনের কর্ম ব্যাস্ততা শেষে তোমাদের হাসিমুখ দেখার জন্য আমি সারাজীবন #অপেক্ষার_প্রহর গুনতে থাকবো””

❤️❤️❤️সমাপ্ত❤️❤️❤️

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here