অপেক্ষার প্রহর পর্ব ১৯+২০

#অপেক্ষার_প্রহর
#writerঃআরিফা_ইসলাম
#পর্বঃ১৯

“”আমি আমাল জন্য নয়,আমি আমাল ক্যাপ্টেনেল জন্য ডক্টল বউ হতে চাই,আমাকে নিয়ে আমাল ক্যাপ্টেনেল চোখে যে স্বপ্ন দেখেছি!সেটা যেনো বৃথা হয়ে না যায়””

❤️❤️❤️❤️❤️❤️

সুজন তুলির মধ্যে চলছে বিরহ বিচ্ছেদ,,,সুজন তুলির উপর অভিমান করে তুলির সাথে যোগাযোগ বিছিন্ন করে দিয়েছে,,,তুলি হাজার বার চেষ্টা করেও সুজনের সাথে কোনো যোগাযোগ করতে পারিনি,,,

তুলি একবুক হতাশা নিয়ে প্রতিনিয়ত সুজনের ফোনে কল দেই,,,সুজন কল রিসিভ না করে ছলছল নয়নে ফোনের স্কিনের দিকে চেয়ে থাকে,,,মাঝে মাঝে তুলির ছবির দিকে চেয়ে ম্লান হেঁসে বলে,,,

“”তোতলা রানী!তোমায় বলেছিলাম তো!যায় হয়ে যাক না কেনো!আমায় কখনো ছেড়ে যেও না,কিন্তু তুমি তো আমার কথা একটিবারের জন্যও ভাবলেনা,দিন শেষে রাতে যখন ঘুমোতে যায়!আবার বুকের ভিতর টা কেমন শূন্যতায় খাঁ খাঁ করে,কেনো বুঝলেনা আমার কষ্ট!তোমাকে ছেড়ে থাকতে আমার ভীষণ কষ্ট হয় তোতলা রানী””

তুলির উপর অভিমানে বুকে হাজারো ব্যাথা জমা হয়ে আছে,,,তুলি চলে যাবার পর কেউ সুজনকে হাসতে দেখেছে কিনা সন্দেহ আছে,,,প্রায় রাতই সুজনের নির্ঘুমে কেটে যায়,,,মাঝরাতে ঘুম ভেঙে ছাঁদের রেলিং ধরে দূর আকাশ পানে চেয়ে মনে মনে বলে,,,

“”তোতলা রানী!তুমি কি এখনো সেই আগের মতো জেদি আছো!নাকি ভীনদেশী হাওয়া লেগে তোমার স্বভাব পাল্টে গেছে!খুব জানতে ইচ্ছে করে,কিন্তু তোমার উপর জমে থাকা অভিমান গুলো সে কথা জানতে দিতে চায় না””

কিছু সময় ছাঁদে দাঁড়িয়ে থেকে অপলক দৃষ্টিতে চাঁদের দিকে চেয়ে থেকে মনে মনে বলে,,,

“”কাছে না থাকি!পাশাপাশি না চলি!তবুও তো এক ছাঁদের নিচে আছি,সব সময় ভালো থেকো,আর যদি পারো!আমার কাছে এসে আমার শূন্যে বুকটা ভালোবাসায় ভরিয়ে দিও,খুব ভালোবাসি তোমায় তোতলা রানী””

তুলির উপর সুজন যে খুব অভিমান করে আছে সেটা তুলি বুঝতে পারে,,,বুঝলেও কিছু করার নেই,,,তুলি সুজনের ছবি বুকে আঁকড়ে ধরে ম্লান হেঁসে বলে,,,

“”এই ক্যাপ্টেন!আমি জানি তো!তুমি আমাল উপল খুব বেশি লেগে আছো!কিন্তু আমি তোমাল সামনে গেলে তুমি একটুও লাগ কলে থাকতেই পালবেনা””

ভীনদেশে এসেও তুলি নিজের কালচার গুলো একটুও ভূলে যায়নি,,,সেদিনের সেই নীল শাড়িটা তুলি সাথে করে নিয়ে এসেছে,,,বিশেষ বিশেষ দিনে তুলি এই নীল শাড়িটা পরে নিজেকে মিররে দেখে মুচকি হাসে,,,তুলির রুমমেট লারা তুলিকে বিশেষ দিনে একই শাড়ি পড়তে দেখে মুচকি হেঁসে বলে,,,

“”তুলি!এটা কি পোশাক!বিশেষ কোনো দিনে তোকে এই পোশাকটা পরতে দেখি!কিন্তু কেনো!স্পেশাল কেউ দিয়েছে নাকি!””

তুলি লারার দিকে চেয়ে মুচকি হেঁসে বলে,,,

“”এটা হলো শাড়ি,বাঙালি নারীদের সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলার একমাত্র পোশাক এটা,শাড়ি ছাড়া বাঙালি নারী অচল,এই শাড়িটা আমার খুব কাছের একজন দিয়েছে,তার কাছ থেকে পাওয়া আমার প্রথম উপহার,এই শাড়ি গায়ে জড়ালে আমি তার স্পর্শ গুলো বুঝতে পারি,তার অনুভূতি গুলো আমার মন ছুয়ে যায়,আমার মনে হয়!সে আমার পাশেই আছে,সে আর কেউ নয়!সে হলো আমার ক্যাপ্টেন,আমার অস্তিত্ব,আমার অর্ধাঙ্গ,আমার একমাত্র ভালোবাসা””

কানাডিয়ান মেয়ে হওয়ায় লারা তুলির লাস্ট কথাগুলো কিছুই বুঝলোনা,,,শুধু তুলির হাসি মুখটা দেখে মুচকি হাসলো,,,সারক্ষন ইংলিশে কথা বলতে বলতে তুলি বোর হয়ে যায়,,,তাই লারাকে টুকটাক বাংলা ভাষা শিখিয়ে দিয়েছে,,,

লারা টুকটাক বাংলা ভাষা শিখতে পেরে মাঝে মাঝে তুলির তোতলা কথাগুলো খুব ইনজয় করে,,,এখানে আসার পর লারাই একমাত্র সঙ্গ দিয়েছে তুলিকে,,,লারা তুলি দুজন দুজনকে খুব ভালোবাসে,,,মাঝে মাঝে সুজনের জন্য তুলির মনটা কেমন কেমন করে,,,

তুলির ইচ্ছে করে এক ছুটে বাংলাদেশে চলে যেতে,,,কিন্তু নিরুপায় হয়ে মুখটা গম্ভীর করে বসে থাকে,,,তুলির মুখটা গম্ভীর থাকলে লারার একটুও ভালো লাগে না,,,লারা বিভিন্ন জোকস বলে তুলিকে হাসানোর চেষ্টা করে,,,লারা এমন অভিনয় করে জোক্স বলে,,,তুলি না হেঁসে থাকতেই পারেনা,,,

দেখতে দেখতে পাঁচটি বছর পার হয়ে গেলো,,,ইভা রিয়া বিয়ে করে দু’জনে সংসার নিয়ে ব্যাস্ত,,,তুলি সবার সাথেই অনলাইনে কথা বলতো,,,কিন্তু লাস্ট এক বছর ধরে তুলি সবার সাথে যোগাযোগ বিছিন্ন করে দিয়েছে,,,এমনকি সুজনের ফোনে কল দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে,,,শুধু শাহনাজ বেগমের সাথে মাঝে মাঝে কথা বলে,,,

তুলি এক বছর ধরে কল না দেওয়ায় সুজন খুব ভেঙে পড়েছে,,,কয়েকদিন ধরে তুলি কল না দেওয়ায় সুজনের মনে হাজারো ভয় এসে ভীর করেছে,,,এতোদিন পর সুজন নিজে থেকে তুলির নাম্বার ডায়াল করে,,,কিন্তু প্রতিবারই তুলির ফোন সুইটস অফ বলে,,,

ভীনদেশে গিয়ে তুলির কোনো বিপদ হয়েছে কিনা ভেবে ভেবে সুজনের খাওয়া দাওয়া প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে,,,শুধু জীবন বাঁচানোর তাগিদে যতটুকু খাবার প্রয়োজন ততটুকুই যেনো খেতে কষ্ট হয়,,,তুলির হাসিমাখা ছবিটির দিকে চেয়ে ছলছল নয়নে মনে মনে বললো,,,

“”তোতলা রানী!কোথায় তুমি!কেনো শুনলেনা আমার কথা!বাংলাদেশে পড়ে তো ডক্টর হওয়া যায়,তুমি আমাকে ছেড়ে কেনো গেলে ভীনদেশে,লাস্ট এক ইয়ার ধরে তোমার কোনো খোঁজ নেই,তুমি কি সত্যিই হারিয়ে গেলে!””

কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে যায় আগামি দিনের আশায়,,,সুজন তুলির ফিরে আসার #অপেক্ষার_প্রহর গুনতে থাকে,,,দিন যেয়ে রাত আসে অথচ তুলির আসার #অপক্ষের_প্রহর কাটতেই চায় না,,,তুলির কোনো খোঁজ খবর না পেয়ে হাত পা গুটিয়ে!#অপেক্ষার_প্রহর গুনা ছাড়া আর কোনো উপায় ও নেই,,,

তুলি একজন কার্ডিওলজি ডক্টর হয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে,,,সবার মুখে তুলির প্রশংসা শুনে তুলি নিজেকে খুব গর্বিত মনে করে,,,কেনো জানিনা তুলির মনটা বড্ড অস্থির অস্থির লাগছে,,,এক মূহুর্তের জন্য দম যেনো বন্ধ হয়ে আসছে,,,হঠাৎ করে ডিসিশন নেয় আগামীকাল বাংলাদেশে ব্যাক করবে,,,লারাকে সাথে নিয়ে টিকিট বুক করে আসে,,,

তুলির যাবার কথা শুনে লারার মনটা বিষন্ন হয়ে আছে,,,দু’জন দু’জনকে জড়িয়ে ধরে চোখের পানি বিসর্জন দিলো,,,পরদিন সব কিছু গোছগাছ করে গায়ে ডক্টরের এ্যাপ্রোন জড়িয়ে নিলো,,,লারার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এয়ারপোর্টে পৌঁছে গেলো,,,

বিমানে বসে খুশিতে তুলির মনের ভিতর অস্থিরতা কাজ করলো,,,তুলি নিজের পোশাকের দিকে চেয়ে মুচকি হেঁসে মনে মনে বললো,,,

“”ক্যাপ্টেন!আমি তোমাল স্বপ্ন পূলন কলতে পেলেছি,আমি তোমাল ডক্টল বউ হতে পেলেছি””

বিমান বাংলাদেশের মাটিতে ল্যান্ড করলে তুলি সব ফর্মালিটি শেষে বেরিয়ে আসলো তার চিরচেনা শহরটাতে,,,এই পাঁচ বছরে হয়তো অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে,,,কিন্তু তুলির মনটা সেই আগের মতোই আছে,,,তুলি কাউকে কিছু না জানিয়ে এসেছে,,,তাই তুলিকে রিসিভ করতে কেউ আসেনি,,,

তুলি ঢাকা থেকে সোজা সিলেটের উদ্দেশ্য রওনা করলো,,,জানালার পাশে বসে মুগ্ধ নয়নে চারপাশের সবুজ প্রকৃতির দৃশ্য উপভোগ করছে,,,রোকসানা বেগম তার স্বামীকে নিয়ে ইভার শশুর বাড়ি বেড়াতে গেছে,,,

তুলি সিলেট পৌঁছাতে রাত প্রায় দশটা বেজে গেলো,,,সুজন বাসায় এসে খাবার গরম করে টেবিলে রাখতেই বাসার কলিং বেল বাজালো,,,সুজন খাবার টেবিলে রেখে কপাল কুঁচকে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”এতো রাতে বাসায় আবার কে আসলো””

কথা বলতে বলতে সদর দরজা খুলে দিলো,,,দরজার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তুলিকে দেখে সুজন অবাক চোখে চেয়ে রইলো,,,পাঁচ বছর পর তুলিকে দেখতে পেয়ে সুজনের কথা বলার বাক শক্তি যেনো হারিয়ে গেলো,,,সুজন অপলকভাবে তুলির দিকে চেয়ে রইলো,,,তুলি দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে সুজনকে জড়িয়ে ধরে হাসি কান্না মিশ্রিত স্বরে বললো,,,

“”ক্যাপ্টেন!তুমি আমাল সাথে কেনো কথা বলোনি!তুমি জানো!তোমাকে ছেড়ে থাকতে আমাল কত কষ্ট হয়েছে!স্যলি ক্যাপ্টেন,আমি খুব স্যলি,আমায় ক্ষমা কলে দাও,আমি খুব ভালোবাসি তোমায়””
#অপেক্ষার_প্রহর
#writerঃআরিফা_ইসলাম
#পর্বঃ২০

“”ক্যাপ্টেন!তুমি আমাল সাথে কেনো কথা বলোনি!তুমি জানো!তোমাকে ছেড়ে থাকতে আমাল কত কষ্ট হয়েছে!স্যলি ক্যাপ্টেন,আমি খুব স্যলি,আমায় ক্ষমা কলে দাও,আমি খুব ভালোবাসি তোমায়””

তুলি সুজনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে ঠিকই,,,কিন্তু সুজন অভিমানে একটিবারের জন্যেও তুলিকে নিজের বাহু বন্ধনে আবদ্ধ করলোনা,,,সুজন তুলির কথাগুলো শুনে স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো,,,খুশিতে সুজনের চোখে পানি যেনো টলমল করছে,,,

তুলি আগের থেকে অনেক স্মার্ট ফর্সা হয়ে গেছে,,,চুলগুলো হালকা ব্রাউন কালার করায় অসম্ভব সুন্দর লাগছে তুলিকে,,,কিন্তু সুজন তুলির চিন্তায় অনেকটা শুকিয়ে কালো হয়ে গেছে,,,সারাক্ষণ মুখটা গম্ভীর করে রাখে,,,

সুজন এতোদিন পর তুলিকে কাছে পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে তুলিকে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে দিলো,,,তুলি অশ্রু সিক্ত নয়নে অসহায় দৃষ্টিতে সুজনের দিকে চেয়ে কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো,,,

“”ক্যাপ্টেন!তোমাল এই হাল কি কলে হলো,তুমি নিজেল যত্ন কেনো নাও নি,কি অবস্থা হয়েছে তোমাল!””

সুজন সদর দরজা থেকে তুলির লাগেজটা ভিতরে নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো,,,তুলির কথা শুনে কষ্ট লুকানো ম্লান হেঁসে বললো,,,

“”তুলি!হার্ট ছাড়া শূন্য দেহ কখনো বাঁচতে পারে!তুই যাবার সময় আমার পুরো অস্তিত্বটা নিয়ে গেছিস,আমি কিসের যত্ন নিবো বল””

সুজনের মুখে তুলি নাম শুনে তুলির মনের ভিতরটা ভেঙে চুরমার হতে লাগলো,,,তুলি নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে কাঁদতে কাঁদতে সুজনকে জড়িয়ে ধরে বললো,,,

“”ক্যাপ্টেন!তুমি আমাল সাথে এমন কেনো কলছো!আমাল খুব কষ্ট হচ্ছে,আমি তোমাল চোখে আমাল ডক্টল হবাল স্বপ্ন দেখেছিলাম,সেটা আমি কি কলে মিথ্যা হতে দিতাম,আমি আমাল জন্য নয়,তোমাল জন্য ডক্টল বউ হয়েছি””

সুজন তুলির কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দূর দাঁড়িয়ে মনে মনে অট্টহাসি দিয়ে রাগী লুক নিয়ে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”তুলি!এটা তোর কানাডা না,তাই যখন তখন আমাকে জড়িয়ে ধরবিনা,আমার কাছ থেকে যতোটা সম্ভব দূরে থাকবি,কথাটা মাথায় রাখিস””

তুলি সুজনের কথা শুনে কপাল কুঁচকে রাগী লুক নিয়ে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”আমি কি পল পুলুষ কে জলিয়ে ধলেছি নাকি!আসাল পল থেকে একটু ভালো কথাও বলছেন না,শুধু খালাপ ব্যবহৃাল কলছেন,আমি এতো ভালো লেজাল্ট কলে ডক্টল হলাম,আমাকে নিয়ে গর্ববোধ কলবেন তা নয়!শুধু কষ্ট দিচ্ছেন আমায়””

তুলির মুখে আপনি কথাটা শুনে সুজনের মনের ভিতরও ভাঙচুর শুরু হয়ে গেলো,,,তবুও নিজকে কন্ট্রোল করে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”অনেক দূর থেকে এসেছিস,ফ্রেশ হয়ে এসে টেবিলে বস,আমি খাবার বেরে দিচ্ছি””

কাঁদতে কাঁদতে তুলির চোখ দুটো ফুলে লাল হয়ে গেছে,,,তুলি সুজনের কথা শুনে রাগী লুক নিয়ে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”আপনাল কি মনে হয়!আমি এখানে খাবাল খেতে এসেছি!নিকুচি কলেছি এখানে এসে,আপনাল খাবাল আপনি একাই খান””

সুজন তুলির কথা শুনে মনে মনে অট্টহাসি দিয়ে কপাল কুঁচকে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”তাহলে কেনো এসেছিস এখানে,তুই কানাডায় তো মনে হয় খুব ভালোই ছিলিস,তোর চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে,আসতে গেলি কেনো এখানে!””

তুলি সুজনের দিকে রাগী লুক নিয়ে চেয়ে লাগেজে একটা লাত্থি দিয়ে রুমে যেতে যেতে বললো,,,

“”যদি বুঝতাম,এখানে এসে ভালোবাসাল বদলে আঘাত পেতে হবে,তাহলে কখনোই আসতাম না,লাত শেষ হোক,সকালেই ফিলে যাবো,আল কখনো আসবোনা আপনাল কাছে””

কথাটি বলে দ্রুত গতিতে সুজনের রুমে গিয়ে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিলো,,,তুলি চলে যাবার কথা শুনে সুজন বুকে আবারো শূন্যতা অনুভব করলো,,,তুলি গা থেকে শুধু এ্যাপ্রোনটা খুলে ওয়াশরুমে ঢুকে শাওয়ার ছেড়ে শাওয়ারের নিচে বসে কাঁদতে লাগলো,,,

সুজন তড়িঘড়ি করে রুমের দরজা ধাক্কাতে লাগলো,,,তুলির কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে দরজায় কান পেতে পানির শব্দ শুনতে পেলো,,,তুলি শাওয়ার নিচ্ছে ভেবে দরজায় দাঁড়িয়ে মনে মনে বললো

“”তোতলা রানী!এতোদিন পর এসে তুমি আবার আমায় ফেলে চলে যেতে চাইছো!কিন্তু আমি যে তোমায় আর কোথাও যেতে দেবো না,তোমাকে ছেড়ে থাকলে যে আমি এবার সত্যি সত্যি হার্ট এটার্ক করবো””

কথাগুলো ভেবে দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে ড্রয়িং রুমে সোফায় গিয়ে বসলো,,,আধঘন্টা হয়ে যাচ্ছে তবুও তুলি দরজা আঁটকে বসে আছে দেখে সুজন তড়িঘড়ি করে দরজায় কান পেতে পানির শব্দ শুনতে পেলো,,,সুজন রোকসানা বেগমের রুমে যেতে যেতে বিরবির করে বললো,,,

“”আমার আগেই বোঝা উচিত ছিলো,ধ্যাত!এমন জেদি বউ আমার কপালে জুটেছে না!আমার উপর রাগ করে সারা রাত ধরে শাওয়ার নেবে””

সুজন তড়িঘড়ি করে রোকসানা বেগমের রুম থেকে এক্সট্রা চাবি এনে দ্রুত দরজা খুলে ওয়াশরুমে ঢুকে রাগী লুক নিয়ে বিরবির করে বললো,,,

“”যা ভেবেছিলাম তাই!এতোদিন পরেও সেই একই রকম জেদিই রয়ে গেলো!””

তুলি শাওয়ারের নিচে দু হাঁটুর ভাঁজে মাথা রেখে আরামে ভিজে যাচ্ছে,,,সুজন তড়িঘড়ি করে তাওয়াল এনে শাওয়ার বন্ধ করে তুলির মাথা মুছতে লাগলো,,,তুলির মুখটা ধরে উঁচু করে তুলিকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখে সুজন মুচকি হেঁসে বললো,,,

“”শাওয়ারের নিচে কেউ ঘুমায়!অবশ্য তোমার দ্বারা এটাও সম্ভব,পাগলি একটা””

সুজন তুলির পোশাক পাল্টে দিতে গেলে তুলি জেগে গিয়ে চোখ দুটো রসগোল্লার মতো করে রইলো,,,তুলি জেগে গেছে দেখে সুজন তুলির হাতে পোশাক দিয়ে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”দ্রুত চেঞ্জ করে বের হ,জ্বর বাঁধালে কিন্তু তোর অবস্থা খারাপ করে দিবো আমি””

কথাটা বলে বেরিয়ে যেতে গেলে তুলি পোশাক পানিতে চুবিয়ে দিয়ে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”কলবোনা চেঞ্জ,সালা লাত এভাবেই থাকবো,আমাল জ্বল হলে কাল কি যায় আসে””

সুজন তুলির কথা শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে পিছন ফিরে চেয়ে রাগী লুক নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে গেলো,,,তুলি মুখ ভেঙচি কেটে অন্যদিকে চেয়ে রইলো,,,সুজন ওয়ারড্রব থেকে নিজের একটা লং হোয়াইট টিশার্ট নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো,,,তুলির কাছে দাঁড়িয়ে রাগী লুক নিয়ে তুলির দিকে একপলক চেয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো,,,

তুলির গা থেকে পোশাক গুলো খুলতে গিয়ে সুজনের শ্বাস প্রশ্বাস যেনো বেড়ে গেলো,,,তুলি সুজনের কান্ড দেখে মুচকি মুচকি হাসছে,,,সুজন লং টিশার্ট টা তুলির গায়ে জড়িয়ে দিয়ে চোখ খুলে মনে মনে অট্টহাসি দিয়ে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”বাকি পোশাক পড়লে পড়িস,না পড়লেও সমস্যা নেই,তোর মতো বাটুলের শরীর ঢাকতে আমার একটা লং টিশার্টই যথেষ্ট””

কথাগুলো বলে দ্রুত পায়ে হেঁটে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে গেলো,,,ঢিলে ঢোলা পোশাকটা তুলির গায়ে বেশ মানিয়ে গেছে,,,তুলিকে একদম পুতুলের মতো দেখতে লাগছে,,,তুলি সুজনের কথা শুনে রাগী লুক নিয়ে সুজনের পিছন পিছন যেতে যেতে বললো,,,

“”আপনি আমায় বাটুল বললেন কেনো!আপনাল সাহস তো কম নয়!আপনি একজন ডক্টলকে বাটুল বলছেন””

সুজন তুলির কথা শুনে মুচকি হেঁসে চেয়ার টেনে টেবিলে বসে এক লোকমা খাবার হাতে নিয়ে কপাল কুঁচকে কর্কশ কন্ঠে বললো,,,

“”বাটুলকে তো বাটুলই বলবো,তোর ডক্টর পরিচয় হার্টের রোগীর কাছে দিস,আমার কাছে নয় ওকে!””

তুলি সুজনের কথা শুনে রাগী লুক নিয়ে কপাল কুঁচকে কিছু বলতে যেতেই সুজন খাবারটা জোর করে তুলির মুখে পুরে দিলো,,,

তুলি চোখ দুটো রসগোল্লার মতো করে খাবারটা গিলতে লাগলো,,,সুজন মুচকি হেঁসে খাবার খেতে লাগলো,,,তুলি খাবার শেষ করে রাগী লুক নিয়ে কিছু বলতে যেতেই সুজন কথার মাঝে ফোঁড়ন কেটে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”তোতলা রানী!””

সুজনের মুখে তোতলা রানী কথা শুনে তুলির রাগ যেনো নিমিষেই উধাও হয়ে গেলো,,,সুজন তুলির হাত ধরে চেয়ার টেনে ইশারায় বসতে বলে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”তোতলা রানী!কত দিন হয়ে গেলো,তোমার হাতে খাবার খাওয়া হয়নি,খাইয়ে দেবে আমায়!””

তুলি সুজনের কথা শুনে মুচকি হেঁসে সুজনকে খাবার খাইয়ে দিলো,,,দীর্ঘ পাঁচ বছর পর সুজন যেনো পেট পুরে শান্তি মতো খাবার খেলো,,,দু’জনেই খাওয়া দাওয়া শেষ করে রুমে গেলো,,,

তুলি অগোছালো রুমটাকে পরিপাটি করে সুন্দর করে গোছালো,,,সুজন বেডে শুয়ে মুচকি মুচকি হেঁসে আড়চোখে তুলিকে দেখছে,,,দীর্ঘ পাঁচ বছর পর রুমটা যেনো প্রান ফিরে পেলো,,,তুলি লাইট অফ করে ডিম লাইট জ্বালিয়ে বেরিয়ে যেতে গেলে সুজন ধড়ফড়িয়ে বেডে বসে কপাল কুঁচকে বললো,,,

“”তোতলা রানী!কোথায় যাচ্ছো তুমি!””

তুলি সুজনের কথা শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে ফিরে চেয়ে দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে ম্লান হেঁসে বললো,,,

“”সকালেই তো চলে যেতে হবে,শুধু শুধু মায়া বাড়িয়ে কি লাভ!আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন,আমি ইভাল লুমে ঘুমিয়ে পড়বো””

চলবে,,,

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here