অপেক্ষার প্রহর পর্ব ১৭+১৮

#অপেক্ষার_প্রহর
#writerঃআরিফা_ইসলাম
#পর্বঃ১৭

“”এখনকের মতো ছেড়ে দিলাম,বাকিটা পরে হবে,আমার আর তোর মাঝে আমি আর কোনো দেয়াল রাখতে চাই না,খাবার রেডি কর!আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি””

কথাগুলো বলে তুলির দিকে চেয়ে মুচকি হেঁসে গটগট করে হেঁটে রুমে চলে গেলো,,,তুলি সুজনের যাবার পথে চেয়ে কপাল কুঁচকে মনে মনে বললো,,,

“”এটা কি সত্যিই সুজন ভাই!নাকি অন্য কেউ!সব কিছু কেমন স্বপ্ন স্বপ্ন লাগছে,আমাল তো বিশ্বাসই হতে চাইছে না!সুজন ভাই আমাকে এতো ভালোবাসে!””

কথাগুলো ভেবে দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে টেবিলে খাবার বাড়তে গেলো,,,হঠাৎ করে কিছু একটা ভেবে দাঁত দিয়ে নখ কাঁটার ভঙ্গিতে কপাল কুঁচকে বিরবির করে বললো,,,

“”সুজন ভাই!সত্যি কি আমাকে ভালোবাসে!নাকি আমাল সাথে আবাল নতুন কোনো গেম খেলতে চাইছে!””

সুজন ডাইনিং এ আসতে গিয়ে তুলির বলা কথা গুলো শুনে মৃদু হাসলো,,,পিছন থেকে তুলিকে জড়িয়ে ধরে তুলির কাঁধে আলতো করে ঠোঁটের স্পর্শ এঁকে দিলো,,,তুলি সুজনের ঠোঁটের স্পর্শে হালকা কেঁপে উঠে আবেশে চোখ দুটো বন্ধ করে রইলো,,,সুজন তুলিকে পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তুলির কাঁধে থুতনি রেখে স্মিত হেঁসে বললো,,,

“”আমি কোনো গেম খেলছিনা তুলি,তুই নিজেও জানিস না!তুই কবে থেকে আমার হৃদয়ে স্থান দখল করে আছিস,আমার আলেয়া ভার্ট শুধু তুই তুলি,অন্য কেউ নয়,আমি সত্যি তোকে ছাড়া বাঁচতে পারবোনা””

তুলি সুজনের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে সুজনের দিকে ফিরে কপাল কুঁচকে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”সুজন ভাই!তাহলে আপনি সব সময় আমাল সাথে খালাপ ব্যবহৃাল কলতেন কেনো!এমনকি আপনি আমাকে বিয়ে কলতেও লাজি হননি,তাহলে আমি বুঝবো কি কলে!আপনি সত্যিই আমায় ভালোবাসেন কিনা!””

সুজন স্মিত হেঁসে তুলির নাক টেনে দিয়ে দু’হাতে তুলির গলা জড়িয়ে ধরে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”মাথামোটা!আমি তো জানতাম!তুই খুব জেদি,আমি যেটা বলবো তুই তার উল্টোটা করবি,ব্যাস!তুই তাই করলি,তুই আস্তে আস্তে আমার প্রতি দূর্বল হয়ে পরছিলিস,যা তোর পড়াশোনায় লাল বাতি জ্বালানোর জন্য যথেষ্ট ছিলো,তাই ইচ্ছে করে তোর সাথে খারাপ ব্যবহৃার করতাম””

তুলি সুজনের হাত দুটো নিজের কাঁধ থেকে সরিয়ে দিয়ে মুখটা গম্ভীর করে অন্যদিকে চেয়ে করুন স্বরে বললো,,,

“”তবুও সুজন ভাই!আপনি আমায় খুব কষ্ট দিয়েছেন,আপনাল ককর্শ কন্ঠে বলা কথা গুলো আমায় খুব কাঁদাতো,আমি লুমে বসে খুব কাঁদতাম,আপনি খুব খালাপ সুজন ভাই,আপনি শুধু আমায় কষ্ট দেন””

কথাগুলো বলতে গিয়ে তুলির চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো,,,চোখের পলক পড়লেই যেনো চোখের পানি নিজ গতিতে ছুটতে আরম্ভ করে দিবে,,,সুজন তুলির কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে তুলিকে বুকের সাথে জাপটে ধরে অসহায় ভঙ্গিতে বললো,,,

“”আমি খুব স্যরি তোতলা রানী,আর কখনো কষ্ট দিবোনা,এখন থেকে আর আঘাত নয়,শুধু ভালেবাসবো তোকে,সত্যি বলছি!””

সুজনের কথা গুলো শুনে তুলির চোখের পানি বাঁধ মানলোনা,,,একা একাই ঝরতে আরম্ভ করে দিলো,,,এই অশ্রু কষ্টের অশ্রু নয়,,,এটা হলো ভালোবাসার #অপেক্ষার_প্রহর শেষ হবার সুখের অশ্রু,,,তুলি হাসি কান্না মিশ্রিত করে খুশিতে সুজনের পিঠে আলতো করে হাত রাখলো,,,

কিছুসময় দুজনের মধ্যে পিনপতন নীরবতা বিরাজ করলো,,,দুজন সুজনকে জড়িয়ে ধরে শরীরের উষ্ণতা অনুভব করলো,,,সুজন তুলির কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে সরে দাঁড়িয়ে মুখটা গম্ভীর করে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”তুলি!তুই কি করে আমায় ছেড়ে চলে যেতে চাইছিলিস,কিছু সময়ের জন্য আমার মনে হয়েছিলো!আমি বুঝি তোকে হারিয়ে ফেলেছি,বিশ্বাস কর!তখন আমার মনে হলো যেনো!আমার পুরো পৃথিবী টাই থমকে দাঁড়ালো””

তুলি এগিয়ে এসে পিছন থেকে সুজনকে জড়িয়ে ধরে হাসি কান্না মিশ্রিত স্বরে বললো,,,

“”কোথাও যাবোনা আপনাকে ছেড়ে,আলে আমি তো ভালোবাসা না পেয়ে কষ্ট পেতাম!আল আপনি ভালোবেসেও কাছে আসতে না পেলে আমাল থেকেও বেশি কষ্ট পেতেন,এতো কেনো ভালোবাসেন আমায়!আমি কি সত্যি আপনাল এতো ভালোবাসা পাবাল যোগ্য সুজন ভাই!””

সুজন তুলিকে নিজের দিকে ফিরিয়ে দু-হাতে তুলির মুখটা ধরে করুন স্বরে বললো,,,

“”তুলি!তুই আমার বেঁচে থাকার অক্সিজেন,তোকে ছাড়া আমার পৃথিবী টাই ওলট-পালট হয়ে যায়,তোর কাছে আমার একটাই চাওয়া!যায় হয়ে যাক না কেনো!তুই কখনো আমায় ছেড়ে যাস না প্লিজ””

তুলি স্মিত হেঁসে সুজনের হাতের উপর হাত রেখে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”আপনাকে ছেড়ে কোথাও যাবোনা সুজন ভাই!কিন্তু আল বেশিক্ষণ না খেয়ে থাকলে আমি এবাল সত্যিই উপলে চলে যাবো,খুব ক্ষুধা লেগেছে আমাল””

সুজন তুলির কথা শুনে তুলিকে ছেড়ে খিলখিল করে হেঁসে বললো,,,

“”পাগলি একটা!বস,আজ আমি নিজে হাতে তোকে খাইয়ে দিবো””

কথাটি বলে চেয়ার টেনে তুলিকে ইশারায় বসতে বললো,,,তুলি সুজনের কথা শুনে একের পর এক শকড হচ্ছে,,,চেয়ারে বসে ডান হাতে মুখ ভর করে দিয়ে অপলকভাবে চেয়ে রইলো,,,সুজন একলোকমা খাবার তুলির মুখের সামনে ধরে স্মিত হেঁসে ভ্রু নাচিয়ে মৃদুস্বরে বলল,,,

“”হা করে কি দেখছিস!আমি তোর সামনেই থাকবো,যতো পারিস পরে দেখে নিস,এখন খাবারটা খা,নইলে ঠান্ডা হয়ে যাবে তো!””

তুলি সুজনের কথা শুনে খাবারটা মুখে নিয়ে লজ্জায় মাথা নিচু করে চিবোতে লাগলো,,,সুজন তুলির লজ্জা মাখা মুখটা দেখে মৃদু হাসলো,,,সুজন তুলিকে খাইয়ে দিতে দিতে বাঁকা হেঁসে বললো,,,

“”তুলি!আমার ছুটি এখনো সাতদিন আছে,এখনি যদি এতো লজ্জা পাস,তাহলে পরে কি করবি!””

তুলি সুজনের কথা শুনে মাথা উঁচু করে চোখ দুটো রসগোল্লার মতো করে কপাল কুঁচকে বললো,,,

“”সাতদিন ছুটি!কিন্তু আপনি যে বললেন আপনাল ছুটি শেষ!””

সুজন তুলির দিকে চেয়ে অবাক চাহনিতে কপাল কুঁচকে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”কখন বললাম!আমি তোর সাথে একাকি সময় কাটাতে চাই,সেই জন্যেই তো বলেছিলাম সিলেট ব্যাক করবো””

সুজনের কথা শুনে তুলির রসগোল্লার মতো করা চোখে দুটো কোঠর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো,,,সুজন স্মিত হেঁসে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”আমি তো জানতাম!আমার চলে আসার কথা শুনলে তুই আমার সাথে আসার জন্য নাকের জলে চোখের জলে সমুদ্র বানিয়ে ছাড়বি,আর তুই সেটাই করলি””

তুলি অবাক চাহনিতে স্মিত হেঁসে চেয়ে রইলো সুজনের মুখের পানে,,,সুজন তুলির চাহনি দেখে মুচকি হাসলো,,,কথা বলতে বলতে দুজনেই খাবার খেয়ে শেষ করলো,,,সুজন হাত ধুয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে রুমে চলে গেলো,,,তুলি টেবিল থেকে সব কিছু কিচেনে নিয়ে পরিস্কার করে তারপর রুমে গেলো,,,

সুজন পিঠে বালিশ ঠেকে আধশোয়া অবস্থায় শুয়ে ফোন ঘাটতে লাগলো,,,তুলি চুপিচুপি বেডে গিয়ে সুজনের বুকে মাথা রেখে সুজনকে জড়িয়ে ধরলো,,,সুজন হাত বাড়িয়ে ফোনটা সেন্টার টেবিলের উপর রেখে তুলিকে জড়িয়ে ধরে তুলির চুলের সুভাস নিয়ে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”এভাবে যে হুটহাট করে আমাকে জড়িয়ে ধরছিস!তোর একটুও ভয় লাগছে না আমাকে দেখে!””

তুলি সুজনের কথা শুনে মৃদু হেঁসে টিশার্টের উপর থেকে টুপ করে সুজনের বুকে কিস করে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”আমার সব ভয় কেটে গেছে সুজন ভয়,এই বুকে আমি আমার শান্তি আর নিরাপত্তার স্থান খুঁজে পেয়েছি,তাই আর কোনো ভয় নেই আমার””

সুজন তুলির কথা শুনে তুলিকে সরিয়ে দিয়ে ধরফরিয়ে বেডে বসে কপাল কুঁচকে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”তুলি!তুই স্পষ্টভাবে কথা বলছিস!র উচ্চারণ সঠিক হয়ে গেছে তোর!””

তুলি সুজনের ডান হাত ধরে নিজের মুখে ছুঁইয়ে দিয়ে মৃদু হেঁসে বললো,,,

“”আমি তো বলেছিলাম!যেদিন আমার মনের ভয় কেটে যাবে সেদিন আমি সঠিক উচ্চারন করে কথা বলবো,কিন্তু আমার মনের ভয়টা যে এতো দ্রুত কেটে যাবে!আমি সত্যিই ভাবতে পারিনি!””

সুজন তুলির কথা শুনে স্মিত হাসলো,,,কিন্তু এতোদিন তুলির র কে ল বলা শুনে শুনে র উচ্চারণ আর সুজনের কাছে ভালো লাগলো না,,,সুজন তুলির দিকে চেয়ে কপাল কুঁচকে কিছু একটা ভাবলো,,,তুলি সুজনের চিন্তিত মুখ দেখে ব্যাস্ত স্বরে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”কি হয়েছে সুজন ভাই!আপনাকে এতো চিন্তিত দেখাচ্ছে কেনো!শরীর খারাপ লাগছে নাকি আপনার!””

সুজন দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে তুলির চোখে চোখ রেখে স্মিত হেঁসে বললো,,,

“”তুলি!আমার কিছু হয়নি,আমি একদম ঠিক আছি,আমি না একটা কথা ভাবছি!””

তুলি সুজনের কথা শুনে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে সুজনের দিকে চেয়ে রইলো,,,সুজন দু’হাতে তুলির মুখটা ধরে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”তুলি!তোর সাথে র উচ্চারণটা ঠিক মানাচ্ছেনা,তোর সাথে ল ই যায়,তুই সবার সাথে র উচ্চারণ করে কথা বলবি,কিন্তু!আমার সাথে নয়,তুই তো আমার তোতলা রানী!আমি যে সারাজীবন তোর মুখে ল শব্দটায় শুনতে চাই তুলি!””

কথাটি বলে স্মিত হেঁসে তুলির কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো,,,তুলি সুজনের কথা শুনে খিলখিল করে হেঁসে বললো,,,

“”সুজন ভাই!ল উচ্চালণ কলে যদি আপনাল তোতলা লানী হওয়া যায়!তাহলে আমি সালাজীবন আপনাল তোতলা লানী হয়েই থাকতে চাই!””
#অপেক্ষার_প্রহর
#writerঃআরিফা_ইসলাম
#পর্বঃ১৮

“”সুজন ভাই!ল উচ্চালণ কলে যদি আপনাল তোতলা লানী হওয়া যায়!তাহলে আমি সালাজীবন আপনাল তোতলা লানী হয়েই থাকতে চাই!””

কথাটি বলে খিলখিল করে হাসতে লাগলো,,,তুলির হাসি ঝুনঝুনির মতো শব্দ হয়ে চার দেয়ালের মাঝে ঝংকার তুললো,,,সুজন মুগ্ধ নয়নে সেই হাসিটা উপভোগ করলো,,,সুজনকে এভাবে চেয়ে থাকতে দেখে তুলি হাসি থামিয়ে ভ্রু নাচিয়ে দুষ্টুমি করে বললো,,,

“”এভাবে কি দেখছেন!আগে কখনো দেখেন নি আমায়!নাকি আমি প্লাস্টিক সার্জালি কলে এসেছি!””

সুজন তুলির কথা শুনে চোখের পলক ফেলে মৃদু হেঁসে তুলিকে কাছে টেনে নিয়ে বললো,,,

“”বাব্বাহ্!আমার ডায়ালগ গুলো দেখছি আমাকেই শোনানো হচ্ছে,আমাকে কপিও করছিস তুলি!””

তুলি সুজনের কথা শুনে সুজনের মাথার চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে মৃদু হেঁসে বললো,,,

“”সুজন ভাই!এই মানুষটা পুলোটাই যখন আমাল,তখন কপি কলাল প্রয়োজন পড়বে কেনো শুনি!””

সুজন তুলির কথা শুনে দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে মুচকি হেঁসে বললো,,,

“”সবই ঠিক আছে,কিন্তু তোর এই সুজন ভাই বলাটা আর আপনি বলাটা চেঞ্জ করতে হবে,আমাকেও অবশ্য তুই বলাটা চেঞ্জ করতে হবে””

তুলি সুজনের কথা শুনে কপাল কুঁচকে শাহাদাৎ আঙুল মুখে দিয়ে দাঁত দিয়ে নখ কাঁটার ভঙ্গিতে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”সুজন ভাই!আর্মিতে আপনাল পদবী যেনো কি!আমাল মনে পড়ছেনা””

সুজন অবাক চাহনিতে চেয়ে কপাল কুঁচকে বললো,,,

“”ক্যাপ্টেন,কিন্তু কেনো বলতো!””

তুলি সুজনের দিকে একপলক চেয়ে আলতো করে চোখ দুটো বন্ধ করে মুচকি হেঁসে বললো,,,

“”এই ক্যাপ্টেন!চলো না আমলা বাইলে থেকে ঘুলে আসি””

কথাটি বলে মুচকি হেঁসে লজ্জায় মাথা নিচু করে মুখটা দুহাত দিয়ে ঢেকে রইলো,,,তুলির মুখে এই ক্যাপ্টেন কথাটি শুনে সুজনের মনের মধ্যে অন্যরকম অনূভুতি কম্পিত হলো,,,তুলির মুখে ক্যাপ্টেন কথা শোনায় সুজনের ক্যাপ্টেন হওয়া যেনো এতো দিনে সার্থক হলো,,,তুলি তুমি করে কথা বলছে শুনে সুজন মুচকি হেঁসে তুলির মুখ থেকে দুহাত সরিয়ে দিয়ে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”তোতলা লানী!তাড়াতাড়ি লেডি হও,আমলা বাইলে ঘুলতে যাবো তো!তাল আগে তোমায় কোচিং এ ভর্তি কলতে হবে””

তুলি সুজনের তোতলা কথা শুনে চোখ দুটো রসগোল্লার মতো করে সুজনের দিকে চেয়ে রইলো,,,মূলত তুলির লজ্জা নিবারনের জন্যেই সুজন তুলির ভাষায় কথা বললো,,,সুজন তুলির অবাক চাহনি দেখে মুচকি হেঁসে ইশারায় রেডি হতে বললো,,,তুলি খিলখিল করে হেঁসে বেড থেকে নেমে গেলো,,,

❤️❤️❤️❤️❤️❤️

তুলিকে কোচিং এ ভর্তি করে বাইরে থেকে ঘুরে সপিং করে ডিনার শেষ করে বাসায় আসতে রাত দশটা পার হয়ে গেলো,,,তুলি ফ্রেশ হয়ে বেডে আসলে সুজন তুলির হাতে একটা নীল শাড়ি ধরিয়ে দিয়ে মৃদুস্বরে বললো,,,

“”শাড়িতে তোমায় খুব দেখতে ইচ্ছে করছে,আমার ইচ্ছেটা পূরন করো প্লিজ””

তুলি মুচকি হেঁসে শাড়িটা নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো,,,কিছু সময় পর কোনো মতো শাড়ি পেঁচিয়ে পড়ে আঁচল কোমরে গুঁজে ওয়াশরুমের দরজা খুলল,,,দরজা খোলার শব্দে সুজন ওয়াশরুমের দরজার দিকে চেয়ে রইলো,,,তুলি ওয়াশরুম থেকে বাইরে এসে দেখলো সুজন ওর দিকে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে আছে,,,

তুলি লজ্জায় চোখ দুটো বন্ধ করে দেয়ালে পিঠ ঠেকে দাঁড়িয়ে রইলো,,,তুলিকে এমন অবস্থায় দেখে সুজনের মাথা পুরো হ্যাং হয়ে গেলো,,,দ্রুত বেড থেকে নেমে শব্দহীন পায়ে তুলির পাশে এসে দেখলো তুলির চোখের পাতা ঘনঘন কাঁপছে,,,সুজন আলতো করে তুলির চোখের পাতায় ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো,,,

সেদিনের সেই একই রকম স্পর্শ পেয়ে তুলি চট করে চোখ দুটো খুলে সুজনকে নিজের খুব কাছে দেখতে পেলো,,,সুজন তুলির চোখের চাহনি দেখে মুচকি হেঁসে মৃদুস্বরে বললো,,,

‘”সেদিন স্বপ্ন ছিলো না তোতলা রানী!সেদিন সত্যি আমি ছিলাম,সেটা আজ বুঝিয়ে দিলাম তোমায়””

তুলি চোখ দুটো রসগোল্লার মতো করে কিছু একটা বলতে যেতেই সুজন তুলির ঠোঁট দুটো নিজের দখলে করে নিলো,,,তুলি একহাতে সুজনের গলা জড়িয়ে ধরে অন্য হাতে সুজনের মাথার চুল খামচে ধরে রেসপন্স করতে লাগলো,,,

অবস্থা বেগতিক দেখে তুলি সুজনকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে হাঁপাতে লাগলো,,,সুজন স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে মুচকি হেঁসে বললো,,,

“”ব্লাউজ ছাড়া শাড়ি পরে আমার মাথায় নষ্ট করে দিয়েছো তুমি,এখন তুমি চাইলেও আমায় আঁটকে রাখতে পারবেনা””

তুলি সুজনের কথা শুনে লজ্জায় মুখ ভেঙচি কেটে মুচকি হেঁসে বললো,,,

“”আঁটকে লাখছি নাকি আমি!শ্বাস নিতে কষ্ট হলো তাই সলিয়ে দিলাম””

সুজন তুলির সারা পেয়ে তুলির হাত ধরে হ্যাচকা টেনে কোলে তুলে নিলো,,,তুলি সুজনের গলা জড়িয়ে ধরলে সুজন বাঁকা হেঁসে বললো,,,

“”আঁটকাতে চাইলেও কোনো সমস্যা হতো না,বাসায় শুধু তুমি আর আমি,এমন করে শাড়ি পরে আমার মাথায় আগুন ধরিয়ে দিলে কেনো শুনি!””

তুলি লজ্জায় সুজনের বুকে মুখ লুকিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,,,

“”আমি কি ইচ্ছে কলে পলেছি নাকি!ব্লাউজ না থাকলে আমি কি কলবো””

তুলির এমন ফিসফিসিয়ে বলা কথা সুজনের পুরো অস্তিত্বকে নাড়িয়ে দিলো,,,সুজন তুলিকে নিয়ে বেডে শুইয়ে নিজেদের উপর ব্লাংকেট টেনে মুচকি হেঁসে বললো,,,

“”অবশেষে আমাদের মিলনের #অপেক্ষার_প্রহর টা শেষ হবে আজ””

এতদিনের ঝগড়া বিবাদ,রাগ জেদ,মান অভিমান সব শেষ করে দুটি হৃদয় ভালোবাসার নতুন এক পর্বে পা রাখলো,,,কিন্তু ওদের পরিপূর্ণ #অপেক্ষার_প্রহর এখনো শেষ হয়নি,,,সবার জীবনে কিছু না কিছু চাওয়া পাওয়া থাকে,,,আর সেগুলো প্রতিটি ধাপে ধাপে এসে শেষ হয়,,,

একটা চাওয়া পূর্ণ হতে না হতেই আরেকটি চাওয়া পূর্ণ হবার জন্য #অপেক্ষার_প্রহর গুনতে হয়,,,তেমনি সুজন তুলির জীবনেও হয়তো এমন ছোট বড় অসংখ্য চাওয়া পাওয়া আছে,,,যেগুলো পূর্ণ করার জন্য এখন থেকে দু’জনে মিলে একসাথে #অপেক্ষার_প্রহর গুনবে,,,

❤️❤️❤️❤️❤️❤️

ছুটি শেষে অফিসে জয়েন করে সুজন তুলিকে ঠিকমতো সময় দিতে পারেনা,,,শুধু রাতে দেখা হয় দু’জনের,,,তুলি পড়াশোনা নিয়ে ভীষন ব্যাস্ত সময় পার করছে,,,তুলি আপ্রাণ চেষ্টা করছে যেনো মেডিকেলে চান্স পেয়ে যায়,,,সুজন রাতে বাসায় এসে প্রতিদিনই তুলিকে পড়ার টেবিলে পায়,,,

পড়াশোনার এতো চাপ নিতে গিয়ে তুলি হাঁফিয়ে উঠেছে,,,তবুও হাল ছাড়তে চাইছে না,,,সুজন মাঝে মাঝে নিষেধ করে এতো পড়াশোনা করতে,,,কিন্তু তুলির জেদের কাছে হার মানতে বাধ্য হয় সুজন,,,প্রায় রাতেই তুলি পড়তে পড়তে টেবিলে বইয়ের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে যায়,,,

মাঝরাতে ঘুম ভেঙে তুলিকে বেডে নিয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরে,,,সারাদিনের ক্লান্তি শেষে তুলিকে বুকে আঁকড়ে ধরার সময় টুকুই যেনো সুজনের শান্তি,,,

দু’জনের এমনি মিষ্টি মধুর সম্পর্কের মধ্যে দিয়েই পার হয়ে গেলো দুটো মাস,,,দেখতে দেখতে তুলির মেডিকেল এ্যাডমিশনের সময়ও ঘনিয়ে এলো,,,তুলির এ্যাডমিশনের জন্য সুজন আগে থেকে তিনটা দিন ছুটি নিলো,,,এ্যাডমিশনের আগের রাত থেকে সুজন যতোটা পারে তুলিকে সুন্দর করে সব কিছু বুঝিয়ে দিলো,,,

এ্যাডমিশনের দিন সুজন নিজেই তুলিকে নিয়ে গেলো,,,তুলি ছলছল নয়নে অসহায় দৃষ্টিতে সুজনের চোখের দিকে চেয়ে রইলো,,,সুজন তুলির চোখের পানি দেখে এতো লোকের ভীরেও তুলিকে জড়িয়ে ধরে স্মিত হেঁসে বললো,,,

“”এই পাগলি!কাঁদছো কেনো!আমি আছি তো তোমার পাশে,যা হবে ভালোই হবে,আমি তো তোমায় দেখেছি!তুমি রাত দিন এক করে কত কষ্ট করে পড়াশোনা করেছো,তোমার এই চেষ্টা কিছুতেই বিফলে যেতে পারেনা,মাথা ঠান্ডা রেখে সামনের দিকে অগ্রসর হও সোনা””

তুলি সুজনের ভরসা পেয়ে শুকনো ঢোক গিলে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে গেটের ভিতর ঢুকে গেলো,,,যতক্ষণ না তুলি চোখের আড়াল হলো সুজন একই ভাবে তুলির দিকে চেয়ে রইলো,,,সত্যিকারের ভালোবাসা গুলো এমনি হয়,,,

হাজার হাজার মানুষ ভরসা দিলেও সেটাকে ভরসা মনে হয় না,,,যতোক্ষণ না ভালোবাসার মানুষের ভরসা পাওয়া যায়,,,অর্থ বিত্ত,ধন সম্পদ দিয়ে কতোটা খুশি করা যায় আমি জানিনা,,,তবে ভালোবাসার মানুষটা যদি শূন্য হাত দুটো বাড়িয়ে দিয়েও বলে,,,

“”কোনো ভয় নেই,সামনে এগিয়ে যাও,আমি আছি তো তোমার পাশে””

বিশ্বাস করেন আর নাই বা করেন,,,ভালোবাসার মানুষের এই ভরসা টুকু যে আমাদের জীবনে কি!,,,তা একমাত্র তারাই উপলব্ধি করতে পারে,,,যারা এই ভরসা টুকু পেয়েছে,,,তুলি চোখের আড়াল হলে সুজন গেটের পাশে রাখা বেন্ঞ্চের উপর বসলো,,,তুলি হল রুমে প্রবেশ করে সব ফর্ম পূরন করে বুকে হাত দিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে মনে মনে বললো,,,

“”আমি আমাল জন্য নয়,আমি আমাল ক্যাপ্টেনেল জন্য ডক্টল বউ হতে চাই,আমাকে নিয়ে আমাল ক্যাপ্টেনেল চোখে যে স্বপ্ন দেখেছি!সেটা যেনো বৃথা হয়ে না যায়””

চলবে,,,

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here