অপেক্ষার শেষে পর্ব -০৫+৬

#অপেক্ষার_শেষে
#পর্ব_৫
#লেখিকা_কে_এ_শিমলা

নিজেদের রুমে বসে কেউ গল্প করছেন,আবার কেউ শুয়ে আছেন।এভাবেই পার হলো অনেকটা সময়। রাত দশটা একুশ মিনিটে’র সময় সবাই খেতে বসলো। অতিথি যারা এসেছেন তারাই প্রথমে খাচ্ছেন। মেয়েরা সবাই পরে খাবে‌। আরিয়া উপর নিচে যাওয়া আসা করলেও আরিশা’র ছায়া পর্যন্ত এখানে নেই। বাড়ি’র প্রায় ছয়-সাত জন ছাড়া এখনো কেউ আরিশা কে দেখেনি। অনেকে’র দেখা’র ইচ্ছে আবার অনেকেই স্বাভাবিক।” তবে একজনে’র চোখ উপর এবং নিচ দু’জায়গায় ঘুরছে। নাহ আজ কেউ আরিশা কে দেখবে কী না তা নিয়ে সন্দেহ আছে।
বেচারি আরিশা জানেইনা নিচে ওকে দেখার জন্য ইচ্ছা পোষণ করছে কতজন মানুষ। আর ও উপরে বসে মনে’র আনন্দে মায়ে’র সাথে কথা বলেই যাচ্ছে। কখনো আবার বাবা,চাচা,চাচি সবার সাথে চলছে তাঁর কথা। সকালেও সবার সাথে কথা বলে এখানে এসেছে,আর এখন এভাবে কথা বলছে। মনে হচ্ছে যেনো আজ দু’দিন পর উনাদে’র সাথে কথা বলছে।”

এভাবেই সবার খাওয়া শে’ষ হয়। এইবার আরিয়া বললো- দেখ বোন তোর জন্য এখনো আমরা খাইনি,সবাই খেয়ে রুমে গিয়ে হয়তো ঘুমিয়েও পরেছে।আরিশা’র কথা বলা শেষ ও ফোন রেখে নিচে আসলো। কেউ নেই এখন ডাইনিং টেবিলে’র আশে পাশে সবাই নিজেদের রুমে আছেন।”
ঈশিকা খানমে’র খাওয়া শেষ। ইরিন আর আরিয়া বলেছিল ওদের লে’ট হবে উনি যেনো খেয়ে নেন। তিনিও খেয়ে নিলেন ক্ষু’ধা তো কম লাগেনি সারাদিন এদিক ওদিক ছু’টা’ছু’টি।তবে এখন উনি ওদের খাওয়া দাওয়া’য় তদারকি করছেন”। সবাইকে নিজ হাতে নিয়ে খেতে বললেও ওরা অল্প খাবার নিয়ে নাড়াচাড়া করছে।উনি নিজ হাতে সব কিছু বেড়ে দিচ্ছেন। আবার সবার সাথে এটা ওঠা নিয়ে কথা বলছেন।এভাবে ওদেরও খাওয়া শে’ষ হয়।”
রাত পৌনে এগারোটা,ছাদে বসে সবাই গল্প করছে।আরিয়ান , ইরফান,আরাফ,দিয়ান,মাহিন,লাবিব। ইরিন, আরিয়া, হৃদি,লাবিবা,মিতু, সোহা। শুধু নেই আরিশা এবং দিশা ওরা রুমে। দিশা’র মাথা ব্যা’থা করছে তাই ও শুয়ে পরেছে।”এখন সবাই চলে আসলে ও একা ঘুমাবো কী করে এতো বড় বাসা তাছাড়া বাসায় কত পরিচিত-অপরিচিত মানুষ। আর এমনিতেই আরিশা’র এসব গল্প,আ’স’ড়ে মোঠেই আগ্ৰহ নেই। একা থাকতে পারলেই বাঁচে,একটা স্ব’স্তি মিলে ওর একা সময় কা’টা’নো’তে। অথচ এই মেয়েটাই একসময়, ভী’র, গল্প,কাজিনরা এক হয়ে গল্পে’র আ’স’ড় জমানো।এসবে সবার প্রথমেই থাকতো আরিশা। আর এখন!”

সে যায়নি ওদের মধ্যে রুমে আছে দিশা’র সাথে। দিশা কে দেখেই বোঝা যাচ্ছে প্রচন্ড মাথা ব্যা’থা করছে। আরিশা দিশা’র পাশে বসে ওর কপালে হাত রেখে বললো আমি ম্যা’সা’জ করে দেই দিশা। দিশা অবাক চোখে তাকালো আরিশা’র দিকে।ওর বাড়িতে ওর আম্মু ম্যা’সা’জ করে দেন কিন্তু এখানে বলতেও পারছেনা উনাকে”। কিন্তু ভাবেনি আরিশা ওকে এই কথা বলবে। তাছাড়া আরিশা’র সাথে দিশা ভালো করে কথাই বলেনি এখনো পর্যন্ত শুধু দেখেই যাচ্ছে।দিশা মুচকি হেঁসে বললো আচ্ছা আপু। আরিশা ওর মাথা কোলে নিয়ে যত্ন সহকারে ম্যা’সা’জ করে দিতে লাগলো। যে কেউ প্রথমে দেখলে ভাববে এখানে দু’বোন বসে আছে।”

সবাই যখন জানতে পারলো আরিশা রুমে অর্থাৎ ছাদে আসবেনা তখন সেখান থেকে লাবিব বলে উঠলো- উনি এসেছেন থেকে রুমে’র মধ্যে উনাকে কী আমরা দেখবো না।” লাবিবে’র কথা শুনে আরিয়ানে’র “ভ্রু” কুঁচ’কে যায়। ওইদিকে আরাফ ওর হাত মু’ষ্টি’ব’দ্ধ করে রেখেছে। একে তো ওর চাচাতো বোন একজনে’র সাথে ভাব জমিয়েছে এখন ওর বোনকে দেখতে চায়।”
আরিয়া আড়-চোখে আরাফ কে দেখছে। মনে মনে খুশি হয়ে বললো দেখো তখন তো আমাকে দোষ দিছো।এখন দেখো কে আগে কথা বলতে চায়। আরিয়া এখন একদম আরাফে’র সামনে সোজা’সু’জি বসেছে। যেনো সে অন্য দিকে না তাকায় আর না আরাফ ওকে দেখে সে কোনোদিকে তাকায়। এভাবেই অনেকটা সময় সবাই গল্প করে। আরিয়ানে’র এখানে মোঠেই ভালো লাগছে না। সে উঠে দাঁড়ায় উদ্দেশ্য রুমে যাওয়া।”

আরিয়ানে’র এখানে না থাকার কারণ সে খেয়াল করে দেখেছে একটা মেয়ে দু’বার হৃদি বলতে শুনেছে। হৃদি বার বার ওর দিকে তাকাচ্ছিলো। ওর বুঝতে বাকি নেই এভাবে তাকানো’র কী মানে। এমনিতেই সে এখনো তার মায়াপরি কে দেখতে পারেনি স্বচক্ষে।এখন এই মেয়ে’র এমন কার্যকলাপ। এজন্যই সে মেয়েদে’র সাথে গল্পের আসড়ে বসে না। আরাফ ইরফান কে বলে আরিয়ান রুমে চলে আসে।”
শুয়ে শুয়ে ভাবতে থাকে সেই দিন গুলো’র কথা যে দিন গুলো আজ ওদের এই অবস্থার কারণ। অবশ্য আরিয়ান এমনটা তাঁর মায়াপ’রি’র ভালো’র জন্যই তো করেছিল।”

সেদিন আরিয়ান নিত্যদিনে’র মতোই কম্পিউটার ল্যাবে এসেছিল। ল্যাবে নিজের কাজ শেষ করে মাঠে গিয়ে বসেছিল বন্ধুদের সাথে। সেদিন ইরফান আসেনি ওদের সাথে। বন্ধুদে’র সাথে গল্প করছিল এবং এদিক সেদিক তাকাচ্ছিলো আরিয়ান”। এদিক সেদিক তাকানো’র কারণ হলো আরু। কিন্তু না দেখলো না ওকে। কিছু সময় পর ওয়াশরুমে’র উদ্দেশ্যে উঠে দাঁড়ায় আরিয়ান। কিন্তু সে দেখেনি তাঁর পেছনে আরু আসছিল।”
আরিয়ান যখন ওয়াশরুম থেকে বের হয় তখন কেউ ওর হাত ধরে নিয়ে একটা কর্নারে দাঁড়ায়। আরিয়ান দেখলো সেই মানুষটা আরু। ও মুচকি হেঁসে বললো- হেই পিচ্চি কোথায় ছিলে এতো সময় দেখলাম না তোমাকে। আরু আরিয়ানে’র দিকে তাকিয়ে বললো- আরিয়ান ভাই তোমাকে আমার ভালো লাগে। আরিয়ান ও মজার ছলে বললো- তোমাকেও আমার ভালো লাগে পিচ্চি। আরু একবার আরিয়ানে’র দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নেয়।” কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠে- শুধু ভালো লাগে না আমি তোতোমাকে ভাভালোও ববাসি আআরিয়ান ভাই।” বলে আরিয়ানে’র হাতে একটা কাগজ গুঁ’জে দেয়।”

এদিকে আরু’র মুখ থেকে এই কথাটা শুনে আরিয়ান বাকরুদ্ধ আরু এসব।” ভালোলাগা শব্দটা মেনে নেওয়া যায় কিন্তু ভালোবাসা।আরিয়ান ওর হাতে’র দিকে তাকালো। কাগজ টা দেখে বুঝতে পারলো এটা কিসে’র কাগজ। আরু চলে যাওয়া’র জন্য পা বাড়াতেই আরিয়ান বললো দাঁড়াও আরু।” আরু আবার আরিয়ানে’র কাছে ফিরে আসে কিন্তু এখন আরিয়ানে’র মুখ কেমন যেন গ’ম্ভী’র।”
আরিয়ান আরু কে বললো- আরু এসব কথা কোথা থেকে শিখেছো?এসব তো তুমি আগে বলোনি।” তাহলে আজ এসব কোথা থেকে শিখে এসে বলছো, সত্যি করে বলো। আরিয়ানে’র এমন গলা’র সুর শুনে আরু’র ভ’য় লাগে। সে অসহায় দৃষ্টিতে আরিয়ানে’র দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো: আমি তোমাকে সত্যি ভালোবাসি আরিয়ান ভাই।” এবার আরিয়ান রে’গে যায় এবং বলে- সত্যি করে বল আরু এসব তুই কোথা থেকে শিখেছিস। আরিয়ানে’র রা’গ দেখে আরু কাঁদু কাঁদু কন্ঠে বলে দেয়- সাথী আপু’র কাছ থেকে জেনেছি ভাইয়া। আরিয়ান বললো কী কী বলেছে সাথী তোকে?”

আরু বলতে লাগলো: সেদিন আমি ওমর ভাইকে দেখেছি ওই যে ওইখানে দাঁড়িয়ে সাথী আপুকে একটা ফুল আর চকলেট দিয়েছিলো আর সাথী আপু ওমর ভাইকে একটা কাগজ দিয়েছিল। আমি পরে সাথী আপু কে জিজ্ঞেস করছি ওমর ভাই কেনো তোমাকে ফুল আর চকলেট দিলো আপু?” আর তুমি ওমর ভাইকে ওই কাগজ কেনো দিলে,কী ছিল কাগজে?”
তখন সাথী আপু বললো- আমি আর ওমর দু’জন দু’জন কে ভালোবাসি। তাই ওমর আমাকে ফুল আর চকলেট দিয়েছে। আর আমি যে কাগজ ওকে দিয়েছে ওইটা প্রেমপত্র দিয়েছি।”

আমি জিজ্ঞেস করলাম ভালোবাসা কী,আর প্রেমপত্র কী আপু? তখন আপু বললো: ভালোবাসা মানে হলো মায়া,যাকে ভালোবাসবে তাকে অনেক ভালো লাগবে। আর প্রেমপত্র হলো তাকে ভালোলাগে ভালোবাসো এটা জানিয়ে চিঠি লেখা। আমি বললাম আচ্ছা আপু- আমার ওতো আরিয়ান ভাইকে ভালো লাগে,মায়া হয়,তাহলে কী আমি আরিয়ান ভাই কে ভালোবাসি। সাথী আপু বলেছিলো- হ্যাঁ হয়তো ভালোবাসো।তুমি আরিয়ান ভাই কে বলো তোমার তাকে ভালোলাগে আর ভালোবাসো।”
আরু: কীভাবে বলবো আপু আমার ভ’য় করে।” সাথী: তাহলে আমার মতো প্রেমপত্র দাও।
আরু: আমি তো জানিনা কীভাবে লিখতে হয়।” সাথী- আমি লিখে দেবো।
সাথী আপু আমাকে এটা লিখে দিয়ে বললো এটা তোমাকে দিতে আর ভালোবাসি বলতে।”

আরু’র মুখে এসব শুনে আরিয়ান কী বলবে বুঝতে পারছেনা। মানে!” ক্লাস নাইন আর টেনে’র ছেলে মেয়েরা এভাবে প্রেম করছে।” তবুও আরিয়ান বললো- তুমি আর সাথী’র কাছে যাবে না আরু। আর আমাকেও এসব কথা কখনো বলবে না তুমি। তুমি জানো প্রেম কী আর ভালোবাসা কী?”
আর যদি এসব কথা তুমি আমাকে বা অন্য কাউকে বলো তাহলে আমি তোমার বাসায় বলবো বুঝেছো। নয়তো হ্যাড স্যার কে বলবো তুমি এসব খা’রা’প কথা আমাকে বলেছো। আরু আরিয়ানে’র দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো। ওর চোখে জল টলমল করছে। ধীর কন্ঠে বললো- কিন্তু আরিয়ান ভাই সত্যি আমি তোমাকে ভালোবাসি। আরিয়ানে’র এমনিতেই রা’গে মাথা ফে’টে যাচ্ছে,আবার আরু’র কথা শুনে রা’গ বেরে যায়।” সে জোরে ধ’ম’ক দিয়ে বললো-…..

চলবে!#অপেক্ষার_শেষে
#পর্ব_৬
#লেখিকা_কে_এ_শিমলা

সে জোরে ধ’ম’ক দিয়ে বললো-চুপ একদ’ম চুপ!বলেছিনা এসব না বলতে তাহলে আবার বলছিস কেন?” আরাফে’র কথা শুনে আরু এবার কেঁদে দেয়।”
ততক্ষেন সেখানে রিয়া,ইরু এসে পরেছে। আরিয়ান ওদের কে দেখে বললো- ওকে নিয়ে যাও রিয়া। রিয়া আর ইরু ভ’য়ে ভ’য়ে আরু কে সেখান থেকে নিয়ে যায়। আরিয়ানও নিজেকে স্বাভাবিক করে সেখান থেকে চলে যায়।

আরু কে নিয়ে এসে রিয়া এবং ইরু বললো- আরিশা তুই কেন এসব ভাইয়া কে বললি। বলেছিলাম তো ভাইয়া রা’গ করবে। আরিশা ভে’জা গলায় বললো- সত্যি আরিয়া আমি আরিয়ান ভাই কে ভালোবাসি। এবার আরিয়াও ধ’ম’ক দিয়ে বললো- চুপ আমি গিয়ে আরিয়ান ভাই কে বলে দেবো তুই আবার এসব পঁ’চা কথা বলছিস।” তারপর আরিয়া ইরু অর্থাৎ ইরিন কে বললো পানি’র বোতল নিয়ে আসতে। ও নিয়ে আসে আরিশা পানি পান করে। হুম রিয়া,আরু,ইরু হলো আরিয়া,আরিশা,ইরিন। আরিশাই হলো আরিয়ানে’র সেই “মায়াপ’রি। যাকে সে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে কিন্তু…….

দরজায় কারো করা করা’ঘা’তে’র ফলে আরিয়ানে’র ঘুম ভা’ঙ্গে। দরজা খুলে দেখলো আরাফ দাঁড়িয়ে আছে। আরিয়ান কে দেখে আরাফ বললো- কী’রে ভাই এতো ঘুম তোর!” কয়টা ডাক দিয়েছি তুই জানিস?”
আরিয়ান বললো- দুর কাল রাতে তোমরা এভাবে শুধু শুধু বসিয়ে না রাখলে তো আমার এতো ঘুম পেতো না।” আরাফ: আচ্ছা ঠিক আছে! আটটা বাজে আমি ইরফান এখনো নাস্তা করিনি তোর জন্য,ফ্রেশ হয়ে জলদি আয়।” বলে আরাফ চলে গেলো।”

আরিয়ান ফ্রেশ হয়ে সেও নিচে আসলো।সাথে ইরফান।ওরা’ই আছে নাস্তা’র বাকি একমাত্র, তিনজন একসাথে বসে খেতে লাগে। তাদের মধ্যে উপস্থিত হয় রাত। রাত ওদের উদ্দেশ্যে বললো- ভাইয়া তোমরাও কী এখন ঘুম থেকে উঠেছো?” আরিয়ান উত্তর দিলো- হ্যাঁ আপ্পি এখন উঠেছি কেনো? বলেই একটা মুচকি হাঁসি দিলো।” রাত বললো- না আম্মু আর বড় আম্মু বলে ছোট বাচ্চা’রা লে’ট করে উঠে,বলতে পারো আমি। কিন্তু তোমরা তো বড় ভাইয়া তাহলে এখন উঠলে কেনো। ওরা তিনজনই ওর কথা শুনে হেঁসে দেয়। তখন সেখানে রাতে’র আম্মু আসেন রাতে’র খাবার নিয়ে তাই আর কেউ কোনো কথা বলেনি।”

ছাদে’র এক ক’র্না’রে দাঁড়িয়ে আছে আরিশা। কিছুক্ষণ থেকেই এখানে দাঁড়িয়ে আছে ও। এখানে কেউ নেই সবাই নাস্তা সেরে নিজেদের রুমে আছেন। আজ তো আবার ইরিনে’র গায়ে হলুদ। আরিশা ভাবে ওর ছোটবেলা’র কথা,ভাবনায় আছে আরিয়ান। আরিশা তো আজ ছয়-সাত বছর ধরে আরিয়ান কে দেখেইনি। শুধু জানে আরিয়ান নামক মানুষটা তার খুব প্রিয় মানুষ,ভালোবাসা’র মানুষ। আরিশা ভাবে এখন আরিয়ান কে দেখলে চিনতে পারবে তো। আগের মতো আছে আরিয়া ভাই।”এরকমটা ভাবছিল আরিশা! হঠাৎ আবার ভাবে আসলে সত্যিই কী আরিয়ান ভাই আমাকে পছন্দ করে না। তাহলে কী সেদিনে’র কথা গুলো সত্য।হয়তো সত্যি তাইতো আরিশা এখানে এসেছে জেনেও আরিয়ান একবার দেখা করলো না, একটু কথা বললো না।
এসব ভাবতে ভাবতে আবার এয়ারপোর্টে’র কথা মনে পরলো আরিশা’র। হুম! এয়ারপোর্টে আরিয়ানে’র সাথে আরিশা’র ধা’ক্কা লেগেছিল। যা ইতিমধ্যে আরিয়ান জেনে গিয়েছে তবে আরিশা জানেনা। আরিয়ান তো আরিশা কে চিনে নিয়েছে কিন্তু আরিশা আরিয়ান কে চিনতে পারেনি!” চিনবে কী করে সে তো ভালো ভাবে ওকে দেখেনি।চেনার চেষ্টা করেনি”।

আরিশা ভাবে আচ্ছা! ওই ছেলেটা কে এক পলক দেখে কেনো মনে হলো সে কাছে’র কেউ। এসব আকাশ কুসুম ভাবলো আরিশা। কিন্তু একজনও জানতে পারলো না একজন অপরজন কে দেখা’র জন্য কত আগ্ৰহ নিয়ে বসে আছে। কতটা অপেক্ষা করছে। একজন হয়তো প্রায় সময়ই দেখতো কিন্তু একজন তো অভিমানে সেই চোখে’র দেখাটাও দেখতো না।

আরিশা চিন্তা-ভাবনা একপাশে ফেলে রেখে ছাদ থেকে নেমে আসে। ও নিচে নামতে যাচ্ছিল তখন উপর থেকে একটা ঘটনা দেখে সেখানেই সিঁড়ি’র উপর দাঁড়িয়ে যায়।

আরিয়া দ্রূত পায়ে হেঁটে ডাইনিং টেবিলে’র দিকে যাচ্ছিল ওর হাতে কাঁচের জগ। দ্রুত যাওয়া’র কারণ উপরে ওর ফোনে কল এসেছে আর ফোন রুমে রাখা। তাই ও কল রিসিভ করার জন্য চেয়েছিল দ্রুত জগটা রেখেই যাবে। নিচের দিকে একটু মাথা ঝুঁ’কে ফেলায় একটা ঘটনা ঘটে যায়। ওর সাথে ধা’ক্কা লেগে একজন ভদ্র মহিলা’র হাত থেকে উনার পানের বাটা নিচে পরে গিয়ে ঝ’ন’ঝ’ন শব্দ করে উঠে। ভাগ্যিস পানে’র বাটা খালি ছিল না হলে তো তু’লকা’লা’ম কা’ণ্ড ঘটে যেতো এখানে। এদিকে আরিয়া’র হাত থেকে কাঁচে’র জগ ফ্লোরে পরে ভে’ঙ্গে টু’ক’রো টু’ক’রো হয়ে গিয়েছে।এসব দেখে দেখে ভদ্র মহিলা ফোনে’র কল কেটে আরিয়া’র উদ্দেশ্যে বলতে লাগলেন- এই অ’স’ভ্য মেয়ে দেখে চলাফেরা করতে পারো না। দিলে তো এতো দামি জগটা ভে’ঙ্গে। দেখে তো ভালো ঘরে’র মেয়েই মনে হয় কিন্তু চলাফেরা এমন কেনো। বড়দে’র সামনে কীভাবে চলতে কিছু জানোনা। আমাকে ধা’ক্কা দিয়ে আমার পানে’র বাটাও ফেলে দিলে। আবার এতো দামি জগটাও ভে’ঙ্গে দিলে। অন্যে’র জিনিস বলে কী যেভাবে ইচ্ছা ব্যবহার করবে! যেভাবে ইচ্ছা ভা’ঙ্গ’চু’র করবে নাকি।”

আরিয়া মাথা নিচু করে জ’ড়ো’স’ড়ো হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এবার নিচু কন্ঠে বলে উঠে- দুঃখিত আন্টি আমি খেয়াল করিনি আপনাকে। জগ ভা’ঙ্গা’র জন্যেও আমি আন্টি মনি’র কাছে ক্ষ’মা চেয়ে নেবো।”
আরিয়া’র কথা শুনেও ভদ্র মহিলা অনেক কিছু বলতেছেন। আর আরিয়া মাথা নিচু করে সব শুনছে। ঈশিকা খানম এগিয়ে আসবেন তখন…..

আরিশা সবকিছু উপর থেকে দেখেছে এখন আর সহ্য হলো না ওর‌। সামান্য একটা জগ ভে’ঙ্গে ফেলেছে বলে এই মহিলা এতো কথা শুনাচ্ছে ওর বোন কে। উনার দো’ষেই তো ধা’ক্কা লেগেছে আর জগ ভে’ঙ্গে’ছে। সে গ’ট’গ’ট করে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে। এসে আরিয়া’র পাশে দাঁড়িয়ে ভদ্র মহিলা’র উদ্দেশ্যে বলতে লাগলো- অনেক বলেছেন আন্টি, দো’ষটা তো আপনার ছিল।” দেখতেই পারছিলেন ও দ্রুত টেবিলে’র দিকে যাচ্ছিল তারপরও আপনি ফোনে কথা বলতে বলতে এদিকে আসলেন আর ধা’ক্কা লাগলো। আপনি ওই দিকে একটু সরে আসলে তো আর এসব হতো না। নিজের দো’ষ তো অন্যে’র উপর ভালোই চাঁপা’তে পারেন আপনি।”
আরিশা’র কথা শুনে ভদ্র মহিলা এবার ওর উপর ক্ষে’পে যান। বলেন- এই মেয়ে কে তুমি ওর হয়ে সাফাই গাই’ছো। আর আমার দো’ষ মানে কী বলতে চাও তুমি! আমি ইচ্ছে করে ওকে ধা’ক্কা দিয়েছি।দেখে তো ভদ্র ঘরে’র মেয়ে মনে হয় কিন্তু তোমার মধ্যে তো ভদ্রতা বলতে দেখছি কিছুই নেই।”

উনা’র কথা শুনে আরিয়া বললো- আমি ওর বোন আপনি বিনা দো’ষে আমার বোন কে যা ইচ্ছা তাই বলে যাবেন আর আমরা কিছু বলবো না। আর আমরা ভদ্র ঘরে’র মেয়ে যথেষ্ট ভদ্র,তাইতো আমার বোন নি’র্দো’ষ হওয়া স’ত্ত্বেও আপনাকে কিছুই বলেনি। আমিও কিছু বলতাম না কিন্তু একে তো আপনার ও দো’ষ ছিল তার উপর আমার বোনকে একা দো’ষা’রো’প করছেন আবার এতো মানুষে’র সামনে এত কথা বলছেন।” আপনার মধ্যে কী ভদ্রতা আছে। আপনার যদি এতোই ফোনে কথা বলা’র থাকে তাহলে অসংখ্য রুম আছে বাসায়।যেকোনো রুমে বসে কথা বলতেন এভাবে হেঁটে হেঁটে কথা বলে অন্যকে ধা’ক্কা দিচ্ছেন। আবার জিনিস ভে’ঙ্গে যাওয়ায় দো’ষ ও দিচ্ছেন”। এরকম একটা নয় পঞ্চাশ টা জগ ভরে দেওয়া’র ক্ষমতা আমাদের আছে। কিন্তু আমাদের কে তা দিতে হবে না। কারণ এখানে না আমার বেস্ট ফ্রেন্ড কিছু বলবে না আমাদের আন্টি মনি কিছু বলবেন। আপনি এতো কথা বলছেন কেনো। আর জিনিসের প্রতি আমাদের মায়া আছে। আপনার মধ্যে নেই,যদি থাকতো একটু ওইদিকে সরে আসতেন।”
আরিশা’র এমন কথা শুনে আরিয়া……

চলবে!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here