#অপেক্ষার_শেষ_প্রহর
#পর্বঃ১১
#লেখিকাঃহৃদিতা_ইসলাম_কথা
আমার ভ্যা ভ্যা করা কান্না দেখে স্রোত স্তম্ভিত।বুঝতে পারছে না কি এমন হলো যে আমি এভাবে ভ্যা ভ্যা করে কান্না জুড়ে দিলাম।সে বিষ্ময়কর চাহনিতে বড়বড় চোখে চেয়ে আছে আমার দিকে। কিন্তু আমার তাতে কোন প্রকার ভ্রুক্ষেপ নেই।কেনই বা থাকবে আমি তো নাকি শুধু কান্নাই করতে পারি।এবার এই ব্যাটা খবিশকে দেখাবো আমি আর কি করতে পারি।
আন্টি এগিয়ে এসে চিন্তিত হয়ে বলে উঠলেন,
— কি হইছে মা এভাবে কাঁদছিস কেন?
— আন্টি দেখনা তোমার এই বজ্জাত ছেলে আমি এমিতেই ব্যাথা পাইছি তার উপর আবার আমারে মাইর লাগাইছে।এ্যা এ্যা ….
বলে আরো জোরে জোরে কাঁদছি চোখে দুহাত ডলে একদম একটা ইনোসেন্ট বাচ্চার মত।দেখতে অবশ্য আমাকে খুবই কিউট লাগছে।আমার এমন কান্না দেখে আন্টি এবার স্রোতের কান টেনে ধরলেন।
— আউচ আম্মু বিশ্বাস করো আমি এমন কিছুই করি নাই।এই মেয়ে সব বানিয়ে বলছে।
উনার কথা শেষ করার আগেই আন্টি দুচারটা চাপর মেরে বসলেন স্রোতের পিঠে।আমি মুখ টিপে হাসছি।আর হুটহাট কান্না কান্না মুখ করে ইনোসেন্ট ফেস নিয়ে সবটা দেখছি।আহা! বেশ শান্তি লাগছে আন্টি বেশ করে বকছে স্রোতকে।আমার বাঁকা আর দুষ্টুমাখা হাসি আন্টির চোখের আড়াল হলেও স্রোতের চোখে তা ঠিকই ধরা পরেছে। সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে আর চোখে মুখে রাগের আভাস ফুটে উঠেছে স্রোতের। তাও হাসছি।বুঝচ্ছে চোখের ইশারায় আমার খবর আছে।একা পেলেই খবর করবে আমার।কিন্তু আমি তো আর ওনাকে ধরা দিচ্ছি না। আন্টি এবার আমাকে কোমরে স্প্রে করে দিতে চাইলে আমি মানা করলাম। উনি বললেন,
— মা তুই বেশ ব্যাথা পেয়েছিস। এটা একটু স্প্রে কর মা।আমি আর স্রোত বাইরে যাচ্ছি। তারপরও যদি ব্যাথা না সারে তো তোকে ডক্টরের কাছে নিয়ে যাবো।
— না না আন্টি তার প্রয়োজন নেই আমি স্প্রে করে নিচ্ছি।
এবার সবাই রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই আমি উঠে দাড়িয়ে জামা টা হালকা সরিয়ে সেখানে স্প্রে করে নিলাম। নাহ একটু পর ভালোই অনুভব হলো আমার।বেশ জোরেই লেগেছিল।দরজা খুলে বাইরে আসার জন্য পা বাড়াতেই স্রোত হাত ধরে টেনে আবারো ঘরে নিয়ে এসে দরজা আটকে দিল।সবকিছু এতটাই তাড়াতাড়ি হয়ে গেল যে আমি হতবাক।বিস্ময়ে মুখ দিয়ে টু শব্দটাও বের হচ্ছে না আমার।আমি অবাক চোখে তাকিয়ে উনি এবার আমার দিকে একপা এগোতেই হুম ফিরলো আমার।এতক্ষণ যেনো একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম আমি।আমি ভ্রুকুচকে তাকিয়ে উনি এবার আমার দিকে আরোও দুপা বাড়িয়ে দিয়ে এগিয়ে এসে আমার সামনে দাড়ালেন।এরপরই ঝুকে এলেন কিছুটা আমার দিকে।উনি বেশ লম্বা আমার থেকে। আমার মাথা উনার বুকে গিয়ে ঢেকে।উনাকে এভাবে ঝুকতে দেখে আমি অটোমেটিকলি পিছিয়ে নিলাম আমার মাথা। কেমন একটা অনুভুতি হচ্ছে আমার।একদম অন্যরকম কিছু যা আগে কখনো অনুভব হয় নি।উনি এবার আমাকে পাশের একটা দেয়ালের সাথে চেপে ধরেছে।আমাকে দেয়ালে ঠেসে দাড় করিয়ে উনি দুপাশে হাত দিয়ে দাড়ালেন।পুনরায় ঝুকে গেলেন আমার মুখের সামনে।কেমন একটা অস্বস্তি আর অস্থিরতা দুটোই ঝেকে বসেছে আমার শরীর মন জুড়ে।ভয়ে নাক মুখ খানিকটা কুচকে আছি।উনি এবার শান্ত কন্ঠে বললেন,
— আম্মুকে মিথ্যা কেনো বললে।এতটুকু একটা পিচ্চি কি নাটক টাই না করে আমাকে বকুনি খাওয়ালে।আবার আমার বাথরুমে সাবান পানি রেখেছিলে যাতে আমি পিছলে যাই তাই না।
আমি একটা শুকনো গিললাম। আর আমতা আমতা করে বললাম,
— ক্ কে বলেছে আপনাকে এসব। আমি কেনো করতে যাবো।আমি করি নাই।আপনি একটু বেশি বুঝেন।সরুন আমার কাছ থেকে। এত ঘেষে দাড়িয়ে আছেন কেনো?
— ও আচ্ছা তুমি করোনি।খুব নাটক করা হচ্ছে তাই না আমি জানি তুমিই করেছো।বলবো সবাইকে সেদিন ওয়াশরুমে আমাকে জরিয়ে ধরেছিলে। আমার কাছে প্রুফ আছে।
যদি এখন সত্যিটা স্বীকার না করো তবে..
বলেই ঠোঁট কামড়ে হেসে একটা বাঁকা হাসি দিলেন।
–বেশ করেছি আমি। কি করবেন আপনি? হুহ।একদম বেশি বাড়াবাড়ি করলে চেচিয়ে সবাইকে জড়ো করবো।
— হ্যাঁ আমি তো জানি তোমার আমাকে বিয়ে করার কুব শখ তাইতো সবাইকে চেচিয়ে আমাদের এভাবে দেখাতে চাইছো।যাতে সবাই দরে বেধে বিয়ে দিয়ে দেয়। তুমি যে আমাকে এতটা ভালোবাসো আগে বলেনিতো।
বলেই চোখ মারলেন।রাগে গা জ্বলছে।এই লোক বড্ড পাজি।
— হুহ বয়েই গেছে আপনাকে বিয়ে করতে।সারাজীবন অবিবাহিত থাকলেও আপনাকে বিয়ে করবো না।
বলতেই উনি আমার দুহাত হাত চেপে ধরলেন।
–ছাড়ুন বলছি। ছাড়ুন আমাকে।উফফ লাগছে আমার হাতে।
— এখনো তো কিচ্ছু করলামই না।
সন্দিহান চোখে চেয়ে বললাম,
–কি করবেন আপনি?
–দেখাচ্ছি কি করবো?
বলেই আরো কাছে আসতে চেষ্টা করতেই আমি এবার বুকে ধাক্কা দিয়ে খানিকটা সরিয়ে দেওয়ার চেস্টা করে বললাম,
–আগে সরুন এখান থেকে এভাবে ঝুকে আছেন কেনো স..সরুন আমার কাছ থেকে।
— কেনো সরবো?
— স্ সরুন। আ্আমার অস্বস্তি হচ্ছে। দ্ দুরে যান বলছি।দম বন্ধ লাগছে আমার।
আমি কাপাকাপা কন্ঠে বলতেই উনি আরো কাছে এসে পরলেন আমার। এবার আরো ভয় করছে।আমার চোখ বন্ধই আছে।আস্তে আস্তে করে উনার দিকে তাকাতেই উনার চোখে অন্য কিছু দেখতে পেলাম।নেশাক্ত দৃষ্টিতে অপলকে দেখে চলেছে আমায়। ভয়ে আমি মৃদু কাঁপছি। উনি একদৃষ্টে আমার ঠোঁটের দিকে কেমন নেশাতুর দৃষ্টিতে দেখছে।হুট করেই এগিয়ে আসতে লাগলেন আমার দিকে ভয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছি আমি।হুট করেই আমার অধরে কিছুর স্পর্শ পেতেই।চোখজোড়া আপনাআপনি বড় হয়ে গেল আমার।আমার ঠোঁট জোড়ায় উনি আলতো করে ঠোট ছোয়ালেন।আমার মনে ৪৪০ ভোল্টের শকড খেলাম আমি।স্তব্ধ হয়ে গেছি। হঠাৎ করেই কি হলো বুঝতে খানিকটা সময় লাগলো।উনি আলতো করে ঠোঁট স্পর্শ করতেই উনি আবারো নেশাক্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আমায় দেখছে।লজ্জায় চোখেমুখে লাল আভার ছড়াছড়ি চলছে।লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে। চোখ নামিয়ে নিচ দিক তাকিয়ে আছি।আর জোরে শ্বাস নিচ্ছি। কি করলেন কি একটু আগে উনি।কেনো আর এভাবে আমায়।ভাবতেই একরাশ লজ্জা আর ভালোলাগায় ছেয়ে গেল আমার মনে।তারমানে উনার মনেও আমার জন্য…..
আর ভাবতে পারলাম না আমি লজ্জায় দৌড়ে ওখান থেকে পালিয়ে গেলাম।ইশশ কেমন যেন হচ্ছে বুকের ভিতর।দুরুম দুরুম আওয়াজ করছে।এক দৌড়ে বাড়ি চলে এসেছি।এবাবেই অনুভূতি গুলো গভীর হতে থাকে মনের গহীন থেকে।আর ভালোলাগা গুলো আমার অজান্তেই ভালোবাসার রুপ নিয়েছিল।তাই একদিন ভেবেই নিয়েছিলাম যে আমি আমার মনের কথা বলে দিব উনাকে।
————————————————
বর্তমান,,
রাস্তা দিয়ে হাঁটছি আর আনমনে ভাবছি কি করবো আমি।আরো কিছুদিন কেটে গেছে।এখন প্রায়ই শুভর সাথে দেখা হয়। ওই বাচ্চাটার দিকে তাকালে ভিষন কান্না পায়।মা হারা সন্তান। ভাবছি আমি বারবার উনার সামনে এভাবে পড়তে ভিষন অস্বস্তি হচ্ছে আমি আর পারবো না।কিছুতেই পারবো না এখানে থাকতে। আর এখন তো রোজ রোজ দেখা হবে।শুভকে আমারই স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন স্রোত।আর এখন থেকে রোজ উনার সাথে দেখা হয়। আমাকে এখান থেকে ফিরে যেতে হবে।যে অতীতকে পিছনে ফেলে এসেছিলাম সে বারবার আমার সামনে কেনো চলে আসছি।আর পারছি না নিজেকে সামলে নিতে। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম আমি আমার জবটা ছেড়ে বাড়ি ফিরে যাবো। এখানে থাকা অসম্ভব আমার পক্ষে।
——————————————-
আজ সকাল থেকেই আমার মনটা কেমন যেন হচ্ছে। কিছু ভালো লাগছে না সব কেমন অস্থির লাগছে। কোথাও মন টিকছে না আমার।ভালো লাগছে না কিছু। চলে গেলাম আমি প্রিন্সিপাল ম্যামের রুমে।
— ম্যাম আসবো।
— এসো কথা এসো।বসো।
— ম্যাম কিছু বলার ছিল আমার।
— বলো না কি বলবে।সংকোচ রেখো না।
— ম্যাম আসলে আমি আর জবটা করতে পারছি না।আসলে আমাকে বাড়ি ফিরে যেতে হবে।
— কেনো কথা? হটাৎ চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত কেনো নিলে? আমাদের এখানে আর ভালো লাগছে না।
— না ম্যাম সেরকম কিছুই না।আমি আসলে বাড়ি ফিরে যেতে চাইছি। বাবা মায়ের শরীরটা বেশি একটা ভালো যাচ্ছে না। অনেক তো হলো তাই ফিরে যেতে চাইছি।
— আচ্ছা তুমি যখন সিদ্ধান্ত নিয়েই নিয়েছ আমি আর আটকাবো না।নতুন করে সবটা শুরু করো। নিজের জীবনটাকে সাজিয়ে নাও।তা কবে যেতে চাইছো তুমি।আর কিছুদিন থেকে যাও না।
— সামনের সপ্তাহে যেতে চাইছি ম্যাম।আজ ভালো লাগছে না ক্লাস করাতে। আজ বাড়ি যেতে চাই।
— আচ্ছা ঠিকাছে।তোমার ক্লাস করানো লাগবে না।তুমি বাড়ি গিয়ে রেস্ট নাও।
— আসি ম্যাম।
— এসো।
বলেই বেরিয়ে এলাম।ম্যামের বলা কথা গুলো কানে বাজছে নতুন করে সবটা শুরু করো।জীবনটাকে সাজিয়ে নাও।কিন্তু সম্ভব কি সেটা সম্ভব নয়।ভেতরে থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বেরিয়ে এলাম আমি।
হাটতে হাটতে রাস্তায় দেখা মিললো আঙ্কেলের উনি দেখেই চিনে নিলেন আমায়।তারপর কুশল বিনিময় করে জোর করে বাড়িতে নিয়ে আসলেন।বাড়িতে এসে আন্টিকে খুজে পেলাম না।আঙ্কেলকে জিজ্ঞেস করতেই উনার মুখটা নিকশ কালো অন্ধকারে ছেয়ে গেল।চোখ ফেটে দুফোটা জল গড়িয়ে পড়লো। আমি হতবাক। আঙ্কেলের ভিতর এক চাপা কষ্ট অনুভব হচ্ছে।
উনি এবার কান্না ভেজা কন্ঠে যা বললেন তা শুনে আমি স্তব্ধ। কি বলছেন উনি এটা কি করে হতে পারে।এতকিছু হয়ে গেছে আর আমি কিছুই জানি না।
#চলবে……
(