অপেক্ষার শেষ প্রহর পর্ব -১২ ও শেষ

#অপেক্ষার_শেষ_প্রহর
🌼অন্তিম পর্ব🌼
#লেখনীতেঃহৃদিতা_ইসলাম_কথা

টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে আমার গাল বেয়ে পারছি না মেনে নিতে।কি করে মেনে নিবো সবটা।এতটা ধোয়াশা কেন ছিল? কেনো হলো এমন পরিনতি।কেনো গল্পটা এভাবে পাল্টে গেল।চরিত্রগুলো বদলে গেলো।।শুধুমাত্র আমার বোকামির জন্য। একটা ভুল সাত সাতটা বছরের দুরত্ব। সবটা সবটা আমার জন্য হয়েছে আমি দায়ী ছিলাম। উনাকে ভুল বুঝছি।চোখে যা দেখেছি তাই বিশ্বাস করেছি।এটা ভাবিনি সব দেখা সত্যি হয় না।কিছু কিছু চোখের দেখাও মিথ্যে হয়।যেমন এখন আমার নিজেকেই নিজের মিথ্যে মনে হচ্ছে। আমার পুরো পৃথিবীটা যেন মিথ্যে মনে হচ্ছে।

ডায়রিটা নিয়েই নিচে বসে পরলাম আমি।আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সত্যিটা আজ সমনে এলো।তারমানে এতদিন আমার ধারনা মিথ্যে ছিল।আমি ভুল ছিলাম।আমি একাই মুধু জ্বলিনি পুড়িনি।আমার সাথে আরো একজনকেও প্রতিনিয়ত জ্বালিয়েছি পুড়িয়েছি। নিজেকে শুধু কস্ট দেই নি আরও একজনকে দুঃখের সাগরে ভাসিয়েছি।এতটা এতটা ভালোবাসা ছিল উনার মনে আমি কখনো ভাবতে পারিনি।উল্টে ভুল বুঝেছি আমি তাকে।মরে যেতে ইচ্ছে করছে। এতগুলো জীবন নষ্ট করেছি আমি।সব আমার জন্য হয়েছে আমি দায়ী সবকিছুর জন্য। অঝোরে কেদেই যাচ্ছি আমি।আঙ্কেল নিজের চোখের জল মুছে দরজার আড়াল থেক৷ বেরিয়ে গেলেন।মেঝেতে বসে কাদছি আমি।

কিছুক্ষণ আগের ঘটনা,,

আঙ্কেলের কথা শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে বসে রইলাম।
চোখ থেকে টপটপ করে পানি ঝড়ছে।

— বাচাতে পারিনি তাকে অনেক চেষ্টার পরও।

কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলাম,

— কি হয়েছিল আঙ্কেল? আন্টি হঠাৎ করে কেন এমন হলো?

কান্নায় ভেঙে পড়লো আঙ্কেল সাথে আমিওেনে নিতে পারছি না এমন একটা পরিনতি আল্লাহ এমন কেনো করলেন? এত ভালো একটা মানুষ ছিলেন।সবাইকে কত ভালোবাসতেন একটুতেই আপন করে নিতেন।

— ক্যান্সার ছিল ওর।আমরা যখন জানতে পারি খুব দেরি হয়ে গেছে।ও এটাকে নিজের মধ্যে চেপে রেখেছিল কাুকে বুঝতেই দেইনি।ফয়সালের যখন অবস্থা খারাপ হয়ে গেছিলো তখন ওর হঠাৎ অসুস্থতা বেড়ে যায় তখনি আমরা জানতে পারি সবটা।ওর হাতে সময় কম ছিল। তাই যত দ্রুত সম্ভব ফয়সালের বিয়ের ব্যবস্থা করি।ইচ্ছে না থাকা সত্বেও সেদিন নিজের ভালোবাসার কাছে হেরে অন্য কাউকে নিজের জীবন সঙ্গী হিসেবে বেছে নিতে হয়েছিল।কিন্তু আমার ছেলেটা পাথর হয়েছিল রে মা।কখনো সে তাকে আপন করে নিতে পারেনি।আমি জানি আমার ছেলে আজও তাকে ভালোবাসে।ফয়সালের মায়ের মেস ইচ্ছে ছিল।ওর সন্তানকে দেখার।শুভ আসার পর শিনা আমাদের ছেড়ে চলে গেল।মেয়েটা বড্ড ভালো ছিল রে মা।কখনো অভিযোগ করেনি।আমার ছেলেটার সব অবহেলা মুখ বুঝে সহ্য করেছে।শুধু কিছুই করার ছিল না আমাদের। আমার ছেলেটা তো একটা পাথরে পরিনত হয়েছিল।আমরাই বা কি করতাম।নিজের মায়ের শেষ ইচ্ছে পুরন করতে সবসময় নিজেকে হাসি খুশি দেখানোর চেষ্টা করলেও ওর কষ্টটা বুঝতে পেরেছি আমরা।

আঙ্কেলের কথা গুলো মুনেব কিছু বুঝতে পারছি না আমি।স্রোত তো শিনাকেই ভালোবাসতো আর ওর সাথেই তো বিয়ে হয়েছে তবে কেনো আঙ্কেল বলছে ভালোবাসার মানুষটিকে না পাওয়ার যন্ত্রণায় পাথর হয়ে গেছে। আমি বাড়িতে ঢুকেই শিনার একটা ছবি দেখতে পাই।যেখানে শুভ দু বছরের একটা বাচ্চা। আর আঙ্কেল বললেন শুভর যখন এক বছর বয়স তখনই আন্টি এব পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন। আর শিনার নাকি একটা এক্সিডেন্ট এ মারা যায়।দুটো ঘটনাই তাদের জীবনে ঝড় তুলে দিয়েছিল।

আমি কান্না মিশ্রিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করলাম কে ছিল সেই মেয়ে আঙ্কেল যাকে স্রোত ভালোবাসতো।আঙ্কেল োখের পানি মুছে ভেজা গলায় বললেন,

— জানি না মা। ও কিছুদিন কেমন যেনো একটা করছিলো? আমরা ওকে জিজ্ঞেস করলে ও শুধু বলেছিল।ও চলে গেছে মা আমাাে ছেড়ে চলে গেছে।কেনো চলে গেল? কেনো আমার ভালোবাসাটা বুঝলো না।কেনো আমাকে এতটা যন্ত্রণা দিয়ে চলে গেল।আমি পারছি না মা আমি পারছি না।খুব কেঁদেছিল আমার ছেলে কিন্তু আজও জানতে পারলাম না কে সে? ও কখনো বলেনি আমাদের সেই মেয়ে কে? যাকে ও এতটা ভালোবাসতো।নিজের থেকেও বেশি।সবথেকে বেশি।

আঙ্কেল চলে গেলেন।আমি কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে বসে আছি।কেনো জানি বুকের ভিতর চিনচিনে ব্যাথা হচ্ছে। আমি এবার শুভর রুমে গেলাম।এটাই স্রোতের রুম।ওখানে একটা ডায়রি চোখে পড়লো আমার।ডায়রিটা পরে যা জানতে পারলাম তাতে আমার পায়ের তলে মাটি সরে গেল।সে আমি ছিলাম যাকে স্রোত ভালোবাসতো। ওর প্রতিটা অনুভূতি আমার সাথে কাটানো প্রতিটা মুহূর্ত প্রতিটা স্মৃতি যত্ন করে ডায়রির পাতায় মনের সব মাধুর্য দিয়ে লিপিবদ্ধ করেছে।আমাদের প্রথম দেখা হওয়ার মুহূর্ত থেকে আজ পর্যন্ত যতবার আমাদের দেখা হয়েছে।সেব সব মুহূর্তে ওর না বলা কথা গুলো সব লিখে রেখেছেন।
এক আকাশ কষ্ট দিয়ে লিখেছে।
এসব পড়ে দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার মত অবস্থা আমার।প্রথম দিন যেদিন আমাদের চট্টগ্রামে দেখা হয়েছিল সেদিনের অনুভূতি গুলো পড়ে বুকের ভিতরটা মোচর দিয়ে উঠে।

“আজ এত বছর পর তোমাকে এভাবে খুজে পাবো ভাবিনি।জানো তোমাকে প্রথম দেখে আটকে গেছিলাম আমি।সবটা আমার কল্পনা মনে হচ্ছিল। যেমনটা স্বপ্নে আসো আবার চলে যাও আমার ধরা ছোয়ার বাইরে।তেমনটাই ভেবেছিলাম তোমাকে।কিন্তু তুমি আমার কল্পনা ছিলে না আমার সত্যি ছিলে তুমি।বুকের ভিতর চিনচিন করে ব্যাথা হচ্ছিল খুব।কতটা খুশি হয়েছি আমি তোমাকে বলে বোঝানো যাবে না।আমার না বলা কথা গুলো না বলা থেকেই গেলো।পরিপূর্ণ করতে দিলে না আমাদের কাহিনি!
কেনো চলে গিয়েছিলে?কেনো বুঝলে না আমার ভালোবাসা? একটুো কি কষ্ট হয় নি আমাকে ছেড়ে দিতে।এভাবে কাউকে কিছু না বলে চলে এসেছিলে কেনো? জানো খুব করে খুজেছি তোমায় কিন্তু কেউ তোমার সন্ধান দিতে পারে নাই।খুব কষ্ট হচ্ছিল, খুব যন্ত্রণা হচ্ছিল এখানে এই যে যেখানে এই যে হৃদপিণ্ড অবস্থিত সেখানে খুব রক্তক্ষরন হয়।কেনো বুঝো নি পিচ্চি আমার হৃদগহীনে শুধুই তোমার বসবাস।”

কলিজাটা যেনো ছিড়ে যাচ্ছে আমার কি করে পারলাম আমি তাহলে কি সেদিনের দেখা সবকিছু ভুল ছিল।তাহলে কি অন্য কিছু ছিল যা আমার বোঝার ভুল হয়েছে। হ্যা সেটাব হয়েছে।এই সবকিছু মিথ্যে নয়।আমিই ভুল ছিলাম।আমার ভুলের জন্য সবটা শেষ হয়ে গেল।

অতীত,,

আজ পাশের একটা কলেজে নবীন বরন। সেখানে অনেক আয়োজন বড় করে অনুষ্ঠান হবে।স্রোত বলেছে সবাইকে সেখানে নিয়ে যেতে।তাই আমি আজ সুন্দর করে সেজেছি।একটা নীল শাড়ি পড়ে নীল মুঠো ভর্তি কাচের চুরি।আর হালকা সাজ।চুলগুলো খোলা।আজ প্রথম বার শাড়ি পড়েছি আমি।কাকিমনি খুব সুন্দর করে পড়িয়ে দিয়েছেন শাড়িটা।বেশ কম্ফোর্ট করেই পরিয়েছে কিন্তু তবুও হিমসিম খাচ্ছি।আমি জেনেছি স্রোতের শাড়ি কাচের চুরি এসব নাকি জুয়েলারি হিসেবে খুব পছন্দের।কেননা এগুলো সেই কিনে দিয়েছিল গিফট হিসেবে।কেয়াকেও দিয়েছে।কিন্তু আমি জানতাম আমার জন্যই উনার এত আয়োজন। মেলায় আসা আর এসব কিছু করা। আর আজ সব তার পছন্দ মতই পড়েছি।তার মনের মত করে সেজে উপস্থিত হই সেই কলেজের সামনে।কিন্তু সেখানে গিয়ে যা দেখতে পাই তাতে যেনো আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে।স্রোত শিনা নামের একটা মেয়েকে প্রপোজ করছে।এই দৃশ্য দেখে মুহূর্তেই চোখ ঘোলা হয়ে এলো আমার।চোখের জল আটকে রাখার বৃথা চেষ্টা করি নি আর ঝড়তে দিয়েছি তাকে অঝোরে।শেষ মুহূর্তে যখন স্রোত তাকে খুশিতে গদগদ হয়ে জরিয়ে ধরলো তখন আর নিজেকে সামলাতে পারি নাই।ছুটে চলে যাই সেখান থেকে অঝোরে কাদছি আর দৌড়াচ্ছি।কেয়া বা আরিফ ভাই সেখানে না থাকায় তারা কেউ এ বিষয়ে কিছু জানল না।আমি কেয়াকে আমার অনুভুতি সম্পর্কে পুর্বেও কিছু বলি নাই।

বাড়িতে এসে কাউকে দেখতে পাই নি। ভালোই হয়েছে কেউ কিছু জানবে না।দৌড়ে নিজের রুমে গিয়ে অঝোরে কাদছি।কিছুক্ষণ পর কেয়ার পায়ের আওয়াজ শুনতেই আমি উচে বাথরুমে গিয়ে দরজা আটকে শাওয়ার ছেড়ে অঝোড়ে কাদছি।চোখের জল যেন বাধ মানছে না।যেনো এক সমুদ্র অশ্রু আমার আখিতে ভর করেছে।পাক্কা দুঘন্টা পর বেরোলাম।বেরিয়ে কাউকে পেলাম না।এতক্ষণ কেয়া ডাকাডাকি করলেও কোন প্রতিত্তোর করি নাই।একসময় কাথা গায়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।গায়ে জ্বর থাকলেও কাউকে বুঝতে দেই নি।

সেদিনের পর স্রোত রেগে ছিল কথার উপর।কেনে কথা এলো না।কতকিছু প্ল্যান করেছিল সে। এভাবে সবটা নষ্ট করে দিল।সে তো জানে কথার মনের তার জন্য ভালোবাসা আছে।কথার চোখের ভাসা সে পড়েছে তবে কেন এলো না সে? কি এমন হলো যে এলো না? তাই সে রেগে তিনদিন কারো সাথে কথা বলেনি খায় ও নি।

এভাবে কেটে গেল দুদিন কথা কাউকে কিছু বুঝতে দেয় না।তার মনের মাঝে উথাল পাথাল করে চলা হড়ের আভাস কাউকে পেতে দেয় না সে।শুধু নিরবে অশ্রু বির্সজন দেয় আর ভাবে কেনো আপনি আমায় এভাবর কাছে টেনে নিলেন। কেনো ঠকালেন আমায়।ভালো যখন বাসেনই না তবে কেনে তার অনুভূতি গুলোকে আমার মাঝে সঞ্চার করেছিলেন।কেনো আমায় ভালোবাসা নামক মরন ব্যাধিতে আসক্ত করেছেন।
খুব কষ্ট হচ্ছে আমার খুব জ্বলছে। পারছিনা আর পারছিনা।চলে যাবো আটনার থেকে দুরে সবার থেকে দুরে।সুখে থাকবেন আপনি। নিজের ভালোবাসার মানুষটির সাথে।ভিলতে পারবো না আপনাকে কিন্তু এই কিছুদিনের স্মৃতি আকড়ে সারাজীবন বাঁচবো। ভালো থেকো ভালোবাসা।

কাউতে কিছু না বলেই বাড়ি ফিরে আসে কথা।

রাগ কমলে আর কথাকে না দেখে থাকতে না পেরে ছুটে যায় স্রোত আরিফদের বাড়ি কিন্তু সেখানে যা জানতে পারে তাতে মনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়।নিজেকে সামলাতে চাইলেও পারে না সে।সবার সামনে সামলে নিলেও বাবা মায়ের সামনে দুর্বল হয়ে পড়ে।স্রোতের মায়ের স্রোতের এমন অবস্থা দেখে অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।সে জানতো তার ক্যান্সারের কথা। ওষুধ নিলেও স্বামী সন্তানকে জানতে দেয় নি। তার অসুস্থতার কথা। তারা জানলে কষ্ট পাবে তাই। কথাকে তার খুব পছন্দ ছিল। মনেমনে কথাকে নিজের পুত্র বধু করে বাড়িতে তুলবে ভেবেছিল।কিন্তু তা আর হলো না।স্রোতের অবস্থার সাথে মায়ের অবস্থা ও খারাপ হয় সেই অচেনা অজানা মেয়েটির সম্পর্কে জানার চেষ্টা করলেও তারা কিছুই জানতে পারে না।ততদিনে স্রোত একটা পাথরে পরিনত হয়।মায়ের অবস্থা বেগতিক দেখে৷ সে মায়ের জন্য বুকে পাথর চেপে বিয়ে করে নেয়।কিন্তু সে শিনাকে ভালোবাসতে পারে না। শিনা তার ফুফাতো বোন। তার সাথেই সেদিন প্র্যাকটিস করছিল আর তখনই কথা দেখে ফেলে।

নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে শুধুমাত্র মায়ের শেষ ইচ্ছে তার সন্তানকে শেষ নিশ্বাস ত্যাগের আগে দেখতে চাওয়ার ইচ্ছে পুরন করতেই।সে তার স্ত্রীর সাথে সম্পর্কে লিপ্ত হয়।আর তখণই জন্মগ্রহন করে শুভ।কিন্তু সে কোনদিনে আর শিনার কাছে যায়নি তাকে ভালোও বাসেনি।আর শিনাও মুখ বুঝে সবটা সহ্য করে নেয়।কারন সে জানে স্রোতের ভালোবাসার গভীরত্ব ঠিক কতটুকু।তাই সে নিরবে সবটা সহ্য করেছে মেনে নিয়েছে।

হুট করেই কিছু একটা মনে পরতে উঠে দাঁড়িয়ে দৌড়ে বেরিয়ে এলাম।রাস্তার কাছে আসতেই ওপারে স্রোতকে দাড়িয়ে পড়তে দেখে দৌড়ে রাস্তার পার হওয়ার সময় হুট করেই কিছু একটা ঘটল। কিন্তু আমার মস্তিষ্ক ফাকা। কি হলো বুজে উঠতে পারলাম না আমি।আমার হুশ ফিরতেই স্রোত বলেই চিৎকার দিলাম।দৌড়ে গিয়ে ওর মাথাটা নিজের কোলে তুলে চিৎকার করে কাঁদছি আর স্রোতকে ডেকে চলেছি।

— স্রোত কি হলো উঠুন না।প্লিজ চোখ খুলুন প্লিজ আমাকে বকুন স্রোত। আপনাকে এত কষ্ট দিয়েছি এতটা আঘাত দিযেছি। শাস্তি দিন আমায়।প্লিজ উঠুন আমাকে আর এভাবে শাস্তি দিবেন না।

রক্তাক্ত শরীর নিথর দেহ।মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে।সাদা শার্টটা রক্তে ভিজে গেছে।আমার শাড়িটাে স্রোতের রক্তে মাখামাখি। আমার চিৎকার করে আর্তনাদ করছি।আশেপাশে অনেক মানুষের ভিড়।শুভ কাঁদছে তার বাবার শরীর ঝাঁকিয়ে।আস্তেধীরে পিটপিট করে চোখ খোলে স্রোত মুখে ম্লান হাসি দিয়ে আমার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে খুব কষ্ট করে করুন স্বরে থমকে থমকে বলে উঠলো,

— অ্ অনেক কিছু বলার ছি্ ছিলো আমার ত্ তোমায়।কিন্তু দেখ বলার সুযোগটাই পেলাম।তার আগেই তোমাদের থেকে বিদায় ন্ নিতে হচ্ছে। ণা বলা অনুভূতি গুলো না বলাই রয়েই গেল।অভিমান অভিযোগ গুলো আর বলা হলো না।তোমাকে নিয়ে হৃদগহীনে সাজানো স্বপ্ন গুলো পুরন হলো না।আমার #অপেক্ষার_শেষ_প্রহর শেষ হয়েও শেষ হলো না।

আমি অঝোরে কেদে যাচ্ছি।

–প্লিজ এসব বলবেন না।আমাকে ক্ষমা করে দিন।আর শাস্তি দিও না আমায়।আমি পারবো না।একটা ভুর সবকিছু শেষ করে দিতে পারে না।সাত সাতটা বছর আমি এই যন্ত্রণাকে বুকের মাঝে লুকিয়ে রেখেছিলাম।আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছি তোমার ভালো থাকার। আজ তোমাকে পেয়েও হারাতে পারবো না আমি।আর পারবো না।কিছুই হবে না তোমার স্রোত প্লিজ তুমি চোখটা খুলে রাখ।প্লিজ কেউ একটা গাড়ি আনুন।ওকে হসপিটালে নিতে হবে।

আশেপাশের সবার থেকে সাহায্য চাইছি আর আর্তনাদ করছি।ভয়ার্ত চোখে এদিক ওদিক তাকাচ্ছি।হারানোর ভয় গ্রাস করছে আমার মনকে।ভয়ে হাত পা কাপছে হিতাহিত জ্ঞান নেই আমার।

স্রোত তার রক্তমাখা হাত আমার গালে ছোয়ালেন। আলতো ছুইয়ে বললেন,

–আমার পিচ্চিটার কান্না মাখা মুখ সহ্য হয় না আমার।একটু হাসো পিচ্চি। শেষ বিদায়ের বেলায় তোমার হাসি মুখটা দেখতে চাই আমি।দিবে না আমাকে উপহার হিসেবে তোমার ওই ঘায়েল করা স্মাইল।যা আমার হৃদয়কে কত হাজারবার ক্ষতবিক্ষত করেছে।

আমি আরো জোরে কেদে দিলাম।তার হাতটা আকড়ে ধরলাম আমার গালে।আমার একটা কথা রাখবে কথা।

— নিষ্প্রাণ দৃষ্টিতে তাকালাম স্রোতের ম্লান মুখের দিকে।এখনো ঠোঁটে মুচকি হাসি।আমার হাতটা ধরে শুভর হাতটা টেনে আমার হাতে তুলে বললো,বাবা আর শুভর খেয়াল রেখো।ও আমার অংশ। আমাকে ওর মাঝে খুজে পাবে।আমাকে হেস বিদায়ে তোমার হাসিটুকু নিয়ে পরপারে পাড়ি দেওয়ার সুযোগ দাও।না চাইতেও আলতো হাসলাম।বাবা অনেক আগেই স্রোতের অবস্থা দেখেই স্তব্ধ হয়ে গেছেন।প্রেসার লো হওয়াতে অবস্থা খারাপ তার।উনি আমার টেনে আমার কুপালে আলতো চুমু দিলেন।মুখে প্রাপ্তির হাসি বললেন,

— জানো পিচ্চি আমার শেষ ইচ্ছে ছিল।অন্তত শেষযাত্রায় যেন একবার হলেও তোমার দেখা পাই।আমার মনের কথা বলতে পারি।আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করেছে। অস্পষ্ট সুরে বললেন,

–ভ্ ভালোবাসি পিচ্চি। খ্ খুব ভালোবাসি আমার পাখিটাকে হয়তো এটাই শেষ আর কখনো বলা হবে না আমি ভ্ ভালোবাসি তোমায়।

একটা হেচকি দিয়ে উঠলেন।আমি ওভাবেই থমকে গেলাম।তার বুকে মাথা দিয়ে শুয়ে ছিলাম। হিতাহিত জ্ঞান শুন্য পাথরে রুপান্তরিত আমি।

———————————————-

–মা!

কারো শান্ত শীতল কন্ঠে ভাবনার সুতো ছিড়লো।

–মা…… বাবার কথা খুব মনে পড়ছে তাই না।খুব মিস করছো তাই না?

শুভ আমাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরেছে। চোখ থেকে দুফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো গাল বেয়ে । শুভ সন্তপর্নে সে পানি মুছে দিল।

আজ আরো পনেরো বছর কেটে গেছে।শুভ এখন বিশ বছরের যুবক বেশ বুদ্ধিমান সে।সবসময় সবটা খেয়াল থাকে তার।সবটা আগলে রাখে এমনকি আমাকেও। এই বয়সে সেই আমার ভরসা।আমার একমাত্র অবলম্বন যাকে ঘীরে আমার পৃথিবী আমি বেঁচে আছি ওকে বুকে আগলে।মা না হয়েও মা হওয়ার সুখ পেয়েছি আমি।স্রোতের অভাবও সে পুরন করেছে।ওকে দেখলে স্রোতের প্রতিবিম্ব ফুটে উঠে যেন।সেই সময়ের যুবক স্রোতকে দেখতে পাই আমি।মা ছেলে মিলে আরো কিছুক্ষন সময় নিরবতায় কাটালাম।

সন্ধ্যায় খাওয়া শেষে রুমে এসে বেলকনিতে চলে এলাম।
হ্যাঁ বেঁচে আছি আমি।আমার স্রোতের আমানতকে বুকে আগলে বেচে আছি।
তাকে প্রতি মুহূর্তে অনুভব করে বেঁচে আছি।আমার প্রতিটা নিশ্বাসে সে বেচে আছে।ভালোবাসা কখনো মরে না।সে বেঁচে থাকে প্রেমিক- প্রেমিকার মনের অন্তস্তলে।ভালোবাসার কখনো মৃত্যু হয় না।সে তো অমর।

ভালোবাসার মানে শুধু চাহিদা নয় দৈহিক পাওয়া নয়।ভালোবাসার গভীরত্ব অনেক।ভালোবাসা মনের প্রশান্তি,নিজেকে একজন নির্দিষ্ট কারো কাছে সপে দেওয়া,তার মাঝে বিলীন হওযা।বিলুপ্ত হয়েও তাতে মিশে থাকা।মনের মাঝে অদ্ভুত একটা সুখানুভূতি হয় যখন কেউ প্রেমে পড়ে।প্রথম বার যখন ভালোবাসার অনুভূতি গুলোকে বুঝতে শেখে।অপ্রকাশিত অপ্রত্যাশিত অজানা অচেনা কোন কিছু মনের মাঝে জায়গা দখল করে।কেি একজন সে মনের ঘরের দখলদার হয়।তার সাজানো পৃথিবীতে শুধুই তার বসবাস থাকে।তার মনের ঘরে শুধু সেই মানুষটির রাজত্ব বিরাজ করে।তার শহরে অন্য কারো প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়।সে তো নিজেকে হারিয়ে ফেলে।আমিও হারিয়েছে আমার স্রোতের মাঝে। আর কিছুই পাওয়ার আকাঙ্খা নেই আমার।আমার অপেক্ষা কবে শেষ হবে জানি না।#অপেক্ষার_শেষ_প্রহর যেনো শেষ হয়েও হলো না।আমার অপেক্ষা তার প্রহর গুনতে গুনতে নিঃশেষ হয়ে ও শেষ হলো না।হয়তো মৃত্যুই এই #অপেক্ষা_শেষ_প্রহর হবে। যার প্রতিক্ষায় আমি দিন গুনছি।সে হয়তো আর ফিরে আসবে না।হয়তো আর ভালোবাসি বলবে না। তবে আমি মিশে আছি তাতে সে বেঁচে আছে আমার প্রতিটি নিশ্বাসে।

এইভাবেই শেষ হলো #অপেক্ষার_শেষ_প্রহরের সমাপ্তি।

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here