অপেক্ষার শেষ প্রহর পর্ব -১০

#অপেক্ষার_শেষ_প্রহর
#পর্বঃ১০
#লেখনীতেঃহৃদিতা_ইসলাম_কথা

সেদিন সকাল সকাল ছাদে চলে যাই আমি প্রথম দিনের মত আজও সবাই ঘুমিয়ে। ছাদ টপকে ওপাশের ছাদ অর্থাৎ স্রোতের মিনি গার্ডেনে চলে যাই।যেখানে অনেক অনেক সুন্দর সুন্দর ফুলের চারা আছে।হটাৎ একটা একটু এগোতেই একটা কাউকে দেখতে পাই লুকিয়ে চুরিয়ে ফুল তুলছে।অনেক রকমের ফুল আর ঘাস ফুল দিয়ে সে তোরা বানাচ্ছে। পিছন থেকে খপ করে ধরে ফেলি।ও ভয়ে ভয়ে পেছনে ফিরতেই আমি অবাক।খানিকটা রাগ নিয়ে বলে উঠি।

— তুই কি করছিস রাফি?

— ক্ কিছু ন্ না।

— তুই ফুল চুরি করছিস কেনো?

ও ঠোঁট উল্টে বললো,

— আপুনি তুমি প্লিজ কাউকে কিছু বলো না প্লিজ।
কাঁদো কাঁদো স্বরে বলতেই বললাম,

— হুম কাউকে কিছু বলবো না তার আগে বল ফুল কেনো নিচ্ছিস।

ও মুখে লাজুকতার ছাপ এনে বললো,

— আমার গফ এর জন্য।
আমি শুনে বিষম খেলাম।কি বলে এই ছেলে! এই বয়সে নাকি ওর গফ আছে।তাহলে আমি কি এতদিন মাছি মারলাম।একটা পোলা ও তো পটাইতে পারতাম নাকি।
সরু চোখে কপোট রাগ দেখিয়ে বললাম,

— তোর গফ আছে।মানে কি হ্যাঁ। এই দোর বয়স কত রে?

— কেনো আপু বারো।

— আমি এবার সন্দিহান চোখে বললাম,

–তোর গফ এর বয়স কত রে?
ও মিষ্টি হেসে বললো,

–কত আবার সাত।
বিষ্ময়ে চোখ কপালে উঠে গেল আমার। হায় আল্লাহ এ পোলা কি কয়? এ বয়সে এ প্রেম করে।হে খোদা আমারে উঠাই নেও।

— আপুনি ওর ফুল খুব পছন্দ তাই রোজ সকালে স্কুল গিয়ে ওকে ফুল দিই।তুমি কিন্তু স্রোত ভাইয়াকে বলো না।আমায় ধরতে পারলে উদুম কেলাবে।

বলেই ও দিল ভো দৌড়।আমি হেসে কুটিকুটি। আহা কি প্রেম গফকে ইমপ্রেস করতে ফুল দেয়া হচ্ছে। আমি এবার আলতো হাতে ফুলগুলোকে নেড়ে দিচ্ছি।আর ভাবছি আমাকে কেন এভাবে কেউ প্রপোজ করে না।ইশশ্ কবে আসবে সে আর এভাবে আমাকে তাজা ফুলের মালা পরিয়ে দিবে।ফুলের গহনায় সাজিয়ে দিবে আমায়।কথাগুলো আনমনেই বলে চলেছি কিন্তু কেউ যে আড়াল থেকে তা শুনছে তা আমার জানা।আমার এমন হৃদয় ঘাতক কথা শুনে সে দেয়ালের সাথে ঠেস দিয়ে দাড়িয়ে ঠোঁটে আঙুল দিয়ে ঠোট চেপে হাসছে।

হুট করেই কারো কোমর চেপে ধরার ফলে ভড়কে যায় আমি।তারপর পিছনে ঘুরতেই সে কোমর চেপে আরো কাছে রনে বললো,

— আজ এই চোরনিকে ছাড়ছি না।রোজ রোজ আমার গাছের ছেড়া।আজ তোমার একদিন কি আমার একদিন।

বলেই আমার দিকে আরো খানিকটা ঝুকে গেলেন উনি। আমার দুহাত উনার বুকের উপর। উনি ঝুকতেই আমি চোখ খিচে বন্ধ করে মাথা খানিকটা পিছিয়ে নিলাম।উনি ঠোঁট কামড়ে হাসলেন।এই ভয়মাখা মুখটাই তো তাকে এতটা কাছে টানে।প্রতিনিয়ত টানে। এই মাসুষটা যে তার খুব প্রিয় তার মনের খুব কাছে।তার মন গহীনে বসবাস তার।কিন্তু না যতদিন না সে তার প্রিয়কে নিজের মনে কথা বলবে ততদিন সে এমন কিছুই করবে না।চোখ খুলতেই নিজেকে স্রোতের থেকে দুরে পেলাম।উনি দুপা পিছিয়ে গিয়ে বললেন,

— চোরনি বলো তো তোমায় ফুল চুরির কি শাস্তি দেওয়া যায়।আর এই মেয়ে তুমি চুরি করার জন্য আমার সবকিছুই পাও তাই না।কোনকিছু আর অবশিষ্ট রাখবা না সব চুরি করে নিবা।

উনার এই চুরির অপবাদ আর মেনে নেওয়া যাচ্ছে না।আজই আঙ্কেল আন্টিকে বলবো একে আচ্ছা করে বকা দিতে।

— কি হলো বলো চুরি করার জন্য আমার জিনিসই পাও।

রাগ হচ্ছে যাকে বলে অসম্ভব ভয়ংকর রাগ।ইচ্ছে করছে আমার রাগের আগুনে একে পুড়িয়ে গ্রিল বানিয়ে দেই।

— আমি আপনার কোন কিছুই চুরি করিনি।চুরি তো অন্যকেউ করেছে। আর আমি তাকে ধরেছি।

— তাহলে বলো কে সে?

— নাম বলতে পারবো না প্রমিস করেছি কিন্তু সে বলেছে আর আসবো না।

— হুম তুমি চোরকে ছেড়ে দিয়েছো কিন্তু আমি তো তোমাকে ছাড়ছি না পাখি মনের খাচায় বন্দি করে রাখবো।কখনো যেতে দিব না।সবচেয়ে দামি জিনিসটা তো চুরি করেই নিয়েছো।তাই আমার কাছে তুমি অপরাধী।শাস্তি তো পেতেই হবে।

উনার কথা কিছুই বুজলাম না আমি সব মাথার এক হাত উপর দিয়ে গেল বোধহয়। কি বললো উনি এমন কি দামি জিনিস উনার যেটা আমি চুরি করেছি।আর আমিতো সেটা চুরি করিনি। করতেই বা কেন যাব?মাথা আমার ভনভন করে ঘুরছে।উফফ কি কনফিউশান সবকিছু। বিরক্তি বোধ করছি আমি উনার এসব আজব কথায়।কি অদ্ভুত মানুষ এই লোক এত আজগুবি কথা কই পায়? আজব!

— আমি চুরি করিনি।আর আমি কোন শাস্তি ভোগ করবে না।বলেই হনহনিয়ে চলে আসছিলাম।এমনি হাত টেনে দেয়ালে মিশিয়ে দেয়ালে দুহাতের মাঝে আবদ্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে আরামছে।আমি ঘাবড়ে হঠাৎ আক্রমনে।

— আজ তো তোমাকে শাস্তি পেতেই হবে এত বড় অপরাধের বলেই আমার কাছে মুখ এগিয়ে আনলেন।আমি ঠোঁট চেপে মুখ খিচে বন্ধ করে রেখেছি। আচমকাই বাতাসের অনুভব হলো কিছুটা উষ্ণ হাওয়া।আমার কপালের সামনের ছোট ছোট চুল গুলি ফু দিয়ে উড়িয়ে দিলেন উনি।তারপর আমি চোখ মেলে তাকাতেই খিলখিল করে হেসে উঠলেন।আটকে গেলাম আমি উনার ওই বাঁকা দাতের হাসিতে।কি অপরুপ সুন্দর লাগে উনাকে হাসলে।এভাবে হাসতে আজ এই প্রথম দেখলাম।উনার ঠোটের কোনে সর্বদা মুচকি হাসি বিদ্যমান থাকে আর আমা৷ কাছে মনে হয় এই বোধহয় পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ হাসি।সবচেয়ে সুন্দর লাগে ওই হাসি চোখ ফেরাতে পারি না আটকে যাই।উনি এবার আমার নাক টেনে বললেন,

–তুমি সত্যি একটা পিচ্চি। তোমার এই ভয়ার্ত মুখটা খুব করে টানে আমায়।বলেই আবারো কোমর আকড়ে ধরলেন।
আমি একবার কোমরে রাখা উনার হাত আর একবার উনার মুখের দিকে তাকালাম। এমনি উনাকে নিয়ে বেশ কিচুদিন ধরে অদ্ভুদ অনুভুতি হচ্ছে তার উপর কিনা আবার উনি এভাবে চেপে ধরে রেখেছেন।উনি কি বোঝেন না এবাবে আমার কাছে আসলে আমার বেশ অস্বস্তি হয়।দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। নিশ্বাস আটকে আসে কেনো বোঝেন না তিনি।অস্বস্তি কাটাতে তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম।ইশশ্ এখন একটু নিশ্বাস নিতে পারছি। এতক্ষন মনে হচ্ছিল দম বন্ধ হয়ে মারা পড়বো আমি।যেই না চলে আসবো ওমনি উনি হাতের কব্জি চেপে ধরে বললেন,

–কোথায় যাচ্ছো পাখি কাজে লেগে পড়।আমার পুরো বাগান আজ তুমি পরিষ্কার করবে এটাই তোমার শাস্তি।

আমি বড়সড় চোখ করে তাকালাম।সাথে বিষ্ময়ের চরম সীমায় দাড়িয়ে আরে আমি কেন শাস্তি পাবো কি করেছি আমি।উনি এবার আমাকে কিছু না বলতে দিয়ে নিজেই বললেন,

–সেদিন রাতে ওভাবে বাইরে একা যাওয়ার দুঃসাহস দেখিয়েছো তুমি তার শাস্তি।তাছাড়া তোমার মত আটার বস্তাকে বয়ে আনতে গিয়ে আমার অবস্থা নাজেহাল।হাত দুটো ব্যাথা হয়েছে গিয়েছে। আমার জীবনে আমি এত বোঝা কোনদিন টানিনি।আম্মুর ছেলেকে দিয়ে তুমি অনেক খাটিয়েছো।আম্মু জানতে পারলে কি হবে ভাবছো? তার সোনার টুকরো ছেলে আমি।এই হ্যান্ডসাম ছেলেটার প্রেশার হাব করে পাগল প্রায় অবস্থা করেছো তার শাস্তি। সবকিছুর শাস্তি পাবে তুমি।তবে সেটা সঠিক সময়ে।এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। সময় মত।শুদে আসলে সব শোধ তুলবো।

–করবো না আমি।
— ঠিক আছে তাহলে প্রস্তুত থেকো।

–কিসের জন্য?

–কিসের জন্য। একটা টাইট কিসের জন্য তাও আবার লিপ টু লিপ।

–কিহহ!

অবাক বিষ্ময়ে চক্ষু যেনো আমার অক্ষিগোলক থেকে বের হয়েই গেল।এই লোক এসব কি বলে হে! পাগল টাগল হলো নাকি? না আবার নেশা টেশা করেছে?

–দেখ নিজের মাথা থেকে অদ্ভুত সব ভাবনা ভেবে কাজে লেগে পড়।নাহলে কিন্তু তুমি জানো আমি যা বলি তাই করি।করবো নাকি শুরু হঁম।বলো বলো?

এই লোকের আজে বাজে কথায় কান গরম হয়ে গেল আমার। কান দিয়ে ধোঁয়া বেরোচ্ছে।ইচ্ছে করছে কাচন চিবিয়ে খেয়ে ফেলি।

– হ্যা হ্যা। সময় হলে খেও কেউ কিছু বলবে না তোমারি তো এখন কাজে লেগে পড়।ফটাফট কাজ না করলে কিন্তু খবর আছে বলে যা বলেছি করে দেখাবো।

এই লোক বহুত ঘাড়ত্যাড়া জানি কাজ না করলে ছাড়বে না তাই কাজে লেগে পড়লাম।কিন্তু বাবহ গো কি কঠিন কাজ।আগে জীবনে এসব করেছি। এক গ্লাস পানি ভরে ও খাইনি।আর এই জমদুতটা আমায় দিয়ে এসব করাচ্ছে। আব্বু বাচাও তোমার মেয়েকে 🥺। আমার এখন ভ্যা ভ্যা করে কাদতে ইচ্ছে করছে।

সেদিন খুব খাটালো আমায় খাটাশটা।আর খুব জ্বালিয়েছে এর শোধ তো তুলতেই হবে আমার।হুহ।নইলে আমিও কথা না।হাহ

এভাবেই কেটে গেল আরো দুদিন। তারপর সেদবন আন্টির বাড়িতে গিয়েছি।এতদিনে আন্টির সাথে বেশ জমেছে আমার।ওদিন বাড়িতে স্রোত ছিলো না সেই সুযোগে উনার বাথরুমে গিয়ে সাবানের গুড়ো ফেলে এসেছি।দেখ ব্যাটা এবার কোমন লাগে।তারপর চুপচাপ গিয়ে আন্টির কাছে কিচেনে চলে গেলাম।ঘন্টাখানেক বাদে স্রোত বাড়িতে ফিরে নিজের রুমে গেল।ইশশ্ আমি তো খুব খুশি একটা ধামাকা হবে।প্রায় বিশমিনিট হতে চললো,

–কোনো আওয়াজ না পেয়ে আমি চুপিচুপি উনার রুমে উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছি। না কাউকে দেখা যাচ্ছে না তাই নিজেই গেলাম ওয়াশরুমে ধাক্কা দিতেই খুলে গেল কিন্তু ভিতরে কেউ নেই।তাই উঁকি দিতে ভিতরে একপা বাড়াতেই পা পিছলে পড়ে গেলাম।

আহ্হ কোমরে খুব করে লেগেছে।আমার চিৎকারে স্রোত বেলকনি থেকে দৌড়ে এল আর বললো,

–আরে তুমি পড়লে কিভাবে বলো তো? আমার বাথরুমে কি করছো?

আমি ব্যাথায় ঠোঁট উল্টে কেদেই যাচ্ছি।একটু পড় আন্টিও হুরমুর করে ঘরে ঢুকলো আর বললো,

–কিরে মা কি হলো এমন করছিস কেনো? কি হইছে তোর? এই ফয়সাল কি হইছে বল না?

— আম্মু আমি জানি না।উনি বোধহয় পা পিছলে পড়ে গেছে বাঁথরুমে।

— কিন্তু ও পড়লো কিভাবে? আর মা তুই ওইখানেই কেন গিয়েছিল?

ইশশ্ লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে আমার।মাথা মোটা একটা এটা বলার কি দরকার ছিল।জানি তো ইচ্ছে করে করছে আমাকে জব্দ করতে।আমি একগাদা গালিগালাজ করে আমতা আমতা করে বললাম,

–ন্ না আন্টি আ্ আসলে ওই মা্ মানে।

— থাক আর মানে মানে করতে হবে না।আমি স্প্রে নিয়ে আসছি করে দিলে ঠিক হয়ে যাবে।

আন্টি উঠে যেতেই উনি বেডের দুপাশে হাত দিয়ে বেশ খানিকটা ঝুকে বললেন,

–আমাকে জব্দ করতে এসব করা তোমার তাই না।আর তাতে তুমি নিজেই এত বাজভাবে ফেসে গেলে।আসলে পিচ্চি হলে যা হয় আরকি ওই পিচ্চি মাথায় এর থেকে বেশি বুদ্ধি ধরে না।

রাগে গা থরথর করে কাপছে আমার।বারবার আমাকে পিচ্চি বলে অপমান করা।আর সহ্য করবোনা। আজ তো একে শায়েস্তা করেই ছাড়বো।
রাগে কেপে ফোস করে উঠে বললাম,

— এই আমাকে একদম পিচ্চি বলবেন না।কোন এঙেল থেকে পিচ্চি মনে হয় আমায় হ্যাঁ। আমি ১৮+ আর কিছুদিন পর ভার্সিটিতে এডমিশন নিব।তারপরও আপনি আমায় কি করে বলেন আমি পিচ্চি। একদম আর এসব ফালতু কথা বলবেন না আমায়।নইলে আমি কেদে দিব কিন্তু বলে রাখলাম।

— হ্যাঁ আর পারোই বা কি ওই ভ্যা ভ্যা করে কান্না করা ছাড়া।

আমি এবার সত্যি জোরে জোরে কেদে দিলাম।আমার কান্না শুনে আন্টি হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলেন……

#চলবে……..

( ভাইরে ভাই আজকে হাতের ১২ টা বাইজ্জা গেছে গা🤕)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here