অপ্রত্যাশিত ভালোবাসা পর্ব -২৫

গল্প : #অপ্রত্যাশিত_ভালোবাসা
লেখক : #কাব্য_মেহেরাব
পর্ব :২৫

মেঘা : আমি জানতাম কাব্য,তুমি ঠিক আমার কাছে ফিরে আসবে। অনেক খুজেছো আমাকে তাই না? সরি তোমাকে ছেরে আর কোনদিন দূরে যাব না এই পাক্কা প্রমিস…

হঠাৎ এমন করে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরাতে ছেলেটির হাত পা কাপা শুরু হয়ে গেল। ছেলেটির কানের ব্লুটুথ লাগানো আছে, ছেলেটির গার্লফ্রেন্ড ফোনে কথা বলছিলো। বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিল মেয়ে টি। ছেলেটি বলেছিল একটা প্রমোশন হলে বিয়ে টা সেরে ফেলবে।

ছেলেটি অনেক বার করে বুঝিয়েছে একটা সমস্যার কারণে প্রমোশন দিচ্ছে না কিন্তু মেয়েটা শুনছেই না।স্যারের সাথে প্রমোশন নিয়ে কি কথা বলে এবং কি করে সেটা শুনার জন্যই ব্লুটুথ অন করা রয়েছে।

ছেলেটি বিয়ে করবে, অনেক দিন ধরেই কাজ করছে কিন্তু SK কোম্পানির ডিল টা ফাইনাল হয়ে যাবার পর প্রমোশন পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ এই সব হওয়ার কারণে প্রমোশন পাচ্ছিলেন না। অফিসেই কথা বলতো ছেলেটি কিন্তু এই দুই-তিন দিন প্রবীশ বাবু অফিসে যাচ্ছেন না বলে বাসায় আসা । গার্লফ্রেন্ড বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে, সেইজন্যই প্রবীশ বাবুর সাথে দেখা করতে এসেছিলেন। কিন্তু অমিত বাবু কিছুতেই তাকে ভিতরে আসতে দিতে চাচ্ছিলেন না।

আংশিক এমন ঘটায় আহাম্মক হয়ে ছেলেটি হাত দিয়ে মেঘার হাত নিজের বুক থেকে ছাড়াতে গেলে মেঘা আবার বলে ওঠে _

মেঘা: না কাব্য আমি তোমাকে কিছুতেই ছাড়বো না। অনেক লুকোচুরি খেলা হয়েছে, এবার নিয়ে চলো আমাকে এখান থেকে।

অমিত বাবু কিছুই বুঝে উঠতে পারলেন না আমি কেন ছেলেটাকে এই ভাবে জড়িয়ে ধরেছি। আমাকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই দেখেন পিছনে প্রবীশ বাবু চোখ লাল করে নাকের পাতা ফুলিয়ে, দাঁতে দাঁত চেপে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে। এমনভাবে রেগে আছেন দেখে অমিতবাবুর গলা শুকিয়ে গেল।

অমিত বাবু :🤦🤦🤦 “যেখানে বাঘের ভয় সেখানে রাত পোহায়” বিষয়টা এমন হয়ে গেল।

ছেলেটি কে ঘুরিয়ে নিজের দিকে ফেরাতেই ছেলেটিকে দেখে আমি দুই পা পিছিয়ে গেলাম। মুখ থেকে একটা বাক্য বের হল, “এ আমার কাব্য নয়”

প্রবীশ বাবু আমার পিছনে এসে আমার হাত ধরে ঘুরে ঠাসসস করে একটা চড় বসিয়ে দিলেন আমার ডান গালে। আমি গালে হাত দিয়ে প্রবীশ বাবুর দিকে তাকিয়ে থাকলাম।প্রবীশ বাবু ঐ ছেলে টাকে চোখ দিয়ে কি বোঝালো কে জানে , ছেলেটা মাথা নিচু করে সোজা চলে গেল। আর অমিত বাবুর দিকে রাগি চোখে তাকালেন প্রবীশ বাবু।

প্রবীশ বাবু আমার হাত ধরে টানতে টানতে ভিতরে নিয়ে গিয়ে, সিঁড়ির উপরে উঠে তার রুমে আমাকে বেডের উপর এক প্রকার চেলে ফেলে দিলেন।

প্রবীশ বাবু : কতজন পুরুষ লাগে তোমার? আমাকে চোখে পড়ে না? নাকি আমি পুরুষ মানুষ নই। নাকি নিজের পুরুষত্ব দেখায় না বলে….(বাকি কথা বলতে পারল না)

মেঘা : প্রবীশ বাবু……(জোরে চিল্লিয়ে বললাম)

প্রবীশ বাবু : কিসের প্রবীশ বাবু? কি ভেবেছ কি নিজেকে? তুমি যার তার গায়ের সাথে লেপ্টে থাকবে আর আমি তোমাকে কিছুই বলবো না? একবার ভুল করেছি দ্বিতীয়বার সেই একই ভুল আমি করতে চাই না।

আমি বেড থেকে নীচে নেমে দাড়াতেই প্রবীশ বাবু আমার মুখটা চেপে ধরে আমাকে বললো_

প্রবীশ বাবু : কেন জড়িয়ে ধরেছিলে ছেলেটাকে?(চোখে চোখ রেখে বললেন) তোমার সাহস কি করে হলো? আমার সামনে থেকে যেয়ে ওই রাস্তার ছেলেকে জড়িয়ে ধরার?

মেঘা : (মুখ চেপে ধরায় কথা বলতে না পারলেও বহুকষ্টে আমি বললাম)আমি কাব্য মনে করেই….

প্রবীশ বাবু : (আমাকে ছেড়ে দিয়ে তিনি ড্রেসিং টেবিলে এক ঘুষি দিয়ে বললেন)কাব্য….. কাব্য…. কাব্য…? কে এই কাব্য? বহুবার তোমার মুখে এই নামটা শুনেছি, (কিছুটা মনে করার ভঙ্গি করে বললেন)সেদিন হসপিটালেও তুমি আমাকে এই নামটা বলেই না জড়িয়ে ধরেছিলে ? (আমার দুই বাহু ধরে তিনি বললেন)বারবার তোমার মুখে এই নামটা শুনতে শুনতে বিরক্ত হয়ে গেছি আমি।(দাঁতে দাঁত চেপে তিনি বললেন) এই কাব্যকে তো আমি জাস্ট…

মেঘা : (প্রবীশ বাবুর হাত ঝাড়া মেরে সরিয়ে দিয়ে আমি বললাম)ব্যস অনেক বলে ফেলেছেন… আর না! কাব্য কে জানতে চাইছেন না? তাহলে শুনুন! কাব্য আমার হাসবেন্ড। ভালোবাসি আমি তাকে। সেও আমাকে…( ঠাসসসসসসস)

প্রবীশ বাবু : (কাব্যকে আমি ভালোবাসি এবং সে ও আমাকে ভালোবাসে এটা বলার সাথে সাথে প্রবীশ বাবু আমাকে আর এক গালে চড় বসিয়ে দিলেন।প্রবীশের মাথায় যেনো সাত আসমান ভেঙ্গে পরল। আমার হাসবেন্ড আছে এবং আমি ঐ তাকে ভালোবাসি এটা শুনে, তারপর প্রবীশ বলল_)ওহ রিয়েলি…? আর তোমার সেই সো কল্ড হাসবেন্ড তোমাকে ওই অন্ধকার জগতে ফেলে চলে গেছে তাই তো?

মেঘা : প্রবীশ বাবু….(জোরে চিল্লিয়ে বললাম) না জেনে শুনে কারোর সম্পর্কে এমন কিছু বলবেন না… কাব্য আমাকে ওখানে ফেলে চলে যায়নি….. বরং আমার ভাগ্যেতে ঐ ঠিকানা টা লেখা ছিল।

প্রবীশ বাবু : জাস্ট শাট আপ…..! এখন থেকে তুমি আমার এই রুমে থাকবে…. আর তোমার ওই সো কল্ড হাসবেন্ডকে সামনে পেলে না, আমি কেটে টুকরো টুকরো করে দিব।(কথাটি বলে প্রবীশ বাবুর রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন বাইরে থেকে দরজা লক করে।

দরজার কাছে গিয়ে আমি বারবার দরজা জোরে জোরে ধাক্কা দিচ্ছি আর বলছি_

মেঘা : প্রবীশ বাবু প্লিজ আমার কথাটা শুনুন.. দরজা টা খুলুন দয়া করে… খুলুন না দরজা টা….. অমিত বাবু বোঝান না প্রবীশ বাবু কে… রামু চাচা… রামু চাচা… দরজা টা খুলে দিতে বলুন না….প্রবীশ বাবু প্লিজ দরজা টা খুলুন…. আমার কথাটা একবার শুনুন… আমি কোথাও চলে যাচ্ছি না…

নীচে….

অমিত বাবু : স্যার কি করছেন কি আপনি ? এভাবে মেঘাকে আটকে রেখেছে কেন….

প্রবীশ বাবু : (অমিত বাবুর কলার ধরে দেয়ালের সাথে ঠেসে ধরে তিনি বললেন) ভালোবাসে ফেলেছি আমি মেঘাকে…. (অমিত বাবুর চোখে চোখ রেখে বললেন)তাই নিজের কাছে রাখতে চাই। বিয়ে করতে চাই আমি ওকে…

রামু চাচা : ( পিছন থেকে রামু চাচা বললেন)প্রবীশ বাবা..? ভালবাসো ভালো কথা কিন্তু বিয়ে কি করে করবে? মামনি মুসলিম ঘরের মেয়ে, আর তুমি????

প্রবীশ বাবু : (রামু চাচার সামনে কি বললেন)তাতে কি হয়েছে?ও মুসলিম থেকে হিন্দু হবে…

অমিত বাবু : (নিজের কলার টিক করতে করতে বললেন) এটা কোনদিনও সম্ভব নয় স্যার, আমি যতদূর জানি কোনদিন কোন মুসলিম ব্যাক্তি হিন্দু ধর্ম গ্ৰহন, না করেছে বা করবে ।

প্রবীশ বাবু : (এবার প্রবীশ বাবু অমিত বাবুর দিকে মাথা ঘুরিয়ে বললেন)মেঘা হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করবেনা তো কি হয়েছে? আমি করবো। দরকার পড়লে আমি মুসলিম হবো। সুন্নাতে খাৎনা করব আমি।

রামু চাচা : প্রবীশ বাবা…. কি বলছো তুমি…. ভেবেচিন্তে বলছো তো….?

প্রবীশ বাবু :(রামু চাচার সামনে গিয়ে তিনি বলেন) হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিকই শুনেছো তোমরা !সুন্নতে খাতনা করবো আমি, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করব। তবুও মেঘাকে আমি আমার করে নিব। ও বিবাহিত একজন প্রস্টিটিউট তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসেনা।

অমিত বাবু : মেঘা বিবাহিত 😯😯…..?

রামু চাচা : মামনি বিবাহিত….…?? তাহলে তার জামাই কোথায়..?

প্রবীশ বাবু : হ্যাঁ মেঘা বিবাহিত….! তবে ওর হাজব্যান্ড এখন নাই, আর থাকলেও আমি মেঘার জীবনে আর ব্যাক করতে দিব না।

রামু চাচা : পাগলামি কোরো না প্রবীশ বাবা! মামুনির যদি স্বামী থেকে থাকেন, সে কোথায় আছে কোন অবস্থায় আছে সেটা জেনে শুনে তারপর তুমি মামনি কে বিয়ে করো। তার আগে করো না তা না হলে আবারও না বউ রানীর মতন মামনি ও চলে যায় শেষে…

অমিত বাবু : রাম জেঠু ঠিক কথাই বলছেন স্যার । ঘুরেফিরে আপনি বারবার কষ্ট পান এটা আমরাও চাই না। একবার ডালিয়ার সাথে কথা বলে দেখুন ঠান্ডা মাথায়। তার হাজবেন্ড কোথায় আছে, বেঁচে আছি কিনা? আর বেঁচে থাকলেও সে কোথায় আছে?আর ডালিয়ায় বা কিভাবে ওই অন্ধকার জগতে গেছে সব জেনেশুনে তারপর সিদ্ধান্ত নিবেন। একটা ভুল সিদ্ধান্ত আপনার জীবনটা আবারও বদলে দিবে এটা আমি চাইনা আগেরবারও আপনাকে সাবধান করে ছিলাম, কিন্তু আপনি আমার কথা শুনেন নি এবার না হয় একটিবার আমাদের কথা শুনুন।

রামু চাচা : হ্যাঁ প্রবীশ বাবা তুমি একবার মামুনির সাথে ঠান্ডা মাথায় কথা বলে দেখো, আমার মনে হয় এটা করলে তুমি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। তাছাড়াও মামণির জীবনের প্রশ্ন তার মতামত কি তুমি নেবে না? এটা তো ঘোর অন্যায় প্রবীশ বাবা?

প্রবীশ এবার ঠান্ডা হলো। আসলেই রামু জেঠু এবং অমিত ঠিক কথাই বলেছেন। ঠান্ডা মাথায় একবার মেঘার সাথে কথা বলতে হবে। তবে যাই হোক না কেন মেঘাকে আমার হতে হবে।

প্রবীশ বাবু : ঠিক আছে তোমরা যখন বলছ আমি মেঘার সাথে কথা বলবো। কিন্তু …..

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here