অপ্রত্যাশিত ভালোবাসা পর্ব -০৭

গল্প:#অপ্রত্যাশিত_ভালোবাসা
লেখক: #কাব্য_মেহেরাব

পর্ব:০৭

বিশাল বড় একটি গেটের সামনে গাড়িটি এসে থামল। সামনের সিটে বসে অমিত ড্রাইভ করেছে। পিছনের সিটে প্রবীশের পাশেই আমি বসে আছি। অমিত সামনের দরজা খুলে বাইরে এসে প্রবীশের দরজাটা খুলে দিল।প্রবীশ গাড়ি থেকে বের হয়ে,আমিত কে চোখের ইশারায় কিছু একটা বলল। অমিত মাথা নেড়ে হ্যাঁ জানালো। প্রবীশ বাবু আমার দিকে একবার তাকিয়ে সোজা ভিতরে চলে গেলো । আর আমি তাকিয়ে রইলাম তার চলে যাওয়ার পানে। অমিত বাবু আমার লাগেজটা বাইরে বের করল গাড়ি থেকে। আমাকে দাঁড়াতে বলে আমিত বাবু গাড়িটা ভিতর নিয়ে গেল। কিছুক্ষণের মধ্যে ফিরে আসলো। আমার ব্যাগ নিয়ে তিনি সামনে এগিয়ে আমাকে বলল আসুন।

সামনে অমিত বাবু তাকে অনুস্মরণ করে আমি তার পিছু হেঁটে যাচ্ছি। মোটা সরু রাস্তা দুই পাশে ফুলের গাছ লাগানো। তার মাঝ দিয়ে হেটে চলছি আমি আর অমিত বাবু। একটা বিশাল বড় দরজার সামনে দাঁড়ালাম আমরা। দরজার বেল বাজলো অমিত। একটা বয়স্ক লোক দরজা খুলে দিল। অমিত বয়স্ক লোকটা কে নমস্কার করল সৌজন্যমূলক সেও একই কাজ করলো। অমিত বাবু এবং আমি ভিতরে প্রবেশ করলাম। আমাকে দেখে বয়স্ক লোকটি বললেন ,ভিতরে আসেন মামনি……

তার এমন মামনি ডাকটা শুনে আমার বুকের ভিতর ছ্যাত করে উঠলো। আমার বাবা এই নামে ডাকত আমায়। কিন্তু মা মারা যাবার পর বাবার দ্বিতীয় বিয়ে করে সেখানে একটি কন্যা সন্তান জন্ম দেয় ।তারপর থেকেই আমি হলাম চোখের কাঁটা। বহুদিন পর ডাকটা শুনে বাবাকে খুব মনে পড়ছিল।

বাবা সাহেব বসে আছে। ভিতরে আসুন.. বৃদ্ধ লোকটি বলল। বাবা টা কে, দেখার জন্য সামনে তাকাতেই দেখি প্রবীশ বাবু বসে বসে ড্রিঙ্ক করছেন।সে তো আমাদের সাথে এসেছিল, তাহলে ভিতরে কখন ডুকলো?(মনে মনে ভাবছি)

গলা খাঁকারি শব্দে আমার ধ্যান ভাঙ্গলো। অমিত হঠাৎ কেশে উঠলো আমাকে চুপ থাকতে দেখে। একহাত সামনে এগিয়ে দিয়ে আমিত বলল ভিতরে চলুন। ডিভাইনের সামনে দাঁড়িলো অমিত বাবু।

হাতের ইশারায় অমিতকে বসতে বলল প্রবীশ বাবু। আর আমি দাড়িয়ে আছি। রুমের চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখছি।বড় হল রুম এর মাঝে ডিভাইন টা খুব সুন্দর পরিপাটিভাবে গোছানো। তার একটু সামনেই ডাইনিং টেবিল। পেছনেই কিচেন। বা পাশ দিয়ে উপর তালার সিঁড়ি। দেওয়ালে টাঙানো কিছু ছবি দেখে বুঝতে পারলাম তিনি সনাতন ধর্মের। তখনই আমার গলাটা শুকিয়ে আসলো। শেষে কিনা একজন মুসলিম মেয়ে হয়ে ঠাঁই হলো এখানে??

প্রবীশ একটা গ্লাসে সফট ড্রিঙ্ক ঢেলে অমিতকে নিতে বলল। অমিত খাবেনা প্রবীশের সামনে। ইতস্ত বোধ করছিল অমিত। প্রবীশ বাবু চোখের ইশারায় সেটা নিতে বললেন। অমিত গ্লাসটা হাতে নিল। হাতে নিয়ে আমার দিকে তাকালো। কিছু দেব দেবীর ছবি দেখে আমি গলা শুকনো তরল দিয়ে ভিজিয়ে যাচ্ছি,এটা দেখে অমিত বাবু বলল…

অমিত : ডালিয়া দাঁড়িয়ে আছো কেন…? বসো….

মেঘা: (চোখে হেসে আমি বললাম) ডালিয়া নয় আমার নাম মেঘা।

অমিত : 😳😳😳………

গ্লাসে একটা চুমুক দিয়েছিল অমিত, মেঘা নামটা শুনে সব ড্রিংস ফিচকানি দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসলো অমিতের মুখ থেকে। চোখ বড় বড় করে প্রবীশ বাবুর দিকে তাকালো 😳😳। গলাটা যে ভেজাবেন সেই সাহস টুকু তার যেন হচ্ছিল না।এবার সত্যিই তার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।প্রবীশ বাবু চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছেন ড্রিংকসের বোতলের দিকে।দাঁতে দাঁত চেপে নাকের পাটা ফুলিয়ে গ্লাস টা শক্ত হাতে মুঠো করে ধরে আছে ,যেন এখনই হাত দিয়ে তা দুমড়িয়ে মুচড়িয়ে ভেঙে ফেলবে। হঠাৎ এমন রাগের কারণ আমি খুঁজে পেলাম না। চোখ বারবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একবার অমিত বাবু তো আরেকবার প্রবীশ বাবুর দিকে তাকিয়ে আছি। আমার এমন চাহনি দেখে অমিত বাবু আমাকে বলল..

অমিত: ডালিয়া 😁😁 তোমার ডালিয়া নামটা অনেক সুন্দর। তাই আমরা তোমাকে ডালিয়া বলেই ডাকবো। কেমন…?

মেঘা: মোটেই না! ডালিয়া নামটা আমার অন্ধকার জগতের। এই পরিবেশে ডালিয়া নামটা আমি মেনে নিব না আমাকে মেঘা বলেই ডাকতে হবে।

প্রবীশ বাবু গ্লাসটা আমার পায়ের কাছে ছুড়ে মারলেন। হঠাৎ আচমকা এমন হাওয়াতে দুই হাত কান চেপে ধরে আমি জোরে কাব্য বলে চিতকার দিয়ে উঠলাম।

প্রবীশ বাবু রেগে আমার সামনে এসে নিজের শরীরের সর্বোচ্চ জোর দিয়ে আমাকে একটা থাপ্পড় মারলেন। হঠাৎ এমন থাপ্পড়ে টাল সামলাতে না পেরে আমি ছিটকে পরলাম ফ্লোরে। অমিত বাবু দাঁড়িয়ে পড়লেন। বৃদ্ধ লোকটি দ্রুত আমাদের সামনে এসে প্রবীশ বাবু কে উদ্দেশ্য করে বলল

বৃদ্ধ লোক: প্রবীশ বাবা….? কি করছেন এটা আপনি….?

প্রবীশ বাবু হন হন করে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে লাগলেন। কয়েক সিঁড়ির উপরে উঠে বৃদ্ধ লোকটিকে উদ্দেশ্য করে বলল

প্রবীশ: রাতে আমি কিছু খাব না. আমাকে কেউ যেন ডিসটাব না করে ।

আমি উঠে দাঁড়িয়ে বৃদ্ধ লোকটি কে উদ্দেশ্য করে বললাম,

মেঘা- উনি আমাকে মারলেন কেন? আমি কি করেছি ?(গালে হাত দিয়ে জানতে চাইলাম)

বৃদ্ধ লোক-দেখুন মামনি কিছু মনে করেন না। বাবাসাহেব একটু রেগে আছে। রাগ কমে গেলে সব ঠিক হয়ে যাবে। আপনি বাবা সাহেবের পাশের রুমে যেয়ে রেস্ট নেন ।আমি খাবার উপরে পাঠিয়ে দিচ্ছি।

অমিত আমার সামনে এসে আমাকে বলল

অমিত: তোমার লাগেনি তো ডালিয়া…?

মেঘা: মেঘা আমার নাম। আর আমাকে মেঘা বলেই ডাকবেন।

অমিত: দেখো জেদ করো না। যেটা বলছি সেটা শোনো। তা না হলে তুমি আরো অনেক বেশি কষ্ট পাবে।

মেঘা: আমার নাম এর জন্য আমাকে কষ্ট কেন পেতে হবে? তাছাড়া আমার নাম তো এটাই। আপনাকে যদি আপনার নাম বাদে অন্য নামে ডাকি আপনি কি সেই নামে ডাকতে দিবেন ….?

অমিত: নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মেরো না ।যা বলছি সেটাই শোনো। এতদিন তো তুমি ডালিয়ায় ছিলে। তাহলে সমস্যা কোথায় …?

মেঘা: ওই জায়গাতে আমি ডালিয়া ছিলাম । কিন্তু এখন আমি আলাদা জায়গায়।

অমিত: নামে কি এসে যায়….? মানুষ তো তুমি একটাই!

আমি আর কথা বাড়ালাম না। তবে আমাকে এখানে রাখতে হলে আমাকে মেঘা বলে ডাকতে হবে। প্রবীশ বাবুর সমস্যাটা কি? সেটা আমার জানার বিষয় না। আমিতো আমার নামে ঠিক আছে.

রাত 11 টা বাজে। খাবার খেয়ে আমি আমাকে দেওয়া একটা রুমে শুয়ে আছি। কিছুতেই ঘুম আসছে না। বেলকুনিতে চলে গেলাম। আজকের রাতটা অনেক সুন্দর। জোছনা রাত। চারিপাশের চিত্র যেন ডিম লাইটের আলোর মতো জ্বলজ্বল করে জ্বলে উঠছে। গাছের পাতাগুলো স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে নড়ছে। দূর আকাশের ঐ চাঁদ মামা গোল থালার মতো বৃত্ত আকৃতি রূপ ধারণ করেছে। গাছের ফাঁকে ফাঁকে জোনাকি পোকা জ্বলে উঠছে।

এত সুন্দর পরিবেশে কাব্যকে খুব মনে পড়ছে। কোথায় আছে কাব্য? আমাকে অনেক খুঁজছে হয়তো ।আমার এই জীবন সম্পর্কে জানলে কাব্য কি আমাকে ভুল বুঝবে…? ও কি আমাকে মেনে নিবে ……?এইসব হাজারো চিন্তা মনের মধ্যে বাস করছে। তবে আমি নিরুপায় !কাব্যকে বুঝিয়ে বললে নিশ্চয়ই বুঝবে।

হঠাৎ কিছু ভাঙ্গাচুরা শব্দ কানে আসলো। বেলকনি থেকে রুমের ভেতর আসলাম। আমার রুমে তো কিছুই ভাঙিনি তাহলে?? আবার বেলকুনিতে গেলাম. আবারও একই শব্দ । শব্দ অনুসরণ করে বুঝতে পারলাম শব্দটা প্রবীশ বাবুর ঘর থেকে বেলকনি দিয়ে শব্দটা আসছে। দ্রুত রুমের ভিতরে চলে আসলাম। কিছু একটা ভেবে আমার রুমের দরজা খুলে প্রবীশ বাবুর রুমের দরজার সামনে দাঁড়ালাম। শব্দগুলো এখন শোনা যাচ্ছে না। আমি আবার রুমের ভীতর চলে আসলাম। বেলকুনিতে যেয়ে দাড়াই তার সাথে সাথে আবার সেই একই শব্দ। না পেরে আবার প্রবীশ বাবুর রুমের দরজায় যেয়ে নক করলাম।

বেশ কয়েকবার নক করার পর দরজাটা খুলে দিলো প্রবীশ বাবু। দরজাটা খোলার শব্দে আমি এক‌ পা পিছিয়ে গেলাম। সবকিছু যেন থেমে গেছে। কয়েক সেকেন্ড দাঁড়িয়ে থাকার পরও কিছুই বুঝতে পারলাম না। প্রবীশ বাবু দরজাটা খুলল কিন্তু গেল কোথায়? ভিতরে ঢুকবো কি ঢুকবে না চিন্তায় পড়ে গেলাম! দরজার পর্দা বাতাসে সরে যাওয়ায় যতটুকু দেখলাম রুমের ভেতর সবকিছু ভেঙ্গেচুরে আছে । ভিতরে কি হয়েছে জানার জন্য দরজাটা একটু খুলে মাথা ভিতরে ঢুকিয়ে উঁকি মারছিলাম। কোথাও প্রবীশ বাবুকে দেখতে না পেয়ে ভিতরে ঢুকলাম। দরজার আড়ালে তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন। চোখ বন্ধ করে দেওয়ালের সাথে পিঠ এলিয়ে দিয়ে। হাত দিয়ে চুয়ে চুয়ে রক্ত পড়ছে । আমার মুখ থেকে আহ্ শব্দ টা বের হলো। মুখে হাত দিয়ে বললাম কি করেছেন আপনি এটা….?

প্রবীশ বাবু চোখ খুলে আমার দিকে তাকালেন। তার চোখ দেখে আমার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠেছে। সাদাচোখ পুরো লাল হয়ে গেছে। অতিরিক্ত রাগের ফলে লম্বা নাক টা সম্পূর্ণ লাল হয়ে গেছে। চোখ দিয়ে আমাকে যেন পুড়িয়ে খার খার করে দেবে। কিন্তু তার হাত থেকে রক্ত পড়ছে দেখে ,আমি তার সামনে যেয়ে যেই না হাত ধরতে যাবো,ওমনি প্রবীশ বাবু আমার গলা চেপে ধরলেন। হঠাৎ এমন হাওয়ায় আমি কয়েক সেকেন্ডের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলাম।

আমার নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। শ্বাস টেনে তুলতে পারছি না। পুরো দুনিয়া যেন ঘুরছে। চোখ দিয়ে আগুন বের হচ্ছে। আমার কাশি উঠে গেছে। আমাকে কাশতে দেখে প্রবীশ বাবু বলে উঠলেন।

প্রবীশ: কি ভেবেছিস মেঘা তুই? আমি তোর জন্য কষ্ট পাবো? কোনদিনও না! তোকে আমি ঘৃনা করি মেঘা ।তোকে আমি ঘৃনা করি।

মেঘা:কককি… কর..ছেন? ছাআআরুন! আমার কষষষ্ট হচ্ছে…(শক্ত করে গলা চেপে ধরায় কথা বলতে পারছিলাম না)

প্রবীশ: কষ্ট হচ্ছে…? তোকে কষ্ট দেয়ার জন্যই এখানে এনেছি…. বুঝেছিস…?

মেঘা: দুই হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম প্রবীশ বাবুকে। হাঁপিয়ে হাঁপিয়ে কয়েকটা নিঃশ্বাস নিলাম। তারপর প্রবীশ বাবুর দিকে তাকিয়ে বললাম..

মেঘা: কি ক্ষতি করেছি আমি আপনার.??? আমাকে আপনি কেন কষ্ট দিতে চান? আমি তো আপনার কোন ক্ষতি করিনি তাহলে কেন আমাকে কষ্ট দিচ্ছেন?(জোরে চিল্লিয়ে বললাম)

প্রবীশ বাবু কে ধাক্কা দেওয়ায় হয়তো তিনি প্রচণ্ড রেগে গেছেন। তিক্ষ চোখ দিয়ে আমার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেন আমাকে চোখ দিয়েই ভ্রম্ম করে দিবেন। কিন্তু তার এই চাহনির তোয়াক্কা না করে আমি তাকে বললাম

মেঘা: কি ভেবেছেন কি নিজেকে? আমাকে কিনে এনেছেন বলে আমি আপনার হাতের পুতুল হয়ে গেছি….? তাহলে আপনি ভুল….(বাকি কথা বলতে পারলাম না) আহ্….

প্রবীশ বাবুর সাথে উঁচু গলায় কথা বলায় তিনি নিজেকে মাজার বেল্ট খুলে উল্টো পাল্টা মারতে শুরু করলেন আমাকে। ব্যাথায় চিৎকার করছি আমি। কিন্তু এই নির্দয় মানুষ টি পশুর মত আমাকে একের পর এক বেল্টের আঘাত করে যাচ্ছে। কতগুলো আঘাত আমার পেটে পড়েছে তা গোনা নেই। ব্যাথায় চিৎকার করে উঠছি আর‌ আমারব চিৎকার তার ক্ষুধার্ত টা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। চার পাঁচ মিনিট এই ভাবে আঘাত করার পর তিনি শান্ত হলেন। যখন দেখলেন আমি আর চিৎকার করছি না। গর্ভ অবস্থায় এমন আঘাত কোন মেয়েই সহ্য করতে পারে না।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here