অবন্তর আসক্তি পর্ব ৩৫+৩৬

#অবন্তর_আসক্তি
#পর্ব_৩৫
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
_____________
আমার সম্মন্ধে তোমরা দু’জন জানো কারণ, আমার গ্যাংয়ে তোমরা দুজন জয়েন্ট হয়েছো। সে সূত্রে তোমাদের দু’জনের আমার সম্পর্কে জানা উচিত৷ আমাদের গ্যাংয়ের মূলত কাজ তোমাদের বলা হয়েছে আশা করি তোমরা সেভাবে কাজ করবে। প্রথম বার ভুল করলে বুঝানো হবে দ্বিতীয় বার ভুল করলে ক্ষমা করা হবে। কিন্তু তৃতীয় বার ভুলের পর্যাপ্ত পরিমাণ শাস্তির জন্য তৈরি থাকতে হবে। আশা করি রুলস সম্পর্কে সবকিছু জেনেছো। আর আমি দ্য ব্রুনেল গ্রুপের হেড সে কথা কেউ জেনো জানতে না পারে। সবকিছু সবার থেকে লুকিয়ে রাখতে হবে মূলত বর্ষা, বৃষ্টি, রিয়া ও রিমার থেকে ভ্রুনাক্ষে জেনো ওরা টের না পায়। ওরা জেনো আমার সম্পর্কে কোনো কিছু না জানতে পারে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে তোমাদের। বর্ষার বিয়ে ভাঙ্গার জন্য আদ্রিককে আমি কিডনেপ করিয়ে ছিলাম সেটা জেনো কেউ জানতে না পারে। বুদ্ধি আমার ছিল শুধু ওদের কানে তোমরা তুলেছো কিডনেপ করার কথা। ওরা ভাবছে তোমাদের দুজনের বুদ্ধি শুনে আদ্রিককে ওরা প্লান করে কিডনেপ করেছিল। কিন্তু সবটাই হচ্ছে উল্টো প্লান ছিল আমার কিডনেপ করিয়েছি আমি শুধু নামটা ওদের হয়েছে। সময় হলে আমার পরিচয় আমি নিজে বর্ষাকে জানাবো তার আগে বর্ষা জেনো কোণ্থা থেকেও কোনো কিছু জানতে না পারে। দ্বিতীয়, নজর রাখবে আদ্রিকের উপর আমার সন্দেহ হচ্ছে ও থেমে থাকবে না। বর্ষার আগপাছ ঘুরবে। তোমরা ওর বেস্ট ফ্রেন্ড সেজন্য চাহিলে আদ্রিককে ওর থেকে দূরে রাখতে পারবে।

আমাদের গ্যাংয়ের যে কোনো কাজের জন্য বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্তে যেতে হতে পারে। তোমাদের নাম উঠলে তোমাদেরও যেতেই হবে। বাকি আমার ডান হাত সাহিল তোমাদের বুঝিয়ে দিবে।

দৃষ্টি নত রেখে উপর নিচ মাথা দুলিয়ে সাই দিলো মুরাদ ও নিভ। ওদের সম্মতি পেয়ে ভ্রু উঁচু করে উঠে দাঁড়ালো অভ্র। তার পেছনে তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে রয়েছে ছয়জন পুরুষ। অভ্র উঠে দাঁড়ালে তারাও নড়েচড়ে দাঁড়ায়। ছয়জন লোকের দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করে চলে যায় অভ্র। তারাও ইশারা বুঝে মাথা দুলায়।

মুরাদ গালে হাত দিয়ে বলে উঠল, “ অভ্র ভাইয়া কি দারুন প্লান বের করেছিলো তাই না। সাপ ও মরলো অথচ লাঠি ভাঙলো না। ”

ভ্রুখানিক কুঞ্চন করে প্রশ্ন ছুঁড়ল নিভ, “ মানে? ”

“ মানে হচ্ছে, বিয়েটা ভেঙে গেলো মানে সাপ মরলো। অন্য দিকে কেউ জানতে পারলো না কিডনেপের পেছনে মাস্টারমাইন্ড অভ্র ভাইয়া যাকে বলে লাঠি ভাঙলো না। ”

ঠোঁট জোড়া উল্টিয়ে মাথা নাড়িয়ে বলল, “ হুহহহ ”
.
.
একহাত দিয়ে কলম আঁকড়ে ধরে ঠোঁট জোড়ার মধ্যে রেখে দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে আছে। অপর হাত টেবিলের উপর কনুই ভোড় দিয়ে হাতের তালুতে মাথা রেখে স্টাডি টেবিলে বসে আছে।

দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বর্ষার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে। ধীর সুস্থে হেঁটে এসে পেছন থেকে বর্ষার হাত ধরল। যে হাত দিয়ে সে কলম কামড়াচ্ছিল। হঠাৎ পুরুষালি শক্তপোক্ত হাতের স্পর্শ পেয়ে মাথা ঘুরিয়ে পেছনে তাকালো। অভ্রকে দেখে হতভম্ব হয়ে পরে বর্ষা। ঠোঁট বাঁকা করে দুষ্ট হেসে অভ্র বলল, “ কি আমাকে খুব বেশি মনে করছিলে নাকি? ”

বর্ষা ভ্রু কুঁচকে বলল, “ নাহহ, তেমন কিছু নয়। ”

অভ্র উপর দিকে তাকিয়ে দেখল কলমের মোখটা কামড়ে নষ্ট করে ফেলেছে পরক্ষণে আবারও বলল, “ রাতে খাওনি নাকি বাড়ি থেকে খাবার দেয়নি? যার জন্য কলম কামড়ে খাচ্ছো? ”

ঠোঁট জোড়া উল্টিয়ে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল বর্ষা। অভ্র বর্ষার হাত ধরে টেনে ওর সাথে করে নিয়ে গেলো।

ছাঁদে এসে দু’জনে দাঁড়িয়ে আছে। আকাশে আজ পুরো চাঁদ উঠেছে৷ দেখতে অমায়িক সুন্দর লাগছে। জ্যোৎস্নার আলো চারদিক আলোকিত করে রেখেছে। বর্ষার কাঁধের উপর হাত রেখে নিজের সামনে দাঁড় করালো অভ্র। বর্ষা কিছু বোঝার আগে অভ্র তার সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসে পরল। ভারী দীর্ঘ শ্বাস ফেলে একহাত সামনে বাড়িয়ে দিলো। ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলে বলল, “ বর্ষা আজ আমি তোকে একটা কথা বলতে চাই। ”

আর কিছু বলার আগেই কোনো কিছুর শব্দ শুনে ছাঁদের দরজার দিকে তাকালো। ফোনে কথা বলতে বলতে আসছে কাব্য। ওকে আসতে দেখে ছিটকে দূরে সরে যায় বর্ষা। কাব্য কানে ফোন লাগিয়ে অন্য দিকে চলে যায়। ওদের দু’জনকে সে খেয়াল করেনি। বর্ষা সে সুযোগে সেখান থেকে পলায়ন করে। ভ্রু কুঁচকে অভ্র অভিমানী স্বরে বলল, “ এই কাব্য টাকে এখনই আসতে হলো ধ্যাত ভাল্লাগে। ”
.
.
রোজ সকালের মতো আজও সকলে একসাথে ব্রেকফাস্ট করতে বসেছে। অভ্র চাচ্ছে বর্ষার সাথে আলাদা সময় পার করতে কিন্তু কিভাবে? খালি প্লেট নিয়ে বসে থাকতে দেখে এগিয়ে গেলো রিয়া মা। অভ্রর প্লেটে পরোটা ও সব্জি দিয়ে বলল,‘ খাচ্ছিস না কেনো বাবা? মুখটার কি অবস্থা করেছিস দেখছিস? ”

অভ্র প্রত্যত্তরে বলল, ‘ খাচ্ছি তো ছোট মা ”

কিছুক্ষণের মধ্যে ব্রেকফাস্ট শেষ করে অনেকে উঠে চলে গেলো। অভ্রর বাবা ও চাচারা সবাই অফিসের উদ্দেশ্য বের হয়েছে তাদের সাথে কাব্য অপূর্ব ও নাহিদ গেছে। বাকিরা যার যার রুমে চলে গেছে। এখন টেবিলে বসে আছে হাতে গোণা কয়েকজন। অভ্র সংকোচ ঝেড়ে বলে উঠল, “ আমি বাড়িতে থেকে বোর হচ্ছি। আমার বাহিরে ঘুরতে যাওয়া প্রয়োজন। আমার সাথে যারা যারা যেতে ইচ্ছুক বিকেল চারটার মধ্যে রেডি হয়ে থাকবে। ”

বলে সে উঠে গেলো বাড়ির বড়রা কিছুক্ষণ অভ্রর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে নিঃশ্বাস ফেলল। তারা তো বাড়ি ছেড়ে যেতে পারবে না তাই বলে লাভ নেই। সকলের মধ্য থেকে লাফিয়ে উঠে বলে উঠল, “ আমি তো যাবোই। ”

তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বর্ষার হাত শক্ত করে ধরে আবারও চেয়ারে বসিয়ে দেয় তিন্নি। আরেকপাশ থেকে বৃষ্টি বিরবির করে বলল, “ বোইন একটু সবুর কর। এভাবে লাফালে যে কেউ সন্দেহ করবে। ”

বর্ষা ওদের দিকে তাকিয়ে জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করল। সামনে থেকে অভ্রর মা বলল, “ তোরা তো যাবিই। তোদেরই তো এখন ঘোরাফেরার বয়স। অভ্র যা বলে গেলো চারটার আগে রেডি হয়ে থাকিস। আর সন্ধ্যা হওয়ার পূর্বে বাড়ি ফিরে আসিস। ”

সাদা রঙের কামিজ, নীল রঙের ওড়না ও সালোয়ার পরে রেডি হয়ে গেছে বর্ষা। চুলগুলো সে ছেড়ে দিয়েছে। বলা যায় সময়ের এক ঘন্টা পূর্বে রেডি হয়ে বসে আছে। বাকিরা এখন রেডি হচ্ছে। বর্ষা বসে বসে ঘড়ির কাটা গুনছে কখন একঘন্টা শেষ হবে।
#অবন্তর_আসক্তি
#পর্ব_৩৬
#শারমিন_আক্তার_বর্ষা
______________
“তুই থ্রিপিস পরে আসছিস কেন? শাড়ি পড়ে আসিসনি কেনো? ” মাথা থেকে পা অব্ধি লক্ষ্য করে বলল অভ্র।
“ থ্রিপিস পরে আসছি তাতে সমস্যা কি?” বলল বর্ষা।
“ আমার সাথে কোথাও বের হলে তো তোকে শাড়ি পরে বের হতে হবে। থ্রিপিস পরে বের হতে পারবি না। ” রাগী গলায় বলল।

“ সব সময় শাড়ি পরা যায় না। শাড়ি পরা অনেক ঝামেলা। আর শাড়ি পরে অনেক টেনশনে থাকতে হয়। এই বুঝি কুঁচি খুলে গেলো বা উস্টা খেয়ে পরে গেলাম ”

“ সে যাইহোক শাড়ি তো তোকে পরতেই হবে। আর নয়তো যাওয়া ক্যানসেল। ” বলে অন্য দিকে তাকিয়ে রইল। রাগে ফোঁসফোঁস করতে করতে বর্ষা চলে গেলো।

“সবসময় শাড়ি মানে কি? লিমিট থাকে সবকিছুর। এখন আবার শাড়ি পরতে হবে উফফ। ”

রাগ হলেও কিছু করার নেই ভালো বাসার মানুষটির ভাললাগে এমন কাজ করতেও ভালো লাগে।
কলা পাতা রঙের পাড় সাদা রঙের শাড়ি পরে রেডি হয়ে নেয় বর্ষা। শাড়ি পরে নিচে নামতে অভ্রর মুখে ফুটে উঠে সচ্ছল হাসি। যা দেখে হেসে উঠল বর্ষা। গাড়িতে উঠে রওনা হলো। গাড়ি ড্রাইভিং করছে অভ্র পাশের সিটে বসে আছে বর্ষা। আঁড়চোখে বার কয়েক তাকিয়ে ছিল অভ্র। কিন্তু বর্ষা তাকায়নি তার দৃষ্টি জানালার বাহিরে। সে মনযোগ দিয়ে বাহিরের দৃশ্য দেখছে।
অনেকটা পথ আসার পর হঠাৎ গাড়ি ব্রেক কষলো অভ্র। একে একে সকলে নেমে পরল বর্ষা নামতে যাবে তখন অভ্র বর্ষার হাত ধরে নেয়। ঠোঁট বাঁকা করে হেসে বলে, “ আমার তুমি শুধু আমার একান্তই আমার। ”

বলে কিছু এগিয়ে আসতে নিলে বর্ষা অভ্রর হাত ছাড়িয়ে গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে পরে।
অভ্র বর্ষার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে গাড়ি থেকে নামে।

সামনে এক বড় লেক স্বচ্ছ পানি চারপাশ ঘিরে অনেকে বসে আছে। কিছুদূর হাঁটার পর ওরা লেকের কাছে পৌঁছে যায়। পাশে বেঞ্চ রয়েছে তাতে সকলে বসে পরে। পেছন দিয়ে আইসক্রিম ওয়ালা যাচ্ছিল। তাকে থামিয়ে অভ্র সকলের জন্য আইসক্রিম নিয়ে আসলো। বর্ষা লেকের চারপাশে তাকিয়ে বলে উঠল, “ আমিও মাছ ধরবো। ”

হতবিহ্বল তাকিয়ে রয় সকলে বর্ষার অদ্ভুত ইচ্ছা প্রকাশের দিকে। চোখ জোড়া ছোট ছোট করে বর্ষাকে উদ্দেশ্য করে অভ্র বলে, “ তুই ফিশিং করতে পারিস? ”

বর্ষা সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল, ‘ হ্যাঁ হ্যাঁ পারি তো খুব পারি। ’

অভ্র উপর নিচ মাথা নাড়িয়ে বলল, ‘ আচ্ছা দাঁড়া দেখি আশে পাশে কোনো বর্শি জোগাড় করতে পারি কিনা। ’

দশ মিনিটের মাথায় অভ্র একটা বর্শি নিয়ে আসল। বর্শি হাতে পেয়ে বাচ্চাদের মতো লাফাতে শুরু করলো বর্ষা। সে লেকের পাশে দাঁড়িয়ে বর্শির ঠুর পানিতে ফেলল। অভ্র বর্ষার পেছনে একটা চেয়ারে বসে রয়েছে। যা বর্ষা দেখেনি অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রয়েছে এদিক সেদিক তাকিয়ে শুধু দেখছে। সকলের বর্শিতে মাছ ধরা পরছে শুধু বর্ষার টা বাদে। মন মরা হয়ে দাঁড়িয়ে রয় পানি থেকে ঠুর তুলতে যাবে তখনই ঠুর পানির নিচে চলে যায়। বর্শিতে একটু টান লাগে। বর্ষা বুঝতে পারে কোনো মাছ আঁটকিয়েছে। সে তার যত শক্তি আছে সব দিয়ে টান মারল। ফলে বর্শি সহ মাছ উপরে চলে আসল। বর্ষা এমনিতেই শাড়ি পরা ছিল। ও সেই যোক সামলাতে পারেনি।

পেছনে গালে হাত দিয়ে বর্ষার মাছ ধরা দেখছিল অভ্র ঠোঁটের কোণে তার দুষ্টু হাসি। বর্ষা এক’পা দু’পা পিছিয়ে সোজা গিয়ে পরলো অভ্রর কোলে। আকস্মিক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সকলে ওদের উপর। আশে পাশের অনেকে মাছ ধরা বন্ধ রেখে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। অভ্র বর্ষাকে ইতস্তত বোধ করানোর জন্য বলে উঠল, “ এতই যখন আমার কোলে বসার সখ তাহলে আগে বললেই তো পারতে। এত কষ্ট করে মাছ ধরার এক্টিং করতে হতো না। ”

বর্ষা রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দেখে অভ্র দাঁত বের করে হাসছে। যা দেখে বাকিরাও হাসছে। এদিকে বর্ষার ইচ্ছে করছে অভ্র টাকে ধাক্কা দিয়ে লেকের জলে ফেলে দিতে সব কিছু ওই পাজিটার জন্যই হয়েছে।

অভ্র হাসতে হাসতে বলল, “ চলো বাড়ি ফিরে যাই এখানে একজনের বিষয়টা খুব সম্মানে লেগেছে। ”

বর্ষা প্রত্যত্তরে কিছুই বলল না। চুপ করে গিয়ে গাড়ির পেছনের সিটে বসে পরল। অভ্র ভালোই বুঝতে পারছে তার রাগরাগিণী বেশ ভালোই রাগ করেছে।

সকলকে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি নিয়ে কোথাও চলে যায় অভ্র। রুমে এসে শাড়ি চেঞ্জ করে নেয়। পাক্কা ত্রিশ মিনিট শাওয়ার নেওয়ার পর থ্রিপিস পরে বের হয়ে আসে।

ভেজা চুলে টাওয়াল পেঁচিয়ে বিছানার উপর বসে পরে। মোবাইলে হঠাৎ টুকটাক শব্দ হয় শুনে উঠে গিয়ে মোবাইল নিয়ে আসে। লক খুলে দেখলো একটা মেসেজ, ❝ Gp Offer.
৫মিনিট ৩টাকা,মেয়াদ ৪ঘন্টা। নিতে ডায়াল করুন *১২১*৪০২২# ❞

মেসেজটা দেখার পরপর মেজাজ জেনো তিরতির করে বেড়ে গেলো। ঠোঁট জোড়া উল্টিয়ে বেশ কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে বসে রইল। নিঃশ্বাস ফেলে মোবাইলটা আবারও হাতে নিলো। ওয়াইফাই অন করে হোয়াটসএপে গেলো কিন্তু সেখানে কারো মেসেজ না পেয়ে, গেলো মেসেঞ্জারে কিন্তু কোথাও কেউ কোনো এসএমএস করেনি। দেখে বিরক্ত হলো বর্ষা পরক্ষণে ভাবলে ইউটিউবে যাওয়া যাক।

অনেকক্ষণ ঘুরে একটা কোরিয়ার ড্রামা দেখতে পেলো। একটা হিন্দি গানের মধ্যে, দেখে অনেক ইন্টারেস্টিং লেগেছে বলে সার্চ করে ড্রামাটা দেখতে লাগল। ঘন্টার পর ঘন্টা পার হয়ে যাচ্ছে অথচ সে মনোযোগ দিয়ে ড্রামা দেখছে। আরও কয়েক ঘন্টা পেরিয়ে গেলো কিন্তু কোনো হেলদোল নেই বর্ষার সে জেনো ড্রামাটায় আসক্ত হয়ে পরেছে। যেভাবেই হোক দেখে শেষ করতে হবে। রাতে খাবার খাওয়ার জন্য ডাকতে এসেছিল কিন্তু সে খাবে না বলে দিয়েছে। শুধু মাত্র ড্রামাটা দেখার জন্য যতবার প্রাকৃতিক কাজে যাওয়ার প্রয়োজন পরেছে মোবাইলটা হাতে করে নিয়েই গেছে।

অভ্র কিছুক্ষণ আগে বাড়ি ফিরেছে হাতের আইসক্রিম ফ্রিজে রেখে রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং টেবিলে চলে আসে। খাবার শেষ করে জানতে পারে বর্ষা খেতে নামেনি। সেজন্য অভ্র নিজের রুমে না গিয়ে সোজা বর্ষার রুমে চলে যায়। বিছানার উপর উপুড় হয়ে শুয়ে মোবাইল দেখছে। রুমে ঢুকে বিছানার উপর বসে কিছুক্ষণ দেখল বর্ষা কি দেখছে এত মনোযোগ দিয়ে। অভ্র কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে শাণিতকন্ঠে বলল, “ এইসব কি দেখছিস কোন দেশের ভাষা এটা? বুঝিস কি বলছে? যতসব চুং চাং কিং কাং কুং ফুং বলছে। ”

অভ্রর আওয়াজ শুনে লাফিয়ে উঠে বসে বর্ষা। ভ্রু উঁচু করে তাকিয়ে আছে ওর দিকে দেখে শুকনো ঢোক গিলে বর্ষা বলল, ‘ নিচে ইংলিশ ট্রান্সলেশন হচ্ছে, তাই বুঝতেছি। ’

অভ্র বর্ষার দিকে কিছুটা ঝুঁকে গম্ভীর কন্ঠে বলল, ‘ কি বুঝছিস? আমাকেও বুঝা। ’

বর্ষা দুই চোখ ছোট ছোট করে অভ্রর দিকে তাকিয়ে অস্ফুটস্বরে বলল, “ আমি বুঝতেছি এটাই অনেক তোমাকে বুঝাতে পারবো না। ”

রাগী কন্ঠে বলল,‘ খেতে যাসনি কেনো? ’

বিছানা থেকে লাফ দিয়ে নিচে নেমে বলল, ‘ এখনই যাচ্ছি। ’

বলে রুম থেকে ছুটে চলে গেলো সে খুব ভালো করেই জানে এখানে থাকলে শত প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।
.
.
রাতে অভ্র কল দিয়েছিল, বর্ষা কল কেটে দেয়। মেসেজ দিয়ে বলে তাকে বারান্দায় আসতে কিন্তু বর্ষা সাফসাফ বলে সে যাবে না। কেননা সে কোরিয়ার ড্রামা দেখায় মগ্ন।
পুরো একটা রাত সে ড্রামা দেখে পার করে দেয়। আগামীকাল শুক্রবার তাই সে দিনে পরে পরে ঘুমাবে এটাই তার প্লেন।

সকাল আটটা পর্যন্ত ড্রামা দেখে শেষ করে হাফ ছাড়লো বর্ষা। মনের মধ্যে এখন শান্তি লাগছে।

সকালের নাস্তা করে ছাঁদে চলে যায়। কিন্তু বর্ষা কি জানতো অভ্র আজ ওর সাথে এমন এক অদ্ভুত কান্ড করে বসবে? শুধু মাত্র ড্রামার নায়কটা হ্যান্ডসাম বলায়।

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here