অবশেষে তুমি এলে কাছে পর্ব -০২

#অবশেষে_তুমি_এলে_কাছে
#লেখিকা_জেনিফা_চৌধুরী(ছদ্মনাম)
#পর্ব_দ্বিতীয়

–তুমি আবারো আমার রুমে এসেছো।এই মেয়ে তুমি কি বে’হায়া।এত বার বলার পর ও তোমার লজ্জা হচ্ছেনা।

রাতে বাসায় ফিরেই নুসাইবা কে খাটের উপর ঘুমানো দেখে তিশান চেচিয়ে উপরোক্ত কথাগুলো বলে উঠলো।তিশানের চেচামেচি শুনে নুসাইবা ভয়ে পেয়ে লাফিয়ে উঠে বসে পড়লো।কিছুক্ষন চুপ করে থেকে নুসাইবা তিশানকে কড়া কন্ঠে জবাব দিলো,,

—আপনি যখন বিয়েটা আমাকে করেছেন তাহলে নিশ্চয়ই আমি অন্য কারোর ঘরে থাকব না আপনার ঘরেই থাকব।আমি যত দূর জানি আপনাদের ভদ্র ফ্যামিলি তাহলে আপনি অভদ্রের মতো আচরণ করছেন কেনো?

নুসাইবার তীক্ষ্ণ জবাব শুনে তিশান রাগে নুসাইবার হাত চেপে ধরে চিৎকার করে বলে উঠলো,,,

—তোমার এত বড় সাহস হলো কি করে। তুমি আমার সাথে উচ্চস্বরে কথা বলো?

নুসাইবা হেচকা টানে হাত ছুটিয়ে নিয়ে বললো,,,

—যেদিন ভালোবেসে হাত ধরতে চাইবেন সেদিন আমি সজ্ঞানে নিজেকে সপে দিব। দেখুন মিস্টার তিশান আমি আপনাকে জোর করে বিয়ে করিনি।আর না আমার বাবা মা আপনার হাতে আমাকে জোর করে তুলে দিছে।আপনার বাবা সজ্ঞানে আমাকে আপনার বউ করেছে।তাহলে আমি কেনো আপনার অভদ্রতা মেবে নিব।

বলেই নুসাইবা তিশান কে পাশ কাটিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো।তিশান হা করে চেয়ে আছে।মেয়েটাকে ও সরল_সোজা ভেবেছিলো এখন ওর সব ধারনাই পাল্টে গেলো।তিশান আর কিছু না বলে চুপ চাপ একটা বালিশ নিয়ে সোফায় গিয়ে সুয়ে পড়লো।নুসাইবা বেড়িয়ে তিশান কে সোফায় দেখে আর কিছু না বলে ও গিয়ে খাটে ঘুমিয়ে পড়লো।
____________________________________________
সকাল সকাল বেল বাজানোর শব্দ শুনে নুসাইবা রান্না ঘর থেকে গিয়ে দরজা খুলতেই একটা মেয়েকে দেখতে পেলো।অপরিচিত একটা মেয়েকে দরজা খুলতে দেখে সাহেরিকার বুজতে দেরি হলো না যে এটা তিশানের বউ।সাহেরিকা নুসাইবাকে পাশ কাটিয়ে ভেতরে চলে আসতেই নুসাইবা পেছন থেকে বলে উঠলো,,

–আপনি কে?আর কিছু না বলে ভেতরে ঢুকে আসলেন কেনো?

সাহেরিকা পেছন ঘুরে একটা হাসি দিয়ে বলে উঠলো,,,

–তিশান কে ডাকো।ওই বলে দিবে আমি কে?

—সারু তুই এখানে?এত সকালে।

ওরা দুজনেই সিড়ির দিকে চেয়ে দেখে তিশান দাড়িয়ে আছে।সাহেরিকা তিশান কে দেখে তিশানের সামনে গিয়ে তিশান কে জড়িয়ে ধরলো।নুসাইবা অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।সাহেরিকা তিশান কে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো,,,

–তোকে অনেক মিস করছিলাম তাই সকাল সকাল চলে এলাম।চল না আজ আমরা এক সাথে ব্রেকফাস্ট করি।

তিশান নুসাইবার দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছে।নুসাইবাকে দেখানোর জন্য তিশান ও সাহেরিকা কে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো,,,

—অবশ্যই।ওয়েট আমি রেডি হয়ে আসচ্ছি।

বলে সাহেরিকা তিশানের হাত ধরতেই ওরা দুজন উপরে চলে গেলো।নুসাইবা ও কিছু না বলে রান্না ঘরে চলে গেলো।ওর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে নিজের স্বামীকে কোনো মেয়েই অন্যের সাথে সহ্য করতে পারেনা।তিশানের উপর ঘৃনা হচ্ছে নুসাইবার।
____________________________________________
রাতে তিশান বাড়ি ফিরতেই দেখে নুসাইবা এখনো জেগে আছে।নুসাইবাকে সোফায় হেলান দিয়ে বসে থাকতে দেখে তিশান কিছু না বলে শার্ট টা খুলে সোফায় ছুড়ে মারতেই নুসাইবা উঠে তিশানের সামনে এসে দাড়িয়ে বললো,,,

–আমার আপনার সাথে কিছু কথা আছে।

তিশান ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে হাতের ঘড়িটা খুলতে খুলতে বললো,,,

—বলে ফেলো ন্যাকামি না করে।

নুসাইবা ও দেরি না করে শান্ত কন্ঠেই জিজ্ঞেদ করলো,,

—-সকালের মেয়েটা কে ছিলো?

–তা নিশ্চয়ই আমি তোমাকে বলতে বাধ্য নই।

তিশান খামখেয়ালি জবাব দিলো।

—আপনি বলতে বাধ্য কারন আইনত আমি আপনার স্ত্রী। তাই আপনার সব কিছুর উপর আমার অধিকার আছে।

—-আমি মানিনা তোমাকে স্ত্রী হিসেবে।

—আপনি মানলেন কি না মানলেন আই ডোন্ট কেয়ার।আপনার মতো একটা অভদ্র লোকের থেকে ভালো কিছু আশা করা যায়না।

নুসাইবার কথা শুনে তিশান রাগে নুসাইবার গাল চেপে ধরে বলে উঠলো,,,

—এই মেয়ে তুমি আমাকে অভদ্র বলছো কোন সাহসে।

নুসাইবা তিশানের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতেই তিশান ছেড়ে দিলো নুসাইবাকে।

–আজকে আমার গায়ে হাত তুলেছেন আমি ভদ্রতার খাতিরে মেনে নিলাম আর একবার এই সাহস দেখাতে আসবেন না তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবেনা।যাই হোক আমি সোজা ভাবে কথা বলতে পছন্দ করি।আপনি যখন এই বিয়েটা মানেন না তাহলে আমি ও এই সম্পর্ক রাখতে চাইনা।

–যা বলার সরাসরি বলো।

—আমি এখান থেকে চলে যাব কিছুদিন পর।এই কয়েক টা দিন আমাকে সহ্য করুন তারপর আপনার পথের কাটার সরে যাবে।

বলেই নুসাইবা রুম থেকে বেরিয়ে আসলো।নুসাইবা বেড়িয়ে পাশের রুমে এসেই দরজা আটকে দিলো।তিশান এখনো চুপ করে আছে।নুসাইবা ওকে কি বললো সব ওর মাথার উপর দিয়ে গেলো।তারপর নিজে নিজেই বলল,,

–যাক আপদ টা নিজ ইচ্ছায় বিদায় হবে।
____________________________________________
নুসাইবা আর তিশানের বিয়ের আজ ৭ দিন।এই ৭ দিন নুসাইবা আর তিশান দুজনেই আলাদা থেকেছে।ওরা দুজনেই দরকার ছাড়া কেউ কারোর সাথে কথা অব্দি বলেনা।তিশানের অফিসে একটা বড় অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য নুসাইবা রেডি হচ্ছে বাধ্যতামূলক তিশান কে নুসাইবাকে নিয়ে যেতে হবে।তিশান নুসাইবার দেরি দেখে নুসাইবার রুমে আসতেই দেখে নুসাইবা শাড়ির কুচি ঠিক করতে হিমশিম খাচ্ছে।দরজার খোলার আওয়াজ পেতেই নুসাইবা সামনে তাকিয়ে দেখে তিশান দাড়িয়ে আছে তিশান কে দেখে নুসাইবা শাড়ি আচল টেনে নিজেকে ঢাকতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।আজ তিশান হা করে নুসাইবার দিকে চেয়ে আছে।বিয়ের পর এই ফাস্ট তিশান নুসাইবাকে ভালো করে খেয়াল করলো।শ্যামবর্ন গায়ে রঙ,ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক,কাজল টানা চোখ,খোলা চুল গুলো বাতাসে উড়ছে দেখতে অনেক টা মায়াবী লাগছে নুসাইবাকে।শ্যাম বর্ন গায়ের রঙে যে কাউকে এতটা সুন্দর আর মায়াবতী লাগে সেটা তিশান আজ নুসাইবাকে না দেখলে জানতেই পারতোনা।তিশান কে এমন ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে নুসাইবার অনেক টা অস্বস্তি হচ্ছে।তিশান কিছু ভেবে দরজার দিকে পা বাড়িয়ে ও থেমে গেলো।তারপর নুসাইবার সামনে গিয়ে হাটু ভেঙে বসে নুসাইবার শাড়ির কুচি গুলো ঠিক করে দিতে লাগলো।তিশানের কান্ডে নুসাইবা হা করে চেয়ে আছে।নুসাইবাকে সামনে দেখলেই যে ছেলেটা রেগে যায় সে ছেলেটা নিজে ওর সামনে হাটু ভেঙে বসে ওর কুচি ঠিক করে দিচ্ছে নিজের চোখ কেই যেনো বিশ্বাস করতেই পারছেনা নুসাইবা।তিশান নুসাইবার শাড়িটা ঠিক করে দিয়ে দাড়িয়ে একবার নুসাইবার পা থেকে মাথা অব্দি দেখে শান্ত কন্ঠে বললো,,

–এখন পারফেক্ট লাগছে..আ…..

তিশান আর কিছু বলতে গিয়েও হুট করে থেমে গেলো।তারপর ফট করে উল্টো দিকে ঘুরে হাটা শুরু করলো। নুসাইবা ও আর কিছু না বলে ওর পেছন পেছন হাটা শুরু করলো।অনুষ্ঠানের প্রথম থেকে কয়েকটা ছেলে নুসাইবার দিকে বাজে নজরে দেখছিলো।নুসাইবা সেটা খেয়াল না করলেও তিশান ঠিকি খেয়াল করেছে তাও কিছু না বলে চুপ করে আছে শুধু মাত্র নিজের ইগোর জন্য।নুসাইবাকে এক জায়গায় দাড় করিয়ে রেখে তিশান বলে উঠলো,

–তোমার মতো থার্ড ক্লাস একটা মেয়েকে সাথে করে নিয়ে ঘুরে নিজের সম্মান নষ্ট করতে চাইনা তাই এখানেই দাড়িয়ে থাকো আমার পেছন পেছন ঘুরবেনা।

তিশানের কথা শুনে ওদের পাশে থাকা কয়েক টা মেয়ে হাহা করে হেসে দিলো।নুসাইবা লজ্জায় নিচে তাকিয়ে আছে ওর চোখে পানি টলমল করছে।পাশ থেকে একটা মেয়ে তিশানের সামনে এসে একটু উচ্চস্বরে বলে উঠলো,,

—হেই হ্যান্ডসাম তোমাকে আমার সাথে ভালো মানাবে। লেটস ডান্স…

বলেই তিশানের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো তিশান ও হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে উঠলো,,,

—শিউর।

তিশান জানতো ও এখান থেকে চলে গেলে ওই ছেলেগুলা নুসাইবা কে বিরক্ত করবে তাও তিশান নুসাইবাকে একা রেখে ওই মেয়েটার সাথে গিয়ে ডান্স করতে লাগলো।নুসাইবা এক কোনায় চুপচাপ দাড়িয়ে ছিলো।হঠাৎ পেছন থেকে কেউ নুসাইবার মুখ চেপে ধরতেই নুসাইবা ভয়ে আৎকে উঠলো……..

#চলবে…

(আসসালামু আলাইকুম)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here