“অবশেষে_তুমি (পর্ব ২০)

#অবশেষে_তুমি (পর্ব ২০)
#Mohua_Afrin_Mim
·
·
·
এখন আমার আর অর্ণবের সম্পর্কটা ভালোই চলছে।। বন্ধুত্বের সম্পর্কটা আমরা দুজনেই খুব ভালোভাবে পালন করছি।। দুজনেই এখন নানা ধরনের গল্প করি।। দুজন দুজনকে সব কথা শেয়ার করি।। অর্ণব এখন আগের মতো এতো চুপ করে থাকেনা এখন উনি ভালোই কথা বলেন।। আগে আমার সাথে প্রয়োজন বাদে কথা বলতো না।। আর এখন সব কথা বলে কোনো ধরনের কথা বাদ দেয় না আমাকে বলা থেকে।। প্রতিদিন রাতে আমাকে বলে যে আজকের দিনটা কেমন কেটেছে কি কি করেছে।। আর আমারো শুনতে ভালো লাগে।। হাজার হোক প্রিয় মানুষটার সব কথাই শুনতে ভালো লাগে।। প্রিয় মানুষটার কথা শুনতে কার না ভালো লাগে না!! উনি যখন কথা বলেন আমি চুপ করে শুধু উনার দিকে তাকিয়ে থাকি আর উনার কথা শুনি।। উনার কথাগুলো অনেক সুন্দর আর উনি অনেক সুন্দর করেও কথা বলেন।। এখন উনাকে আমি খুব ভালো করেই চিনি এবং বুঝি।। উনার প্রতিটা কদমে আমি বুঝি উনি কি ভাবছেন।। উনার কখন কি প্রয়োজন সেটা উনি বলার আগেই আমি বুঝে যাই আর এটা নিয়ে অর্ণব অনেক অবাকও হয় আর আমাকে জিজ্ঞাসা করেন আমি কিভাবে বুঝি এতো কিছু উনি বলার আগেই তখন আমি শুধু একটা হাসি দিয়ে বলি এমনিতেই বুঝি।। আমি যে উনাকে কতোটা ভালোবাসি সেটা উনি জানেন না।।কখনো জানবেন কিনা সেটাও জানিনা।। তবে আমার পূর্ণ বিশ্বাস আছে যে একদিন না একদিন উনি ঠিকই আমাকে বুঝবেন আর আমাকে মেনে নিবেন।। আমি সেদিনের অপেক্ষায় আছি।।

.

.

রাতে অর্ণব মোবাইল চালাচ্ছিলো।।আমি অর্ণবের কাছে গিয়ে বললাম

মিমঃ আপনি যে গান গেতে পারেন সেটা তো জানতাম না!! আর আগে তো এই কথা কখনো বলেননি আমাকে!!

অর্ণবঃ অনেকটা অবাক হয়ে বললাম তুমি জানলে কি করে??

মিমঃ আপনার গিটার দেখে।। আজকে হঠাৎ করে চোখে পড়লো।।

অর্ণবঃ ওহ্।। আগে গান গাওয়া হতো কিন্তু এখন আর গাওয়া হয় না।।

মিমঃ কেনো!! কোনো কারণ আছে নাকি!!

অর্ণবঃ একটা সময় নিসা অনেক পছন্দ করতো আমার গান।। এখন তো ও আর নেই।। গান গাওয়ার কারনটাও নেই।। তাই এখন আর গান গাইনা।। আর গিটারও বাজানো হয়না।। এজন্য গিটারটা ওভাবেই পড়ে আছে।।

অর্ণব কথাগুলো বলেই মন খারাপ করে ফেললো।। হয়তো নিসার কথা মনে পড়ে গিয়েছে।। আমি বললাম

মিমঃ যদি আমি বলি তাহলে কি গান গাবেন।। আশা করি ফ্রেন্ডের কথা ফেলবেন না।। ফ্রেন্ড হয়ে তো এতোটুকু আবদার করতেই পারি।। শুনাবেন একটা গান!!

আমার কথা শুনে অর্ণব হেসে দিয়ে বললো

অর্ণবঃ তা তো করা যায়ই।। ফ্রেন্ডের কথা কি আর ফেলা যায়!!

আমিও উনার কথা শুনে একটা হাসি দিলাম।। উনি গিটারটা নিয়ে বসে গিটারে সুর তুলে গাওয়া শুরু করলেন

“”মেলেছো চুল খুলেছো ডানা
জানি আঙুল ছোঁয়ানো মানা
তবু আজি আমি রাজি
চাঁপা ঠোঁটে কথা ফোটে শোনো
আমাকে রাখো বুকের পশমে তোমার নরমে

ও জো কিয়া ও নিভানা পাড়েগা
রোকে জামানা চাহে রোকে খুদাই
তুৃমকো আনা পাড়েগা।

চোখ বলে না না জলে যাবো না
রাত বলে না বিফলে যাবো না
ছোট গল্পের স্টলে যাবো না
তুই না এলে।

দেখা যাবে যদি জানাজানি হয়
জোনাকির ভালো ঘুমপড়ানি হয়
তারারা নাকি অভিমানী হয়
দেখা না পেলে।

জানি দেখা হবে ঠোঁটের ভিতরে
ঘুমের আদরে।

ঘাস বালিশের পাশ ফেরানো থাক
বিছানার নীচে ঘুম পিয়ানো থাক
মিছিমিছি কিছু মোম জ্বালানো থাক
একা টেবিলে।

কাঁচা মিঠে ছোঁয়া দিয়ে মাপে মন
ছোট কাগজের ভীড় ছাপি মন
মন থাকে মা যে মন খারাপি মন
দেখা না দিলে।

জানি দেখা হবে রাতের শরীরে
তোমার গভীরে।

মেলেছো চুল খুলেছো ডানা
জানি আঙুল ছোঁয়ানো মানা
তবু আজি আমি রাজি
চাঁপা ঠোঁটে কথা ফোটে শোনো
আমাকে রাখো বুকের পশমে তোমার নরমে

ও জো কিয়া ও নিভানা পাড়েগা
রোকে জামানা চাহে রোকে খুদাই
তুৃমকো আনা পাড়েগা।।””

অর্ণবের গানে আমি পুরাপুরি ডুবে গেলাম।।
গান শুনে আমি অন্য একটা দুনিয়ায় চলে গেলাম।। গানের প্রতিটা শব্দ অনুভব করছি।। জানিনা উনি কি ভেবে এই গানটা গাচ্ছেন কিন্তু গানের শব্দগুলো আমার মন ছুঁয়ে গেলো।। এই মানুষটার সাথে থাকলে কেন জানি হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে।।

আচ্ছা গানটা যদি উনি আমার জন্য গেতেন বা আমার উদ্দেশ্যে গেতেন তাহলে কি ব্যপারটা মন্দ হতো!! অবশ্যই না।। আমি তো চাই যে উনি আমার জন্য গান গাবেন শুধু আমার জন্য।। কিন্তু এটা কখনো সম্ভব না।। এটা কখনো স্বপ্নেও সম্ভব না।। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে আমার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে।। গাল বেয়ে এক ফোঁটা নোনা জল পড়তেই আমার হুশ ফিরলো।। তাড়াতাড়ি করে চোখের পানি মুছে ফেললাম। কারণ অর্ণব যদি জানতে চায় চোখে পানি কেন তাহলে তার কোনো সদত্তর আমি দিতে পারবো না।। উনাকে ভালোবাসার অধিকার তো উনি আমাকে দেন নি।।

একটুপরে বললাম

মিমঃ আপনি তো অনেক ভালো গান গেতে পারেন।। আর গান শুনানোর জন্য ধন্যবাদ।।

অর্ণবঃ Thank you.

মিমঃ আমি একটু নিচে যাচ্ছি পানি আনার জন্য।।

অর্ণবঃ ঠিক আছে।।

এই প্রথম অর্নবের উপর খুব রাগ হচ্ছে।। সোফার উপর বসে অনেকক্ষণ কান্না করলাম।। আচ্ছা অর্ণব কি বুঝে না আমি উনাকে কতটা ভালোবাসি।। আমি তো কখনো আমার অধিকার নিয়ে উনার সামনে দাড়াইনি।। তারপরও আমার ভালোবাসা, আমার অনুভুতিকে কেনো উনি ছোট করেন।।

এভাবে কতক্ষণ কেদেছি জানি না।। পরে চোখ মুখ ধুয়ে রুমে গেলাম।। দেখলাম রুমে অর্ণব নেই।। পরে দেখি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।। আমি কিছু না বলে শুয়ে পড়লাম।।

বেশ কিছুক্ষণ পর অর্ণব রুমে এসে আমাকে ডাক দিলো

অর্ণবঃ মীম।।

মিমঃ জ্বী।।

অর্ণবঃ কখন আসলে?আমাকে ডাক দাওনি কেনো?

মিমঃ ভাবলাম আপনি ব্যস্ত আছেন তাই……

অর্ণবঃ কিছু হয়েছে তোমার??

মিমঃ কই না তো।।

অর্ণবঃ চলো কোথাও ঘুরে আসি।।

মিমঃ এখন!! এতো রাতে!! রাত কত হয়েছে খেয়াল আছে??

অর্ণবঃ কই এতো রাত হয়েছে??

মিমঃ ১১টা বাজে।।

অর্ণবঃ তাতে কি রাতের বেলা ঘুরতে খুব ভালো লাগে।। অন্য রকম একটা অনুভূতি কাজ করে।।

মিমঃ বাবা-মা যদি কিছু মনে করেন?

অর্ণবঃ আরে আমার সাথে গেলে কেউ কিছু মনে করবে না।। যাও রেডি হয়ে আসো।।

মিমঃ আচ্ছা।

মানুষের জীবন যে কতটা অদ্ভুত তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।। আগে আমার ছোট্ট একটা জিনিস ভেঙে গেলে কত কান্না করতাম।। সারা বাড়ি মাথায় তুলে ফেলতাম আর এখন হাজার মন খারাপ হলেও পাশের মানুষটাও বুঝতে পারে না।। অথচ এই মানুষটারই তো আমার সব মন খারাপের সঙ্গী হওয়ার কথা ছিলো।।

এসব ভাবতে ভাবতেই রেডি হয়ে গেলাম।। আমি সবুজ রং এর শাড়ী পড়েছি।।

অর্ণবকে গিয়ে বলতে যাবো ”আমি রেডি হয়ে গেছি” এর মধ্যে অর্ণব চলে এসেছে।। উনি কালো রং এর একটা পাঞ্জাবি পড়েছেন।। অনেক সুন্দর লাগছে আজকে উনাকে।।

আমার পাঞ্জাবি খুব পছন্দের।। কিন্তু অর্ণব কি করে জানলো!! উনার তো জানার কথা না!!
ধুর আমিও যে কি সব ভাবছি!! উনি হয়তো এমনিতেই পড়েছেন।। অর্ণব বললো

অর্ণবঃ তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।।

মিমঃ Thank you.

অর্ণবঃ চলো যাওয়া যাক।।

মিমঃ হুম।।

বাহিরে বের হওয়ার পর দেখি উনি গাড়ি বের করেননি।। তাই বললাম

মিমঃ কি ব্যাপার?? আপনি গাড়ি বের করেন নি??

অর্ণবঃ গাড়ির মোটা কাচের ভেতরে থেকে রাতের সৌন্দর্য মিস করতে চাই না।।

এই মানুষটার কথা শুনে খুব অবাক লাগছে।। যে কিনা AC ছাড়া পাঁচ মিনিটও থাকে না সে এই কথা বলছে।

আমরা হাটছি।। জায়গার নামটা বলতে পারছি না কোথায় আছি কিন্তু অনেক ভালো লাগছে হাটতে।। এর আগে কখনো এতো রাতে বাহিরে বের হওয়া হয়নি আর এরকমভাবে কারো সাথে হাটতে বের হওয়া হয়নি।।

অর্ণবঃ মীম? কেমন লাগছে??

মিমঃ আপনি সাথে থাকলে আমার সব সময়ই ভালো লাগে (মনে মনে)
ভালো লাগছে।। পরিবেশটা খুব সুন্দর।।

অর্ণবঃ হুম।। রাতে ঘুরতে যতটা ভালো লাগে অন্য সময় এতে ভালো লাগে না।।

কিছুক্ষণ হাটার পর দেখলাম সামনে একটা আইসক্রিম পার্লার।। আইসক্রিম আমার অনেক পছন্দ।। আইসক্রিম হলে আমার আর কিছু লাগে না।। আমি তাকিয়ে আছি সেদিকে।। অর্ণব বললো

অর্ণবঃ কি দেখছ??

মিমঃ না তেমন কিছু না।।

অর্ণবঃ আচ্ছা তুমি এইখানে দাড়াও আমি একটু আসছি।

মিমঃ কোথায় যাচ্ছেন??

অর্ণবঃ দাড়াও আসছি।।

অর্ণব আসলে আমি বললাম

মিমঃ কোথায় গিয়েছিলেন??

অর্ণবঃ এই নাও।।

মিমঃ আইসক্রিম!! কিন্তু…….

অর্ণবঃ এটাই তো চাইছিলে মনে মনে।।

মিমঃ আপনি কি করে বুঝলেন??
·
·
·
চলবে……………………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here