“অবশেষে_তুমি (পর্ব ২৬)

#অবশেষে_তুমি (পর্ব ২৬)
#Mohua_Afrin_Mim
·
·
·
ব্যাগ পত্র সব গুছানো শেষ এবার শুধু যাওয়ার পালা।। রেডি হয়ে নিলাম।। অর্ণব আজকে সাদা শার্ট আর ব্ল্যাক জিন্স পড়েছে।। পুরাই ডেশিং লাগছে।। এই লোকটাকে দেখলে কেউ বলবে যে ওর বিয়ে হয়েছে!! এমনিতে তো অনেক স্টাইলিশ এখন মনে হয় আরো বেশি হয়ে গিয়েছে।। একটু স্টাইল কমালে কি হয়!! এখন তো বউ আছে এতো স্টাইল করে কি হবে কাকে দেখাবে!! আজব মানুষ!! রাত নয়টা বাজে আমরা রওনা দিলাম।। নিজেদের গাড়ি নিয়েই যাচ্ছি সাথে ড্রাইভার আছে।।

মিম আজ সাদা রঙের একটা থ্রি পিস পড়েছে।।বেশ অন্যরকম লাগছে ওকে।। ও সাধারণত শাড়ী পড়ে।। কারণ অর্ণব শাড়ী পছন্দ করে।। শাড়ি না পরলে নাকি বউ বউ লাগে না।। কিন্তু বেড়াতে যাওয়ার জন্য অর্নব নিজেই ড্রেসগুলো নিয়ে এসেছে।। ক্যারি করতে সুবিধা হবে তাই জন্য।

অর্নব আর আমি গাড়িতে বসে আছি।।

মিমঃ তোমার যখন এতো হিমু হওয়ার শখ, খাগড়াছড়ি অবদি তো হেটেই চলে যেতে পারতে।।

অর্ণবঃ মজা করছো তাই না। খুব খারাপ হবে কিন্তু।।

মিমঃ মজা করা বারন কারনে অকারণ।।

অর্ণব আমার দিকে তাকাতেই আমি ঠোঁটে আঙুল দিয়ে অন্য পাশে ফিরলাম।। রাতে জার্নি করতে এমনিতেই আমার অনেক ভালো লাগে আর সেটা যদি দূর পাল্লার যাত্রা হয় তাহলে তো কোনো কথাই নেই।। এই সময়ে কোথাও গেলে পরিবেশটা ভালো করে অনুভব করা যায় কেননা এই সময় সব একদম শান্ত থাকে।। আমি বাহিরের প্রকৃতি দেখছি।। কি মনোরম একটা পরিবেশ।। মনটা ভালো করে দেয়।। আমি এটা ভেবেই অবাক হচ্ছি যে আমার দেশটা এত সুন্দর!! এটাও ভাবছি যে আমি আমার দেশ সম্পর্কে কতটা কম জানি।। এজন্যই হয়তো কবি লিখেছিলেন :

“বাংলার মুখ দেখিয়াছি আমি
তাই আর পৃথিবীর রুপ খুঁজিতে চাই না আমি। ”

অর্ণব হঠাৎ করে বললো

অর্ণবঃ মিম ওদিকে কি করছো?? এদিকে আসো।।

কথাটা বলেই অর্ণব আমাকে টান দিয়ে ওর বুকের কাছে টেনে নিল।।

সকাল দশটা বাজে পৌঁছে গেলাম খাগড়াছড়ি।। গাড়ি থেকে নেমে চারপাশটা দেখছি।। কি অপরূপ লাগছে জায়গাটা।। অনেক মানুষ এখানে ঘুরতে আসে।। টুরিস্ট স্পট বলে কথা।। হোটেল আগে থেকেই বুক করা ছিলো তাই নতুন করে বুক করতে হয়নি।। অর্ণব আগে থেকেই বুক করে রেখেছে।। আমরা গ্রীন বাংলা হোটেলে উঠেছি।। হোটেলে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে একটু রেস্ট নিয়ে নাস্তা করতে চলে গেলাম।। নাস্তা করে চলে গেলাম সেখানকার একটা জায়গায়।। জায়গাটা হলো আলুরটিলা গুহা।। এটা একটা সুরঙ্গ পথ।। গুহাটায় অনেক মানুষ যাচ্ছে পরিদর্শন করার জন্য।। আলুরটিলা গুহায় ঢুকার আগে একটা মশাল নিয়ে নিতে হলো।। কেননা ভিতরে নাকি অনেক অন্ধকার কিছুই দেখা যায় না।। আমি আর অর্ণব ভিতরে ঢুকে দেখছি অনেক বেশি অন্ধকার এখানে।। অনেকে পুরোটা না ঘুরেই চলে যাচ্ছে ভয়ে।। আমরা কিছুক্ষণ ঘুরে দেখে বের হয়ে আসি সেখান থেকে।।

দুপুরে লাঞ্চ শেষ করে হোটেলে ফিরে কিছু কাপড় আর প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র নিয়ে নিলাম সাজেক ভ্যালী যাওয়ার জন্য।। গাড়ি নিয়ে কিছুদূর যাওয়ার পর দেখলাম আর্মির ক্যাম্প।। সেখানে আমাদের গাড়ি থামিয়ে দেয়া হলো।। এরপর আর নিজেদের গাড়ি নিয়ে উপরে যাওয়া যায় না।। এসব আর্মিরা নাকি ওদের গাড়িতে করে নিয়ে যায় সবাইকে।। কারণ এখানে অনেক ডাকাত আছে ওরা একা পেলে লুট করে।। অনেক ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা।। তাই উনারা যাত্রীদেরকে নিয়ে যায়।। ওদের এই গাড়ির নাম চাঁদের গাড়ি।। আর এই চাঁদের গাড়ি দুই টাইমে উপরে যায়।। সকাল দশটায় আর দুপুর দেড়টায়।। আমরা দেড়টার সময়ের গাড়িতে যাচ্ছি।। সাজেক ভ্যালী খাগড়াছড়ি থেকে তিন হাজার ফিট উপরে।। যতটা উপরে গাড়ি উঠছে ততোই ভয় লাগছে।। মনে হচ্ছে এই বুঝি গাড়ি পরে গেলো।। পাহাড় আকা বাকা হওয়ায় গাড়ি অনেক ধিরে আর সাবধানে চালানো হচ্ছে।। আমি ভয়ে অর্ণবের হাত চেপে ধরেছি।। অর্ণব সেটা বুঝতে পেরে একটা মুচকি হাসি দিয়ে আমাকে পেছন দিয়ে হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো।। চারিদিক এতো সুন্দর যে চোখ ফেরানোর মতো না। আমি বাহিরের দৃশ্য দেখতে ব্যস্ত।। চারিদিক শুধু সবুজ আর সবুজ।। পাহাড়ি গাছপালায় ঘেরা জায়গাটা।।

আমারা সাড়ে চারটায় এসে পৌঁছালাম সাজেক ভ্যালীতে।। এখানেও হোটেল বুক করা আছে।। আমরা এখানে নিরিবিলি হোটেলে উঠেছি।। হোটেলে আসার পর ফ্রেশ হয়ে দুজনেই রেস্ট নিয়ে নিলাম।।

সন্ধ্যায় অর্ণব বললো

অর্ণবঃ মিম রেডি হয়ে নাও বাহিরে যাবো।।

মিমঃ কোথায় যাবে এখন??

অর্ণবঃ সূর্যাস্ত দেখতে।।

মিমঃ আচ্ছা।।

আমরা হেলিপ্যাধে এলাম সূর্যাস্ত দেখতে।। হেলিপ্যাধ জায়গাটায় হ্যালিকপ্টার নামে কারণ এখানে খাবার আর পানির কোনো ব্যবস্থা নেই।। হ্যালিকপ্টার এসে পানি আর খাবার দিয়ে যায়।। আমরা হেলিপ্যাধে পৌছতেই দেখলাম সেখানে অলরেডি অনেক মানুষ।। সবার একই উদ্দেশ্য প্রকৃতিকে একটু কাছ থেকে দেখবে।। প্রকৃতির নিয়মে যথাসময়ে সূর্য অস্ত গেলো।। এই নিয়মের কখনো অন্যথা হয় না।। আমি এর আগেও সূর্যাস্ত দেখেছি।। কিন্তু আজকে একটু অন্যরকম লাগছে।। হয়ত অর্ণব আছে তাই।। নয়ত চারপাশের পরিবেশের জন্য।। কেননা এখানে শুধু পাহাড় আর পাহাড়।। পাহাড়গুলো এতো উচু উচু যে সূর্যটা মনে হচ্ছে পাহাড়ের সাথে লেগে আছে।। মনে হয় পাহাড়েই সূর্য উদয় হয় আর এখানেই অস্ত যায়।।

রাতে ডিনার করতে একটা হোটেলে গেলাম।। হোটেলটা একদম নরমাল সেরকম কোনো হোটেল না।। এখানকার সব খাবারের হোটেলই নরমাল।। কিন্তু হোটেলটা অনেক সুন্দর।। কাঠ আর বাশ দিয়ে তৈরি করা।। এখানকার সব খাবারের হোটেল এই টাইপের।।

ডিনার শেষে হোটেলে ফিরে আসি।। আমরা যেই হোটেলে উঠেছি সেটা কাঠে আর বাশের তৈরি।। মাটি থেকে বেশ কিছুটা উচু কিন্তু হোটেলটা অনেক সুন্দর একদম অন্যরকম আর আলাদা।। এরকম হোটেল আর কোথাও দেখতে পাওয়া যায় না হয়তো এখানেই দেখতে পাওয়া যায়।। এখানের সব হোটেলই কাঠ আর বাশ দিয়ে তৈরি।। এখানে অনেক ভালো হোটেল বা ফাইভ স্টার হোটেল নেই সব হোটেলই এই টাইপের।।

রুমের বারান্দায় দাড়িয়ে বাহিরের পরিবেশ দেখছি।। বারান্দায় চেয়ার রাখা আছে।। অনেক সুন্দর লাগছে।। এখান থেকে সব কিছু দেখা যায়।। বাহিরের পরিবেশ এতোটা মনোযোগ দিয়ে দেখছি যে অর্ণব আমার পাশে এসে দাড়িয়েছে আর আমার কোনো খেয়াল নেই।। হঠাৎ করে অর্ণব আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরাতে আমি কিছুটা কেপে উঠি।। অর্ণব বলছে

অর্ণবঃ এখানে দাড়িয়ে কি করছো??

মিমঃ বাহিরের পরিবেশ দেখছি।। কি সুন্দর লাগছে এখান থেকে দেখতে!!

অর্ণবঃ হুম।। মিম, একটা গান শুনাও না।।

মিমঃ এখন??

অর্ণবঃ হুম।।

কথাটা বলেই অর্ণব চেয়ারে বসে আমাকে পর কোলে বসিয়ে চুলে মুখ ডুবালো।। আমি গান গাওয়া শুরু করলাম

“”Itni mohabbat karo na
Main doob na jaun kahin
Wapas kinare pe aana
Main bhol na jaun kahin
Dekha jabse chehra tera
Mein to hafton se soya nahin

Bol do na zara
Dil me jo hai chipa
Main kisi se kahunga nahi.””

গান গাওয়া শেষ হতেই অর্ণব মিমকে কোলে তুলে নিলো।। মিম অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে অর্ণবের দিকে তাকিয়ে বললো

মিমঃ কোলে নিয়েছো কেনো??

অর্ণবঃ মানুষ হানিমুনে কেনো আসে??

মিম লজ্জা পেয়ে আর কিছু বললো না।।
·
·
·
চলবে……………………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here