“অবশেষে_তুমি (পর্ব ২৫)

#অবশেষে_তুমি (পর্ব ২৫)
#Mohua_Afrin_Mim
·
·
·
রাতে রুমে গিয়ে দেখি অর্ণব স্কাউচে বসে ল্যাপটপে কাজ করছেন।। আমি যে পাশে দাড়িয়ে আছি সেটার কোনো খবর নেই।। উনি উনার মতো কাজ করছেন।। এবার কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললাম

মিমঃ শুনছেন!!

অর্ণবঃ হুম বলো।।

উনি আর কিছু বলছেন না।। এবার মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো।। আমি বললাম

মিমঃ ডিনার করতে আসুন।।

অর্ণবঃ আচ্ছা মিম তুৃমি আমাকে আপনি করে বলো কেনো??

মিমঃ আপনি করে বলবো নাতো কি বলবো!!

অর্ণবঃ তুমি করে বলবে।। আমি কি তোমার দূরের কেউ নাকি যে আপনি করে বলো।। আর আপনি করে বললে কেমন যেনো পর পর মনে হয় নিজেকে।।

মিমঃ আমি তুমি করে বলতে পারবো না।। আমি আপনি করে ডাকতেই বেশি কমফোর্টেবল ফিল করি।।

অর্ণবঃ কেনো?? তুমি করে ডাকলে সমস্যা কোথায়।।

মিমঃ বললাম না পারবো না।।

অর্ণবঃ তাহলে আমার সাথে আর কথাও বলতে হবে না।। তুমি তোমারটা নিয়েই থাকো।।

কথাটা বলেই অর্ণব নিচে চলে গেলো।। আর মিম হা করে ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।।

ডিনার করে রুমে এসে অর্ণব আমার সাথে কথা না বলে শুয়ে পড়লেন।। আমাকে কথা বলারও সুযোগ দেননি।।

সকালে অফিসে যাওয়ার আগেও আমার সাথে কোনো কথা বললেন না।। আমি উনার সাথে কথা বললেও উনি কোনো পাত্তা দেননি কিছু জিজ্ঞাসা করলেও উত্তর দেননি।। অফিস থেকে আসার পরও এক দশা কোনো কথা বলছেন না।। আমি উনার পিছে ঘুরঘুর করলেও উনার কোনো পাত্তাই নেই।। একসময় খুব বিরক্ত হয়ে রাগ দেখিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম

মিমঃ এই আপনার সমস্যা কি!! কথা বলছেন না কেনো!! আমি যে আপনার সাথে কথা বলছি সেটা শুনতে পারছেন না নাকি!!

অর্ণবঃ আপনি করে বললে কারো সাথে কথা বলবো না।। যে আপনি করে বলবে তার সাথে কথা বলতে চাই না।।

আজব মানুষ তো!! এই নরমাল একটা ব্যাপারে রাগ করে বসে আছেন।। আর এইজন্য কথাও বলছেন না।। এক নাম্বারের নাছোড়বান্দা।।

ডিনার শেষে রুমে গিয়ে দেখি অর্ণব নেই।। বারান্দায় গিয়ে দেখি উনি বসে আছেন।। আমাকে দেখেও না দেখার ভান ধরে বসে আছেন।। আমি কাছে গিয়ে বললাম

মিমঃ শুনছো!!

অর্ণব আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বললো

অর্ণবঃ কি বললে আবার বলো শুনিনি!!!

মিমঃ জোরেই তো বললাম শুনোনি কেনো??

কথাটা বলা মাত্রই অর্ণব আমাকে একটান দিয়ে ওর কোলে বসিয়ে আমার কোমর আকরে ধরলো।। তারপর ঘারে মুখ গুজে বললো

অর্ণবঃ এই একটা কথা বলতে এতো সময় লাগলো!!

মিমঃ কিছু কথা বলতে সময় লাগে।। সেটা যতোই সহজ হোক না কেনো!! আর মানুষ হলো অভ্যাসের দাস।। অভ্যাস পরিবর্তন করা সহজ না সেটা করতে সময় লাগে।। ছাড়ুন এবার।।

অর্ণবঃ কেন কি হলো??

কিছু না বলে খাটে গিয়ে শুয়ে পড়লাম।। অর্ণব এসে বললো

অর্ণবঃ রাগ করলে?? কি হয়েছে বলো না!!

মিমঃ রাগ করবো না তো কি করবো?? এই সামান্য একটা ব্যাপারের জন্য পুরো একদিন আমার সাথে কথা না বলে থাকলে!!

অর্ণবঃ আচ্ছা বাবা sorry.

মিমঃ এখন আর sorry বলে কি হবে।
এই বলে আমি পাশ ফিরে শুলাম।

অর্ণবঃ খুব রাগ??

মিমঃ একটু অভিমান।।

অর্ণবঃ ভাঙিয়ে দেই?

মিমঃ দরকার নেই।।

অর্ণবঃ তাকাও না একটুখানি।।

মিমঃ কি হবে শুনি??

অর্ণবঃ তুমি আমার মাধবীলতা যে।

মিমঃ তাহলে রাগ দেখালো কে?

অর্ণবঃ ক্ষমা কি করা যায় না আমাকে??

মিমঃ করলাম তবে।।

অর্ণবঃ গন্ধরাজ তবে এবার গন্ধ ছড়াক।।

মিমঃ ঘুমিয়ে পড়ো, হয়েছে অনেক রাত।।

এমন সময় অর্ণব আমাকে পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।। মনে হচ্ছে আমি যেন অর্ণবের ভেতর ঢুকে যাচ্ছি।।

অর্ণবঃ মিম, আমাকে ছেড়ে যাবে না তো কোনোদিন?

মিমঃ ধরে রাখবে যতদিন।।

অর্ণবঃ আর যদি ছেড়ে দেই??

মিমঃ ভালোবাসবো দূর থকেই।।

অর্ণবঃ আচ্ছা তুমি এমন কেনো?

মিমঃ জানি না।। আমি আমার মতো।।

অর্ণবঃ আকড়ে রাখতে হয়, ভালোবাসলে।।

মিমঃ ধরে রেখে মানুষ কবেই বা ভালোবাসা পেয়েছে।।

অর্ণবঃ তুমি অন্যরকম ভারি।।

মিমঃ আমি ছেড়ে দেওয়াতে বিশ্বাসী।।

এতক্ষণে আমি আর অর্ণব উঠে বসেছি।। অর্নব আমাকে একটানে ওর কোলের কাছে নিয়ে গেলো।। আমার ঠোঁটের মধ্যে ওর ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো।।🍁🍁

সকালে ঘুম উঠে অর্ণবকে ডাক দিলাম।। ও উঠে আমাকে বলল

অর্ণবঃ গতকাল রাতটা কিন্তু খুব ভালো ছিলো।।

এদিকে অর্ণবের কথা শুনে মিম লজ্জায় লাল হতে শুরু করেছে।। পারলে তখনই ওখান থেকে চলে যায়।।

অর্ণব বুঝতে পেরে বলল থাক আর লজ্জা পেতে হবে না যাও।। আর মিম এক দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।।
.

.

আমি খাটে শুয়ে আছি।। মাথাটা কেমন যেনো ভার ভার লাগছে।। আমি পাশ ফিরে তাকাতেই দেখি অর্ণব আমার মাথার কাছে বসে আছে।। মনে করার চেষ্টা করছি কি হয়েছিলো আমার।।

আজকে সকালে মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলাম।। অর্ণব সেটা দেখে ভেঙে পড়ে।। উনাদের ফ্যামিলি ডক্টরকে ডেকে আনেন।। ডক্টর দেখে বললো প্রেশার খুব লো।। তাই মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছি।।উনি ঠিক করে খাওয়া-দাওয়া করতে বলেছেন আর কিছু ঔষধ দিয়ে গিয়েছেন।। আর আমার রেস্ট এর জন্য আমাকে একটা ঘুমের ইনজেকশন দিয়েছেন।। তাই এতক্ষণ আমি ঘুমচ্ছিলাম।।

আমি উঠার চেষ্টা করতেই অর্ণব সাথে সাথে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।। একদম বাচ্চাদের মতো কাদছে।।

অর্ণবঃ মিম তুমি ঠিক আছো?

মিমঃ হুম।।

অর্ণবঃ তুমি জানো আমি কতটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।। এক মুহুর্তের জন্য মনে হয়েছিল আমি বোধ হয় তোমাকে হারিয়ে ফেললাম।।

মিমঃ অর্ণব please কেদোনা।। দেখো আমি একদম ঠিক আছি।। ডক্টর তো বলেছে আমার তেমন কিছুই হয় নি।।

অর্ণবঃ তুমি কথা দাও আমাকে ছেড়ে কখনো যাবে না।। তোমার যদি কিছু হয়ে যায় বিশ্বাস করো আমি মরেই যাব।।

মিমঃ অর্নব please শান্ত হও।। এভাবে বলতে হয় না।।

ভাবছি, ভাগ্য কতটা ভালো হলে এমন একটা জীবন সঙ্গী পাওয়া যায়।। যে আমার সামান্য কিছু হলেও নিজেকে সামলাতে পারে না।
.

.

.

রাতে বসে বসে মোবাইল চালাচ্ছিলাম এমন সময় অর্ণব এসে বললো

অর্ণবঃ আচ্ছা মিম, আমাদের বিয়ের কতদিন হলো অথচ আমরা এখনো হানিমুনে গেলাম না।।

মিমঃ তো!! এখন কি করবো!!

অর্ণবঃ কি আবার করবো হানিমুনে যাবো।।

মিমঃ এখন!! এতদিন পরে আসছে হানিমুনে যেতে!! থাক যাওয়া লাগবে না।।

অর্ণবঃ আজব তো!! এখন গেলে কি প্রবলেম।।আমরা পড়শুদিন যাচ্ছি।।

মিমঃ কোথায়??

অর্ণবঃ সাজেক ভ্যালি।।

মিমঃ হুম।।
·
·
·
চলবে……………………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here