“অবশেষে_তুমি (পর্ব ২৭)

#অবশেষে_তুমি (পর্ব ২৭)
#Mohua_Afrin_Mim
·
·
·
সকালে ঘুম থেকে উঠে মিমকে ডেকেই যাচ্ছি কিন্তু এই বান্দার উঠার নাম নেই।। এইবার বেশ বিরক্ত হয়েই বললাম

অর্ণবঃ মিম তুমি কি উঠবে?? নাকি ঘুমের মদ্ধে তোমাকে নিয়ে পাহাড় থেকে ফেলে দিবো!!

মিমঃ কি হয়েছে?? সাত সকালে এমন ষাঁড়ের মতো চেঁচাচ্ছ কেনো?? আর ঘুমাতে দিচ্ছো না কেনো??

অর্ণবঃ সেই কখন থেকে ডাকছি তোমার তো কোনো হুস জ্ঞানই নেই।।

মিমঃ কি হয়েছে এখন ডেকেছো কেনো আগে সেটা বলো।।

অর্ণবঃ তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও সূর্যোদয় দেখবো।।

মিমঃ হুম।।

সূর্যোদয় দেখতে আবারো হেলিপ্যাডে চলে এসেছি।। এখন একদম সকাল সূর্য উঠবে এখনো উঠেনি।। এখন যে কি সুন্দর লাগছে পরিবেশটা বলার বাহিরে।। পরিবেশটা একদম স্নিগ্ধ লাগছে।। মনে হচ্ছে এটা একটা সেরা মুহূর্ত।। একেবারে অন্যরকম লাগছে।। সময়টা যদি এখানেই থেমে থাকতো তাহলে অনেক ভালো হতো।। অর্ণব আর আমি দুজনেই মুহূর্তটা উপভোগ করায় ব্যস্ত।।

হেলিপ্যাড থেকে সোজা যেতে থাকলাম কংলাক পাহাড়ে।। গাড়িতে গেলে আট নয় মিনিটের মতো লাগে আর হেটে গেলে বিশ মিনিট লাগে।। আমি আর অর্ণব গাড়িতে গেলাম না হেটেই যাচ্ছি।। হেটে যেতেই বরং বেশি ভালো লাগছে।। সকাল সকাল হাটতে এমনিতেই ভালো লাগে আর এখানে এই পরিবেশে তো আর কিছু বলতেই হয় না।।

কংলাক পাহাড়ে পৌঁছাতেই মুগ্ধ হয়ে গেলাম জায়গাটা দেখে।। এতোটা বেশি সুন্দর।। পাহাড়টা অনেক উচু বিধায় মনে হচ্ছে সবচেয়ে উপরে আছি।। মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে উচু স্থানগুলোর একটায় আছি।। চরিদিকে শুধু পাহাড়ের মেলা।। যতদূর চোখ যায় শুধু পাহাড় দেখা যায়।। কংলাক পাহাড়টা এতো উচু যে মেঘ হাত দিয়ে ধরা যাচ্ছে।। মেঘেরা নিজেদের আপন গতিতে চলছে আর খেলা করছে।। মেঘের মদ্ধে হাত দিতেই চমকে উঠি একদম ঠান্ডা।। এ যেনো এক অন্যরকম অনুভূতি।।

অর্ণবের একটা ফোন এসেছে তাই ও একটু অন্য দিকে গিয়েছে কথা বলার জন্য।। আমি একা একা হাটছি।। এমন সময় অর্ণব আমার কাধে হাত রাখতেই আমি চমকে উঠলাম।।

অর্নবঃ কি ব্যাপার এখানে কি করছো একা একা।। তুমি কি জানো তুমি কতদূরে চলে এসেছ?যদি হারিয়ে যেতে??

মিমঃ উফ্ বকছো কেনো!! হারিয়ে গেলে তুমি খুঁজে নিতে।।

অর্নবঃ জানো মিম, এখানে আমি আগেও এসেছি।। কিন্তু তোমার সাথে আসার অনেক ইচ্ছা ছিল।।

আমি অর্ণবের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলাম।। আমি জানি আমি কিছু না বললেও অর্ণব সব বুঝে নিবে।।

কংলাক পাহাড়ে এক ঘন্টা থেকে চলে যাই কমলক ঝরণা দেখতে।। এই জায়গাটাওও অনেক সুন্দর।। কমলক ঝরণা দেখে নাস্তা করে হোটেলে ফিরে যাই।। হোটেলে গিয়ে কিছুক্ষণ রেস্ট নেই।। দুপুরে লাঞ্চ করে চলে যাই রুই লুই পারায়।। এখানে ৮৩ টা রিসোর্ট আর কটেজ আছে ট্যুরিস্টদের জন্য।। রুই লুই পারা এতোটাও বড় না।। কিন্তু এখানে দেখার মতো অনেক কিছু আছে।। এখানে ঢুকতে টিকিট কাটা লাগে টিকিটের দাম ১৫-৩০ টাকা।।

রুই লুই পারা ঘুরে আমরা বাঘাই হাট হাজাছড়া ঝরনার কাছে।। অনেক সুন্দর একটা জায়গা এটা।। ঝরনাটা দেখতে অনেক সুন্দর।।

ঘুরাঘুরি করে সন্ধ্যায় আমরা আমাদের হোটেলের কাছে ফিরে যাই।। সেখানে গিয়ে আমরা আগে চা খেয়ে নেই।। এখানকার চা টা একটু অন্যরকম।। এখানকার চায়ের বিশেষত্ব হলো পাহাড়ি মেয়েরা চা দেয় বাশের কাপে।। এটা দেখতে একদম আলাদা।। চা খেয়ে সেখানেই ঘুরাঘুরি করি।। এখানকার মানুষদেরকে দেখতে থাকি।। এরা সব উপজাতি পাহাড়ি এলাকার।। রাতে ডিনার করে হোটেলে চলে যাই তাড়াতাড়ি কেননা কালকে আমরা ঢাকায় ফিরে যাচ্ছি।।

সকালে রেডি হয়ে তাড়াতাড়ি চলে গেলাম আর্মি ক্যাম্পের কাছে।। গাড়ি সাড়ে দশটা বাজে এখান থেকে যাবে।। চাঁদের গাড়িতে উঠে পরলাম খাগড়াছড়িতে যাওয়ার জন্য।। দেড়টা বাজে পৌঁছে গেলাম খাগড়াছড়িতে।। সেখানে গিয়েই আমাদের সেই হোটেলে গেলাম।। হোটেলে গিয়ে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে নিলাম।। ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে চলে এসেছে।। আমরা দুপুর আড়াইটা বাজে রোওনা দিলাম ঢাকার উদ্দেশ্যে।। ঢাকায় গিয়ে পৌঁছালাম রাত দুইটা বাজে।।

.

.

.

.

আমাদের সম্পর্কটা এখন অনেক ভালো।।তথাকথিত আর পাঁচটা স্বামী- স্ত্রীর মতো নয়।।আমারা একে অপরের অনেক ভালো বন্ধু।। আমাদের সম্পর্ক দেখে যে কোনো দম্পতি হিংসা করবে।। এই কিছুদিন আগেও আমাদের সম্পর্ক ছিলো অনিশ্চিত।। কিন্তু অর্ণব সেটা আমাকে এক মুহুর্তের জন্যও বুঝতে দেয় না।। আমার এইচএসসি পরিক্ষার রেজাল্ট বের হয়েছে কিছুদিন হলো একটা ভালো ভার্সিটিতেও এডমিশন নিয়েছি।।

হানিমুন থেকে এসেছি প্রায় দু-মাস হয়ে দেছে।।ইদানীং আমার শরীরটা খুব খারাপ লাগে।।সারাক্ষণ দুর্বল লাগে।। কিন্তু অর্ণবকে কিছু বলিনি।। শুধু শুধু চিন্তা করবে।। কিন্তু ও মনে হয় বুঝতে পারে।। আমাকে মাঝে মাঝে জিজ্ঞেস করে।।

একদিন মা কে বললাম আমার সমস্যার কথা।। মা হেসে দিয়ে বলল আরে পাগল মনে হয় সুখবর আছে।।

আমি এটাই বুঝতে পারছি না যে আমি অসুস্থ, এতে সুখবরের কি আছে।। পরে মা যেটা বলল সেটা শুনার পর আমি যে কতক্ষণ জ্ঞানে ছিলাম না আমি নিজেও জানি না।।

খুশিতে আমার দু চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।। মা আমার চোখ মুছে দিয়ে বলল, আরে কাঁদছো কেনো বোকা মেয়ে।। এটা তো খুশির খবর।।

এখন মাকে আমি কি করে বোঝাই যে এটা আনন্দের কান্না।। মা বলতে থাকলেন, আমাদের কতদিনের ইচ্ছা আমাদের ঘর আলো করে একটা ফুটফুটে বাচ্চা আসবে।। ছোট ছোট পায়ে সারা বাড়ি ঘুরে বেড়াবে।।

যাও মা, তুমি ঘরে গিয়ে বিশ্রাম নাও।। এই সময় বেশি হাটাহাটি করা ঠিক হবে না।।

আমি ঘরে চলে আসলাম। আমি নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।। আমি ভাবতেই পারছি না যে আমার ভেতর আরেকটা শরীর বেড়ে উঠছে।।

আমি আরেকটু সিউর হওয়ার জন্য প্রেগন্যান্সি কিট এনে পরিক্ষা করলাম।। ওখানেও পজিটিভ দেখালো।।

একবার ভাবলাম অর্নবকে ফোন দিয়ে জানাবো তারপর আবার ভাবলাম না থাক বাসায় ফিরলে একবারেই জানাবো।। কিন্তু এতো বড়ো একটা কথা ওকে না বলে থাকবো কি করে এতক্ষণ।। আমি মা কে ও বারণ করেছি ওকে কিছু না বলতে।। এই খবরটা আমিই ওকে প্রথম জানাতে চাই।।

ভাবলাম অর্নবকে একটা ফোন দেই।এমনি জানতে চাই কি করছে, কখন ফিরবে।। ফোন বাজছে…….

মিমঃ হ্যাঁ,অর্নব।।

অর্ণবঃ হুম, বলো।।

মিমঃ কি করছো??

অর্ণবঃ অফিসে যখন এসেছি কাজই করছি।।এখানে তো আমি বসে থাকতে আসি নি।।

মিমঃ কি হয়েছে, এভাবে কেনো কথা বলছো??

অর্ণবঃ কিভাবে কথা বলছি? এখন আমি কিভাবে কথা বলব সেটা কি তোমার কাছ থেকে শিখতে হবে!!

মিমঃ বুঝেছি, অফিসে কাজের অনেক চাপ তাই জন্য মেজাজটা একটু গরম।।আচ্ছা শোনো না, আজকে একটু তাড়াতাড়ি আসতে পারবে??

অর্ণবঃ না পারব না।। কাজ আছে আমার,এখন রাখি।।

আমি অর্নবের এমন ব্যবহারে একদম মনমরা হয়ে গেলাম।। অর্নব কখনো আমার সাথে এমন ব্যবহার করে নি।। তাহলে আজকে হঠাৎ কি হলো!! মনের অজান্তেই চোখ থেকে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো।। তারপর নিজেই নিজেকে বোঝালাম যে অফিসে কতো রকম ঝামেলা হয়।।শুধু শুধুই মন খারাপ করছি।।

এসব ভাবতে ভাবতেই সন্ধ্যা হয়ে আসলো।। আমি সারা ঘর সুন্দর করে সাজালাম।। অর্ণব আমাকে একটা লাল শাড়ি দিয়েছিলো কখনো পড়া হয় নি।। আজ আমি ওই শাড়ীটা পড়লাম।। একদম অর্ণবের মনের মতো করে সাজলাম।। অর্ণব প্রতিদিন নয়টার ভেতর বাসায় চলে আসে।। এখন সাড়ে আটটা বাজে।। আমি ভাবছি অর্ণব আসলে ওকে কিভাবে বলব।। কিন্তু এখন তো সাড়ে এগারোটা বেজে গেছে।। এখনো অর্ণব আসে নি।

অর্ণব বাড়িতে ফিরলো রাত বারোটায়।। ও আসতেই আমি ওকে জড়িয়ে ধরে বলতে গেলাম আমাদের ছোট্ট সদস্যের কথা। কিন্তু ও আমাকে ছাড়িয়ে নিয়ে ঠাসসস্ করে একটা থাপ্পর বসিয়ে দিলো আমার গালে।। ঘটনার আকস্মিকতায় আমি একদম হকচকিয়ে গেলাম।।

কি হয়েছে জানতে চাইলে ও আমাকে যেটা বলল সেটা শোনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।।
·
·
·
চলবে………………………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here