#অবুঝ বেলার তুমি
নিলান্তিকা ইসলাম
পর্ব ৮
প্যান্ডেলের এক কোনায় বসে যখন বিহান ব্যাথায় কাতরাচ্ছিলো অঙ্কুর তখন গুঞ্জনের পিছু নিচ্ছিলো।সৌমিক সেন পাশ দিয়েই যাচ্ছিলেন,
হঠাৎ করে ওনার মনে হলো উনি বিহানের গলার আওয়াজ পাচ্ছেন।তাই তিনি বিহান বলে ডাকতেই,
পাশে থাকা বিহান বোবার মতো করে কি কি জানি আওড়াচ্ছিলো যাতে বাবার চোখে ধরা না খেয়ে যায়।
সৌমিক সেন বোবা মনে করে দয়া করে একটা বিশ টাকার নোট হাতে ধরিয়ে দিলো।
বিহান করুণ চোখে তাকালো।সৌমিক সেন বললো,
-ঠাকুরের কাছে একটু প্রার্থনা করে দিও। আমার ছেলেগুলোর যেনো বুঝ দেয়।বিহান হতভম্বের ন্যায় তাকিয়ে মাথা নাড়ালো।
শেষে কিনা তাকে বাবার সামনে ভিখারী হতে হলো তাও বোবা সেজে।আর কোন ও দিন সে তার দা ভাইকে সাপোর্ট করবে না।এত সাহায্য করলো অথচ তার দা ভাই কিনা তাকে এইভাবে ফেলে রেখে ওই গুন্ডী মেয়েটার পেছন পেছন চলে গেলো।এখন যদি তার ভবিষ্যৎ বাতি ফিউজ হয়ে যায় তার যে পুরো ভবিষ্যৎ ই আজীবন অন্ধকার থেকে যাবে।ভাবতেই বিহানের কান্না পেলো আর তখনই ওই গুঞ্জন মেয়েটার বাদর ভাই টা এলো।
বিহান কে দেখেই কেমন খিলখিলিয়ে হাসতে লাগলো,
_বলেছিলাম না ওটা যেই সেই মেয়ে নয়,
নারী! দেখতে ভীষন ভারী, হলেও কপালে ও এক চোখ আছে মানে তিন চোখা ওয়ালী কালী।যখন তান্ডব নাচ দেখাবে না দেখিয়ে দেবে শশ্মান ঘাট আছে খালি।
বিহানের তো ইচ্ছে করছে এক্ষুনি একটা চড় বসিয়ে দিয়ে বলে দিক
তুমি কোন বালের শালা,সহ্য করবো না ওসব জ্বালা,বুঝবে ভালো করে বিহান কি জিনিস,যখন
ঝুলিয়ে দেবো ওই সুসুর জায়গায় তালা।সুসু না করতে পেরে অবস্থা হয়ে যাবে ঝালাপালা।
অঙ্কুর গুঞ্জনের পিছু নিতে নিতে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে গেলো।গুঞ্জন বাড়িতে ঢুকেই ছাদে চলে গেলো তারপর দাড়ালো সেই কামিনী ফুল গাছটার তলায়।দম ধরে নাক টেনে ঘ্রান টা নিলো কিছুক্ষন তারপর আলতো করে ধরতেই একেকটা পাপড়ী ঝরতে লাগলো।
গুঞ্জনের কান্না পেয়ে গেলো
_আমি আর নিজেকে শক্ত করে রাখতে পারছি না।কোথাও তুমি।দেখে যাও না তোমার গুঞ্জন এই কামিনী ফুলের মতোই ঝরাঝরা অবস্থায় আছে।বুকে এসে আরেকটা ধাক্কা লাগলেই যে ঝরে পড়ে যাবে।
অঙ্কুর যেনো নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছে না।নিজের বলা একেকটা কথা সে গুঞ্জনের মুখে শুনতে পাচ্ছে।
_তুমিইতো বলেছিলে মেয়েদেরকে এভাবে ভেঙে পড়তে নেই তাইতো শত ঝড় ঝাপটা আসা স্বত্তেও নিজেকে শক্ত করে রেখেছিলাম।কিন্তু এখন যে আর সম্ভব হচ্ছে না।তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে আমি নিজের স্বামী হিসেবে মেনে নিতে পারবো না।এই সিঁথিতে শুধু তোমার নামের সিঁদুর উঠবে “বাবুন দা”
শেষের বাবুন দা কথাটি শুনে অঙ্কুরের সমস্ত শরীর জুড়ে এক শীতল করা শিহরণ বয়ে গেলো।সে নিজে যা আন্দাজ করেছিলো তবে তাই হলো।গুঞ্জন ই তার তুলতুল।চোখে পানি এসে ঝাপসা হয়ে গেলো ইচ্ছে করছে এক্ষুনি ঝাপটে ধরে বলে দিক এই তো তোমার বাবুন দা তুলতুল।কিন্তু পরক্ষনেই অঙ্কুরের ভাবনায় অন্যকোনো দুষ্টামির আবির্ভাব হলো।প্রিয় মানুষ টাকে নিজের জন্য অপেক্ষা করাতে দেখাতে ও আলাদা একটা সুখ আছে।সে একেবারে বিয়ের দিন ই গুঞ্জনকে সারপ্রাইজ দিবে।গুঞ্জন পেছন ফিরে তাকাতেই কাউকে দেখে চিৎকার করে উঠলো।অঙ্কুর এগিয়ে গিয়ে গুঞ্জনের মুখ চেপে ধরলো।আর গুঞ্জন ঘোঙাতে লাগলো।
এই মুহুর্তে গুঞ্জনের চিৎকার শুনে সবাই ছুটে আসলে একটি মার ও মাটিতে পড়বে না।পাড়ার সব মানুষ আজ একাত্রে একে একে সবার মাইর হজম করতে হবে যেটা অসম্ভব। গুঞ্জন ছটফটাতে লাগলো ছাড়া পাওয়ার জন্য তারপর এক পর্যায়ে অঙ্কুরের হাতে কামড় বসিয়ে দিলো।অঙ্কুর আহ করে ব্যাথায় চেচিয়ে উঠে কোন ওরকম দৌড়ে পালালো।আর গুঞ্জন ও অঙ্কুরের পেছন পেছন ছুটতে লাগলো তাকে ধরার জন্য।অঙ্কুর সামনে পড়ে থাকা থালায় সব টুকু রঙ নিয়ে গুঞ্জনের দিকে ছুড়ে মারলো।আর গুঞ্জন পুরো রঙে সঙ সেজে গেলো চোখ থেকে রঙ গুলো মুছতে যেতেই অঙ্কুর এই সুযোগে পালালো।
আর তখনই গুঞ্জনের সামনে অভিক রায় এসে পড়ে।অভিক রায় এক প্রকার ধমকে বললো,
_কি হচ্ছে কি গুঞ্জন! তোমার শ্বশুর বাড়ির সবাই সেই সকাল থেকে বসে আছে।অথচ তুমিই লা পাত্তা।কি ভাববে ওনারা এভাবে বারবার পাত্রী কে না দেখেই পাত্রের বাবা মাকে ফেরত যেতে হয়।আজ ও তোমাকে দেখতে পায়নি ওনারা।আর যখনই ওনারা গেলো অমনি তোমার ছোটাছুটি শুরু হয়ে গেলো।ফর গড সেক গুঞ্জন একটু হলেও দয়া করো আমার প্রতি।বাবা হওয়ার কর্য টা যদি কিছুটা হলে ও চুকাতে চাও তবে এই বিয়েটা মেনে নিয়ে আমাকে একটু শান্তি দাও।তুমি এখন বুঝতে পারছো না কিন্তু বিয়ের পর ঠিক বুঝবে ছেলে হিসেবে ও একদম ই খারাপ নয়।
গুঞ্জনের চোখ বেয়ে টুপটাপ অশ্রুর ফোঁটা পড়ছে।কি করবে সে তবে কি এটাই ছিলো তার নিয়তি।তবে বেশ সে এটাকেই গ্রহণ করবে কিন্তু বাবুন দার জায়গাটা কোন ওদিন কাউকে দিতে পারবে না।সেটা নিজের স্বামীকে ও না।
অঙ্কুর ছুটতে ছুটতে বিহান কাছে যেতেই বিহান অন্যদিকে মুখ করে তাকালো তারপর আস্তে আস্তে পা ফেলে এগোতে লাগলো।অঙ্কুর আহ্ করে ব্যাথায় কুকড়ে গিয়ে হাতটাকে ঝারছে।তারপর রঙ মেশানো পানিতে কিছুক্ষন চুবিয়ে রাখলো যাতে ব্যাথাটা একটু কমে।
কিন্তু বিহান দেখেও না দেখার ভাণ করলো।অঙ্কুর দৌড়ে গিয়ে বিহানের পাশাপাশি হাটতে লাগলো।বিহান তবুও তাকাচ্ছে না।অঙ্কুর বিহানের মুখ টা ধরে তার দিকে ফেরালো।
বিহান ঘোমড়া মুখে বললো
_এখানে কেনো এলে যাও না তোমার ওই গুঞ্জনের কাছে যাও।আমার ব্যাথায় তো তোমার কিচ্ছু আসে যায় না। এবার নিজের বেলায় বুঝো।
অঙ্কুর করুন মুখ করে বিহান কে স্যরি বললো।
_তোমার ওসব স্যরি টরি আমি শুনছি না।আমি ওই মেয়েটাকেই আচ্ছা করে মজা দেখিয়ে দেবো।এমন মার মারবো না!বলতেই অঙ্কুর বললো,
_বিহান! গুঞ্জন ই তোর তুলতুল দি।
_বিহান অবাক হয়ে তাকালো যেনো বিশ্বাস ই হচ্ছে না।না না! ও কিছুতেই আমার তুলতুল দি হতে পারে না।আর ওই বদমাশ ছেলেটা তো কিছুতেই তোমার শালা হতে পারে না।কোথাকার বাল সে এমন ক্যালানি ক্যালাবো না! ব্যাটা নড়তে চড়তে অবদি পারবে না।
ইউ আর টু মাচ লেইট বিহান!আরেকটু আগে ও যদি মজা দেখাতি আমার কিছুই যেতো আসতো না।পারলে আমিও তোকে সাপোর্ট দিতাম।কিন্তু এখন থেকে গুঞ্জন আমার হবু বউ ওকে সুরক্ষিত রাখা আমার দায়িত্ব।সো মাথা থেকে এসব সরিয়ে ফেলে নতুন সম্পর্ক স্থাপন করো। এই দোলের দিনে সমস্ত অশুভ কিছুকে ত্যাগ করে যাত্রা শুভ করো।শুভ দোল যাত্রা আমার ভাই।
বিহান ঝাটা মেরে অঙ্কুরের হাত সরিয়ে দিলো।আর বললো,
_দেখলে তো ওই মেয়েটা আসতেই আমাকে পর করে দিলে।ছোট বেলায় ও তুমি এমন টাই করতে।আমার থেকে বেশি তুলতুল দি কে ভালোবাসতে।
অঙ্কুর বিহানকে জড়িয়ে ধরে বললো,
_পাগল ছেলে তোর জায়গা আলাদা আর তুলতুলের জায়গা আলাদা।তোকে তোর জায়গায় রেখে ভালোবাসি আর তুলতুলকে ওর জায়গায় রেখে।এতে তোর প্রতি আমার এত টুকু ও ভালোবাসা কমবে না বিহান!
_সত্যি তো!
_হুম তিন সত্যি!
_বিহান খুশিতে অঙ্কুরকে জড়িয়ে ধরলো।তবে তাদের তুলতুল দি কে তারা চিনতে ভুল করেনি।এ সত্যিই তার তুলতুল দি!বিহান যেনো এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না।
চলবে