#অবেলায়_পেলাম_তোমায়।
#বিন্দু_মালিনী।
#২য়_পর্ব।
রণ আমাকে ওর বুক থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যা বল্লো,
তা শোনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।
-বিন্দু,আজ থেকে আমাদের আর দেখা হবেনা।
-মানে?কি বলছো তুমি এসব?
-হ্যাঁ ঠিকই বলছি।
-কেন দেখা হবেনা?
রণ একটা হাসি দিয়ে বল্লো,
-পাগলি ভয় পেয়ে গেছো না?
আরে আমার ভিসা এসে গেছে।আমি বিদেশ চলে যাচ্ছি।বিদেশ যাবার সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে।
হুট করে সব হয়ে গেলো তো,তাই তোমাকে জানাতে পারিনি।
এ কয়দিন শহরে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়েছে তাই আসতে পারিনি।
এই তো সামনের মাসেই আমি চলে যাচ্ছি।
-এই নিউজ টা তুমি আমাকে হেসে হেসে দিচ্ছো?
আমার তো এখনই দম বন্ধ হয়ে আসছে এই কথা শুনে।
না না আমি তোমাকে না দেখে থাকতে পারবোনা।
-আরে পাগলী,আমি হেসে হেসে বলছি এই জন্য যে,
যাতে আমি গিয়ে তাড়াতাড়ি টাকা ইনকাম করে আবার তোমার কাছে চলে আসতে পারি।
বিয়ে করতে হবে না আমাদের?
তাহলে?কেউ কি বেকার ছেলের কাছে তার মেয়েটাকে বিয়ে দিবে?
এই দিকে কলেজ থেকেও তো বহিষ্কার করে দিলো।
নয়তো পড়াশোনা টা চালিয়ে গেলেও একটা কথা ছিলো।
আমি কান্না করে রণকে বলতে লাগলাম,
আমি কিভাবে থাকবো তোমাকে না দেখে?
কিভাবে থাকবো তোমাকে ছাড়া?
-পাগলিরে,এই ভাবে কাঁদে না।তুমি এভাবে কাঁদলে আমি কি যেতে পারবো?
তুমি মন দিয়ে পড়াশোনা করো।তুমি।এই দিকে পড়াশোনা শেষ করো।
আর ওই দিকে আমি বিদেশ ঘুরে আসি।
তারপর এসেই আমরা বিয়ে করে নেবো কেমন?
-আমাকে ভুলে যাবে নাতো?
-তোমাকে ভুলে বাঁচতে পারবো ঠিকই,তবে মরার মত করে।
জেনে শুনে কেউ মরার মত বাঁচতে চাইবে বলো?
এরপর রণর হাতে যে কয়টা দিন সময় ছিলো আমরা শুধু এদিক সেদিক ঘুরে বেড়িয়েছি।
আমি কলেজে এসে কয়েকটা ক্লাস করেই ওর সাথে ঘুরতে বেড়িয়ে যেতাম দূর দূরান্তে।
তারপর আবার ঘুরেফিরে বাসায় চলে যেতাম।
একদিন রণর সামনে হাত রেখে বললাম,
আমার হাতে হাত রেখে ওয়াদা করো,
আমাকে কোন দিন ছেড়ে যাবেনা।
তুমি আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করবেনা।
শুধু আমাকেই বিয়ে করবে।
রণ আমাকে ওর বুকের সাথে জাপটে ধরে কান্না করে দিয়ে বল্লো,
আমি তোমাকেই বিয়ে করবো,শুধু তোমাকেই।
:
:
কিছু দিন পর রণর বিদেশ যাবার ডেট চলে আসে।
রণ বাইরে চলে যায়।
আর বাইরে যাবার আগের দিন রণ আমাকে একটা মোবাইল কিনে দিয়ে যায়।
আর বলে যায়,এই তো কয়েক টা মাস,দেখতে দেখতেই কেটে যাবে।
রণ বাইরে পৌছে কয়েক দিন পর ওখানকার সিম নিয়ে আমাকে ফোন দেয়।
-বিন্দু আমি ভালো ভাবে পৌছেছি।চিন্তা করোনা।
সিম ছিলোনা তাই ফোন দিতে পারিনি।
জানোইতো বাংলাদেশের সিম এখানে চলেনা।
-সমস্যা নেই।
তুমি যে ভালো ভাবে পৌছেছো তাতেই খুশি আমি।
আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া।
এরপর রণ কাজে জয়েন করে।
আমাকে জানায় ওকে যেই কাজের কথা বলে বাইরে নিয়েছে সেই কাজই দিয়েছে।
ওখানকার মানুষ গুলোও অনেক হেল্পফুল।
অনেক হেল্প করে ওকে।
ভাষা শিখিয়ে দিচ্ছে কাজ শিখিয়ে দিচ্ছে।
আমি শুনে খুব খুশি হলাম।
এর পর থেকে রণ আমাকে বলে আমি যেন প্রতি দিন ওর কাজে যাবার আগে ফোন দিয়ে ওর ঘুম ভাঙাই।
আমি প্রতিদিন সেই সময়ে ওকে ফোন দিয়ে জাগিয়ে দিতাম।
ও ফ্রেশ হওয়ার পর থেকে আমার সাথে কথা বলা শুরু করতো আর যত ক্ষণ না কাজে ঢুকতো কথা বলতেই থাকতো।
যখনই কর্মস্থলে পা রাখে ঠিক তখনই লাইন টা কাটতো।
লাঞ্চ টাইমে ফোন দিয়ে খবর নিতো খেয়েছি কিনা আমি।
পড়ালেখা করছি কিনা ঠিক মত।
রাতে কাজ শেষ করে বাসায় ফিরে গোসল করেই ফোন দিতো আমাকে।
খাবার খেতো আর কথা বলতো আমার সাথে।
খুব ভালো ভাবেই চলছিলো আমাদের টুনাটুনির ভালবাসা।
আমিও মন দিয়ে পড়াশোনা করতে লাগলাম।
পরীক্ষা দিলাম।
রণ বল্লো পরীক্ষার রেজাল্ট দিলেই যেন আমি আবার ভর্তি হয়ে যাই।
ও বাইরে যাবার পর আমার দিন শুরু হতো ওর সাথে কথা বলে,আর শেষও হতো ওর সাথে কথা বলেই।
ও স্যালারি পেয়ে আমাকে জানায় আমি কি চাই ওর কাছে।ও আমার জন্য পাঠিয়ে দিবে।
আমি ওকে বলি,আমি শুধু তোমাকেই চাই রণ
তুমিই চলে এসো সময় হলে,
তাহলেই আমার সব পাওয়া হয়ে যাবে।
দেখতে দেখতে কেটে যায় দুই দুইটা মাস।
কিন্তু হঠাৎ করেই রণ আর আমাকে ফোন দেয়না।ফোন দেয়া বন্ধ করে দেয়।
আমি ট্রাই করি ওর নাম্বার কিন্তু বন্ধ।
আমার চিন্তা বাড়তে থাকে।
কেন ফোন দিচ্ছেনা ও।
এই ফোন ছাড়া তো ওর সাথে যোগাযোগ করার মত আর কোন পথও জানা নেই আমার।
আমি ওর বাড়ীও চিনিনা যে ওর বাসায় গিয়ে ওর খবর নিবো।
কেটে যায় এক মাস দুই মাস তিন মাস ছয় মাস,এক বছর,দুই বছর।
রণর আর কোন ফোন কল বা সন্ধান পাইনা আমি।
ওর সাথে যোগাযোগ বন্ধ হবার পর থেকে আমি পাগলের মত হয়ে যাই।
যোগাযোগ বন্ধের পর পরই বাবা মা আমার এমন অবনতির কারণ জানতে চান।কার কারণে আমার এই অবস্থা জানতে চান।
আমি সব খুলে বলি তাদের।আম্মু আব্বু সোজাসুজি আমাকে বোঝান,ছেলে প্রতারক,সে আমাকে কোন দিন বিয়ে করবেনা।তাই যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে।
তারা আমার জন্য অন্য পাত্র দেখা শুরু করলেন।
~বিন্দু,এই বিন্দু,এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?
চেনোনি নাকি আমাকে?
-হুম হুম,ও হ্যাঁ।কি বললেন?
-ধ্যান কোথায় তোমার?আর আপনি করে বলছো আমাকে তুমি?
-অপরিচিতদের আমি আপনি করেই সম্বোধন করি।
-কেমন আছো?
-ভালো আছি,আল্লাহ্ তায়ালা ভালো রেখেছেন।
-বিয়ে করে সংসারী হয়ে গেছো তাইনা?হবারই কথা।সাত সাত টা বছর যে কেটে গেছে মাঝে।
জিজ্ঞেস করলেনা,আমি কেমন আছি?
-দেখেতো বোঝাই যাচ্ছে মন্দ নেই।
তা বউ এর জন্য চুড়ি কিনতে এসেছিলেন বুঝি?
-বিন্দু আসলে…
-আম্মু আম্মু তুমি এখানে?
আমি তোমাকে কত ক্ষণ যাবত খুঁজছি।
তাড়াতাড়ি এসো,
নানুভাই গাড়ীতে বসে আছেন।
চলোতো চলোইনা।
রণবি আমার হাত ধরে টানতে টানতে আমাকে ওর সাথে নিয়ে চলে যেতে লাগলো।
-বিন্দু দাঁড়াও,আমার কথা এখনো শেষ হয়নি।অনেক কথা বলার বাকি আছে আমার।আর ক্ষমাটাও যে চাওয়া হয়নি।
-ভয় নেই,আমি আপনাকে ক্ষমা করে দিয়েছি।
-ও কি তোমার মেয়ে?
-ইয়েস মিঃ রণ।
শি ইজ মাই ডটার।
এন্ড হার নেইম ইজ রণবি।
আসি,আশা করি আর কোন দিন আপনার ছায়াও আমি দেখতে পাবোনা।
দয়া করে আপনার মুখ টা আমাকে আর কোন দেখাবেন না।
আসি।
-যেহেতু আমার কথা বলা এখনো শেষ হয়নি সেহেতু আমি আসবো,আর যত দিন না আমার কথা গুলো আমি তোমাকে জানাতে পারবো,ঠিক তত দিন আমি তোমার দুয়ারে কড়া নাড়বো।
আর আগামীকাল ঠিক সকাল নয় টায় আমি তোমার জন্য আমাদের চিরচেনা কলেজের বাইরের মাঠে অপেক্ষা করবো।আর আমার হাতে থাকবে তোমার জন্য শ’খানিক চুড়ি।
আর তুমি আসবেই।
যদি না আসো তাহলে আমি ওখান থেকে এক মিনিটের জন্যও নড়বোনা।
যত ক্ষণ বা যত দিন না তুমি আসো।
কথা টা মনে রেখো।
আর সময় ঠিক সকাল নয়টা..
রণ মাত্রই রণবির গালে হাত দিবে আর আমি রণবিকে টেনে নিয়ে চলে আসলাম।
আর আসার সময় ভাবতে লাগলাম,
এত বছর যে আমার খবর নেয়নি,যার কারণে আমার জীবনে এত ঝড় তুফান বয়ে গেলো।
তার সাথে কি আদৌ আমার দেখা করা উচিৎ হবে?
আমি কি করবো ওর সাথে দেখা?
নাকি ওর ছায়াও আর কোন দিন মাড়াবোনা।
কিন্তু আমার যে খুবই জানার দরকার।
কেন করলো ও আমার সাথে এত বড় প্রতারণা।কেন ভাঙলো আমার বিশ্বাসের সাথে সাথে আমার সাজানো স্বপ্ন গুলো।
কেন কেন কেন!
চলবে?