অবেলায় পেলাম তোমায় পর্ব -০৫ ও শেষ

#অবেলায়_পেলাম_তোমায়।
#বিন্দু_মালিনী।
#শেষ_পর্ব।

-এবার আমার কথা তো শোনে যাও।

কোথায় ছিলাম আমি,
আর কেনই বা হুট করে তোমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেই।

-এইটুকুই তো?ওকে বলো।
বলে ক্ষান্ত হও।

-আজ থেকে সাত বছর আগে তোমার সাথে আমার যখন লাস্ট কথা হয়,

তার কিছু ক্ষণ পরই আমার সাথে আমার রুমমেটদের ঝামেলা হয়।
আমাকে নতুন পেয়ে তারা আমাকে দিয়ে সমস্ত কাজ করিয়ে নিতে চাইতো।
আমি তাদের থেকে বয়সে ছোট।
তাছাড়া গিয়েছিও নতুন।না বুঝি তেমন ওখানকার ভাষা।না আছে আমার ওখানে পরিচিত কেউ।

আমি প্রতিদিনই করতাম সব।
কিন্তু সেদিন আমি ওদের না করি।

আর তাই সবাই মিলে সেদিন আমাকে খুব মারে।ওরা ছিলো,একেক জন একেক দেশের।আমিই ছিলাম শুধু বাংলাদেশের।
আমাকে তো তারা মারলোই আবার আমার মোবাইলটাও ভেঙে ফেল্লো।

পরে একজন থানায় ফোন দিয়ে কি যেন বল্লো আর পুলিশ এসে আমাকে ধরে নিয়ে গেলো।

আমার সাত বছরের কারাদণ্ড হয়ে গেলো।

কেউ আমার কোন কথা শুনলোনা।
পুলিশরাও না।সবাই তাদের মিথ্যে অভিযোগই বিশ্বাস করে নিলো।

যত টুকু বুঝলাম তারা মেয়ে জড়িত কোন ঘটনার কথা বলে আর চুরি ঘটিত কোন ঘটনার কথা বলে আমাকে দোষী বানিয়ে পুলিশে দেয়।

তারপর জেলে বসেই কেটে যায় আমার ৭ টা বছর।

আমি না পারি কারো সাথে যোগাযোগ করতে আর না পারি কাউকে কিছু বলতে।

যেদিন আমি ছাড়া পাই সেদিন আমি ওখানকার এক বাঙালীর সাথে দেখা করতে যাই।

যার সাথে আমার কাজের সাইডে পরিচয় হয়েছিলো।

আল্লাহর রহমতে সে জায়গা পরিবর্তন করেনি।
বরং ওখানেই ছিলো।পরে তাকে গিয়ে আমি সব কিছু জানাই।

তিনি আমার সব কথা শুনে চোখে জল নিয়ে বলেন,

তোর সাথে এত কিছু ঘটে গেলো আর আমি কিছুই জানলাম না।

তারপর সে আমার খাওয়ার আর থাকার ব্যবস্থা করলেন।
আর আমাকে দেশে পাঠানোর সব ব্যবস্থা করে দিলেন।

অবশেষে আমি দেশের মাটিতে পা রাখলাম।

কিন্তু এই সাত টা বছর আমার জীবন থেকে কেড়ে নিলো আমার সব কিছু।

বাসায় পা রাখতেই জানতে পারলাম আমার মা আমার শোকে শোকে একদিন না ফেরার দেশে চলে গেছেন।

বাবা তো গিয়েছেন আগেই।
মাও চলে গেলেন।

অথচ জানতেও পারলেন না,তার ছেলে নিজ ইচ্ছায় যোগাযোগ বন্ধ করেনি।

মাকে হারানোর শোকটা মেনে নিতে পারছিলাম না।

তবুও মেনে নেয়া ছাড়া তো আর কোন উপায়ও নেই।

তারপর ভাবলাম তোমার কথা।
আর এও ভাবলাম,হয়তো তুমিও মায়ের মত ভুল বুঝে আছো আমাকে।

মা অভিমান করে পৃথিবী ছেড়ে গেছেন।
আর তুমি হয়তো গেছো অন্য কারো ঘরে।

তোমার ফোন নাম্বারে ট্রাই করেছি অনেক,বাসার ডায়েরীতে লিখা ছিলো নাম্বার টা।কিন্তু কল যায়নি।
ভাবলাম নাম্বার হয়তো চেঞ্জ করে নিয়েছো।সাত বছর যে অনেক সময়।
যেখানে মানুষই চেঞ্জ হয়ে যায়,সেখানে ফোন নং চেঞ্জ হওয়াটাতো অস্বাভাবিক কিছু নয়।

আর তারপর শুরু হলো তোমার খোঁজ করা।

আর একটা সময় পেয়েও গেলাম সেদিন,

তোমার প্রিয় সেই মেলায়।

আমি জানতাম ওই মেলায় তুমি আসবেই।
তাই মেলার প্রতিটা দিন আমি মেলায় এসেছি আর হন্নে হয়ে খুঁজেছি তোমায়।

আর বহু অপেক্ষার পর সেদিন পেলাম।
ওই তো অবেলায় পেলাম তোমায়।

আর বাকি টা তো তুমিই জানো।

আমি খুব দুঃখীত রণবিকে এভাবে নিয়ে এসেছি বলে।

আসলে আমার এ ছাড়া আর কোন উপায় ছিলোনা।

ওকে এভাবে না নিয়ে এলে তুমিও আসতেনা।
আর আমারো বলা হতোনা আমার না বলা কথা।

বিন্দু,
আমাকে ক্ষমা করে দিও।
আমি এই এত গুলো বছর না চাইতেও তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি।

চুপ করেই থাকবে কিছু বলবেনা বিন্দু?

আমি আস্তে আস্তে রণর কাছে এগিয়ে গেলাম।
কাঁদতে কাঁদতে জড়িয়ে ধরে বললাম,
আমিও খুব সরি,
তোমাকে এত দিন ভুল বুঝেছি বলে।
আমাকেও তুমি ক্ষমা করে দিও।

রণবি হাসতে হাসতে হাত তালি দিতে দিতে বল্লো,ইয়াহু!
এত দিনে আমি তাহলে আমার আম্মুর বর মানে আমার আব্বুকে খুঁজে পেলাম।
নানু আর পাপাকে আজই জানাতে হবে।

রণ আমার হাত দুটো শক্ত করে ধরে বল্লো,
আল্লাহর কাছে লাখোলাখো শুকরিয়া।
অবেলায় হলেও,পেলাম তো তোমায়।

আমিও রণর চোখের দিকে তাকিয়ে ওর হাত দুটো ধরে বললাম,

হুম,অবেলায় পেলাম তোমায়।

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here