অবেলায় পেলাম তোমায় পর্ব -০১

বিচ্ছেদের ৭ বছর পর আমার আর রণর আচমকা দেখা।সেই রণর সাথে আজ আমার দেখা যাকে একটা সময় আমি পাগলের মত ভালবেসেছি।
মিথ্যে বলবোনা,এখনো খুব ভালবাসি তাকে আমি।কিন্তু আজ আর আমি তার নই।বা সে আমার নয়।
গ্রাম্য মেলায় চুড়ি দেখছিলাম।
আর হঠাৎ পেছন থেকে এক চিরচেনা কন্ঠস্বর কানে বেজে উঠলো,নীল চুড়ি কেন?হলুদ চুড়ি নাও।হলুদ চুড়িতেই তোমাকে ভালো লাগে।আমি পেছন ফিরে তাকানোর সাথে সাথে কত হাজার ভোল্টেজের শক খাই তা আমি নিজেও জানিনা,শুধু মুখ থেকে আস্তে করে একটাই শব্দ উচ্চারিত হলো।
-রণ…
এইতো ৭ বছর আগেও আমরা একে অপরকে ছাড়া একটা মুহূর্ত থাকতে পারতাম না।
দুজন দুজনের চোখের আড়াল হলে পাগলের মত ছটফট করতে থাকতাম।একটা মেসেজ বা কল দিতে দেরি হলে কান্নায় ভেঙে পড়তাম কিংবা রাগ করে থাকতাম।
যত ক্ষণ না ও আমার রাগ ভাঙাতো তত ক্ষণ আমি পানিও পান করতাম না।
খাবার খাওয়া তো দূরের কথা।
আমি অসুস্থ থাকলে ছেলেটা যেন ছোট খাটো একটা ডাক্তার হয়ে যেতো।
নিয়মিত ওষুধ খাওয়ার জন্য বলতেই থাকতো।
এত কেয়ার এত ভালবাসা দেখে ভয় হতো আমার।
মাঝে মাঝে রণকে জিজ্ঞেস করতাম,
-আচ্ছা রণ,আমার কপালে এত ভালবাসা সইবেতো?
রণ বলতো,পাগলি আমার।এই টুকু ভালবাসা কেয়ার তো কিছুই না।বিয়ের পর দেখবে যত্ন কাকে বলে।
আমিও একটা হাসি দিয়ে বলতাম,ঠিকাছে ঠিকাছে আমিও দেখবো।
কত ভালবাসতে পারো তুমি আমায়।
রণ আর আমি দুজন একই ক্লাসে পড়তাম।
এক সাথেই পড়াশোনা আমাদের।ক্লাসে একদিন স্যার আমাকে পড়া ধরলে আমি সেই পড়ার উত্তর দিতে পারিনা।
কারণ যেদিন এই পড়া দেয়া হয় সেদিন আমি ক্লাসে উপস্থিত ছিলাম না।আর তাই স্যার আমাকে শাস্তি হিসেবে কানে ধরে দাঁড় করিয়ে রাখেন।
আমি কানে ধরি ঠিকই।কিন্তু চোখের জলে আমার গাল আর নাক পর্যন্ত ভিজে যায়।সেদিন সব ছেলে মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাসলেও আমি রণর চোখে সেদিন আমার জন্য জল দেখেছি।
তবে তখনো আমরা ক্লাসমেট হিসেবেই দুজন দুজনকে জানি।
এক সাথে এস এস সি পাশ করলাম আমরা।
যখন ইন্টারে ভর্তি হলাম রণও আমার সাথে একই কলেজে ভর্তি হলো।
ইন্টারে যেদিন প্রথম ক্লাসে পা রাখলাম,ক্লাসমেট দের নজর যেন আমার দিকেই।
ইন্টারে পড়ার সাথে সাথে আমি হতে লাগলাম সেই লেভেলের সাজুনি।
সাজ বলে কাকে তা আমাকে না দেখলে কেউ বোধয় জানতোইনা।
ধুমধাড়াক্কা সাজ দিয়ে যেতাম কলেজে।
কলেজে যেহেতু সবাই মুক্ত ভাবে চলাফেরা করতে পারে,সেহেতু আমিও চলতে লাগলাম।
লাইফ টাকে ইঞ্জয় করছিলাম মুক্ত পাখির মত।
কিন্তু হঠাৎ একদিন ক্লাসের এক ছেলে কলেজের ভেতরেই আমার হাত টেনে ধরে অকারণে।
যদিও ছেলেটার মাথায় বদমাশ নামক সাইনবোর্ড টানানো আছে।
সেহেতু ওর আচরণে আমার বান্ধবীরা বা আর কেউ তেমন অবাক হয়নি।
কিন্তু রণর চোখ যেই না পড়েছে এই দৃশ্যের দিকে,
তখনই রণ এসে ওকে ধামাধাম শুরু করে দেয়।
ওকে এতটাই মারে যে পরবর্তীতে ইমিডিয়েটলি ওকে হসপিটালে ভর্তি করা হয়।
পরিণাম,
কলেজ থেকে বহিষ্কার।
রণকে বের করে দেয়া হয় কলেজ থেকে।
যদিও আমি অনেক রিকুয়েস্ট করেছিলাম ওকে যেন কলেজ থেকে বের করে দেয়া না হয়।
কিন্তু আমার কথা কেউ শোনেনি।
ফলাফল:
রণর আর এইচ এস সি পরীক্ষা দেয়া হয়না।
একদিন কলেজ থেকে বাসায় ফেরার পথে রণকে দেখতে পেয়ে দৌড়ে গিয়ে হাপাতে হাপাতে জিজ্ঞেস করলাম,
কেন করলেন এমন?
কেন এতটা মারলেন ওকে?
নইলে তো আজ আপনার এই অবস্থা হতোনা।কলেজ থেকে বেড়িয়ে যেতে হতোনা।
কেন এভাবে মেরেছেন ওকে?
-কারণ ও আমার কলিজায় হাত দিয়েছে।
-মানে?
-মানে,আমি তোমাকে ভালবাসি।
আর আমার ভালবাসার গায়ে যে হাত দিবে তার হাত আমি রাখবোনা।
আমি সেদিন অবাক হবো না কি হবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।
কিছু ক্ষণ চুপ থেকে ছোট্ট একটা হাসি দিয়ে সেদিন আমি দৌড়ে বাসায় চলে আসি।
আর সেদিন থেকেই শুরু হয় আমাদের ভালবাসার অধ্যায় শুরু।
আমি প্রতি দিন কলেজে যেতাম আর ও দূরে দাঁড়িয়ে থাকতো।
দূর থেকে আমাকে এক নজর দেখেই চলে যেতো।
আবার যখন আমি কলেজ থেকে বাসায় ফিরতাম ও আমার সাথে সাথে হেঁটে হেঁটে আমাকে বাড়ী অবধি এগিয়ে দিয়ে আসতো।
এভাবেই চলতে লাগলো আমাদের ভালবাসা।
কাটলো অনেক গুলো দিন ভালবাসায় ভালবাসায়।
সামনে আমার এইচ এস সি এক্সাম।কিন্তু এক্সামের দিকে তেমন মনই নেই।মন শুধু রণর চিন্তাই করে যায় সারাদিন রাত।
যেহেতু অল্প বয়স,ভালবাসাটাও ছিলো একদম ছলনা মুক্ত।
তখন বুঝতাম না কোন ছলনা বা বেঈমানি।
শুধু মন থেকে ভালবাসতে জানতাম।
আর ভালবাসতাম।
কিন্তু হঠাৎ তিন দিন রণর কোন দেখা নেই।
বুকের ভেতরটায় যেন ঝড় বয়ে যাচ্ছিলো ওকে না দেখে।
সারারাত ঘুমাতে পারলাম না,ছটফট করতে লাগলাম,কাঁদতে লাগলাম।
যেহেতু মোবাইল ছিলোনা আমার সেহতু কোন ভাবে যোগাযোগও করতে পারছিলাম না।
চতুর্থ দিনের দিন দূর থেকে খেয়াল করি রণ দাঁড়িয়ে আছে।
আশেপাশে মানুষ আছে কি নেই তাতে আমি নজর না দিয়ে দৌড়ে গিয়ে রণর বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লাম।
আর কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলাম,
-কোথায় ছিলে তুমি?কেন এ কয় দিন আসোনি?
জানো আমার কত কষ্ট হচ্ছিলো?
রণ আমাকে ওর বুক থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যা বল্লো,
তা শোনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।
চলবে?
#অবেলায়_পেলাম_তোমায়।
#বিন্দু_মালিনী।
#পর্ব_১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here