#অবেলায়_তোমার_আকাশে
#পর্ব_৭
#লেখিকা_N_K_Orni
রুমে এসে বৃষ্টি গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়াল। তারপর গলায় হাত দিয়ে সেদিকে তাকিয়ে একটা মিষ্টি হাসল। কারণ তার গলায় সেই চেনটা যেটা তার মায়ের ছিল। এখানে আসার আগে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় সে এটা গলায় পরে নিয়ে ছিল। সে এখন থেকে সবসময় এই চেনটা গলায় পরে থাকতে চায়। এই চেনটাকে সে কাছ থেকে সরাতে চায় না। এতে যে তার মায়ের ছোঁয়া আছে। সে চেনটায় একটা চুমু দিয়ে সেটা আবার জামার ভেতরে রেখে দেয়। তারপর সে দরজা লাগিয়ে বিছানায় চলে যায় ঘুমাতে।
পরদিন সকালে বৃষ্টি পিটপিট করে চোখ খুলে সামনে তাকিয়ে দেখে তার ফুফি মিসেস রায়া বসে আছেন। সে দুই হাতে ভর দিয়ে উপরে উঠে বসে। তাকে উঠতে দেখে মিসেস রায়া বলে ওঠেন,
— যা যা তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আয়। পোনে আটটা বেজে গেছে। আজকে তো তোর অভ্রর সাথে কলেজে যাওয়ার কথা। ব্রেকফাস্ট করে তৈরি হয়ে যেতে অনেক সময় লাগবে। তাই বলছি তাড়াতাড়ি যা।
বৃষ্টি দুইদিকে মাথা দুলিয়ে বলল,
— আচ্ছা।
বলেই বৃষ্টি বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর বৃষ্টি ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো। মিসেস রায়া বৃষ্টিকে ডাইনিং রুমে নিয়ে গেলেন। বৃষ্টি সেখানে গিয়ে দেখল তার ফুফা তৈরি হয়ে বসে আছে। ব্রেকফাস্ট করে তিনি অফিসে যাবেন। বৃষ্টি গিয়ে একটা চেয়ার টেনে বসল। তারপর রায়হান সাহেবের দিকে হালকা হেসে বলে উঠলেন,
— ফুফা কেমন আছেন?
বৃষ্টির কথা শুনে রায়হান সাহেব একগাল হেসে বললেন,
— এইতো ভালো মা। তা তুমি উঠে পড়েছ?
— হ্যাঁ।
রায়হান সাহেব এবার মিসেস রায়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,
— অভ্র কই? ও এতো দেরী করছে কেন? আজকে তো ওর বৃষ্টি মামনিকে নিয়ে কলেজে যাওয়ার কথা।
— ও আসছে। এখনি চলে আসবে।
বলতে বলতে অভ্র চলে এলো। অভ্র তৈরি হয়েই এসেছে। অভ্র এসে একটা চেয়ার টেনে বসল। মিসেস রায়া খাবার সার্ভ করতে শুরু করল। বৃষ্টি মিসেস রায়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,
— ফুফি আয়না কই? ওকে দেখছি না যে?
— আয়না তো কোচিং এ চলে গেছে অনেকক্ষণ আগেই। ওর সামনে পরীক্ষা তো তাই।
— ওহহ।
ওরা খেতে শুরু করল। বৃষ্টি খাওয়া আগেই শেষ হয়ে গেল। অভ্র আর রায়হান সাহেব তখনও খাচ্ছেন। বৃষ্টি খাওয়া শেষে উঠে চলে যেতে গেল। তখনই অভ্র বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,
— বৃষ্টি তুই তৈরি হয়ে এডমিশনের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে বাইরে চলে আসিস। আমি খাওয়া শেষ করে ওখানেই দাঁড়িয়ে থাকব।
বৃষ্টি মাথা নাড়িয়ে বলে,
— আচ্ছা।
বলেই বৃষ্টি রুমে চলে এলো। তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নিল। তারপর প্রয়োজনীয় জিনিস একটা ফাইলে নিয়ে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেল। বৃষ্টি বাড়ির দরজার সামনে গিয়ে দেখল অভ্র দাঁড়িয়ে আছে। বৃষ্টি যেতেই অভ্র তাকে নিয়ে লিফটে উঠল। লিফট নিচে নামতেই অভ্র বৃষ্টিকে নিয়ে গাড়ির সামনে চলে গেল। অভ্র আর বৃষ্টি গাড়িতে উঠে বসল। অভ্র এবার বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,
— কালকের ব্যবহারের জন্য সরি বোনু। তুই রাগ করিস না। আসলে আমি জানতাম না ওটা তুই।
অভ্রের কথা শুনে বৃষ্টি বলে উঠল,
— আরে ভাইয়া কিছু মনে করিনি। আপনার সরি বলা লাগবে না।
— আপনি কেন বলছিস? আপনি বলছিস আবার ভাইয়াও বলছিস? তুমি বল।
বৃষ্টি এবার হালকা হেসে বলে উঠল,
— আচ্ছা তুমি।
— তুই অনেক ভালো। আয়ুর মতো না। ও খালি ঝগড়া করে। পেত্নী একটা।
অভ্রর কথা শুনে বৃষ্টি খিলখিল করে হেসে উঠল। বৃষ্টির হাসি দেখে অভ্র একটা দাঁত বের করা হাসি দিয়ে গাড়ি চালাতে শুরু করল। কিছুদূর যেতে অভ্র বলে উঠল,
— আজকে তো আমি তোকে ভর্তি করিয়ে দিব। তুই কি কালকে থেকেই ক্লাস শুরু করবি?
— হ্যাঁ কাল থেকেই শুরু করব ভাবছি। এমনিতেই দেরী করে ভর্তি হচ্ছি। অনেক ক্লাস বাদ গেছে। আর ক্লাস মিস দিতে চাই না।
— আচ্ছা। তুই জানিস আমিও ওই কলেজে পড়তাম?
— তাই। তাহলে ভালো তো।
— হুম ভালো। কলেজের সব স্যারই মোটামুটি ভালো। ও হ্যাঁ তোকে আগে থেকেই একটা বিষয়ে সাবধান করে দিচ্ছি।
— কোন বিষয়ে?
— খারুশ স্যারের থেকে সাবধানে থাকবি। এক নম্বরের খারুশ একটা!
অভ্রর কথা শুনে বৃষ্টি অবাক হয়ে বলে উঠল,
— খারুশ স্যার মানে?
— আরে আমাদের কলেজের একজন প্রফেসর। অনেক রাগী। আমার শেষ বছরের সময় উনি এসেছিলেন। ওই একটা বছর ফালাফালা করে দিছেন।
— এতো রাগী?
— হ্যাঁ অনেক রাগী। তাই তো তোকে আগে থেকে সাবধান করে দিচ্ছি। ওনার থেকে দূরে থাকবি। আজকে তোকে ওনাকে চিনিয়ে দিব।
বৃষ্টি মাথা নাড়িয়ে বলল,
— আচ্ছা।
সে মনে মনে বলে উঠল,
— কে এই খারুশ স্যার? সে জানে কেমন হবে?
কিছুক্ষণ পর অভ্রর গাড়ি কলেজে এসে থামল। অভ্র বৃষ্টিকে নিয়ে ভেতরে চলে গেল। অভ্র বৃষ্টিকে ভর্তি করিয়ে হসপিটালের করিডর দিয়ে হাঁটছিল। বৃষ্টি অভ্রর দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,
— ভাইয়া কাজ তো শেষ। তাহলে বাসায় যাব না?
— হ্যাঁ নিয়ে যাব তো। তার আগে দাঁড়া তোকে খারুশ স্যারকে দেখিয়ে নিয়ে আসি।
অভ্র বিরবির করে বলে উঠল,
— উনি এখন কোথায় থাকতে পারে?
অভ্র এসব ভাবছিল তখনই ওখান দিয়ে আরেকজন ডাক্তার যাচ্ছিল। সে অভ্রর বন্ধু রাফি। রাফিকে দেখে অভ্র বলে উঠল,
— এই রাফি শোন। খারুশ স্যার কই রে?
— স্যার তো আজকে হসপিটালে আসেননি।
— ওহহ।
রাফি এবার বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলল,
— তোর সাথে এটা কে?
— বোন। ওকে আজকে ভর্তি করিয়ে দিয়ে গেলাম।
— ওহহ।
বলেই রাফি চলে গেল। অভ্র এবার বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,
— শুনলিই তো স্যার আজকে আসেননি। চল বাসায় ফিরে যাই।
— আচ্ছা।
বলেই ওরা যেতে শুরু করল। গাড়ির কাছে আসতেই অভ্র বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,
— তোকে পৌঁছে দিয়ে আমাকে আবার আসতে হবে।
অভ্র বৃষ্টিকে নিয়ে বাড়িতে চলে এলো। বাড়িতে এসে বৃষ্টি তার রুমে চলে গেল। অভ্র রান্নাঘরে গিয়ে মিসেস রায়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল,
— আম্মু বৃষ্টিকে ভর্তি করিয়ে দিয়ে এসেছি। ওকে বাসায় দিয়ে গেলাম। আমি এখন যাচ্ছি।
— আচ্ছা আয়। আর শোন আজকে একটু তাড়াতাড়ি ফিরিস। বৃষ্টিকে নিয়ে একটু শপিংয়ে যাস।
— আচ্ছা।
বলেই অভ্র বেরিয়ে গেল।
——————–
একটা বিশাল রুমে একটা লোক বসে আছে। রুমটিতে নিভু নিভু আলো জ্বলছে। রুমটির দেওয়ালের বিভিন্ন জায়গায় একটা মেয়ের ছবি। আর রুমটিতে ঢোকার দরজার মুখোমুখি ওই মেয়েটারই একটা বড় ছবি টানানো। মেয়েটার পরণে একটা স্কুল ড্রেস। দুপাশে দুটো বেনুনি করা। আর সামনে দুপাশে কিছু এলোমেলো চুল। চোখে চিকন ফ্রেমের চশমা। ঠোঁটের কোণে লেগে আছে এক চিলতে হাসি। লোকটার হাতে থাকা ফোনেও ওই মেয়েটার ছবি। লোকটা ওই মেয়েটার ছবিতে কখনো হাত বোলাচ্ছে। আবার কখনো চুমুও দিচ্ছে। সে হাত বোলাতে বোলাতে বলে উঠল,
— তোমাকে আমি ঠিক খুঁজে বের করব প্রিয়তমা।
তখনই একটা ছেলে হুড়মুড় করে রুমে ঢুকে পড়ল।
চলবে,,,
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। )