#অবৈধ_সম্পর্ক
#লেখাঃ_নুসরাত_জাহান
#সিজনঃ_২
#পর্বঃ_২৯_অন্তিম_পর্ব
পরেরদিন ইমরান অফিসে চলে গেলো। কিন্তু একদম ভালো লাগছেনা রিপাকে ছাড়া। সারাদিন মাথার ভিতরে শুধু ঘুরপাক খাচ্ছে রিপাকে কখন দুচোখ ভরে দেখবে।
সারাটা দিন অফিসে ইমরানের একটুও কাজে মন বসছেনা। সারাক্ষণ মনটা শুধু ছটফট করছে। বার বার ঘুরে ফিরে রিপার কথাই মনে পড়ছে। একবার ভেবেছিলো লাঞ্চের সময়ে ছুটি নিয়ে বাসায় চলে যাবে। বিকালে একটু রিপাকে নিয়ে ঘুরতে বের হবে। কিন্তু স্যারের কাছে গিয়ে ছুটি চাওয়ার সাহস হয়নি। কারণ কয়েকদিন আগে স্যারে নিজে থেকেই বেশ কয়েকদিন ছুটি দিয়েছিলো।
অনেক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে আজ সে অফিস করলো। অফিস শেষ করে কোথায় ও ১ মিনিট ও না দাঁড়িয়ে সোজা বাসায় গেলো।
দরজায় কলিং বেল বাজাতেই রিপা এসে দরজাটা খুলে দিলো।
ইমরানকে দেখেই কিছুটা অবাক হয়ে ঘড়ির দিকে তাকায়।
রিপা ঘড়ির দিকে কী দেখছো??
আমি আজকে এত তাড়াতাড়ি এলাম কী করে এটা ভাবছো??
-“রিপা তো পুরোই হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। ভাবছে কী ব্যাপার আমার মনের ভিতরে কী চলছে সেটা ইমরান কী করে বুঝলো??
ইমরানের মুখের কোণে ঈষৎ হেসে বলে,,,
আজকে আমি তাড়াতাড়ি এসেছি বলে একটু কনফিউশনে পড়ে গেছো তাই না?
-“তেমন কিছুনা। আসলে তুমি তো এত তাড়াতাড়ি আসোনা। কিন্তু আজ হঠ্যাৎ এলে তো তাই।
-সত্যি বলতে রিপা তোমাকে দেখার জন্য মনটা আজ ভীষণ ছটফট করছিলো। তাই কাজ শেষ করেই সোজা তোমার কাছে চলে এলাম।
-“রিপা বিস্মিত মুখে বললো,,,বাহ্ ভালো তো।
আমার যে আজকে গর্ব করার দিন। আমার স্বামী আমাকে দেখার জন্য সারাদিন ছটফট করছে। সত্যি
I am so lucky.
-“ইমরানের ঠোঁটে স্নিগ্ধ হাসি,,,হ্যাঁ সত্যি। রিপা আমি ফ্রেশ হয়ে আসি তারপরে আজকে আমরা বাহিরে ডিনার করবো। অনেকদিন হলো বাহিরে খাইনা।
-“ঠিকাছে।
ইমরান কিছু দূর গিয়ে আবার ও থ,,,,মেরে থেমে গিয়ে ফিরে এসে রিপার কোমড়ে হাত দিয়ে তারপর কাধে মুখ গুঁজে দিলে বলে,,,
তোমার শরীর ঠিক আছে তো?? আর আমার আব্বু কেমন আছে??
-“রিপার বুকের ভিতরে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। শরীরের সমস্ত রক্ত প্রবাহগুলো দৌড়াদৌড়ি শুরু করেছে। মনে হচ্ছে পৃথিবীর সমস্ত সুখ তার হাতের মুঠোয় এসে পড়েছে।
যে ইমরান বাচ্চা নিতে চাচ্ছিলো না সে এখন নিজের মুখে বাচ্চাটা কেমন আছে জিজ্ঞাস করছে। কী সৌভাগ্য আমার। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে এটা সম্ভব হয়েছে।
ইমরানের হাতটা ছাড়িয়ে তারপর ইমরানের দিকে তাকিয়ে গলায় হাত দিয়ে বললো,,,
-আব্বু মানে ইমরান??
-“রিপার পেটে হাত দিয়ে ইমরান হেসে বলে,,,
এই যে তোমার গর্ভে আমার একমাত্র সন্তান তিলেতিলে বেড়ে উঠছে। আর একা একা খেলা করছে।
-“তোমার একার সন্তান বুঝি??
-“হ্যাঁ,,,আমার একারই তো।
-“ইসসসসস,,,,একার কীভাবে হলো??
-হুসসসসসস,,,কোন কথা বলবে না। আমার একারই।
-“ঠিকাছে। তাহলে তোমার পেটে ট্যান্সফার করে দেই। তাহলেই তোমার একার সন্তান হবে। (হেসে হেসে রিপা)
-“ইমরান মুচকি হাসি দিয়ে বলে,,,রিপা আমার কিন্তু ছেলে চাই,,,ই চাই।
-“বাহ্ রে। ছেলে হবেনা। আমি জানি আমার মেয়ে হবে।
-” না ছেলে।
-“না মেয়ে।
রিপা তুমি কী আমার সাথে ঝগড়া করতে এসেছো??
আমি এত কষ্ট করে অফিস করে আসলাম। কোথায় আমাকে জড়িয়ে ধরে আদর করবে। তা না করে আমার সাথে ঝগড়া করছো।
রিপা মুখ টিপেটিপে হাসছে।
আচমকাই রিপা ইমরানের ঠোঁটে উপরে নিজের ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরে।
কিছুক্ষণ পরে ছেড়ে দিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে বলে,,
আদর কী পেয়েছো??
এইটুকু চকলেটে আমার মন ভরে না বলেই রিপার গলায়,,ঘাড়ে চুমো খেতে থাকে।
রিপার লজ্জা রাঙা ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে বলে,,
এবার রেডী হও জান। আমরা ঘুরতে বের হবো।
-“রেডী তো হবো আগে আমাকে ছাড়ো তো।
ইমরান রিপাকে ছেড়ে দিয়ে টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো।
কিছুক্ষণ পরে বেড়িয়ে এসে চুলগুলো মুছতে মুছতে রিপার দিকে তাকিয়ে থাকে।
-“রিপা শাড়ী পড়েছে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে থেকে নিজেকে দেখছে। শাড়ীর কুচিগুলো ভালো করে ঠিক করতে পারেনি।
তার জন্য ইমরান দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসছে।
-কী ব্যাপার তুমি হাসছো কেনো??
-“তোমার শাড়ী পড়া দেখে।
-“তাই!
-“হুম।
-“কেনো??
-“এখন ও শাড়ীর কুচি ঠিক করে পড়তে পারোনা। আর কয়েকমাস পরে বাচ্চার মা হবে। (হেসে হেসে ইমরান)
-“তুমি কী আমাকে ইনসাল্ট করছো??
-“না না। তুমি তো আমার জান। তোমাকে কী ইনসাল্ট করতে পারি বলো??
-“আমি কিন্তু এখন কাঁদবো। তুমি আমাকে……..
.
.
.
ইমরান এগিয়ে এসে হাঁটু ভাজ করে রিপার পাশে বসে কুচিগুলো ঠিক করে দিলো। রিপা তোমার শাড়ীর কুচি ঠিক করা লাগবে কেনো?? আমি তো আছি ঠিক করে দেওয়ার জন্য।
ইমরানের মুখের দিকে তাকিয়ে রিপা হাসছে।
.
-” রিপা আমি গাড়ি নিয়ে বাহিরে ওয়েট করছি তুমি রেডী হয়ে নিচে এসো।
-“ঠিকাছে।
.
রিপা চুলগুলো আঁচড়াচ্ছে। খোঁপা করবে নাকি ছাড়া দিবে বুঝতে পারছেনা। রিপার মা বলতো প্রেগন্যান্ট থাকা অবস্থায় চুল খোলা দিয়ে সন্ধ্যার পরে ঘোরাঘুরি করা সম্পূর্ণ বারণ। দোষ লাগলে বাচ্চাটা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
রিপা শরীরে কোন পারফিউম লাগায়নি।
শাড়ীর সাথে হিল পড়ে সিঁড়ি বেয়ে কুচি ঠিক করতে করতে নিচে নামলো।
ইমরান গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে সিগারেট টানছে। রিপাকে দেখেই সিগারেটটা হাত থেকে পড়ে যায় ইমরানের।
চুলদুটো দুহাত দিয়ে ডলতে থাকে।
কী দেখছে স্বপ্নে দেখছেনা তো?
রিপা তো দিনদিন সুন্দর হয়ে যাচ্ছে। রিপা এসে ইমরানের চোখের সামনে তুরি মারলো।
-“কী হলো,,,মহারাজের চোখ কোথায়??
এত কী নিয়ে চিন্তা করছো??
-“না এমনি রিপা।
রিপাকে পাশের সিটে বসিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো ইমরান। কয়েক মাইল যাওয়ার পরে ব্রিজের উপরে গিয়ে গাড়িটি দাঁড় করায়।
রিপার হাত ধরে গাড়ি দিয়ে দুজনে নামলো। রিপা ব্রিজের উপরে হাত দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। ব্রিজের নিচে বিশাল নদী। সন্ধ্যার পরে এখানে সবার আনাগোনা বেশী থাকে। ব্রিজ থেকে একটু দূরে একটা কফির দোকান আছে। এই দোকানের কফি খাওয়ার জন্য দূর দূরন্ত থেকে মানুষজন আসে।
রিপা রেলিং ঘষে দাঁড়িয়ে আছে। বাতাসে চুলগুলো উড়ে উড়ে রিপার মুখে পড়ছে। ইমরান নিজের হাত দিয়ে রিপার চুলগুলো সরিয়ে দিচ্ছে।
রিপা এক ধ্যানে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
-“রিপা।
-“উমমমম।
-“ভালো লাগছে তোমার?
-“হুম্ম।
রিপার হাত ধরে বলে,,তোমার খুশিতেই আমার খুশি রিপা। তুমি চাইলে আমি হাসতে হাসতে মরতে ও রাজি।
রিপা সামনে একটা কফির দোকান আছো। চলো গিয়ে দুজনে দু কাপ কফি খেয়ে আসি।
-“হুম।
রিপার হাত শক্ত করে ধরে হেঁটে হেঁটে দোকানে গেলো।
তারপরে মগ ভর্তি কফি খেয়ে আবার গাড়িতে উঠলো।
কিছুক্ষণ পরে রেস্টুরেন্টে ঢুকে রাতের খাবার খেয়ে বাসায় গেলো।
.
এভাবে কেটে যায় ৪ মাস………
.
এদিকে বিথীর সাথে রাহাতের সম্পর্ক প্রায় সুতোয় বেঁধে আছে। বিথী একেবারে ঠিক করেছে রাহাতকে সে ডিভোর্স দিবে। বিথী যতই রাহাতকে ডিভোর্স দেওয়ার জন্য তরিঘড়ি করছে ঠিক তেমনি তার মা বাবা তাকে বারণ করছে। কিন্তু বিথী তার সিদ্ধান্তে অটল ছিলো।
.
.
রাহাতের লুচ্চামির জন্য সে সব কূল শেষ করে অবশেষে আজ নিজের ভূলগুলো বুঝতে পারলো। কিন্তু এখন তো সময় শেষ হয়ে গেছে। রাহাতের সাথে বিথীর তো কোন সম্পর্ক নেই। রাহাত বিথীর মুখটা ও আজ পর্যন্ত দেখতে পারেনি। সবচেয়ে কষ্টদায়ক সেটা হলো,,, তার নিজের সন্তানের মুখটা ও দেখতে দেয়নি বিথী। এর থেকে পৃথিবীতে আর কী শাস্তি থাকতে পারে।
বিথী ডিভোর্স দেওয়ার জন্য কাল বিকালে কোর্টে যাবে।
ডিভোর্সের জন্য আগেই আপিল করেছিলো। কালকে রায় ঘোষণা হবে।
.
ইমরান রিপাকে খুব যত্ন করে। প্রতিটা জিনিসের প্রতি খেয়াল রাখে।
সন্ধ্যা ৬…….টায়।
.
.
.
কলিং বেল বাজলে ইমরান গিয়ে দরজাটা খুলে দিলো।
দরজাটা খুলেই হতভম্ব হয়ে যায়।
-“একি তুই। এখানে আসার সাহস কোথায় পেলি??
বেড়িয়ে যা।
-“আমাকে মাফ করে দে দোস্ত। আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। আমি যে অন্যায়টা করেছি জানি তার কোন ক্ষমা নেই তবুও আমাকে তুই ক্ষমা করে দে।
ইমরান বিথী কালকে আমাকে ডির্ভোস দিয়ে দিবে। তার সব কিছুর বন্দোবস্ত করে ফেলেছে। এখন তুই পারিস আমার সংসারটা রক্ষা করতে।
তোর কোন কথাই আমি শুনছি না। প্লিজ এখান থেকে চলে যা।
তোর মুখ দেখলে ও আমার ঘৃণা লাগছে। তুই না ডক্টর??
তুই কী করে এতটা নোংরা হইলি?? ছিঃ ভাবতে ও খারাপ লাগছে তুই আমার বন্ধু।
রিপা ভিতর থেকে বেড়িয়ে আসলে রাহাত গিয়ে পা জড়িয়ে ধরে। রিপা প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও।
আমি তোমার সাথে যা করেছি তার জন্য আমি অনুতপ্ত। রিপা তুমিই পারো আমার ভেঙে যাওয়া সংসারটাকে জোড়া লাগাতে।
-“আমরা বললে কী বিথী শুনবে??
-“শুনবে কিনা জানিনা! কিন্তু শুনাতে হবে। আমার একটা ছোট্ট বাচ্চা আছে প্লিজ এই বাচ্চাটার মুখের দিকে তাকিয়ে আমার এই উপকারটা করো প্লিজ।
-“আচ্ছা আমরা চেষ্টা করবো।
.
বিকালে……..
ইমরানকে সাথে করে রিপা বিথীর বাসায় যায়।
বিথী জানালার পাশে মাথা ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটি দোলনায় বসে খেলছে। রিপার উপস্থিতি টের পেয়ে মুখটা ঘুরিয়ে রিপার দিকে তাকিয়ে চোখের জল মুছে মুচকি হাসি দিলো। তারপর এগিয়ে এসে রিপার হাত ধরে বিছানার উপরে বসিয়ে বললো,,
-“কেমন আছো??
-“আলহামদুলিল্লাহ। তুমি??
-“কেনো জানি না রিপার দিকে তাকাতেই বিথী চোখের জল ছেড়ে দিলো।
রিপা তো হতবাক হয়ে বিথীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। কী বলবে কিছুই বুঝতে পারছেনা। বিথীকে সান্ত্বণা দেওয়ার মতো কোন ভাষা তার জানা নেই।
তবুও বিথীকে জড়িয়ে ধরে বলে,,
-“বোন কেঁদো না। তোমার স্বামীর যেমন দোষ ছিলো তেমনি আমি ও সমান দোষে দোষী। তাই তোমার কাছে একটা রিকুয়েস্ট নিয়ে এসেছি। আমাকে যদি বোন মনে করো তাহলে কথাটা রাখবে।
পলকহীন ভাবে রিপার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে তারপর গলার ভিতরে কষ্টের ঢোক গিলে বলে,,
-বলো কী বলবে??
-“আগে আমাকে ছুঁয়ে কথা দাও আমি যেটা বলবো তুমি রাখবে?
-“আচ্ছা তোমাকে ছু্ঁয়ে কথা দিলাম যা বলবে আমি তাই করবো।
-“হুম।
রিপা বসা ছেড়ে উঠে বিথীর হাত ধরে তারপর বাচ্চাটাকে কোলে তোলে নিয়ে কপালে চুমো দিয়ে বলে,,
মাসআল্লাহ,,,দেখতে তো মায়ের মতোই হয়েছে।
বিথীর মুখে কোনে হাসি নেই।
বিথী তুমি রাহাতকে ক্ষমা করে দাও বাচ্চাটার ভবিষতের কথা চিন্তা করে। কারণ বাবার পরিচয়টা এই সমাজে সবচেয়ে দরকারী। সমস্ত জায়গায় বাবার ভূমিকা অপরিসীম। বিথী কোন কথা বলছেনা চুপ করে রিপার কথাগুলো শুনছে।
এমন সময় ইমরান ভিতরে আসলো।
বিথী রিপা সত্যি কথাই বলেছে। আমি জানি এটা মেনে নেওয়া কারো পক্ষেই সম্ভব না। কিন্তু তবুও আমি বলবো বাচ্চাটার কথা বিবেচনা করে রাহাতকে ক্ষমা করে দাও। জানি মন থেকে তুমি এটা মেনে নিতে পারবেনা। কিন্তু তবুও একটিবার রাহাতকে তার প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দাও।
.
বিথী কোন কথা বলছেনা। চুপ করে দাঁড়িয়ে কথাগুলো শুনছে আর চোখে দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে।
ইমরান দরজার আড়াল থেকে রাহাতকে নিয়ে আসলো।
রাহাত গিয়ে বিথীর পা জাপটে ধরে কাঁদতে লাগলো।
বিথী আমি অনেক ভুল করেছি জানি এ ভুলের কোন ক্ষমা নেই তবুও তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।
আমি আমার ভুল স্বীকার করছি।
বিথীর মা এসে বিথীকে বলে,,,
-“মা রে ইমরান আর রিপা ঠিক কথাই বলেছে। পিতৃ পরিচয় ছাড়া এই সমাজে কারো মূল্য নেই। তুই রাহাতকে ক্ষমা করে দে।
.
বিথী এবার হু হু করে কাঁদতে লাগলো। খুব জোড়ে জোড়ে কাঁদতে থাকে। তোমরা সবাই সবার দিক থেকে দেখলা কিন্তু আমার দিকটা কেউ দেখলেনা। রাহাত আমার সাথে এত বড় প্রতারণা কী করে করতে পারলো??? আমি তো বেঁচে থাকলে ও মরার মতো বেঁচে থাকবো। এমনভাবে বেঁচে থাকার চেয়ে তো মরে যাওয়া অনেক ভালো মা। মা তুমি বিশ্বাস করো ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে সুইসাইড করতে গিয়ে ও ফিরে এসেছি।
মা এতটা মাসে সারারাতে দু’চোখের পাতা এক করতে পারিনি।
রাহাত রিপার কোল দিয়ে ছেলেকে কোলে তুলে নিয়ে বিথীর সামনে দিয়ে বলে,,,ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে আমাকে ক্ষমা করে দাও।
.
ভাঙ্গা সম্পর্ককে জোড়া দিয়ে রিপাকে নিয়ে বাসায় আসলো ইমরান। রিপা ভাবছে যাক ভালোই হয়েছে সম্পর্কটা তো জোড়া লেগেছে। না হলে বাচ্চাটা অনাথ হতো। আসলেই ইমরান অনেক ভালো একজন মানুষ।
.
.
💜💜💜
রিপার ৮মাস গিয়ে ৯ মাস চলছে। রিপা খুব সাবধাণে চলাফেরা করে। ইমরান যতক্ষণ থাকে ততোক্ষণ কোন চিন্তা করতে হয় না রিপার। খাওয়ানো থেকে শুরু করে গোসল করানো পর্যন্ত সব কাজ ইমরান করে। খুব ভালোভাবেই খেয়াল রাখছে রিপার।
.
রাত ১১ টায় রিপা পায়চারী করছে রুমের ভিতরে। আর ইমরান ল্যাপটপে অফিসের কাজ করছে।
আচমকাই আউচচচচ,,, বলে ফ্লোরে বসে পড়লো রিপা।
ল্যাপটপটা রেখে দৌড়ে রিপার কাছে আসে ইমরান।
-কী হয়েছে রিপা??
-“মনে হচ্ছে কেউ লাথি মেরেছে।
মুচকি হাসি দিয়ে রিপার পেটে মাথা দিয়ে কান পেতে বলছে,,,
রিপা আমার আব্বুটা আর ভিতরে থাকতে চাচ্ছেনা আমার কাছে আসতে চাচ্ছে।
আব্বু তুমি চিন্তা করোনা আর তো মাত্র কয়েকদিন বাকি। তুমি এসে আমার সাথে খেলা করবে। কথাটা বলছে আর হাসছে। কিন্তু রিপার চোখ পানিতে ছলছল করছে।
কী হলো তুমি কাঁদছো কেনো??
–“খুশিতে ইমরান।
ইমরান হাসছে। রিপা কাঁদার দিন শেষ। প্লিজ এবার হাসো।
-রিপা আর নিজেকে সামলাতে পারলো না। হাসতে লাগলো।
.
.
আরো কিছু দিন পর….
রিপার শরীরটা দিনদিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
এক রাতে ঘুমের ভিতরে,,,
ওমা…..গো,,,,মা……গো…..বলে চিৎকার করে উঠলো ঘুমের ভিতরে। ইমরান লাফিয়ে উঠলো।
রিপা কী হয়েছে??
আমার পেটে অনেক পেইন করছে ইমরান। ব্যাথায় রিপার কলিজা পর্যন্ত ছুঁয়ে গেছে। এদিকে রিপার শরীর থেকে পানি ভাঙতে থাকে সেই বিকাল থেকেই কিন্তু রিপা বুঝতে পারেনি। আর ইমরানকে ও কিছু বলেনি।
ইমরান তড়িঘড়ি করে রিপাকে কোলে তুলে গাড়িতে বসিয়ে তুহিনকে কল দিলো।
তারপর গাড়ি স্টার্ট দিলো। খুব জোড়ে গাড়ি চালিয়ে হসপিটালে পৌঁছালো।
হসপিটালে রিপাকে কোলে তুলে হাঁটছে আর চিৎকার করে কাঁদছে।
তুহিন দৌড়ে এসে বলে দোস্ত তুই শান্ত হহহ আমি ডক্টরের কাছে যাচ্ছি।
ডক্টর এসেই রিপাকে দেখে বলে এখুনি পেশেন্টের অপারেশন করতে হবে।
ডক্টর আপনি যা করেন কিন্তু রিপার যেনো কিছু না হয়।
রিপাকে ওটির ভিতরে ঢোকানো হলো।
একটুপরে ডক্টর বেরিয়ে এসে বলে জরুরী ভিত্তীতে ১ পাউন্ড রক্তের ব্যবস্থা করেন। রক্তের গ্রুপ 0+।
ইমরান আমার রক্তের গ্রুপ 0+ পজেটিভ।
তাহলে দ্রুত করেন। তুহিন রক্ত দিলে তারপরে সাথে সাথে অপারেশন শুরু করে।
ইমরান বাহিরে বারবার পায়চারী করছে। ওটির রুমের লাইট জ্বলছে। দীর্ঘ ৫০ মিনিট পরে ওটির লাইট অফ করা হয়।
-ডক্টর রিপা কেমন আছে??
-“আপনার টুইন বেবী হয়েছে। এক ছেলে,,এক মেয়ে কংগ্রেচুলেশন। পেশেন্টের শরীরে রক্ত শূন্যতার অভাব হয়েছে প্লিজ খেয়াল রাখবেন। কারণ শরীর থেকে বেশ অনেকটা রক্ত বেড়িয়ে গেছে। কিছুদিন পর আরো ১ পাউন্ড রক্ত দেওয়া লাগতে পারে প্রস্তুতি রাখবেন।
-“আচ্ছা। ডক্টর আমি কী ভিতরে যেতে পারি??
-“হুম। অবশ্যই। কিছুক্ষণ পর পেশেন্টকে কেবিনে শিফট করলে গিয়ে দেখে আসবেন।
-“ওকে।
রিপাকে ১০ মিনিট পরে কেবিনে শিফট করলো।
তুহিন গিয়ে ছেলেটাকে ইমরানের কোলে দিলো। ইমরান বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে থেকে হাসলো।
ছোট ছোট হাত পা নাড়াচাড়া করছে ইমরানের কোলে। চোখ খুলছে না বাচ্চাটা।
তুহিন ও চোখ খুলছেনা কেনো?
-“আরে দোস্ত ধীরে ধীরে খুলবে। একটু অপেক্ষা কর।
ইমরান বুঝতে পারলো বাবা হওয়ার অনুভূতিটা কী??
ভাবতেই চোখের কোণে পানি এসে পড়ে।
প্রায় ১ ঘন্টা পরে রিপার জ্ঞান ফিরলো।
.
ইমরান তাকিয়ে হাসছে। রিপা আমাদের টুইন বেবী হয়েছে। রিপা ও হাসছে। আলহামদুলিল্লাহ দুজনের মনে আসা পূরণ হলো।
এবার এরাই আমাদের সব। এদেরকে মানুষের মতো মানুষ করবো। আল্লাহ চাইলে ছেলেকে মাদ্রাসায় হাফিজী পড়াবো।
.
ইমরান এগিয়ে এসে রিপার হাত ধরে বললো,,
ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তোমার মনের আসা পূরণ করুক আমিন।
.তুহিন এসে ইমরানের মেয়েকে রিপার পাশে রেখে বললো,,,মাসআল্লাহ টুইন বেবী দুটো বাবা মায়ের মতোই হয়েছে।
.
.
.
সমাপ্ত।।
গল্পটা কেমন হয়েছে জানিনা। তবে চেষ্টা করেছি বাস্তবতা ফুটিয়ে তোলার জন্য। অনেকে রিপার চরিত্রটাকে মেনে নিতে পারছেনা। কিন্তু আমি বলবো বাস্তবে এমন হাজারো রিপা আছে যারা শুধুমাত্র স্বামীর অবহেলায় অবৈধ-সম্পর্কে লিপ্ত হয়। খুব কম স্বামী আছে যারা তার বউয়ের ভুল ক্ষমা করে দেয়। কিন্তু এমন ইমরান ও সমাজে অনেক আছে। আর এদের আল্লাহ হেদায়েত দান করুক আমিন।(লেখিকার কথা)
💜💜💜💜💜💜💜