অব্যক্ত প্রিয়তমা পর্ব ১৭+১৮

#অব্যক্ত_প্রিয়তমা
#ফাতেমা_তুজ
#part_17

অনিন্দিতা কে কেবিনে নেওয়া হয়েছে। আপাততো তাকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পারিয়ে রাখা হয়েছে। ডাক্তারের চোখে মুখে সামান্য তিক্ততা। নির্ভীক কে দেখে বললেন
” আপনি পেসেন্ট এর হাসবেন্ড ? ”

” আমি ওনার

নির্ভীক উত্তর খুঁজে পায় না। পর পর ফাঁকা ঢোক গিলে নেয়। বলে
” আমি ওনার রিলেটিভ ”

” ওহ আসুন আমার সাথে। ”

নির্ভীকের মনে ভয় বাসা বাঁধে। ডাক্তার এর সাথে কেবিনে চলে আসে। সিটে বসতে বসতে বলে
” ওনার কোনো বড় সমস্যা হয় নি তো ডক্টর ? ”

” এক্সচেলি মিস্টার ”

” নির্ভীক, নির্ভীক মাহতাব ”

” মিস্টার নির্ভীক ওনি মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পরেছেন। আর পেটে ব্যথার কারন সময় মতো খাওয়া দাওয়া না করা। একটা কথা বলুন তো ওনার কি বিয়ে হয়েছে ? ”

” নো ডক্টর। ”

ডাক্তার একটু চিন্তিত হলেন। নির্ভীকের গলায় যেন কথা আটকে গেছে। কাঁপা স্বরে বলল
” ডক্টর সী ইজ ফাইন ? ”

” এক্সচেলি মিস্টার নির্ভীক আমি যা বুঝেছি তাঁতে ওনি কোনো বিষয় নিয়ে অধিক চিন্তিত। ওনার মস্তিষ্ক শুধু সেই কথাতেই আবদ্ধ থাকে। কিন্তু সে আশানুরূপ কোনো ফল পায় না। যাঁর কারনে ব্রেনে চাপ পরেছে আর ওনার মস্তিষ্ক সঠিক ভাবে কাজ করছে না। আপনি বুঝতে পারছেন আমি কি বলেছি ? ”

নির্ভীকের চোখ দুটো কেমন হয়ে গেছে। ডাক্তার এর কন্ঠে হতচকিয়ে যায়। জ্বিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে
” ইয়েস ডক্টর। ”

” ওনি মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পরেছেন। ভালো সাইকোলজিস্ট ডাক্তার দেখাতে হবে। তাহলে ওনি ঠিক হবেন। আর একটা কথা ওনার যদি প্রেমের সম্পর্ক থাকে তাহলে সেটা কিন্তু আরো বিপজ্জনক। ”

নির্ভীক কোনো কথা বললো না। ডাক্তার এর কেবিন থেকে বেরিয়ে সোজা অনিন্দিতার কেবিনে চলে আসলো। হাতে ক্যানেলা লাগানো , নিস্তেজ দেহে হসপিটালের পোষাক। বুকের ভেতর ভীষন যন্ত্রণা হতে লাগলো। অনিন্দিতার ডান হাত বুকে চেপে ধরলো। ডুকরে কেঁদে উঠলো সে। পর পর কয়েক টা চুমু খেয়ে বলল
” আম স্যরি অনিন্দিতা , আম স্যরি , প্লিজ আমাকে মাফ করে দিন। আপনি ফিরে আসুন, অগের মতো হয়ে যান অনিন্দিতা। আমাকে ঘৃনা করুন তবু ও ভালোবাসবেন না প্লিজ। আপনি যে পাগল হয়ে যাচ্ছেন। শেষ হয়ে যাবেন আপনি। আপনার পতন আমি কি সহ্য করবো ? ”

.

অনিন্দিতা কে আজকেই রিলিজ করা হবে। সবাই চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে আছে। ডাক্তারের সাথে কথা বলছে নির্ভীক। শাহানার চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। পৃথিবী ও চলে এসেছে। হীর আসার জন্য পাগল হয়ে গেছে। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় কেঁদে অবস্থা খারাপ। আরশাদের মাথা ঠিক নেই। বড্ড ভালোবাসেন মেয়ে কে। আর প্রিয়জনের অসুস্থতা ওনার জীবনে ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে। পুরুষ মানুষ বিধায় কাঁদতে পারছেন না তিনি। নাহলে হসপিটালেই হাউ মাউ করে কাঁদতেন । নির্ভীক বের হতেই শাহানা ছুটে যান। ব্যগ্র কন্ঠে বললেন
” ডক্টর কি বলেছেন নির্ভীক ? ”

” শান্ত হোন আন্টি। অনিন্দিতার মানসিক পরিস্থিতি একটু ভিন্ন। অতিরিক্ত চিন্তার ফলে ব্রেন কাজ করছে না। আর হচ্ছে অসহ্য মাথা ব্যথা। ”

” ডাক্তার কি বললেন? ”

” ভালো সাইকোলজিস্ট দেখাতে। আপনি চিন্তা করবেন না আমার একজন বন্ধু উঁচু পদের সাইকোলজিস্ট । যদি ও ওহ এখন কানাডা আছে বাট আমি ওকে বিডি তে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করবো। ”

” আচ্ছা তাই করো। ”

সকলে অনিন্দিতার কেবিনের দিকে অগ্রসর হয়। আর নির্ভীক যায় উল্টো পথে। এলো মেলো তাঁর পথ। তাঁর অন্তকর্নে ব্যথা অনুভব হয়। হসপিটাল থেকে বেরিয়ে একটা টং এর দোকানে বসে। কিছুক্ষন মাটি তে পা দিয়ে আঁকিবুকি করে। ঘাড় ঘুরিয়ে বলে
” মামা একটা চা দিবেন তো। মিষ্টি ছাড়া শুধু লিকারের চা। ”

কিছুক্ষন পর চা দিয়ে যায়। চায়ের কাঁপে চুমুক দেয় নির্ভীক । অনুভব করে মাথার উপর আকাশ ভেঙে পরেছে। বুকের ভেতর কেমন ভারী অনুভব হয়। চোখ দুটো কেমন করছে খানিকটা জ্বলছে ওহ। কান্না আসতে চাইছে কেন ?

মাটির খোঁড়া টা ফেলে দেয় নির্ভীক। ভেঙে গুরিয়ে যায় সেটা। অবাক হয় নির্ভীক। অনিন্দিতা কে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়ার কারনেই বুঝি অনিন্দিতা ভেঙে ঘুরিয়ে যাচ্ছে। এলোমেলো চোখে ছলছল করে উঠে। একটা লোক দোকান দার কে সিগারেট দিতে বলেন। লোকটা সিগারেটে সুখ টান দিতেই তাঁর মুখে হাসি ফুটে। আগ্রহ জাগে ছেলেটার । কখনো সিগারেট খাওয়া হয় নি। লোকে বলে নিকোটিনের ধোঁয়া কষ্ট দূর করে। বেঞ্চ থেকে উঠে দাঁড়ায় সে। পকেট থেকে টাকা বের করে বলে
” মামা একটা সিগারেট দিন তো । ”

সিগারেট দিতেই ক্ষুধার্ত বাঘের মতো নিয়ে নেয় সে। আগুন ধরিয়ে মুহূর্তেই সিগারেট টা শেষ করে দেয়। আরো লাগবে , আরো কালো ধোঁয়া তে হৃদয় কে আবৃত্ত করতে হবে। এভাবে বাঁচা যে সম্ভব নয়। এক প্যাকেট সিগারেট কিনে চলে আসে নির্ভীক। এলোমেলো চুল গুলোতে হাত বুলায়। আহত হৃদয় নিয়ে পার্কে চলে আসে। এই অসময়ে পার্কে কেউ আসে না। কারন মাত্র বাজে ভোর সাড়ে পাঁচ টা। একের পর এক সিগারেট শেষ করে নির্ভীক। কষ্ট গুলো নিকোটিন হয়ে ছড়িয়ে যায়। তবুও কষ্ট লাঘব হয় না। বুকের ভেতর চিন চিন ব্যাথা হয় শরীরের প্রতি টা লোম কূপ কেঁপে উঠে। শেষ সিগারেট টা অর্ধেক খেয়ে ফেলে দেয়। পায়ের কাছে পরে আছে এক প্যাকেট সিগারেটের অর্ধেক অংশ। আকাশের দিকে তাকায় সে। মৃদু আলো এসে চোখে লাগে। চিৎকার করে উঠে নির্ভীক। ঘাসের উপর হাঁটু গেড়ে বসে চাঁপা কান্নায় ভেঙে পরে। মুখ দিয়ে উচ্চারিত হয় একটাই নাম
” অনিন্দিতা, অনিন্দিতা, অনিন্দিতা ”

রক্ত লাল চক্ষু নিয়ে বসে আছে নির্ভীক। মানুষের সমাগম বাড়তেই উঠে বসে। এই মুহুর্তে হসপিটালে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই ফোন করে বলে বাসায় ফিরে যাচ্ছে। বাসায় ফিরে এসে লম্বা সাওয়ার নেয়। গাঁয়ে টাওয়াল পেঁচিয়ে ফোন দেয় রোজ কে। ওপাশ থেকে উদ্বিগ্ন কন্ঠ ভেসে আসে। নির্ভীক বলে
” ইশরাক কে কল করে বল বিডি তে আসতে বল। ”

” হোয়াট। আমি ওকে কি করে কল করবো ? তুই তো জানিস ই সবটা। ”

” চাইলেই সব টা ঠিক করা যায় রোজ। আর ইশরাক কে আমার লাগবে। অনিন্দিতার ট্রিটমেন্ট করানোর জন্য। ”

” আমি তোকে নাম্বার দিচ্ছি তুই কল করে নে। আর আমি সিলেট থেকে আজ ই ঢাকাতে আসছি। ইশরাকের পুরনো নাম্বার কাজ না করলে ওর মেডিকেলে কল করিস পেয়ে যাবি। ”

” ওকে। আর দ্রুত ফিরে আয় আমি আর পারছি না। ”

ওপাশ থেকে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। নির্ভীক ফোন টা বেডে ফেলে রাখে। চোখ থেকে বেরিয়ে আসে কয়েক ফোঁটা অশ্রু কনা। অশ্রু কনায় পরিপূর্ন হয় মেঝে। শুভ্র মেঝে তে অশ্রু কনা চিক চিক করছে ।

আজ তিন দিন ধরে অনিন্দিতা বিছানা ছেড়ে উঠে নি। শরীর প্রচন্ড রকমের অসুস্থ। থেকে থেকেই মাথায় যন্ত্রনা হয়। নির্ভীক কে এক পলক দেখার জন্য পাগল হয়ে গেছে। শাহানা খাবার এনে দিতেই চিৎকার করে উঠে। প্রচন্ড অবাক হয় সে। অনিন্দিতার চোখে মুখে উৎকন্ঠা। ভেজা গলায় বলে
” আমার ভালো লাগছে না কিছু। চলে যাও তোমরা , আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে না। ”

” অনি ”

” প্লিজ আম্মু রেহাই দাও আমাকে। প্লিজ ”

অনিন্দিতার কথা উপেক্ষা করে শাহানা এগিয়ে যান। অনিন্দিতার চোখ লাল হয়ে উঠে। শাহানার চোখ ফেটে সলিল গড়ায়। আঁচলে মুখ গুঁজে চলে যান ওনি । অনিন্দিতার পাগলামি বেড়ে যায়। হন্তদন্ত হয়ে বাইরে ছুটে আসে। আশে পাশে চোখ বুলিয়ে সোজা ছাঁদে চলে আসে। আজ শুক্রবার, আশে পাশে দৃষ্টি দিয়ে নির্ভীক কে পায় না সে। ভেঙে পরে কান্নায়। পেছন থেকে শীতল হাতের স্পর্শ অনুভব করে। নির্ভীকের ছোঁয়া চিনতে অসুবিধা হয় নি তাঁর। সিক্ত নয়নের সাথে মুখে হাসি ফুটে। এই তাঁর প্রিয় পুরুষ। সাদা শুভ্র রঙের পাঞ্জাবি পরে আছে সে। অনিন্দিতার দু গালে হাত রাখে নির্ভীক। একটু ঝুঁকে চোখের পানি মুছে দেয়। এলোমেলো চুল গুছিয়ে দেয়। আবেশে চোখ বন্ধ করে নেয় অনিন্দিতা। নিভীর্কের ঠোঁটে হাসি ফুটে। অনিন্দিতা কে একটু কাছে টেনে নেয় তবে দুরুত্ব বজায় রাখে। মুখে ফু দিতেই চোখ খুলে অনিন্দিতা। নির্ভীক বলে
” আমাকে দেখার জন্য এতো টা মরিয়া হয়ে গেছেন ? আমি আসলেই লাকি, তাই না অনিন্দিতা । তাহলে আপনি কি চান আমার অসম্মান? ”

” একদম ই নয়। ”

” তাহলে নিজেকে শান্ত রাখুন। আমাকে একদিন এই পৃথিবী থেকে চলে যেতে হবে তখন আপনি কি করে থাকবেন বলুন তো ? ”

” নির্ভীক ভাই এমন টা বলবেন না। আপনি না থাকলে আমি ও যে থাকবো না। ”

” একদম নয়। আমি না থাকলে ও আপনাকে থাকতে হবে। আল্লাহর দেওয়া জীবন কে অস্বীকার করা মানে মহামাপ। ”

” আপনাকে ছাড়া আমি থাকবো কি করে? ”

” হুসস কোনো কথা নয়। এখন আপনি ঘরে ফিরে রেস্ট নিবেন। আর কালকে সকালে আমরা ডাক্তারের কাছে যাবো। আপনার মাথায় অসহ্য যন্ত্রণা হয় তাই না ? ”

ভদ্র মেয়ের মতো মাথা ঝাঁকায় অনিন্দিতা। নির্ভীক হেসে বলে
” নিমিষেই যন্ত্রনা দূর হয়ে যাবে। ”

” আপনি আমার পাশে থাকবেন তো ? ”

” হ্যাঁ থাকবো। ”

” প্রমিস করুন ”

কথা টা হাত বাড়িয়ে দিয়েই বলে অনিন্দিতা। কিছুক্ষন ভাবে নির্ভীক। তারপর ই হাসি মুখে অনিন্দিতার হাতে হাত রেখে বলে
” প্রমিস আপনাকে নিয়ে কাল আমি ই হসপিটালে যাবো। আপনার যন্ত্রণা কমানোর জন্য যতদিন যেতে হবে ততোদিন ই যাবো। ”
#অব্যক্ত_প্রিয়তমা
#ফাতেমা_তুজ
#part_18

আকাশে কুয়াশা জমেছে। মেঘের মতো আবৃত করে নিয়েছে নিজের ঢাকনায়। আকাশ নাকি কুয়াশার আস্তরন ঠিক ঠাওর করা যাচ্ছে না। বিকেলের এই অপরূপ যেন সবার বুকে দাগ কেঁটে নিয়েছে। অপেক্ষা করছে নির্ভীক। ঘড়ি তে বার বার টাইম দেখছে মুখে ফুটে উঠছে বিরক্তি। পাশেই দোলনা তে দোল খাচ্ছে বাচ্চারা। তৃপ্তির রাজ্যে ভাসছে বাচ্চা গুলো। বুক চিরে বেরিয়ে আসে দীর্ঘশ্বাস। সাড়ে পাঁচ টায় আসে কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি টি। নির্ভীকের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয় ,তবে নির্ভীক হাত মেলায় না। তাতে যেন ছেলেটার কিছুই যায় আসে না। বিন্দু মাত্র অপমান বোধ করে না সে। সন্তপর্নে নির্ভীকের মুখোমুখি হয়। বুকে জড়িয়ে পিঠ চাপরে বলে
” কেমন আছিস ? ”

” যেমন টা দেখছিস ? যেমন টা ছিলাম কিংবা যেমন টা থাকবো। ”

” হেঁয়ালি পানা বন্ধ হবে না কোনোদিন ”

বিরক্ত হয় নির্ভীক। ইশারাকের দিকে আড়চোখে তাকায়। ছেলেটার মুখে চুইংগাম। এই বদ অভ্যাস টা এখনো যায় নি। ঠাটিয়ে থাপ্পড় মারতে ইচ্ছে হয় নির্ভীকের। তবে তেমন কিছু ই করে না সে। মুখের চুইংগাম ফেলে দিয়ে আরেক টা মুখে দিবে তখনি বাঁধা দেয় নির্ভীক। মেকি হাসি দেয় ইশরাক। ভ্রু কুটি করে নির্ভীক বলে
” আর একটা ও নয়। ”

” ওকে ওকে হাত টা তো ছাড়। ”

নির্ভীক হাত ছাড়তেই চুইংগাম মুখে পুরে নেয় ইশরাক। ফোঁস করে দম ফেলে নির্ভীক। ইশরাকের মাঝে কোনো পরিবর্তন ই নেই। নির্ভীক বলে
” তোর সাহায্যের প্রয়োজন। ”

” তা তো বুঝতেই পেরেছি। না হলে নির্ভীক মাহতাব আমাকে কল করবে ? আবার কানাডা থেকে আর্জেন্ট আসার কথা বলবে। পুরোই ড্রিম গেম তাই না ? ”

” শাট আপ ইশরাক। দেখ তোর সাথে আমি ঝগড়া করতে চাই না। প্রয়োজন না হলে তোর মুখ টা ও দেখতাম না। ”

ইশরাক উত্তর দেয় না। মুখ ভার করে ঘাসের উপর বসে পরে। দোকান থেকে নন অ্যালকোহল বিয়ার নিয়ে আসে নির্ভীক। বিয়ারের ক্যাপ খুলে বাড়িয়ে দেয় ইশরাকের দিকে। ইশরাক বিয়ারে চুমুক দিয়ে বলে
” বল কি করে সাহায্য করতে পারি। ”

” একজন কে সুস্থ করতে হবে। ট্রিটমেন্ট সহ মোটামোটি পাওয়ারফুল ঔষধ এর ব্যবস্থা ও করতে হবে । মানসিক ভাবে ভেঙে পরেছে তাঁকে সঠিক পথ দেখাতে হবে। ”

অবাক চোখে তাকায় ইশরাক। নির্ভীকের গাঁয়ে হাত দিয়ে বলে
” আর ইউ সিরিয়াস ? আমার কাছে এই বিষয়ের হেল্প চাইছিস ? ”

” হ্যাঁ আমি সিরিয়াস। তোর সাথে এখন একটাই সম্পর্ক সেটা হলো ডাক্তার আর পেসেন্ট। আমি জানি অতি শীঘ্রই তুই সুস্থ করে দিতে পারবি। ”

ইশরাক ফ্যাল ফ্যাল করে তাকায়। নির্ভীক মুখ ঘুরিয়ে আছে। কিছুক্ষন ভেবে বলে
” আমার একটা শর্ত আছে। ”

নির্ভীক ভ্রু কুঁচকে তাকায়। ইশরাকের চোখে মুখে অসহায়তায় ভরপুর।নির্ভীকের প্রয়োজন পরে না ইশরাকের শর্ত শোনার। মুখে কাঠিন্য এনে বলে
” আমি চেষ্টা করবো। ”

ইশরাকের চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠে। নির্ভীক কে জড়িয়ে বলে
” থ্যাংকস দোস্ত। ”

” থ্যাংকস এর প্রয়োজন নেই। আমি শুধুই বিনিময় প্রথা অবলম্বন করছি। এর বাইরে কিছু ভাবা তোর উচিত হবে না। ”

ইশরাকের মুখে তবু ও হাসি ফুটে থাকে। মনে জাগে বসন্তের গান। প্রান ভরে শ্বাস নেয়। নির্ভীকের পাশে বসে বিয়ারে শেষ চুমুক দেয়।

.

বাসায় ফিরে এসেছে প্রায় ঘন্টা খানেক।
অনিন্দিতা কে নিয়ে হসপিটালে যেতে হবে। সেই কখন রেডি হতে গেছে মেয়েটা। অথচ এখনো আসছে না। নির্ভীক বড্ড অধৈর্য হয়ে পরেছে। কাউচ থেকে উঠে গাঁয়ের শার্ট ঠিক করে সে। চোখে গ্লাস লাগিয়ে হাঁটা লাগায় অনিন্দিতার ঘরে। দরজা খোলা থাকলে ও উঁকি দেয় না নির্ভীক। হালকা কেশে বলে
” রুমে আসতে পারবো অনিন্দিতা? ”

” নির্ভীক ভাই ? ”

” হুম। আপনার লেট হচ্ছে কেন ? ”

” ঘরে আসুন। ”

অনিন্দিতার অনুমতি পেলে ও তৎক্ষনাৎ ঘরে আসে না নির্ভীক। মিনিট দেড়েক পর রুমে প্রবেশ করে। আয়নার দিকে মুখ দিয়ে কিছু একটা করছে মেয়েটা। চোখ নামিয়ে নেয় নির্ভীক। বরাবরের মতোই অনিন্দিতার বুক শেলফ এ হাত বুলায়। অনিন্দিতা আবারো প্রেমের বই এনেছে। তবে কিছুই বলে না নির্ভীক। বরং যত্ন করে বই গুলো সাইট করে রাখে। পেছন ঘুরতেই অনিন্দিতা কে দেখে থমকে যায়। পার্পল রঙের শাড়ি পরেছে মেয়েটা। পূর্ন যুবতী কে দেখে যে কেউ কয়েক খানা হার্ট বিট মিস করবে। নির্ভীক সে দিকে চোখ মেলে তাকাতে পারে না। চোখ ফিরিয়ে বলে
” শাড়ি না পরলে ও চলতো। ”

” শাড়ি পরলে আমাকে সুন্দর লাগে না নির্ভীক ভাই ? ”

” সেটা নয়। আসলে ঘটা করে শাড়ি পরে ডাক্তারের কাছে নিশ্চয়ই কেউ যায় না ? ”

” সেটা ঠিক। তবে শাড়িতে বউ বউ ফিল হয়। নির্ভীক মাহতাবের বউ । ”

কথাটা বলেই ফিচেল হাসে অনিন্দিতা। অনিন্দিতা কে অবাক করে দিয়ে নির্ভীক কড়া কথা শোনায় না। বরং ঠোঁটের কোনে স্বচ্ছ এক হাসি ফুটিয়ে বলে
” আপনাকে বরাবর ই সুন্দর লাগে। ”

” তাহলে কেন ভালোবাসেন না আমায় ? ”

” সূর্য কে কেমন লাগে আপনার ? ”

” অবশ্যই সুন্দর। ”

” সূর্যের দিকে হাত বাড়াতে ইচ্ছে হয় ? ”

” হয়। তবে সেটা তো অসম্ভব। ”

” ঠিক তেমনি , আপনি আমার কাছে সূর্যের মতো। যাঁর দিকে হাত বাড়ানো অসম্ভব। আপনাকে স্পর্শ করলে আমি জ্বলসে যাবো অনিন্দিতা। ”

ভিজে চোখে তাকায় অনিন্দিতা। সিক্ত নয়নের মাঝে হাসি ফুটিয়ে বলে
” তবে আমি কি কলঙ্ক নির্ভীক ভাই ? ”

” ছিই। কি সব বলছেন। কলঙ্ক কেন হতে যাবেন। আপনি স্বচ্ছ কাঁচের মতো , যাঁর এপিঠ থেকে ওপিঠ স্পষ্ট। ”

” তাহলে ”

” কোনো কথা নয় অনিন্দিতা। এবার আমরা বের হবো। আপনি আমাকে বলেছিলেন ভদ্র মেয়ের মতো যাবেন। ”

বা হাতের তর্জনির সাহায্যে চোখ মুছে অনিন্দিতা। একটু করে হেসে বলে
” ঘুরতে নিয়ে যাবেন। ”

” এই সন্ধ্যা তে যাওয়া কি ঠিক হবে। ”

” আপনার কাছে আমি নিরাপদ। আমার কোনো সমস্যা নেই। তবে যদি আপনি খুব বেশি বিরক্ত হন তো যাওয়া লাগবে না।”

অনিন্দিতার দিকে তাকায় নির্ভীক। আঁচল টা এলোমেলো হয়ে আছে। অনিন্দিতার আঁচল টা গুটিয়ে হাতে ধরিয়ে দেয় ছেলেটা। হেসে বলে
” আমার পছন্দের রঙ তাই না ? ”

অনিন্দিতা মাথা ঝাঁকায়। নির্ভীকের চোখে পানি। অনিন্দিতার মায়াবী মুখে হাত বুলিয়ে বলে
” আপনার চোখের জল হাজারো মুক্ত দানার থেকে ও দামী। এই দামী সম্পদ কে এভাবে বিসর্জন দিবেন না। ”

” আমার জন্য অশ্রু কনা নিষিদ্ধ করে দিন নির্ভীক ভাই। তাহলে হয়তো আমি কাঁদবো না। ”

নির্ভীকের কাছে কোনো উত্তর নেই। সে বেরিয়ে যায়। অনিন্দিতার মুখোমুখি হতেই অন্তকর্নে জ্বালা অনুভব হয়। বার বার ভুল কার্য করে ফেলে। তবে এই কয়েক দিন ঠিক ভুল সব মেনে নিতে হবে তাকে। এটাই পরিস্থিতি , ভয়ঙ্কর এক পরিস্থিতি। বড্ড দোষী মনে হয় নিজেকে। নিজ কার্যে বিরক্ত সে। যে ভুল গুলো অতীতে করেছে সে , সেই ভুলের মাশুল গুনে চলেছে অনিন্দিতা। মেয়েটার একটাই দোষ সে ব্রাহ্মন হয়ে চাঁদে হাত বাড়িয়েছিলো।

অনিন্দিতা কে নিয়ে হসপিটালে যাচ্ছে নির্ভীক। মাঝ পথে অনিন্দিতা বায়না ধরে বলল
” আমাকে লেকের ধারে নিয়ে চলুন। ”

” এখন লেকের ধারে কেন যাবেন? ”

” পা ভেজাবো। ”

” অন্য একদিন যাবো । আজ লেট হয়ে যাচ্ছে। ”

” আজ ই যাবো। এমন করছেন কেন ? ”

” আমার কথা টা শুনুন। ”

” একদম নয়। আপনি আমাকে প্রমিস করেছেন। এখন প্রমিস ব্রেক করলে চলবে না। ”

কথা টা বলেই মুখ ভার করে বসে থাকে অনিন্দিতা । নির্ভীকের বুক চিরে বেরিয়ে আসে দীর্ঘশ্বাস। গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে যায় লেকের ধারে।সুন শান লেকে কারো উপস্থিতি পায় না নির্ভীক। একটু ভয়ার্ত কন্ঠে বলে
” এখানে কেউ নেই অনিন্দিতা। চলুন ফিরে যাই। ”

” আমি যাবো না নির্ভীক ভাই। কেউ না থাকলেই তো ভালো। পুরো লেক টা শুধুই আমার আর আপনার। ”

” অনিন্দিতা যাবেন না। ”

নির্ভীকের কথায় পাত্তা দেয় না অনিন্দিতা। শাড়ির আঁচল মেলে দিয়ে ছুটে যায় লেকের ধারে। নিষ্পলক চাহনি তে তাকিয়ে থাকে নির্ভীক। পাপর্ল রঙের শাড়ি টা যেন অনিন্দিতার জন্য ই তৈরি। নির্ভীক পিছু নেয় , অনিন্দিতার পাশাপাশি এসে বলে
” প্রেমে পড়ার মতো সুন্দর অনুভূতি বোধহয় কিছু তে নেই। যদি না থাকে কোনো আশংকা। ”

” একদম ঠিক। জানেন নির্ভীক ভাই। যখন আমি ক্লাস নাইনে পা দিয়েছি মাত্র , ঠিক তখনি আপনি আমার মন কেড়ে নিলেন। আপনার হুটহাট দেশে আসা যেন আমায় পাগল করে দিলো। অপেক্ষার দিন গুনতে থাকতাম। যখন দেখতাম আপনি এসেছেন মনে হতো পৃথিবীর সমস্ত সুখ যেন আমায় ঘিরে নিয়েছে। ধীরে ধীরে এই আপনি টা আমাকে ঘৃনা করতে লাগলেন। এতো টাই ঘৃনা করেন যে আমার সামান্য দৃষ্টি ও মেনে নিতে পারেন না। এতো টাই ঘৃনিত আমি যে আমার স্পর্শ পাওয়ার থেকে আপনার কাছে মৃত্যু কে সহজ মনে হয়। ”

শেষোক্ত কথা টা বলার সময় অনিন্দিতার ঠোঁট আলতো কেঁপে উঠে। সোডিয়ামের আলো তে সেটা স্পষ্ট দেখতে পায় নির্ভীক। চোখ দুটো সিক্ত হয়ে যায়। শরীরে অদ্ভুত যন্ত্রনা অনুভব হয়। নিষিদ্ধ এক ইচ্ছে জাগে তবে সে ইচ্ছে কে আগাতে দেয় না ছেলেটা। বুকে হাত গুঁজে নিঠাল দাঁড়িয়ে থাকে। তাঁর ই পাশে দাঁড়িয়ে থাকে অনিন্দিতা। দু চোখ মেলে দেখ তাঁর না হওয়া চাঁদ কে।

**

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here