অভিমান পর্ব -১৪

#অভিমান
#পর্বঃ১৪
#তানিশা সুলতানা

আজকে তোহা খুব খুশি। কারণ মেঘ অফিসে যাওয়ার আগে বলে গেছে আজকে বাড়িতে তোহার মা বাবা দাদা দাদি এক কথায় সবাই আসবে এখানে। সোই খতা শুনেই তোহা লাফানো শুরু করে দিয়েছে। মেঘ বলে গেছে দুপুরের খাবারটা বাড়িতে এসে খাবে। সকালে না খেয়েই চলে গেছে। অফিসে জরুরি কাজ আছেে।
লম্বা চুল গুলো আচড়ে নেয় তোহা। কাঠি দিয়ে চুল বেঁধে নেয়। মেঘ তোহার জন্য এতো এতো জামাকাপড় এনেছে। তোহা গোলাপি একটা থ্রি পিছ পড়ে নেয়।
রুম থেকে বেড়তে নিলেই মাথার মধ্যে চক্কর দিয়ে ওঠে। ফ্লোরেই বসে পড়ে তোহা।
দীর্ঘ পাঁচ মাস যাবৎ এই রোগটা ফিল করতে পারছে তোহা। থেকে থেকে মাথা ঘোরায়। চোখে অন্ধকার দেখে। শরীর দুর্বল তাই এমনটা হয়েছে এটা তোহার ধারণা। বাবা মাকে বললে টেনশন করবে তাই আর বলে নি। ফার্মেসি থেকে ডাক্তারকে বলে ঔষুধ এনে খেয়েছে। তাতেই একটু কমে।

পাঁচ মিনিট চোখ বন্ধ করে বসে থাকার পরে আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ায় তোহা। মেঘ বেরুনোর আগেই খাবার অর্ডার দিয়ে গেছিলো। সেই খাবার কিছুটা খেয়ে ব্যাগ থেকে ঔষুধ বের করে খেয়ে নেয়। তারপর আস্তে আস্তে হেঁটে কিচেনে চলে যায়।
নিপা রান্না করছে। তোহা নিপার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।
“নাম কি তোমার?
তোহা এক গাল হেসে জিজ্ঞেস করে।
” নিপা। আপনার?
মুখ বাঁকিয়ে বলে নিপা।
“তোহা। খেয়েছো কিছু? এতো বেলা হলো?
তোহা জিজ্ঞেস করে।
” হুমম স্যার দিয়ে গেছিলো খাবার।
নিপা একটু হেসে বলে
“গুড। তো রান্না কতদূর?
” প্রায় শেষ
আপনি রুমে গিয়ে বসে থাকুন আমি খাবার দিয়ে আসবো।
নিপা বিরিয়ানি নামাতে নামাতে বলে।
“আমি হেল্প করি না তোমায়।
” লাগবে না। স্যার দেখলে বকা দেবে।
তারাহুরো করে বলে নিপা।
“আরে কিচ্ছু বলবে না।
তোহা জোর করে নিপার সাথে কাজ করতে থাকে। বিরিয়ানি সাথে শেমাই। শেমাই তোহার খুব পছন্দ। তাই তো বলে শেমাইও রান্না করতে। তোহা রান্না পারে না। কখনোই রান্না করতে হয় নি। রান্না তো দুর রান্না ঘরেও ঢুকে নি কখনো। আগ্রহ নিয়ে নিপার থেকে শিখছে তোহা। যাতে দ্বিতীয় বার রান্না করতে পারে।
রান্না শেষ করতে করতে বারোটা বেজে যায়।
তোহা সকাল বেলা রুটি খেয়েছিলো। ভীষণ খিদে পেয়েছে। বিরিয়ানি আর সেমাই দেখে খিধে আরও বেরে গেছে। নিপারও নিশ্চয় খিধে পেয়েছে।

তোহা গোছল সেরে নেয়। নিপাহ ফ্রেশ হয়ে আসে। তারপর নিপাকে সাথে নিয়ে খেতে বসে। নিপা বসতে চায় না তোহা জোর করে বসায়।
” বলছিলাম আমি আপনার সাথে খাবো?
নিপা কিছুটা বিব্রত বোধ করে বলে।
“আপনি আপনি ছাড়ো তো। আমরা বেষ্টফ্রেন্ড এখন থেকে ওকে। আর প্রতিদিন তুমি আমার সাথেই খাবে।
নিপার প্লেটে বিরিয়ানি দিতে দিতে বলে তোহা।
নিপা তোহার কথা শুনে অবাক হয়। মালিকরা সাধারণত খুব অহংকারি হয়। কথাই বলতে চায় না। এর এই মেয়েটা ওর সাথে বসে খেতে বলছে।

” দুপুর তো হয়েই এলো তুমি তোমার বরের জন্য অপেক্ষা করবে না? এক সাথে খেতে পারতে তো।
নিপা বলে।
তোহা চমকে ওঠে৷ নিপার দিকে এক পলক তাকায়।
সত্যিই তো মেঘের জন্য অপেক্ষা করা উচিৎ ওর। যেহেতু মেঘ বলে গেছে আজ দুপুরে বাড়িতে এসে খাবো।
তোহা হাত গুটিয়ে নেয়।
“থ্যাংক্স। আসলে আমি ভুলেই গেছিলাম। প্রচন্ড খিধে পেয়েছে তো তাই। আচ্ছা এক কাজ করো। তুমি খেয়ে নাও আমি ওনাকে কল করি দেখি কতো দুর।
” আমি
নিপা বলতে নেয়। তোহা বাঁধা দিয়ে বলে।
“কোনো এক্সকিউজ না। খাবে তুমি। যতোটা পারো ততোটাই খাবে। আসছি আমি
নিপা কৃতজ্ঞতার হাসি হাসে। প্রথমে ভেবেছিলো তোহা হয়ত খুব অহংকার হবে। মেঘ রাজের বউ বলে কথা। কিন্তু এখন তো উল্টো টা দেখছে।

রুমে এসে ফোনটা হাতে নেয় তোহা। কালকেই মেঘ নতুন ফোন দিয়েছে তোহাকে৷ আর তোহার ফোনটাও নিয়ে নিয়েছে। মেঘের নাম্বার সেভ করাই ছিলো। তাই আর খুঁজতে হলো না। কল দেয়।
প্রথমবার রিং হতে হতে কেটে যায়। তোহা বেশ বিরক্ত হয়। ফোন রেখে যায় কোথায়। আবারও কল দেয়। এবারও তাই। রাগ হয় তোহার। কল দিতেই থাকে দিতেই থাকে।
চুয়ান্ন বার কল দেওয়ার পর পঁয়তাল্লিশ বারের মাথায় কল রিসিভ হয়।
” কি মনে করেন নিজেকে? হাঁদারাম একটা। কখন থেকে কল করছি। সেলিব্রিটি হয়ে গেছেন। এটিটিউট দেখানো হচ্ছে আমাকে। শুনুন আমি দরজার ছাড়া আপনাকে কখনোই কল করবো না। নেহাৎ আজকে খিধে পেয়েছে তাই।
এক নাগারে কথা গুলো বলতে থাকে তোহা।
“ম্যাম আমি শুভ
শুভ রিনরিনিয়ে বলে। তোহার একদমে এতোগুলো কথা বলা শুনেই ভয় পেয়ে গেছে শুভ।
তোহা দাঁত দিয়ে জিভ কাটে। ছি ছি ছি কি ভাবলো শুভ।
” আপনার বন্ধু কোথায়?
আস্তে করে বলে তোহা।
“মেঘ তো বাড়িতে চলে গেছে। ভুলে ফোনটা রেখে গেছে।
কথাটা শুনেই তোহা কল কেটে দেয়। কপাল চাপকে পেছনে তাকাতেই চমকে ওঠে। মেঘ বুকে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে।
” আআপনি
থেমে থেমে বলে তোহা।
“তুমি একদমে এতোগুলো কথা বলতে পারো? বিশ্বাসই হচ্ছে না৷
” তো বলবো না। কখন থেকে অপেক্ষা করছি। খিধে পেয়েছে। পেটে হাত বুলিয়ে বলে তোহা।
“তো খাও নি কেন?
মেঘ টাই খুলতে খুলতে বলে।
” বললাম তো মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। তাই অপেক্ষা করছিলাম। পাঁচ মিনিট দিলাম।
বলেই তোহা চলে যায়। মেঘ বুকে হাত দেয়। আহা

বাড়ির সবাই রেডি হয়েছে মেঘের বাড়িতে যাওয়ার জন্য। মায়া এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে। যাবে না মায়া। তোহার সামনাসামনি হওয়ার ইচ্ছে ওর নেই। কেমন বাঁকা বাঁকা কথা বলে।
আকাশ কেমন তাকিয়ে থাকে তোহার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে। নিজেকে বড্ড অপরাধি মনে হয় মায়ার। নিজেকে জেদের বসে নিজের ভালোবাসাকে পাওয়ার জন্য দুটো মানুষকে আলাদা করেছে ও। কখনোই সুখি হবে না মায়া৷ এটা মায়া বুঝে গেছে।
“জোর করে পাগলামি করে শুধু পাগল উপাধি টাই পাওয়া যায়
কারো ভালোবাসা না”
হারে হারে বুঝে গেছে মায়া।

একে একে সবাই বেরিয়ে যায়। কেউ মায়াকে একবার জিজ্ঞেসও করে না যাবে কি না। অবহেলায় পড়ে থাকে এই বাড়িতে। না খেয়ে থাকলেও কেউ জিজ্ঞেস করে না খেয়েছে কি না।
আকাশ তো ফিরেও তাকায় না।
সবাই বেরিয়ে যেতেই ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়ে মায়া৷ হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে।
“জীবনের খুব বড় ভুলটা করে ফেলেছি আমি৷ এখন কি করবো আমি?

আজ একটা খুব সুন্দর অনুভুতির সাথে পরিচিত হলো মেঘ। তোহা আর মেঘ এক সাথে বসে খেয়েছে। খাওয়ার সময় তোহা এটা সেটা অনেক গল্প করেছে। মাকে কোন ঘড়ে থাকবে। দাদিমাকে কতোদিন পরে দেখবে। বাবাকে জড়িয়ে ধরবে।
এসব গল্পই করেছে। মেঘ মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে ছিলো তোহার দিকে।
” খুব মিছ করো না সবাইকে?
তোহার হাতের ওপর হাত দিয়ে বলে মেঘ।
“হুমম খুব। আসলে আমি তো বাবা মাকে ছাড় কখনো থাকি নি।
” সব ঠিক হয়ে যাবে।
“হুমমম
তোহা মুচকি হেসে বলে।

চলবে
রিচেক দেওয়া হয় নি। বানান ভুল হলে একটু মানিয়ে নেবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here