গল্প:- #অভিযোগ_গুলা_কি_অযৌক্তিক?
পর্ব:-০৫
লেখা:- AL Mohammad Sourav
।
আমার বউয়ের সাথে এমনিতে ভূল বুঝাবুঝি হচ্ছে তার উপর আজকে আমাকে দেখছে অন্য একটা মেয়েকে আমি বাইকে বসিয়ে নিয়ে যাচ্ছি আবার মেয়েটা আমার কাদের উপর হাত রেখে বসে আছে। এই গঠনার পরে নিশ্চৎ রুপা আর আমাকে বিশ্বাস করবে না। এখন যেই টুকু আশা ছিলো সেই টুকু শেষ হয়ে গেছে। এখন আমার মনে হচ্ছে ডির্ভোস হতে সময়ের অপেক্ষা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। আমি মেয়েটাকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে নামিয়ে দিয়ে চলে আসবো তখনি মেয়েটা বলে,,
মেয়ে:- ভাইয়া ধন্যবাদ আপনাকে। আপনি যে আমার কতবড় উপকার করছেন আমি বলে বুঝাতে পারবো না।
সৌরভ:- ধন্যবাদ দিতে হবে না। মানুষ বিপদে পড়লে মানুষ এগিয়ে আসবে এইটাই তো নিয়ম। আমি যদি আপনাকে না নিয়ে আসতাম তাহলে অন্য কেউ নিয়ে আসত। এখানে ধন্যবাদ দেওয়ার কিছু নেই। আচ্ছা আপনার দেরী হয়ে যাচ্ছে আপনি যান বলেই চলে আসতেছি তখনি একজন লোক এসে বলে,,,
আরে তুমি রুপার জামাই না?
সৌরভ:- হ্যা। (ঠিক তখনি লোকটা বলে উঠে) মাত্র অল্প কিছু দিন হলো রুপা রাগ করে বাপের বাড়ীতে গেছে। আর এর মাঝে তুমি অন্য মেয়ে নিয়ে বাইকে করে এদিক সেদিকে গুরে বেড়াচ্ছো? রুপা তো বলেছে তোমার পরিবারের লোকজন খারাপ আর এখন তো দেখছি তুমি সবচেয়ে বড় খারাপ।)
সৌরভ:- সরি। আপনি কে? আর আপনি কোনো কিছু না জেনে বুঝে কেন এসব কথাবার্তা বলছেন? তখনি লোকটা বলে,,
আমি কে সেটা তুমি জানতে পারবে তবে আমি রুপাকে বলবো তোমার এসব কথাবার্তা! রুপা তো তোমাকে কত ভালোবাসে আর তুমি? ছিঃ তোমার থেকে অন্তত এইটুকু আশা করেনি রুপা! আমি রুপার বাবাকে বলবো যাতে করে তোমার কাছে আর কখনো রুপাকে না দেয়।
সৌরভ:- দেখুন আপনার ভূল হচ্ছে। আর আমি রুপাকে অনেক ভালোবাসি। প্লিজ আপনি আগে আমার কথাটা শুনেন। তখনি ওনি বলে,,,
তোমার কথা কি শুনবো আর বিশ্বাস করবো। নিজের চোখে যা দেখেছি তার মধ্যে আর কি বাকী আছে বিশ্বাস করার। রুপা তোমাকে ডির্ভোস দিতে চাচ্ছে এইটা রুপা সবচেয়ে ভালো সিদ্যান্ত নিয়েছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে ডির্ভোস কাগজটা তুমি হাতে পেয়ে যাবে।
সৌরভ:- দেখুন আপনি আমার কথাটা তো শুনবেন?আমি তো ঐ মেয়েটাকে সাহায্য করেছি। ঐ মেয়েটার ঠিক তখনি ওনি আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,, দেখো এখন ধরা পড়ে গেছো কত রকম বানিয়ে কথা বলে আমাকে বুঝাতে চায়বে। আমি এসব বুঝি আমার মাথার চুল এমনি এমনি পাকে নাই। এই কথা বলে ওনি চলে গেছে। আমিও আর বুঝাতে চায়নি কারণ এখন আমার সময় খারাপ যতই বুঝাতে যাবো ততই ওল্টটা বুঝবে। তবে কে ওনি? আমাকে চিনে আমি চিনি না। মনে হয় রুপাদের কোনো আত্বীয়স্বজন হবে। আবারো একটা বড় ধরনের সমস্যা পড়ে গেলাম। এবার মনে হচ্ছে রুপার প্রতি আশা একে বারে ছেড়ে দিতে হবে। এখন আর ডির্ভোস আটকানো আমার পক্ষে সম্ভব হবে বলে মনে হচ্ছে না।
বাইক চালিয়ে এরিই মাঝে অফিসে এসেছি। কাজের প্রতি একেবারে মনোযোগী হতে পারছি না। ব্যবসা আগের চায়তে অনেকটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। চিন্তা করতে করতে নিজের শরীর আর মানুষিকতা একদম খারাপ হয়ে যাচ্ছে। নাহ এভাবে আর চিন্তা করা ঠিক হবে না শ্বশুর মশাইকে একটা ফোন করি বলেই মোবাইলটা হাত থেকে বের করেছি তখনি দেখি রুপার বাবা মানে আমার শ্বশুরের নাম্বার থেকে ফোন আসছে। আরে এই তো দেখছি মেঘ না চাইতে বৃষ্টি। ফোনটা রিসিভ করে আস্সালামু আলাইকুম বলা শেষ করার আগেই ওনি বলে,,
রুপার বাবা:- সৌরভ তুমি যেখানে থাকো না কেনো খোব তাড়াতাড়ি আমাদের বাসায় আসো।
সৌরভ:- হ্যা আসছি বলেছি তার মাঝে ফোন কেটে গেছে টু টু। আমি কোনো কিছু না ভেবেই সব কাজ রেখে আবার বাইক নিয়ে বেড়িয়ে গেলাম রুপাদের বাড়ীর উদ্দেশ্য। প্রায় চল্লিশ মিনিট পরে জ্যাম ঠেলে অনেক কষ্টে রুপাদের বাড়ীর সামনে এসেছি। যখনি গেইট দিয়ে ঢুকতে যাবো তখনি দারোয়ান বলে।
ভাই সাহেব বাড়ীর ভিতরে আপনাকে ঢুকতে দিতে বারণ করেছে ম্যাডাম। প্লিজ আপনি চলে যান।
সৌরভ:- তুমি এক কাজ করো বাড়ীর ভিতরে গিয়ে বলো আমি এসেছি।
দারোয়ান:- দেখুন ভাই সাহেব ম্যাডাম আমাকে নিষেধ করে দিছে। আর রুপা আপা আমাকে বলে দিছে আপনি কোনো কিছু দিলে সেই গুলি যেনো ওনার কাছে না নিয়ে যায়। যদি নিয়ে যায় তাহলে আমার চাকরি থেকে বের করে দিবে। ভাই সাহেব নতুন বিয়ে করেছি এখন যদি চাকরিটা চলে যায় তাহলে বুঝতে তো পারছেন কি অবস্থা হবে আমার!
সৌরভ:- এত বেশী বক বক না করে তোমার বড় সাহেব মানে আমার শ্বশুর মশাইকে গিয় বলো আমি এসেছি। ওনি আমাকে ডেকেছে কথাটা বলে শেষ করতে পারিনি এর মাঝে দারোয়ানের ইন্টারকমে ফোন এসেছে। দারোয়ান ফোন উঠাতে জ্বি আচ্ছা বলে রেখে দিয়ে বলে,,,
দারোয়ান:- ভাই সাহেব ক্ষমা করে দিবেন আমাকে আমি বুঝতে পারিনি। আপনি ভিতরে যান বড় সাহেব বলেছে।
সৌরভ:- ঠিক আছে আমি কিছু মনে করিনি। আর তাছাড়া এখানে তোমার দোষ কোথায়? তুমি তো তোমার ডিউটি পালন করেছো। বাড়ীর ভিতরে ঢুকেছি আমাকে দেখেই শ্বাশুরী বলে,,
রুপা মা:- তুমি আবার এসেছো? আর দারোয়ান তোমাকে ভিতরে ঢুকতে দিলো কেনো? দারোয়ানকে বারণ করা সত্যেও তোমাকে ভিতরে ঢুকতে দিলো? আমি আজকেই দারোয়ানকে চাকরি থেকে বের করে দিবো। তুমি এখুনি বাড়ী থেকে বেড়িয়ে যাও বলতেছি। ঠিক তখনি শ্বশুর এসে বলে,,
রুপার বাবা:- রুজির মা কি হয়ছে এমন ভাবে সৌরভের সাথে ব্যবহার করতেছো কেনো? তখনি শ্বাশুরী বলে,,,
রুপার মা:- কি এমন ব্যবহার করেছি? তুমি সবটা জানলে ওকে নিজেই ঘার ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবে।
রুপার বাবা:- আমি সব জানি আর সৌরভকে আমি বাড়ীতে ডেকে অানছি।
রুপার মা:- কেনো ওকে ডেকে আনছো? শুনো আমি কিন্তু রুপাকে আর ওর সাথে সংসার করাবো না। আমি রুপাকে অন্য কোথাও বিয়ে দিবো।
রুপার বাবা:- তোমাকে বেশী কথা বলতে বলেছি? তুমি এখন যাও সৌরভ এসেছে গিয়ে ভালো কিছু রান্না করো। সৌরভ তো হাঁস খেতে পছন্দ করে যাও গিয়ে রান্না করো।
রুপার মা:- আমি পারবো না এসব রান্নাবান্না করতে। আমি আমার মেয়েকে ওর সাথে দিবো না বলেই ওনি চলে যাচ্ছে তখনি শ্বশুর কিছুটা বিনিয় হয়ে বলে,,,
রুপার বাবা:- সৌরভের একা পছন্দ নাকী? আমারো খেতে ইচ্ছে হয়ছে তাই বলেছি। (তখন দেখি শ্বাশুরী চলে গেছে। তখন শ্বশুর আমাকে বসতে বলে এর পর বলে) তা বাবা সৌরভ কেমন আছো সেটা বলো? (আমি তো ভালো নেই তাও কিছুটা মুখে হাসি নিয়ে বলি)
সৌরভ:- জ্বি আব্বু আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তা আপনার ব্যবসার সফর কেমন হয়ছে?
রুপার বাবা:- ভালো হয়ছে। (এরপর আমার ব্যবসার সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞেস করেছে এভাবে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলার পর শ্বশুর বলে) সৌরভ আমি বাড়ীতে এসে সবটা জানতে পারি। তোমার মা রুপার সাথে খারাপ আচরোন করে সেটা তো আমাকে রুপা অনেকবার বলেছে কিন্তু আমি প্রতিবার রুপাকে বলেছি শ্বাশুরীরা এমন একটু আট্টু করবে। এসব কিছু মেনে নিয়ে সংসার করতে হবে। তো হঠাত করে কি এমন হয়ে গেলো রুপা তোমার সাথে আর সংসার করতে চাচ্ছে না?
সৌরভ:- সত্যি বলতে রুপার কোনো দোষ নেই এখানে দোষ আমার নিজের। তবে আব্বু সেদিন রুপার সাথে আমি একটু রাগ করে কথা বলেছি। তা থেকে রুপা চলে এসেছে।
রুপার বাবা:- রাগ করে চলে এসেছে তাহলে আমাকে ফোন করে জানাতে। আমি রুপাকে বুঝিয়ে পাঠাতাম।
সৌরভ:- আপনি কাজে ব্যস্ত আবার অন্য জায়গাতে গেছেন। আপনি টেনশন করবেন এসব ভেবে আর আপনাকে বলিনি।
রুপার বাবা:- বলোনি কিন্তু এখন তো রুপা তোমার সাথে ঐ বাড়ীতে যেতে রাজি হচ্ছে না। রুপা তোমার মা বাবা ভাইদের সাথে থাকতে রাজি হচ্ছে না। তা এখন তুমি বলো কি করা যায়?
সৌরভ:- আব্বু আপনি রুপাকে একটু বুঝিয়ে বলেন। আমাকে আরেকবার সুযোগ দিতে আমি রুপাকে আর কোনো কষ্ট দিবো না।
রুপার বাবা:- সৌরভ আমি কি বলেছি তুমি বুঝতে পররছো? আমি বলেছি রুপা তোমার পরিবারের সাথে থাকবে না। (তখনি রুপার মা, বোন আর রুপা, আর রুপার দুলাভাই সহ সবাই এসেছে। তখন আমি বলি)
সৌরভ:- আব্বু আপনি আমাকে শেষ বারের মত একটা সুযোগ দেন। আমি কথা দিচ্ছি রুপাকে আমি অনেক সুখে রাখবো। তখনি রুপা মা বলে,,
রুপার মা:- রুপাকে আর তোমার সুখে রাখা লাগবে না। আমি রুপাকে তোমার কাছে আর দিবো না।
রুপার বোন:- হ্যা আব্বু আপনি ওকে বলে দিন বেড়িয়ে যেতে আমরা আর রুপাকে ওর সাথে সংসার করতে দিবো না।
রুপার বাবা:- আমি কথা বলতেছি। সবাই একটু চুপ থাক। সবাই চুপ করে গেছে তখন শ্বশুর বলে,, সৌরভ তুমি রুপাকে সুখে রাখবে এতে আমার কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু কথা হচ্ছে রুপা এখন তোমার সাথে যেতে চাচ্ছে না। আর তোমার সাথে সংসার করতে রাজি হচ্ছে না। আর তাছাড়া ইদানিং নাকী তোমার মা রুপার সাথে অনেক খারাপ আচরোন করেছে। এমন কি আমাদের নিয়ে খুঁচা মেরে খারাপ কথাবার্তা বলেছে।
সৌরভ:- আব্বু দেখেন কথা বললে অনেক কথা হবে। আমাকে আরেকটা সুযোগ দেন আমি কথা দিচ্ছি রুপাকে আর কোনো সমস্যা পড়তে হবে না। তখনি রুপা রেগে বলে,,
রুপা:- আব্বু আপনি ওনার কথা বিশ্বাস করবেন না। আমি আর ওনার সাথে সংসার করবো না। আমি যা করি সব সময় ওনার মা আমার দোষ ধরে। আর যখনি ওনার কাছে বলি তখন বলে তুমি চুপ থাকলেই তো আর ঝগড়া হয় না। একবারো ওনি ওনার মাকে বলে না। আম্মা আপনি রুপার সাথে কেনো এমনটা করেন?
সৌরভ:- আব্বু আমি বলিনি কারণ আমি চায় না কোনো রকম সংসারে অশান্তি হোক। আর তা ছাড়া একটা সংসারে শ্বাশুরীরা বউদের কাছ থেকে কিছু আশা করে। শ্বাশুরী চাই বউ তাকে যতেষ্ট্য সম্মান আর শ্রদ্ধা করুক। সংসারে কি করবে আর না করবে তাকে জিজ্ঞেস করে কাজ গুলি করুক। একটা সংসারে হঠাত করে গিয়ে যদি সবকিছু নিজের মত করে করতে চায় তাহলে তো প্রতিটা শ্বাশুরী বউদের প্রতি নারাজ থাকবে। তখনি রুপা বলে,,
রুপা:- আপনি কি বলতে চাচ্ছেন? আমি আপনার মাকে সম্মান করি না? আমি সবকিছু নিজের মত করি?
সৌরভ:- সম্মান করা আর মেনে চলার মধ্যে পার্থক্য আছে। আম্মার আব্বার তাদের দুজনের তো মন চায় তাদের বউমা তাদের সাথে বসে কিছুটা সময় গল্প করুক। ওনারা ঔষধ ঠিক মত খাচ্ছে কিনা? শরীর ভালো আছে কিনা? সকালে কি রান্না করবে? দুপুরবেলা কি রান্না করবে? এসব কিছু তাকে জিজ্ঞেস করুক! আচ্ছা তুমি কি কখনো আম্মাকে এসব কিছু জিজ্ঞেস করেছো?
রুপা:- আমি প্রথমে একদিন জিজ্ঞেস করেছি ওনি চুপ থাকছে এরপর আবার জিজ্ঞেস করলে বলে যা খাবে তা রান্না করো। রান্না করলে বলে আমার রান্না নাকী খারাপ ঝাল বেশী দেয়, তেল বেশী দেয়। সব কাজে দোষ খুঁজে। আর এখন ওনি এসেছে আমার নামে বিচার দিতে আর বুঝাতে। আব্বু আপনি বলে দিন আমি আর কোনো সময় ওর সাথে সংসার করবো না।
সৌরভ:- দেখো রুপা এখানে আমি তোমার কোনো দোষ ত্রুটি বলতে আসিনি বা বলতেছি না। যাস্ট আমি মাত্র বুঝাতে চাচ্ছে সবাইকে যে প্রতিটা শ্বাশুরী চায় তাদের ছেলের বউরা তাদেরকে জিজ্ঞেস করে সংসারের কাজ গুলি করুক। তবে আমি মানছি তোমার সাথে যা হয়ছে তা একে বারে অন্যায় হয়ছে এখন সব ভূলে চলো বাড়ীতে যাই। আবার সব কিছু নতুন করে শুরু করি।
রুপা:- আপনি আজকে যা বলেছেন এরপর আমি আপনার সাথে যাবো তা ভাবলেন কি করে?
রুপার বাবা:- সৌরভ তুমি যা বলেছো তা ঠিক। কিন্তু তোমার মায়ের কি রুপাকে আরেকটু সময় দেওয়া উচিত ছিলো না? আর তোমার কি উচিত ছিলো না তোমার মাকে বলা যে মা রুপা তো নতুন ওকে বকা ঝকা না করে একটু বুঝিয়ে সুজিয়ে নেন তাহলে তো হয়।
সৌরভ:- আব্বু বলছি তো আমার ভূল হয়ছে। আর তাছাড়া সত্যি বলতে আমি ছোট থেকে দেখে আসছি আম্মা আব্বা আমাদের জন্য কত কষ্ট করে আসছে। আমি কখনো আম্মাকে কোনো রকম কষ্ট দিয়ে কথা বলি না। আমি এখন থেকে আম্মাকে বুঝিয়ে বলবো রুপার সাথে আম্মা যাতে এমন আচরোন না করে।
রুপার মা:- দেখো তুমি যতই বলো আমরা আর বিশ্বাস করছি না। আমরা আর রুপাকে তোমার সাথে দিবো না তুমি এখন যেতে পারো।
সৌরভ:- আব্বু আমি আর বেশী কথা বাড়াতে চায় না। রুপা যদি একান্ত আমার সাথে যেতে না চায়। তাহলে আমি তো রুপাকে জোঁড় করে নিয়ে যেতে পারবো না। তবে আপনি যা বলবেন আমি তাই মেনে নিয়ে চলে যাবো। তখন রুপার বাবা চুপ থেকে বলে,,
রুপার বাবা:- দেখো বাবা সৌরভ আমি তোমাকে রুপার বিয়ের আগে থেকে চিনি। তোমাকে আমি খোব স্নেহ করি তার জন্য রুপাকে তোমার সাথে বিয়ে দিয়েছি। কিন্তু তুমি এবং তোমার পরিবার যে আমার মেয়েটার সাথে এমনটা করবে আমি ভাবতে পারিনি। এখন যা হয়ে গেছে সেই সব বাদ দিলাম। তবে তোমার সাথে আমি রুপাকে যেতে বলবো। কিন্তু বাবা তোমাকে রুপাকে নিয়ে আলাদা বাসাতে থাকতে হবে।
সৌরভ:- আব্বু রুপাকে নিয়ে আলাদা বাসায় নিয়ে থাকলে যদি আপনি মনে করেন সব সমস্যা সমাধান হবে। তাহলে আমি রুপাকে নিয়ে আলাদা বাসাতে থাকতে রাজি আছি। তবে আমার একটা কথা। আজকে যদি রুপাকে নিয়ে আমি আলাদা বাসাতে থাকি। আগামীকাল আমার ছোট ভাই গুলা যখন বিয়ে করবে তখন তাড়াও তাদের বউ নিয়ে আলাদা বাসাতে থাকতে চাইবে। তখন তাড়া আম্মা আব্বাকে বলবে তোমাদের বড় ছেলে বউ নিয়ে আলাদা থাকতে পারলে আমরা কেনো আলাদা থাকতে পারবো না? আব্বু আপনাদের দুইটা ছেলে আছে ওরা এখন ছোট বড় হয়ে যখন বিয়ে করে বলবে আমরা বউ নিয়ে আলাদা বাসাতে থাকবো তখন আপনাদের কাছে কেমন লাগবে?( তখনি শ্বাশুরী বলে,,,)
রুপার মা:- এই ছেলে আমি কি তোমার মায়ের মত আচরোন করবো আমার ছেলের বউদের সাথে! যে ছেলেরা বলবে আলাদা বাসা নিয়ে থাকবে?
রুপার বোন:- আব্বু আপনি এবার বুঝতে পারছেন তো? আমি বলেছি না সব দোষ এই ছেলের। আর এই ছেলের কাছে রুপা থাকলে জীবনেও সুখি হবে না। তখন রুপার বাবা বলে,,
রুপার বাবা:- আচ্ছা মা রুপা তুই বাবার কথা শুনবি? বাবা যা বলবো তা মেনে নিবি? (রুপা কিছুটা চুপ থেকে বলে)
রুপা:- হ্যা বাবা আপনি যা বলবেন আমি মেনে নিবো।
রুপার বাবা:- সৌরভ এখন তুমি বলো তুমি এখন রুপাকে নিয়ে কোথায় থাকবে? (সৌরভ কোনো কিছু ভঙ্গিমা না করেই বল)
সৌরভ:- আব্বু আমি রুপাকে নিয়ে আমাদের বাড়ীতে সবার সাথে থাকতে চায়। আমি চায় রুপা আমার সাথে আমার বাবা মা সহ সবাইকে নিয়ে এক সাথে থাকুক।
রুপার মা:- আমি জীবনেও আর ঐ বাড়ীতে আমার মেয়ে দিবোনা। আজকেই আমি উকিলকে ফোন করে এনে ডির্ভোসের কাগজ পাঠিয়ে দিবো। আর দরকার হলে আমি রুপাকে সারা জীবন ঘরে বসিয়ে রাখবো তাও ঐ বাড়ীতে দিবো না।
রুপার বাবা:- আচ্ছা তুমি বেশী কথা বলো কেনো? ডির্ভোস করিয়ে দিলে কি সব সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে? সৌরভ তোমার উপর আমার বিশ্বাস আছে তাই আমি এবারো আমার মেয়ে রুপাকে তোমার সাতে দিবো। তবে বাবা আমার একটা শর্ত আছে।
সৌরভ:- হ্যা আব্বু বলেন কি শর্ত?
রুপার বাবা:- শর্ত নাম্বার এক, তুমি আগামীকাল তোমার মা আর বাবাকে নিয়ে এসে রুপাকে নিতে হবে। শর্ত নাম্বার দুই, যদি রুপা আর কোনো দিন আমাকে তোমার আর তোমার পরিবারের সম্পর্কে কোনো রকম অভিযোগ করে তাহলে সোজা তোমাকে আর তোমার পরিবারের সবাইকে থানায় দিয়ে দিবো।
সৌরভ:- ঠিক আছে তাই হবে। আপনি আমার উপর যে বিশ্বাস রেখেছেন আমি চেষ্টা করবো আপনার বিশ্বাস রাখার। আমি আমার এমন ভূল কখনো করবো না।
রুপার বাবা:- ঠিক আছে তাহলে আগামীকাল তোমার মা বাবাকে সাথে নিয়ে এসে রুপাকে নিয়ে যাবে। আর শুনো আমাদের বাড়ীর অনেকেই তোমার সাথে খারাপ আচরন করেছে তার জন্য মনে কোনো রকম কষ্ট রাখিও না কেমন?
সৌরভ:- না না আমি কিছু মনে করিনি। ওনারা সবাই আমার বড় আমাকে এসব বলতেই পারে।
রুপার বাবা:- ঠিক আছে আসো খাবে। আর মা রুপা সৌরভকে আমার দিকে তাকিয়ে আরেকটা শেষ সুযোগ দিয়ে দে মা। রুপা কিছু না বলেই উঠে চলে গেছে। ( রুপার বাবা আমাকে সাথে করে নিয়ে খাবার টেবিলে বসিয়ে এক সাথে খাবার খেয়েছে। সত্যি বলতে ওনি আমাকে অনেক স্নেহ করে আর এতটা বিশ্বাস করে যার কারণে নিজের মেয়েকে আমার কাছে বিয়ে দিছে। এবার আর যাই হোক ওনার দিকে তাকিয়ে হলেও রুপাকে তার পাপ্য সম্মান পায়িয়ে দিবো। খানা শেষ রুপা আর আসেনি মনে হয় এখনো আমাকে ক্ষমা করতে পারেনি। যাক আমি আমার সবটা দিয়ে চেষ্টা করবো রুপা আগের মত করে আমাকে ভালোবাসে।)
সৌরভ:- আব্বু আমি তাহলে এখন যাই।
রুপার বাবা:- হ্যা যাও আর তুমি আগামীকাল তোমার বাবা মাকে নিয়ে চলে এসো কিন্তু!
সৌরভ:- আপনি কোনো চিন্তা করবেন না। আমি আম্মা আব্বাকে সাথে নিয়ে আসবো। বাসা থেকে বেড়িয়ে বাইক চালাচ্ছি এর মাঝে মোবাইলটা বেজে উঠছে। রাস্তার পাশে বাইক থামিয়ে মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখি আম্মা ফোন করছে। রিসিভ করতেই আম্মা বলে,,
আম্মা:- সৌরভ তুই কোথায় আজ সারাদিন নাকী অফিসে ছিলি না? তুই কি আবার রুপাদের বাড়ীর সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছিস)
সৌরভ:- আম্মা আমি ( তখনি আমাকে থামিয়ে আম্মা বলে)
আম্মা:- শুন যে তোকে পাত্তা দেয় না তার পেছনে পড়ে না থেকে যে তোকে পাত্তা দিবে তার পিছনে পড়ে থাক।
সৌরভ:- আম্মা আপনি আমার কথাটা( তখন আবার থামিয়ে বলে)
আম্মা:- আর শুন আগামীকাল সাহেদের বিয়ের কাবিন হবে। আমরা সবাই সেখানে যাবো আর তোকে কিন্তু যেতে হবে।
সৌরভ:- আম্মা আমি তখনি বলে,,
আম্মা:- তুই যাবি এইটা ফাইনাল কথাটা বলেই আম্মা ফোনটা কেটে দিছে। আরে এইটা কি হলো! আগামীকাল তো রুপাদের বাড়ীতে আম্মা আব্বাকে নিয়ে যাবার কথা। কিন্তু এখন আম্মা যে বলছে সাহেদের বিয়ের কাবিন করাবে! এখন কি সাহেদের বিয়ে রেখে আম্মা আব্বা আমার সাথে রুপাকে আনতে রুপাদের বাড়ীতে যাবে? মনে মনে কথা গুলি ভাবতে ভাবতে বাড়ীর দিকে যাচ্ছি।
।
চলবে,,,গল্প:- #অভিযোগ_গুলা_কি_অযৌক্তিক?
পর্ব:-০৬
লেখা:- AL_Mohammad_Sourav
।
রুপার বাবা বলেছে আগামীকাল আম্মা আব্বাকে সাথে নিয়ে গিয়ে রুপাকে আনতে হবে। আর আগামী কাল আব্বা আম্মা সাহেদের বিয়ের কাবিন করতে যাবে। এখন কথা হচ্ছে আম্মা আব্বা যাবে আমার সাথে রুপাকে আনতে? মনের মধ্যে একটা প্রশ্ন রেখেই বাড়ীতে গেলাম। বাড়ীর ভিতরে ঢুকতেই দেখি সবাই ড্রয়িংরুমে বসে হাসা হাসি করছে। আমার ছোট বোন আর বোন জামাই এসেছে। আমাকে দেখেই আম্মা বলে।
আম্মা:- সৌরভ আয় বস। এই দেখ এই জিনিস পত্র গুলি কেনা হয়ছে সাহেদের বউয়ের জন্য। জানিস সাহেদের শ্বশুর অনেক বড় ব্যবসায়ী। আর ওনার ঢাকা শহরে দুইটা বাড়ী আছে অনেক ব্যাংক ব্যালেন্স আছে। আর বলেছে বিয়ের পরেই সাহেদকে একটা বড় কম্পানি খুলে দিবে।(তখন একটা মেয়ের ছবি দেখিয়ে বলে এইটা সাহেদের বউয়ের ছবি। তবে ভালো করে দেখ মেয়েটা রুপার থেকেও সুন্দর না?) সবাই বলেছে সাহেদের বউ অনেক সুন্দর।(আম্মার দিকে আমি তাকিয়ে আছি বাকী সবাই খোব খুশি মনে শুনতেছে। তখন আব্বা বলে)
আব্বা:- আচ্ছা এই গুলা এখন বলার কি দরকার? সৌরভ বাহির থেকে এসেছে ফ্রেশ হয়ে আসলে কথা গুলি বলতে পারতে না?
আম্মা:- হ্যা তা ঠিক বলেছো। তবে সৌরভ যে রুপাকে আবার ফিরিয়ে আনতে এতটা দৌড়জাপ করছে তার জন্য এই কথা গুলি বলেছি। যদি সৌরভ আমার কথা শুনে তাহলে সৌরভকে এর থেকে বড় লোকের মেয়েকে বিয়ে করাতে পারবো আমি। (ঠিক তখনি সৌরভ জোড়ে দমক দিয়ে বলে)
সৌরভ:- আম্মা থামেন একটু থামেন! আর কত আম্মা? এবার একটু চুপ করেন। আমার কথা শুনে সবাই থমকে উঠেছে।
আব্বা:- সৌরভ কি হলো তোর?
সৌরভ:- আমার কিছু হয়নি। আচ্ছা আম্মা আপনি আমাকে একটা প্রশ্নের উত্তর দিবেন? রুপা আপনার কি এমন ক্ষতি করেছে যার কারণে আপনি রুপাকে একদম সহ্য করতে পারেন না?
আম্মা:- সৌরভ এখন তুই ঠিক নেই। তোর মাথা গরম হয়ে আছে তুই ফ্রেশ হয়ে আয় তখন আমরা বসে কথা বলবো। এখন আমি তোর সাথে এই ব্যাপারে কোনো কথা বলতেছি না।
সৌরভ:- আম্মা আমার মাথা ঠান্ডা আছে। আজ আপনাকে বলতেই হবে রুপাকে কেনো আপনি সবসময় বকা ঝকা করে থাকেন? কেনো ছোট ছোট ভূলে জন্য এত বড় বড় কথা শুনতে হবে রুপাকে?
আব্বা:- সৌরভ তুই তোর মায়ের সাথে কেমন ভাবে কথা বলতেছিস?
সৌরভ:- আব্বা সময় আর পরিস্থিতি আমাকে বাদ্য করেছে এমন ভাবে কথা বলার জন্য। আচ্ছা আব্বা আপনি বলেন রুপার দোষটা কোথায়?
আম্মা:- সৌরভ রুপার হাজারটা দোষের কথা আমি তোকে বলেছি। আর তাছাড়া যে মেয়ে নিজে থেকে স্বামীর বাড়ী ছেড়ে বাপের বাড়ীতে চলে যায়। তার এর চায়তে বড় আর কি দোষ হতে পারে?
সৌরভ:- বাহ আম্মা দারুণ বলেছেন (সৌরভ হাত তালি দিয়ে বলে) জানেন আম্মা আমি সবসময় রুপাকে বলে এসেছি রুপা এইটা সংসারের অংশ মানিয়ে নাও। আমি কখনো রুপার পক্ষ নিয়ে আপনাকে জিজ্ঞেস করিনি বা বলিনি আম্মা আপনি কেনো রুপার সাথে এমনটা করেন? রুপা সবসময় আপনার মন রক্ষা করার জন্য কি না করে?
আম্মা:- তোর বউ সবসময় নিজের মত করে চলে। আমার মন রক্ষা করার জন্য কিছুই করেনি।
সৌরভ:- রুপা আপনার মন রক্ষা করার জন্য কিছুই করেনি? তাহলে আমি আপনাকে সরণ করিয়ে দেয়। রুপা আমার সাথে গুরতে গেলে আপনি সেটা অপছন্দ করেন। তাই রুপা আমার সাথে বাহিরে গুরতে যাওয়া বন্ধ করে দিছে। আমি অফিস থেকে ফোন করলে সেটাও আপনি অপছন্দ করেন। আর তার জন্য রুপা হাতে কাজ আছে এসব বলে আমাকে বাদ্য করে যাতে করে আমি রুপাকে অফিসে গেলে ফোন না দেয়। সকাল থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত সব কাজ রুপা করেছে তাও আপনার মন জোঁগাতে পারেনি। এখন বলেন রুপা আপনার মন রক্ষা করতে কিছুই করেনি?
আম্মা:- সৌরভ তুই কি তোর বউয়ের হয়ে উকিলাতি করতে এসেছিস?(এবার সৌরভ জোড়ে একটা হাসি দিয়ে সোফায় বসে বলে)
সৌরভ:- আম্মা রুপার হয়ে যদি উকিলাতি করতাম তাহলে আমি কবেই রুপাকে নিয়ে আলাদা বাসায় চলে যেতাম। আপনার এত যন্ত্রনা সহ্য করে রুপাকে বলতাম না তুমি মানিয়ে নাও।
আম্মা:- তাঁর মানে তুই বলতে চাচ্ছিস তোর বউকে যন্ত্রনা দেয়। সব দোষ আমার? তোর বউয়ের কোনো দোষ নেই?
সৌরভ:- আমি বলি না সব দোষ আপনার! আবার এটাও মানতে পারবো না সব দোষ রুপার? আপনি বলেন রুপার রান্না করতে গেলে তরকারিতে ঝাল বেশী দেয়। আচ্ছা একবারও কি দেখিয়ে দিছেন তরকারিতে ঝাল কি পরিমান দিতে হবে? রুপা আপনার সাথে সুন্দর করে কথা বলে না! একবার আপনি রুপাকে সুন্দর করে ডাক দিয়ে বসিয়ে গল্প করেছেন? রুপা এই বাড়ীর নিয়ম কানুন কিছু জানে না। কখনো কি বলেছেন বাড়ীর নিয়ম কানুনের কথা? রুপা সামান্য একটু ভূল করলে আপনি সেটাকে সবার সামনে বড় করে তোলেন। আর রুপাকে ওর বাবা মা শিক্ষা দেয় নি এসব বলেন। আচ্ছা আমাদের বোনকে যদি তার শ্বাশুড়ী বলে তোমার মা শিক্ষা দেয়নি তখন আমাদের বোনের মনে আঘাত আসবে না?
আম্মা:- আমার মেয়েকে এমন কথা বলার প্রয়োজন হবে না কারণ আমার মেয়েকে আমি বাড়ীর আত্বীয় স্বজনদের সাথে কেমন আচরোন করতে হবে সব শিখিয়ে দিছি। তখনি আমার ছোট বোন বলে,,,
আম্মা আপনি আমাকে সব শিখিয়ে দিয়েছেন কিন্তু তারপরেও আমার শ্বাশুড়ী আমাকে নিজের হাতে সব কিছু শিখিয়ে দিছে। আমার শ্বাশুড়ী যদি আমাকে কিছু না দেখিয়ে দিয়ে আপনার মতন এমনটা করতো তাহলে আমি একদিন থাকতে পারতাম না। সত্যি বলতে আপনারা সবাই ভাবির সাথে যা করেছেন তা একদমি ঠিক হয়নি। বড় ভাবি অনেক ভালো ওনি ছাড়া অন্য কোনো মেয়ে হলে কবেই ভাইয়াকে চাপ দিত আলাদা থাকার জন্য। আর যদি ভাইয়া রাজি না হতো তাহলে ভাবি ভাইয়াকে ডির্ভোস দিয়ে চলে যেতো।
আম্মা:- তুই চুপ থাক তোকে কথা বলতে বলিনি।
আব্বা:- আচ্ছা তোরা সবাই এখন কি শুরু করেছিস? সৌরভ রুমে যা আর তোমরা সবাই যাও তখনি সৌরভ বলে,,,
সৌরভ:- আমার কথা এখনো শেষ হয়নি।
আব্বা:- যা কথা আছে সেইটা ঠান্ডা মাথায় বসে পড়ে বলিস। এখন রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে।
সৌরভ:- আগে আমার কথা শেষ হবে তারপরে আমি রুমে যাবো। নাকী বাহিরে চলে যাবো সেইটার সিদ্যান্ত নিবো।
আম্মা:- বল তোর কি কথা? আজ হয় এই কোল আর না হয় ঐ কোল। সব আজকেই শেষ হবে বল তোর কি কথা বলবি?
সৌরভ:- হ্যা আমিও চায় এইটার সমাধান হোক। (কোনো কিছু না গুরিয়ে সোজা বলে দিলাম) আমি রুপার বাবাকে কথা দিয়ে আসছি আগামীকাল আপনারা দুইজন আমার সাথে রুপাকে আনতে ওদের বাড়ীতে যাবেন। আপনারা গেলে রুপার বাবা রুপাকে আসতে দিবে তানা হলে ওরা আর রুপাকে দিবে না। সোজা ডির্ভোসের কাগজ পাঠিয়ে দিবে। ( আম্মা কিছু বলতে যাবে তাঁর আগেই আব্বা বলে উঠে)
আব্বা:- ও এই কথা ঠিক আছে যাবো। তাহলে আর কোনো সমস্যা নেই। আগামী কাল আমি আর তোর মা তোরর সাথে গিয়ে রুপাকে নিয়ে আসবো। আর তাছাড়া অনেক দিন হলো রুপার বাবার সাথে দেখাশাক্ষাত হয় না। বেয়াই সাথে দেখা হবে আর বউমাকে নিয়ে আসাও হবে।
আম্মা:- এই তুমি কি বলছো এসব? আগামীকাল সাহেদের কাবিন করাতে যেতে হবে সেটা তুমি ভূলে গেছো নাকী?
আব্বা:- আরে না ভুলবো কেনো? সাহেদের বিয়ের কাবিন হবে রাতে। আর আমরা দুইজনে যাবো সকালে বউমাদের বাড়ীতে। তখনি আম্মা বলে,,,
আম্মা:- তুমি গিয়ে নিয়ে এসো আমি যেতে পারবো না।(তখনি সৌরভ বলতেছে যে তাহলে আমি রুপাকে নিয়ে আর কখনো এই বাড়ীতে আসবো না। তাঁর আগেই আব্বা বলে উঠেন)
আব্বা:- দেখো বেশী কথা বলো না আমি বলেছি তুমি আমাদের সাথে যাবে বউমাকে আনতে বাস যাবে। আর তাছাড়া তুমি না গেলে বউমাকে দিবে না। ( আম্মা কিছুটা রেগেই বলে)
আম্মা:- ঠিক আছে যাবো কথাটা বলেই চলে গেছে।
আব্বা:- সৌরভ এবার খুশি তো? যা রাত অনেক হয়ছে এখন গিয়ে ঘুমা। আমি রুমে এসে দেখি রাত দুইটা বাজে তাই আজকে আর রুপাকে ফোন করিনি। ফ্রেশ হয়ে এসে ঘুম। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখী বেলা বারোটা বাজে তখন তাঁড়াতাড়ি করে ফ্রেশ হয়ে বেড়িয় দেখি আব্বা আম্মা দুজনে তৈরি হয়ে আছে। আমি কাছে যেতেই আব্বা বলে। চল সৌরভ রুপাকে আনতে যাই।
সৌরভ:- হ্যা চলেন। আম্মাকে দেখে বুঝ যাচ্ছে এক প্রকার অনিচ্ছাকৃত ভাবে যাচ্ছে আমার সাথে। তাও আমি মনকে একটু শান্তনা দিলাম যাক রাজি তো হয়ছে। প্রায় ঘন্টা খানেক পড়ে আমরা রুপাদের বাড়ীতে এসেছি। রুপার বাবা মা আমাদের দেখে খোব সুন্দর ব্যবহার করতে আরম্ভ করেছে। আমি তো মনে মনে চিন্তা করেছি না জানি আম্মা আব্বার সাথে রুপার পরিবারের কেউ খারাপ আচরোন করে। কিন্তু না সবাই খোব সুন্দর আচরোন করেছে। যখন রুপাকে নিয়ে চলে আসবো তখন রুপার বাবা বলে।
রুপার বাবা:- বেয়াইন সাহেবা সব মেয়েদের বাবা মা তাদের নিজের বাড়ী থেকে সবকিছু শিখিয়ে দেয়। আর একটা মেয়ের বিয়ের পড়ে নতুন একটা সংসার নতুন সব আত্বীয়স্বজন। কার সাথে কেমন আচোরন করবে এসব কিছু গুলিয়ে ফেলে। প্রথম প্রথম অনেক কিছু ভূল করে থাকে। আর প্রথম কিছুদিন ভূল হবে এইটাই সাভাবিক তাই মানিয়ে নেওয়ার জন্য সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে তাদের স্বামী আর শ্বাশুড়ী। যদিও স্বামী সবসময় চেষ্টা করে মানিয়ে নেওয়ার জন্য কিন্তু অনেক শ্বাশুড়ীরা বউদের সেই কাজে সহযোগীতা করে না। তাই আমি মনে করি রুপা যদি ভূল করে থাকে তাহলে আমার মেয়েটাকে আপনি ঠিক ঠাক মত শিখিয়ে দিয়েন। ( মনে মনে আল্লাহকে ডাকছি যাতে করে আম্মা এখানে কোনো রকম ঝগড়া না বাঁধিয়ে দেয়। কিন্তু না আম্মা একটা হাসি দিয়ে বলে)
আম্মা:- বেয়াই সাহেব আপনি নিশ্চিৎ থাকুন। আর এমন কোনো সমস্যা হবে না। (আম্মার কথা শুনে কিছুটা শান্তি পেলাম)
আব্বা:- আর হ্যা বেয়াই সাহেব আমাদের মেজু ছেলে সাহেদের তো আজ সন্ধায় বিয়ের কাবিন হবে। আপনারা সবাই যাবেন। আসলে হঠাত করে সবকিছু হয়ে গেছে তাই আগে থেকে কিছু জানাতে পারিনি। তার জন্য কিছু মনে করিয়েন না কিন্তু।
রুপার বাবা:- নাহ নাহ কিছু মনে করবো কেনো? তবে আজকে মনে হয় যেতে পারবো না। আমার জুরুরী কাজ আছে। তবে যখন বউকে উঠিয়ে আনবেন তখন যাবো।
আব্বা:- ঠিক আছে তাও চেষ্টা করিয়েন। আচ্ছা তাহলে আমরা যাই।
রুপার বাবা:- আচ্ছা চেষ্টা করবো। ঠিক আছে তাহলে যান। আর রুপা তোমাকে যেভাবে বলে দিয়েছি ঠিক সেভাবে সবার সাথে মিলে মিশে থাকবে। (রুপা মাথাটা নাড়িয়ে হ্যা সূচক উত্তর দিয়েছে। আমরা সবাই বের হয়ে একটা সি এন জি নিয়ে নিলাম। রাস্থায় কোনো কথা হয়নি তবে একবার আম্মা বাড়ীতে ছোট বোনকে ফোন করে বলে দিছে সাহেদকে তৈরি হয়ে থাকতে আর যা যা বলে আসছে সব সবকিছু যেনো তৈরি করে রাখে। কিছুক্ষণ পরে বাড়ীতে এসেছি। রুপার ব্যাগটা আমি হাতে নিয়ে রুমে চলে গেলাম। রুপা আমার ছোট বোনের সাথে কথা বলে রুমে এসেছে। আমি রুপার হাতটা ধরে বলি রুপা যা হবার হয়ে গেছে এখন থেকে আমি তোমার সব কথা শুনবো এমনকি তোমার কোনো রকম অসম্মান যেনো এই বাড়ীতে না হয় সেই দিকে আমি খেয়াল রাখবো। (আমার হাত থেকে রুপার হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বলে)
রুপা:- আর কিছু বলবেন? (কিছুটা বিরিক্ত ভাব নিয়ে কথাটা বলেছে) তখন আমি বলি।
সৌরভ:- এমন ভাবে বলছো কেনো?
রুপা:- কেমন ভাবে বলেছি? আমি ফ্রেশ হবো আর শুনেন একটা কথা। আপনাকে এখন আমি আগের মত ভালোবাসতে পারবো না। এমন কি এখন আপনার প্রতি আমার সেই ফিলিং নেই। আমাকে এখন আমার মত করে থাকতে দিবেন। আমি চায় না আপনি আমাকে আবার আগের মত ধোকা দেন।
সৌরভ:- রুপা প্লিজ তুমি এমনটা বলো না। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না। তুমি এমনটা বললে আমার সবকিছু বৃথা হয়ে যাবে।
রুপা:- আমি যে এতদিন ছিলাম না। তাতে কি আপনার জীবনে চলার পথে কোনো বৃথা হয়ছে? না আমার জন্য থেমে থাকছে?
সৌরভ:- এমন করে বলছো কেনো? তুমি জানো আমি প্রতিটা মুহুর্তে তোমার কথা ভেবেছি।
রুপা:- কেমন ভেবেছেন সেটা তো আমি নিজের চোখে দেখেছি। আর এখন কথা হলো আপনি আমাকে স্পর্শ করবেন না। আমি এখন আপনাকে আগের মত মেনে নিতে পারতেছি না। আমার যদি কখনো মনে হয় আপনি ঠিক আমার যোগ্য হয়ে উঠেছেন তখন আমি নিজেই আগের মত করে আপনার কাছে আসবো আর ভালোবাসবো। আশা করি আপনি আমার কথা গুলি বুঝতে পারছেন।
সৌরভ:- কিন্তু রুপা।
রুপা:- কোনো কিন্তু টিন্তু নেই। আমি যা বলেছি আপনাকে তাই করতে হবে। আমার খারাপ লাগছে আমি ফ্রেশ হতে যায়। রুপা চলে গেছে আর সৌরভ মন খারাপ করে নিচে এসেছে। সৌরভকে দেখেই সৌরভের আব্বা বলে,,,
আব্বা:- সৌরভ যা গিয়ে তৈরি হয়ে আয় আমরা তো এখুনি বের হবো।
সৌরভ:- আমি তৈরি হয়ে আসছি চলেন যাওয়া যাক। সাহেদ আম্মা আব্বাকে সালাম করছে। তারপর সবাইকে নিয়ে রওনা হলো। সন্ধার কিছুক্ষণ পরে এসে আমরা সাহেদের হুব শ্বশুরের বাড়ীতে এলাম। সাহেদর শ্বশুড় বাড়ী সত্যি অনেক বড় আর সাহেদের বউ অনেক সুন্দর। সাহেদের বউয়ের নাম নিলুফা বলেই সবাই ডাকে। কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই বিয়ের কাবিন হয়ে গেছে। বউ উঠিয়ে আনবে দুই মাস পরে কিন্তু সাহেদ এই দুই মাসের আগে ঐ বাড়ীতে গিয়ে থাকতে পারবে না। কিন্তু মন চাইলে নিলুফার সাথে গিয়ে বসে গল্প করে আসতে পারবে। সবাই সাহেদের শ্বশুড়ের কথায় রাজি হয়েছে।আমরা সবাই চলে এসেছি। রাস্থায় আসার সময় সবাই সাহেদের শ্বশুর বাড়ীর কথা আর লোকজনের প্রশংসা করতেছে যদিও এই গাড়ীতে সাহেদ নেই। তখন আব্বা বলে,,
আব্বা:- সৌরভের শ্বশুড়ের মত মন সাহেদের শ্বশুড়ের হবে বলে মনে হচ্ছে না। সৌরভের শ্বশুড় অনেক ভালো মনের মানুষ। ঠিক তখনি আম্মা বলে,,
আম্মা:- কেমন ভালো মনের মানুষ সেটা তো আজকেই বুঝতে পারছি। আমাকে বাড়ীতে ডেকে নিয়ে অপমানজনক কথা শুনিয়ে দিছে। আমি কিছু বলিনি শুধু তোমার জন্য। আমি এই কথার প্রতিটা জবাব দিবো। (সৌরভ কিছু বলবে তখনি গাড়ীটা থামিয়ে দিয়ে ড্রাইভার বলে চলে এসেছি আপনারা সবাই নামুন সবাই নেমে বাড়ীর ভিতরে ঢোকেছি। সবাই এক এক করে সোফায় বসেছে। তখনি রুপাও এসেছে সবার মাঝে ঠিক তখনি সৌরভ বলে,,)
সৌরভ:- আম্মা আমার একটা কথা।
আম্মা:- হ্যা কি কথা বলবি বল?
সৌরভ:- আমি যেইটা বলতে চাই সেই কথাটা হলো। সাহেদের বউ উঠিয়ে আনার এক মাস পরেই আমি রুপাকে নিয়ে আলাদা করে থাকবো। মানে সহজ ভাবে বলি রুপাকে নিয়ে আমি অন্য কোথাও বাসা ভাড়া করে আলাদা থাকবো। আর হ্যা আপনাদের বরণ পোষনের জন্য যেই খরচটা লাগবে সেইটা আমি দিয়ে দিবো। এই কথাটা বলেই সৌরভ রুমের দিকে হেটে চলে যাচ্ছে আর বাকী সবাই সৌরভের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
।
চলবে,,,