অভিযোগ গুলা কি অযৌক্তিক পর্ব -০৭

গল্প: #অভিযোগ_গুলা_কি_অযৌক্তিক?
পর্ব:- ০৭
লেখা:- AL Mohammad Sourav

রুপাকে নিয়ে আলাদা থাকার সিদ্ধান্তে বাবা মা সহ সবাই থমকে গেছে। ওনারা কেউ বুঝে উঠতে পারছে না। আমি এমন কথা কখনো বলতে পারবো বা এমন সিদ্ধান্ত নিবো। কিন্তু কি করার যেখানে রুপার সব কিছুতে দোষ খুঁজবে সেখানে এক সাথে থাকার বৃথা চেষ্টা করার কোনো মানে হয় না। তাঁর চায়তে ভালো আমি আমার বউ নিয়ে আলাদা থাকি। এসব কথা ভাবতে ভাবতে রুমে চলে এসেছি। আর ঐদিকে আম্মা বলছে।
আম্মা:- তুমি শুনলে তোমার বড় ছেলে কি বলে গেলো?
আব্বা:- হ্যা শুনেছি। আমার মনে হয় সৌরভ যা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেইটা খুব ভেবে চিন্তে নিয়েছে। আমাদের উচিত সৌরভের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া।
আম্মা:- তুমি কি বলছো এসব? সৌরভের সাথে সাথে তোমার মাথাটা কি গেছে?
আব্বা:- দেখো আমার মাথা ঠিক আছে। আর তাছাড়া তুমি রুপাকে সহ্য করতে পারো না। এর চাইতে ভালো সৌরভের সিদ্ধান্তটা আমাদের সবার মেনে নেওয়া।
আম্মা:- আমি বুঝতে পারছি সব দোষ রুপার। রুপা সৌরভের মাথায় আলাদা থাকার কথাটা দিয়েছেে। রুপা তুমি যদি মনে করো তুমি আলাদা থাকতে পারবে তাহলে সেইটা ভুল ভাবছো?
রুপা:- মা আমি কখনো আপনার ছেলেকে আলাদা থাকার কথা বলিনি।
আম্মা:- যদি তুমি না বলো তাহলে সৌরভ যখন বলেছে তখন কেনো বলোনি আমরা আমি আলাদা থাকবো না।
রুপা:- সেইটা আমি বলতে যাবো কেনো? আপনার ছেলে বলেছে আপনি আপনার ছেলেকে জিজ্ঞেস করেন কেনো সে আলাদা বাসা নিয়ে থাকতে চাচ্ছে!
আব্বা:- সৌরভের মা তুমি আবার শুরু করেছো? বৌমা তুমি যাও। রুপা চলে এসেছে। শুনো সৌরভের মা সৌরভ কেনো আলাদা থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে একবার কি ভেবে দেখেছো? সৌরভ রুপাকে ভালোবাসে আর রুপার সাথে সারাজীবন থাকতে চাই। আর তুমি কি করো সবসময় রুপা আর সৌরভকে আলাদা করার চেষ্টা করে যাচ্ছো। রুপার মধ্যে কি এমন কম আছে বলো? রুপার ছৌট একটা ভুল করলে তুমি চেচিয়ে সারা বাড়ী মাথায় তুলে রাখো। রুপার সাথে তুমি আমি আর আমরা সবাই যা করেছি সত্যি কি ঠিক করেছি? সৌরভ আমাদের বড় সন্তান আমাদের সুখের জন্য কি*না করছে?
আম্মা:- তুমিও সৌরভের মত আমাকে বুঝাতে আসছো? সব এখন আমার দোষ রুপার কোনো দোষ নেই?
আব্বা:- তোমার সব দোষ সেটা বলিনি। তবে তুমি আমি আমরা সবাই মিলে রুপার সাথে যা করেছি আজ তার জন্য সৌরভ বাধ্য হয়ছে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য। তবে এখনো সময় আছে তাই সবকিছু শেষ হবার আগেই আমাদের সবার চিন্তা দ্বাড়া পরিবর্তন করতে হবে। তাহলেই আমরা সবাই এক সাথে থাকতে পারবো। আর সৌরভ তাঁর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবে আমি আশা করি। ঠিক আছে অনেক রাত হয়ছে সবাই সবার রুমে যাও। এই কথা বলে আব্বা উঠে চলে গেছে আর এদিকে রুপা নিচে ফ্লোরে শুইবে বলে বালিশ আর চাদর হাতে নিছে। এমন সময় সৌরভ রুপাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেছে।

রুপা:- এই কি করছেন? আবার আমাকে স্পর্শ করেছেন? তবেরে এবার আপনার খবর আছে। আমাকে ছাড়ুন বলছি। কিন্তু নাছুর বান্ধা সৌরভ। রুপাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখছে। ছাড়ার তো কোনো নাম গন্ধ নেই বরং আলতু করে পিঠে আর ঘারে ছোট ছোট চুমু দিচ্ছে। আর রুপার মেজাজ অনেক খারাপ হয়ে আসছে। রুপা এবার নিজেকে এক ঝাঁটকায় ছাড়িয়ে নিছে।
সৌরভ:- কি হলো এমন করছো কেনো?
রুপা:- আপনাকে বারণ করা সত্যেও আমাকে স্পর্শ করেছেন কেনো? আমি আপনাকে কি বলে ছিলাম? সব ভুলে গেছেন? আমি এবারের মত ক্ষমা করে দিলাম। এরপর যদি ভুল করেও আমাকে স্পর্শ বা জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করেন তাহলে কিন্তু আমি আব্বুকে বানিয়ে বানিয়ে আপনার নামে মিথ্যা বলবো যে আপনি আবার আগের মতই শুরু করেছেন। আর তখন কি হবে একবার আন্দাজ করে দেখুন তো মিষ্টার!
সৌরভ:- রুপা আমি বলেছি তো আর কখনো তোমাকে এই বাড়ীর কারো কাছে ছোট হতে দিবো না। আর সাহেদের বউ উঠিয়ে আনার ঠিক এক মাস পরে আমরা দুজনে আলাদা বাসায় চলে যাবো।
রুপা:- আমিও বলেছি যদি কোনো সময় আপনাকে আগের মত বিশ্বাস আর ভালোবাসতে পারি তাহলে আমি নিজে থেকেই আপনার কাছে আসবো। তাই দয়া করে এই মুহুর্তে আমাকে পিছন থেকে সামনে থেকে এসব জড়িয় ধরা বন্ধ করেন। আর হ্যা আমি এখন থেকে আলাদা করে থাকবো। তাই এই নেন চাদর আর বালিশ লক্ষী ছেলের মত করে নিচে শুয়ে পড়েন।

সৌরভ:- তাহলে সত্যি সত্যি আমরা আলাদা থাকবো?
রুপা:- আমি কি মিথ্যা মিথ্যা বলেছি? নেন জনাব ভালো লক্ষী ছেলের মত গিয়ে নিচে শুয়ে পড়েন। আর হ্যা যদি আমি ঘুমিয়ে যায় তাহলে ভুল করেও কিন্তু আমার কাছে এসে থাকার চেষ্টা করবেন না।
সৌরভ:- আজকে আমরা এক সাথে থাকি আগামীকাল থেকে এই নিয়ম মেনে নিবো কেমন।
রুপা:- জি না জনাব আজ এই মুহুর্ত থেকে এই নিয়ম মেনেই আপনাকে থাকতে হবে।
সৌরভ:- ঠিক আছে তাই হবে। তবে রুপা আমি তোমাকে অনেক বেশী ভালোবাসি। আমি জানি তুমি আমাকে এখন বিশ্বাস করতে পারছো না। আমি কথা দিচ্ছি আমি তোমাকে আমার প্রতি আগের চায়তেও বেশী বিশ্বাস আর ভালোবাসা তৈরী করে নিবো ইনশাআল্লাহ।

রুপা:- সেটা সময় বলে দিবে জনাব। এখন গিয়ে শুয়ে পড়েন। রাত অনেক হয়ছে সকালে আবার আপনাকে অফিসে যেতে হবে। শুভ রাত্রি বলে রুপা খাটের উপরে শুয়ে পড়েছে আর বেচেরা সৌরভ বালিশ চাদর নিয়ে ফ্লোরে শুয়ে পড়েছে। সৌরভ শুয়ে আছে প্রায় ঘন্টা খানেক হয়ে গেছে চোখ বন্ধ করে রাখছে কিন্তু ঘুম আসার কোনো লক্ষন দেখছে না। মনে মনে ভাবছে খাটের উপরে গিয়ে রুপাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়বে। নাহ থাক যদি রুপা জেগে যায়। জেগে গেলে কি এমন হবে নাহ থাক। আরে দূর কিছু ভালো লাগছে না। সৌরভ একটু মাথা তোলে দেখে রুপা ঘুমিয়ে আছে তাই উঠে গিয়ে রুপার কপালে আর গালে ছোট্ট করে চুমু দিছে। রুপা কিছুটা নড়ে চরে উঠেছে তাঁড়াতাড়ি করে সৌরভ সোজা চলে এসেছে নিচে। এবার মনে কিছুটা শান্তি এসেছে। শুয়া মাত্রই ঘুমিয়ে গেছে সকালে রুপার ডাকে ঘুম ভেঙ্গেছে।
সৌরভ:- কি হলো ডাকছো কেনো?
রুপা:- অফিসে যেতে হবে তো জনাব! তানা হলে আপনার মা আবার আমাকেই দোষবে। যে আমার কারণে আপনি ঠিক মত ব্যবসার কাজে মন দেন না।
সৌরভ:- আমার এখন উঠতে মন চায়ছে না। আমার রাতে একদম ঘুম আসেনি। সারা রাত সজাগ ছিলাম। আমাকে একটু ঘুমাতে দাও প্লিজ।
রুপা:- অনেক ঘুমিয়েছেন এখন উঠেন বলেই আমার হাত ধরে টেনে বসিয়ে দিছে। আর ব্রাশ শ্যাম্পুর বোতল হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে যান গিয়ে দ্রুত ফ্রেশ হয়ে আসেন।

সৌরভ:- হ্যা যাচ্ছি ম্যাডাম বলেই সৌরভ ফ্রেশ হতে গেছে। আর রুপা গিয়ে খাবার টেবিলে সব কিছু গুচিয়ে রাখছে। এক এক করে বাড়ীর সবাই খাবার টেবিলে এসে বসেছে। সবাই চুপচাপ কারো সাথে কারো কোনো কথা বলছে না। সৌরভ চুপচাপ খেয়ে চলে আসতেছে তখনি সৌরভের মা বলে।
আম্মা:- সৌরভ তুই যে গতকাল রাত্রে বলেছিস তুই আর রুপা আলাদা থাকবি। সেই কথাটা কি তুই ভেবে চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিস?
সৌরভ:- হ্যা আম্মা আমি খুব ভেবে চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর তাছাড়া রুপার সাথে যেহেতু আপনার আর বাড়ীর সবার সম্পর্ক তেমন একটা ভালো না। তাহলে কেনো শুধু শুধু রুপার জন্য এই সংসারে অশান্তি তৈরী করে রাখবেন। তাঁর চায়তে রুপাকে নিয়ে আমি আলাদা বাসাতে থাকতে চাই।
আম্মা:- তাঁর মানে তুই বলতেছিস আলাদা থাকলে সব সমস্যা শেষ হয়ে যাবে!
সৌরভ:- যেহেতু আমার স্ত্রী জন্য সংসারে অশান্তি হয়। আর সংসারে আয় বরকত কম হয় তাহলে তো রুপাকে নিয়ে আলাদা থাকলে আপনাদের জন্য ভালো হবে। সংসারে বরকত বেশী হবে কোনো রকম ঝামেলা তৈরী হবে না। তবে আরেকটা কথা আম্মা আমি যে সিদ্ধান্তটা নিয়েছি সেটা একান্ত নিজে নিয়েছি। এর জন্য রুপা আমাকে কিছুই বলেনি। আপনি আবার রুপাকে এই ব্যাপারে কোনো রকম কুটু কথা বলিয়েন না।
আম্মা:- আমি তোকে আর তোর বৌকে কখনো কোনো কিছুই বলবো না। তোদের যা মন চায় তা কর।
সৌরভ:- সেইটা আপনার ইচ্ছে বলেই আমি চলে এসেছি অফিসে। আজ অনেক দিন পর শান্তিতে অফিসের কাজ করতেছি। সব পাঠিদের সাথে যোগাযোগ করে কিছু অর্ডার নিলাম। আর ঐদিকে রুপা তাঁর মত করে সব কাজ করছে তবে একটা বিষয় হচ্ছে রুপার শ্বাশুড়ি রুপাকে এখন অনেকটা নিজে থেকে রান্নার কাজে সাহায্য করছে।

আম্মা:- রুপা আমি সৌরভ আর সবুজ তরকারিতে মরিচ কম খায়। তবে সাহেদ আর তোমার শ্বশুড় ঝাল বেশী খায় ওদের যখন খেতে দিবে তখন আলাদ করে কাঁচা মরিচ ওদের সামনে দিবে। তবে আমার মনে হচ্ছে তুমিও ঝাল বেশী খেতে পছন্দ করো। তোমার মন চাইলে তুমিও কাঁচা মরিচ সাথে নিতে পারো। রুপা অবাক হয়ে যাচ্ছে তাঁর শ্বাশুড়ীর ব্যবহার দেখে।
রুপা:- ঠিক আছে মা মনে থাকবে।
আম্মা:- সৌরভের সবচেয়ে পছন্দের খাবার হয়ছে হাঁসের মাংস। তবে তেল যাবিতীয় খাবার একদম কম খায় আর শুনো সৌরভ সবজ্বি খেতে পছন্দ করে তাই যদি পারো তাহলে প্রতিদিন কিছু একটা সবজ্বি রান্না করার চেষ্টা করো। আর হ্যা তোমরা তো আলাদা থাকবে তাই সৌরভের পছন্দের কথা গুলি তোমাকে বলে দিচ্ছি। এই এক বছরে মনে হয়না তুমি সৌরভ কি খেতে পছন্দ করে তা ঠিক করে বুঝতে পারছো। তাই আমি তোমাকে ওর খাবারের পছন্দের কথা বলে দিলাম।

রুপা:- ঠিক আছে মনে থাকবে। রুপার শ্বাশুড়ি চলে গেছে। রুপা মনে মনে ভাবছে তাহলে ওনি আলাদা থাকার কথা বলার কারণে শ্বাশুড়ি মা এখন আমার মন রক্ষা করতে চাচ্ছে! নাকী সত্যি আমাকে মন থেকে কথা গুলি বলছে। তবে ওনাকে আমি আজ নতুন করে চিনতে পারছি। আজকে হাঁসি খুশি ভাবে রুপার দিনটা গেছে। এর মাঝে রুপার মা ফোন করে রুপার সাথে কথা বলেছে। আর রুপা তার মাকে সবকিছু বলেছে সব শুনে রুপার মা বলে।
রুপার মা:- রুপা শুন সৌরভ যেহেতু সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেহেতু আর এই বাড়ীতে থাকার কোনো দরকার নেই। তোর শ্বাশুড়ি এখন যতই তোর সাথে ভালো ব্যবহার করুক তুই কিন্তু কোনো রকম ভাবে রাজি হয়ে যাস না। এই বাড়ীতে সবার সাথে থাকার জন্য। এর মধ্যে সৌরভ রুমে ঢুকেছে। তখনি রুপা বলে।
রুপা:- ঠিক আছে আম্মু তাহলে আমি এখন রাখি। তোমাদের জামাই এসেছে। রুপা ফোন রেখে দিছে।
সৌরভ:- আম্মা আব্বা ওনারা সবাই ভালো আছে?
রুপা:- হ্যা ভালো। আপনি ফ্রেশ হয়ে আসেন আমি খাবার রেডি করে রাখছি।
সৌরভ:- ঠিক আছে বলে চলে গেছে। রুপা গিয়ে খাবার রেডি করেছে। রুপার শ্বাশুড়ি যা যা বলেছে আজকে সব ঠিক মত করেছে রুপা। সবাই এসেছে খাবার টেবিলে। যখন সবাই খাবার মুখে দিছে তখন সবাই এক এক করে বলছে। আজকে রান্নাটা তো দারুন হয়েছে।
সবুজ:- সত্যি আম্মা আপনার হাতের রান্নার কোনো জবাব নেই।
সাহেদ:- হ্যা আম্মা আজকে রান্নাটা মনে হয় একটু বেশী ভালো হয়ছে। (আমি রুপার দিকে তাকিয়ে দেখী মুখটা কালো হয়ে যাচ্ছে। আমি যখন কিছু বলতে যাবো তখনি আম্মা বলে)
আম্মা:- আজকে রান্না রুপা করেছে। আমি আজকে কিছুই করিনি। (আম্মার কথা শুনে সবাই চুপ করে গেছে।)
আব্বা:- সত্যি বৌমা আজকে রান্নাটা অনেক বেশী ভালো হয়ছে। অনেকদিন পর তৃপ্তি সহ খেলাম।
রুপা:- সত্যি বলতে বাবা আম্মা আমাকে সাহায্য করেছে যার কারণে আজকে এত সুন্দর রান্না করতে পেরেছি। আমি তো জানি না কার কি রকম খাবার খেতে পছন্দ মা আমাকে সব বলে দিছে।
আম্মা:- থাক আর এসব বলতে হবে না। তখন রুপা চুপ করে গেছে। খাবার শেষ করে সবার যার যার রুমে গেছে। আগের দিনের মত আজকেও সৌরভকে বালিশ আর চাদর ধরিয়ে দিয়ে রুপা বলে।

রুপা:- নিচে গিয়ে শুয়ে পড়েন। গতকাল রাতে আমাকে ঘুমের মধ্যে চুমু দিছেন আমি কিছু বলিনি। আজকেও যদি এমনটা করেন তাহলে কিন্তু তখনি সৌরভ বলে।
সৌরভ:- ঠিক আছে কিছুই করবো না তুমি আরাম করে ঘুমিয়ে থাকো। তবে তুমি যেদিন নিজে থেকে আসবে সেইদিন সব করবো কেমন! রুপা অবাক হয়ে চেয়ে আছে তখনি ভ্রু কুচকে মনে মন মতলবটা কি? আমি তো এর কতবার এমন করেছি কিন্তু সবসময় আমি ঘুমিয়ে গেলে আমার কাছে এসে শুয়ে থাকে। আমাকে জড়িয়ে ধরে না শুইলে নাকি ওনার ঘুম আসেনা আর আজকে নিজে থেকে এসব বলতেছে। তখনি হঠাৎ বাইকের পেছনে মেয়েটার কথা মনে পড়ে গেলো। তাঁর মানে কি ঐ মেয়েটা! নাহ তা হবে না! হয়ত আব্বুর কথা বলেছি তাই ভয়ে এসব বলছে। আচ্ছা আমি ঘুমের বান করে শুয়ে থাকি যদি না আসে আজকে তাহলে বুঝতে পারবো অন্য কিছু বলে রুপা শুয়ে পড়েছে। এক ঘন্টা দুই ঘন্টা হয়ে গেছে সৌরভ আজকে আর আসছে না। রুপা সৌরভের দিকে তাকিয়ে দেখে ঘুমিয়ে আছে কোনো রকম নড়াচরা করছে না। তাহলে কি আমি যেইটা মনে করছি সেইটা! আচ্ছা দেখি কতদূর যেতে পারেন আপনি এই বলে রুপা ঘুমিয়ে গেছে। প্রতিদিনের মত আজকেও রুপা সকালে উঠে বাড়ীর সব কাজ করেছে তবে একা নয় সাথে রুপার শ্বাশুড়ি সাহায্য করেছে। সৌরভ নাস্তা করে বেড়িয়ে গেছে রুপা তাঁর মত করে সৌরভের প্রতি নজর লাগছে। এমন ভাবে বেশ কিছু দিন কেটে গেছে। রুপার শ্বাশুড়ীর মধ্যে একটা পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। এখন রুপার সাথে অনেক ভালো ব্যবহার করে। এমন কি রুপার সাথে বসে বসে গল্প করে। আর সৌরভের ছোট বেলার গল্প শুনাই। আর মাত্র তিন দিন পড়েই সাহেদের বৌকে উঠিয়ে আনবে। এদিকে রুপা সৌরভের প্রতি আগের বিশ্বাসটা কিছুটা ফিরে পাচ্ছে। আজ অনেক ইচ্ছে করছে সৌরভকে একবার জড়িয়ে ধরতে। কিন্তু নিজে থেকে কি করে বলবে আমি আপনার স্পর্শ চাই। এসব ভাবতে ভাবতে ঘরে ঢোকতছে এমন সময় রুপা মোবাইলে একটা ফোন এসেছে। মোবাইলটার দিকে তাকিয়ে দেখে উকিল আঙ্কেলের নাম্বার তাই রিসিভ করেনি। কিন্তু পর পর তিনবার কল করছে কিছুটা ভেবে ফোন রিসিভ করেই রুপা বলে।

রুপা:- আঙ্কেল আমাদের ডির্ভোসের দরকার নেই। আমাদের সবার মাঝে সম্পর্ক এখন অনেক ভালো। তখনি উকিল বলে।

উকিল:- আমি ডির্ভোসের জন্য ফোন করিনি।
রুপা:- তাহলে কিসের জন্য ফোন করেছেন?
উকিল:- মা রুপা তোমার জামাই সৌরভের চরিত্র একদম ভালো না। তোমাকে দুইটা ছবি পাঠিয়েছি তুমি সেই গুলি দেখে নিও। (রুপা উকিল আঙ্কেলের কথা শুনে থমকে গেছে। কি বলছে এসব? তাহলে আমি এতদিন ওনাকে কাছে আসতে দেয়নি বলে ওনি অন্য কাওকে দিয়ে! ছিঃ আমি এসব কি ভাবছি দেখি তো কি ছবি দিছে। ছবি গুলি দেখে রুপা দাঁড়ানো থেকে বসে গেছি এই মেয়েটাকে তো আমি চিনি এইটা তো সেই বাইকের পিছনের মেয়েটাই)
রুপা:- আমি এখুনি বাড়ীতে চলে যাবো। আব্বুকে সব বলে দিবে ওনাকে জেলের ভাত খায়িয়ে ছাড়বো। এসব নিজে নিজে বলতেছে তখনি সৌরভ রুমে ঢোকে বলে।
সৌরভ:- কাকে জেলের ভাত খাওয়াবে? তখনি রুপা বলে,,
রুপা:- কাকে আবার আপনাকে।
সৌরভ:- কেনো আমি আবার কি করেছি? তখনি রুপা তার মোবাইল থেকে দুইটা ছবি দেখিয়ে বলে।
রুপা:- আমি মাত্র দুই মাস আপনাকে কাছে আসতে দেয়নি আর তাঁর মাঝে আপনি এমন কাজ করতে পারলেন ছিঃ! (সৌরভ ছবি গুলি দেখে একটা মুচকি হাঁসি দিয়ে বলে)
সৌরভ:- ছবি গুলা তোমাকে কে দিছে?
রুপা:- কেনো তাকে গিয়ে মারবেন? আমার মোবাইল দেন। আমি এখুনি আব্বুকে ফোন করে সব বলে দিবো। রুপা তাঁর ব্যাগ গুচানো শুরু করে দিছে।
সৌরভ:- রুপা কি করছো এসব! আমি বলেছি তো সবটা খুলে। আমার পাশে যেই মেয়েটার ছবি দেখছে সেই মেয়েটাকে তুমি আমার বাইকের পেছনে দেখেছো। ওর বোনের অপারেশন ছিলো। আর রক্ত দেওয়ার কথা এই মেয়েটার। আমি যাচ্ছিলাম তখন মেয়েটা সামনে এসে দাঁড়িয়ে অনেক অনুরুদ করে তখন আমি ওকে নিয়ে হাসপাতালে গেছি ঐখানে মেয়েটা আমাকে জড়িয়ে ধরে ফেলে। আর তখন হয়ত কেও ছবি তুলে ফেলছে। রুপা তুমি বিশ্বাস আমি সত্যি তোমাকে ছাড়া আর কাওকে স্পর্শ করিনি এই আমার মাথায় হাত রেখে বলছি।
রুপা:- বিশ্বাস কি করে করবো বলেন? আপনাকে আমি আগে কতবার নিষেধ করেছি। তাও আপনি আমার নিষেধ অমান্য করে আমাকে জড়িয়ে ধরতেন, চুমু খেতেন। এই দুই মাসে আমার কাছে একবারও আসছেন! তাহলে বলেন কি করে বিশ্বাস করবো?
সৌরভ:- তুমি নিজিই তো নিষেধ করেছো। আর বলে দিয়েছো আমি স্পর্শ করলে তুমি তোমার বাবাকে সব কিছু উল্টা পাল্টা বুঝিয়ে বলবে। আর আমার জীবন থেকে চলে যাবে। তার জন্যই আমি তোমার কাছে আসিনি।
রুপা:- হ্যা বলেছি। যখন আমি ঘুমিয়ে ছিলাম তখন তো আপনি চুমু খেয়েছেন। কই আমি কি কিছু বলেছিলাম আব্বুকে? আর এই দুই মাস একবারও কি আমার কাছে আসার চেষ্টা করেছেন? রুপার কথা শুনে সৌরভ বলে।
সৌরভ:- হে আল্লাহ আপনি আমাকে কোন পরীক্ষার মধ্যে ফেলেছেন! স্পর্শ করলে বলে চলে যাবে আর না করলে বলে অন্য মেয়ের সাথে এটিশ পিটিশ করি। দেখো রুপা তুমি আমার স্ত্রী আর তোমার প্রতি আমার যেমন ভালোবাসা আছে তেমন সম্মান আছে। তুমি ছাড়া আমার জীবনে কোনো নারী নেই। আমি শুধু মাত্র তোমাকে ভালোবাসি। আজ যে ছবি দুইটার জন্য তোমার সাথে আমার আবার ঝামেলা হতে যাচ্ছে সেই ছবি দুইটা এক মধ্য বয়সক লোক তোলেছে। আমি জানি তোমাকে সেই লোকটা ছবি গুলি পাঠিয়েছে। তবে তোমাকে আরো কিছু প্রমান দেয় কথাটা বলে সৌরভ তাঁর মোবাইলটা পকেট থেকে বের করে একটা অডিও ক্লিপ চালো করেছে। আর সেই দিনের সব কথা রুপাকে শুনিয়েছে। মানে ঐ লোকটা সৌরভের সাথে হাসপাতালে যা যা বলেছে সব সৌরভ রেকর্ড করে নিয়ে ছিলো। তখন সৌরভ বলে এরপরেও যদি তুমি চলে যেতে চাও তাহলে চলে যেতে পারো। আমি তোমাকে আর কোনো বাধা দিবো না তবে একটা কথা সত্যি আমি তোমাকে বড্ড বেশী ভালোবাসি। তুমি চলে গেলে তোমার জন্য সারা জীবন অপেক্ষা করবো। এবার তোমার সিদ্ধান্ত তুমি চাইলে থাকতে পারো আর চাইলে চলে যেতে পারো কথা গুলি বলেই সৌরভ রুম থেকে বেড়িয়ে গেছে আর রুপাপা ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়ে ভাবছে কি করবে।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here