অভিশপ্ত অধ্যায় পর্ব -০২

গল্পঃ অভিশপ্ত অধ্যায় ( ২য় পর্ব )

শরীরের সমস্ত কাপড় খোলা মারিয়ার, আর বিবস্ত্র মারিয়ার দিকে বিদ্যুৎ গতিতে তেড়ে আসছে ভয়ংকর সেই কালো ছায়ামূর্তি।

মারিয়া হাতে তুড়ি বাজাতেই একটা কালো বলয় দৃশ্যমান হয়ে মারিয়ার চারপাশে এবং উপরে ঘিরে ফেললো। বিদ্যুৎ গতিতে তেড়ে আসা কালো ছায়ামূর্তি সেই বলয়ের সাথে ধাক্কা খেয়ে গগনবিদারী চিৎকার দিয়ে ছিটকে আকাশে উঠে যেতে লাগলো।

শিশিরে ভেজানো রুমাল দিয়ে মারিয়া তার শরীর মুছতেই মারিয়ার শরীর আবার স্বাভাবিক হয়ে গেল।

মারিয়া পোশাক পরে শরীর আবৃত করলো। সেই কালো ছায়ামূর্তি ছোট হয়ে একটা বাদুড়ের আকার ধারণ করে মারিয়াকে ঘিরে রাখা বলয়ের উপর পড়লো। মারিয়া তুড়ি বাজাতেই বলয়টা গায়েব হয়ে গেল, আর বাদুড় আকৃতির কালো ছায়ামূর্তিটি টুপ করে মারিয়ার সামনে পড়লো। মারিয়া পা দিয়ে একটা শট মারতেই বাদুড়টা ছিটকে গিয়ে একটা গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে নিচে পড়লো, জিভ বেরিয়ে আছে বাদুড়টার আর চিৎ হয়ে পড়ে আছে।

সামনের দিকে ডান হাত প্রসারিত করতেই মারিয়ার হাতে একটা খাচার উদয় হলো, বাদুড়ের লেজ ধরে খাঁচায় ভরে মারিয়া নিজের কক্ষে চলে এলো।

সারারাত ঘুম হয়নি মারিয়ার, তাই দিনভর ঘুমাচ্ছে।

বিকেলে রাজপ্রাসাদের বাগানে ইয়া বড়ো এক দৈত্যের আগমন। চারপাশে দেখে নিয়ে দৈত্যটা একটা লাভ দিয়ে শূন্যে উঠে নিজেকে একটা টিকটিকিতে পরিবর্তন করে মারিয়ার রুমের জানালায় এসে বসলো। এরপর ভেতর পাশে এসে জানালার পর্দায় ঝুলে মারিয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।

রাজপ্রাসাদের একজন কাজের মেয়ে আবিদা, সবসময় মারিয়ার খেয়াল রাখা তার কাজ। আবিদা এসে মারিয়ার রুমে ঢুকে খেয়াল করলো একটা টিকটিকি ঐভাবে মারিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। আবিদা মনে মনে বললো,– শালার টিকটিকিরও নজর খারাপ নাকি!

হায়, হুস, হুস, করেও টিকটিকিটাকে নাড়াতে পারলো না দেখে একটা ঝাড়ু এনে টিকটিকির ওপর চড়াও হলো আবিদা।

আবিদার ঝাড়ুর একশানে অস্থির হয়ে দিকবিদিকশুন্য ছুটতে লাগলো টিকটিকি রূপী দৈত্য, একবার খাটের নিচে, একবার আলমারির পিছে, কোনখানে গিয়ে রক্ষা নেই আবিদার অত্যাচারে। শেষমেশ কুলকিনারা না পেয়ে দৈত্য তার নিজের রূপ ধারণ করতেই মাথার উপরের ছাদ ভেঙে শরীরের অর্ধেক বেরিয়ে গেল দৈত্যের।

এই দৃশ্য দেখে আবিদা ভয়ে অজ্ঞান, খাঁচায় ভরা সেই বাদুড় আকৃতির কালো ছায়ামূর্তি নিয়ে দৈত্য দ্রুত পালিয়ে গেল।

মারিয়ার স্বামী আরহাম শিকার করতে ভালোবাসে খুব, তাই প্রায়শই শিকারে বের হয় একা একা, সুঠাম সুন্দর শক্তিশালী আরহাম তীর ধনুক হাতে সারাদিন গহীন অরণ্যে ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত প্রায়, তিন দিনের আজ দুদিন অতিবাহিত হলো, কাল বাদে পরশু আবার ফিরবে রাজপ্রাসাদে।

বিশাল এক গাছের নিচে কতগুলো শুকনো ডালপালা জড়ো করে আগুন জ্বালিয়ে বসে আছে আরহাম, পাশেই তার পোষা কুকুর টমি।

কিছু দূরে একটা সাদা সাপ দেখে টমি ঘেউঘেউ করে চেচিয়ে উঠে সেদিকে দৌড়ে গেল, সাপটা আরও দূরে সরে যেতে লাগলো, টমি তার পিছুপিছু। অনেক দূর যাবার পরে, মানে আরহামের দৃষ্টির বাইরে যাবার পরে সাপটা উড়ে এসে টমির গায়ে একটা কামড় বসিয়ে দিতেই টমির শরীর বরফের মূর্তিতে পরিনত হয়ে গেল।

তারপর সব নীরব।

চোখের পাতায় ঘুম জড়ো হয়েছে আরহামের, চোখ বন্ধ করে আছে এমন সময় আরহামের কানে ঘোড়ার পায়ের শব্দ আসতেই চোখ খুললো আরহাম। তাকিয়ে দেখলো কয়েকহাত সামনেই একটা সাদা ঘোড়ার পিঠে বসে আছে এক অপরূপা সুন্দরী। সাদা পোশাক পরা মেয়েটিকে মনে হচ্ছে স্বর্গের অপ্সরা। চোখ ফেরানো দায়।

ঘোড়ার পিঠ থেকে নেমে এসে আরহামের সামনে বসে মিষ্টি হেসে মেয়েটি বললো,– দক্ষিণ রাজ্যের রাজকুমার আরহাম, আপনার কথা অনেক শুনেছি লোকমুখে, তাদের প্রশংসার চেয়েও আপনি বেশী সুদর্শন, আপনাকে দেখে দুচোখ ধন্য আমার।

আরহাম বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে আছে মেয়েটির দিকে, এত সুন্দর কোনো মানব কন্যা হতে পারে, এর রূপের কাছে পরীও হেরে যাবে হয়তো।

মেয়েটি হাত বাড়িয়ে আরহামের হাত ধরতেই আরহাম যেন পৃথিবীর সবকিছু ভুলে গেলে। মেয়েটি বললো,– এমন একজন পুরুষের স্পর্শের প্রত্যাশায় আজীবন কুমারী থাকা সম্ভব! যবে থেকে আপনার প্রশংসা শুনেছি লোকমুখে, তবে থেকেই মনে প্রাণে আপনাকে চেয়েছি ভীষণ। গতকাল জানতে পারলাম আপনি এই বনে শিকার করতে এসেছেন, বেরিয়ে পরলাম আপনার সন্ধানে। আমি জানি আপনি বিবাহিত, স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ না করলেও অন্তত আজকের এই রাতে আপনার আলিঙ্গনে দূর করে দিন আমার এতদিনের অস্থিরতা, প্রয়োজনে আর কখনও আপনার সামনে আসবো না।

আরহাম মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনছে মেয়েটির কথাগুলো।

মেয়েটির স্পর্শে যেন অন্যরকম এক মাদকতা।

মেয়েটি তার মুখটা আরহামের সামনে এনে দু’হাতে আরহামের দুই গাল ধরে ঠোঁটে চুমু খেল। আরহামের মন মেয়েটিকে ঠেলে সরিয়ে দিতে চাইলেও শরীর চাইছে জড়িয়ে ধরে থাকতে। মন এবং দেহের যুদ্ধে দেহ জয়ী হলো। আরহামও চুমু খেতে লাগলো মেয়েটির ঠোঁটে। মুহূর্ত অতিবাহিত হতে লাগলো ধীর গতিতে, আরহামের হাত অজান্তেই হাতিয়ে চললো মেয়েটির রেশম নরম অঙ্গের বিভিন্ন স্থানে। মেয়েটিও উন্মাদ হয়ে ঝাপিয়ে পড়েছে আরহামের ওপর। এক পর্যায়ে আরহাম উন্মাদনার চরম পর্যায়ে মেয়েটির শরীরের কাপড় টেনে খুলে মিলনের জন্য জড়িয়ে ধরে মেয়েটির শরীরের বিভিন্ন স্থানে চুমু খেতে খেতে হঠাৎ খেয়াল করলো মেয়েটি একটা সাপে পরিনত হয়ে গেল, সাদা ধবধবে একটা সাপ।

আরহাম কিছু করার আগেই সাপটা আরহামের গলায় কামড় বসিয়ে দিতেই আরহামও বরফের মূর্তিতে পরিনত হয়ে পড়ে রইলো।

এদিকে মারিয়ার হাতের চুরিতে প্যাচানো আরহামের কালো চুলটা সাদা হয়ে যেতেই মারিয়া বুঝতে পারলো আরহাম কঠিন বিপদে পড়েছে।

দেরি না করে মারিয়া রাজপ্রাসাদ থেকে বেরিয়ে পড়লো বিপদ থেকে রক্ষা করে আরহামকে ফিরিয়ে আনার জন্য…

চলবে…

নিলয় আহমেদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here