অভিশপ্ত অধ্যায় পর্ব -০১

মারিয়াকে কাছে টেনে গলায়, কপালে, ঠোঁটে চুমু খেয়ে বললো,– সত্যি আমি ভীষণ ভাগ্যবান তোমাকে আমার জীবন সঙ্গী হিসেবে পেয়ে।

মারিয়াও মিষ্টি হেসে বলল,– আমিও ভীষণ ভাগ্যবতী আপনাকে আমার জীবন সঙ্গী হিসেবে পেয়ে।

আরহাম উঠে গিয়ে একজোড়া সোনার নুপুর এনে মারিয়ার পায়ে পরিয়ে দিয়ে, মারিয়ার পায়ে চুমু খেয়ে বললো, আমার কাছে আমার স্ত্রী পৃথিবীর স্রেষ্ঠ সুন্দরী।

মারিয়ার দুধে আলতা গায়ের বরন, ওমন পায়ে সোনার নুপুর সত্যি মারিয়ার সৌন্দর্য আরও শতগুণ বৃদ্ধি করে দিয়েছে।

মারিয়া উঠে বসে মুচকি হেসে আরহামকে বললো,– পায়ে চুমু খাওয়া কি ঠিক হলো!

আরহাম মারিয়ার চোখে চোখ রেখে মিষ্টি হেসে বললো,– কোরআনে আল্লাহতালা বলেনঃ তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের পোশাকস্বরূপ এবং তোমরা তাদের পোশাকশ্বরূপ, এই আয়াতের আলোকে বলতে গেলে স্বামী তার স্ত্রীকে সব ধরনের আদর করতে পারবে, কিন্তু নিষিদ্ধ বিষয়গুলো ব্যতীত। লজ্জাস্থানে মুখ লাগানো ব্যতীত স্বামীর ইচ্ছে হলে স্ত্রীর পায়ে চুমু খেতে পারবে।

মারিয়া মিষ্টি হেসে বললো,– আচ্ছা আচ্ছা, আপনার যতখুশি চুমু খান তবে।

বিছানায় শুয়ে আরহাম মারিয়ার সারা শরীরে ঠোঁটের স্পর্শ মেখে দিতে দিতে বললো,– তোমার শরীরের একটা তিল পরিমাণ স্থানও বাদ রাখবো না যেখানে আমার আদর থাকবে না।

মারিয়া বললো,– ঐ যে নিষিদ্ধ বিষয়গুলো!

আরহাম হেসে ফেলে বললো,– মনে না করিয়ে দিলেই ভালো হতো মারিয়া।

মারিয়া বললো,– এতটা পাগল হলে হয়?!

আরহাম মারিয়ার হাতে চুমু খেয়ে বললো,– আমি তো শুধুমাত্র তোমার পাগল।

মারিয়ার দেহের সৌন্দর্য অন্ধকারেও জ্যোতি ছড়াচ্ছে, ভুবন ভোলানো সৌন্দর্য পৃথিবীতে আর কারো আছে কিনা জানা নেই।

মারিয়াকে টেনে বুকের ওপর তুলে বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আরহাম বললো,– এবার আমাদের ঘরে একটা সন্তানের প্রয়োজন, তুমি কি বলো?

মারিয়া লজ্জা মাখা মুখে বললো,– আপনি যা বলবেন সেটাই হবে।

আরহাম মারিয়ার ঠোঁটে একটা চুমু খেয়ে মিষ্টি হেসে বললো,– চলো তবে মিশন শুরু করা যাক।

মারিয়াকে আরও কিছুক্ষণ আদর করে তারপর ধীরে ধীরে মারিয়ার পরনের পোশাক খুলতে লাগলো আরহাম। মারিয়াও আরহামের কাছে নিজের উজার করে দিতে মুখিয়ে আছে। এই বয়সে এত কাছাকাছি একান্তে কারো স্পর্শ মানেই মাতালতা, অজান্তেই নিজেকে উজাড় করে দেয়া, মিলনের স্বর্গীয় আনন্দে মেতে ওঠা দুটি প্রাণ।

মারিয়া প্রায় বিবস্ত্র, মারিয়ার নিচের অন্তর্বাস খোলার জন্য আরহাম নিচে হাত দিতেই মারিয়ার কেমন যেন লাগলো!

মারিয়া ধাক্কা দিয়ে আরহামকে সরিয়ে দিয়ে কাপড় টেনে নিজের বুক ঢেকে একটা তুড়ি বাজাতেই কতগুলো জোনাকি পোকা দৃশ্যমান হয়ে আলো জ্বাললো। সেই আলোতে মারিয়া লক্ষ্য করলো আরহাম মুহুর্তে কালো ধোঁয়ায় পরিনত হয়ে চোখের পলকে অদৃশ্য হয়ে গেল।

এটা আরহাম নয়, মারিয়ার সন্দেহ সত্যি হলো! আর একটু দেরি করলেই মারিয়ার ভীষণ বড়ো সর্বনাশ হয়ে যেত।

নিজেকে পোষাক আবৃত করে মারিয়া দৌড়ে এসে জানালার কপাট খুলে বাইরে তাকাতেই আবছা আলোয় দেখলো দূরের চন্দনগাছে বসে মারিয়ার কক্ষের দিকে তাকিয়ে আছে অদ্ভুত আকৃতির কয়েকটি ছায়ামূর্তি। রাত্রি দ্বিপ্রহর, আকাশে চাঁদটাও কেমন ম্লান হয়ে গেছে, খন্ডখন্ড কালো মেঘ উড়ে এসে ঢেকে দিচ্ছে চাঁদকে, পৃথিবী অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে, আবার মেঘ কেটে মৃদু আলোকিত হচ্ছে।

মারিয়ার যখন জন্ম হয় তখন থেকেই মারিয়ার ডান পায়ে ছয়টা আঙুল, মানে মারিয়ার ডান পায়ের সবচেয়ে ছোট আঙুল জোড়া আঙুল। সেটা দেখেই মারিয়ার দাদা বুঝতে পেরেছিল মারিয়া স্বাভাবিক নয়, জীবন চলার পথে অনেক বিপদ-আপদের সম্মুখীন হতে হবে মারিয়াকে, তাই মারিয়া বড়ো হতে হতে দাদা মারিয়াকে অনেক কিছু শিখিয়ে গেছেন।
মারিয়া খেয়াল করলো আরও অনেকগুলো কালো ছায়ামূর্তি উড়ে এসে চন্দনগাছে বসেছে, অবস্থা বেগতিক!

সেই কালো ছায়ামূর্তিগুলো তাকিয়ে আছে মারিয়ার দিকে, মারিয়াও তাকিয়ে আছে তাদের দিকে।

পিনপতন নীরবতা, নিজের হৃৎস্পন্দনের শব্দ স্পষ্ট নিজের কানে। এই নীরবতা যেন কোনো মহাপ্রলয় এর অগ্রীম আভাস।

হঠাৎ করেই সেই কালো ছায়ামূর্তিগুলো ঝাক বেধে উড়ে আসতে লাগলো মারিয়ার দিকে। মারিয়া হাতদুটো সামনের দিকে প্রসারিত করে চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করে কিছু বলতেই একটা দমকা হাওয়া এসে মারিয়ার সামনে থমকে গেল যেন।

একটা সোনালী ডানার প্রজাতির দৃশ্যমান হয়ে মারিয়ার হাতে বসে জ্বলন্ত তীর ধনুকে পরিনত হলো।

মারিয়া দেরি না করে বিদ্যুৎ গতিতে একটা তীর ছুড়ল। তীরটার আঘাতে কতগুলো ছায়ামূর্তি দিকবিদিকশুন্য হয়ে ছুটলো, কতগুলো কালো ধোঁয়ায় পরিনত হয়ে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে।

মারিয়া চন্দনগাছ লক্ষ্য করে দ্বিতীয় তীর ছুড়লো, তীরের আঘাতে চন্দনগাছটা মাঝখান থেকে দুভাগ হয়ে দু’দিকে পড়লো।

পরিবেশ শান্ত আবার। অশুভ শক্তির প্রস্থানে পৃথিবী আবার প্রাণ ফিরে পেয়েছে যেন, চাঁদটাও সতেজ হয়ে আরও উজ্জ্বল আলো ছড়াচ্ছে।

মারিয়ার হাতের তীর ধনুক আবার প্রজাপতিতে পরিনত হয়ে প্রজাপতিটা মারিয়ার সামনে উড়তে লাগলো, মারিয়া মিষ্টি হাসতেই প্রজাতিটা অদৃশ্য হয়ে হাওয়ায় মিলিয়ে গেল!

কক্ষে ফিরে মারিয়া খেয়াল করলো তার শরীর ধীরে ধীরে অবশ হয়ে আসছে! শরীরের পোশাক খুলে নগ্ন শরীরে আয়নার সামনে দাড়িয়ে মারিয়া ভীষণ অবাক হয়ে গেল, তার শরীর কালো হয়ে যাচ্ছে দ্রুত গতিতে। মারিয়া বুঝতে পারলো নিশ্চয়ই সেই অশুভ শক্তির স্পর্শে এমন হচ্ছে। মারিয়া আবার পোশাক পরে দৌড়ে আলমারির কাছে গিয়ে আলমারি খুলে পবিত্র পানির বোতলটা হাতে নিয়ে দেখলো তাতে পবিত্র পানি অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে।

মারিয়া দৌড়ে রাজপ্রাসাদ থেকে বেরিয়ে অন্ধকারে রাজপ্রাসাদ সংলগ্ন বাগানের ভেতর প্রবেশ করলো, মারিয়ার আগমনে গাছের ডালে ডালে জোনাকি পোকা জ্বলে উঠে আলো ছড়াতে লাগলো।

ঘাসের উপর জমে আছে বিন্দু বিন্দু শিশির, একটা রেশমি রুমাল বের করে ঘাসের উপর সেটাকে টেনে শিশিরে ভিজিয়ে নিলো মারিয়া।

এই রুমাল দিয়ে সারা শরীর মুছতে হবে। মারিয়া আবার নিজের শরীরের কাপড় খোলা শুরু করতেই জোনাকি পোকারা গায়েব, চারিদিক অন্ধকার হয়ে গেল।

মারিয়া নিজের পোশাক খুলতে খুলতে খেয়াল করলো সেই ভয়ঙ্কর কালো একটা ছায়ামূর্তি ক্ষিপ্র গতিতে ছুটে আসছে তার দিকে…

চলবে…

গল্পঃ অভিশপ্ত অধ্যায় ( ১ম পর্ব )

লেখকঃ নিলয় আহমেদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here