অভিশপ্ত অধ্যায় পর্ব -০৩ ও শেষ

গল্পঃ অভিশপ্ত অধ্যায় ( ৩য় বা শেষ পর্ব )

মারিয়া জঙ্গলের ভেতর প্রবেশ করতেই হাজার হাজার জোনাকি পোকা আলো জ্বেলে চারপাশ আলোকিত করে ফেললো, মারিয়া চোখ বন্ধ করে দুহাত সামনে প্রসারিত করতেই সেই সোনালি প্রজাপতি দৃশ্যমান হয়ে মারিয়ার হাতে বসে তীর ধনুকে পরিনত হলো। মারিয়া তার খোপায় গোঁজা বেলিফুল হাতে নিয়ে উপরের দিকে ছুড়ে মারতেই সেটা একটা পঙ্খীরাজ ঘোড়ায় পরিনত হয়ে নিচে নেমে মারিয়ার সামনে শান্ত হয়ে দাড়ালো।

মারিয়া ঘোড়ার পিঠে উঠে বসতেই মারিয়াকে নিয়ে উড়ে চললো পঙ্খীরাজ ঘোড়া।

কিন্তু আরহাম এতবড় জঙ্গলের ঠিক কোথায় আছে সেটা জানবে কি করে!

মারিয়া তার হাতের ধনুক থেকে একটা তীর ছুড়লো, তীরটা কিছুদূর গিয়ে একটি জ্বলন্ত আগুনের পাখিতে পরিনত হয়ে ছুটে চললো, এই পাখিটা যেদিকে যাবে সেদিকেই যেতে হবে, পাখির পেছন পেছন মারিয়াকে নিয়ে উড়ে চললো পঙ্খীরাজ ঘোড়া।

রাত প্রায় শেষের দিকে, একটা বিশাল পাহাড়ের উপর দিয়ে উড়ে যাবার সময় অদৃশ্য কোনো দেয়ালের সাথে প্রচন্ড ধাক্কা খেয়ে পঙ্খীরাজ মারিয়াকে নিয়ে জোরে নিচের দিকে পতিত হতে লাগলো। মারিয়ার বুঝতে বাকি নেই এটা অশুভ শক্তির মায়া দেয়াল।

পাহাড়ের পাশে জলাশয়ে কতগুলো ব্যাঙ বসে তাদের রাজার নতুন নিয়মকানুন শুনছিল রাজার মুখে, মারিয়াকে বহন করা পঙ্খীরাজ ধড়াম করে পড়লো ব্যাঙ রাজার ওপর, আর মারিয়া মাটিতে পড়ার আগেই কতগুলো মাকড়সা মজবুত করে জাল বিছিয়ে ফেললো, মারিয়া সেই জালের ওপর পড়লো।

এদিকে ব্যাঙ রাজা ঘোড়ার নিচে পড়ে চ্যাপ্টা! কিছুক্ষণ পরে ব্যাঙ রাজা বড়ো হতে হতে হাতির সমান বড়ো হতেই পঙ্খীরাজ ব্যাঙ রাজার পেটের ওপর থেকে গড়িয়ে পড়লো।

ব্যাঙের রাজা উঠে ভীষণ রেগে গিয়ে ঘোড়ার ঠ্যাং ধরে আছড়াতে শুরু করলো, অবস্থা খারাপ দেখে পঙ্খীরাজ ফুস করে বেলীফুলে পরিনত হয়ে মারিয়ার হাতে গিয়ে পড়লো, মারিয়া ফুলটাকে খোঁপায় গুজে ব্যাঙের রাজার সামনে এসে দাড়িয়ে ব্যাঙের রাজার কপালে ডানহাত রাখতেই ব্যাঙের রাজা মারিয়ার উদ্দেশ্য বুঝতে পারলো যে মারিয়া পাহাড় ডিঙিয়ে ওপাশে যেতে চায়।

ব্যাঙের রাজা টান দিয়ে মারিয়াকে পিঠে বসিয়ে একলাফে শূন্যে উঠে সেই অদৃশ্য দেয়াল ভেদ করে পাহাড়ের এপাশে এসে পড়লো, তারপর কয়েক লাগে আরহাম যেখানে বরফের মূর্তি হয়ে আছে সেখানে এসে থামলো।

ব্যাঙের রাজা আবার ছোট হয়ে লাফিয়ে মারিয়ার কাঁধে উঠে বসলো।

চারপাশে অসংখ্য ভয়ঙ্কর সেই কালো ছায়ামূর্তি দৃশ্যমান হলো, এবং তাদের মাঝে বিশালদেহী একজন মারিয়ার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললো,– জ্বীন রাজ্যের রাজা আমি, তোমার জন্মের পরে থেকেই তোমার দিকে নজর আমার, অবশেষে তুমি এলে।

জ্বীন রাজা আরও কাছাকাছি আসতেই মারিয়ার কাঁধের ব্যাঙ রাজা আবার হাতির মতো বড়ো হয়ে জ্বীন রাজাকে একটা লাথি মারতেই জ্বীনরাজা ছিটকে দূরে গিয়ে পড়লো।

আর অসংখ্য সেই কালো ছায়ামূর্তি ক্ষিপ্র গতিতে ছুটে আসতে লাগলো দেখে ব্যাঙ রাজা তাদের ওপর ঝাপিয়ে পড়লো।

মারিয়া তার মাথার চুল এনে হাওয়ায় ভাসিয়ে দিতেই সেই চুল অসংখ্য আগুনের দড়িতে পরিনত হয়ে ছায়ামূর্তি গুলোকে পেচিয়ে ফেলতে লাগলো।

ধনুক হাতে মারিয়া তীরের মাথায় পবিত্র এক ফোটা পানি মিশিয়ে জ্বীন রাজার দিকে তীর ছুড়লো, তীরটা গিয়ে জ্বীন রাজার বক্ষ ভেদ করতেই জ্বীন রাজার গায়ে আগুন ধরে গেল। গগনবিদারী আর্তনাদে আকাশ পাতাল কাপিয়ে তুললো জ্বীন রাজা। তারপর জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। বাকী ছায়ামূর্তি গুলোও অদৃশ্য হয়ে গেল।

মারিয়া এগিয়ে গিয়ে বরফের মূর্তি হওয়া আরহামকে জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে চুমু খেতেই আরহাম সুস্থ স্বাভাবিক হয়ে উঠলো।

আরহামের কুকুর টমিও জঙ্গলের ভেতর থেকে দৌড়ে এলো।

তারপর সবাই খুশিমনে রাজ্যে ফিরে আসলো, মারিয়া ও আরহামের সুখে দিন কাটতে লাগলো।

সমাপ্ত।

নিলয় আহমেদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here