অরূপ জ্যোৎস্না পর্ব -২৭

#অরূপ_জ্যোৎস্না
পর্ব-২৭
লেখনীতে-তানিয়া শেখ

ব্যাবিলনীয় সভ্যতার ষষ্ঠ সম্রাট রাজা হাম্বুরাবি , তার করা সেই বিখ্যাত প্রতিশোধমূলক আইন দ্যা কোড অফ হাম্বুরাবি …..চোখের বদলে চোখ নীতিতে বিশ্বাসী এহসাস। তবে এই বিশ্বাস হাম্বুরাবিকে অনুসরণ করে নয়। এটা ওর স্বভাবগত। কবে কীভাবে এই বিশ্বাস ওর ভেতরে এসেছে ও জানে না। জানার প্রয়োজনবোধ করেনি। এই বিশ্বাস ওর মাঝে অন্য রকমের শক্তি যোগায়। পরাজিত, আহত ঘায়েল সিংহ ব্যথায় দু কদম পিছিয়ে যায় প্রতিশোধের স্পৃহায় ঝাঁপিয়ে পড়বে বলে। তখন ওর লক্ষ্য ও মনোবল গায়ের শক্তি ছাড়িয়ে যায়। আগের চাইতে বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে, বেশি কৌশলি। ফলস্বরূপ সে ফের রাজা, ফের বিজয়ের মুকুট তার মাথায়।

এহসাস কেবল জিততে শিখেছে, পেতে শিখেছে। এর বিপরীত ও মানবে না, মানেনি। এই একরোখা, প্রতিশোধপরায়ণ স্বভাবকে ওর আশেপাশের মানুষগুলো পছন্দ করে না। কারো জন্য নিজের স্বভাব বদলাবে এতটা আন্তরিক এহসাস নয়। ওর আত্মার একপাশ যদি সূর্য হয় অন্য পাশ চাঁদ। অনেক বছর আগে সেই চন্দ্র সূর্যে গ্রহণ লেগেছে। এখন সবটা অমাবস্যায় ঢাকা। যে ওর আত্মাকে অমাবস্যায় ঢেকেছে তাকে এহসাস কী বলে ডাকবে? সুইটহার্ট, লাভ? এহসাসের ঠোঁটে কুটিল হাসি জেগে ওঠে।

“তোর ভেতরের সকল কুটিলতা এই মুহূর্তে স্পষ্ট প্রকাশ পাচ্ছে তোর মুখে। ইউ লুক লাইক সাম ইভিল ফেলো।” রাহাতের অশরীরী দৃশ্যমান হয় ওর সামনে। এহসাসের হাসি আরও প্রশস্ত হয়। সামনের ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় ভালো করে নিজেকে দেখে বলে,

“ইয়াহ?”

“চোর ধরা খেলে লজ্জা পায়, অনুতাপে ভোগে। তোর কি তেমন কিছুই হচ্ছে না?”

“কেন হবে? আমি কি চোর?”

“তার থেকেও ভয়ানক তুই। কারো সর্বনাশের পরিকল্পনা এঁটে বসে আছিস। এ কি পাপের কাজ না? ভুলকে পাপ দিয়ে কাটতে চাচ্ছিস তুই এহসাস। ও না বুঝে ভুল করেছিল আর তুই বুঝে করছিস। তোর ভুল পাপ। শেষমেশ তোর পাপের পাল্লা তোকে না ডুবিয়ে দেয়!”

“না বুঝে? তুই ক্ষমা চাওয়ার পরও না বুঝে ক্ষমা করেনি? তারপর ও না বুঝে তোকে সমস্ত স্কুল ভর্তি মানুষের সামনে প্রধান শিক্ষকের হাতে মার খাইয়েছে? ভাইদের দিয়ে মেরে হাত পা ভেঙে দিয়েছে। সব না বুঝে ভুল?”

“আচ্ছা মানলাম বুঝেই করেছে। সবাই ভুল করে এহসাস। তুই করিসনি? আমি করি নাই? প্রতিশোধ বড্ড খারাপ রে। মানুষকে মানুষ রাখে না। প্রতিশোধের স্পৃহায় আগুনের যে বারুদ তোর ভেতর জ্বলছে তা শক্তি নয় বরং এটম বোম। অন্যকে ধ্বংস করতে গিয়ে আত্মঘাতি হবি তুই। ক্ষমাশীল হ। শান্তি পাবি। বেঁচে থাকতে পারবি। শান্তিতে বেঁচে থাকার চেয়ে বড়ো সফলতা আর কীসে বল?”

কিছুক্ষণ চুপ করে এহসাস শ্লেষাত্মক হাসল,

“তুই শান্তি পেয়েছিস? কী ভাবে, মরে?”

“এহসাস!”

“তোর এই শান্তির কনসেপ্ট অন্য কাওকে শোনাস, যে তোর পরিণতি দেখেনি তাকে। আরে! আমার থেকে কে ভালো জানে ক্ষমাশীল হওয়ার পরিণত কতটা ভয়াবহ হয়। পিয়াসকে তো ক্ষমা করেছিলি। আমাকেও বাধ্য করেছিলি ক্ষমা করতে। কী পুরষ্কার পেয়েছিলি? কপালে গুলিবিদ্ধ হয়ে, ট্রেনের তলে ছিন্ন বিছিন্ন শরীর? কাফনে ঢাকতে কী কষ্ট হয়েছিল জানিস? জানিস না। তুই তো মরে গেছিস। তোর দুঃখ, ব্যথার বোধ নেই। কী বাঁচা বাঁচিয়ে দিয়েছে পিয়াস তোকে, না? আমাকে জিজ্ঞেস কর, তোর মাকে, ক্যামেলিয়াকে জিজ্ঞেস কর গিয়ে তোর ওই ছিন্ন বিছিন্ন শরীর দেখে কতবার মরেছি আমরা! কী দোষ ছিল তোর? ক্ষমাশীল ছিলি তাই, না?” এহসাসের গলা ধরে আসে। রাগে ফুঁসতে থাকে। রাহাতের অশরীর মুখটা করুণ হয়। হাতটা কাঁধে রাখতে যায়।

“এহসাস।”

“শাট আপ!” ছিটকে সরে গেল এহসাস। তখনই পেছনে নিরুপমার গলা শুনল,

“হুঁ?”

রাহাত ফের অদৃশ্য হয়। এহসাস চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে কয়েকবার শ্বাস টানে আর ছাড়ে। নিজেকে শান্ত করল। ঘাড় ঘুরিয়ে মুচকি হাসে। তারপর চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,

“অমাবস্যা!”

প্রথমবার হলে না হয় মনের ভুল ভেবে আমলে নিতো না নিরুপমা। কিন্তু প্রায়ই লোকটাকে একা একা কথা বলতে দেখেছে। যেন এ রুমে সে ছাড়াও আরেকজনের অস্তিত্ব রয়েছে। নিরুপমার একটু ভয় ভয় করে। লোকটার মাথায় দোষ নেই তো! এমনিতে সুস্থ স্বাভাবিক বলেই মনে হয়। পরক্ষণেই ভাবে, সুস্থ কিন্তু স্বাভাবিক পুরোপুরি না। এ পর্যন্ত যা করেছে তাতে নিরুপমা সেই সিদ্ধান্তেই উপনীত হয়। কিন্তু একা একা কেন কথা বলে? জিজ্ঞেস করবে কী?

“আমাকে দেখতে কী খুবই লোভনীয় লাগছে অমাবস্যা? খেয়ে ফেলবে?”

“ছি!”

এহসাস শব্দ করে হেসে বিছানায় সোজা হয়ে বসল। পরনে সেন্ডো গেঞ্জি। খাবারের ট্রে সামনে রেখে ঘুরে থামল নিরুপমা। লোকটা মুখে যা আসে তাই বলে। আগে হলে কড়া জবাব দিয়ে দিতো। কিন্তু ইদানীং আর ইচ্ছে করে না। কথা বাড়িয়ে লাভ কী। তাছাড়া লোকটা ফাউল কথা বলা ছাড়া ওকে আর পেরেশান করে না। চুপচাপ থাকলে একদিন ফাউল কথা বলাও বন্ধ হয়ে যাবে। একদিন! মাত্র তিন মাস। তারপর দুজনের রাস্তা দু’দিকে, যদি এবার মিথ্যা না বলে সে।

জানালার বাইরে তাকায়। আকাশে মেঘ মেঘ করছে। আজ রাতেও বোধহয় ঝড়-বৃষ্টি হবে। লোকটার! লোকটা বলতে এখন আর ভালো লাগে। নাম সর্বস্ব মানুষকে নাম ধরেই ডাকা শোভনীয়। যেহেতু তার সাথে সামাজিকতা রক্ষা করার চেষ্টা করছে সেহেতু শোভন হতে এখন আর আপত্তি নেই। প্লেটে মুরগির রান তুলে নিয়ে ভাতে মেখে একটু ছিঁড়ে মুখে দিলো এহসাস। খেতে ভালো লাগছে না।

খাবার সময় নাম জিজ্ঞেস করা ঠিক হবে না। পরে জিজ্ঞেস করবে। নিরুপমার চোখ পড়ল ওর নগ্ন পিঠের একাংশে। ফর্সা ত্বক ঘামাচিতে লাল হয়ে আছে৷

“আপনি কি ভিজতে চান বৃষ্টিতে?”

এহসাস মুখে ভাত নিয়ে ওর দিকে ভুরু কুঁচকে তাকায়। নিরুপমা গলা ঝেড়ে শব্দগুলো গুছিয়ে নিয়ে বলে,

“আপনার সারা গা ঘামাচিতে ভরে গেছে। মা বলে, বৃষ্টিতে ভিজলে ঘামাচি মরে যায়। রাতে বৃষ্টি এলে ভিজবেন?”

এহসাস এমনভাবে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষণ যেন অপ্রত্যাশিত কিছু বলেছে নিরুপমা। তারপর হাসল। বলতে ইচ্ছে করল,”তুমি আমাকে খেয়াল করো?” কিংবা, “আজ সূর্য কোনদিকে উঠেছে বলো তো।” নিরুপমার ভারি অস্বস্তি হলো। কথাটা বলে বোকামি করল? নিশ্চয়ই ফাউল কিছু বলবে ফের! অস্বস্তিভাব পর মুহূর্তে বিদায় হয় তার কথা শুনে,

“ঠিক আছে। বৃষ্টি এলে জানিয়ো।”

খেতে ভালো লাগছে এখন এহসাসের। ঠোঁটের কোণে লেগে আছে ক্ষীণ হাসি। নিরুপমার কিন্তু ব্যাপারটা কেমন যেন লাগল। সাদামাটা হয়ে গেল না! কোনো টিপ্পনী নেই, রাগ নেই, একজন অপরজনকে কথার বাণে বিদ্ধ করার প্রতিশোধও দেখালো না। লোকটা সহনীয় হয়ে যাচ্ছে। এ বাসার আরেকজন সদস্য হয়ে উঠছে। মেনে নিচ্ছে নিরুপমা তার উপস্থিতি। ঠিক হচ্ছে কি? আগামী তিন মাস তাকে অতিথি বলে ধরে নিয়েছে ও। সে শুধু বিনা তিথিতে, বিনা আমন্ত্রণে আগত এক আগন্তুক। যাকে দয়া করে, সৌজন্য দেখিয়ে নিরুপমা একটু সামাজিকতা রক্ষা করছে। ব্যস!

আটটা বাজতে নিরুপমা ঘুমিয়ে পড়েছিল। এহসাসে ঘুম এলো আরও দু ঘন্টা পরে। মাঝ রাতে হঠাৎ ঘুম ভাঙল। বাইরে তুমুল বৃষ্টি। শো শো বাতাস বইছে। জানালা দিয়ে ছিটে আসা বৃষ্টির পানিতে মেঝে ভিজে গেছে। এহসাস বিছানা ছেড়ে উঠে জানালা বন্ধ করল। বৃষ্টি বিলাস এককালে ভালো লাগলেও এখন আর তা লাগে না। বৃষ্টি ওকে যন্ত্রণাদায়ক এক স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়। তাই যতটা পেরেছে বৃষ্টি বিলাস থেকে নিজেকে দূরে রেখেছিল। কিন্তু আজ ও ভিজবে। ঘামাচি বড্ড জ্বালাচ্ছে। চিটচিট করছে পিঠটা। তবে এটা বৃষ্টিতে ভিজতে চাওয়ার একটা মিথ্যা বাহানামাত্র।

নিরুপমার শিওরে এসে থেমেছিল ডাকবে বলে, কিন্তু ডাকল না। ঘুমন্ত নিরুপমা অন্য রকম সুন্দর। মধ্য দুপুরে ছায়া পড়া দিঘির জলের মতো, মেঘলা আকাশের মতো। এহসাসের সবকিছু কেমন ঘোর লাগিয়ে দেয়। ভুলিয়ে দিতে চায় সব। এহসাস কি ভুলতে চায়?

“না, না। তুমি কুহকিনী নিরুপমা, তোমার সবটাই ছল, মায়া আর নিষ্ঠুরতায় ভরা। একটা মানুষ ক’বার আত্মঘাতী হবে তোমার ছলনায়?”

এহসাসের মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন দু-চোখের চাহনী বদলে যায়। প্রখর রোদে পুড়ে যায়, পুড়িয়ে দিতে চায় সম্মুখে নিদ্রিত নারীটিকে। তার আগেই উঠে দাঁড়ায়। একলাই ছাঁদের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ল।

বৃষ্টির দাপটে রান্নাঘরের জানালার কবাট বাড়ি খায়। একবার দু’বার…. নিরুপমার ঘুম ভেঙে গেল সেই শব্দে। তাড়াতাড়ি মশারি তুলে জানালা বন্ধ করে এলো। বিদ্যুৎ নেই। ঘরের ভেতর ভুতূরে অন্ধকার। বৃষ্টি আর বাতাসের শব্দ ছাড়া ঘরটা থমথম করছে। মোমটা জ্বেলে বড়ো রুমের দিকে গেল। গিয়ে দেখল বিছানা শূন্য। মশারী লুটিয়ে পড়ে আছে মেঝেতে। জানালা, ব্যালকনির দরজা রুদ্ধ। গেল কোথায় সে? সামনের রুমে এসে সদর দরজায় তাকাল। দরজা খোলা। মোমটা ধরে আলগোছে দরজা বাইরে থেকে লাগিয়ে ভীরু পদে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে লাগল। শেষ সিঁড়ি আসতেই মোমের আগুন দপদপ করে। নিভু নিভু হয় আলো। নিরুপমা এক হাতে বাতাস প্রতিরোধ করে আলোকে আড়াল করে। তাকায় সামনে। ওর দিকে পিঠ করে ছাঁদের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে লোকটা। কাকভেজা মানব মূর্তি যেন। নিরুপমার ফিরে যাওয়া উচিত। এসেছিলই বা কেন? নিরুপমা ঘুরে দাঁড়াবে তখনই লোকটা ঘাড়ের ওপর থেকে ফিরে তাকায়। আস্তে আস্তে এগিয়ে এলো ওর কাছে। বজ্রনির্ঘোষে চমকে ওঠে নিরুপমা। হাত সরতে বেপরোয়া বাতাস নিভিয়ে দিলো মোমের আলো। হঠাৎ বিদ্যুৎ স্ফুরণ ঘটে। সেই আলোয় নিরুপমা সামনে দাঁড়ানো মানুষটার মুখ দেখতে পায়। কপালে লেপটে যাওয়া তার ভিজে চুলের বৃষ্টির পানি ঠোঁট ছুঁয়ে চিবুক বেয়ে নিরুপমার কপালে, চোখে, গালে আর ঠোঁটের কিনারে পড়ে। শিউরে ওঠে নিরুপমা। পিছিয়ে যেতে পা মচকে পড়ে যাচ্ছিল। চোখ বন্ধ করে চিৎকার করে উঠল। কেউ যেন শূন্যে টেনে ধরল। নিরুপমা সভয়ে তাকায়। লোকটা ওর হাত ধরে আছে। ছেড়ে দিলেই নিরুপমার আজ কিছু একটা হয়ে যাবে। নিরুপমা অন্য হাতে লোকটার ভেজা হাত শক্ত করে ধরে উঠে দাঁড়াতে চেষ্টা করে। কিন্তু পারে না। ওর বুক কাঁপছে। আচমকা হেঁচকা টানে লোকটা ওকে টেনে নেয়। আছরে পড়ে নিরুপমা তার বুকে। খামচে ধরে লোকটার ভেজা টিশার্ট। বৃষ্টির এক একটা ফোঁটা সূচের মতো ওর গায়ে বেধে। একটু ধাতস্থ হতে সরে যায়। লোকটা ওর হাতের কব্জি ফের টেনে ধরে।

“তোমাকে তো ডাকিনি, তবে কেন এলে?” কী কর্কশ তার গলা! এসে যেন মহা অপরাধ করে ফেলেছে! নিরুপমা রাগ রাগ চোখে তাকায়,

“বৃষ্টিতে ভিজতে হলে আপনার অনুমতি নিতে হয় জানতাম না তো! হাত ছাড়ুন।”

বড়ো অবহেলায় হাতটা ছেড়ে দিলো। নিরুপমা সিঁড়ির দিকে যেতে ফের চেপে ধরে।

“কোথায় যাচ্ছ, অমাবস্যা? বৃষ্টিতে ভিজবে না?”

টানতে টানতে ওকে ছাদের মাঝখানে নিয়ে এলো।

“কী করছেন? ভিজে যাচ্ছি তো। যেতে দিন।” নিরুপমা ছটফট করে। বৃষ্টিতে অ্যালার্জি ওর। কাল সকাল হতেই ঠাণ্ডায় নাকের পানি চোখের পানি এক হয়ে যাবে।

এহসাস ক্রুর হাসল। হাত ছাড়ল না।

“ভিজতেই তো এসেছ, মনে নেই? আহ! এখনই ভুলে গেলে! কী ভুলো মন তোমার।”

মিথ্যা বলে ফেঁসে গেছে নিরুপমা। ঘাড় গুঁজে দাঁড়িয়ে রইল। ভাঙবে কিন্তু মচকাবে না। দেখতে দেখতে ওর সমস্ত শরীর ভিজে একাকার। পরনের কাপড় লেপটে গেল দেহে। থরথর করে কাঁপছে। এহসাস দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। ছেড়ে দেয় হাত। নিরুপমা দুহাতে জড়িয়ে ধরে রইল নিজেকে।

“তোমার বড্ড সাহস, অমাবস্যা। অচেনা এক পুরুষের পিছু পিছু এত রাতে ছাঁদে চলে এসেছ একলা। ভয় করেনি? যদি খারাপ কিছু করে বসি, হুম?”

নিরুপমা চকিতে তাকায়। ভয় খেলা করে ওর চাহনিতে। পিছিয়ে যায়।

“না কি বিশ্বাস করো আমাকে। বিশ্বাস করো আমাকে, অমাবস্যা?”

“না!” নিরুপমার গলা কাঁপে। বৃষ্টিতে ভিজে ওর চোখ লাল হয়ে গেছে। এহসাস ঝুঁকে বলে,

“না? তবে কেন এসেছ একলা এখানে?”

“বললাম তো ভিজতে।”

“ভিজতে? বেগানা একটা পুরুষের সাথে মাঝ রাতে ভিজতে ছাদে এসেছ তুমি?”

“আমি জানতাম না আপনি এসেছেন।”

“মিথ্যাবাদি!” এহসাস সোজা হয়ে দাঁড়ায়। নিরুপমা লজ্জিত হয়। কিন্তু বুঝতে দিতে চায় না। ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলে,

“আমি মিথ্যাবাদী নই।”

এহসাস হাসল জবাবে। নিরুপমার ইচ্ছে করছে ছাঁদ থেকে লাফিয়ে পড়ে মরে যেতে। এই ইতর লোকটার জন্য মরবে কেন? কোনো রকমে নিজেকে শান্ত করে বলল,

“বিকেলে বৃষ্টিতে ভিজার পরামর্শ দিয়েছিলাম। আপনাকে রুমে না পেয়ে দেখতে এসেছি। সৌজন্যবোধের খাতিরে, দ্যাটস ইট।”

“দ্যাটস ইট?”

“দ্যাটস ইট।”

নিরুপমা আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দ্রুত পায়ে সিঁড়িতে নেমে এলো। ঘন অন্ধকার চোখের সামনে। বার কয়েক হোঁচট খেল। দরজার কাছে আসতে লোকটা ওর বাহু টেনে ধরে।

“সত্য স্বীকারে এত ভয় কেন তোমার? কেন স্বীকার করতে পারলে না সৌজন্যবোধ নয় পরোয়া করো। আমাকে নিয়ে ভাবো তুমি। রুমে না পেয়ে চিন্তিত হয়েছিলে। একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে নিয়ে এই সামান্য অনুভূতিগুলো অনুভব করতেই পারে। তাতে দুর্বলতা প্রকাশ পায় না নিরুপমা। কিন্তু তোমার অহংবোধ তোমাকে সত্য স্বীকার করতে দেবে না। সে শুধু তোমাকে পরাজয়ের ভয় দেখায়। এভাবে একদিন তুমি একা হয়ে যাবে, ভীষণ একা।”

এহসাস ওর বাহু ছেড়ে রুমে চলে গেল। নিরুপমা দেওয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে রইল। দু-হাত মুষ্টিবদ্ধ করে আছে। লোকটা ওকে কতটুকু জানে? কীসের ওপর ভিত্তি করে কথাগুলো বলল? কিন্তু কথাগুলো কি অমূলক? মিথ্যে তো বলেনি সে!

নিরুপমা বাথরুমে এসে শাওয়ারের নিচে দাঁড়ায়। দু-চোখ জ্বলছে। বিদ্যুতের আলো জ্বলে ওঠে। পাশের দেওয়ালে লাগানো আয়নায় নিজের প্রতিবিম্ব দেখে দাঁতে দাঁত কামড়ে বলল,

“সব মিথ্যা বলেছে, সব মিথ্যা।”

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here